রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮

শিকাগো বিশ্বধর্মসন্মেলন : অতিকথন থেকে নির্মোহ তথ্যের আলোকে পর্ব এক :


   শিকাগো বিশ্বধর্মসন্মেলন : অতিকথন থেকে নির্মোহ তথ্যের আলোকে
   পর্ব এক :

   ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন                প্রণব কুমার কুণ্ডু

শিকাগো বিশ্বধর্মসন্মেলন : অতিকথন থেকে নির্মোহ তথ্যের আলোকে
পর্ব এক :
ছোট থেকেই স্কুলেের বইয়ে, শিক্ষক বা অভিভাবকের মুখে অথবা বিখ্যাত-অখ্যাত সাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধে বারবার করে উঠে এসেছে ১৮৯৩ সালের শিকাগোর বিখ্যাত বিশ্বধর্ম সন্মেলন তথা বিবেকানন্দের বিশ্ববিজয়ের কাহিনী। কাহিনীগুলি থেকে সচারাচর এটাই ধারনা হয় যে ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে বোধহয় স্রেফ বিশ্ব ধর্মসন্মেলনই হয়েছিল যাতে বিবেকানন্দের একটা বক্তৃতাই তাঁকে আপামর আমেরিকাবাসীর কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। একটা কাজ করলে তো হয়, একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বসে বিচার করে দেখলে হয় না কি, এই কাহিনীর মধ্যে কতোটা মিথ আর কতটুকুই বা ট্রু ফ্যাক্ট।
গোড়াতেই একটা বিষয় পরিস্কার করে নিতে চাই। এই লেখার মাধ্যমে কাউকে ছোট করবার বা অহেতুক সমালোচনা কোনো লক্ষ্য নেই। বাঙালীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক অথবা ধর্মীয় জীবনের উপর বিবেকানন্দের সুপ্রভাব বা কুপ্রভাব নিয়ে আলোচনা করাও আমার লক্ষ্য নয়। আমার একমাত্র প্রয়াস কিছু তথ্যকে আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করা।
ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকা পদার্পণের চারশো বছরপুর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৯৩ সালে একটি বিশ্বমেলার (World's Fair) বা বিশ্ব কলম্বীয় প্রদর্শনীর (World's Colombian Exposition) আয়োজন করা হয়। ১ মে থেকে ৩০ অক্টোবর অর্থাৎ ছয়মাস ব্যাপী চলা মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিকাগোর Jackson Park এবং Midway Plaisance এর ৬৯০ একরের সুবিশাল প্রাঙ্গনে।
বেঞ্জামিন সি ট্রুম্যানের লেখা History of the World's Fair থেকে এই মেলা অথবা প্রদর্শনীর পুর্নাঙ্গ ইতিহাস পাওয়া যায়। মেলার আট বছর বাদে মার্কিন সরকার দুইটি সুবিশাল বই ছাপে।
প্রদর্শনীটির লে-আউটের দায়িত্বে ছিলেন ড্যানিয়েল ব্রুহ্যাম সহ চারজন ব্যক্তিত্ব। প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে ফ্রেঞ্চ নিওক্ল্যাসিক্যাল আর্কিটেকচারের উপর ডিজাইন করা ছোটবড় মিলিয়ে দুশোটি বাড়ি তৈরি হয়েছিল, যার সবগুলিই সাদা রঙের - নাম দেওয়া হয়, হোয়াইট সিটি।
মেলার অন্যতম বড় আকর্ষন ছিল একটি সুবৃহৎ জলাশয় (water pool), কলম্বাসের সমুদ্রযাত্রার স্মৃতিতে। পুরো মেলা গ্রাউন্ডটাই যেন ছিল একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। কোথাও কার্নিভাল রাইড, তো কোথাও ফেরিস হুইল। একদিকে ছিল কলম্বাসের তিনটি জাহাজের ফুল সাইজ মডেল, অন্যদিকে চলছিল চলমান চিত্রপ্রদর্শনী। আর এক কোনে তৈরি হয়েছিল প্রথম চলমান রাস্তা। দর্শনার্থীদের জন্য ছিল নুতন ডিজাইনের ট্রেন। ছিল অজস্র অার্ট গ্যালারি ও প্রত্নতত্ত্বের গ্যালারি। ছিল বিভিন্ন আগ্নেযা়স্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনের প্যাভিলিয়ন, আর্কিটেকচার প্যাভিলিয়ন, হর্টিকালচার প্যাভিলিয়ন, এগ্রিকালচার প্যাভিলিয়ন, ইলেকট্রিসিটি প্যাভিলিয়ন, ফিশারিজ এবং ফরেস্ট্রি প্যাভিলিয়ন। এমনকি নারীদের জন্য তৈরি হয়েছিল সম্পুর্ন আলাদা একটি প্যাভিলিয়ন !
মোট ৪৬ টি দেশের সাতাশ মিলিয়ন মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই রাজকীয় প্রদর্শনীতে। প্রতিটি দেশের জন্য ছিল তাদের নিজস্ব কালচার ও টেকনোলজি প্রদর্শনের জন্য আলাদা আলাদা প্যাভিলিয়ন।
এসেছিলেন বিখ্যাত নর্তকি 'লিটল ইজিপ্ট' তাঁর বেলি ডান্স নিয়ে। ছিলেন সুবিখ্যাত ভায়োলিন বাদক জোষেফ ডগলাস, অপেরা সিঙ্গার সেসিরেটা জোন্স, পিয়ানোবাদক স্কট জপলিন, বিভিন্ন দেশের মিউজিক ও মিউজিশিয়ান। ছিল জন ফিলিপ সৌসার ব্যান্ড।
আসা যাক বক্তৃতার অধিবেশনগুলিতে। মোট কুড়িটি বিষয়ের উপর বিভিন্ন হলে হাজার হাজার এক্সপার্ট তাদের লেকচার পেশ করেছিলেন। বিষয়গুলি ছিল নারী প্রগতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, চিকিৎসা, সঙ্গীত, আইনসংস্কার, ধর্ম, সাহিত্য ইত্যাদি। প্রতি বিষয়ের লেকচার অর্গানাইজ করবার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি গঠিত হয়েছিল।
উপরোক্ত আলোচনার পর একথা বোধহয় বলাই বাহুল্য যে ধর্মমহাসভা ছিল এই সুবিশাল প্রদর্শনী বা বিশ্বমেলার একটি ক্ষুদ্র অংশ। মেলার অজস্র অ্যামিউজমেন্টের সাথে যে কুড়িটি বিষয় নিয়ে আলোচনাসভা অনুষ্টিত হয়েছিল, এই সন্মেলন ছিল তারই একটা - এর বেশি কিছু নয়।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, মিথমুক্ত বিবেকানন্দ (রাজাগোপাল চট্টোপাধ্যায়)
(চলবে)

লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্যগুলি
Rita Mukherjee আরো অনেক অজানা তথ্য অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য বন্ধুর জ্ঞান-ঝুলিতে। 
বন্ধুর সাথে সহমত। এক বক্তৃতায় বিশ্বমাত হয়েছিলো বলে যে ধর্মসভার ইতিহাস গেলানো হয়েছিলো, আদপে তা নয়। 
আরো চলবে । খুব মজা লাগছে এই ভেবে , এই বন্ধুটি কতো পরিশ্রমে , কতো আন্তরিকতার সাথে এই প্রতিবেদন তৈরী করেন শুধু আমাদের জন্যে। আমরা ঠিক মায়ের রান্না করা খাবার খাওয়ার আয়েসে এই অজানাকে জানতে পারি। বন্ধুকে ধন্যবাদ।

পরিচালনা করুন


লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর22ঘন্টা
নূপুর সরকার দে রায় হ্যাঁ ধন্যবাদ। পড়লাম।
কিন্তু এইটুকুতে আপনার পোস্টের মূল বক্তব্য কিছু বুঝতে পারিনি। তাই বেশি কিছু মন্তব্য করলাম না। পরের পঐব পড়লে আশা করি বিষয়টা পরিষ্কার হবে। তখন যা বলার নিশ্চয়ই বলব।😊

পরিচালনা করুন


লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর16ঘন্টা

মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘চণ্ডী চিন্তা’ থেকে বর্তমান থেকে...


মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘চণ্ডী চিন্তা’ থেকে

বর্তমান থেকে...শেয়ার করেছেন...প্রণব কুমার কুণ্ডু



বিজ্ঞান আমাদের সামনে যে সব তথ্য উপস্থাপিত করেছে, তা থেকে আমরা অক্লেশেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, এই বিশ্বপ্রপঞ্চ অশেষ বৈচিত্র্যসমাকুল ও প্রতিনিয়ত পরিবর্ত্তনশীল হ’লেও এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে সর্ব্বদা সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের তাণ্ডবলীলা চললেও, এর সমস্ত অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের মধ্যে একটা একত্ব আছে, একটা যোগযুক্ত সংঘবদ্ধ ভাব আছে। সুতরাং নিশ্চয়ই এর একটা প্রাণকেন্দ্র অবশ্যই অনন্ত শক্তির আধার, স্বসত্তায় সত্তাবান, স্বয়ং প্রকাশ, স্বয়ং ক্রিয় ও স্বতন্ত্র। সেই প্রাণকেন্দ্র থেকেই চিরকাল অসংখ্য প্রকার শক্তি বিকীর্ণ হচ্ছে, অসংখ্য প্রকার রূপান্তরের সৃষ্টি হচ্ছে, সেই প্রাণকেন্দ্রই স্বীয় অসীম শক্তিতে বিশ্বের সকল অংশকে, সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিধৃত ক’রে, সংঘবদ্ধ ক’রে, যোগযুক্ত ক’রে ধ’রে রেখেছে, সেই প্রাণকেন্দ্রই বিশ্বের সকল ব্যষ্টি ও সমষ্টিসত্তার অফুরন্ত উৎস, আশ্রয় ও নিয়ামক।
মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘চণ্ডী চিন্তা’ থেকে

বর্তমান থেকে...

শিবাশীষ বসুর কলাম


    শিবাশীষ বসুর কলাম
    ফেসবুক থেকে           শেয়ার করা হয়েছে


শিবাশীষ বসু এতে ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য
শিকাগো বিশ্বধর্মসন্মেলন : অতিকথন থেকে নির্মোহ তথ্যের আলোকে
পর্ব দুই :
আগের পর্বে দেখিয়েছি যে তথাকথিত বিশ্ব ধর্মমহাসভা আদতে ছিল সুবিশাল বিশ্ব কলম্বীয় প্রদর্শনী অথবা বিশ্বমেলার একটি ক্ষুদ্র অংশ - এর বেশি কিছু নয়। কোনো অজ্ঞাত কারনে আসল ইতিহাসটা আমাদের জানানো হয় না। যাইহোক এবার দেরি না করে ঢুকে পড়া যাক পরবর্তী প্রসঙ্গে।
ধর্মমহাসভার উপর এর ব্যবস্থাপক কমিটির চেয়ারম্যান রেভারেন্ড প্রফেসর ডেভিড জন হেনরী ব্যারোজের একটি রিপোর্ট বার হয়। নাম The World's parliament of Religions, দুই খন্ডে ১৬০০ পৃষ্ঠার। সেপ্টেম্বর ১১ থেকে ২৭ পর্যন্ত সতেরো দিন চলা এই সভাটিতে যত ধর্মীয় নেতা ও জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি তাঁদের বক্তব্য রেখেছিলেন, ব্যারোজের বইটিতে তাঁদের সকলের বক্তৃতার লিপি ছাড়াও প্রচুর খুটিনাটি বিবরণ আছে। এটি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন লিখেছেন এই সম্মেলনের উপর।
সম্পুর্ন ধর্ম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিকাগোর আর্ট ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন হলে। এর মধ্যে কলম্বাস হলটি ছিল বৃহত্তম, তবে আরও ছোটবড়ো পনেরোটি সভাঘরে বক্তৃতা চলতো।
সন্মেলনটি মার্কিন দেশে অনুষ্ঠিত হওয়ায় স্বভাবতই শ্রোতা ও বক্তাদের অধিকাংশই ছিলেন ওই দেশের খ্রীষ্টান। তবে বিদেশিরা সংখ্যায় নগণ্য হলেও সভায় তাঁরাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছিলেন। যেমন আমেরিকার তৎকালীন সবচেয়ে বিখ্যাত পাদ্রী লীম্যান অ্যাবট যেখানে গোটা সন্মেলনে মাত্র একবার বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান সেখানে ভারতের তিনজন দশটি করে বক্তৃতা দেন।
সন্মেলনে মোট ১৩ জন ভারতীয় প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন এবং আরও ৭ জন সশরীরে না গিয়েও তাঁদের লেখা পাঠিয়েছিলেন সেখানে পড়ার জন্য। সরাসরিভাবে উপস্থিত থেকে যাঁরা বক্তৃতা দিয়ে শ্রোতামন্ডলীর মন জয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল -
স্বামী বিবেকানন্দ, হিন্দু, কলকাতা
জ্ঞানেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, থিয়োসফিস্ট, এলাহাবাদ
হেবাবির্তনে ধর্মপাল, বৌদ্ধ, কলকাতা
রবার্ট হিউম, খ্রীষ্টান, মাদ্রাজ
প্রতাপ মজুমদার, ব্রাহ্ম, কলকাতা
বলবন্ত নাগারকার, ব্রাহ্ম, বোম্বে
বীরচাঁদ গান্ধী, জৈন, বোম্বে
জীন সোরাবজী, খ্রীষ্টান, বোম্বে
শিকাগো না গিয়েও কেবলমাত্র তাঁদের পঠিত লেখার মাধ্যমে শ্রোতাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন -
মণিলাল দ্বিবেদী, হিন্দু, বোম্বে
জামশেদজী মোদী, পার্সি, বোম্বে
উপরোক্ত সকলেই মুল সভাতে অর্থাৎ কলম্বাস হলে একাধিকবার বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
ব্যারোজের ১৬০০ পৃষ্ঠার অফিসিয়াল রিপোর্টে দেখা গেছে মোটামুটিভাবে যে বক্তার বক্তৃতা সকলের ভালো লেগেছে অথবা বলতে পারা যায় যিনি শ্রোতাদের মন বেশি জয় করেছেন, সেই ক্রমানুসারে তাঁদের সম্পর্কে লেখা হয়েছে মানে তাঁরা ততখানি জায়গা দখল করেছেন। অর্থাৎ যে বক্তা শ্রোতাদের বেশি মনোযোগ পেয়েছেন, ব্যারোজ তাঁর জন্য বেশি পাতা বরাদ্দ করেছেন।
আপনাদের মনে খটকা লাগবে দেখে যে ব্যারোজের বইটিতে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাধিক ২৩ পৃষ্ঠা বরাদ্দ হয়েছে ধর্মপালের উপর। এরপর ক্রমানুসারে আছেন দ্বিবেদীর জন্য ২০ পৃষ্ঠা, মজুমদারের জন্য ১৯ পৃষ্ঠা, মোদীর জন্য ১৭ পৃষ্ঠা, বিবেকানন্দের জন্য ১৫ পৃষ্ঠা এবং নাগারকারের জন্য ১৫ পৃষ্ঠা বরাদ্দ হয়েছে।
একই ট্রেন্ড দেখতে পাওয়া যাবে শিকাগোর একনম্বর সংবাদপত্র Chicago Daily Tribune এর দৈনিক সংখ্যাগুলি ঘাঁটলে। সেখানেও সর্বাধিক জায়গা পেয়েছেন ধর্মপাল ৬৩০ লাইন। এরপর ক্রমানুসারে জায়গা বরাদ্দ হয়েছিল নাগারকার ৪২৮ লাইন, মজুমদার ৪১৪ লাইন, বিবেকানন্দ ২০৬ লাইন, বীরচাঁদ ১৮৯ লাইন ইত্যাদি। ধারনা করা যায় যে প্রতিবেদক ও সম্পাদক যাঁদের বক্তৃতায় যেমন প্রভাবিত হয়েছিলেন, সেই অনুসারে তাঁদের জায়গা দিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে আর একটি মিথ বা অতিকথনের উল্লেখ না করলেই নয় - আমরা নামিদামী লেখকের বইতে পড়েছি যে বিবেকানন্দ বক্তৃতা শুরু করে সেই বিখ্যাত লাইনটি বলবার পর সাত হাজার মানুষ করতালিধ্বনিতে তাঁকে অভিনন্দিত করেন। এই কথাটি ওয়ার্ল্ড'স রিলিজিয়াস পার্লামেন্টের উইকিপিডিয়াতেও আছে -
"Though initially nervous, he bowed to Saraswati, then began his speech with salutation, 'Sisters and brothers of America'. To these words he got a standing ovation from a crowd of seven thousand, which lasted for two minutes."
আছে আলাসিঙ্গাকে শিকাগো থেকে লেখা ২ নভেম্বর ১৮৯৩ সালে বিবেকানন্দের পত্রে -
"কল্পনা করিয়া দেখ, নিচে একটি হল, আর উপরে এক প্রকাণ্ড গ্যালারি ; তাতে আমেরিকার সুশিক্ষিত সমাজের বাছা বাছা ৬/৭ হাজার নরনারী ঘেষাঘেষি করিয়া উপবিষ্ট"।
পক্ষান্তরে 'বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি অফ শিকাগোর সাইটে বলা হয়েছে -
"Four thousand had crowded onto the floor and into the gallery of the Hall of Columbus waiting for the delegates to appear."
ট্রু ফ্যাক্ট হল আর্ট ইন্সটিটিউটের কলম্বাস হলে তিন হাজার শ্রোতা বসতে পারতেন। তবে খুব ভিড় হলে যাতায়াতের পথে ও ফাঁকা জায়গায় মানুষেরা দাঁড়ালে খুব জোর চারহাজার মানুষ অবধি ওই হলে ঢুকতো -
"The delegates for the Parliament gathered at the Hall of Columbus which could accommodate 3000 people with standing room for at least a thousand more." (বেদান্ত সোসাইটি অফ শিকাগো)
কাজেই উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে বিশ্ব ধর্মমহাসভার বক্তাদের মধ্যে যাঁর সম্পর্কে শিকাগো তথা আমেরিকার তৎকালীন সংবাদপত্রের রিপোর্ট এবং ধর্মসন্মেলনের সরকারী রিপোর্টে যা খুবই সংক্ষেপে বর্ণিত রয়েছে অথবা বলা যেতে পারে বিবেকানন্দ যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছিলেন, তাঁর জীবনীকাররা তাকে ফেনিয়ে ফাঁপিয়ে আরও বড় করে তুলেছেন ভাব সম্প্রসারণের মাধ্যমে। তবে এই বিষয়ে কেবলমাত্র জীবনিকারদের দায়ী করলে চলবে না কারণ বন্ধু ও শিষ্যদের কাছে লেখা বিবেকানন্দের একাধিক চিঠির উল্লেখ এই প্রসঙ্গে করা যেতে পারে যাতে তিনি কৌশলে (খারাপ অর্থে নয়) তিলে তিলে ভারতের তথা হিন্দুধর্মের একমাত্র প্রতিনিধিস্বরূপ নিজের ইমেজটি তৈরি করেছিলেন। পরবর্তী পর্বে এই নিয়ে আলোচনা করবো।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, বেদান্ত সোসাইটি অফ শিকাগো, মিথমুক্ত বিবেকানন্দ (রাজাগোপাল চট্টোপাধ্যায়)