শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১৮

পুরীর জগন্নাথ মন্দির


     পুরীর জগন্নাথ মন্দির


     ফেসবুক থেকে অংশভাগ করেছেন               প্রণব কুমার কুণ্ডু





#আমরা সকলে জগন্নাথ পুরী সম্পর্কে কিছু না কিছু জানি আজ আপনাদের সামনে পুরীর এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করছি তা হয়তো অনেকেই জানেন না এক নজনে জেনে নিই কি সেই রহস্য.....🤔🤔🤔
১) আমরা জানি পুরীতে জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা দেবীর জন্য ৩টি রথ । কিন্তু শুনে অবাক হবেন যে, একসময় পুরীতে রথযাত্রার সময় ৬টি রথ ব্যবহৃত হত । প্রথম দিকে পুরীর মন্দির এবং মাসীমা মন্দিরের (গুন্ডিচা মন্দির) মধ্যবর্তী স্থানে একটি নদী প্রবাহিত হত । তাই নদীর এই পারে ৩টি রথ এবং ঐ পারে ৩টি রথ ব্যবহৃত হত, এই পারের মন্দির থেকে নদী পর্যন্ত এবং ঐ পারের নদী থেকে মাসীমা মন্দির পর্যন্ত রথগুলো ব্যবহৃত হত । মাঝখানে নদী পারাপারের জন্য একটি বিশাল নৌকা ব্যবহৃত হত যাতে ভগবান জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ থাকত ।
২) জগন্নাথ মন্দিরের একসময়কার বিখ্যাত ভজন গায়কের নাম ছিল মোহাম্মদ আজিজ । তিনি ভগবান জগন্নাথদেবকে সুমধুর ভজন শোনানোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন ।
৩) যীশুখ্রীষ্ট ভগবান জগন্নাথদেবকে অলক্ষ্যে দর্শন করার জন্য পুরী ভ্রমণ করেছিলেন । এর প্রমাণ পাওয়া যায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে মূল মন্দিরের পেছন দিকে একটি বিশাল আকৃতির ক্রুস অভিষিক্ত রয়েছে ।
৪) ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, ভগবান জগন্নাথদেব ও ভগবান বুদ্ধদেবের মধ্যেও এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল । এমনকি পুরীতে ভগবান বুদ্ধদেবের অনেক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় । অপরদিকে শিখদের ধর্মীয় গুরু নানকের কাছেও জগন্নাথদেব প্রিয় ছলেন ।
৫) মন্দিরে ভগবানকে সর্বোচ্চ ৫৬ প্রকার ভোগ নিবেদন করা হয় তা অনেকেরেই জানা । কিন্তু এটি হয়ত অজানা যে জগন্নাথকে কোন বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে সময় প্রতিদিন ৮৮ প্রকার ভোগ নিবেদন করা হয় এবং বিশেষ বড় বড় উৎসবের সময় এর চেয়েও বেশি ভোগ ভগবানকে নিবেদন করা হয় ।
৬) শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে যে ভোগমণ্ডপটি রয়েছে এটি প্রকৃতপক্ষে কর্ণাটক মন্দিরের অংশ, যেটি ১৮ শতাব্দীতে মারাঠা কর্তৃক মন্দিরটির কিছু অংশ ধ্বংস হয়েছিল পরবর্তীতে তার কিছু অংশ পুরী মন্দিরের ভোগমণ্ডপ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
৭) ‘অবধা’ অর্থাৎ ভগবান জগন্নাথদেবের অদ্ভুদ প্রসাদের নাম যে কেউ তৈরি করে না । নিজে নিজেই এই সুস্বাদু-কৃষ্ণ প্রসাদ তৈরি হয় । সবচেয়ে অবিশ্বাস্য যে, বিশাল আকৃতির চুল্লীতে একটির পর একটি বসানো মাটির তৈরি পাত্রে সব উপাদান দিয়ে বসিয়ে দিলে সবচেয়ে উপরের পাত্রটি প্রথমে তৈরি হয়ে যায় । অথচ প্রথা অনুযায়ী বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে নিচের পাত্রটিই আগুনের তাপে প্রথম তৈরি হওয়ার কথা । যা পুরী মন্দিরের অবিশ্বাস্য এক প্রাত্যাহিক ঘটনা । বলা হয় যে, এ প্রসাদ্গুলো স্বয়ং মহালক্ষ্মী রান্না করেন ।
৮) অনেকেই হয়ত জানেন জগন্নাথ পুরীর মন্দিরটি পুরাটাই মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন তৈরি করেছেন । কিন্তু সেই জানার মধ্যে ভুল আছে । প্রকৃতপক্ষে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন শুধু মূল মন্দিরটিই তৈরি করেছিলেন । পুরীর বাকি যেসব অবকাঠামো রয়েছে যেমন মেঘানন্দ পাচেরী, মুখ্য শালা, নাটমন্ডপ এবং অন্যান্য অবকাঠামো বা মন্দিরগুলো তৈরি করেছিল সময়ের আবর্তনে আগত বিভিন্ন রাজা এবং শাসকরা ।
৯) গর্ভ মুর, হল পুরী মন্দিরের সবচেয়ে অদ্ভুদ অংশ যেখানে ভগবানের সবরকমের মূল্যবান অলংকারসমূহ সংরক্ষণ রাখা হয় । এগুলো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যারা নিয়োজিত তারা হল কতগুলো বিষধর অদ্ভূত সাপ এবং স্বর্গীয় আত্মা ।
১০) অপরদিকে রত্ন মুর নামে মন্দিরে উপরের অংশটিতে একটি অদ্ভূত বৃহৎ চুম্বক শক্তি রয়েছে । যেটি মন্দিরকে ঝড়ো বা প্রবল দমকা হাওয়ার স্থির রাখতে বা কোন ধ্বংস হওয়া থেকে অদ্ভূতভাবে সুরক্ষা করে । বলা হয়ে থাকে যে, মাঝে মাঝে ঐ অংশে তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির বিশেষ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় । যা সত্যিই অদ্ভূত ।
১১) আপনি কি জানেন, রথযাত্রার সময় জগন্নাথ, বলদেব এবং সুভদ্রা দেবী যখন রথে আরোহন করে তখন সুদর্শন কোথায় অবস্থান করেন? অনেকেই বলবে জগন্নাথদেবের পাশে কিন্তু অদ্ভূত হলেও সত্য সুদর্শন জগন্নাথের পাশে না বরঞ্চ সুভদ্রা দেবীর পাশে অবস্থান করেন । তখন জগন্নাথের পাশে ‘মদনমোহন’ বিগ্রহ এবং বলদেবের দু’পাশে ‘রামচন্দ্র’ এবং ‘কৃষ্ণ’ এ দুটি পিতলের বিগ্রহ অবস্থান করেন ।
১২) জগন্নাথের সম্মুখে নৃত্য প্রদর্শনের জন্য একদল সেবিকা রয়েছে যাদেরকে দেবদাসী নামে অভিহিত করা হয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এসব সেবিকারদের ৯ বছর বয়সেই বিয়ে হয় স্বয়ং জগন্নাথের বিগ্রহের সঙ্গে । এরা নিজেদেরকে ভগবানের কাছে উৎসর্গ করে শুধুমাত্র এ নির্দিষ্ট সেবা নৃত্য প্রদর্শন করে । এ প্রথা স্বয়ং জগন্নাথদেবেরই নির্দেশে প্রচলিত । এক্ষেত্রে এর পিছনে একটি প্রাচীন সুন্দর কাহিনী রয়েছে । প্রতিদিন এসব দেবদাসী কিছু বিশেষ বিশেষ সময়ে ভগবানের সামনে তাদের নৃত্য প্রদর্শন করে থাকে । নৃত্য প্রদর্শনের সময় তারা দর্শকদের দিকে তাকাবে না । তাদের সকল মনোযোগ ভগবানকে কেন্দ্র করে । তাদের জন্য পুরুষ সঙ্গ নিষিদ্ধ ।
এভাবে যুগে যুগে জগন্নাথ পুরী সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময়ের এবং অদ্ভূত স্থান হিসেবে এই পৃথিবীতে অবস্থান করছে । এখনো মানুষ অবাক বিস্ময় জগন্নাথ এবং জগন্নাথ পুরীর অদ্ভূত সব কার্যকলাপের কথা শ্রবণ করে এবং স্বচক্ষে দর্শনের অভিলাষ করে ।

#ভুল হলে হ্মমা করবেন।🙏

রথ মেলার প্রচার হচ্ছে উর্দু ও ইংরেজি ভাষায়


      রথ মেলার প্রচার হচ্ছে উর্দু ও ইংরেজি ভাষায়



      ফেসবুক থেকে অংশভাগ করেছেন             প্রণব কুমার কুণ্ডু




Amartya Ghosh গোষ্ঠীটিতে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন: 💥ALL BENGAL RSS💥রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ💥

কোথায় আছি আমরা, আমাদের ভবিষ্যতই বা কি? কোথায় পৌছে দিতে চাইছে আমাদের বাংলার তৃণমুল প্রশাসন? আমাদের সংস্কার সংস্কৃতি আজ কোথায়?
তৃণমুল পরিচালিত হাওড়া পৌরসভা হাওড়ার শরৎ সদন এ রথযাত্রার প্রচারে আজ উর্দু এবং ইংরেজী, জায়গা পায়নি সেখানে বাংলা। উর্দুই কি তাহলে বাংলার ভাষা? রথযাত্রা টা কি উর্দু ভাষীদের উৎসব?
তৃণমুল প্রশাসন আজ কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে বঙ্গ সংস্কৃতিকে বুঝে দেখুন বাংলার হিন্দুরা।
সময় থাকতে এখন জাগুন, এখন না জাগলে সামনে মহা বিপদ..
এখন না জাগলে ভবিষ্যতে পশ্চিমবাংলা পরিণত হবে আরেকটা বাংলাদেশ এবং তারপর পাকিস্তানে..



Raju Sarkar


কোথায় আছি আমরা, আমাদের ভবিষ্যতই বা কি? কোথায় পৌছে দিতে চাইছে আমাদের বাংলার তৃণমুল প্রশাসন? আমাদের সংস্কার সংস্কৃতি আজ কোথায়?
তৃণমুল পরিচালিত হাওড়া পৌরসভা হাওড়ার শরৎ সদন এ রথযাত্রার প্রচারে আজ উর্দু এবং ইংরেজী,  জায়গা পায়নি সেখানে বাংলা।

উর্দুই কি তাহলে বাংলার ভাষা? রথযাত্রা টা কি উর্দু ভাষীদের উৎসব?

তৃণমুল প্রশাসন আজ কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে বঙ্গ সংস্কৃতিকে বুঝে দেখুন বাংলার হিন্দুরা।
সময় থাকতে এখনও জাগুন, এখনও না জাগলে সামনে মহা বিপদ..

এখন না জাগলে ভবিষ্যতে পশ্চিমবাংলা পরিণত হবে আরেকটা বাংলাদেশ এবং তারপর পাকিস্তানে..

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন


                  গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন



                  ফেসবুক থেকে অংশভাগ করেছেন                         প্রণব কুমার কুণ্ডু



শ্রীকৃষ্ণ গীতায় অর্জুনকে বলেছেন,
"সর্ব ধর্ম পরিত্যাগ করে আমার শরণাগত হও (১৮/৬৬) "। মহাভারত ৫ হাজার বছর আগে হয়ে থাকলে তখন তো আর ইসলাম, বৌদ্ধ, খিষ্টান এসব ধর্ম ছিলনা। এখানে শ্রীকৃষ্ণ কোন ধর্ম ত্যগ করার কথা বলছেন ?
উপরের এই প্রশ্নটি করেছে ‘মাধোবের মোহন বাঁশি’ নামে আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড। শুধু তারই নয়, এই ধরণের প্রশ্ন উঠে বা উঠতে পারে অনেকের মনেই, তাদের সবার জন্য এই পোস্টে দিলাম এই প্রশ্নের উত্তর:
ধর্ম বলতে এখানে ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এসব ধর্মকে বোঝানো হয় নি, আর এগুলো তো কোনো ধর্মই নয়, এগুলো একেকটি ব্যক্তিগত মতবাদ। কারণ, ধর্ম কোনো ব্যক্তি সৃষ্টি করতে পারে না, ধর্ম সৃষ্টি করতে পারে প্রকৃতি বা প্রকৃতি নামের ঈশ্বর। যেমন তিনি যখন পৃথিবীতে লোহা বা জলের সৃষ্টি করেছেন, তখনই সাথে সাথে লোহা বা জলের ধর্মও সৃষ্টি করে দিয়েছেন; এইভাবে জীব বা পদার্থ পদার্থ সৃষ্টির সাথে সাথে তাদের ধর্মও তিনি সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
ধর্ম হলো কোনো কিছুর গুন বা বৈশিষ্ট্য, যেমন- জলের ধর্ম হলো তারল্য এবং নিচের দিকে গমন করা এবং লোহার ধর্ম হলো কাঠিন্যতা। সেই রকম, বিবর্তনের ধারায় পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভবের হওয়ার পর এবং মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি পরিণত হওয়ার পর, মানুষের যে ধর্ম দাঁড়ায়, সেটা হলো পরের সম্পদ এবং পরের নারীর দিকে চোখ না দেওয়া, যে কথা বলা আছে হিন্দু শাস্ত্রে, এই ভাবে-
“পরদ্রবেষ্যু লোষ্ট্রবৎ”
অর্থাৎ, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলা বিবেচনা করবে।
এবং
“মাতৃবৎ পরদারেষু, কন্যাবৎ পরকন্যাষু”
অর্থাৎ, পরের স্ত্রী কন্যাদের মায়ের মতো দেখবে।
পৃথিবীতে সকল প্রকার অপরাধের মূলে হলো এই দুই জিনিস- পরের সম্পদ ও নারী। হিন্দু শাস্ত্রে এই দুটির দিকেই তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে, তার মানে এটা মেনে চললেই কোনো ব্যক্তিকে আর কোনো ধরণের অপরাধ করতে হবে না এবং যারা প্রকৃতপক্ষে মানুষ, তারা সব সময় এই নীতিটি মেনে চলে, তার মানে সে সনাতনী কালচার পালন করে।
এছাড়াও বেদব্যাসের মতে মানুষের ধর্ম হলো-
“পরোপকারঃ পুন্যায়, পাপায় পরপীড়নম্।”
অর্থাৎ, অন্যের উপকার করা ধর্ম, অন্যের উপকার করা অধর্ম।
এগুলোই হলো মানুষের ধর্ম। প্রতটি মানুষ সাধারণভাবে হিন্দু বা সনাতন ধর্মের এই রীতিগুলো মেনে চলে বলেই সনাতন ধর্মকে বলা হয় সনাতন মানব ধর্ম। তাই সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে,
“সনাতন মানবধর্মমূলং হি প্রকৃতি”
অর্থাৎ, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সনাতন ধর্ম নিয়েই জন্মগ্রহণ করে বা মানুষের ধর্ম হোক সনাতন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় যখন গীতার বাণী আসে, তখন পৃথিবীতে মানুষের ধর্ম ছিলো একটি ই, তা সনাতন এবং এখনও আছে একটি ই, তা সনাতন। ইসলাম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা আরও নানা জনের নামে যা চলছে, তা কোনো ধর্ম নয়, সেগুলো ব্যক্তিগত মতবাদ যা উপরে বলেছি। মানুষের ধর্ম একটি ই তা হলো মানব ধর্ম বা সনাতন মানব ধর্ম। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে গীতার মধ্যে,
“সর্বধর্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ” দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ কী বললেন ?
এই বিষয়টি বুঝতে হলে, তার আগে বুঝতে হবে গীতার ১৮ অধ্যায়েরই আরও দুইটি শ্লোকের অর্থ।
গীতার ১৮/৭ এর প্রথম শ্লোকে বলা আছে,
‘নিয়তস্য তু সন্ন্যাসঃ কর্মণো নোপপদ্যতে’
অর্থাৎ, নিত্যকর্ম বা স্বধর্ম বলে যার যে কর্ম নির্দিষ্ট আছে, তার সেই কর্ম ত্যাগ করা অনুচিৎ।
আবার, ১৮/৪৭ এর প্রথম শ্লোকে বলা আছে,
“শ্রেয়ান্ স্বধর্ম বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ”
অর্থাৎ, স্বধর্ম বা নিজের কাজ দোষ বিশিষ্ট হলেও তা উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম বা অন্য জাতির কাজ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
এই দুই শ্লোকে নিত্যকর্ম বলতে বোঝানো হয়েছে স্বধর্মকে এবং স্বধর্ম বলতে বোঝানো হয়ে নিজের কাজকে।
পৃথিবীতে সভ্যতার সূচনা লগ্ন হতেই চার শ্রেণির মানুষ রয়েছে, গীতার মাধ্যমে যাকে প্রকাশ করা হয়েছে- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র হিসেবে। মানুষের এই বর্ণ বিভাজন সমাজের জন্য বাস্তব; কারণ, তা না হলে সমাজ চলবে না। এই সমাজে যেমন শিক্ষকরূপী ব্রাহ্মণের দরকার, তেমনি রাজনৈতিক নেতা ও তাদের অনুগত বাহিনী রূপ ক্ষত্রিয়ও দরকার, এরপর সকলের জন্য খাদ্য ও অর্থ সরবরাহের জন্য দরকার স্বাধীন পেশায় নিযুক্ত কৃষক এবং ব্যবসায়ী, যাদের বলা হয় বৈশ্য এবং উপরের তিন শ্রেণিকে সেবা প্রদানের জন্য দরকার চাকর রূপ শুদ্র।
সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে এভাবেই সমাজ চলছে এবং শেষ পর্যন্ত এভাবেই চলবে। গীতায় জাতি বিভাজন বলতে এই চার শ্রেণিকেই বোঝানো হয়েছে এবং নিত্যকর্ম বা স্বধর্ম বলতে এদের নিজস্ব কাজকেই বোঝানো হয়েছে।
তাই গীতার ১৮/৭, এ
‘নিয়তস্য তু সন্ন্যাসঃ কর্মণো নোপপদ্যতে’
বলতে বোঝানো হয়েছে- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র, যার জন্য যে কাজ নির্দিষ্ট আছে তার সেই কাজ ত্যাগ করা চলবে না, অর্থাৎ তাকে তার কাজটাই ঠিকভাবে করে যেতে হবে।
আবার ১৮/৪৭ এ,
“শ্রেয়ান্ স্বধর্ম বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ”
বলতে বোঝানো হয়েছে, নিজের সেই কাজ দোষ বিশিষ্ট হলেও উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম বা অন্য জাতির কাজ অপেক্ষা তা শ্রেষ্ঠ, সুতরাং সেই কাজ তাকে করে যেতেই হবে।
এভাবে সবসময়, যার যে কাজ, তাকে সেই কাজ করতেই গীতাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বা উৎসাহিত করা হয়েছে।
গীতার সূত্রানুযায়ী, অর্জুনের জন্ম ক্ষত্রিয় হিসেবে, তাই শ্রীকৃষ্ণ তাকে বার বার তার ক্ষত্রিয়ের ধর্মকে স্মরণ করিয়ে দিৎয়ে তাকে নির্দেশ দিয়েছে যুদ্ধ করতে; কারণ, তার যুদ্ধ করার উপরই নির্ভর করছিলো অধর্মকে বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার বিষয়।
এছাড়াও ধর্ম মানে হলো মত বা পথ। এজন্যই রামকৃষ্ণ দেব বলেছেন, ‘যত মত তত পথ’। তার এই বাণী অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কে ছিলো না, ছিলো সনাতন ধর্মেরই নানা মত পথের ব্যাপারে।
কিন্তু আমাদের সেকুলাররা তার এই বাণীর ভুল ব্যাখ্যা করে ‘যত মত তত পথ’ বলতে সনাতন ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যক্তিমতগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে বা করে এবং এসব ব’লে, সনাতন ধর্মের মতো সকল ধর্মই সমান ব’লে প্রচার করে হিন্দু ছেলে মেয়েদেরকে বিভ্রান্ত ক’রে অন্যান্য ধর্মের দিকে ঠেলে দিয়ে হিন্দু সমাজের সর্বনাশ করেছে বা করছে। কারণ, যখন আপনার ছেলে মেয়েক রামকৃষ্ণ মিশনে নিয়ে গিয়ে এটা শেখাবেন যে, সকল ধর্মই সত্য, আর এটা শিখে যখন আপনার ছেলে মেয়ে কোনো মুসলমান বা খ্রিষ্টানকে বিয়ে করে মুসলমান বা খ্রিষ্টান হয়ে যাবে, তখন তাকে কি আপনি তাকে দোষ দিতে পারবেন ? পারবেন না। সুতরাং যারা সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে, রামকৃষ্ণ মিশনের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে শুধু সাবধান নয়, ১০০ গজ দূরে থাকুন। কারণ, এরা আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
যা হোক, এই ‘যত মত তত পথ’ এর উৎপত্তি, হিন্দু সমাজের বহু দেব-দেবীর কারণে। এই কারণে কেউ কালীর ভক্ত, কেউ শিবের ভক্ত, কেউ দুর্গার ভক্ত, কেউ বিষ্ণুর ভক্ত, এভাবে সবাই কোনো না কোনো কিছুর ভক্ত। কেউ আবার কালীর ভক্তের ভক্ত অর্থাৎ রামকৃষ্ণদেবের ভক্ত, আবার কেউ কৃষ্ণের ভক্তের ভক্ত অর্থাৎ চৈতন্যদেবের ভক্ত। এই সব নানা মত পথ বা নানা ধর্মকে ত্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে বলেছেন, তুমি শুধু আমারই আশ্রয় নাও, অন্য আর কিছুরই আর প্রয়োজন নেই। এজন্য শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে তার বিশ্বরূপ প্রদর্শন করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, সকল দেব-দেবীর আশ্রয় তার মধ্যেই এবং গীতাতেও বলেছেন, কোনো দেব-দেবী, তার ইচ্ছা ছাড়া তার ভক্তদের জন্য কিছুই করতে পারে না (৭/২১,২২)। মূলত “সর্বধর্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ” বলতে শ্রীকৃষ্ণ, সকল দেব-দেবীকে ছেড়ে তারই শরণ নেওয়ার কথা বলেছেন এবং স্বধর্ম বলতে চার শ্রেণির মানুষের যেই কাজ, সেই কাজকে বুঝিয়েছেন।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ
--------------------------------------

পরিশিষ্ট :

এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা পরিষ্কারভাবে মনে রাখা দরকার যে, জন্মসূত্রে কেউ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র নয়; জন্ম সূত্রে সবাই সনাতনী। জন্মের পর গুরুগৃহে বা আজকের স্কুল কলেজে শিক্ষালাভের পর তা্র নিজ যোগ্যতা অনুসারে, সে লাভ করে তার স্ট্যাটাস অর্থাৎ সে হয়ে উঠে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শুদ্র এবং এই স্ট্যাটাস লাভের পর নির্ণীত হয় তার কর্ম এবং সেই কর্মই তার জন্য নিত্যকর্ম বা স্বধর্ম। সকল পরিস্থিতিতেই প্রত্যেক্যের স্বধর্ম ঠিকঠাকভাবে পালনের জন্য শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে খুব জোরালোভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
সেই সাথে এটাও আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, পৃথিবীতে ধর্ম একটাই, আর সেটা হলো সনাতন ধর্ম বা সনাতন মানব ধর্ম, যার বর্তমান নাম হিন্দু ধর্ম। পৃথিবীতে কোনো কালে আর কোনো ধর্ম ছিলো না বা ভবিষ্যতে থাকবেও না; আছে বা থাকবে হয়তো কিছু ব্যক্তিগত মতবাদ, যাকে ধর্ম বলে কিছু লোক চালাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হয়তো চালাবে; এই ব্যক্তিমতগুলো কখনোই ধর্ম নয়, তাই গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যে বলেছেন, “সর্বধর্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ” এখানে ইসলাম, খ্রিষ্টান বৌদ্ধধর্মের মতো ব্যক্তিমতের ধর্মের কথা যে বলা হয় নি, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ মনে রাখার দরকার নাই।
আবারও
জয় হিন্দ।

From: Krishna kumar das

💜 জয় হোক সনাতনের 💜

এখন রথ মেলার প্রচার হচ্ছে উর্দু ও ইংরেজি ভাষায়


                    এখন রথ মেলার প্রচার হচ্ছে উর্দু ও ইংরেজি ভাষায়


                   ফেসবুক থেকে অংশভাগ করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু


Ram Lala Sath গোষ্ঠীটিতে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন: 💥ALL BENGAL RSS💥রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ💥


এবার উর্দুই কি হবে আগামীতে পশ্চিমবঙ্গের মাতৃভাষা ?


সিঁদু-কানুর সংগ্রামের ইতিহাস


      সিঁদু-কানুর সংগ্রামের ইতিহাস


      শেয়ার করেছেন           প্রণব কুমার কুণ্ডু




Rajib Roy Choudhury    ফেসবুক থেকে


সিঁদু-কানুর সংগ্রামের ইতিহাস আজও চরম অবহেলিত কেন ? শুধু আদিবাসী বলে ?
ছত্রপতি শিবাজী, রানা প্রতাপ, সুভাষ চন্দ্র, গান্ধি, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম ইত্যাদি ছোট-বড় দেশ নায়কদের কাহিনী ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও বীর নায়ক সিঁদু-কানুর সংগ্রামের ইতিহাস ও সাঁওতাল বিদ্রোহের কথা আজও বড় অবহেলা, অনাদরে রয়ে গেল। অথচ শোষন, বঞ্চনা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে মহান সিঁদু-কানু সহ আদিবাসীদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ শুধু ভারতের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা।সাঁওতাল বিদ্রোহ ইংরেজদের বিরুদ্ধে হলেও এটা ছিল মূলত উচ্চবর্ণীয় জমিদার, জোতদার, অসৎ ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে। কেন এই বিদ্রোহ তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো ---
বাংলা, বিহার, উড়িশার সবচেয়ে বড় উপজাতি ছিলেন সাঁওতালরা। পতিত, অনাবাদী জমি কঠোর শ্রম দিয়ে সাঁওতালরা আবাদি ও উর্বর করে তোলেন।ফলে এদের হাতে ছিল নিজস্ব জমি- জায়গা।দীর্ঘদিন ধরে সাঁওতালরা এই অঞ্চলে সুখে শান্তিতে নিজেদের সমাজ ও সংস্কৃতিকে নিয়ে বসবাস করছিলেন।কিন্তু 1793 সালে "চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে"র ফলে সাঁওতালদের জমি তথাকথিত উচ্চবর্ণের জমিদার, জোতদারদের হাতে চলে যায়।ফলে সরল সাঁওতালদের উপর শুরু হয় উচ্চবর্ণের জমিদার, জোতদারদের শোষন ও অত্যাচার। অবশেষে শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা জমিচ্যুত ও ভূমিচ্যুত হয়ে বিহারের হাজারিবাগ, মানভূম, ছোটনাগপুর, পালামৌ, ওড়িশা থেকে বাংলা ও বিহারের সীমান্তবর্তী পার্বত্য এলাকা "দামিন-ই-কোহি" অঞ্চলে চলে আসেন এবং বিহারের ভাগলপুর থেকে বাংলার বীরভূম পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন।তাঁরা পুনরায় আবার অমানবিক পরিশ্রমে জঙ্গল পরিস্কার করে বসতি স্থাপন করেন এবং পতিত জমি চাষ-আবাদ করে সোনার ফসল ফলিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। কিন্তু চির বঞ্চিত, চির অবহেলিত সাঁওতালদের জীবনে এই সুখ বেশীদিন স্থায়ী হল না। তাদের ভাগ্যাকাশে আবার নেমে এলো উচ্চবর্ণীয় জমিদার, জোতদার, সুদখোর মহাজনদের অত্যাচার, শোষনের ভয়ঙ্কর কালো মেঘ।এই নতুন অঞ্চলে পুনরায় আবার জমিদারেরা সাঁওতালদের উপর উচ্চহারে খাজনা চাপায়।খাজনা না দিতে পেরে সাঁওতালরা সুদখোর মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে সর্বশান্ত হতে থাকেন। ধীরে ধীরে একদিকে যেমন জমির মালিকানা হারাতে থাকেন, অপর দিকে উচ্চবর্ণীয় জমিদার ও তার কর্মচারী, জোতদার, মহাজনদের দ্বারা সাঁওতাল নারীদের ইজ্জত-সম্মানের উপর এবং আদিবাসী সংস্কৃতির উপর আঘাত নেমে আসে। এই সকল কারনে আদিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।কিন্তু এবার সরল প্রান সাঁওতালরা এই অঞ্চল ছেড়ে চলে না গিয়ে উচ্চবর্ণীয় জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে রুক্ষে দাঁড়ালেন।আর সমগ্র বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলেন মহান বীর সংগ্রামী সিঁদু-কানু দুই ভাই সহ চাঁদ মুর্মু, ভৈরব মুর্মু, ডোমন মাঝি প্রমুখ।1855 সালের 30 জুন "হুল" ঘেষনা হল।এই বিদ্রোহে সাঁওতালদের সঙ্গে সমগ্র আদিবাসী সমাজ সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কামার, কুমার, তাঁতি, ছুঁতার, দরিদ্র মুসলমান সহ নিন্মবর্ণের প্রান্তিক কৃষকেরা যোগদান করেন।
এই বিদ্রোহে সিঁদু-কানুর নেতৃত্বে আদিবাসীদের কাছে প্রথমে তিন বার জমিদার, জোতদাররা চূড়ান্ত পরাজিত হয়। পরাজিত হয়ে অবশেষে তারা আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের ভুল বুঝিয়ে ও মিথ্যা কথা বলে তাদের পক্ষে এনে ইংরেজদের দিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ করায়। তা সত্বেও জমিদার, জোতদার ও ইংরেজদের যৌথ বাহিনীর মেজর "বরোজ" সিঁদু-কানুর নেতৃত্বে আদিবাসীদের কাছে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হয়। অবশেষে এর পরের যুদ্ধে বিশাল ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে আদিবাসীরা পরাজিত হন। কিন্তু এই জয় তারা সহজে পায়নি।দীর্ঘ এক বছর পাঁচ মাসের এই যুদ্ধে ইংরেজদের হাতি-ঘোড়া সমন্বিত, আধুনিক কামান, বন্দুক সুসজ্জিত বিশাল বাহিনীর কাছে সাঁওতালরা পরাজিত হন।তবে এটা মূলত যুদ্ধ ছিল না, ছিল হিংসাত্বক হত্যালীলা।ঐ সকল বিস্তীর্ণ আদিবাসী অঞ্চলের পথ-ঘাট রক্তে ভিজে গিয়েছিল, যেখানে সেখানে আদিবাসী নর-নারী-শিশুর লাস পড়ে ছিল।পুড়ানো বা কবর দেওয়ারও কেউ ছিল না। 175 টি আদিবাসী গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। প্রায় 33 হাজার আদিবাসী সাঁওতাল এই যুদ্ধে নিহত হয়। সিঁদুকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় এবং কানু,চাঁদ ও ভৈরব মুর্মু সহ অন্যান্যদের ফাঁসি দেওয়া হয়। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও গবেষক ভিনসেন্ট স্মিথ তাঁর "History of India" গ্রন্থে বলেছেন --" পৃথিবীর ইতিহাস খুঁজলেও এমন নৃশংস, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কথা জানা যায় না। এটি যুদ্ধ ছিল না, ছিল হত্যালীলা। স্বাধীনতার এই যুদ্ধে যত সংখ্যক আদিবাসী নর-নারী শহীদ হয়েছে, ভারতের সমগ্র স্বাধীনতার যুদ্ধেও তার অর্ধেক সংখ্যক মানুষ শহীদ হয়নি" ( পাতা- 226)।
ভারতের প্রথম স্বাধীনতার আন্দোলন ও গনসংগ্রামের নাম সাঁওতাল বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ ছিল আদিবাসী ভূমিপুত্রদের "জমি রক্ষার" আন্দোলন বা "কৃষক আন্দোলন"। 2009 সালের 31 মার্চ থেকে 2-রা এপ্রিল জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিত "রাষ্ট্রসংঘে"র বাৎসরিক অধিবেশনে ভারতের আদিবাসী জনজাতিদের নিয়ে বিশেষ আলোচনা চক্র চলে।সেখানে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব বান্ কি মুন "সাওতাল বিদ্রোহ" নিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য রাখেন -- যার ফলে এই বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে বিশ্বে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।তিনি বলেন --" সাঁওতাল বিদ্রোহ শুধু মাত্র ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে সীমিত নেই। ইহা ছিল পৃথিবীর প্রথম সর্ববৃহৎ 'কৃষক বিদ্রোহ"(RU-32/G)। রাষ্ট্রসংঘের এই অধিবেশনে ঘোষনা হয়--- "সাঁওতাল বিদ্রোহে নিহত শহীদদের সম্মানে প্রতিবছর রাষ্ট্রসংঘের সদর দপ্তর সহ 184 টি রাষ্ট্রসংঘ অন্তর্ভূক্ত দেশ 'হুল দিবস' পালন করবে"। সেই মতো 2010 সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘের 184 টি দেশ 'হুল দিবস' সম্মানের সহিত পালন করে। কিন্তু খুবই দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, এইসব সংবাদ ভারতের মনুবাদী রাজনৈতিক দলগুলি ও মনুবাদী মিডিয়া প্রচার প্রসারের আলোকে তো আনেই না বরং যতটা সম্ভব চেপে রাখার চেষ্টা করে।
সাঁওতাল বিদ্রোহে আদিবাসী নারীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহন করেন এবং পুরুষদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সমানে যুদ্ধ করেন।নেতৃত্ব দেন সিঁদু কানুর বোন ফুলমনি।এই বিদ্রোহে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অত্যাচার নেমে আসে সাঁওতাল নারীদের উপর।প্রায় 12 হাজার মহিলা ও যুবতী ধর্ষিতা হন এবং তিন হাজার নারী ধর্ষন সহ খুন হন। তাই প্রখ্যাত ঐতিহাসিক জন মিল তাঁর "History of British India" গ্রন্থে বলেন -- "ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে সাঁওতাল নারীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ইতিহাসে তারা বঞ্চিত ও অনাদৃত রয়ে গেল। ফুলমনির আত্মত্যাগের কথা ভুলবার নয়" (পাতা- 163)। তাই নিদারুন দুঃখ ও বেদনার সাথে বলতে হয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা, সরোজিনী নাইডু ইত্যাদিদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা হলেও ফুলমনিদের কথা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে, পাঠ্যপুস্তকে কোথাও ঠাঁই পায় নি। শুধু আদিবাসী বলে ? বর্ণবাদী ভারতবর্ষ আদিবাসীদের সম্মান না জানালেও সারা বিশ্ব কিন্তু তাদের সে সম্মান জানিয়েছেন। 2010 সালের 2-রা মে অক্সফোড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক গবেষনা মূলক আলোচনা অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ ঘোষনা করেন --" সাঁওতাল বিদ্রোহ প্রথম 'গন-নারী আন্দোলন হিসাবে খ্যাত"(সূত্র- অক্সফোড নিউজ, মে মাস সংখ্যা, 2010)।
তাই বড়ো দুঃখের সাথে বলতে হয়, সাঁওতাল বিদ্রোহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও স্বাধীনতার 71 বছরে বর্ণবাদী শাসক ও মনুবাদী রাজনৈতিক দলগুলি এই বিদ্রোহকে প্রচারের আলো থেকে অনেকদূরে সরিয়ে রেখেছে।তাইতো ভারতের ব্রাহ্মন্যবাদী ঐতিহাসিকেরা সাঁওতাল বিদ্রোহ ও সিঁদু-কানু-ফুলমনির কথা তুলে ধরে না, পাঠ্যপুস্তকেও এদের কথা অত্যন্ত অবহেলায়, যৎসামান্য তুলে ধরা হয়।এখনো পর্যন্ত এদের নামে সরকার কোন মেমোরিয়াল, মিউজিয়াম, গবেষনাগার গড়ে তোলে নি।সবচেয়ে বড় যন্ত্রনার কথা হলো, সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মৃতিচিহ্ন গুলি উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ও অবহেলায় সমস্ত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আদিবাসীরা সিঁদু-কানুর সেই সংগ্রাম ও আদর্শ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন। আজ থেকে দেড়শ বছর আগে ভারতের মাটিতে সর্বপ্রথম উচ্চবর্ণের জমিদার, জোত দারদের বিরুদ্ধে "জমি রক্ষার" আন্দোলনে ও নারীর সম্মান বাঁচাতে আদিবাসীরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।বিখ্যাত ঐতিহাসিক-গবেষক অনীল শীল তাঁর 'নিন্ম বর্ণের ইতিহাস' গ্রন্থে বলেছেন --" ভারতের প্রথম জমিরক্ষা আন্দোলনের নাম সাঁওতাল বিদ্রোহ "। অথচ বর্তমান কালে শিল্প-কলকারখানার নামে, মিথ্যা উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের জমি নির্বিচারে দখল হয়ে যাচ্ছে। আর দিনের পর দিন আদিবাসী ভূমিপুত্ররা নীরব দর্শক হয়ে উচ্চবর্ণের রাজনৈতিক দল গুলির মুখের দিকে চেয়ে আছে।অথচ সংবিধানের 46, 288, 338, 339, 340 নং ধারায় বাবা সাহেব ডঃ বি. আর. আম্বেদকর আদিবাসীদের " জমি-অরন্য ও সম্মান " রক্ষার অধিকার পরিস্কার ভাবে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন।অথচ উচ্চবর্ণের শাসকদের কাছ থেকে সেই অধিকার ভারতের মূলনিবাসী বহুজনেরা বুঝে নিতে পারছে না। উচ্চবর্ণের কুৎসা ও মিথ্যা প্রচারের ফলে "অরন্যের অধিকার" আজ তাঁরা হারাতে বসেছে। তাই এখন দরকার সিঁদু-কানুর মতো অকুতোভয় বীর নেতার আবির্ভাব, যিনি সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আদিবাসী-বহুজনদের সমস্ত অধিকার ফিরিয়ে আনবেন।।

( লেখক -- প্রশান্ত রায়)



বিবেকানন্দ



     বিবেকানন্দ


     শেয়ার করেছেন                     প্রণব কুমার কুণ্ডু



Himadri Barman   ফেসবুক থেকে


********************************************
৪ঠা জুলাই, ১৯০২ শুক্রবার ::
********************************************

ভোরবেলা ঘুম ভাঙল বিবেকানন্দের । তাকালেন ক্যালেন্ডারের দিকে । আজই তো সেই দিন । আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। আর আমার দেহত্যাগের দিন। মা ভুবনেশ্বরী দেবীর মুখটি মনে পড়ল তাঁর। ধ্যান করলেন সেই দয়াময় প্রসন্ন মুখটি। বুকের মধ্যে অনুভব করলেন নিবিড় বেদনা।
তারপর সেই বিচ্ছেদবেদনার সব ছায়া সরে গেল ।
ভারী উৎফুল্ল বোধ করলেন বিবেকানন্দ। মনে নতুন আনন্দ, শরীরে নতুন শক্তি । তিনি অনুভব করলেন, তাঁর সব অসুখ সেরে গিয়েছে। শরীর ঝরঝর করছে । শরীরে আর কোনো কষ্ট নেই।
মন্দিরে গেলেন স্বামীজি । ধ্যানমগ্ন উপাসনায় কাটালেন অনেকক্ষন । আজ সকাল থেকেই তাঁর মনের মধ্যে গুন গুন করছে গান । অসুস্থতার লক্ষন নেই বলেই ফিরে এসেছে গান, সুর, আনন্দ । তাঁর মনে আর কোনও অশান্তি নেই । শান্ত , স্নিগ্ধ হয়ে আছে তাঁর অন্তর।
উপাসনার পরে গুরুভাইদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে করতে সামান্য ফল আর গরম দুধ খেলেন ।
বেলা বাড়ল। সাড়ে আটটা নাগাদ প্রেমানন্দকে ডাকলেন তিনি। বললেন, আমার পুজোর আসন কর ঠাকুরের পূজাগৃহে । সকাল সাড়ে নটায় স্বামী প্রেমানন্দও সেখানে এলেন পূজা করতে । বিবেকানন্দ একা হতে চান ।
প্রেমানন্দকে বললেন‚ আমার ধ্যানের আসনটা ঠাকুরের শয়নঘরে পেতে দে ।
এখন আমি সেখানে বসেই ধ্যান করব ।
অন্যদিন বিবেকানন্দ পুজোর ঘরে বসেই ধ্যান করেন ।
আজ ঠাকুরের শয়নঘরে প্রেমানন্দ পেতে দিলেন তাঁর ধ্যানের আসন ।চারদিকের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিতে বললেন স্বামীজি ।
বেলা এগারোটা পর্যন্ত ধ্যানে মগ্ন রইলেন স্বামীজি । ধ্যান ভাঙলে ঠাকুরের বিছানা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে বেরিয়ে এলেন তিনি --
মা কি আমার কালো,
কালোরূপা এলোকেশী
হৃদিপদ্ম করে আলো ।
তরুন সন্ন্যাসীর রূপের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে গুরুভাইরা ।
বেলা সাড়ে এগারোটার মধ্যেই দুপুরের খাওয়া সারতে বললেন বিবেকানন্দ । আজ নিজে একলা খাচ্ছেন না । খেতে বসলেন সবার সঙ্গে।
সকালবেলা বেলুড়ঘাটে জেলেদের নৌকো ভিড়েছিল । নৌকোভর্তি গঙ্গার ইলিশ । স্বামীজির কানে খবর আসতেই তিনি মহাউত্‍সাহে ইলিশ কিনিয়েছেন । তাঁরই আদেশে রান্না হয়েছে ইলিশের অনেকরকম পদ । গুরুভাইদের সঙ্গে মহানন্দে ইলিশভক্ষনে বসলেন বিবেকানন্দ । তিনি জানেন, আর মাত্র কয়েকঘন্টার পথ তাঁকে পেরোতে হবে । ডাক্তারের উপদেশ মেনে চলার আর প্রয়োজন নেই। জীবনের শেষ দিনটা তো আনন্দেই কাটানো উচিত।
'একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে। ঘটিবাটিগুলোও খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ।' বললেন স্বামীজি । পেট ভরে খেলেন ইলিশের ঝোল, ইলিশের অম্বল, ইলিশ ভাজা ।
দুপুরে মিনিট পনেরো বিছানায় গড়িয়ে নিয়ে প্রেমানন্দকে বললেন, সন্ন্যাসীর দিবানিদ্রা পাপ। চল, একটু লেখাপড়া করা যাক । বিবেকানন্দ শুদ্ধানন্দকে বললেন‚ লাইব্রেরি থেকে শুক্লযজুর্বেদটি নিয়ে আয় ।
তারপর হঠাৎ বললেন‚ এই বেদের মহীধরকৃতভাষ্য আমার মনে লাগে না।
আমাদের দেহের অভ্যন্তরে মেরুদণ্ডের মধ্যস্থ শিরাগুচ্ছে‚ ইড়া ও পিঙ্গলার মধ্যবর্তী যে সুষুন্মা নাড়িটি রয়েছে‚ তার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা আছে তন্ত্রশাস্ত্রে । আর এই ব্যাখ্যা ও বর্ণনার প্রাথমিক বীজটি নিহিত আছে বৈদিক মন্ত্রের গভীর সংকেতে । মহীধর সেটি ধরতে পারেননি ।
বিবেকানন্দ এইটুকু বলেই থামলেন ।
এরপর দুপুর একটা থেকে চারটে পর্যন্ত তিনঘন্টা স্বামীজী লাইব্রেরী ঘরে ব্যাকরণ চর্চা করলেন ব্রহ্মচারীদের সঙ্গে ।
তিনি পাণিনির ব্যাকরণের সূত্রগুলি নানারকম মজার গল্পের সঙ্গে জুড়ে দিতে লাগলেন ।
ব্যাকরণশাস্ত্রের ক্লাস হাসির হুল্লোড়ে পরিণত হল ।
ব্যাকরনের ক্লাস শেষ হতেই এক কাপ গরম দুধ খেয়ে প্রেমানন্দকে সঙ্গে নিয়ে বেলুড় বাজার পর্যন্ত প্রায় দু মাইল পথ হাঁটলেন ।
এতটা হাঁটা তাঁর শরীর ইদানিং নিতে পারছে না । কিন্তু ১৯০২ এর ৪ ঠা জুলাইয়ের গল্প অন্যরকম । কোনও কষ্টই আজ আর অনুভব করলেন না।
বুকে এতটুকু হাঁফ ধরল না । আজ তিনি অক্লেশে হাঁটলেন । বিকেল পাঁচটা নাগাদ মঠে ফিরলেন বিবেকানন্দ । সেখানে আমগাছের তলায় একটা বেঞ্চি পাতা । গঙ্গার ধারে মনোরম আড্ডার জায়গা । স্বামীজির শরীর ভাল থাকে না বলে এখানে বসেন না।আজ শরীর -মন একেবারে সুস্থ । তামাক খেতে খেতে আড্ডায় বসলেন বিবেকানন্দ ।
আড্ডা দিতে দিতে ঘন্টা দেড়েক কেটে গেল । সন্ধ্যে সাড়ে ছ'টা হবে । সন্ন্যাসীরা কজন মিলে চা খাচ্ছেন। স্বামীজি এক কাপ চা চাইলেন ।
সন্ধ্যে ঠিক সাতটা। শুরু হলো সন্ধ্যারতি । স্বামীজি জানেন আর দেরি করা চলবে না । শরীরটাকে জীর্ন বস্ত্রের মতো ত্যাগ করার পরমলগ্ন এগিয়ে আসছে ।
তিনি বাঙাল ব্রজেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন । ব্রজেন্দ্রকে বললেন , 'আমাকে দুছড়া মালা দিয়ে তুই বাইরে বসে জপ কর । আমি না ডাকলে আসবি না ।'
স্বামীজি হয়তো বুঝতে পারছেন যে এটাই তাঁর শেষ ধ্যান ।
তখন ঠিক সন্ধ্যে সাতটা পঁয়তাল্লিশ । স্বামীজি যা চেয়েছিলেন তা ঘটিয়ে দিয়েছেন । ব্রজেন্দ্রকে ডাকলেন তিনি । বললেন , জানলা খুলে দে । গরম লাগছে ।
মেঝেতে বিছানা পাতা । সেখানে শুয়ে পড়লেন স্বামীজি । হাতে তাঁর জপের মালা ।
ব্রজেন্দ্র বাতাস করছেন স্বামীজিকে । স্বামীজি ঘামছেন । বললেন , আর বাতাস করিসনে । একটু পা টিপে দে । রাত ন'টা নাগাদ স্বামীজি বাঁপাশে ফিরলেন । তাঁর ডান হাতটা থরথর করে কেঁপে উঠল । কুন্ডলিনীর শেষ ছোবল । বুঝতে পারলেন বিবেকানন্দ । শিশুর মতো কাঁদতে লাগলেন তিনি । দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । গভীর সেই শ্বাস । মাথাটা নড়ে উঠেই বালিশ থেকে পড়ে গেল । ঠোঁট আর নাকের কোনে রক্তের ফোঁটা । দিব্যজ্যোতিতে উজ্জ্বল তাঁর মুখ । ঠোঁটা হাসি ।
ঠাকুর তাঁকে বলেছিলেন , 'তুই যেদিন নিজেকে চিনতে পারবি সেদিন তোর এই দেহ আর থাকবে না ।'
স্বামীজি বলেছিলেন , 'তাঁর চল্লিশ পেরোবে না।'
বয়েস ঠিক উনচল্লিশ বছর পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন ।
পরের দিন ভোরবেলা ।
একটি সুন্দর গালিচার ওপর শায়িত দিব্যভাবদীপ্ত‚ বিভূতি-বিভূষিত‚ বিবেকানন্দ ।
তাঁর মাথায় ফুলের মুকুট ।
তাঁর পরনে নবরঞ্জিত গৈরিক বসন ।
তাঁর প্রসারিত ডান হাতের আঙুলে জড়িয়ে আছে রুদ্রাক্ষের জপমালাটি ।
তাঁর চোখদুটি যেন ধ্যানমগ্ন শিবের চোখ‚ অর্ধনিমীলিত‚ অন্তর্মুখী‚ অক্ষিতারা ।
নিবেদিতা ভোরবেলাতেই চলে এসেছেন ।
স্বামীজির পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে অনবরত বাতাস করছেন ।
তাঁর দুটি গাল বেয়ে নামছে নীরব অজস্র অশ্রুধারা।
স্বামীজির মাথা পশ্চিমদিকে ।
পা-দুখানি পুবে‚ গঙ্গার দিকে ।
শায়িত বিবেকানন্দের পাশেই নিবেদিতাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সেই গুরুগতপ্রাণা‚ ত্যাগতিতিক্ষানুরাগিণী বিদেশিনী তপস্বিনীর হৃদয় যেন গলে পড়ছে সহস্রধারে।আজকের ভোরবেলাটি তাঁর কাছে বহন করে এনেছে বিশুদ্ধ বেদনা ।
অসীম ব্যথার পবিত্র পাবকে জ্বলছেন‚ পুড়ছেন তিনি ।
এই বেদনার সমুদ্রে তিনি একা ।
নির্জনবাসিনী নিবেদিতা ।
বিবেকানন্দের দেহ স্থাপন করা হল চন্দন কাঠের চিতায় ।
আর তখুনি সেখানে এসে পৌঁছলেন জননী ভুবনেশ্বরী।
চিৎকার করে কাঁদতে- কাঁদতে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।
কী হল আমার নরেনের ?
হঠাৎ চলে গেল কেন ?
ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয় ।
আমাকে ছেড়ে যাসনি বাবা ।
আমি কী নিয়ে থাকব নরেন ?
ফিরে আয় । ফিরে আয় ।
সন্ন্যাসীরা তাঁকে কী যেন বোঝালেন ।
তারপর তাঁকে তুলে দিলেন নৌকায় ।
জ্বলে উঠল বিবেকানন্দের চিতা ।
মাঝগঙ্গা থেকে তখনো ভেসে আসছে ভুবনেশ্বরীর বুকফাটা কান্না ।
ফিরে আয় নরেন ফিরে আয় ।
ভুবনেশ্বরীর নৌকো ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল ।
তাঁর কান্না‚ ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয়‚ ভেসে থাকল গঙ্গার বুকে ।
নিবেদিতা মনে মনে ভাবলেন‚ প্রভুর ওই জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ডের এক টুকরো যদি পেতাম!
সন্ধে ছটা ।
দাহকার্য সম্পন্ন হল । আর নিবেদিতা অনুভব করলেন‚ কে যেন তাঁর জামার হাতায় টান দিল। তিনি চোখ নামিয়ে দেখলেন‚ অগ্নি ও অঙ্গার থেকে অনেক দূরে‚ ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি‚ সেখানেই উড়ে এসে পড়ল ততটুকু জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ড যতটুকু তিনি প্রার্থনা করেছিলেন।নিবেদিতার মনে হল‚ মহাসমাধির ওপার থেকে উড়ে-আসা এই বহ্নিমান পবিত্র বস্ত্রখণ্ড তাঁর প্রভুর‚ তাঁর প্রাণসখার শেষ চিঠি।

(সংগৃহীত)

আরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন