পদবি
Pranab Kumar Kundu Ananda Kumar Biswas-এর পোস্ট শেয়ার করেছেন৷
পদবি আর্যদের পরানো গোলামির শেকল !
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অধীনে চাকুরী ও পড়াশোনায় reservation তুলে দেওয়ার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে।
হরিয়ানায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে reservation তুলে দিয়েছে।
এই reservation বর্ণ হিন্দু শাসকগণ রাখবেন না। আবার ওরা ইংরেজ আগমনের পূর্ব অবস্থায় নিয়ে যাবেন।
গীতা(১৮/৪২-৪৩) ও মনুসংহিতার নির্দেশ অনুযায়ী মূল নিবাসীদের কাছ থেকে শিক্ষা,চাকুরীর সুযোগ তুলে নেবে।
যে বর্ণ বা জাত-পাত দেখে অনগ্রসরদের টেনে তোলার ব্যাবস্থা ডঃ আম্বেদকর করে গেছেন, সেটা আর থাকবে না।
আর বর্ণ হিন্দুরা জাত-পাত ব্যাবস্থা তুলবেও না।
কারণ বর্ণ এবং জাতপাত ব্যাবস্থা হিন্দু ধর্মের একটা পিলার, তা যতই ক্ষতিকর হোক। জাত-পাতই ওদের মূলধন।
ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু আইন, মনু সংহিতায়, কোন বর্ণের কি নাম ও পদবি হবে, তা বলে দিয়ে, আর্য ও অনার্য চিহ্নিত করেছেন।
মূল ভারতীয়দের কোনও পদবি ছিলনা।
রাবণ,রাম,পরাশর,মুনি,জনকরাজা,রত্নাকর(বাল্মীকি),যুধিষ্ঠির,অর্জুন,রাজানরক,ব্যাসদেব,চরক,শুশ্রুত,দশরথ,বালি, সুগ্রীব,গৌতম বুদ্ধ কারোর কোনোও পদবি ছিল না।
আর্যরাই মূল নিবাসী ও আর্যদের বিভেদকরণের জন্য জাতি সৃষ্টি ও পদবির প্রচলন হয়েছে।
Reservation থাকলেও সিলেকসান বোর্ডে যে ৫ জন নিয়োগকারী অফিসার থাকেন তার মধ্যে ৪ জন বর্ণ হিন্দু এবং এক জন থাকেন শুদ্র (মূল নিবাসি) প্রতিনিধি।
পদবি দেখেই মৌখিক পরীক্ষার নম্বর দেওয়া হয়, প্রশ্নের উত্তর অনুযায়ী নয়।
শূদ্রদের (sc, st, obc)কঠিন প্রশ্ন করা হয়।
চার জন উচ্চ বর্ণের অফিসার যদি পদবি দেখে বর্ণ হিন্দুদের বেশী নম্বর দেন এবং ধর্মান্তরিত ও শূদ্রদের কম নম্বর দেন, তাহলে একজন শূদ্র অফিসার শূদ্র পরীক্ষার্থীকে কিভাবে টেনে তুলবেন?
এই বর্ণ এবং পদবি আর্যদের দেওয়া, এটা বিভিন্ন বর্ণের মানুষের বেল্ট পরানো।
পাকিস্থানি সরকার একবার পূর্ব পাকিস্থানে রাস্তার কুকুর নিধন করতে শুরু করেছিল। তাতে পোষা কুকুরের মালিকদের বলে দেওয়া হয়েছিল – ‘তোমরা তোমাদের কুকুরের গলায় নীল রঙের বেল্ট লাগাও‘ । ওই বেল্ট লাগানো কুকুর বাদে বাকি কুকুরদের ওরা গুলি করে মেরেছিলো। তেমনি হিন্দুদের মধ্যে গ্রেড অনুযায়ী পদবি ঠিক ক'রে কুকুর বাছাই করার মতোন।
কেন মূল নিবাসিরা বিদেশিদের দেওয়া বর্ণ বা পদবি বা জাত ব্যাবস্থা বয়ে বেড়াবে?
এটা মূল নিবাসীদের অপমান করা।
তাই প্রথমেই উচিত, মূল নিবাসিদের এই অপমানকর পদবি ,বর্ণ ও জাত ব্যাবস্থা পরিত্যাগ করা।
আর্যরা কিন্তু পদবি ত্যাগ করবেন না।
তখন মুল নিবাসিদের উচিত, উচ্চবর্ণের পদবি গ্রহণ করে, সব একাকার করে দেওয়া।
তাহলে সিলেকশন বোর্ডে, চিনতে না পেরে, বাধ্য হয়েই পদবি প্রথা তুলে দেবে।
যত দিন পদবি থাকবে ,ততদিন বর্ণ , জাত-পাত থাকবে।
তামিল নাড়ু ও বিহারে পদবি নেই।
বর্তমান শাসককুল ক্ষমতায় আসার আগে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন – তারা জাত-পাতের ভেদাভেদ তুলতে পদবি তুলে মানুষকে সম মর্যাদা দেবেন।
কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেটা চেপে গিয়েছেন।
কারণ তাতে তাঁদের জাতির প্রাধান্য থাকবে না।
তামিলনাড়ুতে দেখলাম-নামের শেষে বাবার নাম জড়িত আছে, কিন্তু পদবি নেই। যেমন – রবীন বাবুর ছেলে শ্যামল। নাম হবে – শ্যামল রবীন। অথবা শ্যামল রবীন রমা (রমা মায়ের নাম)।
ব্রাহ্মণ্যবাদিগণ পদবি পরিবর্তনের সাংবিধানিক অধিকারটাও হরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
খুব হুশিয়ার। পদবি পরিবর্তন করলে, ব্রাহ্মণবাদিরা একটা কথা বলেন – সেটা হল- ‘কাক হয়ে ময়ূরের পুচ্ছ লাগানো’। ওদের কাছে মূলনিবাসীরা কাক আর ওরা ময়ূর।
কতটা ঘৃণা করে ওরা। আরো বলেন- এতে পূর্বপুরুষদের অপমান করা হয়। আসলে তা নয়,বরং দখলদারদের দেওয়া পদবি রাখাটাই পূর্বপুরুষদের অপমান করা।
একজন মুসলিমকে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে- শুধুমাত্র নাম বল্লেই -মুসলিম বলে চেনা যায়। মন খুত খুত করেনা। কিন্তু একজন হিন্দুর বেলায়, পদবি ছাড়া নামে, মন খুত খুত করে। পদবি জানলেই বোঝা যায়, সে কোন গ্রেডের হিন্দু। অনেক পদবি এতই ঘৃণ্য যে- মানুষের সামনে তারা বলতেও লজ্জা পায়। যারা আর্য শাসন, বা আর্য ধর্ম মেনে নিতে চাইনি- তাদেরকেই আর্যরা জঘন্য পদবি দিয়েছে- যাতে সবাই ঘৃণা করে।
আর্যরা হিন্দু আইন মনু সংহিতায় বর্ণ ভেদে যে নাম ও পদবি দিয়েছে তাহল-
২/৩০- জাত বালকের নাম করণ দশম বা দ্বাদশ দিনে করিবে (এই আইন অনুযায়ী- জন্মানুসারেই বর্ণ ভেদ বা জাতি ভেদ হয়, কর্ম অনুযায়ী নয়)।
২/৩১- ব্রাহ্মণের মঙ্গল বাচক, ক্ষত্রিয়ের বল বাচক এবং শূদ্রের হীনতা বাচক নাম রাখিবে। (গুণের কোন মূল্য নেই).
২/৩২- ব্রাহ্মণের নামের শেষে শর্মা উপপদ , ক্ষত্রিয়ের নামের শেষে বর্ম্মাদি কোন রক্ষা বাচক উপপদ, বৈশ্যের নামে ভুতি প্রভূতি কোন পুষ্টি বাচক উপপদ এবং শুদ্রের নামের শেষে-দাসাদি কোনো প্রেষ্য বাচক উপপদ যুক্ত করিবে। (পৃথিবীর প্রথম reservation শুরু)।
এই সমস্ত পদবি দেখে টোল,স্কুল,কলেজ,চাকুরি ইত্যাদিতে ওরা লোক বাছাই করে।
এর আগে এদেশের মানুষের কোন পদবি ছিলনা।
প্রথমে বর্ণ ভেদ, তাতে পুরটা কাজ না হওয়ায়, সঙ্গে জাতিভেদ সৃষ্টি করে মূল নিবাসিদের মধ্যে পদবি প্রথা চালু করে বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টি করে, কোন ধাপের, কোন খোপের, কোন গ্রেডের হিন্দু সেটা নির্ণয় করে। এদেশের মানুষ সেটা মানতে বাধ্য হয় – কারণ তারাই শাসক, তারাই জমি জায়গা বা সম্পদের মালিক হয়। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে –“এ পৃথিবীর সমুদয় সম্পত্তি ব্রাহ্মণের”।
সংরক্ষণ থাকুক বা না থাকুক, নামের শেষে পদবি না থাকায়, সিলেকশন বোর্ডে চিনতে না পারায়, মেধাবি অনার্যরা সিলেকশনে টিকে থাকবে। তাই আমার মনে হয়, মূল নিবাসিরা যদি এ বিষয়ে সংগ্রাম করে, বিদেশি আর্যরা অনেকটা দিশেহারা হয়ে, সমতায় আসতে বাধ্য হবে।