শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

গৌরী দত্ত হয়েছিলেন গৌরী আইয়ুব


     ্গৌরী দত্ত হয়েছিলেন গৌরী আইয়ুব

      ফেসবুক থেকে         শেয়ার করেছেন         প্রণব কুমার কুণ্ডু

গৌরী আইয়ুব : এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।
............................................................
-- সুজয় কর্মকার
গৌরীর বয়স তখন কতই বা হবে! বড়জোর পঁচিশ। পাত্রের বয়স তখন পাত্রীর দ্বিগুন প্রায় পঞ্চাশের উপর। শুধু কি তাই? পাত্রী অভিজাত হিন্দু পরিবারের। আর পাত্র বিহারী মুসলমান। পাত্রী সুস্থ, সুন্দর, স্বভাবিক, পাত্র অসুস্থ চিররুগ্ন। এই পাত্রের সাথে বিয়ে দেওয়া মানে বাড়ীর সুন্দর মঙ্গলঘটকে স্রোতের জলে ভাসিয়ে দেওয়া। তাদের আশঙ্কা ছিল ছ'মাসের মধ্যে গৌরী বিধবা হয়ে ফিরে আসবে। এই অসম বিয়ে মানতে পারেননি গৌরীর পরিবারের লোকজন। কিন্তু এ বিয়ে তারা আটকাতেও পারেননি। আসছি সে কথায় -
গৌরীর জন্ম বিহারের পাটনা শহরে। ১৯৩১-এর ১৩ ফেব্রুয়ারী। বাবা দর্শন শাস্ত্রের প্রখ্যাত অধ্যাপক। মা নিরুপমা দেবী। ১৯৪৭ -এ বাঁকিপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৮ -এ মগধ মহিলা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট। পরের বছর পাটনা কলেজে ফিলজফিতে অনার্স নিয়ে বি. এ.ক্লাসে ভর্তি হলেন। এখানে কমুউনিস্ট পার্টির সংগঠন 'স্টুডেন্ট ফেডারেশন'-এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন । আন্দোলনে যোগ দিয়ে বাঁকিপুর সেন্ট্রাল জেলে দু দিন কারাবরণ করেন।
গান্ধীবাদী বাবা মেয়ের এই বামমার্গী আচরণ মেনে নিলেন না। গৌরীর কলেজে পড়া বন্ধ করে দিলেন। অনেক সাধ্য সাধনার পর দুটি সুযোগ তিনি দেন। পড়তে হবে - হয় কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, নয়তো রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন। খুব দ্রূত মনস্থির করে গৌরী সেদিন শান্তিনিকেতনকেই বেছে নিলেন।
১৯৫০ -এর জুন মাসে গৌরী শান্তিনিকেতনে এসে ভর্তি হলেন দর্শন বিভাগে। সে সময় অধ্যাপক আবু সইদ আইয়ুবও শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। শিক্ষক-ছাত্রীর বয়সের দুস্তর ব্যবধান থাকা সত্বেও অদৃশ্য কোন রসায়নে দুটি হৃদয় কখন কাছাকাছি এসে গেল সেই রহস্য অজানাই থেকে গেল ।প্রেমে পড়লেন দুজনে। গৌরী যেন উপাসনা করতে লাগল আইয়ুবের। 'প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে/ কে কোথা ধরা পড়ে কে জান!'
আবু সয়ীদ আইয়ুব ' রূপে ছিলেন মুঘল রাজকুমার'। টিকালো নাক, ঢেউ খেলানো চুল, দুধের সঙ্গে কমলালেবু মেশানো গায়ের রং। গায়ে রঙীন পাঞ্জাবী। আগে বাংলা ভাষা জানতেননা। রবীন্দ্রনাথকে জানার জন্যই তিনি বাংলা শিখেছেন। সারা জীবন রোগে ভুগেছেন কিন্তু রোগের ম্লানিমা একটুও ছিল না। বরং অসুস্থতা তাঁকে দিয়েছিল এক রোমান্টিক ইমেজ। অপর দিকে গৌরী ছিলেন শান্ত, স্নিগ্ধ, কর্মচঞ্চল, বুদ্ধিতে, সংস্কৃতিতে, সুরুচিতে, কমনীয় স্বচ্ছ, স্মিত মুখশ্রী। পরতেন খদ্দরের সাদা অথবা হালকা রঙের শাড়ি। ফিতে পাড়। সাদা ব্লাউজ। হাত কনুই পর্যন্ত ঢাকা। কোন রকম প্রসাধন নেই। নেই কোন গয়না। এই ভূষণহীণাকে দেখে অধ্যাপকেরও মন টলে গেল।
গৌরীর গুনমুগ্ধ ছিলেন অনেকেই। ১৯৫৩ সালে বসন্তোৎসবে তিন দিনের এক সাহিত্যমেলার আয়োজন হয়েছিল শান্তিনিকেতনে। সেদিনের ঐতিহাসিক সাহিত্য মেলার মুল দায়িত্বে ছিলেন গৌরী দত্ত ও নিমাই চট্টোপাধ্যায। বসন্ত যেমন ফুল ফোটায় সেদিন গৌরী তাঁর শান্ত, স্নিগ্ধ ব্যবহার, উষ্ণ আতিথেয়তা দিয়ে আমন্ত্রিত,অথিথি অভ্যাগতদের মনে পুষ্পিত সৌরভ এনে দিয়েছিলেন-যাদের মধ্যে ছিলেন নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, অন্নদাশঙ্কর রায়, নরেশ গুহ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, শামসুর রহমান বুদ্ধদেব বসু, প্রতিভা বসু প্রমূখ কবি ও সাহিত্যিকবৃন্দ।
গৌরীর এই প্রেমের কথা কিন্তু ধরা পড়ে গেল বাবার কাছে। বাবা জেনে গেলেন আইয়ুবের সাথে মেয়ের সম্পর্কের কথা। নীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন নির্মম, ক্ষমাহীন। ছাত্রী ও তার শিক্ষকের মধ্যে এই প্রণয় সম্পর্ক তিনি মেনে নিতে পারলেন না। ইতিমধ্যে গৌরী বি. এ. পাশ করলেন। ১৯৫৩ সালে বিনয় ভবন থেকে করলেন বি.টি.। আইয়ুব তখন কলকাতায়। সেই জন্য বাবা চাইলেন না গৌরী এম.এ. পড়তে কলকাতায় আসুক। পরিবর্তে উচ্চশিক্ষার জন্য মেয়েকে ইংলন্ডে পাঠিয়ে আইয়ুবের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিতে চাইলেন।
গৌরীও ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। আদর্শের প্রশ্নে তাঁরও ছিল বাবার মতই ইস্পাত কঠিন মনোভাব। গৌরীর যুক্তিবাদী মন বাবার বিরুদ্ধচারণ করল। তিনি বিদেশে না গিয়ে আসানসোলের কাছে উষাগ্রামের এক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরী নিলেন। সেখান থেকেই তিনি আইয়ুবের সাথে নিয়মিত যাগাযোগ রাখতেন। প্রতি শনিবার রাত ন'টা সাড়ে ন'টার ট্রেনে চাপতেন। ভোরে ট্রেন পৌছাত হাওড়া স্টেশনে। তারপর ট্রাম ধরে ৫নং পার্ল রোডে আইয়ুবের কাছে। সারাদিন কাটিয়ে বিকেলে আবার হাওড়া স্টেশনে।
এর পরই গৌরী ঠিক করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পড়বেন। স্কুরের চাকরী ছেড়ে দিয়ে বাবার মতকে অগ্রাহ্য করে তিনি কলকাতায় চলে এলেন। বস্তুত এ সময় গৌরীর ইউনিভার্সিটির খরচ,হস্টেল খরচ এবং হাতখরচের মত আর্থিক দায়িত্ব আইয়ুবই পালন করে ছিলেন। এ সময় ১৯৫৪থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত আইয়ুব ছিলেন রকফেলার ফাউন্ডেশনের ফেলো। সেই হিসাবে একটা বৃত্তি পেতেন।তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল Marxist Theory of Value.
১৯৫৫ -তে এম. এ. পাশ করে সাউথ পয়েন্ট স্কুলে চাকরী নিলেন গৌরী। তখন তিনি এম এ.বি.টি., পঁচিশ বছরের সাবালিকা। চাকরী করে স্বনির্ভর। আইয়ুবও ভরসা পেলেন। নাবালিকা ফুসলানোর অভিযোগ তো আর তুলতে পারবে না কেউ। এতএব আর কোন দ্বিধা নয়। তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। সেবার মার্চ মাসে বসন্তোৎসবে শান্তিনিকেতনে গিয়ে গৌরী ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জানিয়ে এলেন যে তারা বিয়ে করছে।
১৯৫৬ সালের জুন মাসে বিয়ে হল গৌরী দত্তের সঙ্গে আবু সয়ীদ আইয়ুবের। বিয়ের আসর সাজানো হল গৌরীর ভাসুর প্রখ্যাত সি পি আই নেতা ও বিধায়ক ডাক্তার এ, এম, ও গনির ৫নম্বর পার্ল রোডের বাড়ীতে । স্বভাবিকভাবেই গৌরীর বাপের বাড়ীর কেউ ছিলেন না। বিবাহের সাক্ষী ছিলেন ডা. গনি। ভাইঝি মীরা বাল সুব্রহ্মণ্যম, ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরতি সেন, আর গৌরীর এক আত্মীয় খ্যাতনামা সাংবাদিক লেখক অমিতাভ চৌধুরী( শ্রী নিরপেক্ষ)। গৌরী দত্ত হলেন গৌরী আইয়ুব।
গৌরী, আইয়ুবকে ভালোবেসেছিলেন নিজের প্রাণের সবটুকু সুধা উজাড় করে দিয়ে। সেই ভালোবাসাকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় গ্রহণ করার যোগ্যতা আইযুবেরও কম ছিল না। ভালোবাসা তাই শতদল পদ্মের মত ওদের জীবনে বিকশিত হয়েছিল অপার মহিমায়।' আইয়ুব দুটো কারণে তাঁর ভালোবাসাকে দীর্ঘ দিন গোপন করে রেখেছিলেন। এক. তাঁর বয়স অনেক বেশি। দুই. তিনি অসুস্থ। যক্ষ্মায় ভুগে উঠে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে গিয়েছিল। কত দিন বাঁচবেন, সে বিষয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন না।
কিন্তু গৌরীর ভালোবাসার ছোঁয়ায় আইয়ুবের জীবনের ছাঁচ বদলে গেল। গৌরী ছিলেন অত্যন্ত শ্রীময়ী, স্নিগ্ধ চেহারা, স্নিগ্ধ স্বভাব আর তেমনই তাঁর সংসার রচনা। ভালোবাসার এই মহিমাই জীবনের আর সব ক্ষেত্রে গৌরীকে নিরন্তর প্ররণা যুগিয়েছিল। সাহস যুগিয়েছিল। ওদের ভালোবাসা জীবদ্দশাতেই মিথে পরিণত হয়েছিল।
ওদিকে বাবাকে অমান্য করার জন্য দার্শনিক পন্ডিত পিতা গৌরীকে পরিত্যাগ করলেন। সারা জীবনে আর মুখদর্শন করলেন না। স্ত্রী ও অন্যান্য ছেলে মেয়েকে কড়া নির্দেশ দিলেন গৌরীর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছিল।
সকল আশঙ্কা তুচ্ছ করে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই 'কোল আলো করা 'এক ফুটফুটে ছেলে হল গৌরীর। অাইয়ুব ও গৌরীর সমস্ত সৌন্দর্যটুকু নিয়ে সে জন্মেছিল। ছেলের নাম রাখা হলে পূষণ আঞ্জুম। গৌরী খবর দেওয়া সত্ত্বেও নাতিকে দেখতে এল না কেউ।
তা না আসুক। বন্ধুদের অভাব হয়নি। তাঁরাই আত্মীয়ের অভাব পুরণ করে দিয়েছিলেন। ৫৮ সালে আইয়ুব 'Quest'নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকার দায়িত্ব নেন। তার সহযোগী ছিলেন অম্লান দত্ত। পত্রিকার অফিস ছিল পার্ল রোডের আইয়ুবের বাড়ীতেই। সুতরাং শুধু আড্ডা নয়, বরং প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠল গৌরীর আতিথ্য-প্লাবিত দুজনের সংসার।
১৯৬১ -তে আইয়ুব অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতচর্চা বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গে গৌরী এবং পুষণ। কিন্তু এক বছরের মধ্য্ই অসুস্থতার কারণে ফিরে আসতে হয়। গৌরী এবার যাধপুর পার্ক গার্লস স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতার পর শিক্ষায়াতন কলেজের শিক্ষাবিভাগে যাগ দেন।
শিক্ষা-জীবনের পাশাপাশি বিশালভাবে ছড়ানো ছিল তাঁর সামাজিক জীবন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাঁর অবদান কেবল শরণার্থী শিবিরে হাজার হজার অসুস্থ ও অসহায়দের সেবা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। যুদ্ধের সময়ে যে-শিশুরা অনাথ হয়েছিল, তাদের নিয়ে মৈত্রেয়ী দেবী গড়ে তুলেছিলেন কলকাতার বাইরে ‘খেলাঘর’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে গৌরীও যোগ দেন। অনাথ ছেলে মেয়েদের ভরণপোষণ এবং শিক্ষার আয়োজন করেন তাঁরা। এই অনাথ শিশুদের কাছে গৌরীর যথার্থই মাতৃরূপটি দেখা যেত।
মৈত্রেয়ী দেবী মারা যাওয়ার পর জীবনের শেষ পর্যন্ত আর্থারাইটিসের তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করেও খেলাঘরের প্রধান হিশেবে কাজ করেছেন গৌরী। কেবল দরিদ্র শরণার্থীদের সেবা করেননি তিনি, বাংলাদেশে মুক্তিযদ্ধের সময় যে-মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীরা কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদেরও যথাসম্ভব সাহায্য ও সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করেছিলেন।
অসুস্থ আইয়ুবের কোনো আয় ছিল না। সংসার চলত গৌরীর একার আয়ে। কিন্তু তারই মধ্যে যথাসম্ভব করতেন সবার জন্য। নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবুও চাকুরী, ছেলেকে দেখা, অসুস্থ স্বামীর সেবা, সমাজসেবা সবকিছুই হাসিমুখে করে গেছেন। কেউ কোনদিন তাঁকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখেননি।
প্রবল প্রতাপান্বিত পিতার ইচ্ছা বিরুদ্ধ গিয়ে গৌরী বিয়ে করেছিলেন আইয়ুবকে তিনি জানতেন এই অবস্থায় আবু সয়ীদ আইয়ুবের মত একজন মানুষকে শান্ত নির্ভরতা দেওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এবং তিনি তা দিয়েছিলেন। এ কাজে তাঁকে মহিমময়ী বলা যায়। আইয়ুবকে চেয়ছিলেন ঠিকই। কিন্তু যৌবনোদ্ধত দাম্পত্য তাঁর কাম্য ছিল না। ছিল একটি মিষ্ট মধুর দাম্পত্য- যেখানে স্ত্রী হবে স্বামীর কাছে সখী, সচিব, প্রিয়শিষ্যা। যারা এই যুগলের সান্নিধ্যে এসে ছিলেন তারা জানিয়েছেন তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল সৌন্দর্য ও মাধুর্যে ভরা।
গৌরীর জ্যেঠীমা ছিল তাঁর আদর্শ। জ্যেঠীমাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একজায়গায় বলেছেন -' পৃথিবীর সব মন্দির, মসজিদ গীর্জ থেকে নিজেকে আমি নির্বাসিত করেছি অনায়াসে। মাথা নত করার মত কোন দেবতা তো পাইনা কোন দেবালয়ে বরং আমার মনের মধ্যেই এসে দাঁড়িয়েছেন কিছু প্রণম্য মানুষ তাঁদের পায়ে মাথা রেখে আমি স্বস্তি পাই। আমরা ধরে নিতে পারি ওই প্রণম্য মানুষদের মধ্যে আইয়ুবও একজন। তাঁর দেবতা।
গৌরীর লেখার হাত ছিল অসাধারণ। তার গল্প, প্রবন্ধ বিদগ্ধমহলে তারিফ কুড়িয়েছে। চাইলে তিনি বড় লেখিকা হতে পারতেন। না যশোলোভী তিনি ছিলেন না। খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা, নিয়ম, নিরাপত্তা প্রভৃতি জাগতিক প্রাপ্তির মোহকে তুচ্ছ করতে পারেন কেবল গৌরীর মত অনন্যষাধারণ মেয়েরাই। স্বামীর লেখার কাজে সাহায্য করকেই শ্রেয় মনে করতেন। গৌরীর সহায়তা ছাড়া আইয়ুবের লেখাগুলো এমন সুন্দর ও সূক্ষ্ম রূপ পেত না। আইয়ুবের লেখার পিছনে গৌরী আইয়ুবের দান অপরিসীম।
গৌরী আপনাকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেই রেখেছিল, কিন্তু প্রথম জীবনে দাম্পত্য এবং পরবর্তী জীবনে দুরারোগ্য এবং দুঃসহ অস্টিও- আর্থারাইটিস তাঁকে প্রত্যক্ষ ও সংঘর্ষমূলক রাজনীতির ময়দানে পৌছাতে দিল না। তবুও ভারতীয় এমার্জেন্সীর অমাবস্যার বছরটিতে কলকাতায় তাঁকে সহযোদ্ধা হিসাবে পেয়েছিলেন গৌরকিশোর ঘোষ, তার পত্নী শীলা ঘোষ এবং জ্যোতির্ময় দত্তরা।
আইয়ুব সাহেবের মৃত্যুর পর গৌরী বেশ একা হয়ে গিয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল আইয়ুবের একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনী লিখবেন। এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিভাজনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের জীবনে যে উথাল -পাথাল অবস্থা -তা নিয়ে লিখবেন একটি উপন্যাস। কিন্তু অসুস্থতা বাদ সাধল।
তার উপর মা চলে এসেছিলেন মেয়ের কাছে। জীবিতকালে যে জামাইকে গ্রহণ করেননি মৃত্যুর পর তাঁর বাড়ীতেই থাকতে এলেন শাশুড়ী! সেবাপরায়ণা মেয়ে মনে কোন অভিমান না রেখে মায়ের সেবা করে গেলেন। মাকে কষ্ট দিতে তাঁর মন চায়নি।
বুদ্ধদেব বসুর কন্যা মীণাক্ষী দত্ত লিখেছেন- ' তাঁর আতিথেয়তা ছিল অনবদ্য স্ত্রী হিসাবে ছিলেন অতুলনীয়া -বাবা বলতেন একমাত্র মহাভারতের সাবিত্রীই তাঁর মতো বিদূষী, বুদ্ধিমতী, লাবণ্যময়ী ও পতিপ্রাণা। সত্যবানের মতোই আইয়ুবের জন্য গৌরী দীর্ঘজীবন উপহার নিয়ে এসেছিল।'
বাস্তবিক তিনি সাধারণ মানুষের অনেক উর্দ্ধে। যথার্থই দিনি দেবী। ১৯৯৮- এর ১৩ ই জুলাই এই মহিমময়ীর জীবনাবসান হয়।
আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এ প্রণাম।
.............................
তথ্যঋণ---
গৌরী আমাদের জীবনের সবচেয়ে প্রধান বিস্ময়-অমিতাভ চৌধুরী।
আত্মবিশ্বাসে সহজ-- শঙ্খ ঘোষ।
৫ পার্ল রোড --মীণাক্ষী দত্ত।
গৌরীদিকে যেমন বুঝেছি -আবদুর রউফ।
গৌরী আইয়ুব এক অনন্য ব্যক্তিত্ব - কামাল হোসেন।
অন্যান্য পত্র পত্রিকা।

পাখি ( চার )


     পাখি ( চার )

     ফেসবুক থেকে       শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু

Biswajit Ghosh এতে Indian Birds

Indian paradise flycatcher (Terpsiphone paradisi)
The Indian paradise flycatcher (Terpsiphone paradisi) is a medium-sized passerine bird native to Asia that is widely distributed. As the global population is considered stable, it has been listed as Least Concern on the IUCN Red List since 2004. It is native to the Indian subcontinent, Central Asia and Myanmar.
Males have elongated central tail feathers, and a black and rufous plumage in some populations, while others have whi...
আরো দেখুন


সাঁওতাল রমণী জ্যোৎস্না সোরেন-এর আঁকা চিত্র


     সাঁওতাল রমণী জ্যোৎস্না সোরেন-এর আঁকা চিত্র

      ফেসবুক থেকে        শেয়ার করেছেন         প্রণব কুমার কুণ্ডু

যদিও পোস্ট টি ইতিহাসের সাথে মানানসই নয়।
তবু খুব ভালো লেখা এবং খুব সুন্দর চিত্র খানা।
তাই পোস্ট করিলাম। ভালো না লাগিলে অযথা রাগারাগি করিবেন না, আমার বিনীত অনুরোধ।
আমি
-------********———
জ্যোৎস্না সোরেন ৷
আমি এক সাঁওতাল রমনী,
অলচিকি যার হরফ.....
ভাষা যার সাঁওতালী
খেরওয়াল যার জাতি ৷৷
যাদের সস্তা পোষাক দেখে,
তোমরা ব্যাঙ্গাত্বক হাসি হাসো ৷
যাদের গায়ের রং দেখে ;
পাথুরে কয়লার কথা ভাবো ৷৷
আমি সেই মেয়ে,
তাচ্ছিল্য করে যাদের মেজেন বলো,
অফিসের ভাত ঘুমে--
অথবা রাতের সোহাগী বাতাসে ,
যার ডাগর গতর কামনা করো ৷৷
আমি সেই মেয়ে ,
তোমাদের তুলতুলে দেবী মুখ সরিয়ে ,
ড্রয়িং রুম শোভা করি ;
চিত্রশিল্পীর নিখুঁত তুলির টানে ৷৷
আমি সেই মেয়ে ---
বাসে, ট্রেনে ,ট্রামে--
যার পাশে দুরত্ব রেখে বসো ৷
অথচ লোলুপতার লক্ লকে জিভ দিয়ে ,
আমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ খোঁজো ৷৷
আমি সেই মেয়ে --
বাজরার রুটি খেয়েও ,
মরদের চ্যাটালো হাতের সোহাগে ,
হয়ে উঠি লাজুক বেলকূঁড়ি ৷
আবার কখনো বা --
জলন্ত অঙ্গারের মতো ,
মশাল হয়ে জ্বলে উঠি ৷৷
আমি হাঁটছি শান্ত পায়ে --
আর আমার গোড়ালির নরম চাপে ,
খিল খিল করে ভেঙে পড়ছে আহ্লাদি মাটি ৷
আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাই ,
দেশের ভিটেয় মাটি নিয়ে - -
মৃন্ময়ী গড়ছেন কুমোর দাদু ৷
সে মেয়ের পরনে লাল শাড়ি ,
সিঁথি আর কপালে থেবড়ে মেটে সিন্দুর ৷
পায়ের ওপর পাতায় পদ্ম ,
হাতের চেটোয় মেহেদি মাখা ৷৷
আমি সেই মেয়ে --
ছায়া আর রোদ্দুরের ডুরে শাড়ি পরে ,
কুলকুল শব্দে মিশে যাচ্ছি ;
ডুলুং গাডার জলে ৷৷
মধ্যরাতের জলকষ্ট পেরিয়ে ,
বসবো নদীর পৈঠায় -
উসুম উসুম মাটিতে লিখবো,
আমার প্র পিতামহদের ইতিহাস ৷৷
আমি সেই মেয়ে --
যার আধখানা জীবন পুড়ে গেছে ,
তোমার আর তোমাদের---
কামিনগিরির কাজে ৷৷
বাকি আধখানা জীবন নিয়ে ,
বাঁচার স্বপ্ন দেখি ৷৷
তোমাদের লাঞ্ছনার প্রহর পেরিয়ে ,
মুক্ত প্রকৃতির বুকে কান পাতি ৷
ও নদী,আমাকে দাও....
ইচ্ছেমতির ঢেউ ৷
অবগাহন আর প্রক্ষালনে...,,,
আমাকে তোমার করে নাও ৷৷
রক্তাক্ত ইতিহাসের অবদমনের পথ পেরিয়ে ,
সংগ্রামী চেতনার বারতা ছড়িয়ে ...
আমার "অলচিকি" হরফে ,
আসবে পাখি ডাকা সকাল
আমাকে সম্পূর্নতা দিতে "৷৷
জোঁহার
জ্যোৎস্না সোরেন ৷৷

পোষ্ট ভালো লাগলে লাইক করুন নারী কথা - Voice For Women...



আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্কের ছাপানো কয়েকখানা নোটের প্রতিলিপি


     আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্কের ছাপানো কয়েকখানা নোটের প্রতিলিপি


 
     ফেসবুক থেকে       শেয়ার করে্ছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু




আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক এবং তাতে ছাপানো কিছু নোট 🙂
21 Oct 1943 তারিখে সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ-এর আঞ্চলিক সরকার গঠন করেন এবং পরবর্তীকালে 23 Oct 1943 তারিখে বসু ব্রিটিশ রাজ ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
বার্মা র রেঙ্গুন এ 1944 সালের 5 Apr প্রতিষ্ঠিত হয় 'আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক'।
আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক এ নানান মূল্যের টাকা ছাপানো হয়েছিল।

এখানে তার কিছু নমুনা




শহীদ মাস্টার দা সূর্য সেন-এর ওপর অত্যাচার


শহীদ মাস্টার দা সূর্য সেন-এর ওপর অত্যাচার



ফেসবুক থেকে         শেয়ার করেছেন         প্রণব কুমার কুণ্ডু