বাংলার এই পবিত্র ভূমি নানা মহামানবের
আর্বিভাবে ধন্য। আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে ভগবান চৈতন্য নদিয়া জেলার নবদ্বীপে
অবতীর্ণ হন – প্রেম ভক্তির অবতার হিসাবে। ঝুলন পূর্ণিমায় মাতুলালয়
শিকারপুরে, নদিয়ায় আর এক মহান মানবের আবির্ভাব হয়। তিনি বিজয়কৃষ্ণ
গোস্বামী। বাংলা ১২৪৮ সালের ১৯ শ্রাবণ। ইংরেজি ১৮৪১, ২ আগস্ট, সোমবার।
সেদিন ছিল ঝুলন পূর্ণিমার রাত। জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোয় প্লাবিত হয়ে গেছে
নদিয়া জেলার শিকারপুরের কাছে দহকুল গ্রাম। এই গ্রামেই বিজয়কৃষ্ণের
মামাবাড়ি। আর এই মামাবাড়িতেই সেই পূর্ণিমার আলোয় এক কচুবনের মধ্যে
জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক দেবশিশু। হ্যাঁ, কচুবনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন
বিজয়কৃষ্ণ।
নদিয়ার শিকারপুরে ছিল ইংরেজদের নীলকুঠি। সেদিন সেই পবিত্র ঝুলন
পূর্ণিমার রাত্রে ঠিক জন্মসময়ে হঠাৎ কোনও কারণে ইংরেজের পুলিশ এসে হানা
দিয়েছিল বিজয়কৃষ্ণের মামাবাড়িতে। এতে শঙ্কিত হয়ে বিজয়কৃষ্ণের মাতৃদেবী
ঘর ছেড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাড়ির কাছেই এক কচুবনে। বিধাতার এক
রহস্যময় বিধানে সেখানেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন মহান ভক্তিসাধক।
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী
ঊনবিংশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম প্রাণপুরুষ।
শ্রীশ্রীমদদ্বৈতাচার্য্যের দশম পুরুষ। পিতা শান্তিপুর নিবাসী আনন্দ কিশোর
গোস্বামী, এবং মাতা স্বর্ণময়ী দেবী। মহাপ্রভু চৈতন্যের হরিনামের মধুর তরঙ্গ
শুধু এদেশেই নয়,সমুদ্র পার হয়ে দেশ বিদেশে আছড়ে পড়ছে। এ এক সাম্যের
ভক্তিরস। এই ভক্তিরস প্রবাহের ফসল প্রভু বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।
পিতৃদেব প্রভুপাদ আনন্দকিশোর গোস্বামী চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ভাগবত পাঠ
করতেন, নিজের গলায় সর্বক্ষণ পরম অলঙ্কার হিসেবে ঝুলিয়ে রাখতেন ‘দামোদর’
নামে শালগ্রাম শিলা। আনন্দকিশোর পর পর দু’বার বিবাহ করেন। কিন্তু কোনও
পুত্র সন্তানের মুখ দেখতে পাননি। এই দুই স্ত্রী লোকান্তরিত হওয়ার দীর্ঘকাল
পরে ৫০ বছর বয়সে বড়ো ভাই গোপীমাধব গোস্বামীর অন্তিম অনুরোধে তৃতীয়বার
বিয়ে করেন স্বর্ণময়ীদেবীকে। স্বর্ণময়ীর গর্ভেই জন্মগ্রহণ করেন দুই
পুত্র—ব্রজগোপাল এবং বিজয়কৃষ্ণ। শিশুকাল থেকেই বিজয়কৃষ্ণের মধ্যে দেখা
দেয় নানা ধরনের বিস্ময়। সকাল সন্ধ্যা তুলসীতলায় গড়াগড়ি দেয় ছোট্ট
শিশু, কথা বলেন গৃহদেবতা শ্যামসুন্দরের সঙ্গে এবং শ্যামসুন্দরের সঙ্গে খেলা
করেন। মা স্বর্ণময়ীদেবী এ সবই দেখেন। স্বর্ণময়ীও এক দিব্য স্বভাবের
নারী। এক ফকিরের আশীর্বাদে তাঁর পিতা গৌরীদাস জোদ্দার এই কন্যাকে লাভ
করেছিলেন। কেউ কেউ তাঁকে পাগলি বলে ভাবতেন, আবার কেউ কেউ তাঁকে সাক্ষাৎ
দেবী মনে করতেন।
জন্মস্থান শিকারপুরে গোঁসাইজির মন্দির
বিজয়কৃষ্ণ পাঠশালার প্রথম পাঠ নেন শিকারপুর গ্রামে। পরে পরম ভক্ত ভগবান
সরকারের শান্তিপুরের পাঠশালায়। নয় বছর বয়সে তাঁর ‘উপনয়ন’ হয়। কে জানত যে
পরে এই উপবীত(পৈতে) তিনি ত্যাগ করবেন এবং এ নিয়ে তৎকালীন সমাজে খুব হইচই
পড়ে যায়। সে প্রসঙ্গ পরে আসছি। তারপর এলেন হেজল নামের এক পাদ্রি সাহেবের
পাঠশালায়। এখানে তিনি খুব মন দিয়ে বাইবেল পাঠ করেন। গোবিন্দ ভট্টাচার্যের
টোল, পণ্ডিত কৃষ্ণগোপালের চতুষ্পাঠী হয়ে ইংরেজি ১৮৫৯ সালে তিনি এসে ভর্তি
হলেন কলকাতার সংস্কৃত কলেজে। সেই সময়ে কলকাতায় উদ্ধত নব্যবঙ্গের যুব
শ্রেণির প্রভাব খুব বেশি, খ্রিস্ট ভাবাশ্রিত কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্ম
সমাজের প্রভাবও ক্রমবর্ধমান, খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণেরও একটা ঝোঁক যুবকদের
মধ্যে—এমন একটা প্রতিকূল পরিবেশে বিজয়কৃষ্ণ বেশিদিন তুলসীমালা বা তিলকের
ওপর আস্থা রাখতে পারলেন না। তিনি হয়ে উঠলেন সংশয়বাদী, হয়ে উঠলেন
বৈদান্তিক। তাঁর নিজের কথায়, ‘হিন্দুশাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া ঘোর বৈদান্তিক
হইয়া পড়িলাম।....উপাসনার আবশ্যকতা স্বীকার করিতাম না।’
সংস্কৃত কলেজে পড়ার সময়েই আঠারো বছর বয়সে তিনি শিকারপুর গ্রাম নিবাসী
রামচন্দ্র ভাদুড়ী ও মুক্তকেশী দেবীর কন্যা যোগমায়া দেবীকে বিবাহ করেন।
বিবাহকালে যোগমায়া দেবীর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। সংস্কৃত কলেজ থেকে
‘পণ্ডিত’ হয়ে তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেন শল্যবিদ হওয়ার জন্য। তিনি
স্থির করলেন, সেবাব্রতকেই জীবনব্রত হিসেবে গ্রহণ করবেন। কলেজের ছাত্রদের
নিয়ে তিনি একটি ফোরাম তৈরী করেন, নাম দেন ‘হিতসঞ্চারিণী’। কলেজে থাকাকালীন
কলেজের ইংরেজ অধ্যক্ষ ভারতীয় ছাত্রদের মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করলে তিনি
তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি প্রকৃত অর্থেই দেশপ্রেমী ছিলেন। ১৮৬১- ১৮৬৩ সালে
বিজয়কৃষ্ণ ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের নেতা।
শিকারপুরে বিজয়কৃষ্ণের জন্মভিটা, বর্তমানে ছোটো একটি মন্দির
সেই সময় ব্রাহ্ম ধর্মের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সম্প্রদায়ের একটা অংশ
ঝুঁকে পড়ে। কেউ কেউ রাজশক্তির আনুকুল্য খ্রিস্টানধর্মও গ্রহণ করে। ব্রাহ্মধর্ম
নতুন জোয়ার নিয়ে আসে। সেই জোয়ারে বিজয়কৃষ্ণ নামক মহাপ্রাণ যুক্ত হন।
প্রথমে ব্রাহ্ম সমাজের নেতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরে কেশবচন্দ্র সেনের
সংস্পর্শে তিনি আসেন। ব্রাহ্ম ধর্মের মূলমন্ত্র - সকলেই এক ব্রহ্মের
সন্তান। সুতরাং ব্রাহ্মণের বিশেষ চিহ্ন ‘উপবীত’ তা তিনি ত্যাগ করেন। উপবীত
ত্যাগের পর তিনি নিজভূমি শান্তিপুরে আসেন। কিন্ত স্থানীয় মানুষ এবং
আত্মীয়রা তাঁকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এজন্য তাঁকে অশেষ কটূক্তি ও লাঞ্চনা
সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। তিনি ছিলেন
সত্যনিষ্ঠার পূজারী। এই সত্যনিষ্ঠার কারণে পরবর্তীকালে ব্রাহ্ম সমাজের সাথে
সংঘাতে যেতেও পিছপা হন নি। যাই হোক চিকিৎসাবিদ্যার শেষ পরীক্ষায় না বসেই
তিনি ব্রাহ্ম সমাজের প্রচারক হয়ে পূর্ববঙ্গ সফরে বেরিয়ে পড়লেন।
ব্রাহ্মসমাজের প্রচারক হিসাবে ডাক্তারি শিক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে তিনি অবিভক্ত
বাংলার বিভিন্ন জেলায় ও প্রত্যন্ত গ্রামে যান এবং পীড়িত মানুষের সেবায়
নিজেকে নিয়োজিত করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তিনি ছিলেন একাধারে সমাজ সংস্কারক
আবার অন্যদিকে ধর্ম সংস্কারক। বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেনের ন্যায় তিনিও
নারী শিক্ষার অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন।
সেইসময় নীলকর সাহেবদের সীমাহীন কৃষক নিগ্রহের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান
আন্দোলনকারী ছিলেন হরিনাথ মজুমদার, যিনি কাঙাল হরিনাথ নামে আজও বিখ্যাত ও
স্মরণীয়। ভক্তকবি ও গায়ক কাঙাল হরিনাথের গান আজও গবেষণার বিষয়। বস্তুত
কাঙাল হরিনাথই কৃষক আন্দোলনের প্রথম সার্থক নেতা। অবিভক্ত বাংলার যশোহর,
নদীয়া সংলগ্ন এলাকা ছিলো আন্দোলনের ক্ষেত্র। ভক্ত, কবি, বিদ্রোহী ও
নির্ভীক কাঙাল হরিনাথ ছিলেন প্রভু বিজয়কৃষ্ণের দীক্ষিত শিষ্য ও প্রেরণার
উৎস।
শিকারপুরে শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী সেবা সংঘ (অতিথি ভক্তদের থাকার জন্য)
প্রচারকরূপে বিজয়কৃষ্ণ উত্তর-পশ্চিম ভারতও পরিভ্রমণ করেন। উত্তর ভারতে
যখন তিনি ঘুরছিলেন ; তখন হঠাৎই এক কঠিন রোগে তিনি মরণাপন্ন হয়ে পড়েন।
শোনা যায়, এই দুঃসংবাদ পেয়ে ঢাকার অধিবাসী তাঁরই এক প্রিয় শিষ্য ছুটে
গেলেন বারদীর লোকনাথ ব্রহ্মচারীর কাছে। করুণ আবেদন জানালেন, গুরুর জীবন
রক্ষা করুন, তাতে আমার আয়ু নিতে হয়, নিন। গুরুগত প্রাণ এই শিষ্যকে দেখে
লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রীত হলেন, বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি বাড়ি ফিরে যাও। শুভ
সংবাদ পাবে।’ যথাসময়ে শুভ সংবাদ এল। পরবর্তীকালে বিজয়কৃষ্ণের একজন শিষ্য
বলেন, সে এক অলৌকিক ব্যাপার। মরণাপন্ন বিজয়কৃষ্ণের শিয়রে দেখা যেত লোকনাথ
ব্রহ্মচারীকে। অথচ তিনি তখন ঢাকার বারদীতেই ছিলেন। কথিত আছে একবার
চন্দ্রচূড় পাহাড়ে ভীষণ দাবানলে লোকনাথ ব্রহ্মচারী এবং বিজয়কৃষ্ণ আবদ্ধ
হয়ে দু’জনে নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হন। পিছিয়ে যেতে যেতে দেখেন নিচে ২০০
ফুট নীচুতে সমতলভূমি। লোকনাথ ব্রহ্মচারী বিজয়কৃষ্ণের হাত ধরে লাফ দিয়ে
সমতলভূমিতে নিরাপদে অবতরণ করেন। অদ্ভুত যোগবলের ক্রিয়া।
শুরু হল উত্তরভারতের তীর্থপরিক্রমা। এলেন গয়াধামে। সেখানে সাক্ষাৎ হল
রামাইৎ সাধু রঘুবীর দাসের সঙ্গে। তারপর ফল্গুনদীর অপর পাড়ে রামগয়ায়
সাক্ষাৎলাভ হয় যোগীবর গম্ভীরনাথের সঙ্গে। এলেন আকাশগঙ্গা পাহাড়ের
শীর্ষভূমিতে। শোনা যায়, বিজয়কৃষ্ণ সেখানে অলৌকিকভাবে দেখা পেলেন এক
যোগসিদ্ধ মহাপুরুষের। তিনি দেখা দিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বিজয়কৃষ্ণ
অনুভব করলেন সর্বদেহে এক অপূর্ব শিহরণ। অধীর হয়ে উঠলেন তিনি সেই
মহাপুরুষকে আবার দর্শন করার জন্য। একদিন রামশিলা পাহাড়ের অরণ্যে আবার
দর্শন পেলেন তাঁর। সেই দর্শন দিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তরুণ সাধক
বিজয়কৃষ্ণ হয়ে উঠলেন অস্থির। অবশেষে এক শুভদিনে আকাশগঙ্গা পাহাড়ে এই
মহাপুরুষ ব্রহ্মানন্দ স্বামী দীক্ষা দিলেন বিজয়কৃষ্ণকে। তারপর গুরুর
নির্দেশেই কাশীধামে এসে হরিহরানন্দ সরস্বতীর পদপ্রান্তে বসে গ্রহণ করলেন
সন্ন্যাস। বিজয়কৃষ্ণের হল নতুন জন্ম, নতুন পরিচয়। সন্ন্যাস নাম হল
অচ্যুতানন্দ সরস্বতী। কাশীধাম থেকে এলেন আবার গয়াধামের আকাশগঙ্গা পাহাড়ে।
গুরু ব্রহ্মানন্দের নির্দেশে শুরু হল কঠোর যোগ সাধনা, আসন পাতলেন এক
নির্জন গুহায়। লাভ করলেন যোগসিদ্ধি। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং
কেশবচন্দ্র সেনের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রথম জীবনে
ব্রাহ্মধর্মের একজন মহান প্রচারক রূপেই সর্বজনের কাছে ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয়।
তিনি স্বীয় জীবন মাধুর্যে হয়ে উঠেছিলেন প্রেম ভক্তির প্রতীক।
শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বাটী, শান্তিপুর (ছবি-বিশ্বনাথ মুখার্জি)
সেবার তিনি তীর্থ পরিক্রমা করতে করতে শিবপুরী কাশীতে এসেছেন। তখনও তিনি
নিরাকার ব্রহ্মের চিন্তায় তন্ময়, বিশ্বাস করেন না মূর্তি পূজায়। হৃদয়ে
তাঁর মুক্তিলাভের এবং সত্য দর্শনের প্রবল এষণা। অন্তরের গভীরে তাই সদাই
অনুভব করেন এক প্রচণ্ড অস্থিরতাকে। কোথায় যাবেন, কার কাছে গিয়ে সঠিক পথের
সন্ধান পাবেন—সেই চিন্তায় তিনি তখন উতলা।
কাশীতে আসার পর তিনি দর্শন করলেন তৈলঙ্গস্বামীকে। সে-ও এক বিচিত্র
দর্শন। উলঙ্গ তৈলঙ্গস্বামী সহস্রচক্ষুর সামনে গঙ্গায় ভেসে বেড়াচ্ছেন,
গঙ্গার স্রোতে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে ভেসে চলে যাচ্ছেন। আর তরুণ
দর্শনপ্রার্থী বিজয়কৃষ্ণ নদীর তীর ধরে তাঁকে অনুসরণ করে অবিরাম ছুটে
চলেছেন। এই অপূর্ব দৃশ্য কল্পনা করেও গায়ে শিহরণ জাগে। একজনকে দর্শন করার
জন্য, ধরার জন্য আরেকজনের কী গভীর ব্যাকুলতা। তারপর যখন জল থেকে উঠে এসে
তৈলঙ্গস্বামী এক জায়গায় স্থির হয়ে বসলেন, সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে
হাজির হলেন বিজয়কৃষ্ণ। বিজয়কৃষ্ণকে দেখেই চলমান শিব চঞ্চল হয়ে উঠতেন
কিছু খাওয়াবার জন্য। তিনি সেখানে উপস্থিত ভক্তদের ইঙ্গিতে আদেশ করতেন
গোঁসাইজির জন্য ভালো ভালো খাবার, মিষ্টি নিয়ে আসতে। ভক্তরা তৎক্ষণাৎ সেই
আদেশ পালন করতেন। এবার তিনি পরম স্নেহে নানারকম ইঙ্গিত করে বিজয়কৃষ্ণকে
সেগুলি খাওয়াতেন। গোঁসাই খেলে তিনি তৃপ্তি পেতেন, প্রসন্ন হতেন।
তৈলঙ্গস্বামীর গঙ্গা বিহার নিয়ে বিজয়কৃষ্ণের নানারকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
সেইসব অভিজ্ঞতার কথা তিনি পরবর্তীকালে বলেছেন।
শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ মন্দির বাটীর ভেতরের অংশ, শান্তিপুর (ছবি-বিশ্বনাথ মুখার্জি)
এভাবেই চলছিল দুই মহাপুরুষের লীলা। সম্ভবত ভাবীকালের জন্য চলছিল এক
অপূর্ব প্রস্তুতিপর্ব। একদিন সেই পর্বের পরিণতি হয়ে উঠল অনিবার্য। সেদিন
আকস্মিকভাবে তৈলঙ্গস্বামী ব্রাহ্ম বিজয়কৃষ্ণকে বললেন, ‘এবার আমি তোমাকে
মন্ত্রদীক্ষা দেব।’ এমন কথা যে শুনতে হবে তা গোঁসাইজি কল্পনাও করতে
পারেননি। তাই তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরে
অন্তরঙ্গ মেলামেশার ফলে দুজনের আধ্যাত্মিক সম্পর্কও অনেকটা সহজ হয়ে
উঠেছিল। স্পষ্ট করেই প্রভু বিজয়কৃষ্ণ বললেন, ‘আচ্ছা, আপনার কাছে আমি কেন
দীক্ষা নেব ? আমি তো ব্রাহ্ম, আপনি আমাকে কী করে দীক্ষা দেবেন ?’ চলমান
শিবের মুখমণ্ডল উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। তিনি বললেন, ‘শোন, একটা বিশেষ কারণে
তোমাকে দীক্ষা দেব। তবে আসল দীক্ষা আমি দেব না। শরীর শুদ্ধ করার জন্য
গুরুকরণ করতে হয়, তাই গুরুকরণ করা প্রয়োজন। তাই বলে আমি তোমার প্রকৃত
গুরু নই।’ এরপর তিনি প্রভু বিজয়কৃষ্ণকে ত্রিবিধ মন্ত্রে দীক্ষা দিলেন।
দীক্ষাদানের পর বললেন, ‘এবার তুমি যেখানে ইচ্ছা যেতে পারো। আমাকে ভগবান যে
আদেশ দিয়েছিলেন, আমি তা পালন করলাম মাত্র।’ তারপর ? তারপর কাশীর গঙ্গা
দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। প্রভু বিজয়কৃষ্ণের জীবনেও ঘটেছে আধ্যাত্মিক
রূপান্তর। তিনি গ্রহণ করেছেন সন্ন্যাস এবং যোগসাধন, হয়েছেন ভক্তিসাধক।
আবার ফিরে এলেন কলকাতায়। আবার সেই ব্রাহ্মসমাজ। কিন্তু সেই সময়
কেশবচন্দ্র সেনের নাবালিকা কন্যাকে কোচবিহার রাজ পরিবারে বিয়ে দেওয়া
নিয়ে ব্রাহ্মসমাজে দেখা দিল চরম মতবিরোধ। কারণ, ব্রাহ্মরা ছিলেন
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে। কেশবচন্দ্রের নবধর্মের বিরোধিতায় বিজয়কৃষ্ণ,
শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখ গড়ে তুললেন ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’। বিজয়কৃষ্ণ
ঢাকায় গেলেন সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের প্রচারক হিসেবে। এই সময় কুলদানন্দ
ব্রহ্মচারী বিজয়কৃষ্ণের কৃপালাভ করে সিদ্ধ সাধক কুলদানন্দে রূপান্তরিত হন।
কুলদানন্দের বড়ো ভাই সারদাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজয়কৃষ্ণের সেবায়
জীবন উৎসর্গ করেন। ঢাকায় সদাই নাম সংকীর্তনে বিভোর হয়ে থাকতেন
বিজয়কৃষ্ণ। তাঁর এই ‘হিন্দুসুলভ’ আচরণকে ব্রাহ্ম নেতারা কিছুতেই মেনে নিতে
পারছিলেন না। অবশেষে তিনিও ব্রাহ্মসমাজ ত্যাগ করে ঢাকার গেণ্ডারিয়ায়
কুটির বানিয়ে সাধন ভজনেই হলেন আত্মসমাহিত, হলেন ভক্তি সাধক বিজয়কৃষ্ণ।
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
শিবনাথ শাস্ত্রী বলতেন, ‘গোঁসাইকে সকলের সামনে দেখিয়ে বেড়ালে, তাঁর এই
ভক্তিসমৃদ্ধ মূর্তি দেখালেই ব্রাহ্ম ধর্মের প্রচার হবে আর কোনও প্রচেষ্টার
দরকার হবে না।’ একসময় বিজয়কৃষ্ণ স্বীয় মহিমায় ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য
পদ লাভ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই নিরাকারবাদী ব্রাহ্ম-আচার্যের জীবনে
ঘটল আমূল রূপান্তর। অবতার বরিষ্ঠ শ্রীরামকৃষ্ণ এবং কাশীর সচল শিব শ্রী
তৈলঙ্গস্বামীর প্রভাবে তিনি একসময় নিরাকার ব্রহ্মের চিন্তা থেকে চলে এলেন
সাকার আরাধনায়। অনন্তকে উপলব্ধি করার জন্যও যে একটা পর্যায় পর্যন্ত
প্রতিমা বা মূর্তির পূজা প্রয়োজন, অনুভব করলেন আধ্যাত্মিক ভারতের সেই
সনাতন সত্য ধারণাকে। এ জন্য ব্রাহ্ম বিজয়কৃষ্ণকে অতিক্রম করতে হয়েছে এক
ভিন্নতর সাধনার পথ।
বিজয়কৃষ্ণের এই রূপান্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরের
ঘটনাগুলিও স্মরণ করতে হয়। স্মরণ করতে হয়, সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য
রূপে তিনি যখন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যেতে শুরু করেন, তখন ধীরে ধীরে তাঁর
অন্তরলোকে সুগভীর পরিবর্তনের সূচনালগ্ন। বিজয়কৃষ্ণের উচ্চ অধ্যাত্ম অবস্থা
সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণ একদিন বললেন, ‘বিজয় এখন সমাধিগৃহের দ্বারে করাঘাত
করছে।’ বিজয়কৃষ্ণ একদিন ভাবে বিভোর হয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের পা দুটি নিজের
বুকে টেনে নিয়ে বললেন, ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ভগবানের অবতার।’ সেদিনের সেই অপরূপ
দৃশ্য ছিল অনির্বচনীয়।
শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে এসে বিজয়কৃষ্ণের চিন্তাজগতে দেখা দিল
পরিবর্তনের স্রোত। তিনি যেন নতুন এক অধ্যাত্ম আলোয় হলেন উদ্ভাসিত, উপলব্ধি
করলেন সনাতন ধর্মের সত্যস্বরূপ এবং সাকার ঈশ্বরে হয়ে উঠলেন বিশ্বাসী।
শুধুমাত্র বিজয়কৃষ্ণ নন, সেই সময়কার ব্রাহ্ম আন্দোলনের সকল নায়কই
শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং এই ব্রাহ্ম সমাজের সূত্রেই সে
যুগের সেরা তরুণরা পেয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবের স্পর্শ।
এভাবে শুরু হয়েছিল এক নতুন যুগ। আমরা এখানে শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত থেকে এক দিনের কথা স্মরণ করতে পারি।
সেদিন ছিল ১৮৮২ সালের ১৪ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার। দক্ষিণেশ্বর
কালীবাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করতে এসেছেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। সঙ্গে
আরও তিন-চারজন ব্রহ্মভক্ত। শ্রীরামকৃষ্ণের পরম ভক্ত বলরাম বসুর সঙ্গে তাঁরা
নৌকোয় কলকাতা থেকে এসেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ দুপুরে সবে মাত্র একটু বিশ্রাম
করছেন। তিনি তক্তপোষের ওপর বসে আছেন। বিজয়কৃষ্ণ এবং অন্যান্য ভক্তরা তাঁর
দিকে মুখ করে মেঝেতে বসেছেন। বিজয়কৃষ্ণ শূল বেদনায় দারুণ কষ্ট পান, তাই
সঙ্গে শিশিতে ওষুধ এনেছেন। ওষুধ খাওয়ার সময় হলে খাবেন। তখন তিনি সাধারণ
ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য।
পুরীতে বিজয়কৃষ্ণের সমাধি মন্দির (ছবি-সুব্রত পাল)
কথামৃতকার ‘শ্রীম’ বলেছেন, মহাভক্ত পূর্বপুরুষ শ্রীঅদ্বৈতের শোণিত
বিজয়কৃষ্ণের ধমনীতে প্রবাহিত, শরীর মধ্যস্থিত হরিপ্রেমের বীজ এখন
প্রকাশোন্মুখ—কেবল কাল প্রতীক্ষা করছে। তাই তিনি ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের
দেবদুর্লভ হরিপ্রেমে ‘গরগর মাতোয়ারা’ অবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
মন্ত্রমুগ্ধ সাপ যেমন ফণা ধরে সাপুড়ের কাছে বসে থাকে, বিজয়কৃষ্ণ
পরমহংসদেবের শ্রীমুখনিঃসৃত ভাগবত শুনতে শুনতে মুগ্ধ হয়ে তাঁর কাছে বসে
থাকেন। আবার যখন শ্রীরামকৃষ্ণ হরিপ্রেমে বালকের মতো নাচতে থাকেন, বিজয়ও
তাঁর সঙ্গে নাচতে থাকেন। বিজয়কৃষ্ণ নানা প্রসঙ্গের পর জানতে চাইলেন,
‘ঈশ্বর দর্শন কেমন করে হয় ?’
শ্রীরামকৃষ্ণ
উত্তর দিলেন, ‘চিত্তশুদ্ধি না হলে হয় না। কামিনী-কাঞ্চনে মন মলিন হয়ে
আছে, মনের কাদা ধুয়ে ফেললে তখন চুম্বক টানে। মনের ময়লা তেমনি চোখের জল
দিয়ে ধুয়ে ফেলা যায়। ‘হে ঈশ্বর, আর অমন কাজ করব না’ বলে যদি কেউ অনুতাপে
কাঁদে, তাহলে ময়লাটা ধুয়ে যায়। তখন ঈশ্বর রূপ চুম্বক পাথর মনরূপ সুঁচকে
টেনে নেন। তখন সমাধি হয়, ঈশ্বর দর্শন হয়।’
বিজয়কৃষ্ণ তাঁর জীবনে সমসাময়িক মহাপুরুষগণ সকলেরই ঘনিষ্ঠ ও প্রিয় পাত্র
ছিলেন। পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ বিজয়কৃষ্ণকে যে কি পরিমান স্নেহ করতেন তা
কথামৃত ও রামকৃষ্ণ সাহিত্যে বর্ণিত আছে। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর একান্ত প্রিয়
বিজয়কৃষ্ণকে সম্বোধন করছেন, “কোথাও চার আনা, কোথাও আট আনা, কোথাও বারো আনা,
কিন্তু বিজয়কৃষ্ণের কাছে ষোল আনাই ধর্ম ব্রহ্মস্বরূপ বিরাজ করছে”। এভাবেই
দিনে দিনে দক্ষিণেশ্বরের আনন্দ সভায় বিজয়কৃষ্ণ পেলেন পরমানন্দের স্বাদ।
বিজয়কৃষ্ণের রক্তে ছিল হরিনাম। প্রতিনিয়ত হরিনাম করতে করতে তাঁর দিব্যদেহ
হয়ে উঠল পবিত্রতার প্রতীক।
পুরীতে বিজয়কৃষ্ণের সমাধিস্থল (ছবি-সুব্রত পাল)
একবার বৃন্দাবনে তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যান, সেখানে তাঁর স্ত্রী কলেরা
রোগে আক্রান্ত হয়ে দেহত্যাগ করেন। এরপর বিজয়কৃষ্ণ কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা
দেন। তারপর তিনি মনস্থির করেন শ্রীক্ষেত্র পুরীধামের উদ্দেশ্যে যাত্রা
করবেন। তাঁর মা স্বর্ণময়ীদেবী পুত্রকে শ্রীক্ষেত্রে যাত্রা করতে নিষেধ
করেন। স্বর্ণময়ীদেবীর আশংকা ছিল বিজয়কৃষ্ণ শ্রীক্ষেত্র থেকে আর ফিরে আসবেন
না। কিন্তু বিজয়কৃষ্ণ অনড়। তিনি পুরীধামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
স্বর্ণময়ীদেবীর আশংকা সত্য হয়। বিজয়কৃষ্ণ আর শ্রীক্ষেত্র থেকে ফেরেননি।
বিজয়কৃষ্ণের নাম ও খ্যাতি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। পুরীধামে
থাকাকালীন ভক্তিরস প্রেম সংকীর্তনের মাধ্যমে তিনি এক স্বর্গীয় পরিবেশ
সৃষ্টি করতেন। প্রচুর মানুষ তাঁর অনুগামী হয় এবং অনেকে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন
করে। তাঁর নাম ও খ্যাতি অনেকের ঈর্ষা ও হিংসার কারণ হয়। একদিন এক ভণ্ড
সন্ন্যাসী প্রসাদ হিসাবে বিজয়কৃষ্ণকে বিষমিশ্রিত মিষ্টান্ন দেয়। সহজ সরল
মনে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রসাদ খেয়ে বিজয়কৃষ্ণ ভীষণ
অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসাতেও সাড়া দেন না।
অবশেষে বাংলা ১৩০৬ সালের ২২ শে জ্যৈষ্ঠ, কৃষ্ণদ্বাদশী, ইংরেজি ১৮৯৯
সালের জুন মাসে শ্রীক্ষেত্রে বিজয়কৃষ্ণ প্রয়াত হন। বিরাট এক শূন্যতার
সৃষ্টি হয়। তাঁর নশ্বরদেহ পুরীধামে সমাধিস্থ করা হয় এবং একটি মন্দির স্থাপন
করা হয়। আজও তাঁর প্রচুর ভক্ত ও শিষ্য বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে আছে। অনেকে
তাঁকে গোঁসাইজি বলেও সম্বোধন করেন। তাঁর বিখ্যাত শিষ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
বিপিনচন্দ্র পাল, অশ্বিনী কুমার দত্ত ও সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
পুরীতে সমাধি মন্দিরে আশ্চর্য বকুল গাছ (ছবি-সুব্রত পাল)
২০০৯ সালে সস্ত্রীক আমি পুরীধাম গিয়েছিলাম। শ্রীশ্রী বিজয়কৃষ্ণের
সমাধিমন্দিরেও আমরা গিয়েছিলাম। অদ্ভুত এক প্রশান্তি মনে এসেছিল।
সমাধিপ্রাঙ্গনে একটা বেশ বড়ো বকুল গাছ আছে, চারিদিকে তার শাখাপ্রশাখা ।
কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় বিজয়কৃষ্ণের সমাধিস্থলে বকুল গাছের শাখা
প্রণামরত অবস্থায় ভূমি স্পর্শ করে আছে। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। অলৌকিক না
স্বর্গীয় তা আমি জানি না। শিক্ষকতার কর্মসূত্রে বিজয়কৃষ্ণের জন্মস্থান
শিকারপুরে আমার নিত্য যাতায়াত। ওঁর জন্মস্থানে শিকারপুরের স্থানীয় মানুষ
এবং ভক্তদের সহায়তায় প্রতিবছর ঝুলনপূর্ণিমায় খুব সুন্দর অনুষ্ঠান হয়।
প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। বাইরে থেকেও অনেক ভক্ত আসেন এই অনুষ্ঠানে। কিন্তু
এবার করোনা আবহে সব কিছুই ম্লান। শিকারপুরে ওনার জন্মস্থানে এক ছোট্ট
মন্দির আছে। ভক্তদের থাকার ব্যবস্থাও আছে।
বর্তমানে চারিদিকে উন্মত্ত হানাহানি ও ভেদাভেদের মধ্যে শ্রীশ্রী
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বাণী এবং আদর্শ আমাদের সকলের পাথেয় হওয়া উচিত। তাঁর
আদর্শ ও ভাবধারা সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। সমস্ত
সংকীর্ণতার উর্দ্ধে এক উন্নত সাম্যময় সমাজ তৈরী হোক। আর সেটাই হবে তাঁর
প্রতি আমাদের সঠিক শ্রদ্ধার্ঘ্য। একটাই আক্ষেপ তাঁর জন্মভিটেকে সঠিক
সংস্কার এবং সংরক্ষণ করতে সেভাবে উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয় নি।
তথ্যসূত্র -
১। বাংলার নব জাগরণ ও সমাজ জীবনে প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী - প্রণব আচার্য।
২। শ্রী শ্রী সদ্ গুরু সঙ্গ ( অখণ্ড সংস্করণ) - শ্রীমৎকুলদানন্দ ব্রহ্মচারী
৩। প্রভু বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী - স্বাধীন সান্যাল