মা কামাখ্যা
কামাখ্যার যোনি পূজা আসলে কী ?
পৌরাণিক কাহিনী মতে, বাপের বাড়িতে স্বামী মহাদেবের অপমান হলে, মহাদেবের স্ত্রী ‘সতী’ সেই অপমান সইতে না পেরে দেহত্যাগ করে অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনার ফলে মহাদেব শিব ক্ষিপ্ত হয়ে সতীর মৃতদেহ ঘাড়ে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করলে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হয়, এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিষ্ণু তার চক্র দিয়ে সতীর দেহকে খণ্ড বিখণ্ড করে এবং এরপর সেই খণ্ডগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্য বন্ধ হয়।
বাস্তব পৃথিবীতে এই ঘটনা না ঘটলেও, যেহেতু, পুরাণের মাধ্যমে লিখিত হয়ে এই ঘটনা পৃথিবীতে প্রচলিত হয়েছে এবং পুরানে এই কথাও লিখা হয়েছে যে, সতীর দেহের কোন খণ্ড কোথায় পতিত হয়েছে, সেই সূত্রে সেই সব স্থানে ছোট হোক বা বড় হোক একটি করে পীঠ বা তীর্থ স্থান গড়ে উঠেছে; এমনই একটি স্থান হলো ভারতের আসাম প্রদেশের কামরূপ কামাখ্যা; বিশ্বাস করা হয়, এখানে পতিত হয়েছিলো, সতীর কর্তিত যোনী। পুরাণ মতে, সতীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পৃথিবীর যে ৫১ জায়গায় পড়েছিলো, সেই সব জায়গা বর্তমানে হিন্দুদের জন্য এক একটি তীর্থস্থান, এমনই একটি তীর্থস্থান হলো বাংলাদের চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়, যেখানে পড়েছিলো সতীর ডান হাত।
বেশ কয়েক বছর আগে, সম্ভবত ২০১১/১২ সালে, শ্রীলঙ্কার ৯/১০ জন মন্ত্রী এসেছিলো বাংলাদেশের চট্টগ্রামের এক বৌদ্ধমন্দিরে; কারণ, সেই মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের মাথার কিছু চুল সংরক্ষণ করা ছিলো। বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেই চুল ছিলো তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূরর্ণ, তাই তারা তা এত গুরুত্ব দিয়ে নিতে এসেছিলো। আর বাংলাদেশ সরকার, সেই চুলকে বাল অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় মনে ক’রে বিনা শর্তে, সেই চুল শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছিলো; কারণ, বাংলাদেশ সরকারের তো এই ইচ্ছা যে যত দ্রুত সম্ভব এই মুসলিম দেশ থেকে কাফের মুরতাদদের স্মৃতিচিহ্ন দূর হোক, যাতে বাংলাদেশ হান্ড্রেড পার্সেন্ট মুসলমানের দেশ অর্থাৎ দার-উল-ইসলাম হতে পারে। কিন্তু এই চুলের কারণেই প্রতি বছর শ্রীলঙ্কা যে লক্ষ লক্ষ ডলারের পর্যটন ব্যবসা করবে- কারণ, সারা পৃথিবীর বৌদ্ধরা সেই চুল দেখার জন্য শ্রীলঙ্কা যাবে- এটা বাংলাদেশের মুসলমান সরকার বোঝেই নি; বুঝলে তারা সেই চুল শ্রীলঙ্কাকে দিতো না, বাংলাদেশে রেখেই সারা পৃথিবীর বৌদ্ধ পর্যটক আকর্ষণ করে লক্ষ ডলারের ব্যবসা করতো। কারণ, গৌতম বুদ্ধের এই চুল যেখানে থাকবে, সেই জায়গা ই বৌদ্ধদের কাছে একটা পবিত্র তীর্থস্থানে পরিণত হবে।
গৌতম বুদ্ধের পুরো মূর্তি থাকতে, বুদ্ধ ভক্তদের কাছে বুদ্ধের এই সামা্ন্য চুলের এত কদরের কারণ কী ? গৌতম বুদ্ধের মাথায় তো কোনোদিন চুলই ছিলো না, তার সেই আদর্শকে ধারণ করেই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সব সময় ন্যাড়া মাথায় থাকে, তাহলে এই চুল কি তার যৌনাঙ্গের ? এটাই হওয়া সম্ভব। না হলে এত বড় চুল, যা আড়াই হাজার বছর ধরে টিকে আছে, তা এলো কোথা থেকে ? তাহলে এটা প্রমান হলো যে, বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের যৌনাঙ্গের চুলকেও রেসপেক্ট করে, সম্মান করে।
বর্তমানে, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে কাশ্মিরের শ্রীনগরে ‘হযরত বাল মসজিদ’ নামে একটা মসজিদ আছে। এই মসজিদের এই রকম নামকরণের কারণ হলো, বলা হয়, হযরত মুহম্মদের দাড়ির একটি চুল নাকি এই মসজিদে সংরক্ষণ করা আছে; বছরে ১ দিন তা সকলের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়; একবার সেটা নাকি চুরিও হয়ে গিয়েছিলো। তাছাড়া এই মসজিদে নাকি দুই দুইটি AK-47 দ্বারা পাহারা বসানো আছে, কারণ আর কিছুই নয়, কে যে কখন ‘আল্লা হু আকবর’ বলে মসজিদের নামাজরত মুসলমানদেরে উপর গুলি করা শুরু করে তার তো কোনো ঠিক নেই, আল্লার ঘর মসজিদে আল্লার বান্দাদের বাঁচানোর জন্যই তাই কাফেরদের তৈরি এই অস্ত্রের ব্যবহার।
যা হোক, দাড়ির চুল হোক বা মাথার চুল হোক বা হোক অন্য কিছুর, চুলের হিন্দি বা উর্দু নাম যেহেতু বাল, সেহেতু এই মসজিদের নাম হয়েছে ‘হযরত বাল মসজিদ’ অর্থাৎ হযরতের বালের মসজিদ। মুসলমানের কাছে এই মসজিদ খুবই সম্মানজনক; কারণ আরবের বাইরে শুধু এই মসজিদেই নবীর দেহের কোনো স্মৃতিচিহ্ন আছে। যে চুল কাটলে ব্যথা লাগে না, যে চুল প্রতিমাসেই কেটে ফেলে দিতে হয়, যে চুল বলতে গেলে মানব শরীরের একটা আগাছা, সেই চুল নিয়ে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের এত আবেগের কারণ কী ? নিশ্চয় আবেগ এই জন্য যে, সেটা তাদের ধর্মগুরুর একটা বিশেষ স্মৃতিচিহ্ন ?
এছাড়াও আরবের মদীনায় এখনও সংরক্ষণ করা আছে, নবীর ব্যবহৃত জিনিস পত্র- পাগড়ি, বদনা, লাঠি, পোষাক, মানুষ খুন করার একাধিক তলোয়ার, এমনকি মুহম্মদের লিঙ্গও; মুহম্মদের মৃত্যুর পরও যে লিঙ্গ নাকি আকাশের দিকে খাড়া হয়ে ছিলো, কিছুতেই নিস্তেজ হচ্ছিলো না, শেষ পর্যন্ত আলী নাকি সেই লিঙ্গ কেটে রেখে দেয় এবং তারপর মুহম্মদকে কবর দেওয়া হয়, এই লিঙ্গকে মুসলমানরা আদর করে বলে ‘লিঙ্গদণ্ড মোবারক’, যেটাকে মুসলমানরা মমীর মতো করে সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছে। মুহম্মদ, হজরে আসোয়াদ নামের কালো পাথরের উপর পা রেখে কাবার কিছু কাজ করেছিলো ব’লে, মুসলমানরা হজ করতে গিয়ে যেভাবে সেই কালো পাথরকে চুমু খেয়ে খেয়ে থুতুতে ভরিয়ে তুলে, এই লিঙ্গ যদি তারা কাছে পেতো বা তাকে স্পর্শ করার সুযোগ বা অনুমতি পেতো, তাহলে তা মুখে নিয়ে যে কিভাবে চুষতো, সেটা তো অনুমান ই বলে দিচ্ছে।
মুহম্মদের চুল, বাল, লিঙ্গ নিয়ে মুসলমানরা যদি এত স্পর্শকাতর বা এত আবেগ আপ্লুত হতে পারে, তাহলে- মহাদেব শিব, যিনি হিন্দুদের একজন আদি দেবতা, তার স্ত্রী বলে যাকে কল্পনা করা হয়, সেই সতীর দেহের একটি অংশ যেখানে আছে বলে বিশ্বাস করা হয়, সেই স্থানে দেহের সেই অংশের প্রতীক বানিয়ে যদি তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে পূজা করা হয়, তাহলে সেটা কি খুব দোষের ?
মুসলমানরা কামাখ্যার যোনি পূজা বলতেই অশ্লীল কিছু বুঝিয়ে থাকে, যেন সেখানে গিয়ে হিন্দুরা শুধু কামলীলাতেই মগ্ন থাকে; হিন্দুরা এমন কামুক ও নোংরা মনমানসিকতা সম্পন্ন হলে, সারা পৃথিবীর সব হিন্দুরা, শুধু আসামের কাম্যাখ্যাতে গিয়েই যোনি পূজা করতো, আর সতীর দেহের অন্যান্য অংশের স্মৃতিচহ্ন স্বরূপ যে জায়গাগুলোতে সতীপীঠ বা তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে সে জায়গাগুলোর মাহাত্ম্য বা আড়ম্বর বিলুপ্ত হয়ে যেতো।
কিন্তু তা হয় নি, ৫১ টা পীঠ এখনও স্বমহিমায় জাগ্রত আছে, প্রতিটি জায়গাতেই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ সমাগম হয়; এমনকি যেখানে হাতের একটি আঙ্গুল পড়েছিলো, সে জায়গাও যেমন বিখ্যাত, তেমনি যে জায়গায় পায়ের একটি আঙ্গুল পড়েছিলো, সে জায়গায়ও বিখ্যাত। এই সব ঘটনা এটা প্রমান করে যে, কামে বিভোর হয়ে হিন্দুরা কামাখ্যাতে যোনী পূজা করে না বা করতে যায় না, যায় সতীর দেহের একটি অংশ সেই জায়গায় আছে বলে, সেই অংশের মাধ্যমে সতীকে স্মরণ করতে, স্বামীর অপমান সইতে না পারা এক মেয়ের আত্ম বলিদানকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং এই সব স্মরণের মাধ্যমে এমন এক দেবতাকে স্মরণ করতে, যিনি নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার জন্য পৃথিবীকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।
এখানে ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর এই প্রেমকে স্মরণ করতে, হিন্দুরা প্রেম রূপ কামকে পূজা করে সতীর ঐ যোনী প্রতীকের মাধ্যমে। এতে খারাপটা কী ? কোন পুরুষ তার স্ত্রীর যোনীর পূজা করে না ? সবাই করে। যোনী পূজার জন্যই তো বিবাহের উৎপত্তি এবং নারী পুরুষের দৈহিক মিলনের ব্যবস্থা। পুরুষ, নারীর যোনীর পূজা করে বলেই তো সৃষ্টি টিকে আছে। যে মূর্খ মুসলমানরা এই সব নিয়ে সমালোচনা করে, তারা কি জানে না যে- তার বাপ, তার মায়ের যোনির পূজা করেছিলো বলেই তার জন্ম সম্ভব হয়েছে ?
মুসলমানরা যখন হজ করতে গিয়ে যোনী সদৃশ হজরে আসোয়াদ নামক পাথরে চুমু খায়, আর নবীর স্মৃতিচিহ্নকে স্মরণ করার জন্য পরম সম্মানের সাথে বলে নবীর ‘লিঙ্গ দণ্ড মোবারক’, তখন সেটা যোনী বা লিঙ্গ পূজা হয় না; আর যখন হিন্দুরা এমন কিছু করে তখন সেটা হয় অশ্লীল, তাই না ? ভণ্ড আর কাকে বলে ?
হিন্দুরা, মুসলমানদের মতো শুধু নিজের মাকে মা, আর অন্য সব মহিলাদেরকে যৌন সামগ্রী মনে করে না, সব নারীকেই তারা মাতৃতুল্য বিবেচনা করে, তাই আসামে গিয়ে যার যোনি পূজা করে, তাকেও বলে ‘মা কামাখ্যা’। যোনি পূজার সময় মনে অশ্লীল চিন্তা এলে কাউকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করা যায় না; তখন সে হয় স্ত্রী না হয় পতিতালয়ের বেশ্যা; কিন্তু হিন্দুরা, কামরূপ কামাখ্যার দেবী, যাকে যোনি রূপে পূজা করা হয়, তাকে মা বলেই সম্বোধন করে এবং মা ই মনে করে।
জয় হিন্দ।
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন