বুধবার, ২৭ জুন, ২০১৮

প্রাচীন ভারতবর্ষের গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থা



    প্রাচীন ভারতবর্ষের গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থা


    শেয়ার করেছেন                                প্রণব কুমার কুণ্ডু

Basuki Nath Misra 💥ALL BENGAL RSS💥রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক 
সংঘ💥 গোষ্ঠীটিতে একটি স্মৃতি ভাগ করেছেন৷
বেদ যজ্ঞে
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ – বেদযজ্ঞের মাধ্যমে যত বিদ্যা দান করবে ততই নিজেকে মুক্ত আত্মা রূপে দেখতে পাবে।



বৈদিক যুগে আচার্য – মুনি- ঋষি – ছাত্র- ছাত্রী বা শিষ্য- শিষ্যা সকলেই বেদ যজ্ঞের মাধ্যমেই বিদ্যা আদান- প্রদান করতেন। ছাত্রদের মধ্যে দুটি বিভাগ ছিল। উপকুর্বাণ ও নৈষ্ঠিক। উপকুর্বাণ বিভাগের ছাত্ররা পাঠ শেষ হলে পিতৃগৃহে ফিরে গিয়ে গার্হস্থ জীবন আরম্ভ করতেন। নৈষ্ঠিক ছাত্রগণ গৃহে ফিরে যেতেন না। তাঁরা কৌমার্যব্রত গ্রহণ করতেন। তাঁরা পরবর্তীকালে কোনও পণ্ডিত বা ঋষি হতেন বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে বিদ্যা দান করে মানব সমাজকে বেদের আলোতে আলোকিত করে ধরে রাখার জন্য। বিদ্যাদানের জন্য আচার্য কোনও মূল্য বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না। বিদ্যা- বিক্রয় অপরাধ মধ্যে গণনা হতো। আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য প্রায় দশ হাজার ছাত্রের ভরণ পোষণের ভার নিয়ে শিক্ষা দান করতেন। এরূপ আচার্যগণকে কুলপতি বলা হতো। আর একশ্রেণির আচার্য ছিলেন তাঁরা ভ্রাম্যমাণ—তাঁদেরকে চরক বলা হতো। চরক অর্থ ভ্রাম্যমাণ। ব্রাহ্মণেরা ক্ষত্রিয় আচার্যদিগের নিকট হতেও শিক্ষা গ্রহণ করতেন, এর প্রমাণ বেদে অনেক পাওয়া যায়। আচার্য ও শিষ্যের মধ্যে সম্বন্ধ ছিল অতি মধুর ও আন্তরিকতাপূর্ণ। শিক্ষা গ্রহণকালে প্রত্যেককে আচার্যের আজ্ঞাধীন হয়ে থাকতে হতো। অসংকোচে ভিক্ষা গ্রহণ করতে হতো। এই ভিক্ষাবৃত্তি দ্বারা তাদের মনে বিনয়ের উদয় হতো। আচার্যের গৃহস্থলীর তদারক ও গোচারণ ছাত্রজীবনের অন্যতম কর্তব্য ছিল। ছাত্রগণকে নিদ্রা, আলস্য, ক্রোধ, অহংকার, নাম-যশের আকাঙ্ক্ষা, সৌন্দর্যচর্চা ও ইন্দ্রিয়- পরায়ণতা হতে নিবৃত্ত থাকতে হতো। জীবনগঠনের জন্য সকলের জন্যে একই নিয়ম ছিল – সমস্ত রকম বিলাসিতা ত্যাগ করে সকলকে শিক্ষাঙ্গনে থাকতে হতো। প্রতিদিন আচার্য ও শিষ্য একত্র মিলিত হয়ে প্রার্থনা করতেন---- ওঁ সহ নাববতু সহ নৌ ভুনক্তু। সহ বীর্যং করবাবহৈ। তেজস্বি নাবধীতমস্তু মা বিদ্বিষাবহৈ।। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। এর অর্থ --- “ ব্রহ্ম আমাদের উভয়কেই রক্ষা করুন, তিনি আমাদের একত্রে বহন করুন। আমরা একত্রে জ্ঞানলাভের শক্তি যেন অর্জন করি। আমাদের শিক্ষা যেন তার প্রকৃত বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করতে পারে—অথবা আলোকের ন্যায় সুদীপ্ত হয়ে উঠতে পারে। আমাদের মধ্যে যেন কখনও বিদ্বেষের সৃষ্টি না হয়”। এই সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আলোকিত করে রাখতো। এই প্রশিক্ষণ পেয়ে সমাজে কেউ বেকার থাকতো না ও হীনমন্যতায় ভুগতো না। সবায় এক পরব্রহ্মের আলোতে আলোকিত হয়ে থাকতো বৃহত্তর সমাজে। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন