রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত


    ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত


    শেয়ার করেছেন                                প্রণব কুমার কুণ্ডু।

স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী
ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত (জন্মঃ- ৮ অক্টোবর, ১৮৯৪ - মৃত্যুঃ- ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৯)

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বিপ্লবী দলের অন্যতম নেতারূপে জার্মাণ অস্ত্রের সাহায্যে ভারতে অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯১৭ সালে তিনি ধরা পড়ে যান। ঐ বছরের শেষে ভারত সচিব মন্টেগু সাহেব ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করার জন্য আগমন করলে রাজবন্দীরা একযোগে অনশন ধর্মঘট করেন। তখন ভূপেন্দ্র কুমার বিলাশপুরে প্রেরিত হয়েছিলেন। সেখানে আটাত্তর দিন নিঃসঙ্গ অবস্থায় অনশন করেন। তাকে দেশের মধ্যে রাখা বিপজ্জনক মনে করে কিছুদিনের মধ্যে তাকে বার্মার ইনসিন জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯২০ সালে ছাড়া পাবার পরে দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। সংগঠনের ভিত্তি দৃঢ় ও প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী কিরণ মুখার্জীর সঙ্গে দৌলতপুরে সত্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। খুলনা সেনহাটের রবি রায় ও রসিক দাস এবং সেই সাথে চারু ঘোষ, কুন্তল চক্রবর্তী প্রমুখেরা সেই আশ্রমে যোগ দেন।
১৯২৩ সালে আবার তারা গ্রেফতার হন। ৫বছর পরে ১৯২৮ সালে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পরে সবাই কলকাতা কংগ্রেসের বিরাট অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ১৯৩০ এর এপ্রিলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সাথে সাথে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে এবং অন্যান্যদের সাথে ভূপেন্দ্র কুমার দত্তকে,  রাজশাহী কনফারেন্স থেকে ফেরার পথে গ্রেফতার করে। আবার দীর্ঘ আট বছর কারাবাসের পর ১৯৩৮ সালে মুক্তি পান। পুনরায় ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনের সময় ধরা পড়েন এবং ১৯৪৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কারাবাস করেন।

পাকিস্তানে অতিবাহিত সময়
দেশ বিভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তানে বাস করেন। দেশে এম.এল.এ ও পরে এম.পি হন। কিন্তু দেশে থাকা তার পক্ষে বেশীদিন আর সম্ভব হয়নি। কলকাতায় চলে যান।
ভারতে ফিরে আসা
কংগ্রেসের কাজে ও পড়াশুনা নিয়ে জীবনের শেষ কয়েকটি দিন কাটিয়ে দেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, বৃটিশ সরকার তার বিরুদ্ধে কখনো কোন মামলা দায়ের করেনি। তবু তাকে জীবনের ২৫ বছর বিনা বিচারে জেল খানায় কাটাতে হয়। কারণ বৃটিশ সরকার তাকে ভয়ঙ্কর বিপদজনক মনে করে বাইরে রাখতে ভয় পেত। 
এক সময় তিনি সাপ্তাহিক স্বাধীনতা পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
জন্ম
তিনি বাংলাদেশের যশোর জেলার ঠাকুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কৈলাশ চন্দ্র দত্ত পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলার ম্যানেজার ছিলেন। তার মাতা বিমলাসুন্দরী একজন দানশীল মহিলা ছিলেন। কমলিনী, যদুগোপাল, স্নেহলতা, সুপ্রভা নামে তার চার সহদোর ছিল।
একবার রামায়ণ পড়ার সময় সে লক্ষণের বীরত্বের কাহিনী জানতে পারে এবং ব্রহ্মচর্যে তার দখল সম্পর্কে পড়ে। এরপরে সে তার মার কাছ থেকে ব্রহ্মচর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে,  নিজে সেই পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে  বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম এবং ১৯০৫ সালের দেশ বিভাগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। 
উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য প্রথমে কলকাতায় স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯১৩ সালে দৌলতপুর হিন্দু একাডেমী কলেজ (পরবর্তীতে বি এল কলেজ)-এ চলে আসেন। এখানেই দেশ প্রেমিক অধ্যাপক শশীভূষণ রায় তাকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। ভূপেন্দ্র কুমার শরীরচর্চা এবং নানা রকম সেবা মূলক কাজের মাধ্যমে নিজেকে অত্যান্ত জনপ্রিয় করে তোলেন। শীঘ্রই তিনি বিপ্লবী দল গঠনে তৎপর হন। ঐ সময় বাঘা যতীন যশোর-ঝিনাইদহ রেললাইন নির্মাণের ঠিকাদারী কর্মসূত্রে যশোরে থাকার সময় মাঝে মাঝে তার বন্ধু দৌলতপুর কলেজের অধ্যাপক শশীভূষণ রায় ও শৈলেন মৌলিকদের সাথে দেখা করতে আসতেন। সেই সময় তার সাথে ভূপেন্দ্রের পরিচয় হয়। ঐ আমলে বিপ্লবী দলভূক্ত সতীশ সেনগুপ্ত অধ্যাপক হিসাবে এবং যশোর বনগাঁ নিবাসী ডাঃ অমুল্য চরণ উকিল ডাক্তার হিসাবে এই কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইতহিাসে তার অবদান
তার আত্মজীবনী মূলক লেখা -বিপ্লবের পদচিহ্ন।
Indian Revolution and the Constructive Programme