মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

খতনা ( দুই )


     খতনা ( দুই )


     ফেসবুক থেকে            শেয়ার করেছেন            প্রণব কুমার কুণ্ডু


কেনো খতনা করাতে হবে, প্রয়োজনটা কী - 2 ?
আমরা মোটামুটি সবাই সেই লেজ কাটা শেয়ালের গল্পটা জানি, যে অন্যদের লেজ কাটতে গিয়ে বৃদ্ধ শেয়ালের যুক্তির কাছে পরাজিত হয়ে জঙ্গল ছেড়ে পালিয়েছিলো। কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ নয়, ঐ জঙ্গল থেকে পালিয়ে সে অন্য জঙ্গলে গিয়েছিলো এবং কিছু শেয়ালের লেজ কাটতে সক্ষম হয়েছিলো। ১০ জন অসৎ, মিথ্যাবাদী, অসাধু চোর বাটপারদের
মধ্যে আপনি একা যদি পড়েন, তাহলে আপনার সততাই হবে আপনার বিড়ম্বনার কারণ এবং তাদের অনবরত টিটকারির কারণে এক সময় আপনার মনে হবে, না ওরাই ঠিক; এজন্যই বলা হয়, দশচক্রে ভগবান ভূত। বাংলাদেশের এমন কোনো হিন্দু ছেলে নেই, যাকে, খতনা না করা নিয়ে মুসলমানদের টিটকারির শিকার হতে হয় নি। এই শুনতে শুনতে একসময় আমারও
মনে হয়েছিলো, খতনা করাই বোধ হয় ঠিক। কারণ, হিন্দু ডাক্তাররা পর্যন্ত পত্রিকায় আর্টিকেল লিখতো বা এখনও লিখে খতনা করার উপকারিতা সম্পর্কে। তারা নিজেরা খতনা করিয়েছে কি না, তা কিন্তু লিখে না।কিন্তু আর্টিকেলে খতনার উপকারিতা নিয়ে এই কারণে লিখে যে, তাহলে তার লেখাটি পত্রিকার মুসলমান সম্পাদক খুশি হয়ে ছাপবে, আর পত্রিকায় নাম
উঠা নামেই একটা সম্মানের ব্যাপার। কিন্তু হিন্দু সমাজ ও জাতির এমনই দুর্ভাগ্য যে, প্রশ্নের মুখে কোণঠাসা হওয়া হিন্দু ছেলেমেয়েদের মুখে মুসলমানদের প্রশ্নেরযোগ্য ও যুতসই জবাব তুলে দেওয়ার মতো কোনো লোক হিন্দু সমাজে জন্ম নেয় নি। তাই সকল প্রশ্নে হিন্দুদের একটাই জবাব, "জানি না, বাপদাদারা করে আসছে, তাই আমরাও করছি।"
এই কারণেই হিন্দু ছেলেরা, খতনা প্রসঙ্গে, কখনো মুসলমানদের মুখের উপর বলতে পারে নি যে, "তুই ঠিক না, আমিই ঠিক। কারণ, আমি প্রকৃত আর তুই বিকৃত।"
কোনো সম্প্রদায়ের এক নবী যদি কোনো কারণে তার হাতের একটা আঙ্গুল কেটে ফেলতে বাধ্য হয়, আর তার অনুসারীরা সেই সিস্টেম অনুসরণ করে নিজেদের হাতের একটা করে আঙ্গুল কেটে ফেলে, তাহলে আঙ্গুল কাটারা ঠিক ? না, প্রকৃতি আমাকে যেভাবে সৃষ্টি
করেছে, সেটাই ঠিক ? প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীকে বিশ্ব বিধাতা একদম সঠিক আকৃতি ও ধরণে সৃষ্টি করেছে, এভাবেই তারা প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য বেস্ট। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর লিঙ্গ, তাদের চমড়ার মধ্যে গুটানো থাকে। এই চমড়া ই লিঙ্গের সুরক্ষার কাজ করে। একমাত্র পুরুষ মানুষের লিঙ্গ ই পুরোটা দেহের বাইরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, কিন্তু লিঙ্গমনি, যেটার ঘর্ষণে পুরুষ যৌন সুখ লাভ করে, প্রাকৃতিক উপায়েই সেটা চামড়া দ্বারা আবৃত থাকে তার সেনসিভিটি বা
স্পর্শকাতরতা রক্ষার করার জন্য ও আর্দ্র রাখার জন্য।কিন্তু খতনার নামে যখন সেই চামড়া কেটে ফেলা হয়, তখন বছরের পর বছর সেটা উন্মুক্ত থাকার ফলে এবং কাপড়ের সাথে অনবরত ঘর্ষণের ফলে লিঙ্গমনির সেনসিভিটি নষ্ট হয়, এর ফলে খতনা করা ব্যক্তি যৌন সঙ্গমের সময় কখনোই ১০০% সুখপেতে পারে না এবং লিঙ্গমনির সেনসিটিভিটির মাধ্যমে স্ত্রী যোনীর ভেতরেও সেনসিভিটিপ্রবেশ করিয়ে নারীদের যে সুখ দেওয়া যায়,
সেটাও একজন খতনা করা ব্যক্তি ১০০% দিতে পারে না। এর ফলে নারী পুরুষ দুজনেই চরম যৌনসুখ থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, স্ত্রী যোনির ভেতরে একটি খতনা করা পুরুষাঙ্গের ঘর্ষণ কিছুটাঅনুভূতি হীন নকল পুরুষাঙ্গ ডিলডো বা স্পর্শকাতরতাবিহীন আঙ্গুল চালানোর মতোন।
খতনার উপকারিতা সম্পর্কে যেসব মিথ্যা বাজারে প্রচলিত, এবার সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক।খতনা না করলে নাকি যৌন রোগের সংক্রমন ঘটে।পৃথিবীর কোন পুরুষ, যৌন সংগমের পর যৌনাঙ্গ না ধুয়ে ঐ অবস্থায় থাকে এবং তারপর আবার যৌনসঙ্গমে মিলিত হয় ?
খতনা না করালে নাকি চামড়ার নিচে এক ধরণের ময়লা জমে; এখন বলুন, পৃথিবীর কোন ছেলে নিজের লিঙ্গের প্রতি এতটা উদাসীন, যে সে ঐ ময়লা পরিষ্কার করে না বা করবে না ? আর কিশোর বয়সের পর এই ময়লা জমার কি কোনো কারণ আছে ? বিষয়টা বুঝে নেন।
খতনা না করালে নাকি এইডসের ব্যাপক বিস্তার ঘটে।
একমাত্র বহুগামী মুসলমানদের মাথায় এই ধরণের যুক্তি আসা সম্ভব। কারণ, মুসলমানরা তো বহুগামী, ওদের বাড়িতে থাকে ৩/৪টা স্ত্রী। এরপরেও আবাসিক হোটেলে বা পতিতালয়ে মাঝে মাঝে নাগেলে বা কোথাও সুযোগ পেলে, কোপ না মেরে থাকতে পারে না। তাই মুসলমানদেরই এইডস হওয়ার ভয়। হিন্দু ও বৌদ্ধরা খতনা করে না। তাই ভারত ও চীনে কত এইডস রোগী আর আফ্রিকার মুসলিমদেশগুলোতে কত এইডস রোগী, তার পরিসংখ্যানটা একটু জেনে নিয়েন।আফ্রিকার দেশগুলোতে তো আর হিন্দু বৌদ্ধ নেই, সবাই কাটা মুসলমান। তাহলে ওখানে এত এইডস রোগী এলো কোথা থেকে ? ওই সব দেশে এইডসের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, ঔষধ আবিষ্কার না হলে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলো জনসংখ্যা শুন্য হয়ে পড়বে।
খতনার পক্ষের আরেকটি ভুয়া সুড়সুড়ি হলো, খতনা করালে নাকি যৌনসঙ্গমের সময় বেশি টাইম পাওয়া যায়। এটা সত্য হলে তো বাংলাদেশের বাজারে, শীঘ্রপতন রোধ করতে বা টাইম বৃদ্ধির কোর্সের এত রমরমা ব্যবসা থাকতো না। কারণ, বাংলাদেশের তো ৯০% ই কাটা মুসলমান। তারা তো কেটেছেই, তাদের আবার টাইম বৃদ্ধির দরকার কী ? আসলে ইসলামের মিথ্যাচারের জবাব দেওয়ার মতো কোনো মিডিয়া বা পরিবেশ তো বাংলাদেশে নেই, তাই এরা এসব বালছাল বলে বার বার পার পেয়ে যায়।
আসল ব্যাপার হলো, সেক্সের সময়, যৌন শক্তি এবং স্থায়িত্ব নির্ভর করে কোনো ব্যক্তির শারীরিকগঠন, তার স্ট্যামিনা এবং কতটা নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে এবং ফুর্তি নিয়ে যৌনসঙ্গম করছে, তার উপর। এখানে কার কাটা আছে, আর কার কাটা নেই, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। প্রাপ্ত বয়স্ক অনেকেই জানেন যে,যৌন সঙ্গমের সময় কনডম ব্যবহার করলেই বেশ কিছু সময় বেশি পাওয়া যায়। কনডম ব্যবহার করে অনেক সংক্রামক যৌন রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। তাহলে খতনা করানোর পক্ষে যেসব যুক্তিদেখানো হয়, দেখা যাচ্ছে, এক কনডম ব্যবহারের ফলেই তো সেগুলো কভার করে যাচ্ছে, তাহলে খতনা করার প্রয়োজনটা কী ?মোট কথা খতনার কোনো উপকারিতা নেই, কিন্তু খতনা করার ফলে কী কী ক্ষতি হতে পারে, এবার সেটা দেখা যাক।
লিঙ্গমনির সঙ্গে লিঙ্গ অগ্রের চামড়া জন্মের পর থেকেই যুক্ত থাকে এবং১০/১২বছর বয়সে সেটা প্রাকৃতিক ভাবেই আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাক্সিম্যাম বাচ্চার খতনা করানো হয় ৫ থেকে ৮/৯ বছরের মধ্যে। এই সময় খতনা করাতে গিয়ে অনেক সময়ই চামড়ার সাথে সাথে লিঙ্গমনির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এই ক্ষতি নিয়েই একজন মানুষকে সারাজীবন চলতে হয়। আমার এক মুসলিম ক্লাসমেট ঠিক মতো কথা বলতে পারতো না, জোরে কথা বলতে গেলেই তার কথা আটকে যেতো। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলেছিলো, "৪ বছর বয়সে তার খতনা করানো হয়, ঐ সময় লিঙ্গের চামড়া কাটতে গিয়ে লিঙ্গমনিতে আঘাত লাগে এবং সে অজ্ঞান হয়ে যায়। ” দেহের মধ্যে সবচেয়ে সেনসিটিভ অঙ্গ হচ্ছে লিঙ্গমনি, সেখানে কোনো প্রকারের আঘাত লাগলে সেটা সাংঘাতিকভাবে আঘাত করে ব্রেইনে এবং ব্রেইন কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আমার ঐ ক্লাসমেটেরও ব্রেইন ঐ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো। পরে ডাক্তারের কাছে গিয়ে তারা এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানতে পারে। তাছাড়া খতনা করা লিঙ্গও দেখতে চামড়া ছিলা মুরগীরমতো বিশ্রী, এটা এক মুসলিম মেয়ের মত। এছাড়াও এমন কোনো শিশু নেই যে, সে স্বেচ্ছায় খতনা করাতে চায়, সব সময়ই তার ইচ্ছারবিরুদ্ধে জোর করে তাকে খতনা করানো হয়। আমার আরও এক মুসলিম ক্লাসমেট, তার খতনা করানোর দিনের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলো, যেদিন খতনা করানো হবে, সেদিন সে কাঁদতে কাঁদতে তার বাপের কাছে গিয়ে অভিযোগের সুরে বলেছিলো, "আব্বা, ওরা নাকি আমার নুনু কেটে নিবে ? আমি কাটতে দিমু না, এই অবস্থা সকল বাচ্চারই। ভালো কি মন্দ, তা বুঝে উঠার আগেই কারো কোনো অঙ্গের ক্ষতি করা নিশ্চিতভাবেই মানবাধিকারের লংঘন। শেষে একটা কথা মনে রাখবেন, প্রকৃতি যেভাবে আপনাকে সৃষ্টি করেছে, সেটাই ঠিক। আপনার খতনা করা নেই, এজন্যই আপনি প্রকৃত। আর যাদের খতনা করা হয়েছে তারা বিকৃত। প্রকৃতির সৃষ্টিকে তারা কেটে কুটে তার স্বাভাবিকত্বকে নষ্ট করেছে।
প্রথম ফাঁদে পড়ে খতনা করতে বাধ্য হয়েছিলো নবী ইব্রাহিম, তার পর করানো হয় ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাইলকে, এরপর থেকে মুসার অনুসারী ইহুদি এবং যিশুর অনুসারী খ্রিষ্টানরা ধর্মের নামে ধারাবাহিকভাবে খতনা করে আসছে। এই প্রত্যেকটা ধর্ম ভুয়া এই কারণে যে, সৃষ্টিকর্তা তাদের এই প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে এখনও খতনাসহ কোনো মানব সন্তানকে পৃথিবীতে পাঠায় নি। যদি তাদের ধর্ম সত্য হতো, তাহলে সৃষ্টিকর্তা বিধাতা খতনাসহ মানব সন্তানের জন্ম পৃথিবীতে দিতো। এখনও খতনা বিহীন মানব সন্তানের জন্ম, এটাই প্রমাণ করে যে, আদি সনাতন মানব হিন্দু ধর্মই পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম এবং এটাই চিরন্তন ও শ্বাশত। আর সকল, মানব সৃষ্ট ধর্ম ব্যক্তিগত, ও ভুয়া।সুতরাং খতনা না করা নিয়ে আর কোনো হীনম্মন্যতা
নয়, বরং আপনার খতনা করা নেই, এটা আপনার গর্বের ব্যাপার; এই জন্য যে, প্রকৃতির সৃষ্টি আপনার কাছে প্রকৃতই আছে, তা বিকৃত হয় নি। আর যা কিছু প্রাকৃতিক, সেটাই তো খাঁটি। তাই নয় কি ?
জয় হিন্দ।

ল্যান্স নায়েক এলবার্ট এক্কা


    ল্যান্স নায়েক এলবার্ট এক্কা


     ফেসবুক থেকে         শেয়ার করেছেন           প্রণব কুমার কুণ্ডু


আজ কথা বলব এক বিখ্যাত বীর শহীদের কথা, যার আত্মবলিদানের জন্য নিষ্ঠুরতম হত্যালীলা থেকে বেঁচে যায় আমার শহর- আগরতলা।
সন ১৯৭১। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে চলছে পাকিস্তানিদের দ্বারা বাঙালী নিধনযজ্ঞ। সেই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হাজারো মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। কলকাতা ও আগরতলার বাঙালীদেরও ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে কলকাতা ও আগরতলা, দুই শহরই ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এমত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ১৯৭১ সনের ৩ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে আক্রমণ করে বসে। তাদের গোপন পরিকল্পনা ছিল হঠাৎ করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালালে ভারতের নজর পশ্চিমদিকে চলে যাবে, সেই সুযোগে অতর্কিতে লাগোয়া রাজ্য ত্রিপুরা আক্রমণ করে রাজধানী আগরতলার দখল নেওয়া যাবে। এতে আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের অবস্থান সুদৃঢ় হবে, অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী ভিতকে দুর্বল করে দেওয়া যাবে।
তবে পাকবাহিনীর এই গোপন পরিকল্পনার কথা ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে আগেভাগেই চলে আসে। ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী জানতে পারে পাক সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা জেলা থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। তাই কুমিল্লা জেলার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী সেনাশিবির স্থাপন ও বাঙ্কার তৈরি করে জওয়ান মোতায়েন ও অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করে রাখে তারা।
১৯৭১ সালে ৩রা ডিসেম্বর পাকবাহিনী স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দেয়। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা এলাকায় পাক সেনাশিবির লক্ষ্য করে ভারতীয় সেনারা পাল্টা আক্রমণ চালায়।
১৪ গার্ড রেজিমেন্টের মেজর ও পি কোহলি'র নেতৃত্বে ভারতীয় সময় রাত ২টায় আলফা ও ব্রাভো এই দুই কোম্পানির সেনা জওয়ান কুমিল্লা সেক্টরের গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তান) প্রবেশ করে। রেলের দুটি ট্রেক ধরে ল্যান্স নায়েক এলবার্ট এক্কা ও ল্যান্স নায়েক গোলাব সিং'র নেতৃত্বে দুটি লাইনে ভারতীয় সেনা জওয়ানরা এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে তাদেরকে নজর রেখে রেল লাইনের নিচের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মেজর কোহলি।
রাত আড়াইটে নাগাদ ল্যান্স নায়েক এলবার্ট এক্কার পা পাকবাহিনীর পাতা ফাঁদে লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকা আলোয় আলো জ্বলে ওঠ। ভারতীয় সেনাদের দেখে ফেলে বাঙ্কারে থাকা পাক সেনারা। প্রহরারত এক পাকসেনা চেঁচিয়ে উঠতেই শুরু হয় গুলির লড়াই। বছর আটাশের ল্যান্স নায়েক এক্কা এগিয়ে গিয়ে বাঙ্কারে থাকা পাক বাহিনীর জওয়ানদের খতম করেন। এলবার্ট এক্কা তার সঙ্গী ল্যান্স নায়েক গোলাব সিং, মেজর কোহলি সহ দুই কোম্পানির মোট ২৪০ জন জওয়ান পাকসেনাদের পরাস্ত করে একের পর এক বাঙ্কারের দখল নিতে থাকেন। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে যুদ্ধ করার সময় পাক বাহিনীর ছোড়া একটি গুলি এলবার্ট এক্কা'র বাঁ হাতে লাগে। তারপরও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই অবস্থায় আরো একটি গুলি এসে লাগে এলবার্ট এক্কার গলায়। তিনি মাটিতে পড়ে যান কিন্তু দমে যাননি। উঠে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেন রেলের উচু সিগন্যাল রুম থেকে ভারতীয় সেনা বাহিনীর দিকে গুলি ছুটে আসছে। তখন তিনি সিগন্যাল রুম লক্ষ্য করে উপরের দিকে গ্রেনেড ছোড়েন। গ্রেনেডে একাধিক পাকসেনার ভবলীলা সাঙ্গ হয়।কিন্তু নিজের ছোড়া গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে গুরুতর জখম হন এলবার্ট এক্কা। তার শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ বেরিয়ে যায়। এই অবস্থায় তিনি লক্ষ্য করেন, এক পাক সেনা সিগন্যাল রুম থেকে ভারতীয় জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। নিজের ক্ষত স্থান চেপে ধরে লোহার সরু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে শেষ পাক সেনাকে বধ করে নিচে নামার সময় শহীদ হন।
সেই রাতে এলবার্ট এক্কার পাশাপাশি আরো ১১জন ভারতীয় বীর জওয়ান শহীদ হন। এরা হলেন গোলাব সিং, কাশীনাথ সাহু, ডেভিড টিগ্যা, মার্গ গিয়াত সিং, উবাও সিং, রামদেও সাহু, কেশর দেব, দাল সিং, যোসেফ টোপনো, শিব নারায়ণ ও দূর্গা প্রসাদ। সেই রাতে প্রায় সব পাকসেনাকে খতম করতে সক্ষম হয়েছিলেন ভারতীয় বাহিনীর জওয়ানরা। এই অভিযান শেষ হতে হতে দিনের নতুন আলো ফুটে ওঠে।
পরে শহীদ ভারতীয় জওয়ানদের আগরতলার বাধারঘাটের শ্রীপল্লী এলাকায় সমাধিস্ত করা হয়। এখানে একটি স্মৃতিসৌধ বানানো হয়েছে তাদের স্মৃতির উদ্যেশে।
ওই রাতের লড়াইয়ে পাক বাহিনীর মনোবল একেবারে ভেঙ্গে যায়। তারা সম্মুখ সমরে আগরতলা আক্রমণের পরিকল্পনা থেকে পুরোপুরি সরে দাঁড়ায়।পরবর্তীকালে পাকবাহিনী যুদ্ধবিমান ও কামান থেকে গোলা ছুড়ে আগরতলায় ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলেও সরাসরি আক্রমণের সাহস করেনি।
অসীম সাহসের জন্য ল্যান্স নায়েক এলবার্ট এক্কাকে ভারত সরকার সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মাননা পরমবীর চক্র প্রদান করে। এক্কা'র বাড়ি ভারতের বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচী শহরের পাশে গুমলা ব্লক এলাকায়। রাঁচী শহরের একটি জায়গায় এক্কার একটি মূর্তি বসানো আছে। জায়গাটি এলবার্ট এক্কা চক নামে খ্যাত। ভারত সরকার এলবার্ট এক্কার নামে ডাক টিকিটও প্রকাশ করেছে।

লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য করুন