রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

#বঙ্গভাগের_সিলেটি_ইতিহাস


#বঙ্গভাগের_সিলেটি_ইতিহাস
ফেসবুক থেকে      শেয়ার করেছেন     প্রণব কুমার কুণ্ডু






সিলেট বা শ্রীহট্ট ছিল বাংলাভাষী কিন্তু আসামের অন্তর্গত। এই জেলার মানুষের কিছু সমাজতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ছিল এখানকার হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে একটি বিশাল অংশ ব্রিটেনে চলে গিয়েছিল । লন্ডনের কেনেরি হার্ফ এবং ব্রিক লেন অঞ্চল এদেরই অধ্যুষিত।
সিলেটে এদেরকে লন্ডনী বলা হত। বিদেশের সঙ্গে সংযোগ থাকার ফলে বা অন্য যে কোন কারণেই হোক সিলেটের মুসলিমরা কিছুটা আলাদা ছিল । সিলেটের হিন্দুরা শিক্ষায়-দীক্ষায় আরও অত্যন্ত অগ্রসর ছিল। সে সময় আসাম প্রদেশ কে তিন ভাগে ভাগ করা হতো ।

1. ব্রহ্মপুত্র বা আসাম উপত্যকা
2. পার্বত্য অঞ্চল
3.সুরমা উপত্যকা ।
সুরমা অঞ্চল বলতে প্রধানত কাছাড় ও সিলেট জেলা কে বোঝানো হতো । ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার তীরে প্রচুর খালি জমি পড়েছিল, প্রচুর অরণ্য সম্পদ ছিল ,খনিজ তেলও ছিল । ফলে এই উপত্যকায় অধিবাসীরা যাদের মধ্যে প্রধান বর্ণহিন্দু , অসমীয়া অহম, এবং গরিয়া মুসলিম সকলেই অসমীয়া ভাষী এবং এরা কেউ অঞ্চলের বাইরে যেতে উদ্যোগী হন নি । অপরপক্ষে জনসংখ্যার চাপে সিলেটি বাংলা ভাষী হিন্দুরা সুরমা উপত্যকার ছেড়ে চলে আসে এই উত্তরে।
সরকারি চাকরির বেশ খানিকটা অংশ এটা অধিকার করেছিল ।শিলং শহর জুড়ে এক সময় এই বাঙ্গালীদের আধিপত্য ছিল এবং এখনও শিলং এ প্রচুর সিলেটি হিন্দু বাস করে থাকেন ।অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চল যেমন , গারো পাহাড় যা বর্তমানে মেঘালয় নামে পরিচিত , লুসাই পাহাড় যা বর্তমানে মিজোরাম নামে পরিচিত ও নাগা পাহাড় বা তুয়েনসাং যা বর্তমানে নাগাল্যান্ড নামে পরিচিত । সেই সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বহু সিলেটি হিন্দু বাস করতেন।
সুরমা উপত্যকার মানুষ এভাবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আসার ফলে এই দুই শ্রেণীর মধ্যে মতান্তরে সৃষ্টি হয়েছিল ।এদের সঙ্গে সব থেকে বড় বিষয় ছিল ভাষায় প্রভেদ। অসমীয়া ও বাংলা ভাষা মোটামুটি একই লিপিতে লিখিত হলেও উচ্চারণ ও শব্দ সম্ভারের অনেকটাই আলাদা । এই মন অন্তর অনেক পরে সাময়িকভাবে উগ্র রূপ ধারণ করেছিল ।
আসামের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে অসমীয়া ভাষিদেরি প্রধান প্রাধান্য ছিল এবং এদের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদৈল। বাংলাভাষী সিলেট থেকে এক সময় বিপিনচন্দ্র পালের মতো নেতারা উঠে এসেছিলেন।
পরবর্তীকালে বরদলৈ এর মাপের কোনো নেতা তৈরি হননি ।বাংলাভাষী নেতাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন বসন্ত দাস, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ।
সিলেট আসামের অংশ, আসাম হিন্দু প্রধান হবার দরুন তার পাকিস্তান যাবার কোন প্রশ্ন ওঠেনা । তাহলে হঠাৎ করে সিলেট অঞ্চলে গণভোট বা রেফারেন্ডাম হলো কেন?
এর কু কৃতিত্ব টির হোতা হলেন মাউন্টব্যাটেন সাহেব। যদিও মুসলিম লীগের চাপেই তিনি তা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।বিলাতের পার্লামেন্টে আটলি যে ঘোষণাটি 3 রা জুন 1947 তারিখে করেছিলেন তার মধ্যে সিলেট এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ভোট হবার ঘোষণা করা হয়েছিল । এই গণভোটের স্বপক্ষে মাউন্ট ব্যাটেনের যুক্তি ছিল আসাম অমুসলিম প্রধান হলেও, সিলেট জেলা নাকি মুসলিম প্রধান এবং মুসলিম প্রধান পূর্ববঙ্গের সঙ্গে সংলগ্ন অতএব এখানে গণভোট হওয়া উচিত।
সিলেটের জনবিন্যাসের মধ্যে শ্রীমঙ্গল ও অন্যান্য অঞ্চলে চা বাগিচায় প্রচুর কর্মরত শ্রমিক ছিল। সাধারন হিন্দুর সংখ্যা ছিল 78 5004 , অনুসূচিত জাতি ছিল 26 7510 ,মুসলিম ছিল 18921 17, এবং চা শ্রমিক যারা বিভিন্ন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসেছিল তাদের সংখ্যা ছিল 144 876 অর্থাৎ মোট অমুসলিমের সংখ্যা ছিল 1 1973 90 মুসলিম জনসংখ্যার থেকে প্রায় 7 লক্ষ কম । কিন্তু কোন ভোট প্রক্রিয়ায় চা শ্রমিকদের তখন সম্পুর্ন বাদ রাখা হয়েছিল ।
আজ পর্যন্ত সিলেটের হিন্দুদের অনেকের ধারণা এই কাণ্ড আসামের মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈএর । তাঁর চক্রান্ত ছিল সিলেট যাতে পাকিস্তানে চলে যায়। বাকি আসাম অসমীয়া ভাষি প্রধান হয়ে থেকে যায়। কিন্তু চক্রান্তের কোন অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সিলেট গণভোট সম্পর্কে প্রামাণ্য রচনা খুব বেশি নেই ।তবে তার মধ্যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বই একটি পাওয়া যায় , যাতে তিনি কিন্তু এই ধরনের কোন চক্রান্তের কথা লিখেন নি।
শুধু মৌলানা আবুল কালাম আজাদ তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন , আসাম কংগ্রেসের কিছু নেতা ক্যাবিনেট মিশনের গ্রুপিং প্লান এর বিরোধিতা করার সময় এক অদ্ভুত বাঙালি আতঙ্কের পরিচয় দিয়েছিল । অবশ্য তিনি এটাও বলেছিলেন , বরদলৈ প্রমুখের বাঙালি আতঙ্ক যত না ছিল তার থেকে অনেক বেশি মুসলিম আতঙ্ক ছিল । কারণ গোপীনাথ বাবু চোখের সামনে দেখেছিলেন উপত্যকায় কিভাবে মুসলিম জনবিন্যাস বেশ বদলে যাচ্ছে।
এই লেখক এর পরিচিত আসামের গোয়ালপাড়া জেলার রামহরির চর নিবাসি ,অধুনা মার্কিন নাগরিক , দেবদাস ঘোষালের বয়ান অনুসারে ওই অঞ্চলে মুসলিমরা একটা ডান্ডার মাথায় রক্ত মাখা গরুর কর্তিত মুণ্ড নিয়ে মিছিল করত পাকিস্তান দাবির সমর্থনে । তাছাড়া যদি চক্রান্ত হয়েই থাকে তবে সে সময়কার আসাম সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাঙালি নেতা বসন্ত দাস কি করছিলেন ?তারা কেন এ নিয়ে হৈচৈ করেননি ?তাদের নিচেস্টতার প্রতিও অবশ্যই অঙ্গুলিনির্দেশ করতে হবে ।
বরঞ্চ ভি পি মেনন লেখার উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দেখিয়েছেন যে কংগ্রেস রেফারেন্ডাম কমিশনার স্টর্ক এর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল যাতে ভোটাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু স্টর্ক তাতে সম্মত হননি । বলেছিলেন, এরা ফ্লোটিং পপুলেশন ।
গণভোটের আরেক সমস্যা ছিল বর্ষা । ভোট হয় জুলাইয়ের 6 - 7 তারিখ। বর্ষায় সিলেট জেলা জলে ভাসে। এটা নিয়ে আসাম গভর্নর পর্যন্ত চিহ্নিত ছিলেন। কিন্তু যেহেতু ব্যাটন 15 আগস্ট স্বাধীনতার দিন ঘোষণা করে ফেলেছেন তাই কোনো উপায় ছিল না ।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর লেখা থেকে জানতে পারা যায় , এই গণভোটের মুসলিম লীগ যে পরিমাণ তৎপরতা দেখিয়েছিল, যেভাবে মুসলিমরা নিজেদের দিকে জেতার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়েছিল কংগ্রেসের তরফ থেকে সে ধরনের কোনো রকম কোনো উদ্যোগ দেখতে পাওয়া যায়নি। এর দায়িত্ব আসাম কংগ্রেসের অসমীয়া নেতাদের উপর যতটা বর্তায় , বসন্ত দাস বৈদ্যনাথ মুখার্জি প্রমুখ বাঙালি তাদের উপর ঠিক ততটাই বর্তায়।
এমনকি প্রথম যাকে রেফারেন্ডাম কমিশনার হিসেবে ভাবা হয়েছিল সেই এইচ .সি. স্টক এ নিযুক্তি মুসলিম লীগের চাপে খারিজ করা হয় । এর কারন স্টক সাহেব প্রথম মহাযুদ্ধে তুরস্কের যুদ্ধ বন্দী হয়েছিলেন এবং প্রচন্ড অত্যাচারিত হয়েছিলেন । ফলে তিনি মুসলিমদের অপছন্দ করতেন । জিন্না এর জন্য এম এ ইস্পাহানির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন যারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সভা ও প্রচার করেছিল। সে তুলনায় কংগ্রেস বিশেষ কিছু করেনি।
গনভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ হয়নি। মুসলিম লীগের গুন্ডা শাখা মুসলিম ন্যাশনাল গার্ডের লোকেরা উত্তর ভারত থেকে সিলেট পৌঁছে গিয়েছিল এবং এত গুন্ডামি করেছিল যে স্থানীয় সব জাতির লোক উক্তত বোধ করেছিল। এরা প্রত্যেকে উর্দুভাষী ছিল। স্থানীয় ভাষা বলতে পারতোনা। এদের আনার কারণ সম্ভবত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্বেও লিগ জয় সম্পর্কে সন্দিহান ছিল ।
কারণ, 1. তখনো অনেক ভারতপন্থী মুসলমান ছিল।
2. আব্দুল মতলিব মজুমদারের নেতৃত্বে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সিলেটের ভারত ভুক্তিরপক্ষে ছিল।
3. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজে এসেছিলেন সিলেটে । জেলা চষে বেরিয়েছিলেন। তার প্রেরণায় সিলেটি হিন্দুরা দিল্লি বা বার্মা থেকে বিমানযোগে সিলেটে এসে গিয়েছিলেন ভোট দিতে।
কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মত মহান মানুষ যেমন ছিলেন হিন্দুদের মধ্যেও বেইমানি করার লোকের অভাব ছিল না ।
শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেখতে পাই , যে তারা সিলেটের গণভোট জেতবার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিল??? তার একটি তথ্য উল্লেখযোগ্য- যেখানে শেখ মুজিব নিজে লিখেছেন , "শহীদ সাহেবের অনুরোধে দানবীর রায়বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহা বেশ হিন্দু হয়েও কয়েকখানা লঞ্চ সিলেটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ।এই লঞ্চগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল মুসলিম লীগের কর্মী এবং পাকিস্তানের পক্ষে। শহীদ সাহেবের বন্ধু ছিলেন এই রায় বাহাদুর। তার কথা তিনি ফেলতে পারেননি শেষ।"
শেষ পর্যন্ত ভোটের ফল বের হলে দেখা গেল সিলেট পাকিস্থানে যাচ্ছে। পাকিস্তানের পক্ষে ভোট পড়েছিল 2396 19 টি, ভারতের পক্ষে ভোট পড়েছিল 1840 41 । স্পষ্টতই বেশ কিছু মুসলিম ভোট ভারতের পক্ষে পড়েছিল এবং আব্দুল মজুমদারের যে সমস্ত সাপোর্টার ছিল তারাই এই ভোটগুলো দিয়েছিল । এর সঙ্গে যদি চা শ্রমিকদের ভোট যোগ হত তাহলে ফল ঘুরে যেত ।
জেলার চারটি থানা - রাতাবাড়ি ,পাথর কান্ডি , বদরপুর , করিমগঞ্জ থানার এক অংশ ভারতে রইল ।শ্রীমঙ্গল এবং বড়লেখা হিন্দু প্রধান ও ভারত সংলগ্ন হওয়া সত্বেও পাকিস্তানকে দেওয়া হলো ।
দেশের ভাগ এর ফলে দেশের উত্তর পূর্ব অঞ্চল , সাবেক আসাম , নেফা এবং ত্রিপুরা কার্যত বাকি ভারত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল । এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আসাম বলতে তখন আসাম, মেঘালয় , নাগাল্যান্ড, মিজোরামকে একত্রে বলা হত। নেফার বর্তমান নাম অরুণাচল প্রদেশ। এই যুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম যাতে মাত্র 3 শতাংশ মুসলিম ছিল তা পাকিস্তানকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল কারণ বলা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিমের সংখ্যা নগণ্য হলেও চট্টগ্রাম এর মধ্য দিয়ে ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম যাবার উপায় নেই।

তথ্যঃ শ্রদ্ধেয় তথাগত রায়ের রচিত শেষ পর্যন্ত দেশ ভাগ হল।

গৌরকিশোর ঘোষ



গৌরকিশোর ঘোষ
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন                       প্রণব কুমার কুণ্ডু







সাহিত্যিক এবং সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক
গৌরকিশোর ঘোষ (জন্মঃ- ২২ জুন, ১৯২৩ – মৃত্যুঃ- ১৫ ডিসেম্বর, ২০০০)

তিনি রূপদর্শী ছদ্মনামে গল্প ও উপন্যাস রচনা করতেন। ১৯৭৬-তে ভারতে জরুরি অবস্থা জারি ও সংবাদপত্রের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ হলে রূপদর্শী নামে গৌরকিশোর ঘোষ দেশ ও আনন্দবাজার-এ অনেক ঝাঁঝালো লেখা লিখেছিলেন। এসব লেখার কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ১৯৭৫ সালের 'মিসা' (MISA) অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ জন-নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে প্রেসিডেন্সি কারাগারে রাখে। সাংবাদিকদের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বহু নির্যাতন সহ্য করেও নিরন্তর সংগ্রামের ব্রতী ছিলেন। মুক্তচিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার জন্যে সব মহলে জনপ্রিয় ছিলেন। পোশাক-আশাকে খুবই সাদাসিধে। রসবোধ ছিল প্রখর। ছিলেন পরোপকারী। তার সাহিত্য বাঙলার বিদগ্ধ পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলে। আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করতেন তিনি। দেশ পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। আশির দশকে আজকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। তিনি আজকালকে প্রথাগত একটি দৈনিক করতে চাননি। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর খবরকে তিনি নিয়ম করে প্রথম পাতায় কখনো দেননি। আজকাল-এ প্রায়ই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনই ফাস্ট লিড হিসেবে স্থান পেয়েছে। পত্রিকাজুড়েই ছিল অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ছড়াছড়ি। সেকালে কলকাতার খ্যাতনামা কলামিস্ট অবাঙালি হামদি বে সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখকের কলাম প্রকাশ করে তিনি চমক সৃষ্টি করেছিলেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গৌরকিশোর ঘোষ পরে পত্রিকাটি ছেড়ে দেন। আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষও তাঁকে আবার সসম্মানে আনন্দবাজার-এ ফিরিয়ে নেন। দেশ-মাটি-মানুষ ট্রিলজির দ্বিতীয় খন্ড 'প্রেম নেই' গ্রামীন মুসলিম জীবন নিয়ে সুবিশাল রচনা। দেশ পত্রিকায় এই উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে বের হয়। এছাড়া সাগিনা মাহাতো, জল পড়ে পাতা নড়ে, আনাকে বলতে দাও, আমরা যেখানে, লোকটা, রূপদর্শীর সংবাদভাষ্য ইত্যাদি তার অন্যান্য গ্রন্থ। সাগিনা মাহাতো, তপন সিংহর পরিচালনায় চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার। গৌরকিশোর সৃষ্ট মজলিশি চরিত্রের নাম ব্রজদা। সাংবাদিকতার জন্যে তিনি ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার 'কো জয় উক' স্মৃতি পুরষ্কার এবং ১৯৮১ সালে ম্যাগসাসে পুরস্কারে সম্মানিত হন। একই বছর মহারাষ্ট্র সরকারের পুরষ্কার, ১৯৯৩ সালে হরদয়াল হারমোনি পুরষ্কার, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ পুরষ্কার পান। তিনি ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার ও ১৯৮২ তে বঙ্কিম পুরষ্কার পান। কলকাতা মেট্রো রেলের নতুন প্রস্তাবিত চিংড়িহাটা স্টেশনটি গৌরকিশোর ঘোষের স্মৃতিতে রাখা হয়েছে। তাঁর উপন্যাস, ছোটগল্প, রম্যরচনা ও রাজনৈতিক কলাম নিয়ে কয়েক খণ্ডে গৌরকিশোর ঘোষ রচনাবলী প্রকাশিত হয়েছে।
জন্ম
তিনি বাংলাদেশের যশোর জেলায় হাট গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিক পড়াশোনা করেন শ্রীহট্ট জেলার এক চা-বাগানে। স্কুলের পাঠ নদিয়া জেলার নবদ্বীপে। ১৯৪৫ সালে আইএস-সি পাশ করেন। ১৯৪১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি ক্রমাগত পেশা বদলে গেছেন। প্রাইভেট টিউটর, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, খালাসি, রেস্তরাঁয় বয়, ট্রেড ইউনিয়ন অর্গানাইজার, ইস্কুল মাস্টার থেকে ভ্রাম্যমান নৃত্য-সম্প্রদায়ের ম্যানেজার, ল্যান্ডকাস্টমস ক্লিয়ারিং কেরানি, প্রুফ রিডার ইত্যাদি অসংখ্য কাজ করেছেন সাংবাদিক জীবনে প্রবেশের আগে পর্যন্ত।
...........
...হুগলির অত্যন্ত বর্ধিষ্ণু ব্যবসায়ী পরিবারের কেউই স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি তাঁদের ‘তুলু’ এমন একটা কাজ করে বসবে! কড়া শাসনের যৌথ সংসারে ধনী ঘোষবাড়ির ধীরেন্দ্রনাথ ও সুধীরবালার ছয় সন্তানের তৃতীয় সন্তান তুলু। ভাল নাম শীলা। নবদ্বীপে মাসির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে প্রেমে পড়ল চালচুলোহীন দরিদ্র পরিবারের উড়নচণ্ডী ছেলে গৌরকিশোর ঘোষের। একদম চিঠির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রেম। বাড়ির সকলের সঙ্গে একলা একবগ্গা লড়াই করে শীলা এক দিন বাধ্য করালো এই অসম বিয়েতে মত দিতে। ১৯৫৬, ৮ কী ৯ মে। বাংলার পঁচিশে বৈশাখ, রেজিস্ট্রি বিয়ে হল। তেত্রিশ বছরের গৌরকিশোর একবস্ত্রে সাতাশ বছরের শীলাকে নিয়ে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে তুমুল আলোড়ন ফেলে।
এর পর থেকে সবটাই শীলা ঘোষের নিপুণ হাতের জীবনশিল্প। আনন্দবাজারের গৌরকিশোরের স্থায়ী চাকরির আগে পর্যন্ত অসম্ভব অনটনের সঙ্গে ভয়ংকর লড়াই। তার মাঝেই গড়ে তোলা একটি গোছানো সংসার। তৈরি করা তিন ছেলেমেয়েকে। দু’হাতে সামলানো সংসারের ব্যাপারে একেবারে উদাসীন, বাঁধাগতের বাইরের মানুষ গৌরকিশোরকে।
অন্য দিকে শীলা ঘোষ সেই বিরল স্ত্রীদের একজন, যিনি তাঁর সাংবাদিক-সাহিত্যিক স্বামীর সমস্ত লেখা, ছবি, কাটিং করে সন-তারিখ দিয়ে সংরক্ষণ করে গেছেন। লেখক গৌরকিশোর ঘোষের সমস্ত ম্যানস্ক্রিপ্টের প্রথম অনিবার্য পাঠক ছিলেন তাঁর ‘তুলু’! গল্প-উপন্যাসের দু’প্যারা লিখে তুলুকে পড়িয়ে নিতেন গৌরকিশোর। জীবনের সমস্ত কাজে পরম নিশ্চিন্তি —‘তুলু আছে’।
শ্যামলা। লম্বা। দীর্ঘ চুল। লাবণ্যময়ী মুখশ্রী। বড় বড় পাতা-ছাওয়া আকর্ষণীয় চোখ। বরাবরের সাজ সিঁদুরের টিপ। তাঁতের শাড়ি। আর একমাত্র অলঙ্কার দু’হাতে দুটি মোটা শাখা। ম্যানিলায় ‘ম্যাগসাইসাই’ পুরস্কার নিতে স্বামীর সফরসঙ্গিনী ছিলেন ওই সাজেই।
১৯৭৫-এর এমার্জেন্সিতে ‘মিসা’য় বাড়ি থেকে গ্রেফতার হলেন গৌরকিশোর ঘোষ। তখন সে এক অন্য লড়াই! দুই নাবালিকা মেয়ে আর বৃদ্ধা শাশুড়ি নিয়ে নাজেহাল অবস্থা। একমাত্র ছেলে তখন হস্টেলে। তা’ও সামাল দিলেন শীলা!
কোর্টে দৌড়োদৌড়ি করে মামলা লড়ে আদায় করলেন স্বামীর সঙ্গে জেলে দেখা করার অর্ডার। প্রচুর ছোটাছুটি করলেন স্বামীকে ‘রাজবন্দি’ স্টেটাস পাওয়ানোর।
বাসে করে দিনের পর দিন আলিপুর প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করা কম কষ্টের ছিল না। প্রায় এক বছর জেলে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি বন্দি মানুষটির সঙ্গে যে ভাবে প্রচণ্ড লড়াই করে আর বুদ্ধি খাটিয়ে যোগাযোগ করতেন, তা রোমাঞ্চকর রহস্য কাহিনিকেও হার মানায়। ছ’ছটা বছর প্যারালিসিসে ভুগে, কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গৌরকিশোরের। তার মধ্যেই তাঁকে তুলে কম্পিউটারে বসিয়ে ফের লেখা ধরানোর দুঃসাধ্য কাজটি করেন এই শীলা ঘোষ, অক্লান্ত সেবাযত্ন আর পরিশ্রমে।
১৫ ডিসেম্বর, ২০০০। সকালে স্ত্রীর মুখে একখানা আঙুল বুলিয়ে বুলিয়ে শেষ আদর করে বিকেলের দিকে চিরবিদায় নিলেন গৌরকিশোর। আরও বারোটা বছর তাঁর তুলু তাঁকে ‘বাঁচিয়ে’ রাখলেন একেকটা বিষয়ে সেমিনার অর্গানাইজ করে, তাঁর জন্মদিন পালন করে, নানা ভাবে তাঁকে প্রোজেক্ট করে, যাতে লোকের মনে তিনি ‘থাকেন’। শেষমেশ নিজে চলে গেলেন ঠিক বারো বছর পর ২০১২, ৪ সেপ্টেম্বর। (আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে)।

মহাভারতে বর্ণিত বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান অবস্থান


মহাভারতে বর্ণিত বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান অবস্থান



Facebook থেকে        শেয়ার করেছেন





Pranab Kumar কুণ্ডু





মহাভারতে বর্ণিত বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান অবস্থান !

United Hindu Concern

মহাভারতে বর্ণিত বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে । মহাভারত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু এটা যে শুধুই ধর্মগ্রন্থ তা কিন্তু নয়। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মহাকাব্য। এটাকে ইতিহাস গ্রন্থ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তাই বলে মহাভারতের ইতিহাস যে কাল্পনিক বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে মহাভারতের শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর। আজ আমরা জানবো সেই শহরগুলির বর্তমান অবস্থা কোথায় তার অবস্থান। হস্তিনাপুর:  ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি বিখ্যাত স্থান। মহাভারতে বর্ণিত কৌরব এবং পাণ্ডব উভয়েরই রাজধানী ছিল হস্তিনাপুর। এই শহরকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে মহাভারত। এর অবস্থান দিল্লীর পূর্বে। মিরাটের নিকট, গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে। কুরুক্ষেত্র: মহাভারতের ঐতিহাসিক কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ এখানেই হয়েছিল। দিল্লীর উত্তরে বর্তমানে হরিয়ানা প্রদেশের একটি জেলা। থানেশ্বরের দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত। বর্তমানে এই জায়গা কুরুক্ষেত্র নামে পরিচিত। কুরুক্ষেত্রের প্রচীন নাম সমস্ত পঞ্চক। গান্ধার: মহাভারতে বর্ণিত গান্ধার শহরটি সিন্ধু প্রদেশের সিন্ধু নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত। ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারী ছিলেন গান্ধার শহরের রাজা সুবলের কন্যা। সিন্ধুনদের পশ্চিম তীর হতে আফগানিস্তের অধিকাংশ অঞ্চলকে প্রাচীনকালে গান্ধার দেশ নামে ডাকা হত। আফগানিস্তানের কান্দাহার হল প্রাচীন গান্ধার নগরী। তক্ষশীলা: গান্ধার দেশের রাজধানীর নাম ছিল তক্ষশীলা। বর্তমানে পাকিস্তানের রওয়ালপিন্ডিতে এই শহরের অবস্থান ছিল। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর পাণ্ডবরা যখন হিমালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলেন তখন রাজা হিসেবে পরীক্ষিতের অভিষেক ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সাপের কামড়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরীক্ষিত পুত্র জনমেজয় তক্ষশীলার দিকে নাগরাজকে পাঠান এবং সেই নাগরাজের আক্রমনে বহু সাপ মারা যায়। উজ্জয়নী: ভারতের বর্তমান উত্তর প্রদেশের প্রাচীন নাম ছিল উজ্জয়নী। নৈনিতাল জেলার কাশিপুরের নিকটে এই শহরটি ছিল। অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য এখানেই তার শিষ্য পাণ্ডবদের ধনুর্বিদ্যা শিখাতেন। পাণ্ডুপুত্র ভীম এই শহরে শিবের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন বলে অনেকে এই শহরকে ভীমশঙ্কর বলেও জানতেন। মাদ্রা দেশ: হিমালয়ের দিকের উত্তরের দেশকে বলা হতো মাদ্রা দেশ। বর্তমানে নেপাল এবং ভারতের একাংশে এর অবস্থান ছিল। সেসময় শল্য মাদ্রা দেশের রাজা ছিলেন। হস্তিনাপুরের রাজা পান্ডু তার বোন মাদ্রিকে বিয়ে করেন। মাদরি ছিলেন সহদেব এবং নকুল মাতা। শিবি দেশ: মহাভারতে ভারতের উত্তরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ পাঞ্জাবকে বলা হত হলো শিবি দেশ। এখানকার রাজা ছিলেন ঊষীণার। তার নাতনি দেবিকাকে যুধিষ্ঠির বিয়ে করেছিলেন। ঊষীণারের সন্তান শৈব্য কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় পান্ডবদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইন্দ্রপ্রস্থ = ইন্দ্রপ্রস্থ শহরটি পান্ডবদের প্রতিষ্ঠিত একটি প্রসিদ্ধ শহর। প্রাচীনকালে খান্ডব বন ধ্বংস করে এই শহরটি তৈরি করা হয়েছিল। দিল্লীর প্রাচীন নাম ইন্দ্রপ্রস্থ । বর্তমান দিল্লীতে এর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। ডিসকভারী চ্যানেল ইন্দ্রপ্রস্থের উপর একটা সুন্দর প্রত্নতাত্ত্বিক ডকুমেন্টরি তৈরি করেছে । নৈমিষারণ্য = গোমতি নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলায়। আধুনিক নাম নিমসার। দ্বারকা = গুজরাটের পশ্চিম সীমায় অবস্থিত। বর্তমানেও এটা দ্বারকা নামে পরিচিত। এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিষ্ঠিত। তার দেহ রাখবার পর মূল দ্বারকা নগরী সমুদ্রের জলে প্লাবিত হয়। বর্তমানে জলধিমগ্ন দ্বারকা নগরীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বর্তমান অবস্থিত দ্বারকা থেকে বেশ খানিকটা আরব সাগরের নীচে। মগধ =বর্তমান দক্ষিণ বিহারের প্রাচীন নাম। মগধ প্রাচীন ভারতে ষোলটি মহাজনপদ বা অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে মগধ বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই রাজ্য বর্তমানের বিহারের পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। রাজগৃহ ছিল মগধের রাজধানী। তারপর পাটলিপুত্র রাজধানি বানিয়ে গিয়েছিলো। রাজা বিম্বসার ছিলেন মগধের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা। তিনি অঙ্গ দখল করেন। মৎস্যদেশ =বিরাট রাজার দেশ যেখানে পাণ্ডবেরা অজ্ঞাতবাসে ছিলেন। এর অবস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে বর্তমান জয়পুরের নিকট অঞ্চলকে মৎস্যদেশ হিসাবে অনুমান করা হয় । পুন্ড্রদেশ হল রাজশাহী-দিনাজপুর-বগুড়া নিয়ে উত্তরবঙ্গ। বগুড়ার মহাস্থাংড়ের প্রাচীন নাম পুন্ড্রনগর। উন্নত সভ্যতার সবকিছু রয়েছে সেখানে। বানগঙ্গা: মহাভারতে ভারতের প্রাচীন নগর হরিয়ানাকে বলা হত বানগঙ্গা। কুরুক্ষেত্র থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এই শহর অবস্থিত। ভারতের তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে হরিয়ানা অন্যতম। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পর্যটক এখানে আসেন। অঙ্গদেশ - বর্তমান মুঙ্গের ও ভাগলপুর. পাঞ্চাল = পাঞ্জাব কে এই নামে ডাকা হত।হস্তিনাপুরের নিকটবর্তী স্থানও এর সাথে যুক্ত ছিল। পণ্ডিতগণের মতে দিল্লী থেকে উত্তর ও পশ্চিমে বিস্তৃত স্থান। যে দ্রৌপদীকে ঘিরে তৈরি মহাভারতের প্রেক্ষাপট, তিনি ছিলেন পাঞ্চালের রাজকন্যা তাই তাঁকে পাঞ্চালী বলা হত। আর রাজা দ্রুপদের কন্যা বলে নাম দ্রৌপদী।

উদ্ভব (যিশুখ্রিস্টের জীবন)


উদ্ভব (যিশুখ্রিস্টের জীবন)


ফেসবুক থেকে       শেয়ার করেছেন            প্রণব কুমার কুণ্ডু



উদ্ভব (যিশুখ্রিস্টের জীবন)[সম্পাদনা]      উইকিপিডিয়া

মধ্যপ্রাচ্যের (বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের উত্তরভাগে অবস্থিত) ঐতিহাসিক গালীল অঞ্চলের নাসরত শহর থেকে আগত ইহুদি বংশোদ্ভূত ধর্মীয় নেতা যিশুখ্রিস্টের জীবন ও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে খ্রিস্টীয় ১ম শতকে ধর্মটির উৎপত্তি হয়। ঐতিহাসিকভাবে নাসরতের যিশু খ্রিস্টীয় ১ম শতকের প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশ যিহূদিয়াতে (ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন অঞ্চলের পার্বত্য দক্ষিণাংশ) বসবাসকারী একজন ধর্মপ্রচারক ও নৈতিক শিক্ষক ছিলেন। যিশুর পালক বাবা যোসেফ ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী। কিন্তু যিশুর অনুসারীরা অর্থাৎ খ্রিস্টানেরা বিশ্বাস করেন যে যিশু স্বয়ং ঈশ্বরের একমাত্র সন্তান। খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থগুলিতে বর্ণিত কাহিনী অনুযায়ী তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে পারতেন, এমনকি মৃত মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারতেন। এসব অলৌকিক ঘটনা সম্পাদনের প্রেক্ষিতে যিশুকে ইহুদিদের রাজা হিসেবে দাবী করা হয়। এই উপাধি ব্যবহার ও নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে দাবী করার দোষে জেরুসালেমের ইহুদি নেতাদের নির্দেশে যিশুকে জেরুসালেমে গ্রেপ্তার করা হয়। ইহুদিদের সর্বোচ্চ আদালতে তাঁর বিচার হয় ও ইহুদিরা যিহূদিয়ার স্থানীয় রোমান প্রশাসক পোন্তিউস পীলাতকে অনুরোধ করে যেন যিশুকে মৃত্যদণ্ড দান করা হয়। পীলাত প্রথমে যিশুকে নিরপরাধ গণ্য করলেও পরবর্তীতে যাজকদের প্ররোচণায় উন্মত্ত ইহুদি জনতার ইচ্ছাপূরণ করতে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করান।