বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বেদাঙ্গ


বেদাঙ্গ
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু



প্রণব কুমার কুণ্ডু




বেদাঙ্গ বলতে আসলে কী বোঝায় ?
বেদাঙ্গ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে পাওয়া যাবে বেদ+অঙ্গ, অঙ্গ মানে যেহেতু অংশ বা পার্ট, সেহেতু বেদাঙ্গ মানে মনে হতে পারে বেদের অঙ্গ বা অংশ, এটা মনে করেই চিন্ময় নামে আমার এক পাঠকবন্ধু আমাকে প্রশ্ন করেছে বেদের ছয়টি অঙ্গের প্রমাণ বেদের কোথায় কিভাবে আছে, সেটা রেফারেন্স সহ আলোচনা করতে, যে প্রশ্নটি আপনারা ফটোপোস্টে দেখতে পাচ্ছেন; কিন্তু আসলে ব্যাপারটি সেরকম নয়, বেদাঙ্গ বলতে আসলে বেদের অঙ্গ বা অংশকে বোঝায় না, এগুলোর দ্বারা এমন কিছু বোঝায়, যা বেদ পড়ে বুঝতে সহায়ক। এককথায় বেদ পড়ে বুঝতে এবং বেদের জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে বেদাঙ্গ আবশ্যক।
বেদাঙ্গ ছয়টি। যথা- (১) শিক্ষা, (২) ছন্দ, (৩) ব্যাকরণ, (৪) নিরুক্ত, (৫) কল্প ও (৬) জ্যোতিষ।
এগুলো আসলেই কী, তা এখন নিচে একটা একটা করে আলোচনা করছি-
(১) শিক্ষা : শিক্ষা অর্থে স্বরবিজ্ঞান, যার দ্বারা বৈদিক সূক্তগুলি উচ্চারণ করে স্বর সংযোগে গান করার নিয়মকে বোঝায়। এককথায় গান করার যে নিয়ম, সেটাই বেদাঙ্গ এর উল্লিখিত শিক্ষা। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, সামবেদে যে ১৮৭৫টি মন্ত্র আছে, এগুলোই আসলে বৈদিক যুগের গান; আর এই ১৮৭৫টি সাম, নতুন কিছু নয়, ঋগ্বেদেরই কিছু নির্বাচিত মন্ত্র; তাই সামবেদে যা আছে, তার সবকিছুই ঋগ্বেদে আছে। এই তথ্য থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট যে- সামবেদ থেকেই সঙ্গীতের উৎপত্তি বা জন্ম এবং সঙ্গীত শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ যে সম+গীত, এই 'সম' আসলে 'সাম' শব্দেরই বিবর্তিত রূপ। এই আলোচনা থেকে এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত যে পৃথিবীতে সঙ্গীতের জনক হিন্দুরাই এবং হিন্দুরাই পৃথিবীকে সঙ্গীত শিক্ষা দিয়েছে, যে শিক্ষা নিয়ে এখন খ্রিষ্টান মুসলমা্নসহ অন্যান্যরা ক'রেকর্মে খাচ্ছে এবং নাম ধাম করছে।
(২) ছন্দ : ছন্দ জ্ঞানের অভাবে বেদ পাঠ সম্পূর্ণ হয় না, বেদের রস উপলব্ধি হয় না এবং উচ্চারিত শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারিত না হওয়ায় তা হৃদয়াঙ্গম হয় না; এজন্য বেদ পাঠ করতে গেলে ছন্দজ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। গায়ত্রী, উষ্ণীক, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ ও জগতী- এই সাতটি হলো বৈদিক ছন্দ, এই সাত ছন্দের মাধ্যমেই বৈদিক মন্ত্রগুলো লিখিত হয়েছে; তাই বেদের মন্ত্রগুলো সঠিক উচ্চারণে পাঠ ক'রে তা শ্রুতিমধুর করতে এবং হৃদয়াঙ্গম করতে ছন্দজ্ঞান খাকা অত্যাবশ্যক, এই বিষয়টিই হলো বেদাঙ্গের ছন্দ। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে- বেদ ই পৃথিবীকে প্রথম ছন্দের শিক্ষা দিয়েছে এবং বেদের উপর্যুক্ত সাতটি ছন্দ থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন ছন্দের উৎপত্তি হয়েছে।
(৩) ব্যাকরণ : বেদাঙ্গের তৃতীয় বিষয় হলো ব্যাকরণ। ব্যাকরণ কী এবং ব্যাকরণ জানা কেনো প্রয়োজন সেটা আমরা সবাই জানি, তারপরও বলছি- ব্যাকরণ হলো যেকোনো ভাষা শিক্ষার মূল অস্ত্র। মূল বেদ সংস্কৃত ভাষায় লিখা, তাই বেদ সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে হলে সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ জানা বা বোঝা দরকার; একারণেই ব্যাকরণকে বেদাঙ্গের ৬টি বিষয়ের একটি বিষয় বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গের আলোচনা থেকে এটাও স্পষ্ট যে সভ্যতাকে ব্যাকরণের ধারণা দিয়েছে আমাদের মুনি ঋষিরাই, যে ধারণার উপর গড়ে উঠেছে ভাষা শিক্ষার অত্যাবশকীয় বিষয় ব্যাকারণ সম্পর্কিত আলোচনা এবং রচিত হয়েছে পৃথিবীর প্রায় সব ভাষায় এ সম্পর্কিত বই পুস্তক।
(৪) নিরুক্ত : যেকোনো ভাষার একটি আবশ্যকীয় বিষয় হলো ডিকশনারি বা অভিধান, যার আরেকটি বাংলা অর্থ হলো শব্দকোষ। এক্ষেত্রেও পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে আমাদের মুনি ঋষিরা নিরুক্তের মাধ্যমে। আশা করছি, নিরুক্ত যে কী সেটা আমার পাঠক বন্ধুরা এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন, তারপরও বলছি- নিরুক্ত হলো বৈদিক অভিধান। নিরুক্ততে বেদের কঠিন শব্দের বিশ্লেষণ ও তার অর্থ আছে। কঠিন বৈদিক শব্দের ব্যাখ্যা এবং তার প্রয়োগ দেখানোই নিরুক্ত শাস্ত্রের উদ্দেশ্য।
সর্বমোট ১৭ জন বৈদিক অভিধান প্রণেতা বা নিরুক্তকারের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়; এর মধ্যে সর্বশেষ জনের নাম যাস্ক। বর্তমানে বৈদিক সাহিত্যে যে নিরুক্তটি টিকে আছে বা ব্যবহার হয়, তার প্রণেতা যাস্ক। যাস্কের নিরুক্ততে মোট ১৪টি অধ্যায় আছে এবং এর বিভিন্ন অধ্যায়ে বেদে বর্ণিত শব্দগুলোর অর্থ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা আছে।
(৫) কল্প : কল্প এর পুরো নাম আসলে কল্পসূত্র। বৈদিক যজ্ঞকর্ম, সামাজিক জীবন বা লোকব্যবহারে বিস্তৃত হতে হতে ক্রমে ক্রমে এমনই জটিল ও বহুবিস্তৃত হয়ে উঠে যে, এই সকল ক্রিয়াকাণ্ডের ব্যবস্থাগুলিকে ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থ হতে সংক্ষিপ্ত করে একত্র করবার প্রয়োজন হয় এবং সূত্রাকারে রচনা করার প্রয়োজন হয়, এই সংক্ষিপ্ত গ্রন্থকেই কল্পসূত্র বলা হয়।
উপরের অনুচ্ছেদে "ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থ" বলে একটি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার হয়েছে, এই বিষয়টি না বুঝলে আসলে কল্প বা কল্পসূত্রের ধারণাটা ক্লিয়ার হবে না, তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কী, সেটা এখন বুঝে নিন-
প্রতিটি বেদ চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: প্রথমটি হলো- 'সংহিতা', এর বিষয়বস্তু মন্ত্র ও আশীর্বচন। দ্বিতীয়টি হলো- 'আরণ্যক', এর বিষয়বস্তু - ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম ও যাগযজ্ঞ । তৃতীয়টি হলো- 'ব্রাহ্মণ', এর বিষয়বস্ত, আরণ্যকে উল্লিখিত- ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও যাগ যজ্ঞাদির বিষয়গুলো আরো ভালো করে বোঝার জন্য সেই সব বিষয়ের উপর রচিত টীকা; এই বিষয় সম্পর্কিত গ্রন্থগুলোকেই উপরে বলা হয়েছে 'ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থ'; কল্পসূত্র হলো এই ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোরই সারসংক্ষেপ। বিষয়টি জটিল হলেও আশা করছি তা আমার পাঠক বন্ধুদের কাছে ক্লিয়ার হয়েছে। এছাড়াও বেদের চারটি ভাগের শেষ টি হলো উপনিষদ, যার বিষয়বস্তু- ধ্যান, দর্শন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান-সংক্রান্ত আলোচনা।
(৬) জ্যোতিষ : জ্যোতিষের বিষয়বস্তু কী, সে সম্পর্কে প্রায় সবারই কম বেশি ধারণা আছে, তারপরও আলোচনার সুবিধার্থে বলছি- আকাশে গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান এবং এইসব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবী এবং পৃথিবীর উপরস্থিত মানুষের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ের ব্যাখ্যা সম্বলিত শাস্ত্রই হলো জ্যোতিষ শাস্ত্র। বেদাঙ্গের ছয়টির একটি হলো জ্যোতিষ; তাই, বেদাঙ্গ কী, তা সঠিকভাবে না জানার কারণে অনেকে নয় প্রায় সবাই মনে করে, বেদে জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্পর্কে কোনো আলোচনা আছে বা এ সম্পর্কে কোনো সূত্র আছে, কিন্তু আসলে বেদে এ সম্পর্কিত কোনো আলোচনা নেই; তবে বেদ রচয়িতা মুনি ঋষিগণ এবং তাদের শিষ্যগণ জ্যোতিষের বিষয়বস্তু নিয়ে অনেক বই লিখেছেন, যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং পথ দেখিয়েছে পৃথিবীর মানুষকে তথা সভ্যতাকে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে- এই জ্যোতিষশাস্ত্র বেদাঙ্গ হয় কিভাবে বা বেদ পড়ে বুঝতে এই জ্যোতিষ কিভাবে সাহায্য করে ?
বেদাঙ্গের অপর পাঁচটি বিষয়- শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, নিরুক্ত ও কল্প- বেদ পড়ে বুঝতে সহায়ক হলেও, জ্যোতিষ শাস্ত্র আসলে এসবে কোনো কাজে লাগে না, জ্যোতিষ কাজে লাগে বেদ নির্দেশিত যাগযজ্ঞ করার জন্য আকাশে গ্রহ নক্ষত্রের সঠিক অবস্থান জানতে এবং যাগযজ্ঞের জন্য সঠিক সময় তথা দিন তারিখ নির্ধারণ করতে; বলতে পারেন বেদাঙ্গের অপর পাঁচটি বিষয় বেদের থিয়োরি হলেও জ্যোতিষ আসলে বেদের ফল লাভের জন্য প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপার।
আশা করছি, বেদাঙ্গ সম্পর্কে বুঝতে এই প্রবন্ধটি, আমার পাঠক বন্ধুদেরকে সহায়তা করবে।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
-----------------------------------
বি.দ্র : কেউ যদি চারখণ্ড বেদ ঘরে বসে পেতে চান, আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।
💜 জয় হোক সনাতনের 💜


মন্তব্যগুলি

  • Pranab Kumar Kundu 'বি.দ্র : কেউ যদি চারখণ্ড বেদ ঘরে বসে পেতে চান, আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।'

    '💜 জয় হোক সনাতনের 💜' // কি করতে হবে জানান। // কত খরচ পড়বে ? // বাংলা ভাষায় চাইব। // জবাব দেবেন। // প্রণব কুমার কুণ্ডু, ২২৩ মিত্রপাড়া রোড, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন ৭৪৩১৬৫ // মোবাইল ৯১২৩০০৭৭২৯ // ইমেল pkkundu10@gmail.com // আপনি কি বিনামূল্যে, চার খণ্ড বেদ, বিলি করছেন ? // তা হলে তাও জানাবেন।

Srirangam Ranganathaswamy Temple in Tiruchirappally, Tamil Nadu, India৷



Srirangam Ranganathaswamy Temple in Tiruchirappally, Tamil Nadu, India৷
Shared by Pranab Kumar Kundu from Facebook.



Pranab Kumar Kundu












Souvick Poali একটি অ্যালবাম শেয়ার করেছেন: Srirangam Ranganathaswamy Temple in Tiruchirappally, Tamil Nadu, India৷

Worldwide Hindu Temples ॐ Srirangam Ranganathaswamy Temple in Tiruchirappally, Tamil Nadu অ্যালবামটিতে 31টি নতুন ফটো যোগ করেছেন৷ — Sanath Vemi Reddy এবং আরো 75 জন এর সাথে।
Sri Ranganathaswamy Temple, Tiruchirappally, Tamil Nadu State
Dedicated to Ranganatha, a reclining form of Shree Vishnu. Constructed in the Dravidian style of architecture, this temple is glorified in the Thiviya Pirabandham, the early medieval Tamil literature canon of the Alvar saints from the 6th to 9th centuries AD and is counted among the 108 Divya Desams dedicated to Vishnu. The temple follows Thenkalai tradition of worship.
It is one of the most illustrious Vaishnava temples in South India rich in legend and history. Its location, on an island in Cauvery river, has rendered it vulnerable to natural disasters as well as the rampaging of invading armies – Muslim and European – which repeatedly commandeered the site for military encampment. The main entrance, known as the Rajagopuram (the royal temple tower), rises from the base area of around 13 cents (around 5720 sq ft) and goes up to 237 feet (72 m), moving up in eleven progressively smaller tiers. The annual 21 day festival conducted during the Tamil month of Margazhi (December–January) attracts 1 million visitors. Srirangam temple is often listed as the largest functioning Hindu temple in the world, the still larger Angkor Wat being the largest existing temple. The temple occupies an area of 156 acres (631,000 m²) with a perimeter of 4,116m (10,710 feet) making it the largest temple in India and one of the largest religious complexes in the world.
Vedic History:
Sriranga Mahathmiyam is the compilation of religious accounts of the temple which detail the origins of its greatness. According to it, Shree Rama, himself an Avatar of Vishnu, worshiped the idol for a long time, and when he returned victoriously from Sri Lanka after destroying Ravana, he gave it to King Vibhishana as a token of appreciation for the latter's support for Rama against his own brother, Ravana. When Vibhishana was going via Trichy en route to Sri Lanka, the deity wanted to stay in Srirangam. Ranganatha, captivated by the devotion of a King called Dharma Varma, who was doing penance to have Shree Ranganatha to permanently stay Srirangam, stayed put, promising to cast his benign glance eternally on Lanka. Hence it is that the deity (in a reclining posture) faces South.

রূপক রায়-এর কলাম ( ষোল )


রূপক রায়-এর কলাম ( ষোল )
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু



প্রণব কুমার কুণ্ডু






Rupok Roy

টনি বলদা, তোর বলার অনেক আগেই গীতা মাহাত্ম্যের ঐ ৩৭ নং শ্লোককে আমি অস্বীকার করেছি, পড়ে দ্যাখ এই পোস্ট-

গীতা মাহাত্ম্যে রাধা: প্রকৃত সত্যটা কী ?

আমি যখন জানতে পারলাম যে, হিন্দু শাস্ত্রে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম বলে কিছু নেই এবং এর স্বপক্ষে যখন সমস্ত রকম তথ্য প্রমাণ দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করলাম, তখন যুক্তিহীন কিছু লোক ছাড়া, এর বিপক্ষে কেউ কোনো কথা বলতে পারে নি, বরং শত শত লোক প্রকৃত সত্য জানতে পেরে আমাকে প্রশংসার বাণীতে ভাসিয়ে দিয়েছে; কারণ, যারা যুক্তি বোঝে এবং যুক্তি মানে তাদের পক্ষে আমার লেখার প্রশংসা করা ছাড়া, আমার মতের বিরুদ্ধে কিছু বলার ক্ষমতা খুব কমই আছে বা একেবারেই নেই।

যা হোক, রাধা-কৃষ্ণের প্রেম নেই ব’লে প্রমাণ ক’রে যে দুটি পোস্ট আমি লিখেছি, সেই দুটি পোস্টের স্বপক্ষে আমার প্রধান অস্ত্র ছিলো- ৪ বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, মূল সংস্কৃত ভাগবত, হরিবংশ এবং গীতার ৭০০ শ্লোক, যেগুলো হিন্দু ধর্মের প্রামান্য গ্রন্থ; কিন্তু যাতে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের অস্তিত্বের কথার উল্লেখ দূরে থাক, রাধার অস্তিত্ত্বেরই কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাকে এই বিষয়টি ভাবাতো যে, তাহলে গীতা মাহাত্ম্যে রাধার কথা এলো কোথা থেকে ? শেষ পর্যন্ত এই সত্য জানতে, গীতা মাহাত্ম্য নিয়ে গবেষণা শুরু করি এবং যা পেয়েছি, তা ই আজকের এই পোস্টের বিষয়বস্তু।

গীতা মাহাত্ম্যে মোট শ্লোকের সংখ্যা ৮৪ টি। এর মধ্যে ১ থেকে ৪৩ এবং শেষের দিকের ৮১ থেকে ৮৪ নং শ্লোক দুই জন ঋষির কথা বার্তা এবং ৪৪ থেকে ৮০ নং শ্লোক সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের কথা। শ্রীকৃষ্ণের বলা ৩৭টি শ্লোকে কোনো রকম ঝামেলা নেই, এগুলো নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন তোলার ক্ষমতাও নেই। কিন্তু ঋষিদের বলা অংশে বেশ কিছু ঝামেলা আছে, এখানে প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে এবং ঋষিদের বলা অংশের মধ্যেই আছে রাধার কথা ৪৩ নং শ্লোকে।

রাধার কথা পোস্টের শেষের দিকে বলবো, তার আগে গীতা মাহাত্ম্যের অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু আলোচনা করে নিই।

গীতা মাহাত্ম্যের শ্রীকৃষ্ণের বলা অংশের ৭৭ নং শ্লোকে বলা আছে,

“চৌর্য কৃত্বা চ গীতায়াঃ পুস্তকং যঃ সমানয়েৎ।
ন তস্য সফলং কিঞ্চিৎ পঠনঞ্চ বৃথা ভবেৎ।।”

এর অর্থ হলো- চুরি করে যে ব্যক্তি গীতা গ্রন্থ আপন গৃহে আনে, তার সব ফলই বৃথা হয় এবং গীতা পাঠেও তার কোনো ফল হয় না।

এর বিপরীতে, ঋষিদের বলা অংশের ৩৭ নং শ্লোকে কী বলা আছে দেখুন-

“রত্নপূর্ণাং মহীং সর্বাং প্রতিগৃহ্যাবিধানতঃ।
গীতা পাঠেন চৈকেন শুদ্ধ স্ফটিকবৎ সদা।”

এর অর্থ- যদি কেউ অন্যায়ভাবে রত্নপূর্ণ পৃথিবীকেও হরণ করে, তবুও একবার মাত্র গীতা পাঠ করলে তার সব পাপ মাফ।

এখন আপনিই চিন্তা করুন, শ্রীকৃষ্ণের বলা কথার সাথে কি এই কথার মিল আছে ?

শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, গীতা পুস্তকও চুরি করা যাবে না, আর ঋষিরা বলছে সমগ্র পৃথিবীর সম্পদ হরণ করলেও গীতা পড়লে সব মাফ! এই দুই কথা কি এক হলো ? তাছাড়াও সনাতন ধর্মের নীতির সাথে কি এই ৩৭ নং শ্লোক যায় ?

কেননা যেখানে সনাতন ধর্মের মূল নীতি, যে নীতির কারণেই সনাতন ধর্মকে ‘সনাতন মানবধর্ম’ বলা হয়, সেই নীতি হলো-

‘পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ’

অর্থাৎ, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলা বিবেচনা করবে, সেখানে এই শ্লোকে পরের সম্পদকে হরণ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে! এটাকে কি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় ?

এছাড়াও ঋষিদের বলা অংশের ৩১ নং শ্লোকে যা বলা আছে, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কেননা, এখানে বলা আছে-

“বিস্ফোটকাদয়ো দেহে না বাধন্তে কদাচনঃ”

অর্থাৎ, যিনি প্রতিদিন গীতার অর্চনা করেন, তার দেহে কখনো ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ হয় না।

অতি ভক্তির প্রাবল্যে কারো কারো পক্ষে হয়তো এই কথা বিশ্বাস করা সহজ, কিন্তু এই কথাকে যুক্তি তর্ক এবং বিজ্ঞানের গবেষণাগারে ফেলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

এবার আসি রাধার প্রসঙ্গে, পুরো গীতার ৭০০ শ্লোকের কোথাও রাধার কোনো উল্লেখ না থাকলেও, রাধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে গীতা মাহাত্ম্যের ৪৩ নং শ্লোকে, যেটা ঋষিদের বলা প্রথম অংশের শেষ শ্লোক। এই শ্লোকেই বলা হয়েছে,

“যত্র গীতা বিচারশ্চ পঠনং পাঠনং তথা।
মোদতে তত্র শ্রীকৃষ্ণো ভগবান রাধয়া সহ।।”

এর অর্থ বলা হয়েছে, যেখানে গীতা পাঠ করা হয়, সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, শ্রী রাধিকাসহ আনন্দে বিরাজ করেন।

গীতা মাহাত্ম্য সম্পর্কে বেশি কিছু না জেনে শুধু এই অংশটুকু পড়লে যে কারো মনে হবে যে, গীতায় তো রাধার কথা বলা আছে, সুতরাং রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেম ছিলো বা রাধা-কৃষ্ণ সম্পর্কে যা বলা হয় তা সত্যি।

কিন্তু এর উপরের ৪২ নং শ্লোক পড়লেই আপনার সেই ভুল ভেঙ্গে যাবে বা এই শ্লোকের উপর ভিত্তি করে আমি যে প্রশ্ন করবো, তার উত্তর আপনি দিতে পারবেন না। কেননা, সেই ৪২ নং শ্লোকে বলা আছে,

“গোপালো বালকৃষ্ণোহপি নারদ ধ্রুব পার্ষদৈঃ।
সহায়ো জায়তে শীঘ্রং যত্র গীতা প্রবর্ততে।।”

এর অর্থ, যেখানে গীতা পাঠ করা হয়, সেখানে নারদ, ধ্রুব প্রভৃতি ভক্তদের সাথে শ্রীকৃষ্ণ গিয়ে উপস্থিত হন বা সেই ভক্তের সহায় হন।

এই ৪২ নং শ্লোকের কথাগুলো কেনো বলা হলো, তার উপযুক্ত কারণ আপনি পাবেন, যদি গীতা মাহাত্ম্যের শ্রীকৃষ্ণের বলা ৪৪ থেকে ৪৬ নং শ্লোকের অর্থগুলো আপনি পড়েন; কেননা, এই তিনটি শ্লোকের অর্থে বলা আছে,

“ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে অর্জুন, গীতাই আমার হৃদয়, গীতাই আমার সার পদার্থ, গীতাই আমার শ্রেষ্ঠ জ্ঞান এবং গীতা আমার অব্যয় জ্ঞান স্বরূপ। গীতা আমার উত্তম স্থান, গীতা আমার পরম পদ, গীতা আমার পরম গোপনীয় বস্তু, গীতা আমার পরম গুরু, গীতার আশ্রয়েই আমি থাকি, গীতাই আমার পরম গৃহ এবং গীতার জ্ঞান আশ্রয় করেই আমি জগৎকে পালন করি।"

শ্রীকৃষ্ণের কাছে গীতার জ্ঞানের যেহেতু এত মর্যাদা বা গুরুত্ব, সেহেতু যেখানে গীতার আলোচনা হয়, সেখানে শ্রীকৃষ্ণ তার ভক্ত পার্ষদসহ আধ্যাত্মিকভাবে সূক্ষ্ম দেহে উপস্থিত থাকতেই পারেন, যে কথা ৪২ নং শ্লোকে বলা হয়েছে। এখানে বিষয়টি আরো ভালো করে খেয়াল করুন, ৪২ নং শ্লোকে বলা হচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণ তার ভক্ত পার্ষদসহ গীতার আলোচনা স্থানে উপস্থিত থাকেন, তথাকথিত রাধাও তো কৃষ্ণের একজন ভক্তই এবং রাধা যদি কৃষ্ণের সেইরকম ভক্ত হয়েই থাকে, তাহলে তো ৪২ নং শ্লোকে যাদের উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রাধাও আছে। তাই যদি হয়, তাহলে শুধু রাধার কথা আলাদা করে বলার জন্য ৪৩ নং শ্লোকটি লিখা হলো কেনো ?

শ্রীকৃষ্ণের সাথে তার ভক্তদের উপস্থিত থাকার কথা ৪২ নং শ্লোকে বলাই আছে, তারপরও ৪৩ নং শ্লোকে আলাদা করে রাধাকে সাথে নিয়ে কৃষ্ণের উপস্থিত থাকার কথা বলাটা কি এটা প্রমান করে না যে, এর পেছনে নিশ্চয় কোনো বিশেষ ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে ?

১২০০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর বিকৃতি শুরু হয় এবং তারপর ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের মাধ্যমে আগমন ঘটে যুবতী রাধার এবং সেই যুবতী রাধার সাথে যুবক কৃষ্ণের অনৈতিক প্রেমের। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই অপপ্রচার চলার পর আবির্ভাব ঘটে চৈতন্যদেবের এবং তার ভাবাদর্শ, হিন্দু ধর্মের প্রকৃত সত্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরার বিপরীতে হিন্দু ধর্মের গ্রন্থগুলোর বিকৃতিকে স্বীকৃতি দিয়ে যায়।

কেউ একজন কমেন্ট বক্সে আমাকে প্রশ্ন করেছিলো, কেনো আপনি চৈতন্যদেবকে সহ্য করতে পারেন না ? আমি এই কারণেই চৈতন্যদেবকে সহ্য করতে পারি না; কারণ, সে প্রকৃত সত্যকে উদঘাটিত না করে মিথ্যাকে হিন্দু সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে গেছে, যেটা ৫০ বছর ধরে লাগাতার চেষ্টা করলেও হিন্দু সমাজ থেকে উপড়ে ফেলা যাবে কি না সন্দেহ।

তাছাড়াও চৈতন্যদেবের কোনো আদর্শ হিন্দু সমাজের জন্য উপযুক্ত নয়, চৈতন্যদেবের আদর্শকে যে সমাজ ফলো করবে, সেই সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং অলরেডি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

যেমন- চৈতন্যদেবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ যদি তার বিবাহিত স্ত্রীকে ফেলে রেখে চলে যায়, তাহলে সেই স্ত্রীর কী হবে ? বা সবাই যদি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে যায় এবং কেউ সন্তানের জন্ম না দেয়, তাহলে সেই সমাজ কতদিন টিকে থা্কবে ? এছাড়াও আছে নিরামিষ খাবারের পরামর্শ, যেটা আস্তে আস্তে একটা মানুষকে শুধু নপুংসকই নয়, পরিণত করে একটা জবুথবু জড় মাংস পিণ্ডে, এই ধরণের লোকের কাছ থেকে আপনি সমাজের জন্য কী আশা করতে পারেন ?

কেউ কেউ বলতে পারেন, নরেন্দ্র মোদীও তো নিরামিষ খান, তিনি কি হিন্দু সমাজ বা দেশের জন্য কাজ করছেন না ?

অবশ্যই করছেন। কিন্তু সবার পক্ষে কি নরেন্দ্র মোদী হওয়া সম্ভব, না সবার পক্ষে নরেন্দ্র মোদীর মতো হিন্দুত্ববাদী হওয়া সম্ভব ?

অধিকাংশ লোক সাধারণ এবং আমাদেরকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সকল বিষয় বিবেচনা করতে হবে। মন্ত্রীরা বুদ্ধি খাটায়, তাই তারা নিরামিষ খেলে কোনো সমস্যা নেই; কারণ, তাদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে যুদ্ধ করতে হয় না; কিন্তু সৈনিকদেরকে নিরামিষ খেলে চলবে না, তাদেরকে মাংসাশী হতে হবে এবং বাঘ সিংহের মতো হিংস্র হতে হবে, তবেই তারা যুদ্ধ করে শত্রুকে মেরে দেশকে রক্ষা করতে পারবে। সমাজের অধিকাংশ লোক এই সাধারণ সৈনিকদের মতো, তাদেরকে নিরামিষ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে হীন দুর্বল ও নপুংসক বানালে চলবে না। তাদের সেক্স করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকতে হবে, তার মাধ্যমে তাদেরকে নারীদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে, সন্তানের জন্ম দিতে হবে এবং সমাজ ও ধর্মের ক্ষতি দেখলে রাগান্বিত হতে হবে, তাহলেই শুধু রক্ষা পাবে সেই সমাজ। চৈতন্যদেবের বৈষ্ণব ধর্মে এর একটিও নেই। এর বিপরীতে চৈতন্যদেবের আদর্শ হলো,

“মেরেছে কলসীর কানা, তাই বলে কি প্রেম দেবো না ?”

মুসলমানরা এখন কলসীর কানা মারে না, মারে বুলেট আর চালায় চাপাতি, তাতে বেঁচে থাকারই তো কোনো সুযোগ নেই, আপনি আক্রমনকারীকে প্রেম দেবেন কিভাবে, কখন ?

চৈতন্যদেব অসম্ভব মেধাবী ছিলেন, চাইলেই তিনি সংস্কৃত রামায়ণ, মহাভারত, বেদ, ভাগবত পড়ে জানতে পারতেন যে, সেগুলোতে রাধার অস্তিত্বের এবং রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কোনো বিষয়ের উল্লেখ আছে কি না ? কিন্তু তিনি তা না করে তার সময়ে প্রচলিত জয়দেবের গীত গোবিন্দ এবং বড়ু চন্ডীদাসের যাত্রাপালা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কাহিনীকেই বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন এবং স্বীকার করে নিয়েছিলেন রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে, যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে চৈতন্যদেবের ভক্তগন, চৈতন্যদেবকে একেবারে রাধা-কৃষ্ণের যুগল অবতার বানিয়ে দিয়েছে! কিন্তু তাদের এই দাবীর পেছনে যে হিন্দু শাস্ত্রের কোনো গ্রন্থে কোনো প্রমান নেই, সেটা সম্ভবত একজন চৈতন্য ভক্তও জানে না।

যা হোক, কয়েক শত বছরের মিথ্যা প্রচারের ফলে রাধা যখন জনমানসে গভীরভাবে প্রোথিত, কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রের প্রাচীন কোনো গ্রন্থে রাধার কোনো উল্লেখ নেই, এটা বুঝতে পেরে কোনো চালাক হিন্দু, প্রথম যখন গীতা প্রিন্ট করা হয়, সম্ভবত তখন ঋষিদের কথা বার্তার শেষ অংশে ৪৩ নং শ্লোকটি নিজে লিখে যুক্ত করে দেয়, যার মাধ্যমে আপাত দৃষ্টিতে যাতে এটা প্রমান হয় যে, রাধা বলে কেউ ছিলো! কারণ, সবাই তো আর এত ভেতরে গিয়ে এত গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করবে না।

গীতা মাহাত্ম্যে রাধার এই ষড়যান্ত্রিক উপস্থিতির বিষয়টি সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ, তাই তিনি তার গীতা, যেটা “শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ” নামে পরিচিত, তাতে তিনি যে গীতা মাহাত্ম্যের অল্প কয়েকটি শ্লোক উল্লেখ করেছেন, তাতে রাধা সম্পর্কিত এই ৪৩ নং শ্লোকটি নেই।

সব দিক বিবেচনায় এটা প্রমাণ হয় যে, গীতা মাহাত্ম্যে ঋষিদের কথোপকথনের অংশটুকু একেবারে ভেজাল মুক্ত নয়, এই ভেজালের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ভেজাল বা প্রক্ষিপ্ত হলো ৪৩ নং শ্লোক, যার মাধ্যমে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রমান করার চেষ্টা করা হয়েছে যে রাধা আছে।

গীতা মাহাত্ম্যে রাধা কোথা থেকে এলো, আশা করছি সেই বিষয়টি আমার পাঠক বন্ধুদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে এবং তাদের কাছে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হয়েছে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

💜 জয় হোক সনাতনের 💜


Pranab Kumar Kundu

রূপক রায়-এর কলাম ( পনেরো )


রূপক রায়-এর কলাম ( পনেরো )
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু




হৃদয়,
আমি যা সত্য তাই মানি। সনাতনী শাস্ত্রমতে কৃষ্ণ সত্য, তাই কৃষ্ণকে মানি। যারা মূর্খ এবং যারা সনাতন ধর্মের প্রকৃত সত্যকে জানে না, তাদের মতো রাধাকে আমি স্বীকার করি না।
রাধা, কৃষ্ণের সেক্স পার্টনার; এ কথা আমি বলি নি, বলেছে তোর ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, এই পুরাণ কখনো পড়েছিস ? এতে রাধা ও কৃষ্ণের চরিত্র কিভাবে বর্ণনা করা আছে, সেটা কখনো দেখেছিস ? সেই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ অনুযায়ী রাধা ও কৃষ্ণ সম্পর্কে যে গল্প বাজরে প্রচলিত আছে, সেই কথা বলতে গিয়ে আমি বলেছি রাধা, কৃষ্ণের সেক্স পার্টনার। বুঝেছিস বলদ ?
কল্পিত রাধার নিজের কোনো মান সম্মান আছে যে তাকে অপমান করবো ? ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ মতে- যে নারীর নিজের স্বামী সন্তান থাকার পরেও অন্য পুরুষের সাথে মিলনের জন্য উতলা হয়, সে কিভাবে সম্মানের পাত্রী ? একে সম্মান করলে তো নষ্টা চরিত্রের মেয়েদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, আর সেই আদর্শ অনুসরণ করে সমাজের সব মেয়ে নষ্টা চরিত্রের হবে। তুই কি চাস, তোর মা-বোন-স্ত্রী, এই চরিত্রের হোক ?
আম কৃষ্ণকে অপমান করছি না, রাধার প্রসঙ্গ টেনে মুসলমানরা কৃষ্ণ সম্পর্কে যে খারাপ কথা বলে এবং রাধার অস্তিত্বকে স্বীকার করার কারণে হিন্দুরা যে কৃষ্ণকে নিয়ে গর্ব করতে পারে না, সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করছি; সুতরাং কৃষ্ণকে অপমান নয়, কৃষ্ণকে কলঙ্কমুক্ত করে তার সম্মান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি, এইটুকু বোঝার যদি ক্ষমতা তোর থাকতো, তাহলে যে লোকটা হিন্দু সমাজের মঙ্গলের জন্য রাত দিন পরিশ্রম করছে, তার সম্পর্কে এরকম উল্টা পাল্টা মন্তব্য করে তার সময় নষ্ট করতিস না।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, কাম হলো নরকের দ্বার। গীতা পড়ে তুই যদি এটা বুঝে থাকিস, তাহলে কাম ত্যাগ করে তুই হিজড়া হয়ে যা। কৃষ্ণ নিজে কাম ত্যাগ করেন নি, তিনি রুক্মিণীকে বিবাহ করেছেন, প্রদুম্ন্যের জন্ম দিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ আসলে এখানে বলেছেন অনিয়ন্ত্রিত কামের কথা, যার দ্বারা সমাজ সংসারের অস্থিরতা তৈরি হয়। এজন্য শ্রীকৃ্ষ্ণ বলেছেন কামকে নিয়ন্ত্রণের কথা, ত্যাগ করার কথা নয়, দেখ, গীতার এই শ্লোকগুলো-
"তস্মাত্ত্বমিন্দ্রিয়াণ্যাদৌ নিয়ম্য ভরতর্ষভ।
পাপমানং প্রজহি হ্যেনং জ্ঞানবিজ্ঞাননাশনম্।।" - (গীতা,৩/৪১)
অর্থ : হে ভরত শ্রেষ্ঠ, তুমি- জ্ঞান বিজ্ঞান নাশক, পাপের প্রতীক ইন্দ্রিয় গুলিকে প্রথমে নিয়ন্ত্রণ করো।
এই একই কথা বলা আছে নিচের এই শ্লোক দুটিতে-
"যে ত্বক্ষরমনির্দেশ্যমব্যক্তং পর্যুপাসতে।
সর্বত্রগমচিন্ত্যং চ কূটস্থমচলং ধ্রুবম।।
সংনিয়ম্যেন্দ্রিয়গ্রামং সর্বত্র সমবুদ্ধয়ঃ।
তে প্রাপ্নুবন্তি মামেব সর্বভূতহিতে রতাঃ।।"- (গীতা, ১২/৩-৪)
অর্থ : যারা সমস্ত ইন্দ্রিয় সংযত করে, সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন হয়ে এবং সর্বভূতের কল্যানে রত হয়ে আমার অক্ষর, অনির্দেশ্য, অব্যক্ত, সর্বত্রগ, অচিন্ত্য, কূটস্থ, অচল, ধ্রুবও নির্বিশেষ স্বরূপকে উপসনা করেন, তারা অবশেষে আমাকেই প্রাপ্ত হন।
শুধু তাই নয়, নিচের এই শ্লোকে বলা আছে, এই দেহ ত্যাগ করার পূর্বে যিনি কাম, ক্রোধ থেকে উদ্ভূত বেগ সহ্য করতে সক্ষম, তিনিই যোগী এবং এইজগতে তিনিই সুখী হন। দেখে নে সেই শ্লোক-
শক্নোতীহৈব যঃ সোঢ়ুং প্রাক শরীরবিমোক্ষনাৎ।
কামক্রোধোদ্ভবং বেগং স যুক্তঃ স সুখী নরঃ।।"- (গীতা, ৫/২৩)
গীতার এসব শ্লোক থেকে স্পষ্ট যে কামকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, ত্যাগ করতে বলা হয় নি, কৃষ্ণের জীবনেও রয়েছে এর আদর্শ, যা আগেই বলেছি। তাছাড়া কামকে ত্যাগ করা সমাজ সংসারের জন্য একটি অবাস্তব ব্যাপার, কাম ছাড়া কেউ কি তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে পারে ? কাম ছাড়া কি সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব ? কাম ত্যাগ করে যদি সৃষ্টিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে এই পৃথিবীতে মানব সভ্যতা কয়দিন টিকে থাকবে ? বংশধর যাতে বিলুপ্ত না হয়, সেজন্য শ্রীকৃষ্ণ, অশ্বত্থামার নিক্ষেপ করা ব্রহ্মাস্ত্রে মাতৃগর্ভেই নিহত হওয়া পরীক্ষিতকে মাতৃগর্ভেই জীবিত করে দিয়েছিলেন। কাম ত্যাগ করা এবং ঘুমন্ত স্ত্রীকে বিছানায় ফেলে সংসার থেকে পালিয়ে যাওয়া চৈতন্যদেবের ভক্তদেরকে বলছি, সব বৈষ্ণব যদি চৈতন্যকে ফলো করে, তাহলে বৈষ্ণব সমাজ কয়দিন টিকে থাকবে; বা সব হিন্দুই যদি চৈতন্যকে ফলো করে তাহলে হিন্দু সমাজই বা কয়দিন টিকে থাকবে ? আর ভক্ত অনুসারীরা যদি না থাকে, কে গাইবে "হা গৌরাঙ্গ" বা কে করবে কৃষ্ণ নাম ? সুতরাং কামকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা যে একটি অবাস্তব ব্যাপার, আশা করছি সেটা আমার পাঠক বন্ধুরা বুঝাতে পেরেছি; যদিও আমি জানি যে হৃদয় চৌধুরী নামের এই বলদ এটা বুঝবে না; কারণ, তার জন্ম তো তার পিতা মাতার কামের ফলে হয় নি, সে আকাশ থেকে পড়েছে !
কৃষ্ণ মানুষ রূপেই ঈশ্বরের ক্রিয়াগুলো করেছে, তারপরও কৃষ্ণের জীবদ্দশায় বেশির ভাগ মানুষ তাকে ভগবান হিসেবে মনে করতো না, যার ফলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মোট ১৮ অক্ষৌহিণী সেনার মধ্যে ১১ অক্ষৌহিণী সেনা পাণ্ডব তথা কৃষ্ণের বিপক্ষে ছিলো; সুতরাং প্রথমত তাকে মানুষ হিসেবে ভাবতে অসুবিধা কোথায় ? মানুষ হিসেবেই কৃষ্ণ রুক্মিণীর সাথে প্রেম এবং তাকে বিবাহ করেছিলেন, মানুষ হিসেবেই তিনি রুক্মিণীর গর্ভে প্রদুম্ন্যের জন্ম দিয়েছিলেন। কৃষ্ণ যদি ইন্দ্রিয় উপভোগ না করে তাহলে তিনি রুক্মিণীকে বিয়ে করেছিলেন কেনো এবং ইন্দ্রিয় উপভোগ ছাড়া কিভাবে তিনি রুক্মিণীর গর্ভে প্রদুম্ন্যের জন্ম দিয়েছিলেন ? শ্রদ্ধা ভালো, কিন্তু অতি শ্রদ্ধা ভালো নয়, কারণ, অতি শ্রদ্ধায় মানুষের মূর্খতা প্রকাশ পায়।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের কাহিনীকে সত্য মনে করে যারা কৃষ্ণকে কাম গন্ধহীন মনে করে তাদের মতো মূর্খ আসলে জগতে নেই; কারণ, হয় তারা ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ পড়ে নি বা পড়ে কিছুই বোঝে নি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে রাধা ও কৃষ্ণের দেখা সাক্ষাত মানেই যৌনলীলা, এ পুরাণ মতে রাধা একটি নষ্টা মেয়ের চরিত্র এবং কৃষ্ণ একজন লম্পট। কিন্তু হিন্দুধর্মের প্রামাণ্য গ্রন্থ অনুযায়ী, আমি জানি কৃষ্ণের চরিত্র এমন লাম্পট্যভরা নয়, তাই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণকে আমি বেদব্যাস রচিত মনে করি না এবং এই পুরাণের কাহিনীকে সত্য বলে মনে করি না।
রাধার অস্তিত্ব নিয়ে আমার মনে কোনো সঙ্কা নয়, শঙ্কা নেই। কারণ, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি যে শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধা বলে কোনো নারী নেই।
রাধাকে নিয়ে মুসলমানদের মতো তুই বারবার ডিবেট এর কথা বলিস কেনো ? রাধা প্রসঙ্গে আমি যেসব পোস্ট ছাড়ি, তুই সেগুলোর যুক্তি খণ্ডণ করে পাল্টা পোস্ট ছাড়তে পারিস না কেনো ?
বোকাচোদা কে, সেটা আমার পোস্টে এসে অন্যান্যদের কমেন্ট দেখে বুঝে নিস।
আর আমি তোর মতো মাদারচোদ নই যে, তোর মা কার সাথে শুয়ে তোর জন্ম দিয়েছে সেই বিষয়ে কথা বলবো।
একটা কথা শুনে রাখ, তুই তো কোন ছাড়, বাংলার এমন কোনো হিন্দুধর্ম গুরু বা পণ্ডিত নেই যে আমার সামনে বসে আমার বিরুদ্ধে দুই মিনিট কথা বলার ক্ষমতা রাখে, আর তুই করতে চাস আমার সাথে ডিবেট! ইঁদুর, হিমালয়ের উচ্চতা মাপতে পারে না বা সে সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না। ইঁদুরের কাজ হলো ভালো জিনিস কেটে কুটে নষ্ট করা এবং সেই জিনিসের মালিকের বিরক্তি উৎপাদন করা, তুই আসলে এমনই একটা ইঁদুর, গর্তের মধ্যে বসে থেকে শুধু বলিস আয় ডিবেট করি, আয় ডিবেট করি। ডিবেট করার জন্য তোর সামনে যেতে হবে কেনো ? এখন যে অনলাইনের যুগ, হাজার মাইল দূরে বসেও একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে পারে, সেই ধারণা কি তোর আছে ? আমি যে পোস্ট লিখি, সেটা পছন্দ না হলে তার বিরুদ্ধে তুই আরেকটা পোস্ট লিখলেই তো সেটা ডিবেট হয়ে যায়, এর জন্য সামনাসামনি বসার দরকার আছে ? বলদা ?
শোন, যে পারে সে সব জায়গায় পারে। আর যে পারে না, তার কাছেই উঠোন বাঁকা মনে হয়। আমি যদি তোকে অনলাইনে বাঁশ দিতে পারি, সামনাসামনি আরো ভালো দিতে পারবো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই অযথা ঘেউ ঘেউ না করে, আমি যা বলবো, ঠিক ঠিক সেই পয়েন্ট ধরে কথা বলবি, যার কথায় সত্যতা এবং যুক্তি থাকবে, লোকজন সেটাই গ্রহন করবে, এর জন্য গালাগালির প্রয়োজন নেই। গালিই যে মূর্খদের প্রধান পরিচয়, এটা তুই জানিস ? না জানলে আরো কিছু পড়াশোনা কর; কারণ, কুয়ার জ্ঞান নিয়ে সরোবর বা সাগরের কাছে গিয়ে বড়াই করা যায় না। পড়াশুনা কর, প্রকৃত সত্যকে জানার চেষ্টা কর, যুক্তি দিয়ে সবকিছুকে বোঝার চেষ্টা কর, আমার সাথে তোর কোনো বিরোধ থাকবে না। কারণ, প্রকৃত সত্য আমার কাছে, সেই সত্যের কাছে আজ হোক বা কাল হোক তোকে এবং তোর মতোদের সেখানে আসতেই হবে।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
মন্তব্যগুলি