বুধবার, ২৭ জুন, ২০১৮

রূপক রায়-এর কলাম ( পাঁচ )


      রূপক রায়-এর কলাম ( পাঁচ )


       শেয়ার করেছেন               প্রণব কুমার কুণ্ডু





Rupok Roy           ফেসবুক
সনাতন ধর্মই যদি সত্য হয়, তাহলে পৃথিবীতে এতগুলো ধর্ম কেনো ?
পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রত্যেকটা বস্তুর ধর্ম বা গুন বা বৈশিষ্ট আছে। যেমন- আগুনের ধর্ম পোড়ানো, জলের ধর্ম ভেজানো এবং সবসময় নিচের দিকে যাওয়া, লোহার ধর্ম সাধারণ অবস্থায় কাঠিণ্যতা, জীবের ধর্ম বংশবৃদ্ধি করা এবং টিকে থাকা এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যগুলো কোনো মানুষ এদের জন্য নির্ধারণ করে দেয় নি, প্রকৃতি নামের ঈশ্বর, যিনি এদেরকে সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তিনিই এগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই প্রকৃতিই যে সনাতন ধর্মের কথিত ঈশ্বর, তার প্রমান পাওয়া যাবে গীতার নিচের এই কয়েকটি শ্লোকে, যে কথাগুলো বলেছেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ-
ভূমিরাপোহনলো বায়ু খং মনো বুদ্ধিরেব চ।
অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।।- (গীতা, ৭/৪)
এর অর্থ : ভূমি, জলবায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার- এই আট প্রকারে আমার ভিন্না জড়া প্রকৃতি বিভক্ত।
অপরেয়মিতস্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাম্।
জীবভূতাং মহাবাহো যয়েদং ধার্যতে জগৎ।।-(গীতা, ৭/৫)
এর অর্থ : হে মহাবাহো, এই প্রকৃতি ব্যতীত আমার আর একটি উৎকৃষ্টা প্রকৃতি রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য স্বরূপা ও জীবভূতা, সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জড় জগৎকে ধারণ করে আছে।
এতদযোনীনি ভূতানি সর্বাণীত্যুপধারয়।
অহং কৃৎস্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়স্তথা।। (গীতা, ৭/৬)
এর অর্থ : আমার এই উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উৎপন্ন হয়েছে। অতএব নিশ্চিত ভাবে জেনে রাখো যে, আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের কারণ।
সনাতন ধর্মমতে, সৃষ্টিকর্ম দুটি সত্ত্বার মিলনে সম্পন্ন হয়, সেই দুটি সত্ত্বা হলো- প্রকৃতি ও পুরুষ; প্রকৃতি অর্থ নারী, যিনি জীবের জন্ম দেন, আর পুরুষ সেই জীব জন্মদানে নারীকে বীজ প্রদান করেন। প্রকৃতি রূপ নারীকে শ্রীকৃষ্ণই যে বীজ প্রদান করেন, সে কথা বলা আছে গীতার নিচের এই দুটি শ্লোকে-
যোনির্মহদ ব্রহ্ম তস্মিন গর্ভং দধাম্যহম্।
সম্ভবঃ সর্বভূতানাং ততো ভবতি ভারত।।- (গীতা, ১৪/৩)
এর অর্থ : হে ভারত, প্রকৃতি সংজ্ঞক ব্রহ্ম আমার যোনি স্বরূপ এবং সেই ব্রহ্মে আমি গর্ভাধান করি, যার ফলে সমস্ত জীবের জন্ম হয়।
এবং
সর্বযোনিষু কৌন্তেয় মূর্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ।
তাসাং ব্রহ্ম মহদযোনিরহং বীজপ্রদঃ পিতা।।- (গীতা, ১৪/৪)
অর্থ : হে কৌন্তেয়, সকল যোনিতে যে সমস্ত মূর্তি প্রকাশিত হয়, ব্রহ্মরূপী যোনিই তাদের জননী স্বরূপা এবং আমি তাদের বীজ প্রদানকারী পিতা।
কোনো পিতা যেমন তার পরিবারের সকল সদস্যকে এবং পরিবারের সকল বস্তুকে আঁকড়ে ধরে থাকে, তেমনি শ্রীকৃষ্ণও তার সৃষ্ট প্রকৃতির সকল কিছুকে আঁকড়ে ধরে আছেন, যে কথা বলা আছে গীতার নিচের এই শ্লোকে-
মত্তঃ পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয়।
ময়ি সর্বমিদং প্রোতং সূত্রে মণিগণা ইব।।- (গীতা, ৭/৭)
এর অর্থ : হে ধনঞ্জয়, আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। সূত্রে যেমন মণিসমূহ গাঁথা থাকে, তেমনি সমস্ত বিশ্ব আমাতে ওতঃপ্রোতভাবে অবস্থান করছে।
এবং শ্রীকৃষ্ণই যে জগতের সবকিছুর মূল ও মালিক, সেই কথা বলা আছে নিচের এই শ্লোকে-
এবংএবংপিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহঃ।- (গীতা, ৯/১৭)
এর অর্থ : আমিই এই জগতের পিতা মাতা, বিধাতা ও পিতামহ।
একটা আলু পচে গেলে তার মধ্যে পোকার সৃষ্টির হয়, একটা বেগুন না পচলেও অনেক সময় গাছে থাকা অবস্থায় তার মধ্যে পোকার জন্ম হতে পারে, বহুকাল শুকনো থাকা একটি জলাশয়ে কোনো কারণে জল জমলে কিছুদিনের মধ্যেই তাতে নানারকম জলজ জীবের সৃষ্টি হয়। কোনো আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা না জানলেও ৮/১০ বছরের একটা শিশুও এই কথা বলতে পারবে যে, প্রকৃতি থেকেই এগুলোর জন্ম হয়। তার মানে সরল দৃষ্টিতে প্রকৃতিই পৃথিবীতে নানারকম জীবের জন্ম দিয়েছে বা দেয়। প্রকৃতি কিভাবে জীবের জন্ম দেয় এবং কে তাতে বীজ প্রদান করেন, তার ব্যাখ্যা একটু আগে গীতার রেফারেন্সে আমি দিয়েছি, এই প্রকৃতিই সৃষ্টি করেছে মানুষ এবং এই ব্যাখ্যা যে শাস্ত্র দিয়েছে, সেই সনাতন শাস্ত্রই নিচের দুটি বাণীর মাধ্যমে বলে দিয়েছে মানুষের আচরণ কী হবে, মানুষের ধর্ম কী হবে ? সেই বাণী দুটি হলো-
“পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ”
অর্থাৎ, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলার মতো জানবে।
এবং
“মাতৃবৎ পরদারেষু, কন্যাবৎ পরকন্যাষু”
অর্থাৎ, পরের স্ত্রী কন্যাদের মায়ের মতো দেখবে।
পৃথিবীতে নারী ও সম্পত্তি ই হলো সকল অপরাধের মূল, এই দুটো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ হিন্দু শাস্ত্রে একেবারে জিরো করে দেওয়া হয়েছে এবং সকল আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকর্মের ধর্মীয় রীতি নীতি সযত্নে পাশে সরিয়ে রাখলেও মানুষের সার্বজনীন ধর্ম হচ্ছে এটাই, অপরেরর সম্পদ এবং অপরের নারীর দিকে নজর না দেওয়া এবং এটাই হলো মানুষের বাস্তবিক এবং প্রাথমিক ধর্ম এবং এই ধর্ম পালন করলেই একজন মানুষ, সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে।
সনাতনী শাস্ত্র প্রকৃতির সকল ঘটনার কারণের ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম। কেনো কোনো একজন মানুষের জন্ম ধনী বা বিখ্যাত পরিবারে ? কেনো কোনো একজন মানুষের জন্ম দরিদ্র ও অখ্যাত পরিবারে ? কেনো কেউ নারী বা কেউ পুরুষ ? কেনো কেউ জন্ম থেকেই শারীরিকভাবে পূর্ণ বা কেউ জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ? কেনো কেউ জন্ম থেকেই কুতসিৎ বা কেউ জন্মসূত্রেই বিশ্বসুন্দরী ? এই সকল প্রশ্নের জবাব একমাত্র হিন্দু ধর্মই দিতে পারে। এসব কারণেই হিন্দুধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম, যেখানে জীবন ও জগতের সব সমস্যার সমাধান আছে।
প্রকৃতি থেকেই যেমন মানুষের উদ্ভব, তেমনি, প্রকৃতির নানা শক্তিই মানুষের দুঃখ ও কষ্টের কারণ। প্রকৃতির এই নানা শক্তিই হিন্দুধর্মে বিভিন্ন দেব-দেবী হিসেবে কল্পিত এবং এই শক্তিগুলোর নানা অশুভ প্রভাব থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে এবং তাদের শুভ প্রভাবকে নিজেদের কাজে লাগাতে মানুষ যে স্তব স্তুতির আবিষ্কার বা রচনা করেছে, সেগুলোই বিভিন্ন দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত যাগযজ্ঞ ও পূজা পদ্ধতি এবং এভাবে সনাতন ধর্ম- বেদ-উপনিষদের জ্ঞান, রামায়ন-মহাভারতের কাহিনী ও গীতার জ্ঞানের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ২০০ বছর আগেই পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেছে, যা মানুষের সকল চাহিদা মেটাতে সক্ষম এবং এই সনাতন ধর্মই হচ্ছে মানুষের ধর্ম। মানুষ যে সনাতন ধর্ম নিয়ে জন্ম গ্রহন করে এবং মানুষ যে প্রকৃতিগতভাবেই সনাতন ধর্মী, সেটা বলা আছে হিন্দু শাস্ত্রের নিচের এই শ্লোকে-
“সনাতন মানবধর্মমূলং হি প্রকৃতি”
এর অর্থ : মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সনাতন ধর্ম নিয়েই জন্মগ্রহণ করে।
যে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য এত কথা লিখলাম, সেই প্রশ্নটি হলো- সনাতন ধর্মই যদি প্রকৃত ধর্ম হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীতে এতগুলো ধর্ম কেনো ?
যারা এই ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করে, তারা ধর্মের সংজ্ঞা জানে না বলেই করে। মানুষের ধর্ম কী, তা উপরে ব্যাখ্যা করে বলেছি এবং মানুষ যে কোনো ধর্ম সৃষ্টি করতে পারে না, প্রকৃতিতে সৃষ্ট জীব ও জড়ের ধর্ম সৃষ্টি করা যে প্রকৃতির কাজ, সেটারও ব্যাখ্যা দিয়েছি। তাহলে ধর্মের নামে যে- ইসলাম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি সহ আরও প্রায় ৪ হাজারের বেশি বিশ্বাস পৃথিবীতে চলছে, এগুলো আসলে কী ?
এগুলো হলো ব্যক্তিগত মতবাদ। কোনো মানুষ যখন কোনো মত প্রকাশ করে, তখন তাকে বলে মতবাদ, ইংরেজিতে একে বলে ‘ইজম (Ism)’, যেমন কার্ল মার্কসের মতবাদকে বলে মার্ক্সিজম = মার্ক্স + ইজম। খেয়াল করে দেখবেন মুহম্মদের ইচ্ছা অনিচ্ছায় হলো ইসলাম, না হলে মুসলমানরা যাকে আল্লা বলে, যে কিনা তাদের মতে সৃষ্টিকর্তা এবং সারা জগতের প্রভু, সে মুহম্মদের বিয়ে ও যৌনতা নিয়ে মাথা ঘামাবে কেনো ? কেনো, কোনো সর্বময় সৃষ্টিকর্তাকে মুহম্মদের সাথে তার পুত্রবধূ জয়নাবের বিয়ে দিতে হবে ? এই ঘটনাগুলোই প্রমান করে মুহম্মদ, যাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে গ্রহন ও প্রচার করেছে, সে আসলে কিছুই নয়, সে মুহম্মদেরই একটি ফেক আইডি, যার কথা বলে আসলে মুহম্মদ নিজের মতো করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করেছে।
একই কথা প্রযোজ্য খ্রিষ্টান সম্পর্কেও, খ্রিষ্টীয় মতবাদের সবকিছুই যীশু খ্রিষ্ট সম্পর্কিত, বৌদ্ধ মতবাদের সবকিছুও গৌতম বুদ্ধের চিন্তাভাবনার ফসল, ইহুদি মতবাদও ইব্রাহিমের মস্তিষ্ক্যপ্রসূত, এগুলোর কোনটাই সার্বজনীন বা বিশ্বজনীন নয়।
ইসলাম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ইহুদিসহ প্রায় ৪২০০ তথাকথিত ধর্মের কোনোটাকেই ধর্ম বলা যাবে না, এগুলো হলো ব্যক্তিগত মতবাদ, তবুও না জেনে বা না বুঝে অনেকেই এগুলোকে ধর্ম বলে থাকে বা অনেকে জেনে বুঝেও আলোচনা করার সুবিধার্থে এগুলোকে ধর্ম বলে অভিহিত করতে বাধ্য হয়, যদিও আমি এগুলোকে ধর্ম বলি ন না, বলি ব্যক্তিমতের ধর্ম।
মানুষ জন্মগতভাবে এবং প্রকৃতিগতভাবে সনাতনী, তাই মানুষ, কোনো ব্যক্তির প্রভাবে আধ্যাত্মিক দিক থেকে মনে যে বিশ্বাসই লালন করুক না কেনো প্রতিদিনের আচরণে সে সনাতনী রীতি পালন করতে বাধ্য। এজন্যই ইসলামে, নাচ-গান-ছবি আকা-ভাস্কর্য নির্মান-কবিতা লিখাকে নিষিদ্ধ করা হলেও মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলে মেয়েরাও এই প্রতিভাগুলো নিয়ে জন্মগ্রহন করে এবং নামে মুসলমানরাও এগুলোর চর্চা করতে বা এগুলো উপভোগ করতে ভালোবাসে।
আশা করছি, পৃথিবীতে ধর্ম যে একটাই এবং সেটা সনাতন, উপরের আলোচনা থেকে তা আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি। এবার নজর দিই অন্য প্রশ্নের দিকে, “সনাতন ধর্মের মানুষরাই যদি শুধু মুক্তিলাভ করবে, তবে ভিন্ন ধর্মের মানুষদের কী দোষ, তারা কেনো ভিন্ন ধর্মে জন্মগ্রহন করলো?” এর দিকে-
সনাতন ছাড়া পৃথিবীতে যে কোনো ধর্ম নাই, সেটা উপরেই প্রমান করে দিয়েছি, তাই ভিন্ন ধর্মের কোনো প্রশ্নই নেই, এখানে বলতে হবে ব্যক্তিমতবাদগুলোতে কেনো মানুষ জন্মগ্রহন করে ? ব্যক্তিমতবাদে যারা বিশ্বাসী, তারা কখনো মুক্তি লাভ করতে পারবে না এই কারণে যে, সেই সব মতবাদে মুক্তির তো কোনো কথাই নেই;
যেখানে মুক্তির কথা নেই, সেখানে মুক্তির পথ থাকবে কিভাবে ?
অন্যগুলোর কথা বাদ দিয়ে শুধু ইসলামের কথা বলি, ইসলামের চুড়ান্ত লক্ষ্য মানুষকে বেহেশত নামক আল্লার পতিতালয় পাইয়ে দেওয়া, যেখানে মানুষ অনন্তকাল ধরে কমপক্ষে ৭২ হুরের সাথে দোচাদুচি ( বর্ণ স্থানান্তর হবে) করতে পারবে। এটা কি কোনো মানুষের চরম লক্ষ্য হতে পারে ? বেহেশতের কথা বাদই দিলাম, এই পৃথিবীতেও যদি কোনো মানুষকে এক হল রূম ভর্তি নগ্ন মেয়ে মানুষের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়, এই অবস্থাকে সে কয় দিন ভোগ করতে পারবে, বা কয়দিন তার ভালো লাগবে ? ৭২ জন বাদ দেন, একজন মেয়েকে নিয়েও কি কোনো মানুষ ২৪ ঘন্টা সেক্সে মেতে থাকতে পারে, না পারবে ? পারে না, আর পারবেও না। তাহলে বেহেশতে ৭২ হুর নিয়ে অনন্তকাল ধরে সেক্স করার কথা বলা কি মূর্খামি নয় ? আর এটা কি কোনো টাইমপাসও হলো ? পৃথিবীতে যেখানে মানুষ সাধারণত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টার বেশি সেক্সে মেতে থাকতে পারে না, সেখানে বেহেশতের পুরো সময় মানুষ সেক্স নিয়ে থাকবে কিভাবে ? আর এই ধরণের লম্পট চিন্তা ভাবনা যার, সে কিভাবে মানুষ হতে পারে, নবী বা পথপ্রদর্শক হওয়া তো দূরের কথা !
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তিমতের বিশ্বাসগুলোর মানুষ যদি মুক্তিই না পায়, তাহলে তারা তাতে জন্মগ্রহন করলো কেনো, তাদের কী দোষ ছিলো ?
আগেই বলেছি, সনাতন ধর্ম সকল প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম এবং একারণেই সনাতন ধর্ম মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
এটাও আগে বলেছি, মানুষ যে কারণে- উচু নিচু, ধনী গরীব, বিখ্যাত বা অখ্যাত পরিবারে এবং কুতসিৎ ও সুন্দর দেহ নিয়ে জন্ম গ্রহন করে, তার ব্যাখ্যা সনাতন ধর্মে রয়েছে এবং সেটা হলো পুনর্জন্ম থিয়োরি।
ক্লাস ওয়ান থেকে পাশ করে যারা ক্লাস টুতে উত্তীর্ণ হয়, তাদের সবার রোল ১ হয় না; কারো ১ হয়, কারো ২ হয়, কারো ১০২ হয়। তার মানে ক্লাস ওয়ানে থাকাকালীন তাদের কর্মফল অনুযায়ী ক্লাস টুতে তাদের রোল নং হয়; একইভাবে ক্লাস টু এর কর্মফল ভোগ করে ক্লাস থ্রিতে, ক্লাস থ্রির কর্মফল ক্লাস ফোরে, এভাবে চলতে থাকে শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যন্ত, পূর্বের ক্লাসের কর্মফল ছাত্ররা ভোগ করে বর্তমান ক্লাসে।
হিন্দু শাস্ত্র বলে, মানুষের জন্ম হচ্ছে আত্মার পরিভ্রমণ, অর্থাৎ আত্মা জন্ম থেকে জন্মান্তরে বিভিন্ন দেহের মাধ্যমে ভ্রমন করে চলেছে। কোনো দেহকে কোনো আত্মা ধারণ করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট কিছু কর্ম সম্পাদন ও কর্মফল ভোগের জন্য। সেই কর্ম সম্পাদন ও কর্মফল ভোগ শেষ হলে সেই আত্মা, সেই দেহকে ত্যাগ করে, নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেই আত্মা অন্যদেহকে ধারণ করে পৃথিবীতে তার কর্মযজ্ঞ শুরু করে। এখন কোনো জন্মে কোনো আত্মা কেমন দেহ ধারণ করবে বা কেমন কর্ম পাবে, সেটা নির্ভর করে তার পূর্বের জন্মের কর্মফলের উপর, যেমন ক্লাস ফোরে কোনো ছাত্রের রোল নং কত হবে, সেটা নির্ভর করে ক্লাস থ্রিতে তার কর্ম কেমন ছিলো, তার উপর।
হিন্দু শাস্ত্র বলে, কোনো একটি আত্মাকে ভ্রমণ করতে হয় ৮৪ লক্ষ যোনী, এর মধ্যে মানুষ হিসেবে কোনো আত্মা জন্ম নিতে পারে বা পারবে ৪ লক্ষ বার। এই চার লক্ষ বারের মধ্যে আগের জন্মে কে কত ভালো কর্ম করেছে, তার উপর ভিত্তি করে সে পরের জন্মে- পরিবার, লিঙ্গ, দেহ ও চিন্তা শক্তি পায়। এই সূত্রে বর্তমানে হিন্দু ছাড়া অন্য ব্যক্তিমতের বিশ্বাসে যারা জন্ম নিয়েছে, সেটা তাদের এই জন্মের দোষ নয় পূর্বজন্মের দোষ। এই জন্মে যে যে বিশ্বাসী পরিবারেই জন্ম নিক না কেনো, সে যদি প্রকৃত মানুষের মতো আচরণ করে, পরের জন্মে সে সনাতনে বিশ্বাসী পরিবারে জন্ম নিতে পারে বা সেই বিশ্বাস ধারণ করে মৃত্যু বরণ করতে পারে, এতে সে মুক্তি না পেলেও তার মুক্তির পথ প্রশস্ত হবে, এটা নিশ্চিত এবং এভাবেই সে আস্তে মুক্তির পথ সনাতনের সন্ধান পাবে কোনো এক জন্মে।
এবার আসি শেষ প্রশ্নে, নবী মুহম্মদ কে ? ভগবান কেনো তাকে পৃথিবীতে জন্ম দিলো ?
হিন্দু পুরানে দেবতা ও অসুরদের কথা বলা আছে। দেবতারা হলো শুভশক্তি এবং অসুররা হলো অশুভ শক্তির প্রতীক। অন্যভাবে দেবতারা সৃষ্টি ও রক্ষার প্রতীক হলে, অসুররা ধ্বংসের প্রতীক। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহগুলো মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকে, তাই এরা দেবতা হিসেবে চিহ্নিত, এদের মধ্যে শুক্রও একজন দেবতা, যিনি অসুরদের প্রতিনিধি। হিন্দু শাস্ত্রে উষণা নামে একজন ঋষিরও পরিচয় পাওয়া যায়, যিনি অসুরদের গুরু। দেবাদিদেব মহাদেবেরও অসুরদের প্রতি একটা সফট মনোভাব আছে, অল্পেই ভুলে যান বলে তিনি ভোলানাথ, তাই পাত্র বিবেচনা না করেই তিনি যাকে তাকে বর দিয়ে ফেলেন; জগতের যত অসুর, তারা সবাই এই মহাদেবের বর প্রাপ্ত। মহাদেবের বরে অসুররা শক্তিশালী হয়ে যখন দেবতাদের উপর অত্যাচার শুরু করে, তখন মহাদেব নিজেই আবার তাদের ধ্বংস করেন। অসুরদের অত্যচারে অতিষ্ঠ হয়ে ইন্দ্র একবার সকল অসুরদের হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলো, কিন্তু মহাদেবের আশীর্বাদ প্রা্প্ত শনিদেব, রাহুর সাহায্যে অসুরদেরকে রক্ষা করেন, এই যুক্তিতে যে, অসুররা না থাকলে সৃষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হবে, মহাদেব শিবও শনির এই যুক্তিকে সমর্থন করেন।
পুরানে বর্ণিত সকল ঘটনা কাল্পনিক, কিন্তু এই সকল ঘটনা লিখা হয়েছে এজন্য যে, পৃথিবীতে এই ধরণের ঘটনা ঘটবে এবং এই ধরণের ঘটনা যখন ঘটবে, তখন তার বিরুদ্ধে মানুষ কী ব্যবস্থা নেবে, সেই শিক্ষাও পুরানের সেই সব ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমাদের মুনি ঋষিগণ আমাদেরকে দিয়ে গেছেন।
পুরানে বর্ণিত দেব ও অসুরদের ঘটনা প্রতীকী, এই সব ঘটনার সম্মুখীন যে পৃথিবীর মানুষরা হবে, তারই ইঙ্গিত দেওয়া রয়েছে পুরানে।
প্রকৃতি কখনো চায় না, তার সৃষ্ট জীব পৃথিবীতে সারাজীবন সুখে শান্তিতে থাক, তাই জীবের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম দুঃখ-কষ্ট পর্যায়ক্রমে আসে। সৃষ্টিকর্তা কোনো কিছু সৃষ্টিই করে, তা থেকে আনন্দ লাভের জন্য, আর কোনো সৃষ্টিতে ততক্ষণ আনন্দ থাকে না, যতক্ষণ না তাতে ভালো ও খারাপ চরিত্র এক সাথে না থাকে। এজন্যই গল্পে ভিলেন চরিত্র থাকে, কারণ ভিলেন না থাকলে নায়ক তার ক্ষমতা ও দক্ষতা দেখাবে কার উপর ?
ডিসকভারি জাতীয় টিভি চ্যানেলে যখন আমরা বাঘ সিংহ কর্তৃক হরিণ শিকারের দৃশ্য দেখি, তখন আমাদের খুবই খারাপ লাগে, কিন্তু বাঘ সিংহ যদি হরিণ শিকার না করতো, হরিণের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এত বেশি হয়ে যেতো, যে তারা বনের সব লতা পাতা গাছ খেয়ে বনই উজার করে ফেলতো, মানে বনই থাকতো না, ফলে হরিণ নিজেই এক সময় ধ্বংস প্রাপ্ত হতো। এজন্যই হরিণ জাতীয় তৃণভোজী প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রকৃতি পৃথিবীতে মাংসাশী প্রাণীর সৃষ্টি করেছে।
বাঘ সিংহ জাতীয় প্রাণীর সৃষ্টি করে প্রকৃতি যেমন তৃণভোজীদের শান্তি নষ্ট করেছে, বড় মাছ সৃষ্টি করে যেমন ছোট মাছদের শান্তি নষ্ট করেছে, তেমনি অসুরদেরকে সৃষ্টি করে দেবতাদের শান্তি বিনষ্ট করার মতো, পৃথিবীতে অসুর জাতীয় প্রাণী মুসলমানদের সৃষ্টি করে নিরীহ অমুসলিমদের শান্তি নষ্ট করেছে। পৃথিবীতে মুসলমানদের সৃষ্টি প্রকৃতিরই খেলা এবং এটা হিন্দু পুরানে বর্ণিত দেব-অসুরদের সংঘাতেরই ইঙ্গিত। তাই পৃথিবীতে মুহম্মদের জন্ম এবং ইসলামের উৎপত্তি ঈশ্বরের পরিকল্পনারই একটি অংশ এবং এই অশান্তিকে সৃষ্টি করার জন্য ঈশ্বরকে কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে এজন্য যে, নায়ক এবং ভিলেন যেমন গল্পের অপরিহার্য অংশ; তেমনি, মনুষ্য সমাজেও শুভ এবং অশুভর পাশাপাশি অবস্থান এবং সংঘাতও অনিবার্য, না হলে সৃষ্টি তার বৈচিত্র হারাতো, প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাতো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এই অবস্থায় মানুষের কর্তব্য কী ?
সাধারণভাবে মানুষ শান্তিতে থাকতে চায় এবং ঝামেলামুক্ত জীবন চায়, মানুষের এই চাওয়াটাই আসলে অমূলক; কারণ, শান্তিতে থাকার জন্য কোনো প্রাণীর পৃথিবীতে জন্ম হয় নি, প্রতিটি প্রাণীকে পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য সব সময় তাকে লড়াই সংগ্রাম করে যেতে হবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এ কারনেই শান্ত স্নিগ্ধ নদীতে মাঝে মাঝে যেমন ঢেউ উঠে, তেমনি হঠাৎ করেই ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়; যাতে মানুষ, সমাজ ও পৃথিবীর গল্পে একটা টুইস্ট আসে বা পাক খায়, এসবই আসলে ঈশ্বরের পরিকল্পনা।
তাহলে এই অবস্থায় মানুষের করণীয় কী ?
মানুষের করনীয় একটাই, সেটা হলো নিরন্তর লড়াই করে যাওয়া, অসুরদের বিরুদ্ধে, অশুভের বিরুদ্ধে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে।
পুরানে যেমন দেবতা ও অসুরদের সংঘাত নিরন্তর, একটা অসুর মারা গেলে আরেরকজনের জন্ম হয়, তেমনি পৃথিবীতেও এই শুভ ও অশুভর যুদ্ধ চিরন্তন। আমি অনেক হিসেব করে দেখেছি, পৃথিবীতে যতদিন মুসলমান নামক অসুর জাত টিকে থাকবে, ততদিন অন্য কোনো অসুর জাতের জন্ম হবে না, আবার যখনই এই মুসলমানরা শেষ হবে, তখন অন্য কোনো অশুভ শক্তির জন্ম হবে; মানে দ্বন্দ্ব সংঘাত থেকে মানুষের কোনো মুক্তি নেই। পৃথিবী হয়তো একদিন মুসলমান মুক্ত হবে, কিন্তু কোনোদিন অসুর মুক্ত হবে না। তাই মানুষের চিরদিন শান্তি ও সুখে থাকা একটা অলীক কল্পনা মাত্র।
উপরে, পুরানের বর্ণনা অনুসারে অসুরদের সাথে আমি মুসলমানদের তুলনা করেছি, এখন দেখা যাক, মুসলমানরা সত্যিই অসুরপদার্থজাত কিনা ?
পুরানে শক্র হলো অসুরদের প্রতিনিধি, মুহম্মদের জন্ম সেই শুক্রবারে এবং মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এবং প্রিয় দিন হলো শুক্রবার। অসুররা সব সময় অস্ত্র বহন করে, জিহাদের জন্য মুসলমানদেরও সব সময় প্রস্তুত থাকার অর্থাৎ অস্ত্র বহন করার নির্দেশ। অসুরদের যৌনতায় কোনো বাছ বিচার নেই, একজনের স্ত্রীকে দখল করে অন্যে ভোগ করে, মুসলমনদেরও যৌনতায় কোনো বাছ বিচার নেই, এরা শুধু অন্যের স্ত্রীকে দখল ও ভোগ করতেই ছাড়ে না, নিজের আত্মীয় সম্পর্কিত মেয়েদেরকে বিছানায় নিয়ে যেতে ছাড়ে না। অসুররা, হিংস্র ও মাংসাশী, মুসলমানরাও হিংস্র ও মাংসাশী। অসুররা যেমন জ্ঞানহীন, শক্তিই তাদের একমাত্র সম্বল; মুসলমানরা তেমনি জ্ঞানহীন, রাগ ও শক্তিই তাদের একমাত্র অস্ত্র। দেবতাদেরকে যেকোনো মূল্যে ধ্বংস করে তাদের আবাস ও দেবনারীদেরকে দখল করাই যেমন অসুরদের একমাত্র লক্ষ্য, তেমনি অমুসলিমদেরকে যেকোনো মূল্যে হত্যা করে তাদের সম্পত্তি ও নারীদেরকে দখল করাও মুসলমানদের একমাত্র ঈমানী দায়িত্ব।
এই সব বিবেচনায়, আমার কাছে, মুসলমানরাই হচ্ছে পুরানে বর্ণিত অসুর এবং অসুররা যেমন কখনোই দেবতাদের উপর আল্টিমেট জয় লাভ করতে পারে নি, তেমনি মুসলমানরাও কখনো পৃথিবীতে তাদের চুড়ান্ত আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না। ইরাক-সিরিয়ার ‘আইএস’ এর মতো যখনই তারা ইসলামের আসল রূপ নিয়ে সামনে আসবে, অমনি- রাশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপের মতো শুভ শক্তি তাদেরকে দমন করবে, যেমন আইএস দমিত হয়েছে।
বাস্তবে পৃথিবীতে প্রকৃত মুসলমান ১% ও নেই, যখনই কেউ প্রকৃত মুসলমানের রূপ ধরে সামনে আসবে অমনি সে জঙ্গী সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত হবে, আর তখনই তার বেহেশতী হুরের কাছে যাওয়া নিশ্চিত এভাবেই আসলে পুরানে বর্ণিত দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধ চলছে এবং চলবে এবং পৃথিবীতে মুহম্মদের জন্ম ও মুসলমানদের উৎপত্তি আসলে হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বের বাইরে কিছু নয়, মুহম্মদ এবং মুসলমানরাও ঈশ্বরের পরিকল্পনা্রই একটি অংশ।
আশা করছি, পৃথিবীতে মুহম্মদের জন্ম এবং ইসলামের উৎপত্তি কেনো হয়েছে এবং মুহম্মদ ও তার অনুসারী মুসলমানরা আসলে কে, তা পাঠকদেরকে তা বোঝাতে পেরেছি।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

From: Krishna kumar das

💜 জয় হোক সনাতনের 💜

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন