বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮

মুগল আমলের 'হারেম'


    মুগল আমলের 'হারেম'

    হারেম শব্দটির অর্থ -- অন্তঃপুর। অন্দরমহল।

     ফেসবুক থেকে    শেয়ার করেছেন    প্রণব কুমার কুণ্ডু
ইতিহাসের হারেম।

সাহিত‍্য, ইতিহাসে, নাটকে, যাত্রায়, সিনেমায় হারেম কথাটা বারবার শুনছি। হারেম আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ বা অলঙ্ঘনীয় সীমারেখা। রাজপ্রাসাদের যে আলাদা অংশে শাসকের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা, নারী কর্মচারী, উপপত্নী প্রমুখ বাস করতেন তা হারেম, হারিম বা হেরেম নামে অভিহিত হতো। বহিরাগতদের হারেমে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

মুগল আমলে হারেম প্রথা পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ লাভ করে। আইন-ই-আকবরী এবং আকবরনামার লেখক আবুল ফজল হারেমের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। মুগল আমলে শাহী পরিবারের নারীাদের আবাসস্থলগুলি (female apartments) ‘মহল’ নামে পরিচিত ছিল। আবুল ফজল একে ‘শাবিস্তান-ই-খাস’ নামে অভিহিত করেছেন। রাজপ্রাসাদের এক বিশাল অংশ জুড়ে নারীদের বাস ছিল। তাঁদের প্রত্যেকের আলাদা মহল ছিল। এছাড়া আরও তিনটি প্রাসাদে সম্রাটের উপপত্নীগণ বাস করতেন। এগুলিকে বলা হতো ‘লেথেবার’ (রবিবার), ‘মঙ্গল’ (মঙ্গলবার) এবং ‘জেনিসার’ (শনিবার) মহল। এই নির্ধারিত দিনগুলিতে সম্রাট নির্দিষ্ট প্রাসাদে যেতেন। এছাড়া সম্রাটের বিদেশী উপপত্নীদের জন্য ‘বাঙালি মহল’ নামে একটি পৃথক মহল ছিল।
মুগল সম্রাজ্ঞীদের ব্যক্তিগত ঘরগুলি ছিল বেশ সমৃদ্ধ। মহলসমূহে তাঁরা আড়ম্বরপূর্ণ ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। নারীগণ মহলের বাইরে দেখতে পেলেও কেউ তাঁদের দেখতে পেত না। তাঁদের ভবনগুলির জাঁকজমক ও সৌন্দর্য নির্ধারিত হতো তাঁদের স্ব স্ব মর্যাদা ও আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে। চতুর্দিকে ঝর্ণা ও বাগানঘেরা এ ভবনগুলির প্রতিটিতে ছিল প্রবহমান জলের আধার ও আরামদায়ক বিশ্রামস্থল।
হারেমের ব্যবস্থাপনা ছিল সুসংগঠিত। এর দারোগা ও তত্ত্বাবধায়করূপে নিয়োগ পেতেন সচ্চরিত্র মহিলাগণ। তারা হারেমের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব পালন করতেন। এর শৃঙ্খলা এবং নিয়মানুবর্তিতা রক্ষার দায়িত্বে থাকতেন মহিলা দারোগা। ‘তহবিলদার’ বা কোষাধ্যক্ষের নিকট থেকে উচ্চ মাসোহারাভোগী এ সকল মহিলা তাদের স্ব স্ব বেতন নিতেন। হারেমের সর্বোচ্চ পদাধিকারী মহিলা কর্মচারী ছিলেন ‘মহলদার’। এরা সম্রাটের গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করতেন। মহলদারের হস্তক্ষেপের কারণে প্রায়শই রাজকুমারদের সাথে তার তিক্ততা সৃষ্টি হতো। মহলদারের তীক্ষ্ণ নজরদারী রাজকুমারগণ পছন্দ করতেন না।
হারেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বেশ সুদৃঢ়। সম্রাটের ভবনের নিকট বিশ্বস্ত নারীরক্ষীগণ নিয়োজিত থাকত। হারেমের বহির্প্রান্তে খোজাগণ (eunuch) এবং তাদের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে একদল অনুগত রাজপুত বাহিনী প্রহরায় নিয়োজিত থাকত। হারেমে প্রবেশ করা ছিল দুঃসাধ্য। সূর্যাস্তের সময় হারেমের দ্বার বন্ধ হয়ে যেত এবং আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। প্রত্যেক মহিলারক্ষী হারেমের সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে ‘নাজির’কে অবহিত করতে বাধ্য ছিলেন। হারেমের সব ক্রিয়াকলাপের লিখিত বিবরণ সম্রাটের নিকট প্রেরিত হতো। সাম্রাজ্যের কোন অভিজাতের স্ত্রী যদি হারেম দর্শনে অভিলাষী হতেন তাহলে তাকে প্রথমে হারেমের কর্মচারীদের অবহিত করতে হতো। কর্মচারীগণ প্রাসাদ কর্মকর্তাদের কাছে এরূপ আকাঙ্ক্ষার কথা জানাত। এরপর যদি তিনি হারেমে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হতেন তবেই তাকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হতো। হারেমের নিরাপত্তারক্ষী খোজাগণ ‘নাজির’ নামেও অভিহিত হতো। প্রত্যেক রাজকুমারীর একজন করে নাজির থাকত যার উপর তিনি গভীর আস্থা স্থাপন করতেন। সম্রাট বা নওয়াব প্রাসাদের অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়ানোর সময় ‘কানিজ’ (নারী কর্মচারী)-দের দল তাঁর অনুগমন করত।
১৭১২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট প্রথম শাহ আলমের মৃত্যুর পর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে মুগল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং বাংলা, হায়দ্রাবাদ ও লক্ষ্ণৌতে স্বাধীন প্রাদেশিক রাজবংশের উদ্ভব হয়। বাংলার স্বাধীন নওয়াবগণ মুগল ঐতিহ্য অনুসারে হারেম প্রথা প্রবর্তন করেন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীতে নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরও হারেম ব্যবস্থা অপরিবর্তিত ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ কর্মকর্তা ও ইংরেজ বণিকগণ নওয়াবদের মতো হারেম রীতি অনুসরণ করে। তাদের হারেমে আর্মেনীয়, পর্তুগিজ, বাঙালি, এমনকি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের সমাবেশ ঘটতো।
সাধারণত বাংলার নওয়াবগণ দুই বা ততোধিক বিয়ে করতেন। সর্বজ্যেষ্ঠা বেগম ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং বিশেষ সম্মানের অধিকারী। হারেমের সমগ্র ব্যবস্থাপনা নওয়াবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। নির্দিষ্ট দিনে নওয়াব নির্দিষ্ট পত্নীর সেবা গ্রহণ করতেন। ‘কানিজ’গণ নওয়াবদের জন্য সবরকম আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করত। বাইরে গমনের সময় শুধু নওয়াবের প্রিয় পত্নী তাঁর সঙ্গী হতে পারতেন। অন্য পত্নীগণ খোজাদের তত্ত্বাবধানে থাকতেন। হারেমের নারীদের পোশাক ছিল অতি মূল্যবান, তারা দামী খাদ্য গ্রহণ করতেন এবং সর্ব প্রকার পার্থিব সুখ উপভোগ করতেন। নওয়াবদের সুদৃষ্টি লাভের জন্য তারা প্রায়ই পরস্পরের প্রতি বিদ্বিষ্ট মনোভাব পোষণ করতেন। নওয়াব ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ যাতে কোন বেগমের দর্শনলাভ না করে সেজন্য প্রত্যেক বেগমের প্রহরায় খোজা ও বাঙালি ক্রীতদাসীদের নিয়োজিত করা হতো। অন্যান্য সম্ভ্রান্ত মহিলারাও (আমীর পত্নী) বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্থ ছিলেন।
বাংলার নওয়াবদের প্রত্যেক পত্নী প্রাসাদের পৃথক পৃথক ভবনে বাস করতেন। তাঁদেরকে নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক ভাতা দেওয়া হতো। তাঁদের সেবায় বহু দাস-দাসী নিয়োজিত থাকত। নওয়াবের উপর প্রভাবের ভিত্তিতে একজন বেগমের শানশওকত নির্ভর করত। বেগমদের ভবনগুলি সুউচ্চ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। প্রাচীরের অভ্যন্তরে সুদৃশ্য বাগানে বেগমগণ আনন্দময় সময় কাটাতেন। মুগলদের মতো বাংলার নওয়াবদেরও উপপত্নী থাকতেন। সঙ্গীতের আসরে তারা নওয়াবকে আফিম ও উত্তেজক পানীয় গ্রহণে উৎসাহিত করতেন। প্রত্যেক উপপত্নী নিজস্ব ভবনে বাস করতেন।
বাংলার নওয়াবদের মধ্যে অবশ্য ব্যতিক্রমও ছিল। আলীবর্দী খান ছিলেন ধর্মভীরু; তাঁর সমসাময়িক ইউরোপীয়গণ তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন। তিনি মদ্য ও নারীতে আসক্ত ছিলেন না। পূর্বাহ্নে খবর না দিয়ে তিনি কখনও হারেমে যেতেন না। পরাজিত ও নিহত বিদ্রোহীদের স্ত্রী-কন্যাগণ আলীবর্দীর হারেমে আশ্রয় পেতেন। তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার এবং হারেমের অভ্যন্তরে তাদের জন্য ভবন নির্দিষ্ট করা হতো। যখনই তিনি উপহার হিসেবে কোন ফল বা কোন বিশেষ উপঢৌকন পেতেন তখনই তিনি তার বেগমের মাধ্যমে অন্তঃপুরের নারীদের জন্য তা পাঠিয়ে দিতেন। সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতিতে বাংলার নওয়াবদের হারেমের কোন কোন মহিলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। এদের মধ্যে ঘসেটি বেগম, লুৎফুন্নেসা বেগম ও মুন্নী বেগম এর নাম উল্লেখযোগ‍্য।



ব্যাটারি আবিষ্কার







ব্যাটারি আবিষ্কার


ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন                প্রণব কুমার কুণ্ডু



Misti Sarmistha


ভোল্টা-গ্যালভানি দ্বন্দ্ব ও ব্যাটারির উদ্ভাবন

বিদ্যুতের ইতিহাসে দ্বন্দ্বের কথা বলতেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে নিকোলা টেসলা ও টমাস আলভা এডিসনের দ্বন্দ্বের কথা। ডিসি কারেন্ট ও এসি কারেন্ট নিয়ে এ দুজন উদ্ভাবকের দ্বন্দ্ব ‘দ্য ওয়ার অফ ইলেক্ট্রিসিটি’ নামে ইতিহাস-বিখ্যাত হয়ে আছে। তবে বিদ্যুৎ নিয়ে মহারথীদের দ্বন্দ্ব সেবারই প্রথম নয়, এরও বহু আগে নিজেদের আবিষ্কার নিয়ে আরো দুজন বিজ্ঞানী এমন বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।

লুইজি গ্যালভানি ও আলেসান্দ্রো ভোল্টা, নাম দুটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বিদ্যুৎ নিয়ে কাজের জন্য ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন দুজনই। নিজেদের আবিষ্কার নিয়ে পারস্পারিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন তারাও। তবে তাদের দ্বন্দ্ব তো আর বাকী দশজনের মতো কুৎসিত হতে পারে না, সেখান থেকেও বেরিয়ে আসে অসাধারণ সব উদ্ভাবন। ভোল্টা ও গ্যালভানির দ্বন্দ্ব থেকে জন্ম হয়েছিল তড়িৎকোষ বা ব্যাটারির। সে গল্পই বলা হবে আজকের লেখায়। তাহলে একদম শুরু থেকে শুরু করা যাক।

১৭৫৭ সালের দিকে একজন ফরাসি উদ্ভিদবিজ্ঞানী দক্ষিণ আমেরিকায় ঘুরতে গিয়ে এক নতুন ধরনের ক্যাটফিশ লক্ষ্য করেন। এটিকে স্পর্শ করতেই ইলেকট্রিক শকের মতো একধরনের অনুভূতি টের পান তিনি। ১৭৭২ সালে ভারতে কর্মরত একজন বৃটিশ কর্মকর্তা একই ধরনের অন্য একটি মাছ আবিষ্কার করেন। তিনি একধরনের ইল মাছ দেখতে পান, যার শরীর সম্পূর্ণরূপে চার্জযুক্ত। এ মাছটি নিজের ত্বকের ওপর প্রবাহমান বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গও তৈরি করতে পারতো।

এসকল আবিষ্কারের ফলে বেশ কয়েকজন গবেষক ভাবতে শুরু করেন যে, “কিছু প্রাণীর শরীরে কিংবা হয়তো সকল প্রাণীর শরীরেই বিদ্যুৎ শক্তি জমা থাকে।” এর আগে মানুষ কেবল জানতো যে প্রাণীদেহ খুব দ্রুত বিদ্যুৎ পরিবহণ করতে সক্ষম, কিন্তু শরীরে চার্জ সংরক্ষণ ও তা কাজে লাগানোর নতুন ধারণাটি মানুষকে ভীষণ কৌতূহলী করে তোলে। অনেকেই ‘এনিম্যাল ইলেকট্রিসিটি’ নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। এ গবেষকদের মধ্যেই একজন ছিলেন ইতালির বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমির অধ্যাপক লুইজি গ্যালভানি।

গ্যালভানি বিদ্যুতের বিষয়টি প্রথম লক্ষ্য করেন ব্যাঙ ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে। ব্যবচ্ছেদ করার জন্য তিনি একটি ব্যাঙকে তামার প্লেটে রাখতেন, এরপর দস্তার তৈরি ক্লিপ দিয়ে এটিকে আঁটকে রাখতেন প্লেটের সাথে। একদিন তিনি লক্ষ্য করলেন, যখনই একটি সদ্য কাটা ব্যাঙের শরীরে দস্তার ক্লিপটি স্পর্শ করছে, তখনই ব্যাঙটির পাগুলো ঝাঁকি খেয়ে উঠছে। অনেকটা বৈদ্যুতিক শক পাওয়া কারো শরীরের মতো। তিনি ধারণা করেন যে, ব্যাঙের পেশিতে থাকা তরলই এনিম্যাল ইলেক্ট্রিসিটি জমা করে রাখে এবং তিনি তার এ তত্ত্ব প্রকাশ করেন।

গ্যালভানির তত্ত্বটি প্রকাশ হওয়ার পর বিজ্ঞানী মহলে এটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানীদের আড্ডায় পছন্দের তর্কের বিষয় হয়ে ওঠে এটি। এ তত্ত্বের বিরোধীতাও করেন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। এ বিরোধী বিজ্ঞানীদের একজনই ছিলেন, গ্যালভানির প্রাক্তন সহকর্মী ও বন্ধু আলেসান্দ্রো ভোল্টা। মিথেন গ্যাস আবিষ্কারের জন্য ভোল্টা ততদিনে বেশ বিখ্যত। ভোল্টা বলেন, ব্যাঙটি যে বৈদ্যুতিক শক পেয়েছে তা এর তরলে জমা থাকা বিদ্যুতের জন্য নয়। দুটি ভিন্ন ধাতু, তামা ও দস্তার মধ্যকার বিক্রিয়ার ফলেই এ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে।

এদিকে গ্যালভানিও তার তত্ত্বে অনড় থাকলেন। এ ঝামেলা বেশ পাকিয়ে ওঠে যখন দুজনেই জনসম্মুখে একে অপরের সমালোচনা করতে শুরু করেন। সময়ের সাথে এ বিতর্ক এতটা তীব্র হয়ে ওঠে যে, দুই বন্ধু সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। গ্যালভানি পরবর্তীতে দেখান যে, তিনি যদি ব্যাঙকে স্পর্শ করতে কেবল একধরনের ধাতু ব্যবহার করেন তা-ও ব্যাঙের শরীর ঝাঁকি খেয়ে ওঠে। ভোল্টাও হার মানবার পাত্র নয়। তিনিও নিজের তত্ত্ব প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। দেখাতে চেষ্টা করলেন যে, ব্যাঙ নয়, ধাতুর মধ্যকার বিক্রিয়াই বিদ্যুৎ শক্তির জন্ম দেয়।

অবশেষে ১৮০০ সালের মার্চের দিকে ভোল্টা সফল হন। কেবলমাত্র বিভিন্ন ধাতুর সংযোগের মাধ্যমে একটানা বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন করতে সক্ষম হন তিনি। এক্ষেত্রে কোনো ব্যাঙের প্রয়োজন হয়নি তার। তখন তার ভোল্টায়িক পাইল ছিল পুরো পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মতো উদ্ভাবন। এ ডিভাইসটির গঠন কিন্তু তেমন বেশি জটিল কিছু ছিল না। কিছু পাতলা দস্তা ও রূপার পাত একের পর এক সাজান তিনি। এবং পরপর দুটি পাতের মাঝখানে দিয়ে দেন নোনা জলে সিক্ত ফেল্টের কাপড় অথবা একধরনের শক্ত কাগজ। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল ভোল্টার তড়িৎকোষ!

ভোল্টা এর নাম দেন ‘কৃত্রিম বৈদ্যুতিক অঙ্গ’। এটি বিদ্যুৎ উৎপন্ন ও জমা করে রাখতে সক্ষম ছিল। এর একদম উপরের দস্তার চাকতির সাথে নিচের রূপার চাকতিকে কোনো তামার তারের মাধ্যমে সংযুক্ত করলে তারটির মধ্য দিয়ে একটানা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতো। গ্যালভানি ভোল্টার এ আবিষ্কারের বছরখানেক পূর্বেই মারা গিয়েছিলেন, তাই এ উদ্ভাবনটি দেখে আবার বিতর্ক শুরু করার সুযোগ আর পাননি।

ভোল্টায়িক পাইল কেন এত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ছিল? কারণ এটি পূর্বেকার বিদ্যুৎশক্তির উৎসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উন্নত উদ্ভাবন ছিল। এর পূর্বে বিদ্যুতের উৎস বলতে ছিল লেইডেন জার, যা মূলত একটি ক্যাপাসিটর। এটি এক লহমায় সম্পূর্ণ ডিসচার্জ হয়ে যেত। কিন্তু ভোল্টায়িক পাইল, যাকে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন পরে ‘ব্যাটারি’ নাম দেন, তা লাগাতার বৈদ্যুতিক প্রবাহ সরবরাহ করতে সক্ষম ছিল। তাছাড়া ব্যাটারির উৎপাদন করা বিদ্যুতের পরিমাণও ছিল লেইডেন জারের তুলনায় অনেক বেশি। এ প্রবাহ ছিল অনেক বেশি স্থিতিশীল ও হিসেব করে পরিমাণ মতো নিয়ন্ত্রণ করা যেত।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার নীতি মেনে ভোল্টা ব্যাটারির সম্পূর্ণ ডিজাইন একটি গবেষণাপত্রে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করে দেন। এরপর খুব শীঘ্রই গোটা ইউরোপজুড়ে গবেষকরা ভোল্টার ডিজাইনকে নকল করতে শুরু করেন, এটিকে আরো উন্নত করার জন্যেও কাজ করেন অনেকে। ভোল্টার এ ডিজাইনটি ছিল একদমই সরল। বেশ অল্প খরচেই এটি তৈরি করা সম্ভব ছিল, বিশেষ করে যখন তিনি দেখান যে এতে রূপার চাকতির বদলে তামাও ব্যবহার করা সম্ভব।

তার ব্যাটারির আরো একটি অসাধারণ সুবিধা ছিল, যদি কারো বেশি বৈদ্যুতিক বিভব শক্তির দরকার হতো, তবে সে সহজেই একটি ব্যাটারির সাথে অন্যটি জুড়ে দিতে পারতো। বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য, এতে ব্যবহারিত চাকতিগুলোর ক্ষেত্রফল বাড়িয়ে নেয়া যেত, অনেকগুলো ব্যাটারিকে সমান্তরালে সংযুক্ত করে দেয়া যেত। বলা যায় ব্যাটারির উদ্ভাবনের সাথে মানবজাতি অবশেষে একটি নির্ভরশীল, লাগাতার বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করার মতো উৎস পেল।

ব্যাটারি আবিষ্কারের পর ভোল্টা যশ-খ্যাতির চূড়ায় আরোহন করেন। দুনিয়াজুড়ে তার আবিষ্কারের বন্দনা চলতে থাকে। দিগ্বিজয়ী ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাকে বিশেষ অনুরোধ জানান ব্যাটারির কৌশল তার কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য। ভোল্টা তাকে ব্যাটারি ব্যবহার করে বিদ্যুতের জাদু প্রদর্শন করেন। তিনি নেপোলিয়নকে দেখান, ব্যাটারির মাধ্যমে তিনি একটি লোহাকে গনগনে লাল ও আগুনের মতো গরম করে ফেলতে পারেন, এর তারকে জলের মধ্যে চুবিয়ে তৈরি করতে পারেন বুদবুদ। নেপোলিয়ন বিদ্যুতের খেলা দেখে মুগ্ধ হন এবং ভোল্টাকে তিনি প্যারিসে একটি রাজকীয় পদে দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানান, অবশ্যই বেশ ভালো পরিমাণ বেতন সহ। ভোল্টাও খুশিমনে তা গ্রহণ করে নেন।

এরপর থেকে ভোল্টা তেমন গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো গবেষণা করেননি, তবে এক ব্যাটারির উদ্ভাবনই তাকে কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে। এমনকি আজও তার স্বদেশীরা তাকে বেশ শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করে। তার স্মৃতির সংরক্ষণার্থে ইতালির কোমো হ্রদের কোল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর ভোল্টা মন্দির। ইতিহাসে খুব কম সংক্ষক বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার ভোল্টার মতো সম্মাননা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।


তথ্যসূত্র: Conquering the Electron by Derek Cheung , Eric Brach , page (16-19)

নীচের এগুলো সব কী ? হি-জি-বি-জি !


 নীচের এগুলো সব কী ? হি-জি-বি-জি !


ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন                   প্রণব কুমার কুণ্ডু





Musher Ahmed একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন৷


شاهین
کوم بختور مسلمان ورورجان به یی شیئر کړي
په شیئر کولو کی مو ثواب دی.

কেউ জানাবেন কী ?