শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৭

শৈত্যপ্রবাহ ( গদ্যরচনা )


শৈত্যপ্রবাহ  ( গদ্যরচনা )


কুজ্‌ঝটিকা দেখলাম।

ভোরের পাহাড়ে। গঙ্গোত্রীতে।

সমুদ্রের পাড় থেকে, আড়াই হাজার মিটারের বেশি উচ্চতায়।

সকাল সকাল  বেরিয়েছি। গোমুখে যাব বলে। পায়ে ্হেঁটে।গঙ্গোত্রী থেকে পায়ে হেঁটে গোমুখ।

গঙ্গোত্রীর গঙ্গা-মন্দিরের ওপর দিক দিয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে চলেছি।

আমরা চারজন। আমি, আমার স্ত্রী, আর আমাদের মেয়ে ও ছেলে।

গোমুখে এমনি লোকজন কমই  যায়। সপরিবারে আরো কম।

তবে গঙ্গোত্রী পর্যন্ত যে হেতু বাস চলে,  গঙ্গোত্রী পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে,  লোকজন যাতায়াত করে।

গঙ্গোত্রীতে গঙ্গামন্দির আছে।মন্দিরের বেশকিছু নীচ দিয়ে গঙ্গা বহে চলেছে।

পাহাড়ি পথে কি নিদারুণ শীত। সঙ্গে বাতাস। শৈত্যপ্রবহ !

তার মধ্যে, দমবন্ধ হ্ওয়া ঝটিকাসম কুঝ্‌ঝটিকা।

হঠাৎ চারজনই, একটা ঝোপের কাছেই, কুজ্‌ঝটিকার বীভৎস আস্তরণে, হারিয়ে গেলাম।

রাস্তা, ছোটখাট খাদ, কেও কাওকে, কিচ্ছু দেখছিলাম না।
আমাদের চোখের তলা, নাক, গাল আর মধ্যবর্তী অংশে, ফ্রস্টবাইটের কামড়ে, অসহনীয় অবস্থা হল।

আমার ছেলে তো কঁদেই ফেললো।

পরে, জায়গাগুলো কালো হয়ে এলো। চামড়ার ওপরের এপিডারমিস স্তরে, একটু গভীর ভাবেই ক্ষত সৃষ্টি হল।

কয়েকদিন পরে, ধীরে ধীরে একটু একটু করে, কালো চামড়ার ছাল উঠে গেল।

শ্বিত্রের মতো, ছোপ ছোপ, সাদা সাদা দাগ ধরল।

সে দাগগুলো  ছিল অনেকদিন।

একটু একটু একটু করে মিলিয়ে গেল, অনেক দিন পরে।

সত্যপ্রবহ কি, তা তখন খানিকটা বুঝেছিলাম !

রাধাষ্টমী ( গদ্যরচনা )


রাধাষ্টমী  ( গদ্যরচনা )


রাধাষ্টমী তিথিতে শ্রীরাধার জন্ম। সেটা দ্বাপর যুগের শেষের দিকের ঘটনা। শ্রীরাধা, শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে, বয়সে প্রায় এক বছরের বড়।ভাদ্রমাসের শুক্লা অষ্টমীতে, শ্রীকৃষ্ণের জন্মের প্রায় এক বছর আগে, শ্রীরাধার জন্ম ! যেখানে, প্রায় এক বছর পরে,  ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথিতে, শ্রীকৃষ্ণের জন্ম।

শ্রীরাধা, শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি !

শ্রীকৃষ্ণের কাছে, শ্রীরাধা, আহ্লাদযুক্তা আনন্দদায়িনী বিহ্বলতা !

বৈষ্ণব শাস্ত্রে, যে স্বরূপশক্তির 'বলে', ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে আনন্দিত হন, এবং অন্য সকলকেও আনন্দিত করেন।

হ্লাদিনী । আহ্লাদযুক্ত।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আনন্দদায়িনী শক্তি।

হ্লাদিনীশক্তি, ভগবৎশক্তি বিশেষ !


*  সূত্র  'শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত', গীতা প্রেস।                                                                                                                      

দুর্গাষ্টমী ( গদ্যরচনা )


দুর্গাষ্টমী  ( গদ্যরচনা )


দুর্গাষ্টমীতে, কৃষ্ণাষ্টমীর মতো, কোনো জন্ম নয় !

দুর্গাষ্টমীতে মৃত্যু !

মৃত্যু হল, দেবতাদের ত্রাস, মহিষাসুরের !

সেটাও একটা অষ্টমীতে !

মহিষাসুর, তার শৌর্যে বীর্যে পরাক্রমে, দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিল ! দেবতাদের সব সম্পদ,ভোগ ভোগ্যবস্তু, অপহরণ করেছিল !

এমন কি যজ্ঞভাগ থেকেও দেবতাদের বঞ্চিত করেছিল !

মহিষাসুর, মহিষরূপী  পৌরাণিক অসুর !

দুর্গাষ্টমীতে, দেবী দুর্গা, মহিষাসুরের নিধনকারিণী !

দেবী দুর্গা, সমস্ত দেবতাদের অস্ত্রশস্ত্র পেয়ে, মহা বলীয়ান হয়ে যায় ! বলা যায়,  তিনি তখন শক্তিপুঞ্জ ! তারপর দুর্গাদেবীর আছে, অমোঘ মায়াশক্তি ! এবং সকল দেবতাদের শুভেচ্ছা !

দুর্গাষ্টমীতে, মহিষাসুরকে নিধন করে, দেবী দুর্গা, নতুন নামকরণ পেলেন, "মহিষাসুরমর্দিনী" হিসাবে !

দেবীদুর্গা, মূলত কিন্তু, দেবতাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য, দেবতাদের ওপর so called  "অত্যাচারী" মহিষাসুরকে নিধন করেন; সে ভাবে মানুষদের উপকার করার জন্য নয় !

যদিও মহিষাসুর মর্তে  নাকি মানুষদের ওপরেও চোখ রাঙাত ! কোন অত্যাচার করত কিনা জানা নেই ! কোন মনুষ্যনারীকে  ধর্ষণ করেছিল কিনা, তাও জানা যায় না !

দেবতারা কিন্তু সে সব বিষয়ে একেবারে  ধোওয়া তুলসি পাতা নয় !

আসলে শাস্ত্র্ একপেশে ! শাস্ত্র,  দেবতাদের favour-এ থাকত ! অসুরদের বিরোধিতা করত ! আসলে দেবতারা ঘুষখোর !
পূজা না দিলে, দেবতারা কিছুই দেবেন না ! তারপর পুরোহিত এবং পাণ্ডারা রয়েছে, দেবতাদের agent.   দেবতারা যজ্ঞভাগ ভাগ চায়, তার জন্য, মানুষদের, যজ্ঞ করতে হবে ! দেবতারা কোন কাজ করবে না, শুধু বসে বসে খাবে !
দেবতারা কিন্তু অসুরদের সাথে বুদ্ধিতে, বলে, যুদ্ধে, পেরে উঠত না ! তাই শঠতার আশ্রয় নিত !

শাস্ত্র,  দেবতা Versus অসুরদের ব্যাপারে,  দেবতাদের পক্ষ নিয়েছে, অনার্য বনাম আর্যদের ব্যাপারে, আর্যদের পক্ষ নিয়েছে ! শাস্ত্র, চণ্ডাল, ম্লেচ্ছ, শূদ্র, এসব সৃষ্টি করেছে ! নীচু জাতের ওপর অত্যাচার করিয়েছে ! কত জনকে সনাতন ধর্মের গণ্ডির বাইরে ছুঁড়ে ফেলেছে ! আর ব্রাহ্মণদের অত্যাচার ? যা কিছুতে  তাঁদের সুবিধা হয়, তাঁরা, শাস্ত্রের মধ্যে সেই সব কথা ঢুকিয়ে দিয়েছেন ! 'দান' শুধু ব্রাহ্মণরাই গ্র্হণ করবে। সব অ-ব্রাহ্মণরা ব্রা্‌হ্মণদের 'দান' করবে ! কৌলিন্যপ্রথারব্রাহ্মণরা কতগুলি বিবাহ করত ? কোথাও তা একশোও ছাড়িয়ে যেত ! সেই সমস্ত নারীদের সন্তানেরা কি সব  'ব্রাহ্মণ' ছিল ? ব্যাপারটা solve করার জন্য 'ক্ষেত্রজ্ঞ' এবং 'ঔরসজাত' সন্তানের কথা বলা হয় !

মানুষ যে ভোগ-সম্পদ লাভের জন্য, ভালো থাকা-খাওয়ার জন্য, দেবী দুর্গার আরাধনা করে, তা দেবীর অপ্রধান ( গৌণ ) স্বরূপ;  আরোপিত গুণ, যে সম্বন্ধে, 'শ্রীশ্রীচণ্ডী'তে  বর্ণনা আছে !
সেই হিসাবে, দেবীদুর্গা, ভক্তসুখদায়িনী দেবী !

মহিষাসুরের বাবার নাম রম্ভ। রম্ভ অসুর।রম্ভাসুর। সে ছিল অসুরদের রাজা। তবে সে কিন্তু মহিষ নয় ! মানুষ !

মহিষাসুরের মা, দৈব অভিশাপে অভিশপ্ত, দেবনন্দিনী  শ্যামলী ! সে কিন্তু স্ত্রী-মহিষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করে !

রম্ভ তাকে বিবাহ করে !

ভগবান শিবের কাছ থেকে লব্ধ অনুগ্রহে ( বর )  রম্ভ,  সকল দেবতাদের ওপর বিজয়ী হয়েছিল, সকল পুরুষের দ্বারা অবধ্য ছিল, এবং 'মহিষাসুর' নামের বলবীর্যশালী  পুত্র লাভ করেছিল !

মহিষাসুরের অদ্ভুত জন্মগত গুণ ছিল। সে মহিষ থেকে মানুষে, এবং মানুষ থেকে মহিষে স-ইচ্ছায় পরিবর্তিত হতে পারত।

কাত্যায়ন মুনির অভিশাপে, নারী দুর্গার হাতে, মহিষাসুর নিহত ্হয়।

কালিকা পুরানে এর উল্লেখ আছে।

মহিষাসুর না জন্মালে, আমরা 'মহামায়া'র অবতার, দুর্গাকে পেতাম না।

তাহলে আমাদের 'দুর্গোৎসব'টাই মাটি হয়ে যেত !


মহিষাসুরের মৃত্যু হওয়ার কথা দুর্গাষ্টমীতে। দুর্গাষ্টমীতেই মহিষাসুরের মৃত্যু ঘটেছে !

কিন্তু,  আমাদের দুর্গাপুজায়, অষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেও,  নবমী-দশমীতেও, মাদুর্গা তার শাণিত অস্ত্র দিয়ে,মহিষাসুরকে খুঁচিয়ে চলেছেন ।

এটা  মাদুর্গার একটা মিথ্যা ভান এবং নাটক !

এই নাটকের কুশীলব,সকল ব্রাহ্মণ পুরোহিত সম্প্রদায় !


*  সূত্র  'শ্রীশ্রীকৃষ্ণমা বার্তাপ্রবাহ', সেপ্টেম্বর, ২০১২। 'শ্রীশ্রীচণ্ডী',  গীতা প্রেস।