সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

হিন্দু


হিন্দু

শেয়ার করেছেন                                                        প্রণব কুমার কুণ্ডু।


প্লিজ একটু কষ্ট করে পড়ুন।কথা দিচ্ছি বিষয়টি আপনাকেও ভাবাবেঃ

যে সকল হিন্দুরা এখন ও সেকুলারির তকমা লাগিয়ে ঘুরছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন?হিন্দুধর্ম আদি অনন্ত কাল থেকে বিরাজমান আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে আপনাদের এই সেকুলারির জন্য?

হিন্দু মুসলিম যদি ভাই ভাই হয় তবে চলুন দেখি ইতিহাস কি বলে ।

কখনো ভেবেছেন আফগানিস্হানের হিন্দুরা কোথায় গেল ! '
কাবুল ' শহর টা শ্রীরামের পুত্র কুশ বানিয়েছিলেন , আজ সেখানে একটা মন্দির পর্যন্ত নেই ।
' গান্ধার ' যার বিবরণ মহাভারতে পাওয়া যায় । যেখানকার রাণী ছিলেন গান্ধারী । আজ সেই স্হানের নাম কান্দাহার । এবং সেখানে আজ আর কোন হিন্দু বেঁচে নেই ।

কম্বোডিয়া' যেখানের রাজা ছিলিন সূর্য্যদেব বর্মন যিনি পৃথিবীর সবথেকে বড় মন্দির ' 🏯আঙ্কোরভাট নির্মাণ করিয়েছিলেন । আজ সেখানেও কোন হিন্দু নেই ।

' বালিদ্বীপে ' ২০ বছর পূর্বেও ৯০% হিন্দুর দেখা পাওয়া যেত । আর আজ সেখানে মাত্র ২০% অবশিষ্ট রয়েছে ।

কাশ্মীরে ২০ বছর পূর্বেও ৫০% হিন্দু ছিল আর আজ মাত্র ৩% থেকে ৪% ।

কেরলে মাত্র দশ বছর পূর্বেও ৬০% হিন্দু ছিল এখন মাত্র ২০% ।

নর্থ ইস্ট রাজ্যগুলিতেও আজ ভয়ংকর হারে হিন্দু জনসংখ্যা কমে আসছে । এর মধ্যে আমাদের পশ্চিমবাংলাও আছে ।
প্রতিবেশি রাষ্ট্রের লাগাতার অনুপ্রবেশ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের সবকটি রাজ্যের জনবিন্যাস বদলে দিয়েছে ।

১৫৬৯ সাল পর্যন্ত ইরানের পূর্বনাম ছিল পারস্য । যেখানে একটিও মুসলিম বসতি ছিলনা  শুধুমাত্র পারসিকরািই থাকতেন ।
যখন পারস্যের উপর মুসলিমরা আক্রমণ চালাতো,  তখন পারস্যের বয়স্ক ব্যক্তিরা, তাদের তরুণ যুবকদের বলতেন , আমাদের কেউ হারাতে পারবেনা , কেউ ধ্বংস করতে পারবেনা ।
কিন্তু ধীরে ধীরে পারস্য ইরাণে পরিণত হল, পারসিকদের লুঠ করা হল,  তাদের নারীরা হল গণিমতের মাল, পুরুষদের নৃশংসভাবে খুন করা হল, অবশিষ্টদের ধর্মান্তরিত করা হল ।
অল্পসংখ্যক কিছু বেঁচে যাওয়া পারস্যের অধিবাসী যারা নৌকাযাত্রা করে ভারতে পালিয়ে এসেছিল, তাদেরই হাতেগোনা
কিছুজনের আজ গুজরাতে দেখতে পাওয়া যায় ।

....... সদা সর্বদা শান্তিচাই শান্তিচাই করে,  শান্তির ভিক্ষাকরা হিন্দুদের এবার ভাববার সময় এসেছে । 

কারণ নিকট ভবিষ্যতে সমগ্র হিন্দু জনজাতি চরম সংকটের সম্মুখীন হতে চলেছে । এই সংকট অস্তিত্বের সংকট ।

.....সমগ্র বিশ্বে খ্রীষ্টান ধর্ম অধ্যুষিত দেশ হল ৮০ টি আর  ইসলামিক দেশ হল ৫৬টি । 

কিন্তু একটিও হিন্দু রাষ্ট্র নেই ।

হিন্দু সংখ্যগরিষ্ট দুটি দেশ আছে একটি হল, আমাদের মাতৃভূমি ভারত অপরটি হল, ভারতের প্রতিবেশি নেপাল ।

এটা আমাদের দূর্ভাগ্য যে এটা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সেকুলার দেশ।

সংখ্যাগুরু হিন্দুরা এখানে দুর্গাপুজা পালন করতে পারে না, এখানে প্রতি নিয়ত চলে হিন্দুদের উপর অত্যাচার।এখানে মন্দির ভাঙা এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

এই দুবৃত্তদের কারণেই, সে দিন আতি নিকটে যে পৃথিবীর বুকে হিন্দু বলে কোন জাতি ছিল,  এটা জানতে ইতিহাসের পাতা উল্টাতে হবে; অথবা কোন যাদুঘরে যেতে হবে,  হিন্দুদের কোন দেব-দেবীর ধ্বংসাবশেষ খুজতে বা অবশিষ্ট কোন ধর্ম গ্রন্থ খুজতে।।

আমার মত একটা তুচ্ছ লোক ও এগুলা নিয়ে আজ ভাবতে শিখেছে কিন্তু আজও ভাবাতে পারেনি হিন্দু কোন প্রধানমন্ত্রী নেতাবৃন্দকে।

চোখের কোণের এই অশ্রুটুকু কি শুধু আমার ভালোর জন্য ঝরল কিনা জানি না?

নিজের জন্য চোখের জল আমার কখনও ঝরে নি যতটা ঝরল ঐ তোমাকেই ভালবেসে।ভালবাসি হিন্দুত্ব।

পৃথিবীতে যদি ঈশ্বরের কাছে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলার মত কোন জায়গা থাকত, তবে তার কাছে জানতে চাইতাম তোমার সৃষ্টি যদি আমি হয়েই থাকি,  কি আমার আপরাধ,  এই নিরীহ নিন্দুককে,  কেনবা পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিলে??

গল্পের মতন


  গল্পের মতন

  শেয়ার করেছেন                                       প্রণব কুমার কুণ্ডু।

কাজী শাহিন

সোলন: এথেনিয় গণতন্ত্রের জনক !

সোলন নাকি একবার বলেছিলেন: “কোনও জীবিত মানুষকেই সুখি বলো না।”

কে সোলন?
সোলন ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন আইনপ্রণেতা। কবিতাও লিখতেন।

সোলনের সময়কাল: খ্রিস্টপূর্ব ৬৩৮ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫৫৮। ওই সময়কালকে বলা হয় গ্রিসের ইতিহাসের আর্কাইক যুগ। ওই আর্কাইক যুগের এথেন্সের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও নৈতিক অধপতনের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম করেছিলেন সোলন। এ কারণে,এথেন্সের গণতন্ত্রের জনক তাঁকেই বলা হয়।

ষষ্ট শতকের গ্রিস সম্বন্ধে ইউরোপীয় পন্ডিতদের জ্ঞান সীমিত বলেই, সোলন সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানও সীমিত। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে কবিতা লেখার পাশাপাশি যুবা বয়েসে যথেস্ট ভ্রমন করেছিলেন সোলন। অন্তত সোলন যে লিডিয়া রাজ্যে গিয়েছিলেন সেরকম প্রমাণ আছে।

কোথায় ছিল লিডিয়া?
বর্তমানে যে অঞ্চলটি তুরস্ক বা এশিয়া মাইনর--  প্রাচীন লিডিয় রাজ্যটি ছিল সেখানেই।

ক্রোসাস নামে এক অত্যন্ত ধনশালী সম্রাট শাসন করতেন রাজ্যটি। ক্রোসাস-এর ধনসম্পদের পরিমান এতই বেশি ছিল যে তা রীতিমতো প্রবাদে পরিণত হয়েছিল।
পারস্য রাজ্যটি ছিল লিডিয়ার দক্ষিণ-পুবে।
সেই পারস্যের সম্রাট সাইরাস আক্রমণ করে বসলেন লিডিয়া।
যুদ্ধে ক্রোসাস পরাজিত হলেন। হওয়ারই কথা। ধনসম্পদ নিয়ে সুখভোগে ডুবে ছিলেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কথা খেয়াল করেন নি,খেয়াল করেন নি পারস্যের উত্থানের কথা।
সাইরাসের সৈন্যরা তাকে বন্দি করল।
পরিবারসমেত ক্রোসাসকে পুড়িয়ে মারার জন্য শুকনো কাঠের স্তুপ জড়ো করল।
সে কালের নিষ্ঠুরতা তেমনই বিভৎস ছিল!
আগুন জ্বলে উঠেছে। ক্রোসাস আর্তনাদ করে উঠলেন, কোনও জীবিত ব্যাক্তিকেই সুখি বল না।
সাইরাস কাছেই ছিলেন। কথাটা সম্ভবত সাইরাসের কানে গিয়েছিল। তিনি হাত তুলে সৈন্যদের নিরস্ত করলেন। সৈন্যরা জ্বলে-ওঠা আগুন নিভিয়ে দিল।
ক্রোসাসকে কাছে আসার নির্দেশ দিলেন সাইরাস। ক্রোসাস কাছে এলেন। সাইরাস বললেন, আপনি তখন কি বলছিলেন?
ক্রোসাস কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, কি আর বলব। আমার এমনই পোড়া কপাল। ধনসম্পদ কত সুখিই না ছিলাম, এখন পুড়ে মরতে হবে।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি তখন কি বলছিলেন? সাইরাস বিরক্ত হয়ে বললেন।
ক্রোসান বলল, বলছিলাম কোনও জীবিত ব্যাক্তিকেই সুখি বলো না।
কেন? সাইরাস বিস্মিত।
ক্রোসাস তখন বলল, অনেক অনেক দিন আগের কথা। এথেন্স নগর থেকে সোলন নামে একজন যুবক এসেছিল এই লিডিয়া রাজ্যে। তার আগে নানা রাজ্য ঘুরেছিল সোলন। মিশরে গিয়েছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে আমার এত ধনসম্পদ দেখছ, এমনটা আর কোথাও দেখেছ? সোলন বলল, না। আমি তখন বললাম, আমার মতো সুখি ব্যাক্তি সে আর কোথাও দেখেছে কি না।তখন সোলন বলল, একমাত্র মৃতরাই সুখি। কোনও জীবিত মানুষকে সুখি বলা ঠিক হবে না। সোলনের কথাই ঠিক। ধনসম্পদ কত সুখিই না ছিলাম, এখন পুড়ে মরতে হবে। আমার এমনই পোড়া কপাল। ক্রোসাস আর্তনাদ করে উঠলেন।
সাইরাস কী যেন ভাবলেন। গভীর চিন্তামগ্ন দেখাল তাঁকে। ক্ষানিকক্ষন বাদে বললেন, না। আপনাকে পুড়ে মরতে হবে না। আপনি মুক্ত।

সাইরাসের কথায় লিডিয়রাজ হয়তো বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পারস্যরাজ সাইরাস-এর পক্ষে সে রকম মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই সম্ভব। কেননা, ইতিহাসে সাইরাসের পরিচয় সাইরাস দ্য গ্রেট হিসেবে। ইহুদিরা সাধারণত তাদের সম্প্রদায়ের বাইরে কারোর প্রশংসা করে না। একমাত্র সাইরাসের নামটি রয়েছে ওল্প টেস্টামেন্টে একজন দয়ালু শাসক হিসেবে! কাজেই, সাইরাসকে সাইরাস দ্য গ্রেট বলা হয়। যেমন, অশোক। যেমন, আকবর।

ভাবলে অবাক লাগে-সোলনের একটি উক্তি কী ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল পারস্যরাজের ওপর । সলোন কবি ছিলেন বলেই, হয়তো, অমন অমোঘ বাক্য বলতে বা লিখতে পারতেন।

অবশ্য, তাঁর রচনার ভগ্নাংশ মাত্র পাওয়া গিয়েছে।

সোলন অবশ্য কবিতা লিখতেন তাঁর রাজনৈতিক মত প্রচার করার জন্য। মানে প্রোপাগান্ডা চালাতে সাহিত্যকে ব্যবহার করতেন।
তা হলেও তিনি সুখী, সুন্দর, এথেন্স দেখতে চেয়েছিলেন।

-ইমন জুবায়ের, সামহোয়্যারইনব্লগ

তথ্যসূত্র:
উইকিপিডিয়া



              মন্তব্য
মন্তব্যগুলি
Pijush Ray খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠশতকে পারস্যরাজ সাইরাস দ্য গ্রেট জেরুজালেম জয় করেন। তখন সেখানকার বিখ্যাত জিহোবা-র মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পড়েছিল। সেই ভাঙা মন্দিরের জায়গায় নতুন মন্দির গড়ে দেন পারস্য সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট। তাই ইহুদীরা তাঁকে ভোলেনি। ইহুদীরা ' ওল্ড টেস্টামেন্ট '-এ সম্রাট সাইরাসের উল্লেখ রেখেছে।
পরিচালনা করুন


মোহাম্মদ রফি


মোহাম্মদ রফি


শেয়ার করেছেন                            প্রণব কুমার কুণ্ডু।

এখনো দিল্লি কিংবা মুম্বাই অথবা কলকাতার পান দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁয়, খাবারের দোকানে কিংবা রাস্তায় চলা অসংখ্য ট্যাক্সিতে ভালোবাসায় প্রতিদিন বেজে ওঠেন মোহাম্মদ রফি৷ তিনি কখনো পুরোনো হওয়ার নন। ফুরিয়ে যাওয়ার নন। এই বছরে, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীর জন্মবার্ষিকী।

এক সাক্ষাৎকারে লতা মুঙ্গেশকর, মোহাম্মদ রফি সম্পর্কে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন, ‘এক শ বছরেও মোহাম্মদ রফির মতো কণ্ঠ আর আসবে না৷’

তখনো ভাগ হয়নি ভারতবর্ষ। লাহোরে এক গানের অনুষ্ঠান চলছিল। কয়েক হাজার শ্রোতা-দর্শক হাজির সে অনুষ্ঠানে ৷ গাইবেন সেসময়ের জনপ্রিয়তম গায়ক কুন্দন লাল সায়গল ৷ হঠাৎ শোনা গেল শব্দযন্ত্র নষ্ট। গান শুরু করতে দেরি হবে। হাজারো দর্শক মঞ্চের সামনে বসা। আয়োজকদের একজন প্রস্তাব করলেন, রফি তো গানটান করে, যতক্ষণ মাইক্রোফোন ঠিক না হয়, ততক্ষণ ও-ই নাহয় গান করুক! তরুণ মোহাম্মদ রফি তখন ভলান্টিয়ার ৷ প্রস্তাবটা পেয়ে লুফেও নিলেন। খালি গলায় সেই কয়েক হাজার দর্শক-শ্রোতার সামনে দুটি গান গেয়েও ফেললেন। অনুষ্ঠানের সেই হাজারো শ্রোতা শান্ত হয়ে শুধু সে গান শুনলেনই না; মঞ্চে রফির কাছে তাঁদের একের পর এক গান গাওয়ার অনুরোধ আসতেই থাকল।

পরবর্তী জীবনে অতুলনীয় ভালোবাসা ও জনপ্রিয়তায় ধন্য মোহাম্মদ রফির শিল্পীজীবন যেন এক আশ্চর্য-সুন্দর রূপকথা ৷ ‘বাহারও ফুল বরসাও’, ‘ইয়ে দুনিয়া ইয়ে মেহফিল’, ‘গুলাবি আঁখে’ এমনি কত শত গান, কত ছবিকেই না এসব গান সুপারহিট করেছে!

মোহাম্মদ রফির জন্ম ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবে। অমৃতসরের কাছে একটি ছোট গ্রাম কোটলা সুলতান সিং, সেই গ্রামের বাসিন্দা হাজি আলি মোহাম্মদের সন্তান রফির ডাকনাম ছিল ‘ফিকু’। গ্রামের ফকিরদের গান শুনে ছোটবেলায় সুরের মায়ায় মন ভরে গিয়েছিল তাঁর। ১৯৩৫ সালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে লাহোরে চলে আসেন রফির বাবা। রফির বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন আবদুল হামিদ নামে একজন। কিশোর রফির গান তাঁকে আলোড়িত করেছিল। তাঁরই অনুপ্রেরণাতে গান শিখতে শুরু করেন মোহাম্মদ রফি। ওস্তাদ আবদুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবন লাল মাট্টু এবং ফিরোজ নিজামীর কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন রফি।

মোহাম্মদ রফি ১৯৪৪ সালে মুম্বাই যান। সেখানেই পরিচয় সংগীত পরিচালক শ্যাম সুন্দরের সঙ্গে। ‘গাঁও কি গৌরী’ ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ হয় তাঁর। সে সময়কার বিখ্যাত গায়ক জি এম দুররানীর সঙ্গে হিন্দি সিনেমার জন্য প্রথম গান গাইলেন রফি। গানটি ছিল ‘আজি দিল হো কাবু মে’। ১৯৪৪ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল।

১৯৪৪ সালেই প্রথমবারের মতো নওশাদের সংগীত পরিচালনায় গান করেন রফি। ‘পাহেলে আপ’ ছবির জন্য ‘হিন্দুস্থান কে হাম হায়’ গানটি গান তিনি। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় নওশাদ-রফির পথচলা। এই জুটি উপহার দিয়েছেন অসাধারণ সব গান।
‘লায়লা মজনু’, ‘শাহজাহান’, ‘জুগনু’, ‘কাশ্মীর কি কলি’-একের পর এক ছবিতে গান করেন রফি। কে এল সায়গল, নূরজাহানের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গে সে সময় গান করেছেন তিনি।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বলিউডে রফি ছিলেন ব্যস্ততম প্লেব্যাক গায়ক। সে সময়ের নামকরা সংগীত পরিচালক নওশাদ, ওপি নায়ার, শংকর জয়কিষাণ, শচীন দেব বর্মণ, মদন মোহন, রওশান— এদের সকলের সুরেই গান করেছেন রফি। বিশেষ করে নওশাদের সুরে গান গেয়ে রফি হয়ে ওঠেন সংগীতের আকাশে উজ্জ্বলতম তারকা।

মোহাম্মদ রফির একটা বিশেষ গুণ ছিল। তিনি অন্যের কণ্ঠস্বর নকল করতে পারতেন। ফলে তিনি যে অভিনেতার জন্য প্লেব্যাক করতেন তাঁর মতো কণ্ঠস্বরেই গানটি গাইতে পারতেন। এ জন্য প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে দিলীপ কুমার, দেবানন্দ, রাজকাপুরসহ সেরা সব নায়কদের জন্য গান করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। ‘পিয়াসা’, ‘কাগজ কি ফুল’, ‘কালা বাজার’, ‘কালা পানি’, ‘গাইড’-এর মতো সুপারহিট সব ছবিতে এস ডি বর্মণের সুরে গান গেয়েছেন তিনি। ষাটের দশকে লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে রফির ডুয়েট (দ্বৈত সংগীত) দারুণ জনপ্রিয় হয়।

ষাটের দশকে শাম্মী কাপুর ও ‘জুবিলি হিরো’খ্যাত রাজেন্দ্র কুমারের জন্য শংকর জয়কিষাণের সুরে তুমুল জনপ্রিয় সব গানে প্লেব্যাক করেন তিনি। ‘বসন্ত বাহার’, ‘প্রফেসর’, ‘জংলি’, ‘সুরাজ’, ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’, ‘লাভ ইন টোকিও’, ‘দিল এক মন্দির’, ‘দিল আপনা আউর প্রীত পারায়া’, ‘জব পেয়ার কিসিসে হোতা হায়’ এর মতো সুপার ডুপার হিট ছবিতে রফির গান দারুণ সমাদৃত হয়। ‘আব হ্যায় দাসতান তেরি ইয়ে জিন্দেগি’, ‘চাহে কোই মুঝে জংলি কাহে’ ইত্যাদি গান দর্শকদের মুখে মুখে ফেরে।

সংগীত পরিচালক রাভির সুরে ‘নীল কমল’ ছবিতে গান গেয়ে ১৯৬৮ সালে সেরা গায়ক হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফি।

রফি সবচেয়ে বেশি গান করেছেন লক্ষীকান্ত-পেয়ারেলাল জুটির সংগীত পরিচালনায়। ৩৬৯টি গান করেছেন তিনি এই জুটির সুরে। এই জুটির সুরে ‘দোস্তি’ ছবিতে ‘চাহুঙ্গা ম্যায় তুঝে সাঁঝ সাভেরে’ গানটি গেয়ে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তিনি।
বাংলাভাষাতেও বেশ কিছু জনপ্রিয় গান রয়েছে মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে। ‘ওরে মনকে এমন দাগা দিয়ে’, ‘ওই দূর দিগন্ত পারে’, ‘নাই বা পরিলে আজ মালা চন্দন’, ‘কথা ছিল দেখা হবে’, ‘এ জীবনে যদি আর কোনো দিন’, ‘নওল কিশোর’, ‘কালো কলেবর কানহাই’, ইত্যাদি গান এখনো শ্রোতাদের মন ভরায়।

তাঁর কণ্ঠে নজরুল সংগীত ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’ গায়কিতে আজও অনন্য।

লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর জুটি এক অবিস্মরণীয় সাফল্য আর খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছিল ৷ লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে রফির সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-রঙ্গ-রসিকতার এক অপূর্ব মিশ্রণ ৷ লতা মুঙ্গেশকর বিশ্বাস করতেন, রফি যেকোনো বয়সের নায়কের জন্যই গাইতে পারতেন ৷ শুধু তাই নয়, লতা মনে করতেন, রফি অসাধারণ একজন গাইয়ে ছাড়াও আচার-আচরণে-ভাবনায় যেন স্বয়ং ঈশ্বরেরই এক প্রতিনিধি ৷

১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই মাত্র ৫৫ বছর বয়সে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় এই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর।

●মোহাম্মদ রফির ৫ অজানা তথ্য :
১. ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী ও সাদাসিধে মানুষ। গান গেয়ে অনেক জায়গায় পারিশ্রমিকও নেননি। ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের কারণে অনেক সিনেমায় বিনা পারিশ্রমিকেও গান করেছেন। চ্যারিটি শোতে অংশ নিয়েছেন এবং গরিব অসহায় শিল্পীদের কল্যাণে দান করেছেন প্রচুর অর্থ।
২. স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন। বাড়ি এবং স্টুডিওতেই ছিল তাঁর মূল বিচরণ। বলিউডের বিলাসী পার্টিগুলোতে খুব কম দেখা যেত তাঁকে। তাঁর বিনোদন ছিল ক্যারাম ও ব্যাডমিন্টন খেলায় এবং ঘুড়ি ওড়ানোতে।
৩. মোহাম্মদ রফি তাঁর ক্যারিয়ারে মোট হাফ ডজন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন। জীবনে তিনি একবারই পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।
৪. কিংবদন্তি এই প্লেব্যাক গায়ক প্রায় ২৮ হাজার গান গেয়েছিলেন। হিন্দি ছাড়াও বাংলা, অহমিয়া, কোনকানি, ভোজপুরি, উড়িয়া, পাঞ্জাবি, মারাঠি, সিন্ধি, কন্নড়, গুজরাটি, তেলেগু, মাগাহি, মৈথিলি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া, ইংরেজি, ফারসি, স্প্যানিশ এবং ডাচ ভাষাতেও গান করেছেন রফি।
৫. ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মুম্বাইতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রফি। পরিবারের সবাইকে তিনি নিয়ে চলে আসেন ভারতে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী কিছুতেই ভারতে আসতে রাজি হননি। কারণ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তিনি হারিয়েছিলেন বাবা-মাকে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটেছিল রফির।

সতীদাহ


সতীদাহ

শেয়ার করেছেন                                                 প্রণব কুমার কুণ্ডু ।

#সতীদাহ_প্রথা_ও_মুর্শিদাবাদ

সংস্কৃত ‘সতী‘ শব্দটি আক্ষরিক অর্থে এমন সতীসাধ্বী রমণীকে বোঝায় যিনি তার স্বামীর প্রতি চূড়ান্ত সততা প্রদর্শন করেন এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিও থাকেন সত্যনিষ্ঠ। কিন্তু একটি আচার হিসেবে সতীদাহের অর্থ হলো মৃত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহমরণের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা এবং ওই অনুষ্ঠানে তূরীবাদক জনতার মাঝে স্বামীর শেষকৃত্যের চিতায় আরোহণ করা। কবে এবং কিভাবে এ ধরনের আচার ধর্মীয় প্রথারূপে গড়ে উঠেছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। গ্রিক লেখক ডিওডোরাস (আনু. ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এক সতীদাহের ঘটনার বর্ণনা দেন। এই বর্ণনার সঙ্গে আঠারো শতকের প্রচলিত সতীদাহ ব্যবস্থার প্রায় অবিকল মিল রয়েছে। অতীতে বিশ্বের বহু সমাজে মানুষের আত্মাহুতি প্রথার অস্তিত্ব ছিল বলে নৃবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকরা মোটামুটি একমত। রাজপুতরা খুব ঘটা করে এই অনুষ্ঠানটি পালন করত। কিন্তু বাংলাসহ ভারতবর্ষের সকল প্রদেশে হিন্দুদের কোন কোন বর্ণের লোকেরা এই অনুষ্ঠান পালন করত ভিন্নতরভাবে। তুর্কি ও মুগল যুগে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয় নি।
#মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিষ্ক্রিয়তায় ১৭৫৭ সালের পর থেকে বাংলায় সতীদাহ হতো বেশি।
১৮২৩ সালে এদেশে ৫৭৫ টী সতীদাহের কথা জানা যায়।
যে স্ত্রী সতী হবে তাকে স্বামীর মৃত্যুর পরেই কিছু মাদক দ্রব্য খাইয়ে দেওয়া হতো বোধ শক্তি হারানোর জন্য।
তারপর স্বামীর শবের সঙ্গে বেশ শক্ত করে বেঁধে রাখা হতো চিতার উপর। তাদের উপর গড়ে উঠতো জ্বালানি কাঠের স্তূপ চারিদিকে লোক দাঁড়িয়ে থাকতো লম্বা লম্বা বাঁশ নিয়ে।
যদি আগুনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কোনো রকমে বেরিয়ে আসে তাহলে এই সব লাঠিয়াল গুলো তাকে পিটিয়ে আবার চিতার আগুনে ফেলে দিত।
চারিদিকে ঢাক-ঢোল , বাঁশির শব্দ ও কৌতুহলী জনতার কলরবে জীবন্ত দগ্ধ নারীর আর্তনাদ কেউ শুনতে পেত না।
এই নৃশংস অনুষ্ঠান হত প্রকাশ্যে স্থানে সকলের চোখের সামনে।
#বহরমপুর - কাশিমবাজার এ এই ধরনের অমানবিক দৃশ্য দেখেছিলেন রাজা রামমোহন রায় ১৮০৩ সালে যখন তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরি নিয়ে মুর্শিদাবাদ আসেন। এখনকার সতীদাহের রূপ দেখে ও তার দুই বৌদিকে সতী হতে দেখে, এরপর থেকে তিনি সতীদাহ নিবারণের জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
বাংলার এই সতীদাহ ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে ব্রাহ্মণ দের মধ্যে মোট ২০৭১ টি সতীদাহ হয়।
তার মধ্যে মোট সংখ্যার শতকরা ১.২৩ ভাগ মুর্শিদাবাদে ঘটে। কায়স্থদের মধ্যে ৮০০ জনে শতকরা ২ ভাগ , তেলিদের মধ্যে ১১৩ টি ঘটনার শতকরা ০.৪৩ ভাগ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে মোট ৮২৬ টি সতীদাহ ঘটনার শতকরা ২.৫১ ভাগ ঘটে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য ১৮১৮-১৮২৮ সালের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১০০ জন সহমৃতা হন।
#১৮০২ সালে লর্ড ওয়েলেসলি প্রথম গঙ্গা সাগরে শিশু বিসর্জন নিষিদ্ধ করেন এটাই ছিল ইংরেজ শাসনে প্রথম প্রয়াস।
এর পরেই লর্ড বেন্টিক ১৮২৯ সালের ৪ই ডিসেম্বর সতীদাহ নিষিদ্ধ আইন পাশ করেন।
এই আইন পাশ হবার পর বহুদিন ধরে প্রচলিত এই প্রথা বন্ধ করবার জন্য সরকারকে কোনো কঠোর পুলিশি ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হইনি। এটা আপনা আপনি বন্ধ হয় এ যায়।
দেশীয় লোকদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় , হরিহরানন্দ তির্থস্বামী, ইনাদের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তথ্য সূত্র:
সতীদাহের ঘটনা ও সংখ্যা
আশীষ কুমার মন্ডল,
ইংরেজ শাসন ও মুর্শিদাবাদ জেলাঞ্চল
রমা প্রসাদ ভাস্কর,
বঙ্গ প্রসঙ্গে
চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।