রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

রাশিয়ার ইউক্রেনের চেরনোবিল-এর পরমাণু কেন্দ্রের বিস্ফোরণ




     রাশিয়ার ইউক্রেনের চেরনোবিল-এর পরমাণু কেন্দ্রের বিস্ফোরণ



     ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন                   প্রণব কুমার কুণ্ডু


৩২টা বছর কেটেছে। গ্রামের প্রায় সমস্ত বাড়িগুলিই – দাঁড়িয়ে একরকম। কোথাও বা কোনও একটি বাড়ির সামনের বাগানটাতেই একখানি কাঠের বেঞ্চ, কাঠের টেবিল – তার উপরে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সাজানো – হয়তো বা একফালি বাড়িতে বানানো কেক, ডেইজির ডালগুলোয় মরসুমের ফুল এসেছে নতুন। একেকটা উঁচু এ্যাপার্টমেন্ট, ভূতের মতোই যেন দাঁড়িয়ে একলাটিই, বিস্ময়ভরা এক অবাক নীরবতায়। একজনও মানুষ নেই কোথাও। গ্রামের নাম প্রিপইয়াত, জায়গার নাম চেরনোবিল। ৩২টা বছর কেটেছে।
এখানে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, কেবল রেডিওএ্যাক্টিভ ট্যুরিজমের নেশায় পাগল কোনও অভিযাত্রী ট্যুরিষ্টদল মধ্যে মধ্যে হানা দিয়ে ফেরে। তাদের পরনে থাকে বিশেষ পোশাক – কোনও কিছুকে স্পর্শ করাও কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ, তাদের জন্যও। তারা দেখে, মেঘমুক্ত নীল আকাশের তলায় – ঝকঝকে সবুজ ঘাস, মাঠ দাপিয়ে ছুটে বেড়ানো বুনো ঘোড়ার দল, নদীতে ঝাঁপানো মাছ – গাছের পাতায় বৃষ্টির জল জমে আছে। এসব তাদের স্পর্শ করা বারণ – কারণ এসবেতেই যে নিঃশব্দে মিশে রয়েছে প্রজন্মের বিষ, বাসা বেঁধে আছে ক্যান্সারের মৃত্যুদূত। এ এক অদ্ভুত শহর, জীবন্মৃত স্মৃতিদেরকেই দুঃখ চেপে হাতড়ে খোঁজার শহর, চেরনোবিল। ৩২টা বছর কেটেছে।
১৯৮৬র এপ্রিলে, রাশিয়ার (বর্তমানে ইউক্রেন) চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের বিস্ফোরণ – পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ শিল্প-বিপর্যয়। এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রকাশিত হতে বিস্তর সময় লেগে গিয়েছে। আজ সাংবাদিক-লেখক-ভুক্তভোগীরা প্রমাণ করতে পেরেছেন – সেই চেরনোবিল কেবল একটি সামান্য দুর্ঘটনা নয়, ইয়োরোপের একাধিক দেশের সমাজ-পরিবার-যোগাযোগ-আর্থসামাজিক-নীতি সবটুকুকেই ওলটপালট করে দিতে পেরেছে চেরনোবিল।
২০১৫সালে নোবেল পুরষ্কারজয়ী সাহিত্যিক শ্বেতলানা এ্যালেক্সিভিচ ১৯৯৭সালের একটি লেখায় নির্দ্বিধায় তাই বলতে পেরেছিলেন, “চেরনোবিলের নাম শুনলেই সবাই ইউক্রেনের কথা বলে, তারা ভুলে যায় বেলারুশ বা বেলোরাশিয়ার কথাও – চেরনোবিলকে ঘিরেই গড়ে ওঠা বেলারুশের ইতিহাস তাই আজও লেখা বাকি, কেউ বা হয়তো কোনোদিন তা লিখবে বলেই আশা নিয়ে বেঁচে থাকি।” বেলারুশ অর্থে বেলোরাশিয়া বা ‘হোয়াইট রাশিয়া’ – তথ্যগত ভাবেই চেরনোবিল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।
চেরনোবিলে পরমাণু-বোমা পড়েনি, কেবল পরমাণু-বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী একটি কেন্দ্রের মূল রিএ্যাক্টরটি বিক্রিয়া চলাকালীন বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায় – ফলস্বরূপ রেডিওএ্যাক্টিভ ফল-আউট ঘটে – অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় কণা বা বিকিরণ পরিবেশে ছড়িয়ে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিলো যে – আকাশের বায়ুমণ্ডলেও সেই বিকিরণ এবং তেজস্ক্রিয় কণা গিয়ে মেশে – এবং, কিছু দিনের ব্যবধানেই, আবহাওয়াগত কারণে তা সারা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়েই বয়ে বেড়ায় – ঠিকই শুনেছেন, পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়েই এর বিস্তার ঘটে, বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন ভারতবর্ষ এমনকি আফ্রিকার বায়ুমন্ডলেও চেরনোবিলের ঘটনার কিছু সপ্তাহ পরে পরেই অস্বাভাবিক মাত্রায় তেজস্ক্রিয় কণার অস্তিত্ব মিলতে পেরেছিলো। তবে, বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো প্রতিবেশী দেশগুলিই। উদাহরণ দেবার চেষ্টা করা যাক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আগুনে বেলারুশের ৬১৯টি গ্রাম জার্মান সেনার হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো, চেরনোবিলের কারণে বেলারুশের ৪৮৫টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৭০টি গ্রামের মাটি ভয়ানক ভাবে তেজস্ক্রিয়তার লক্ষণ দেখানোয় – তাদেরকে চিরদিনকার মতোই ৪ থেকে ৬ফুট মাটির নীচে বুজিয়ে ফেলা হয়। এটাও ঠিকই শুনেছেন – মানুষ নয়, ৭০টি আস্ত গ্রামকে সে সময়ে মাটির গভীরে বুজিয়ে ফেলা হয়েছিলো যুদ্ধকালীন তৎপরতায়, পৃথিবীর অজান্তেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বেলারুশের জনসংখ্যার প্রতি ৪জনের ১জন নিহত হয়েছিলেন, চেরনোবিলের তেজস্ক্রিয়তায় আজ বেলারুশীয়দের প্রতি ৫জনের ১জনকে তেজস্ক্রিয় অঞ্চলে – তেজস্ক্রিয়তাকে বরণ করে নিয়েই বাঁচতে হয় – প্রতি ৫জনের ১জন অর্থে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ (৭ লক্ষ শিশু সমেত)।
বেলারুশের গোমেল এবং মোগিয়ালভ প্রদেশে জন্মের চেয়ে মৃত্যুর হার ২০% বেশী। দেশটির ২৩% জমিই তেজস্ক্রিয়তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত। নদীর জলে বিকিরণ মিশে বেড়ায় – সোনালী মাছেরা অভক্ষণীয় – তাদের শরীরেও মিশেছে বিষ। মস্তকহীন শিশুরা জন্ম নিয়েছে, আতঙ্কের প্রহর গুণতে গুনতেই চিৎকার করে কেঁদে উঠতে চেয়েছেন নতুন মায়েরা সবাই। ক্যান্সার সেখানে রোজকার খবর, ভয় বা বিস্ময়ের অবকাশ নেই কোথাও। চেরনোবিলের আগে , প্রতি ১লক্ষ বেলারুশীয়ের ৮২জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতেন – এখন সংখ্যাটা ৬০০০ ছাড়িয়ে যায় – নীট বৃদ্ধির হার প্রায় ৭৪গুণ।
সামাজিক অবক্ষয়ের খবর শুনবেন – তৎকালীন সোভিয়েত সরকার খবরটিকে চেপে রাখতে এতটাই তৎপর ছিলেন, যে দুর্ঘটনার ১সপ্তাহেরও কম সময়ের ভিতরেই – দেশের অন্যান্য গ্রাম ও শহর থেকে শিশুদেরকে জুটিয়ে এনে চেরনোবিলে মে দিবসের মিছিলে হাঁটানো হয়। তাদের ক্যান্সার হয়েছিলো। ‘স্বেচ্ছাসেবক’দের ‘উদ্বুদ্ধ’ করে তুলে, সামান্যতম নিরাপত্তা ছাড়াই তাদেরকে চেরনোবিলের দুর্ঘটনাস্থলের নির্বিষকরণের কাজে নামিয়ে দেওয়া হয় – সেখানে মাত্রাতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাবে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র বা রোবটই আর কাজ করতে পারছিলো না কোনোভাবেই। বিভিন্ন সময়ে তাদের মৃত্যু বা অসুস্থতার যে সমস্ত বর্ণনা পড়বার সুযোগ পেতে পেরেছি – সেসব এখানে লেখাও আমার পক্ষে কষ্টকর, কুৎসিত বীভৎসার এমনই চরম রূপ দেখেছিলো চেরনোবিল। বিজ্ঞানীদের উপর সোভিয়েত সরকার নজরদারী বসায়, যাতে করে কেউ কোনও বেফাঁস মন্তব্য কোথাও করে না বসেন। সমাজতাত্ত্বিকেরাও তাই সোভিয়েত ভেঙ্গে যাবার কারণগুলির মধ্যেও আজকাল চেরনোবিলের অবদান দেখেন।
৫ইজুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পৃথিবী জুড়ে আরও নানা ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গেই, পরমাণু-চুল্লি বা পরমাণু বিদ্যুতের বিরোধিতায় একাধিক সংগঠন আওয়াজ তুলতে চাইবে। চেরনোবিলের সঙ্গে সঙ্গেই তারা মনে করিয়ে দিতে চাইবে ২০১১সালের ফুকুশিমা পরমাণু-কেন্দ্রের সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথাও। ১৯৮৬র চেরনোবিলে মানুষের ভুলেই পরমাণু কেন্দ্রের চুল্লিতে যে বিস্ফোরণ ঘটেছিলো, ২০১১র ফুকুশিমায় সেই একই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সুনামির জলোচ্ছ্বাস। যে কোনও পরমাণু-চুল্লিরই সম্পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ার অর্থই হলো তাই ‘মূর্খের স্বর্গে অধিষ্ঠান’। আর সেসমস্ত দুর্ঘটনার ফলশ্রুতির খতিয়ান যে ঠিক কেমনটাই বা হতে পারে তা তো এই গত কয়েকটি অনুচ্ছেদেই বিস্তারিত বলে এলাম।
সরকার আপনাকে জানাবে না কিছুই, কারণ পরমাণু-বিষয়ক সব খবরই যে রাষ্ট্রীয়-নিরাপত্তার লালফিতেতেই বন্দী পড়ে থাকে চিরটাকাল। নিঃশব্দে আপনার চারপাশের সবকিছুই, বিষাক্ত হয়ে পড়বে সকলের অজান্তেই। ফুকুশিমার যে চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটেছিলো – তার কেন্দ্রস্থলে আজ অবধিও কোনও রোবট বা যন্ত্রও পৌঁছিয়ে উঠতে পারেনি। চেরনোবিলের সেই ইতিহাসই যেন এই ৩২টা বছরেই নতুন হয়ে ফিরে আসতে পেরেছে আরেকবার।
সেই মৃত শহরের প্রতিটি ঘাসের বিন্দুতে জেগে থাকা কণাগুলির মতোই, সত্যিটাকে জানাবার প্রয়োজন ছিল – পরমাণু মাথায় থাকুক, আমরা বরং সূর্য বা সৌরশক্তিকেই – ভূতাপশক্তি বা জোয়ার-ভাঁটার শক্তিকেই নিজেদের ভবিষ্যত বলে বেছে নেবার চেষ্টা চালিয়ে যাই। আগামী প্রজন্মকে বাঁচাবার অঙ্গীকারটুকুকে বুকে নিয়েই।
তথ্য সৌজন্যে: অমর্ত্য বন্দোপাধ্যায়


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



     ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


     শেয়ার করেছেন               প্রণব কুমার কুণ্ডু


আজকের দিনে ১লা জুলাই ১৯২১ সালে #ঢাকা_বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়...
বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন।এছাড়াও, এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়াউইকের পক্ষ থেকে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়।এখানে প্রায় ৩৭,০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ১,৮০৫ জন শিক্ষক রয়েছে৷
ইতিহাস
মূল নিবন্ধ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট...
নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান প্রস্তাবক
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্ত্বার বিকাশের লক্ষ্যে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ব্রিটিশ ভারতে তৎকালীন শাসকদের অন্যায্য সিদ্ধান্তে পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রতিবাদের ফসল হচ্ছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী গ্রন্থে লিখেছেন,
বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লর্ড লিটন যাকে বলেছিলেন স্পেল্নডিড ইম্পিরিয়াল কমপেনসেশন। পূর্ববঙ্গ শিক্ষাদীক্ষা, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিল। বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর এ অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছিল, বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে।
১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর মাত্র তিন দিন পূর্বে ভাইসরয় এর সাথে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়, জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)-এর অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি. আচির্বল্ড, ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর. জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক, এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্য। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাশ করে 'দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০'। লর্ড রোনাল্ডসে ১৯১৭ হতে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর থাকা কালে নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা কে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য ঘোষণা করেন। সৈয়দ শামসুল হুদার সুপারিশে স্যার এ. এফ. রাহমান কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট মনোনীত করা হয়, তিনি ইতিপূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যরত ছিলেন।পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে রফিকুল ইসলামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নাথান কমিটি রমনা অঞ্চলে ৪৫০ একর জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এই জায়গায় তখন ছিল ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট হাউস, সেক্রেটারিয়েট ও গভর্নমেন্ট প্রেসসমূহ।
সৃষ্টির শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। এ ছাড়া ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ হতাশা প্রকাশ করে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইনের বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির উপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনসমূহের সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস" হিসেবে পালন করা হয়।
তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসী ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন।
প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ (ইংরেজি বিভাগ; এমএ-১৯২৩)। যে সব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন তারা হলেনঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ.সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ. ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ.এ.জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, স্যার এ. এফ. রাহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্থিরতা ও ভারত বিভক্তি আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা উজ্জীবিত হয়। নতুন উদ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ববাংলার ৫৫ টি কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। ১৯৪৭-৭১ সময়ের মধ্যে ৫টি নতুন অনুষদ, ১৬টি নতুন বিভাগ ও ৪টি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫২ সনের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রী সহ শহীদ হয়েছেন বহুজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের সরকার প্রবর্তিত অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্য ষাটের দশক থেকে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ উক্ত অর্ডিন্যান্স বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার-১৯৭৩ জারি করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এই অর্ডার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৩০-৩৪জগন্নাথ কলেজ-এর অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ.এইচ.আর.জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক, এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্য। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাশ করে 'দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০'। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে রফিকুল ইসলামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নাথান কমিটি রমনা অঞ্চলে ৪৫০ একর জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এই জায়গায় তখন ছিল ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট হাউস, সেক্রেটারিয়েট ও গভর্নমেন্ট প্রেসসমূহ।