শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

মহাভারতের সঞ্জয়

 

মহাভারতের সঞ্জয়



প্রণব কুমার কুণ্ডু


সঞ্জয় সূতবিশেষ। ইঁহার পিতা গবল্গণ। সেই জন্যে সঞ্জয়ের নাম, গাবল্গণি। হঁনি প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও ত্রিকালজ্ঞ ছিলেন।
সঞ্জয় ছিলেন মহাভারতে বর্ণিত অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রের ঘোড়ার সহিস ও তাঁর রথের সারথি। তিনি ছিলেন ধৃতরাষ্ট্রের সচিবও।

সঞ্জয় ছিলেন ব্যাসদেবের মহান শিষ্য।
ব্যাসদেবের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে, সঞ্জয়,  অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রকে, মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের
পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব বর্ণনা দিয়েছিলেন।
সঞ্জয় তাঁর গুরুদেব ব্যাসদেবের কৃপায়, যুদ্ধক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে, সব সময় উপস্থিত না থেকেও, দিব্যচোখে, যুদ্ধের সব ব্যাপার দর্শন করতে পারতেন ! এমন কি সৈন্যদের মনের কথা ও ভাব বুঝতে ও জানতেও পারতেন !

রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সমস্ত খবর দেওয়া সঞ্জয়।
তিনিও কুরুক্ষেত্রে কৌরব পক্ষের একজন যোদ্ধা ছিলেন।
সঞ্জয়, বর্ম পরিহিত হয়ে, আয়ুধ সহ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন।
সঞ্জয়কে দেখে, ধৃষ্টদ্যুম্ন ( দ্রুপদ রাজার পুত্র ) সাত্যকিকে ( যদুবংশীয় শিনিতনয় সত্যকের পুত্র ) বলেছিলেন, ' সঞ্জয়কে জীবিত রাখার প্রয়োজন কি ?'
তখন সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্নের কথা মতো,  নিশিত অসি দ্বারা সঞ্জয়কে বিনাশ করতে উদ্যত হল।

এমন সময়ে হঠাৎ সেখানে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস ( মহাভারত গ্রন্থের রচয়িতা ), নিজে এসে হাজির হলেন, এবং কৃষ্ণদ্বৈপায়ন সাত্যকিকে বললেন, ' যুযুধান ( সাত্যকির অপর নাম ) ! তুমি সঞ্জয়কে পরিত্যাগ করো ; সঞ্জয়কে বিনাশ করা কখনও কর্তব্য নয় !'
তখন মহাবীর সাত্যকি কৃতাঞ্জলিপুটে, মহর্ষি ব্যাসদেবের আজ্ঞা শিরোধার্য করে, সঞ্জয়কে বললেন, ' তুমি এক্ষণে নির্বিঘ্নে গমন করো !'
এইরূপে, সেই অপরাহ্নে, সাত্যকির অনুজ্ঞা লাভ করে, বর্ম ও আয়ুধ পরিত্যাগ করে, শোণিতলিপ্তকলেবরে সঞ্জয় ফিরে এলেন।

তখন কৌরবপক্ষে, দুর্যোধন ছাড়া, মাত্র তিনজন মহারথ অশ্বত্থামা ( দ্রোণচার্যের পুত্র; কৃপাচার্যের ভগিনী কৃপী অশ্বত্থামার জননী ),  কৃতবর্মা ( জনৈক যাদব, হৃদিকার পুত্র ) ও কৃপাচার্য ( কুরুপাণ্ডবগণের অস্ত্রশিক্ষক ), জীবিত ছিলেন।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে, বিদুর, সঞ্জয়, ধৃতরাষ্ট্র-গান্ধারীসহ, পাণ্ডবগণের আশ্রয়ে ছিলেন পনেরো বছর।

 তারপর সঞ্জয়, বৃদ্ধ ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীর সঙ্গে, বনে গিয়ে বনবাসী হন। কুন্তিও সঙ্গে যান। কুন্তির মনোগত ইচ্ছা কিন্তু ছিল, বনবাসে ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর সেবা শুশ্রূষা করা ! সঙ্গে ছিলেন বিদুরও।



অনন্তর ধৃতরাষ্ট্রদের বনবাসের তিন বছরের মাথায়, যুধিষ্ঠিররা সপরিবারে তাঁদের সাথে দেখা করতে যান।

বিদুর, বনের নির্জনে যুধিস্থিরকে একা পেয়ে, যুধিষ্ঠিরকে গাঢ় আলিঙ্গন করে, যোগ অবলম্বন করে, শরীরত্যাগ করেন। 

জনৈক ব্রহ্মর্ষি, অণীমাণ্ডব্য ঋষির অভিশাপে ধর্মরাজকে বিদুররূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল। আবার কুন্তির গর্ভে, ধর্মরাজের ঔরসে. যুধিষ্ঠিরের জন্ম।

 বনে ধৃতরাষ্ট্র-গান্ধারী-কুন্তি, অগ্নিদাহে মারা যান।
 
সঞ্জয় হিমাচল অঞ্চলে চলে যান। ওখানে তপস্যা করে তিনি বাকি জীবন কাটিয়ে দেন।