রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

Aga Khan Palace


Aga Khan Palace

Shared by                      Pranab Kumar Kundu

Aga Khan Palace is a majestic building built in 1892 by Aga Khan lII, to give job to the femine struck people of Pune and is considered to be one of the greatest building Architecture in India. The palace is linked to the Indian freedom movement as it was served as a prison for Mahatma Gandhi, his wife Kasturba Gandhi, his secretary Mahadev Desai and Sarojini Naidu. It is also the place where Kasturba Gandhi and Mahadev Desai died.Ashes of Mahatma Gandhi, Kasturba and Mahadev Desai rest here.


1892 সালে আগা খান lii 1892 সালে আগা খান lii 1892 সালে নির্মিত একটি রাজকীয় ভবন, যা পুনে মানুষের উপর আঘাত করে এবং ভারতের অন্যতম বৃহৎ স্থাপত্য স্থাপত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এই প্রাসাদ ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়, যখন মহাত্মা গান্ধীর জন্য কারাগার হিসেবে কাজ করা হয়, তার স্ত্রী kasturba গান্ধী, তার সচিব মহাদেব ও সরোজিনী নাইডু । এটা সেই জায়গা যেখানে kasturba গান্ধী এবং মহাদেব দেশাই মারা যায় । মহাত্মা গান্ধীর ছাই, kasturba এবং মহাদেব দেশাই বিশ্রাম নিন ।






ভগবান যিশু


ভগবান যিশু

শেয়ার করেছেন                         প্রণব কুমার কুণ্ডু।

Jayanta Ray এতে ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য            ভগবান যিশু

ভগবান যিশুর জন্ম প্রথম খ্রিস্টাব্দের কিছু আগেই হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্টেটাইনের আমলে ২৫ ডিসেম্বর দিনটিতে প্রথম যিশুর জন্মদিন পালন করা হয়।

এর কিছু বছর পরে পোপ প্রথম জুলিয়াস এই দিনটিকেই সরকারিভাবে যিশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন শুরুর আগে, রোমান 'সৌরপৌত্তলিক' ধর্মের উৎসব পালনের রেওয়াজ ছিল ২৩ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ঐ প্রচলিত ধর্মীয় উৎসবকেই বেছে নিয়েছিলেন আদি খ্রিস্টানরা। জনপ্রিয়তা পেতেই তাঁরা হয়তো পুরনো উৎসবকে বাতিল করা হয়নি। সেটাকেই ‘নিজেদের’ করে নেন তাঁরা। সেই পৌত্তলিকরা মূলত ছিলেন সূর্যের উপাসক। তাই ক্রান্তীয় দিবসে তাঁরা পালন করতেন তাঁদের উৎসব। যিশুকে সূর্যের সঙ্গে মেলানোর কাজ শুরু হয় তখন থেকে। যিশুর পুরনো ছবিতে দেখা যায়, মাথার পিছনে সূর্য আঁকা রয়েছে।

সৌরপৌত্তলিকরা ক্রমে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করেন। সেকালে রাজারাই আগে ধর্মান্তরিত হতেন। লাতিন প্রথা ‘কুজাস এজিও-এজাস রিলিজিও’ অনুসারে রাজার ধর্ম পরিবর্তনের ফলে প্রজারাও ধর্মান্তরিত হয়ে যেত। নিজের অজান্তে ধর্মান্তরিত হওয়া মানুষের সেন্টিমেন্টের মর্যাদা দিয়েই হয়তো উইন্টার সলস্টিস-কে ক্রিসমাসে পরিণত করেন আদি খ্রিস্টানরা।

কিন্তু ঠিক কোনদিনে যিশুর জন্ম হয়েছিল, তা নিয়ে কোনও প্রামাণ্য নথি এখনও পাওয়া যায় না !!




বীণা দাস



বীণা দাস

শেয়ার করেছেন                  প্রণব কুমার কুণ্ডু।


Mausumi Chaudhuri Dasgupta

#পুরনোসেইদিনেরকথা #
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

এই প্রথম।

 চাক্ষুষ এই প্রথম। যুবতী হাতে তুলে নেন ধাতব আগ্নেয়াস্ত্র, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকেন বারবার। রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা পাল্লা দিয়ে দৌড়তে শুরু করে শিরা-উপশিরায়। এই তাহলে রিভলভার, আসল! কিন্তু গুলি কোথায়, কার্তুজ? তর সয় না যুবতীর, জিজ্ঞেস করেই ফেলেন।

- দিদি... বুলেট?

'দিদি' হাসেন সস্নেহ, টের পান একুশ বছরের যুবতীর ছটফটানি।

- বুলেট পরে। কীভাবে যন্ত্রটা ব্যবহার করবি সেটা আগে দেখিয়ে দিই, ভালো করে বুঝে না নিলে এ যন্ত্র কিন্তু পোষ মানার নয়। দে ওটা আমায়...

অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিভলভারের হাতবদলে বাধ্য হন যুবতী। খুঁটিনাটি বোঝাতে শুরু করেন 'দিদি'।

- বুলেট চাইছিলি না? বুলেট ঢোকাতে হয় চেম্বারে। এই হল চেম্বার। এইভাবে খুলবি আর একটা একটা করে গুলি ঢোকাবি এই পাঁচটা ফুটোর মধ্যে। এবার চেম্বারটা দেখ কীভাবে বন্ধ করছি। হল বন্ধ? ব্যস, তোর রিভলভার এখন লোডেড।

যুবতী শুনতে থাকেন অখণ্ড মনোযোগে।

"এইটা হল ব্যারেল, ট্রিগার টিপলে যেখান থেকে গুলি ছুটবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখবি, লোড যখন করবি, মানে বুলেট ভরবি যখন চেম্বারে, ব্যারেলের মুখ কক্ষনো নিজের দিকে রাখবি না, নেভার! কোনোভাবে অসাবধানে ট্রিগারে হাত পড়ে গেলে নিজেই অক্কা পাবি। ভরবি সাইড করে, এইভাবে।

শুটিংয়ে আসল কথা কিন্তু 'গ্রিপ', তুই কীভাবে ধরছিস অস্ত্রটাকে। লক্ষ্য কর, আমি কীভাবে ধরছি, আঙ্গুলগুলোর পজিশন দেখ মন দিয়ে। ধরলি? এবার নিশানা। এই যে সামান্য উঁচু জিনিসটা ব্যারেলের সামনের দিকে দেখছিস, একে বলে 'ফোরসাইট ইউ'। টার্গেটের সঙ্গে এটাকে স্ট্রেট লাইনে রাখলে মিস হওয়ার সম্ভাবনা কম। ধর, আমি তোকে গুলি করব মাথায়… একটু দূরে গিয়ে দাঁড়া... দ্যাখ... তোর মাথার সঙ্গে কীভাবে স্ট্রেট লাইনে 'align' করছি 'ফোরসাইট ইউ'...

গুলি যখন করবি, গায়ের জোরে ট্রিগার চাপবি না, সামান্য চাপই যথেষ্ট। আর হ্যাঁ, যেটা মোস্ট ইম্পরট্যান্ট, কাঁধ থেকে হাতের কবজি অবধি পুরো সোজা রাখবি, টানটান। একদম 'locked' থাকবে ওই অংশটা, 'muscle movement' হবে মিনিমাম। যা বললাম, বুঝলি? গুলি না ভরে, যেভাবে বললাম, কয়েকদিন 'dry practice' করলেই দেখবি সড়গড় হয়ে যাবে। এবার, এই নে তোর বুলেট।"

কাঁধের ঝোলা থেকে মহিলা বার করেন চামড়ার ছোট থলি, উপুড় করে দেন টেবিলে। ঠনঠন শব্দে ছড়িয়ে পড়ে এক ডজন কার্তুজ। যুবতী চেম্বারে বুলেট ভরার মহড়া শুরু করেন। এক... দুই... তিন… চার।

'দিদি' দেখতে থাকেন নিষ্পলক। একটু পরে ধীর গলায় জিজ্ঞেস করেন,

- কী রে, পারবি তো?

যুবতী চোখ তুলে তাকান। হাসিখুশি মুখটা বদলে গিয়েছে কঠিন সংকল্পে। 'দিদি' আর একটি প্যাকেট বার করেন ঝোলা থেকে।

- এটা রেখে দে।

- কী এটা?

- পটাশিয়াম সায়ানাইড।

####

কী আছে এখানে আজ? কোনো হোমরাচোমরা আসছেন? এত পুলিশ কেন?

কলেজ স্ট্রিট চত্বরে সেদিন সকাল থেকেই তুঙ্গ ব্যস্ততা। অন্যদিন বেলা বাড়তে কখনোসখনো দেখা মেলে জোড়াসাঁকো থানার টহলদারি গাড়ির। আজ অন্য ছবি। ভোর থেকেই এলাকায় চক্কর দিচ্ছে পুলিশের একাধিক গাড়ি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোতায়েন সশস্ত্র পুলিশকর্মী। যারা বন্দুক উঁচিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। সাদা পোশাকে কিছু বলিষ্ঠ চেহারার লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে যত্রতত্র, সজাগ দৃষ্টি তাঁদের। এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায়, এরা পথচারী নন, প্লেন ড্রেসে পুলিশই। লালবাজারের বড়কর্তারা সরেজমিনে ঘনঘন দেখে যাচ্ছেন পুলিশি ব্যবস্থা।

ব্যাপারটা কী? এত সাজসাজ রব? কেষ্টবিষ্টু আসছেন কোনো? কে?

স্বয়ং বড়লাট! বাংলার তৎকালীন রাজ্যপাল মহামহিম স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে আয়োজিত সমাবর্তন উৎসবের প্রধান অতিথি। তিনিই মানপত্র তুলে দেবেন সফল ছাত্রছাত্রীদের হাতে। বহু গণ্যমান্য অতিথির সমাবেশ ঘটতে চলেছে অনুষ্ঠানে। নিরাপত্তা নিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিতে নারাজ কলকাতা পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে তৈরি হয়েছে নিশ্ছিদ্র চক্রব্যূহ। মাছি গলার জো নেই।

কলেজ স্ট্রিটে গাড়ি ঢুকছে একের পর এক, থামছে মূল প্রবেশদ্বারের সামনে। আমন্ত্রিতরা ঢুকছেন। ঢুকছে ছাত্রছাত্রীরাও দল বেঁধে, হইহল্লা করতে করতে। পোশাক আলাদা আজ। রোজকার ধুতি-শার্ট-প্যান্ট বা শাড়ীর উপরে আজ কালো গাউন। ডিগ্রি নেওয়ার শুভমুহূর্তের প্রচলিত পরিধান। অন্যরকম সাজে ভারি সুন্দর লাগছে ছেলেমেয়ের দলকে। আজ তো ওদেরই দিন!

#####

হাঁফাতে হাঁফাতে বেথুন কলেজের গেটে এসে পৌঁছন ইলা সেন। কলেজেরই ছাত্রী, উত্তেজনায় গলা কাঁপছে।

- এইমাত্র খবর পেলাম, প্রেসিডেন্সির পিকেটারদের মেরে সরিয়ে দেবে পুলিশ। লালবাজার থেকে ফোর্স রওনা দিয়েছে। প্রয়োজনে নাকি গুলি চালাবে।

- সে কী! এক্ষুণি চল।

আইন অমান্য আন্দোলনের সমর্থনে বেথুন কলেজের সামনে পিকেটিং করছিলেন ছাত্রীরা। শুধু বেথুনেরই নন, অন্য কলেজের ছাত্রীরাও রয়েছেন। ইলার মুখে খবর পেয়েই দৌড়লেন দল বেঁধে। গন্তব্য, প্রেসিডেন্সি কলেজ। যেখানে ছাত্রদের "বন্দেমাতরম" স্লোগানে তখন উত্তাল হয়ে উঠেছে বইপাড়া।

ছাত্রীরা যখন পৌঁছলেন, রণভূমির চেহারা নিয়েছে কলেজ স্ট্রিটের এ মাথা থেকে ও মাথা। পুলিশের সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি শুরু হয়েছে ছাত্রদের। পিকেটিং কিছুতেই চলতে দেবে না উর্দিধারীরা, আর ছাত্ররাও যেনতেনপ্রকারণে জারি রাখবে আইন অমান্য আন্দোলন। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে গোলমালের জেরে, বাস-ট্রাম দাঁড়িয়ে স্থাণুবৎ।

লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়েও লাভ হচ্ছে না যখন বিশেষ, বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা অফিসার নির্দেশ দিলেন সশস্ত্র সিপাইদের, গুলিচালনার প্রস্তুতি নিতে।

ছাত্রীদল সিদ্ধান্ত নিলেন মুহূর্তের মধ্যে। গুলি চালাবে? বললেই হল? চালাক দেখি! দেখি, কত গুলি আছে ওদের? হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন ছাত্রদের সামনে। চালাক গুলি, তবে আগে আমাদের উপর।

সে এক দৃশ্য! মানবশৃঙ্খল তৈরি করে ফেলেছে একদল কলেজছাত্রী। ঘিরে রেখেছে প্রেসিডেন্সির বিক্ষোভরত ছাত্রদের। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ার প্রশ্নই নেই। ছাত্রীদের এ হেন রণং দেহি মূর্তিতে হতচকিত হয়ে পড়ল পুলিশ, স্তিমিত হয়ে পড়ল আগ্নেয়াস্ত্রের আস্ফালন।

অফিসার থামালেন সিপাইদের। একদল নিরস্ত্র কলেজছাত্রীর উপর গুলি চালানো অসম্ভব। হিতে বিপরীত হবে। প্রতিবাদের আগুন শুধু শহরে নয়,আসমুদ্রহিমাচলে ছড়িয়ে পড়বে। এ ঝুঁকি নেওয়া যায় না। পিছু হঠতে বাধ্য হল পুলিশ। ব্যাক টু লালবাজার।

ফিরে যাওয়ার আগে অফিসার সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকান ছাত্রীব্যূহের একদম মাঝখানে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে। যে অবিচলিত ভঙ্গিতে একটু আগেই তাঁর চোখে চোখ রেখে চোস্ত ইংরেজিতে বলেছে, “Break the cordon if you must… but be sure, over our dead bodies!”

“অবরোধ সরাতে হলে সরান, কিন্তু আমাদের মৃতদেহের উপর দিয়ে যেতে হবে!” কে মেয়েটি? বয়স তো দেখে মনে হচ্ছে খুব বেশি হলে আঠারো-উনিশ। এই সহজাত সাহস এত অল্প বয়সে আসে কোথা থেকে?

ভাবতে ভাবতেই গাড়িতে স্টার্ট দেন অফিসার। জয়ধ্বনি কানে আসে ছাত্রছাত্রীদের। বন্দেমাতরম! কানে আসে সমস্বরে রবিঠাকুরের গান, "নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার..."

####

কটকের Ravenshaw Collegiate School-এর প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস। স্ত্রী সরলা আর দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার। কল্যাণী বড়, তার চার বছরের ছোট বীণা। ইনিই সেই বেণীমাধব, যাঁর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার অভিযোগ এনেছিল স্কুলে রাজদ্রোহ প্রচারের, রাতারাতি বদলি করে দেওয়া হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। ইনিই সেই প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক, যাঁর দেশপ্রেমের আদর্শ গভীর প্রভাব ফেলেছিল কটকের ওই স্কুলেই পাঠরত ছাত্র সুভাষচন্দ্রের চেতনায়-মননে।

কল্যাণী-বীণার শৈশব এবং কৈশোরে বাবা-মা ছাড়াও প্রভাব ছিল বড়মামার। অধ্যাপক বিনয়েন্দ্রনাথ সেনের। যাঁর প্রতিষ্ঠিত নীতি-বিদ্যালয়ের প্রভাব সে যুগে জাতির চরিত্রগঠনে ছিল সুদূরপ্রসারী।

বাবা সন্ধেবেলা গল্প বলতেন বিভিন্ন দেশের বরণীয় সমাজবিপ্লবীদের, শোনাতেন দেশের জন্য তাঁদের নিঃস্বার্থ ত্যাগস্বীকারের কাহিনী। দুই বোন ঘন্টার পর ঘন্টা শুনত মন্ত্রমুগ্ধ।

সরলা তাড়া দিতেন মেয়েদের...

- হ্যাঁ রে, তোরা শুবি না? অনেক রাত হল, কাল স্কুল আছে তো!

- মা... প্লিজ আর একটু... বাবা গল্পটা শেষ করুক।

প্রশ্রয়ের হাসি হাসতেন সরলা। ভাবতেন, ওদের এসব শোনাই উচিত, তবে না চরিত্রের বুনিয়াদ মজবুত হবে। স্বামী-কন্যাদের সঙ্গে নিজেও যোগ দিতেন গল্পে।

সরলার বিরল সংগঠনী ক্ষমতা ছিল। ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত নীতি-বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ তো ছিলই, পাশাপাশি দুঃস্থ মহিলাদের জন্য "পুণ্যাশ্রম" গড়ে তুলেছিলেন একক প্রচেষ্টায়।

সেটা বিংশ শতকের প্রথমার্ধ। কল্যাণীর জন্ম ১৯০৭ সালে, বীণার '১১-য়। উদারমনস্ক শিক্ষিত পরিবারে এমন মা-বাবার ভাবধারায় বেড়ে ওঠা দুই কিশোরী যে গতানুগতিক জীবনে আকৃষ্ট হবেন না, দেশব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে যে পরাধীনতার গ্লানিতে অবধারিত আক্রান্ত হবেন, স্বাভাবিকই ছিল।

কল্যাণীর ছিল মায়ের মতোই সাংগঠনিক দক্ষতা। ১৯২৮ সালে বি.এ পাস করার পর কলকাতায় এলেন এম.এ পড়তে। সহপাঠী সুরমা মিত্র, কমলা দাশগুপ্ত প্রমুখের সহযোগিতায় গড়ে তুললেন "ছাত্রীসংঘ"। সভানেত্রী সুরমা, সম্পাদিকা কল্যাণী। কলকাতার স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে সংগঠন। ক্রমে ব্যাপ্তি বাড়ল, যোগ দিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলি, সুলতা করের মতো ছাত্রীরা, যাঁরা পরে সক্রিয় অংশ নেবেন দেশমুক্তির সংগ্রামে। এলেন কল্যাণীর সহোদরা বীণাও, যিনি তখন এলগিন রোডের St Johns Diocesan Girls' Higher Secondary School-এর ছাত্রী।

'ছাত্রীসংঘ'-র মেয়েদের দিন কাটত হইহই ব্যস্ততায়। সারাদিন ক্লাস করার পর কোনোদিন লাঠিখেলায় মেতে ওঠা 'যুগান্তর' গোষ্ঠীর বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের তত্ত্বাবধানে। কোনোদিন ছুরি চালানোর অনুশীলন লাগাতার। কখনো দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়া কলেজ স্কোয়ারের পুকুরে, কখনো দ্রুত সাইকেল চালানোর মহড়া। পাশাপাশি ফার্স্ট এইড-এর প্রাথমিক পাঠ নিয়মিত।

দেশে চলছে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির নিরন্তর সংগ্রাম,'ছাত্রীসংঘ' সেই লড়াইয়ের আঁচমুক্ত থাকে কী করে? যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিজেদের মানসিক এবং শারীরিক ভাবে তৈরি রাখতে স্কুল-কলেজের একঝাঁক ছাত্রী ছিলেন দৃঢ়সংকল্প, জন্মভূমির হিতার্থে যে কোন ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত।

দেশ জুড়ে তখন চলছে আইন অমান্য আন্দোলন। কলেজে কলেজে শুরু হল পিকেটিং, 'বন্দেমাতরম' স্লোগানে মুখর হয়ে উঠল শহরের বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাস। প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রদের লাগাতার এবং সোচ্চার পিকেটিং চিন্তায় ফেলল লালবাজারকে।

কড়া হাতে দমনের সিদ্ধান্ত হল। ফোর্স রওনা দিল কলেজ স্ট্রিটে। নির্দেশ স্পষ্ট, লাঠিপেটায় মিটে গেলে ভাল, না মিটলে প্রয়োজনে গুলি। পরের ঘটনাক্রম লিখেছি আগে, বেথুন কলেজের গেট থেকে ছাত্রীদের প্রেসিডেন্সি যাত্রা, মানবশৃঙ্খল গড়ে তোলা এবং কিংকতর্ব্যবিমূঢ় পুলিশের রণে ভঙ্গ দেওয়া।

ছাত্রীদলের নেতৃত্বে থাকা মেয়েটিকে দেখে চমৎকৃত হয়েছিলেন লালবাজারের পোড়খাওয়া অফিসার। কে মেয়েটি, যে উদ্যত বন্দুকের নলকে উপেক্ষা করে সটান বলেছিল, "over our dead bodies"? কী নাম ওই দৃপ্ত যুবতীর?

####

বীণা দাস। দিদি কল্যাণী ছিলেন স্থিতধী সংগঠক, বীণা তুলনায় বেশি আবেগপ্রবণ, বেপরোয়া। মিষ্টি স্বভাবের জন্য স্কুলে তুমুল জনপ্রিয়। ছাত্রীরা তো বটেই, স্কুলের সিস্টাররাও চোখে হারান বীণাকে। পরীক্ষায় প্রথম স্থান তো বাঁধাই, বিতর্কে-আবৃত্তিতে-গল্প লেখায় ধারেকাছে কেউ নেই। সিস্টারদের অনেক আশা প্রিয় ছাত্রীকে নিয়ে। অধ্যাপনা করবে, নাকি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে (ICS) বসবে? মেয়ের যা এলেম, যে পেশাতেই যাক, সিদ্ধিলাভ অনিবার্য।

বীণা অবশ্য প্রথামাফিক 'ভালো মেয়ে' হওয়ায় তীব্র অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন ততদিনে। চারদিকে যা ঘটছে, নিয়মনিষ্ঠ জীবনের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোতে মন সায় দিচ্ছে না কিছুতেই। বেথুন কলেজে ভর্তি হলেন স্কুলের পাট চুকিয়ে। দুই সহপাঠী, সুহাসিনী দত্ত এবং শান্তি দাশগুপ্ত ছিলেন একটি ছোট বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত। যাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপে বীণা যেন হাতে চাঁদ পেলেন,যোগ দিলেন বন্ধুদের গোষ্ঠীতে, দেশের জন্য সীমিত সাধ্যে কিছু করার সুযোগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা প্রায়।

তিরিশের দশকের প্রথমার্ধ। সে বড় অস্থিরতার সময় বাংলায়। বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ডে ব্যতিব্যস্ত ব্রিটিশ প্রশাসন। ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের দুঃসাহসিক প্রয়াস আলোড়ন ফেলে দিয়েছে দেশময়। কয়েকমাস পরে অগস্টের ২৫ তারিখে দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ কমিশনার টেগার্টকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা হল ডালহৌসি স্কোয়ারে। নিহত হলেন অনুজাচরণ সেনগুপ্ত। গ্রেফতার হলেন দীনেশ মজুমদার।

ঢাকায় ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যানকে গুলি করে হত্যা করে বিপ্লবী বিনয় বসু তখন পলাতক। কিছুদিন পরে ফের আবির্ভাব বিনয়ের, দীনেশ গুপ্ত ও বাদল গুপ্তের সঙ্গে। '৩০-এর ডিসেম্বরের ৮ তারিখে রাইটার্সের বিখ্যাত অলিন্দ যুদ্ধে ত্রিমূর্তির অভিযান, গুলি করে হত্যা অত্যাচারী পুলিশ অফিসার সিম্পসনকে। ৩১-এর শেষার্ধে দুই স্কুলকিশোরী শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী ঘটাল এক অভাবনীয় ঘটনা, কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা করে দ্বীপান্তরিত হল যাবজ্জীবন।

ঘটনার ঘনঘটায় চূড়ান্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠল ব্রিটিশ সরকার। ধরপাকড় শুরু হল বেপরোয়া। বীণাদের ছোট দলটির অনেকেও গ্রেফতার হলেন। বিচলিত বীণা স্থির করলেন, এবার এমন কিছু করবেন, একাই করবেন, যাতে ভিত নাড়িয়ে দেওয়া যায় প্রশাসনের। আতঙ্ক গ্রাস করে পুলিশকে।

কিন্তু কী করবেন? চিন্তা করতে থাকেন সারারাত, নিদ্রাহীন।

একসময় ভাবনা আসে বিদ্যুৎঝলকের মতো, উঠে পড়েন ধড়মড়িয়ে। আজই একবার ‘দিদি’র বাড়ি যাওয়া দরকার।

####

- তুই যা বলছিস, ভেবেচিন্তে বলছিস? অত সোজা নয়...

কমলা দাশগুপ্ত প্রথমে হেসেই উড়িয়ে দেন বীণার পরিকল্পনা। কমলার জন্ম ঢাকায়, ১৯০৭ সালে। বেথুন কলেজে বি.এ পড়ার সময় বিপ্লবী গোষ্ঠীর সংস্পর্শে আসেন, স্নাতকোত্তর পড়াকালীন যোগ দেন "যুগান্তর" দলে। দলের প্রয়োজনে বাড়ি ছেড়ে থাকতেন একটি মেয়েদের হোস্টেলের ম্যানেজার হিসাবে। বোমা-পিস্তল রাখা এবং বিপ্লবীদের সরবরাহ করার কাজ করতেন হোস্টেল থেকেই। পিস্তল ব্যবহারে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

বীণা তাঁর সহপাঠী কল্যাণীর ছোট বোন, বেথুনেরই ছাত্রী। কমলা খুব স্নেহ করেন হাসিখুশি স্বভাবের মেয়েটিকে। দেশপ্রেমের আদর্শে স্থির, কিন্তু একটু বেশি আবেগপ্রবণ। এত বড় সিদ্ধান্ত কি স্রেফ আবেগের বশে নেওয়া উচিত?

- আবেগ দিয়ে সব লড়াই হয় না বীণা, তাছাড়া এটা বিরাট ঝুঁকি হয়ে যাবে। ধরা পড়বিই, জীবনটাই হয়তো জেলে কেটে যাবে। লড়াইটাই করতে পারবি না আর।

- শুধু আবেগ দিয়ে তো লড়ছি না দিদি। লড়ছি তো বুদ্ধি দিয়েও। ধরা পড়ব, সেটাও জানি। পালানোর জন্য তো যাচ্ছি না ওখানে। যে কোন শাস্তির জন্য প্রস্তুত। তুমি আর ‘না’ কোরো না, একটা রিভলভার জোগাড় করে দাও।

- যদি ফাঁসি হয় তোর?

- আমি হাসতে হাসতে চলে যাব, দেখো তুমি।

- যদি দ্বীপান্তর হয়, পারবি সহ্য করতে?

- হলেও কোন চিন্তা নেই। ওখানে তো শান্তি-সুনীতি আছে, ওদের পড়িয়ে দিব্যি সময় কাটবে।

- পুলিশের অত্যাচার যদি সহ্য করতে না পারিস?

- সে সুযোগ ওরা যাতে না পায় সেই চেষ্টা তো করবই। পটাশিয়াম সায়ানাইড তো থাকছেই পকেটে।

কমলা বুঝে যান, এ মেয়ে মনস্থির করে ফেলেছে। একে আর বোঝানো বৃথা। তবু বোঝালেন পরের কয়েকদিন আপ্রাণ। বীণা অনড় থাকলেন সিদ্ধান্তে। ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুধীর ঘোষের সঙ্গে পরামর্শ করলেন কমলা। রিভলভার কেনার ২৮০ টাকা জোগাড় করলেন, যা দিয়ে সুধীর ব্যবস্থা করলেন আগ্নেয়াস্ত্রের। পাঁচ চেম্বার বিশিষ্ট .৩৮০ বোরের বেলজিয়ান রিভলভার। কমলা যা হাতে তুলে দিলেন বীণার, সঙ্গে কার্তুজ আর পটাশিয়াম সায়ানাইড। বিশদে বুঝিয়ে দিলেন অস্ত্র ব্যবহারের পদ্ধতি।

- এইটা হল ব্যারেল, ট্রিগারে চাপ দিলে যেখান থেকে গুলি ছুটবে... শুটিংয়ে আসল কথা কিন্তু 'গ্রিপ'... তুই কীভাবে অস্ত্রটাকে ধরছিস...

#####

৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হল গমগম করছে। তিলধারণের স্থান নেই।

"আজ আমরা সমবেত হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবর্তন উৎসবে। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের কাছে আজ এক গর্বের দিন। গর্ব আমাদেরও, কারণ, আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করছেন বাংলার মহামান্য রাজ্যপাল স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন। যাঁর কাছে আমরা সবিশেষ কৃতজ্ঞ তাঁর মহামূল্যবান সময়ের কিছুটা আমাদের জন্য ব্যয় করতে সম্মত হওয়ায়।"

চতুর্থ সারিতে বসা বীণার কানে একটা শব্দও ঢুকছে না। চারপাশে একবার তাকায়। হলভর্তি লোক মনোযোগ দিয়ে শুনছে উপাচার্যের স্বাগত ভাষণ। বিরক্ত লাগে বীণার, এত মন দিয়ে কী শুনছে এরা? একই থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড়ই তো চলে আসছে বছরের পর বছর। কখন শেষ হবে এই চর্বিত চর্বণ? কখন শুরু হবে রাজ্যপালের অভিভাষণ?

কালো গাউনের ভিতরের ডান দিকের পকেটে রাখা আগ্নেয়াস্ত্রের উপর একবার হাত বুলিয়ে নেয় সে। পটাশিয়াম সায়ানাইড রাখা আছে বাঁ দিকের পকেটে। আলতো ছুঁয়ে দেখে। মনে মনে আর একবার ঝালিয়ে নেয় প্ল্যান।

স্ট্যানলি জ্যাকসনকে মারতে হবে, যখন ভাষণ দিতে উঠবেন, শুরু করবেন বক্তৃতা। এখন মঞ্চের মধ্যমণি হয়ে বসে আছেন মাঝের চেয়ারে। দু'পাশে আরও আটটা চেয়ারে বাকি বিশিষ্টরা। এখন কিছু করা মুশকিল। ঠিকই করে এসেছে সে, যখন বক্তৃতা দেবেন পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে, তখনই মোক্ষম সময়। কিন্তু ভাষণটা শুরু হবে কখন? আর কত দেরি? উসখুশ করতে থাকে সে। শুভস্য শীঘ্রম।

"এখন বক্তব্য পেশ করবেন প্রধান অতিথি স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন, যাঁর মূল্যবান উপদেশ ছাত্রছাত্রীদের আগামীদিনের চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।"

বীণার স্নায়ু টানটান হয়ে ওঠে নিমেষে। অবশেষে! উপস্থিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ব্রিটিশরাজের প্রভুত্বে প্রকাশ্য আঘাত হানার। রিভলভারে শেষবারের মতো হাত বুলিয়ে নেয় বীণা। কী কী যেন বলেছিল কমলাদি? গ্রিপটাই আসল... ফোরসাইট ইউ... আর যেন কী? মনে পড়ছে না কেন? কতবার ড্রাই প্র্যাক্টিস করেছে গত সপ্তাহে, হিসাব নেই কোনো। তবু গুলিয়ে যাচ্ছে কেন শেষ সময়ে? গলাটাও একটু শুকিয়ে গেছে যেন। একটু জল পেলে ভাল হত। এমন হচ্ছে কেন? ভয়?

মানসিক অস্থিরতায় চিরকাল যা করে এসেছেন, সেটাই করেন বীণা। বাবাকে স্মরণ করেন। বেণীমাধব প্রায়ই বলেন, "জীবনে অনেক ঝড়ঝাপটা আসবে, ভয় পাবি না কখনো। ভয়কে জয় করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। আদর্শে যদি বিশ্বাস স্থির থাকে, 'ভয়' নিজেই ভয় পেয়ে পালাবে। বুক চিতিয়ে দাঁড়াবি 'ভয়ের' সামনে।"

রাজ্যপালকে খুন করেছে আদরের মেয়ে, এটা জানলে কি বাবা খুশি হবেন? মনে হয় না। বরং ৬৭/১ একডালিয়া রোডের বাড়িতে বসে বাবা দুঃখ পাবেন খুব, মা-ও। বেণীমাধব নিখাদ দেশপ্রেমিক, কিন্তু উগ্র সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন না কোনোদিন। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, সহিংস না হয়ে উপায়ই বা কী আর? শাসকের উগ্র দমনপীড়নের মুখে কতদিন আর অহিংস থাকা যায়? কতদিন অন্য গাল বাড়িয়ে দেওয়া যায় এক গালে থাপ্পড় খাওয়ার পর? বীণা উঠে পড়েন চেয়ার ছেড়ে।

- Ladies and Gentlemen, distinguished guests and my dear students...

It is indeed a privilege for me...

মধ্যপথে থেমে যান দীর্ঘদেহী রাজ্যপাল। ওই কালো গাউন পরা মেয়েটি চেয়ার ছেড়ে ওভাবে ছুটে আসছে কেন তাঁর দিকে? কী বার করছে ওটা? আরে, ওটা তো রিভলভার!

জ্যাকসন ছিলেন শারীরিক ভাবে অত্যন্ত সক্ষম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ডের হয়ে কুড়িটা টেস্ট খেলেছিলেন। মূলত ব্যাটসম্যান এবং পার্টটাইম বোলার। পরিসংখ্যান, টেস্ট কেরিয়ারে মোট রান ১৪১৫, গড় ৪৮.৭৯। পাঁচটি সেঞ্চুরি সহ। উইকেট ২৪, গড় ৩৩.২৯।

প্রথম বুলেট যখন ছিটকে এল বীণার রিভলভার থেকে, জ্যাকসন মাথা সরালেন নিমেষে, বাউন্সারে 'ডাক' করার ভঙ্গিতে। মাথার দু ইঞ্চি পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল বুলেট। হুলুস্থূল পড়ে গেল সেনেট হলে। উপাচার্য হাসান সুহরাওয়ার্দী চকিতে মঞ্চ থেকে নেমে চেপে ধরলেন বীণার ঘাড়। প্রথম গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় বীণাকেও দিশেহারা দেখাচ্ছে তখন। ট্রিগার চাপলেন মরিয়া, পরপর তিনবার। জ্যাকসন ততক্ষণে সরে গিয়েছেন একপাশে, গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। সেনেট হলে উপস্থিত সাদা পোশাকের পুলিশ ঘটনার আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে ধরে ফেলল একুশ বছরের যুবতীকে। পটাশিয়াম সায়ানাইডের প্যাকেটে হাত দেওয়ার আগেই।

খবর ছড়িয়ে পড়ল উল্কাগতিতে। ডিগ্রি নেওয়ার অনুষ্ঠানে গভর্নরের উপর গুলি চালিয়েছে এক ছাত্রী। অল্পের জন্য প্রাণরক্ষা হয়েছে রাজ্যপালের।

পরের দিনের কাগজে হেডিং : "Girl assassin shoots at Governor, misses target."

####

বীণাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হল ইলিসিয়াম রো-র (বর্তমানের লর্ড সিনহা রোড) অফিসে। সেখান থেকে লালবাজার। জিজ্ঞাসাবাদে শারীরিক নির্যাতন ততটা ছিল না, যতটা ছিল অসম্মানজনক প্রশ্নাবলীতে মানসিক নির্যাতন ঘন্টার পর ঘন্টা। বীণা মুখ খুললেন না পুলিশকর্তাদের শত চেষ্টাতেও। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পুলিশ ধরল কমলাকেও, মার্চের পয়লা তারিখ। ছয় বছরের কারাবাস বরাদ্দ হল কমলা দাশগুপ্তের।

বীণার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ধারা এবং অস্ত্র আইনে। বীণা নির্দ্বিধায় দোষ কবুল করে নেওয়ায় বিচারপর্ব সম্পন্ন হল দিনসাতেকের মধ্যেই। রায় বেরলো ১৫ ফেব্রুয়ারি, নয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বীণা ঘোষণা করলেন সদর্পে, "হ্যাঁ, আমি রাজ্যপালকে মারতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য, পারিনি। স্ট্যানলি জ্যাকসন আমার পিতৃপ্রতিম, তাঁর প্রতি আমার কোন ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। কিন্তু তিনি এমন এক সরকারের প্রতিভূ, এমন এক শাসনব্যবস্থার মূর্ত প্রতীক, এমন এক supreme symbol, যা আমার দেশকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছে দমনপীড়নের মাধ্যমে। আমি আঘাত হানতে চেয়েছিলাম সেই প্রতীকের উপর।"

জ্যাকসন বেঁচে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু চেষ্টা বৃথা যায়নি বীণার। তাঁর অকুতোভয় অভিযান যে ব্রিটিশ সরকারকে আমূল নাড়িয়ে দিয়েছিল, সমসময়ের নথিপত্রে তার প্রমাণ মেলে। শাসকের বিরুদ্ধে শাসিতের ক্রোধ-ক্ষোভ-ঘৃণা কোন অসহনীয় পর্যায়ে গেলে কলেজছাত্রী রাজ্যপালকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় কনভোকেশনে, বুঝতে বাকি থাকেনি প্রশাসনের। রাতারাতি নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের। যাঁদের সাময়িক হলেও আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল প্রাণভয়।

কারাবাসের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দু'বছর আগে রাজবন্দিনী হিসাবে মুক্তি পান বীণা, ১৯৩৯ সালে। যোগ দেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে, সক্রিয় অংশ নেন "ভারত ছাড়ো" আন্দোলনে। ফের গ্রেফতার বরণ, তিন বছরের কারাবাস। Bengal Provincial Legislative Assembly (স্বাধীনতার পর West Bengal Legislative Assembly)-র সদস্যা ছিলেন ১৯৪৬-৫১। স্বাধীনতা যখন আসন্ন, লিখেছিলেন নিজের জীবনকথা, "শৃঙ্খল-ঝঙ্কার"। সহযোদ্ধা বিপ্লবী যতীশ ভৌমিকের সঙ্গে বিবাহ স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছরে।

শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন পাহাড়ের কোলে, হৃষিকেশে। প্রয়াণ ১৯৮৬-র ২৬শে অক্টোবর, অবহেলায়, একাকী, লোকচক্ষুর অন্তরালে।

#####

অগ্নিযুগের বাংলায় নারীশক্তির ভূমিকা এবং অবদান নিয়ে বইপত্র আছে কিছু, গবেষণাও যে অমিল, এমন নয়। কিন্তু বীণা দাসের মতো অগণিত দেশব্রতী নারী আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিযাত্রায়, তা যে প্রাপ্য প্রচার এবং মূল্যায়ণ থেকে অনেকাংশে বঞ্চিতই থেকেছে ইতিহাসের পাতায়, লেখাই যায় সংশয়হীন।

ভুল শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে বাংলার বিপ্লবী নারীদের অবদানের পুনর্মূল্যায়ণের। সময় এসেছে কাজী নজরুল ইসলামের পংক্তিদুটি স্মরণ করার।

"বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"।
_________

প্রফুল্ল ঘোয


প্রফুল্ল ঘোষ

শেয়ার করেছেন                              প্রণব কুমার কুণ্ডু।


Jayanta Ray

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ : ১২৬ তম জন্মদিন !!

অখণ্ড বাংলার মালিকান্দায় (ঢাকা) ২৪ ডিসেম্বর ১৮৯১ সালে জন্ম। পিতা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন প্রফুল্লচন্দ্র। তার আগে ১.৭.১৯৪৭ সালে তারিখে তাঁর নেতৃত্বে দশজন মন্ত্রী নিয়ে ছায়া মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছিল। ২ জুলাই এই মন্ত্রীসভার সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএসসি। অল্পদিন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে টাঁকশালে ডেপুটি অ্যাসেস মাস্টার নিযুক্ত হন। এই পদে তিনিই প্রথম ভারতীয়। ১৯২১ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মোট আট বছর কারারুদ্ধ থাকেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ প্রচারের জন্য ডা: সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘অভয় আশ্রম’ গঠন করেন। ঢাকায় ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবী দেশকর্মীদের সংস্পর্শে আসেন যাদের মধ্যে পুলিনবিহারী দাস অন্যতম। ১৯২৪ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির সম্পাদক, ১৯৩০ সালে লবণ সত্যগ্রহে অংশগ্রহণ ও ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। ১৯৪০ সালে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সত্যগ্রহে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রশাসনিক উৎকর্ষের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি দমনের চেষ্টা এবং দুর্নীতি রোধ অর্ডিনান্স জারী করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের ব্যাপক পরিকল্পনা এবং দুবছরের মধ্যে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে প্রবর্তিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগে১৫.১০.৪৭ সালে রাজশেখর বসু, সুনীতি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিক্ষাব্রতীদের নিয়ে বাংলা পরিভাষা কমিটি গঠিত হয়। সুরেশচন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগে এবং তাঁর প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথের জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হাতে অর্পণ করা হয়। কংগ্রেসের ঊর্দ্ধতন মহলের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে মন্ত্রীপদ থেকে তাঁকে সরে আসতে হয়। ১৫.১.১৯৪৮ সালে ডা: বিধানচন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদে কংগ্রেসী দলের নেতা নির্বাচিত হন এবং পরিষদে কংগ্রেসী দলের সভায় তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ তরে ১৯৫০ সালে নবগঠিত ‘কৃষক মজদুর প্রজা পার্টি’র সম্পাদক হন। এই দল পরে সমাজতন্ত্রী দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘প্রজাসমাজতন্ত্রী দল’ নাম হয়। ১৯৫৭ সালে মহিষাদল থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে আবার বিধানসভায় আসেন এবং অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রথম যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় যোগ দিলেও অল্পদিন পরেই ২.১১.১৯৬৭ তারিখে পদত্যাগ করে প্রোগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (পিডিএফ) নামে নতুন একটি ফ্রন্ট গঠন করেন। ২১.১১.১৯৬৭ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল তাঁর নেতৃত্বে পিডিএফ মন্ত্রীসভাকে শপথ গ্রহণ করান। যদিও তিন মাস পরেই তাঁর মন্ত্রীসভার পতন ঘটে। আজীবন গান্ধীবাদী অকৃতদার প্রফুল্লচন্দ্রের শেষ জীবন কাটত শ্রীঅরবিন্দচর্চায় এবং নি:সঙ্গ স্মৃতিচারণায়। তাঁর লেখা বাংলায় ‘প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি’ এবং ইংরেজিতে ‘অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস’ বই দুটি উল্লেযোগ্য। জার্মান, সংস্কৃত, হিন্দী ও গুজরাতি ভাষাও খুব ভাল জানতেন। সারাভারত গ্রামীণ শিল্প পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, কিছুদিন হরিজন সেবক সমিতির সভাপতি এবং গান্ধী সেবাসংঘের কর্মপরিষদের সদস্য ছিলেন। আইনস্টাইন প্রমুখ বহু যুগন্ধর পুরুষের তিনি সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।
১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ ইহলোক ত্যাগ করেন। এঁর সম্পর্কে বর্তমানের রাজনৈতিক কেষ্টবিষ্টুরাও বিশেষ কিছু জানেন বলে মনে হয় কি?

ইসলামে নারী


ইসলামে নারী

শেয়ার করেছেন             প্রণব কুমার কুণ্ডু

যে সমস্ত মুসলিম নারী ইসলামের প্রতি অনুরাগী,তারা হয়তো জানেন না, ইসলামের আসল রূপ আসল চরিত্র।
বাংলায় লেখা,তাই বাঙালি মুসলিমরা জেনে রাখুন নিম্নলিখিত আয়াতগুলি, নবীর আসল চরিত্র।
বাংলাদেশের ৯৯% নারীরা মনে করেন ইসলাম নারীকে মুক্তি ও সম্মান দিয়েছে !!
তাঁরা না জেনে নিজেরাই নারীদের সবচাইতে বড়ো ক্ষতি করছেন !!
হিজাবি কোনো নারীকে পেলে প্রশ্ন করবেন :

আপনি কি জানেন--
১. স্ত্রীদের পেটানোর হুকুম আছে ইসলামে ?
২. নারীদের স্বাক্ষ্যের মূল্য অর্ধেক ?
৩. ব্যভিচারী নারীর শাস্তি ব্যভিচারী পুরুষ থেকে বেশি ?
৪. নারীরা অর্ধেক উত্তরাধিকার পান ?
৫. নারীদের উপার্জনের বিধান কোরান ও হাদিসে নেই ?
৬. ধর্ষণের কোনো শাস্তি কোরানে নেই ?
৭. জেনা আর ধর্ষণ এক নয় ?
৮. পুরুষরা নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে পেতে পারে ?
৯. বেহেস্তে আপনাদের স্বামীদের ৭২ টি হুর জুটবে ?
১০. আপনার নবী ও তাঁর সাহাবাদের যৌন দাসী ছিল ?
১১. আপনার নবী পঞ্চাশোর্ধ বয়সে নয় বছর বয়সের আয়েশার সাথে যৌন লীলা করতেন ?
১২. আপনার নবীর ব্যক্তিগত নারীদের প্রতি আচরণ সর্বকালের জন্য উদাহরণ ?
১৩. আপনার নবী তার নববিবাহিতা স্ত্রী ফাতেমা দাহককে পর্দা সরিয়ে দেখার জন্য তালাক দিয়েছিলেন ?
১৪. আপনার নবী তার নববিবাহিতা স্ত্রী আমরার শরীরে কুষ্ট রোগের লক্ষণ দেখেই তার জন্য আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির দোয়া না করে তাকে তালাক দিয়েছিলেন ?
১৫. আপনার নবী নববিবাহিতা সাফিয়ার স্বামী কিনানাকে বুকে আগুন জ্বালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ও তার বাবাকে গলা কেটে,  ইদ্দত সময়ের জন্য অপেক্ষা পর্যন্ত না করে,  তাঁকে রাতে ধর্ষণ করে, পরের দিন স্ত্রী হিসাবেই ঘোষণা দিয়েছিলেন?
অনেকটা একই ঘটনা ঘটেছিলো জওহেরা ও রায়হেনার কপালে। জানেন কি তা ?
১৬. বুড় মুহাম্মদের পথে কাটা বিছিয়ে রাখার ঘটনার কোনো সহি হাদিসের ভিত্তি নেই ?
১৭. আপনার নবী, মৃত নারীর সাথে কবরে, যৌন কাজ করেছিলেন ও তার নিজের মেয়ের সাথেও এক সাহাবাকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছিলেন ?
১৮. আপনার নবী,  হাবিব বিনতে আব্বাসকে  শিশু অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি খেতে দেখে,  বড়ো হলে তাকে বিয়ে করবে বলেছিলেন ?
১৯. আপনার নবী বলেছিলেন, যে, সে ঈসা নবীর মা ও ফেরাউনের স্ত্রীকে জান্নাতে নিজের বউ হিসেবে পাবে ?
২০. সে তার স্ত্রী সাওদাকে,  বয়স হয়ে যাওয়ায়, তালাক দিতে চেয়েছিলেন এবং তার সাথে বিছানায় আর শোবে না এই শর্তে, তাকে তালাক দেয়া থেকে নিবৃত্ত ছিলেন ?
২১. রোজার মাসেও আয়েশার জিহবা চুষতেন ?
২২. মেয়েদের খৎনা করানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন, আপনার নবী ?
২৩.নাবালিকা মেয়ে, তাঁকে তিরস্কার করে গান গেয়েছিল বলে,  মক্কা জয়ের পর, তাকে হত্যা করেছিলেন ?
২৪. নারীরা জাহান্নামে পুরুষদের চাইতে সংখ্যায় বেশি হবে ?
২৫. কোরানের আয়াত অনুসারে নারীরা পুরুষদের জমিন আর স্ত্রী উটে চড়ে থাকলেও স্বামী চাইলে, তার সাথে সেক্স করতে দিতে হবে ?
২৬. স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়, তবে সে কোনো কারণ প্রদর্শন করতে বাধ্য নয় ?
২৭. বিয়ের সময় তালাকে, তাওফীদের অনুমতি না নেয়া থাকলে, স্বামীকে মুসলিম নারী তালাক দিতে পারেন না আর তালাকে তাওফীদের অনুমোদন থাকলেও, তা শর্ত স্বাপেক্ষে হতে হয় ?

***একজন নারীকে,  তার স্বামী, মেরে রক্তাক্ত করলে, সেই নারী আয়েশার কাছে এলে, আয়েশা মুহাম্মদের কাছে নালিশ করলেও, মুহাম্মদ স্বামীর কোনো বিচার করেনি, জানতেন তা ?

যদি উপরের বিষয়গুলোতে সন্দেহ থাকে, তবে মুফাস্সিল ইসলামের ভিডিও গুলো দেখুন, আর সেগুলোর নিচে রেফারেন্স দেখুন !!
আপনার বাবা জানে, বা হজরত জাকির নায়েক গোজামিল মাস্টার জানে, এসব অজুহাত দেবেন না।

Courtesy: Mufassil Islam


বিপ্লবী গণেশ ঘোষ




বিপ্লবী গণেশ ঘোষ           

শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু


Pratap C Saha

স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিপ্লবী গণেশ ঘোষ

জন্মঃ- ২২ জুন, ১৯০০ – মৃত্যুঃ- ২২ ডিসেম্বর, ১৯৯২

১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তাঁর নেতৃত্বে স্কুলের প্রায় সকল ছাত্রছাত্রী ইংরেজি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বয়কট করেন। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রামে বার্মা অয়েল কোম্পানির ধর্মঘট, স্টিমার কোম্পানির ধর্মঘট ও আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে ধর্মঘট প্রভৃতিতেও সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। অবশেষে মাষ্টারদা সূর্যসেনের পরামর্শ অনুযায়ী ১৯২২ সালে তিনি কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউশনে (যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) ভর্তি হন। এখানে এসে তিনি বিপ্লবী দলের কাজে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ছাত্রদের নিয়ে বিপ্লবী দল গঠনের কাজে নিয়েজিত হন। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় ১৯২৩ সালে মানিকতলা বোমা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন জেলে থাকার পর প্রমাণাভাবে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে বিপ্লবীদের সাংগঠনিক শক্তির মতাদর্শিক পার্থক্যের কারণে চারুবিকাশ দত্ত তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে 'অনুশীলন' দলে যোগ দেন। এর কিছুদিন পর সূর্যসেন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ 'যুগান্তর' দল গঠন করেন। এই বিপ্লবী দলের সভাপতি হন সূর্যসেন, সহসভাপতি অম্বিকা চক্রবর্তী, শহর সংগঠক হন গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিং এবং গ্রাম সংগঠক হন নির্মল সেন। এদলে পরবর্তীতে লোকনাথ বলকে যুক্ত করা হয়।
'ভারত রক্ষা আইন'-এ ১৯২৪ সালের ২৫ অক্টোবর গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিং সহ আরো কয়েকজন গ্রেফতার হন। এসময় গণেশ ঘোষ চার বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কারাগারে কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯২৮ সালের শেষের দিকে মুক্তিলাভ করেন তিনি।
১৯২৪ সালে ভারত উপমহাদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন। ভারত জুড়ে বিপ্লবীরা গড়ে তোলেন সশস্ত্র সংগ্রাম। ধীরে ধীরে সর্বত্র সংগঠিত হতে থাকেন স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিক বিপ্লবীরা। এ সময় সংগঠিত হয় বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক ডাকাতি। বিপ্লববাদীদের এই ধরণের সশস্ত্র কার্যকলাপের কারণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে ব্রিটিশ সরকার '১ নং বেঙ্গল অর্ডিনান্স' নামে এক জরুরি আইন পাশ করে। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল 'রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য সন্দেহভাজনদের বিনা বিচারে আটক রাখা'।
১৯২৮ সালে কলকাতায় সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। গণেশ ঘোষ প্রতিনিধি হিসেবে কংগ্রেসের এই অধিবেশনে যোগ দেন। এই অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বাহিনী গঠিত হয়। এই বাহিনীর চরিত্র ছিল সামরিক। 'হিন্দুস্থান সেবক দল' নামে আরেকটি বাহিনী সেসময় তৈরী হয়। কিন্তু সে দলের সাথে এ দলের পার্থক্য হল বেঙ্গল ভলান্টিয়ার বাহিনীতে নারী ও পুরুষ বিপ্লবী ছিল। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার বাহিনীকে সামরিক মানসিকতায় শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে স্বাধীনতার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা হয় । গণেশ ঘোষ বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বাহিনীর জি.ও.সি. মনোনীত হন।
কলকাতা কংগ্রেসের পর গণেশ ঘোষ চট্টগ্রামে চলে আসেন। গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিং এর প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামে ছাত্র, যুবক ও নারীদের সমন্বয়ে এক জনসংগঠন গড়ে ওঠে। ১৯২৯ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটিতে নির্বাচিত হন। আর সূর্যসেন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্যদিকে সূর্য সেন পাঁচজন বিপ্লবীকে (মাস্টারদা নিজে, অম্বিকা চক্রবর্তী, নির্মল সেন, গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিং) নিয়ে বিপ্লবী পরিষদ গঠন করেন। তাঁদের মধ্যে গণেশ ঘোষ ছিলেন অন্যতম। এই পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাস্টারদা সূর্যসেনের দলের নাম রাখা হয় 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা'। চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে এক স্বাধীন বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের দুঃসাহসী পরিকল্পনা নেয় এই বিপ্লবী পরিষদ। সেই পরিকল্পনা অনুসারে একটি বিপ্লবী বাহিনী গঠন করার কাজ শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে এই দলে যুক্ত হন নির্মল সেন, ধীরেন চক্রবর্তী, উপেন চক্রবর্তী, নগেন সেন, বিনয় সেন, মধু দত্ত, রাজেন দে, লোকনাথ বল সহ আরো অনেকে। ওই সময় পর্যন্ত দলে কোনো মহিলা সদস্য ছিল না। সচ্চরিত্র, স্বাস্থ্যবান, সাহসী যুবক ও স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরই নেয়া হতো এই বিপ্লবী দলে। বিপ্লবীদের নানাভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর এই দলে তাঁদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হতো। নিয়মিত অস্ত্রচালনা শিক্ষা চলতে থাকে এবং অস্ত্রশস্ত্র, বোমা ইত্যাদিও সংগৃহীত হতে থাকে। প্রায় ৫০ হাজার টাকাও সংগৃহীত হয়ে যায়। সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সূর্যসেনের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইরিশ বিপ্লবীদের 'ইস্টার বিদ্রোহের' স্মৃতি বিজড়িত 'গুডফ্রাইডের' দিনে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল রাত দশটায় চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের অত্যন্ত সুপরিকল্পিত অভিযান শুরু করার বিষয়ে বিপ্লবীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পূর্ব-পরিকল্পনা অনুসারে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার দখলের কর্মসূচি গ্রহণ করেন বিপ্লবীরা। গণেশ ঘোষ ছিলেন এই অভিযানের ফিল্ড মার্শাল। রাত দশটা পনের মিনিটে বিপ্লবীরা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। বিপ্লবীরা একের পর এক অতর্কিত আক্রমণ করে সরকারি অস্ত্রাগার, টেলিফোন কেন্দ্র, টেলিগ্রাফ ভবনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে নেন, যা ছিল দেড়শত বছরের ইতিহাসে ইংরেজদের জন্য খুবই অপমানজনক ঘটনা। এটি ছিল সরাসরি ইংরেজ বাহিনীর প্রথম পরাজয়।
১৯ এপ্রিল সকাল বেলা অগ্নিদগ্ধ তরুণ বিপ্লবী হিমাংশু সেনকে নিয়ে গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, মাখন ঘোষাল ও আনন্দ গুপ্ত শহরে আসেন। ওই দিন বিকেল বেলা গণেশ ঘোষের বাবা বিপিন বিহারী ঘোষের 'স্বদেশী বস্ত্রভাণ্ডারে' পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্রাগার দখল কর্মসূচির 'মবিলাইজেশন' তালিকা পায়। কিন্তু ওই তালিকায় বিপ্লবীদের ডাক নাম থাকায় পুলিশ তেমন কাউকে চিনতে পারে না। তাই পুলিশ ওই অঞ্চলের প্রায় সকলের বাড়ি তল্লাসী চালায় এবং অনেক পরিবারের লোকজনকে মারধর করে। এদিকে বিপ্লবীরা সারারাত অভিযানের ফলে ক্ষুধার্থ থাকায় খাবারের উদ্দেশ্যে আনন্দ গুপ্তের পেরেডের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে টিলার উপরের বাসায় গিয়ে উঠার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিং অন্য দুই সাথীকে নিয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আনন্দ গুপ্তের বাসার পিছন দিক দিয়ে দেবপাহাড়ের জঙ্গলে চলে যান। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর তাঁরা শহরের দক্ষিণ দিকে ফিরিঙ্গিবাজারের কাছে বিপ্লবী রজত সেনের বাবার বাসায় গিয়ে উঠেন। রজত সেনের মা তাঁদের আশ্রয় দেন। তিনি রজতের খোঁজ নিলে গণেশ ঘোষ জানান, সে মাষ্টারদা'র সঙ্গে আছেন। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার পর তাঁরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছেন, এমন সময় সেখানে পুলিশ আসে। রজতের মা নিজের ছেলের মতো এই বিপ্লবীদেরকে বাঁচানোর জন্য ঘরের মাচার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। পুলিশ ঘরে প্রবেশ করলে বিপ্লবীরা মাচার ভেতরেই রিভলবার নিয়ে প্রস্তুত হন। পুলিশ মাকড়শার জাল ও পুরানো ময়লা জড়ানো মাচার দিকে তাকিয়ে ভ্রুক্ষেপ না করে চলে যায়। এরপর বিপ্লবীরা গায়ে ধূলাবালি ও ময়লা মেখে পুরানো ছেঁড়া কাপড় পরে এখান থেকে দক্ষিণ কাট্টলীতে পূর্ব-পরিচিত এক বিপ্লবীর বাড়িতে গিয়ে উঠেন। ২০ ও ২১ এপ্রিল গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিং অনেক চেষ্টা করেও মাষ্টারদাসহ অন্য বিপ্লবীদের সাথে মিলিত হতে পারলেন না। অবশেষে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ২২ এপ্রিল গ্রাম্যচাষীর ছদ্মবেশে তাঁরা চট্টগ্রামের বাইরে চলে যাবেন। ওই দিন তাঁরা ট্রেনে করে কলকাতা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ফেনী স্টেশনে পৌঁছার পর পুলিশ তাঁদেরকে ট্রেন থেকে নামিয়ে টিকিট মাষ্টারের ঘরে নিয়ে যায়। পুলিশ তাঁদের শরীর তল্লাশী করার জন্য হাত দিবেন এমন সময় অনন্ত সিং এর রিভলবার গর্জে উঠে। মুহুর্তের মধ্যে এক পুলিশ লুটিয়ে পড়ে এবং অন্যদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকেন। এসময় প্রথমে অনন্ত সিং পরে গণেশ ঘোষ বিছিন্ন হয়ে যান। আনন্দ গুপ্ত ও মাখন ঘোষাল মাথায় আঘাত নিয়ে দুই সহযোদ্ধাকে খুঁজতে থাকেন। অনেক খোঁজাখুজির পর গভীর রাতে গণেশ ঘোষের সাথে দেখা হয় তাঁদের। এরপর তাঁরা অনন্ত সিংকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোথাও পেলেন না। অবশেষে তাঁরা কলকাতার যুগান্তর অফিসে চলে যেতে সক্ষম হন। অন্যদিকে অনন্ত সিং পাগল বেশ ধারণ করে বন্ধুদের খুঁজতে থাকেন। দুদিন পার হয়ে যাওয়ার পর তিনি তাঁর বাবার এক বন্ধুর সহযোগিতায় কলকাতায় চলে আসেন।
১৮ থেকে ২১ এপ্রিল এই চারদিন চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন কার্যত অচল ছিল। বিপ্লবীদের এ বিজয় ছিল গৌরবগাঁথা। ২২ এপ্রিল ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে চট্টগ্রাম নাজিরহাট শাখা রেললাইনের ঝরঝরিয়া বটতলা স্টেশনে একটি সশস্ত্র ট্রেন এসে থামে। বিপ্লবীদের তখন বুঝতে বাকি রইল না যে তাঁদের সম্মুখযুদ্ধের ক্ষণ আসন্ন। ওইদিন ব্রিটিশ সরকার সূর্য সেন, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং ও লোকনাথ বলকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে।
২২ এপ্রিল সকালে বিপ্লবীরা যখন জালালাবাদ পাহাড়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন কয়েকজন কাঠুরিয়া ওই পাহাড়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে যায়। খাকি পোশাকে রাইফেলধারী কিছু যুবককে সেখানে দেখে তারা দ্রুত লোকালয়ে ফিরে গিয়ে লোকজনের কাছে বলে দেয়, স্বদেশীরা ওই পাহাড়ে আছে। এই খবর পুলিশের কাছে পৌঁছার পর সেনাবাহিনীর সশস্ত্র রেল গাড়ি জালালাবাদ পাহাড়ের কাছে এসে থামে।
জালালাবাদ পাহাড়ে তখন বিপ্লবীরা কেউ রাইফেল পরিষ্কার করছে কেউ বা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। গাছের ডালে পাহারারত বিপ্লবীরা দেখতে পায় সামরিক ট্রেনটি কোন স্টেশন না থাকা সত্ত্বেও অদূরে রেল লাইনের উপর থেমে গেল। ঝোপের আড়াল থেকে বিপ্লবীদের ছোঁড়া হঠাৎ গুলির আঘাতে সৈন্যদল বিভ্রান্ত হয়ে পিছিয়ে যেতে থাকে। সৈন্যরা এরপর জালালাবাদ পাহাড়ের পূর্ব দিকে ছোট্ট একটি পাহাড়ের উপর লুইসগান বসিয়ে বিপ্লবীদের দিকে গুলিবর্ষণ করে। দেশপ্রেম আর আত্মদানের গভীর আগ্রহে তরুণ বিপ্লবীরা পাহাড়ের বুকের উপর শুয়ে সৈন্যদের লুইসগানের গুলিবর্ষণের জবাব দিচ্ছিলেন। তিন প্রধান নেতা সূর্য সেন, নির্মল সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী সঙ্গে থেকে ঘন ঘন তাঁদের উৎসাহিত করছেন, গুলি এগিয়ে দিচ্ছেন। জীবিত বিপ্লবীরা শহীদদের লাশ পাশাপাশি শুইয়ে রেখে সামরিক কায়দায় শেষ অভিবাদন জানান। পাহাড়ে সুর্যসেনের নেতৃত্বে কয়েকশ পুলিশ আর সেনা বাহিনীর সাথে বিপ্লবীদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৮০ জন এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ব্রিটিশ বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এরপর গণেশ ঘোষ ও অপর তিনজন প্রধান বিপ্লবী কলকাতায় পৌঁছনোর পর 'যুগান্তর' দলের নেতাদের সহায়তায় ফরাসি অধিকৃত চন্দননগরে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়। ১৯৩০ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে এক বৃহৎ পুলিশবাহিনী চন্দননগরের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। গণেশ ঘোষের পরিচালনায় পুলিশের সঙ্গে বিপ্লবীদের এক ভয়ঙ্কর খণ্ডযুদ্ধ হয়। সংঘর্ষে মাখন ঘোষাল নিহত হন। পুলিশ অন্যান্য কয়েকজন বিপ্লবীসহ গণেশ ঘোষকে গ্রেফতার করে। তাঁদের উপর চলে অসহনীয় নির্যাতন। অবশ্য এরপূর্বেই অনন্ত সিং স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে ধরা দেন। কেন ধরা দেন এবিষয়ে তখন তিনি কাউকে কিছু বলেননি। এমনকি পুলিশকে তাঁর নাম পর্যন্ত বলেননি। পুলিশ তাঁকে সনাক্ত ও বিচার করার জন্য চট্টগ্রাম জেলে পাঠিয়ে দেয়। অন্যদিকে গণেশ ঘোষকে গ্রেফতার করার পর কোনো কিছুর স্বীকারোক্তি না করাতে পারায় তাঁকেও চট্টগ্রাম জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুজনে চট্টগ্রাম জেলে দিন কাটাচ্ছেন। ততদিনে ব্রিটিশ সরকার 'চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন' মামলার বিচার কাজ শুরু করে।
বিচারকালে গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিং জেল ভাঙার এক নতুন পরিকল্পনা করেন। আত্মগোপনকারী মাষ্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গেও তাঁদের গোপন যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে পরিকল্পনাটি বানচাল হয়ে যায়। স্পেশাল ট্রাইবুনাল গণেশ ঘোষকে যাবজ্জীবন নির্বাসন দণ্ডে দণ্ডিত করে। ১৯৩২ সালে তাঁকে আন্দামান সেলুলার জেলে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
১৯৩২-১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর বিপ্লবী জীবনের হিসেব-নিকেশ করলেন। ভাবনা-চিন্তা করতে থাকলেন সকল স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের নিয়ে। বিপ্লববাদী পথ নিয়েও ভাবলেন। এ সময় তিনি রাজনৈতিক পড়াশুনাও বাড়ালেন। ১৯৩৫ সালের এপ্রিল মাসে আন্দামান সেলুলার জেলে দুই কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আব্দুল হালিম ও সরোজ মুখার্জী রাজবন্দী হয়ে এলেন। এই দুই বিপ্লবী আন্দামানে বন্দীদের রাজনৈতিক পড়াশুনা ও সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ সম্পর্কে ধারণা দিলেন। বন্দীদের মধ্যে প্রতিদিন গোপনে গোপনে বৈঠক হতো। এভাবে তাঁরা গঠন করলেন কমিউনিস্ট গ্রুপ। যে গ্রুপের মধ্যে যুক্ত হলেন গণেশ ঘোষ।
বন্দীদের নূন্যতম বেঁচে থাকার অধিকার আদায় ও সেলুলার জেল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ১৯৩৮ সালের ২৫ জুলাই বন্দীরা আমরণ অনশন শুরু করেন। বার বার অনশন এবং প্রথম অনশনের জন্য ৩ জন বিপ্লবীর মৃত্যুর ফলে কিছু দাবিদাওয়া পূরণ হয়। অন্যদিকে অনশনকারীদের সমর্থনে ভারতব্যাপী উত্তাল আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল যুগান্তর, অনুশীলন ও কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ। ফলে ১৯৩৮ সালের ১৯ জানুয়ারী ব্রিটিশ সরকার চাপের মুখে আন্দামান বন্দীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। কিন্তু গণেশ ঘোষসহ ৩০ জনকে দেশে এনে মুক্তি না দিয়ে আলীপুর, দমদম, প্রেসিডেন্সি ইত্যাদি কারাগারে পাঠানো হয়। অবশেষে ১৯৪৬ সালে তিনি মুক্তি পান। মুক্তিলাভের পর তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কমিউনিষ্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তাঁকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। তিনি তিনবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৫২, ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে)। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজনের পর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) নামক নবগঠিত দলে যোগ দেন। এরপর তিনি ১৯৬৭ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকর্মী ও অনুরাগীদের নিয়ে গঠিত 'বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থা'-র সভাপতিত্বের ভার গ্রহণ করেন।
জন্ম
বিপ্লবী গণেশ ঘোষ জন্মেছিলেন যশোহর জেলার বিনোদপুর গ্রামে। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করে। প্রাথমিক পড়াশুনা শেষে গণেশ ঘোষকে তাঁর বাবা চট্টগ্রামের মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। দুরন্ত ও চঞ্চল এই বালক পড়াশুনায় মেধাবী হওয়ায় স্কুলের শিক্ষকরা ও সহপাঠীরা তাঁকে খুব পছন্দ করতেন। এই স্কুলের ছাত্র অনন্ত সিং ছিলেন তাঁর অন্যতম বন্ধু । আর এই অনন্ত সিং এর মাধ্যমেই মাস্টারদা সূর্যসেনের সংস্পর্শে আসেন গণেশ ঘোষ। বন্ধু অনন্ত সিং এর কাছেই মূলত তাঁর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি হয়। আর এই বন্ধুটিকে স্বাধীনতার সশস্ত্র আন্দোলনে সবসময় পাশে পেয়েছেন তিনি। খুব অল্প বয়স থেকে গণেশ ঘোষ দেশকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই বয়স থেকেই শুরু হয় তাঁর বিপ্লবী দলের কঠোর নিয়মানুবর্তী জীবনযাপন।