বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭

শ্রাদ্ধ



শ্রাদ্ধ

শেয়ার করেছেন    প্রণব কুমার কুণ্ডু।

Prasanta Kumar Mondal     Binod Saradar এবং অন্যান্য 109 জন এর সঙ্গে আছেন।

শ্রাদ্ধ্যকর্ম হল ব্রাহ্মণ্য ধান্দাবাজিঃ--

মৃত পিতামাতার শ্রাদ্ধে,  ব্রাহ্মণ পুরোহিত,  আপনাকে দিয়ে যে মন্ত্রপাঠ করায়,  সে মন্ত্রের অর্থ জানেন কী ? সমস্ত শাস্ত্রগ্রন্থে এরা মানুষকে জাতের নামে হীন,নীচ প্রতিপন্ন করেছে, শ্রাদ্ধ্যেও তার ব্যাতিক্রম হয় নি।শ্রাদ্ধের মন্ত্রের অর্থ না জেনে,  ব্রাহ্মণ পুরোহিতের কথায়,  বোকা যজমান,  কেমন নিজেকে,  এবং নিজের জন্মদাতা পিতা- মাতাকে গালাগালি করে দেখুন।

“পাপহম পাপকর্মাহম পাপাত্মা পাপসম্ভবা
ত্রাহিমাম কৃপাদেবা স্মরণাগতা বাৎসল্য”।
অর্থ হল--  আমি পাপী, আমি পাপ কর্মের ফল, আমার আত্মা পাপী, আমার দ্বারা পাপই সম্ভব, হে দেব ! কৃপা করে স্মরণাগতকে আশ্রয় দিন।
আপনি কেন পাপী ? কোন পাপ কাজ আপনি করেছেন ? আপনার পিতা-মাতার পাপকর্মের ফলে কী আপনার জন্ম ? তাই কী? আপনি যদি কাল্পনিক আত্মায় বিশ্বাস করেন, সে আত্মা পাপী হল কিভাবে ? আপনার থেকে কী সব পাপই উৎপন্ন হবে ?

শাস্ত্র অনুযায়ী,  দেবদেবী,  ব্রাহ্মণের মুখ দিয়ে খায়, ব্রাহ্মণের মুখ দিয়ে কথা বলে।সাধারণ মানুষ ডাকলেও আসবে না, খাবেও না্, কথাও বলবে না।আবার শ্রাদ্ধ করলে,  মৃত পিতৃপুরুষগণ,  ব্রাহ্মণের কথায় ওঠাবসা করে।ব্রাহ্মণের কথায় তারা আসবে এবং ব্রাহ্মণের কথায় তারা উত্তর পুরষদের প্রচুর দান করবে।মানুষের এমন অন্ধবিশ্বাস এবং এমন নির্লজ্জ পুরোহিত তন্ত্র পৃথিবীর কোনো ধর্মে নেই।

ব্রাহ্মণদের সৃষ্ট দেবদেবীরা,  ব্রাহ্মণের কথায় সাড়া দেয়, কেবল ব্রাহ্মণের সাথে কথা বলে, ব্রাহ্মণ খাদ্য চিবিয়ে দিলে তবে খায় এবং ব্রাহ্মণের কথায় যজমানকে সবকিছু দান করে।বিনিময়ে ব্রাহ্মণ যজমানের দেত্তয়া সামান্য কিছু নিয়ে সন্তুষ্ঠ হয়।এমন মহান হৃদয় ভারতীয় ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের।নিজের জন্য তবু দেবতাদের কাছে এরা কিছুই চায় না।বোকা যজমানদের এমন মিথ্যাবুলি শিখিয়েছে,  ব্রাহ্মণ পুরোহিত।বোকা যজমানরা জানে না,  যে, ব্রাহ্মণের তৈরী জড় পদার্থের পুতুল দেবদেবী,  শুধুই তাদেরকে ঠকানোর জন্য।যজমানরা কি কোনো দিন ব্রাহ্মণ পুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করেছেন? যে আপনারা শুধু আমাদের জন্য দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করেন কেন? আর আমাদের দেওয়া অল্প সম্পদে সন্তুষ্ট হন কেন? আপনারা দেবদেবীর কাছে নিজেরা ইচ্ছামত চেয়ে নেন না কেন? দেবদেবীর কাছে চাইলে যদি সব পাওয়া যেত,  তাহলে তো আর আপনাদের অভাব থাকতো না।এমন সরল প্রশ্নটি যজমানরা কেন করেন না?বাবা,মায়ের মৃত্যূর তাঁদের আত্মা-প্রেতাত্মা ও ব্রাহ্মণের কথায় নাকি উঠবোস করেন, এমন দাবি ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের।
দেবদেবীরা যেমন ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট খায়,  আত্মা-প্রেতাত্মারাও নাকি ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট খেয়ে ধন্য হয়। ভূ-দেবতা সেজে এরা জীবিত মানুষকে উচ্ছিষ্ট খাইয়েছে,  আর মৃত্যূর পর তার প্রেতাত্মাকেও উচ্ছিষ্ট খাওয়ায়। কেন খাবে না ? সমস্ত দেবদেবী যদি ব্রাহ্মণ পুরোহিতের চিবিয়ে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খেয়ে ধন্য হয়, মানুষ খাবে না কেন ? এমন জঘন্য বিশ্বাস হিন্দুদের।
সারা জীবন বাড়ীতে এসে হাজর-বাজর মন্ত্র আউড়ে,  যে ব্রাহ্মণ দেবদেবীর কাছ থেকে একটা পয়সা আদায় করে দিতে পারেনি, সেই বাড়ীর ছেলে আবার ঐ ব্রাহ্মণ পুরোহিতের কাছে ছুটছে,  মৃত বাবা/মাকে স্বর্গে পাঠানোর জন্য।এর থেকে
হাস্যকর আর কী হতে পারে। বোকা যজমানারা আর কবে বুঝবে, এসব দেবদেবী কাল্পনিক, আর কর্মফল, আত্মা, প্রেতাত্ম, জন্মান্তরবা্দ,স্বর্গ,নরক,  সব ব্রাহ্মণ পুরোহিতের ধানদাবাজি।শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের মন্ত্রবলে মৃতের পূর্বপুরষরা দলে দলে আসবে,  আর প্রচুর ধনসম্পদ দান করবে,  মৃতের সন্তানদের।এমন বিশ্বাস কী পৃথিবীর কোন ও সভ্য মানুষ করে?
চার্বাক পন্ডিত মাধবাচার্য বলেছেন--- “স্বর্গ-নরক নেই, পারলৌকিক আত্মা নেই,বর্ণাশ্রমিক ক্রিয়া,  নিষ্ফলা।অগ্নিহোত্র তিনবেদ (ঋক,সাম ও যজু), ত্রিদণ্ড, ছাইভস্ম লেপন, বুদ্ধিহীন ও পৌরুষহীন, নিষ্কর্মা মানুষের জীবিকার উপায় মাত্র”।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন--- “মৃত্যূর পর মানুষ স্বর্গে যায় এটা কল্পনা মাত্র।সজ্জন ব্যক্তি মৃত্যূর পর স্বর্গে গিয়ে অনন্ত সুখময় জীবন যাপন করে--- এ ধারনা স্বপ্ন মাত্র।স্বর্গ ও নরক এসব আদিম ধারণা”।(বাণী ও রচনা-দশম খন্ড-পৃষ্ঠা ১৫৯)।
তাই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নয়,শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান করুন।নাপিত,ব্রাহ্মণ নয়,আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে।