শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

পাঞ্জাবের গুরুকূল

 

পাঞ্জাবের গুরুকূল

Rai KishoriPhotoTito Nandi-এর সাথে আছেন।


পাঞ্জাবে গুরুকূলে 10-12 বছর বয়সী ছেলে বাচ্চাদের ভর্তির জন্য সব কিছু রেডি হয়ে গেছে। সামনের বছর মেয়ে বাচ্চারা ভর্তি হতে পারবে এবছর শুধু ছেলে বাচ্চা। জুন থেকে ক্লাস শুরু হবে। কারো জানা শোনা (10-14 বছর বয়সী)বাচ্চা দিতে চাইলে যোগাযোগ করতে অনুরোধ। বিঃদ্রঃ- এই গুরুকূলে প্রতিটি বাচ্চাকে সংস্কৃত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, চিকিৎসা শাস্ত্র, চাষবাস, ধর্মশিক্ষা, প্রকৌশলী শিক্ষা থেকে শুরু করে সকল শস্ত্র ও শাস্ত্র শেখানো হবে। ভবিষ্যতে তাকে কখনো চাকরী খুঁজতে হবে না কারণ সর্ববিদ্যায় পারদর্শী শিশু নিজের পছন্দ মত পেশা বেছে নেবে পাশাপাশি ধর্ম রক্ষায় পরম বীর তৈরি হবে। হর হর মহাদেব।
ঠিকানা দেয় নি ! ফালতু !


মনে হয় ওদের সার্টিফিকেটের, যদি দেয়, কোন বৈধতা থাকবে না !
প্রণব কুমার কুণ্ডু


165
58টি কমেন্ট
1 বার শেয়ার করা হয়েছে
লাইক করুন
কমেন্ট করুন
58টি

সনাতন হিন্দুধর্মে বিবাহ প্রথা

 

সনাতন হিন্দুধর্মে বিবাহ প্রথা



শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু













" হিন্দু ধর্মে বিবাহ " !
--------------------------
"বিবাহ" শব্দটি বি-পূর্বক বহ্ ধাতু ও ঘঞ্ প্রত্যয়যোগে গঠিত =বি+বহ্ +ঘ্ অঞ্ ( ঘ্ এবং ঞ্ লোপে অবশিষ্ট অ)= বি +বহ্ +অ( উপধা দীর্ঘ)= বি+বাহ্ +অ =বি+বাহ=বিবাহ ৷ বহ্ ধাতুর মানে বহন করা ৷ এবং "বি" উপসর্গের অর্থ বিশেষরূপে ৷অর্থাৎ বিশেষভাবে বহন করা ৷ মানব সভ্যতার প্রথম লগ্নে বিবাহ বন্ধন বলে কিছু ছিল না ৷ মনে করা হয় তখন প্রচলিত ছিল Pomiscuty অর্থাৎ গোষ্ঠীর সব পুরুষ সব মহিলার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হত ৷ পৃথিবীর সব দেশে এই মেলামেশাকে তখন প্রশাংসার দৃষ্টিতেই দেখা হত ৷এরপর নির্দিষ্ট পুরুষ ও মহিলার মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক হতে থাকলেও বিবাহের বাইরের যৌনাচারে কোন বাধা ছিল না ৷ প্রাচীন ভারতে উদ্দালকের ছেলে শ্বেতকেত(অরুণি)এই রীতিকে জঘন্য বলে সনাতনী সমাজে বিয়ের প্রচলন করেন ৷ তিনি বিবাহ বহির্ভূত স্বচ্ছন্দ বিহার বন্ধ করে নর-নারীর দাম্পত্য সম্পর্কে আস্থার সূচনা করেন ৷ উপনিষদে একে বলা হয়েছে অজ্ঞতা থেকে আত্ম ও সত্যের জ্ঞানে যাত্রা ৷বৈদিক যুগে অন্তর্বিবাহ (Endogamy) ও বহির্বিবাহ(Exogamy) র চল থাকলেও একগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ হয় ৷ নিকট সম্পর্কের মধ্যে বিয়ের অপকারিতা বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে ৷ উচ্চজাতির পুরুষ ও নিম্নজাতির নারীর অনুলোম (Kypergamy) এবং উল্টোটা প্রতিলোম ( Hypogamy)সম্পর্কেও বলা হয়েছিল ৷ অন্যান্য দেশে ও সমাজে এভাবে কোন না কোন মহাপুরুষ বিবাহ রীতির সূচনা করেছিলেন ৷ চীনে রাজা কাফাউ -লি ( Fou -Li) ও ল্যাপল্যান্ডে নজারভিস ও আটজিস বিবাহ রীতির প্রবর্তন করেছিলেন বলে জানতে পারি ৷ আসলে সেযুগে পুরুষের কাজ ছিল শিকার ও খাবার সংগ্রহ ৷নারীর কাজ ছিল তাকে সাহায্য করা এবং সন্তান প্রতিপালন করা ৷ এভাবে সৃষ্টি হয় বিবাহ রীতির ৷বিয়ে হল সহমিলন ৷মহাভারতে পড়েছি পান্ডু তাঁর স্ত্রী কুন্তীকে বলছেন আগেকার দিনে মহিলাদের তাদের স্বামী বা কোন আত্মীয়পরিজনের সাথে থাকতে হত না ৷ তারা নিজেদের মত আনন্দ করত ৷সেসময় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে সহবাস প্রচলিত ছিল ৷ যম -যমুনার কাহিনীতে বোঝা যায় ৷তবে ঋকবেদে (১০/১০/১২) তে এই কাহিনী বলে বোনের সাথে সহবাসকে পাপ বলা হয়েছে ৷ অন্যদেশেও ছিল একই ব্যাপার ৷ ৪২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রকাশিত গ্রীক বিয়োগান্ত নাটক Sophocles এর Oedipus এ পড়েছি অডিপাস অজান্তে বাবা Laius কে হত্যা করে গর্ভধারিনী মাকে বিবাহ করেছিলেন ৷ পরে অবশ্য মা বিষয়টি জেনে ফেলায় আত্মহত্যা করেন ৷ তবে , এখনও বিভিন্ন ধর্মে ও সমাজে মামা ভাগ্নি , পিসি ভাইপো , মাসি বোনপো এবং তুতো ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত আছে ৷ সম্পত্তি সহ নানা কারণে এসব প্রথা তৈরী হয়েছিল ৷ ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে ৷ বিবাহ মনুষ্য সমাজের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান ৷ যে প্রথাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে ধর্ম ৷দেশের আইন ও সমাজের প্রচলিত বিধি একে প্রভাবিত করেছে ৷যা ধর্ম , দায়িত্ব , অর্থ ও কাম অনুসরণ করে ৷প্রাচীন বিশ্বে এফ্রোডাইট ,,ইরোস , ফ্রিজ ,হথর ,হেরা ,জুনো , ওয়েস্টা প্রমুখ প্রেম , বিবাহ ও যৌনতার দেবদেবী ছিলেন গ্রীক, রোমান , নর্স ও মিশরীয় সভ্যতায় ৷ আমরা জগজ্জননী পার্বতীকে ও শিবকে এবং প্রজাপতি ব্রহ্মাকে বিবাহের দেবতা হিসাবে দেখি ৷বিয়েতে স্বামী -স্ত্রী শুভ দৃষ্টি বিনিময় করি ৷
প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ ঋকবেদে (৯/৬৭/১০-১২) সুশ্রী রমনীর জন্য প্রার্থনা দেখা যায় ৷হিন্দু বিয়ে সামাজিক চুক্তি নয় ৷সনাতন ধর্ম সেই যুগ থেকে নারী পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে ৷ পরে পরাধীনতা সহ নানা কারণে হিন্দু নারীকে অবগুন্ঠিত করে গৃহবন্দী করা হয়েছে ৷ এজন্য মধ্যযুগে নারীর অধিকার হরনের নানা গ্রন্থ ও কাহিনী হিন্দু সমাজে ঢুকে গিয়ে সনাতনী সমাজকে পিছিয়ে দিয়েছে ৷ বেদে(১০/৮৬/২২) এ " উদীর্স্বাতো বিশ্ববাসো নমসেলামহে ত্বা ৷ অন্যামিচ্ছ প্রফর্ব্যং সং জায়িং পত্যা সৃজ"( তুমি যাও ও অবিবাহিত নারীকে তোমার অর্ধাঙ্গিণী কর ও তাকে সমান অধিকার প্রদান কর।মন্ত্রটি পড়লেই বৈদিক যুগে সনাতনী নারীর সর্বোচ্চ অবস্থান বোঝা যাবে ৷ সহধর্মিনী অর্থাৎ স্ত্রীকে বাদ হিন্দুর কোন ধর্মকর্ম সম্পন্ন হয় না ৷ অথর্ববেদে মোহিনী মন্ত্রে প্রেম সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কথা বলে লেখা হয়েছে স্ত্রী বাড়ীর শোভা ৷ হিন্দু ধর্মে বিয়ে শুধু যৌন মিলনের জন্য নয় ৷ স্বামী -স্ত্রীর বন্ধন হল অন্যতম প্রধান সংস্কার ৷বিশুদ্ধিকরণের জন্য দশবিধ সংস্কার আছে তার শেষ সংস্কার বিবাহ ৷ কনেকে বরের হাতে সম্প্রদান করে বলা হয় তোমার ধর্মীয় কাজ আমার মেয়ের সাথে করো ৷ তাই , স্ত্রীকে বলে সহধর্মিনী ৷হিন্দু বিবাহের দুটি আচার বৈদিক ও লৌকিক ৷ বিভিন্ন ভাষাভাষী ও এলাকায় বিবাহের স্ত্রী বা লৌকিক আচারের তফাৎ থাকলেও বৈদিক আচার মন্ত্র , বরণডালা , গাঁটছড়া বাঁধা , সিঁদুর বা মঙ্গল সূত্র , মালা দান , সাত পাক ঘোরা (সপ্তপদী) , অগ্নি সাক্ষীর মত একতা দেখা যায় ৷আইবুড়ো ভাত , দধিমঙ্গল , অধিবাস , নান্দীমুখ , ঘট ডোবানো , গায়ে হলুদ ,বর বরণ , বধুবরণ ,ছাদনা তলা , সম্প্রদান , শয্যাতুলুনি ,বাসর জাগা , বাসি বিয়ে , কনে বিদায় , কুশন্ডিকা ,পাণিগ্রহণ , ধৃতিহোম , লাজহোম ,কালরাত্রি , ফুল শয্যা , বউভাত প্রভৃতি আচারে বিভিন্নতা দেখা যায় ৷ স্বামী -স্ত্রীর বন্ধন আমৃত্যু থাকার এমনকি জন্ম জন্মান্তরের বন্ধনের কথাও বলা হয় ৷ অবশ্য বিচ্ছেদের কিছু কারণও বলা আছে ৷বিয়ের মাধ্যমে হিন্দু নারীর গোত্রান্তর ঘটে ৷ পিতৃকুলের বদলে স্বামীকুলের গোত্র গ্রহণ করে ৷এভাবে দুটি ভিন্ন মানুষ অভিন্ন হয়ে নিজেদের বংশ এগিয়ে নিয়ে যায় ৷হিন্দু বিয়ে প্রাচীন আটটি ধারা রয়েছে ৷ ব্রাহ্ম , প্রজাপত্য , আর্য্য , দৈব্য , গান্ধর্ব্য , অসুর , রাক্ষস ও পৈশাচ ৷
যদিও ব্রাহ্ম্য ধারাটিই সাধারনে হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য ৷প্রথম চাররকম বিয়ে হয় বিভিন্ন মন্ত্রে ৷ গরিব বৈষ্ণবদের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিকৃতির সামনে কন্ঠি বদল করে বিয়েরও চল আছে ৷ঋক , সাম ও যজুঃ বেদ অনুসারে হিন্দু বিয়ের নিয়মে কিছু পার্থক্য দেখা যায় ৷
অগ্নিকুন্ড সাক্ষী রেখে সাত পাকের প্রথম পাকে স্বামী তাঁর স্ত্রী ও তাদের ভাবী সন্তানের দায়িত্ব বহনের এবং স্ত্রী তার পরিবারের দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দেন ৷ দ্বিতীয় পাকে উভয়ে যেকোন পরিস্থিতিতে অন্যের পাশে থাকবে , তৃতীয় পাকে দুজনেই সংসার প্রতিপালন ও রক্ষার জন্য অর্থ উপার্জনের ,চতুর্থে বর সব দায়িত্ব বৌয়ের হাতে তুলে দেওয়ার , পঞ্চম পাকে উভয়ে একত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার , ষষ্ঠ পাকে একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার ও সত্য কথা বলার এবং সপ্তম বা শেষ পাকে সারাজীবন বন্ধু হয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন ৷
এখন বিদ্যালয়ে যৌনশিক্ষার প্রচলন হয়েছে ৷ বড়দের , বন্ধুদের , বৌদি , জামাই বাবুর কাছে , আমাদের মত চিকিৎসক ও মনোবিদের কাছে আসে এবং নানা জায়গায় বিয়ের আগে যৌনশিক্ষা লাভ হয় ৷ বৈদিক যুগেও যৌন শিক্ষার বিষয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা জানতে পারি ৷কুমারী ঘোষা চিকিৎসক অশ্বিনীকুমারদের কাছে গিয়েছিলেন ," জনিষ্ট ঘোষা পতয়ৎ কনীনকো বি চারু হন্বীরু বৌ দংসনা অনু ৷ অস্মৈ বীয়ন্তে নিবনের সিন্ধোবোহস্মা অহ্নে ভবতি তৎপতিত্বনম্ "( ঋকবেদ -১০/৪০/৯০) ৷
আমাদের সনাতনীরা বিয়ের সময় ছান্দগ্য ব্রাহ্মণের মন্ত্রটি বলি ," আমার হৃদয় তোমার হোক , তোমার হৃদয় হোক আমার ৷ আমি আমাকে তোমায় দিলাম , তোমার তোমাকে আমার করলাম "৷ এই সুন্দর পবিত্র মন্ত্রটি সংস্কৃতে বলি ,"যদ্যেত হৃদয়ং তব , তদস্তু হৃদয়ং মম ৷
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব "!
( আজ আমার বড় ভাগ্নির বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে লেখাটি দিলাম ৷ আমার "সনাতনী কৃষ্টিকথা " বইতে হিন্দুর বিভিন্ন আচার পার্বণ ও ধর্মীয় বিষয় তুলে ধরেছি ৷ আশাকরি আপনারা বইটি পড়বেন ৷ বইটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগলে আনন্দিত হবো ৷)
॰॰॰॰॰॰॰ ডাঃদীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
৯৭৩২২১৭৪৮৯

বাংলা পঞ্জিকা

 

বাংলা পঞ্জিকা



শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু













বাংলা সনের প্রবর্তক কে ? সম্রাট আকবর, না রাজা শশাঙ্ক ? এবং পৃথিবীর সবেচেয়ে পুরোনো কাল গনণা রীতি কোনটি ?
মুসলমান প্রভাবিত এবং মুসলমানদের দ্বারা লিখিত ইতিহাসের কুশিক্ষা অনুযায়ী আমরা এটাই জানি যে, সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তক। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ফসল উঠার সময় জানতে এবং কর আদায়ের সুবিধার জন্য সে এই সনের প্রবর্তন করে । কৃষকদের ফসল তোলার সময় সম্পর্কে জানার সুবিধার জন্য এই সাল চালু হয় বলে এর নাম নাকি আবার ফসলী সন ! আরো বলা হয়, হিজরি ৯৬৩ সালের সাথে মিল রেখে, ঐ সালকেই বাংলা ৯৬৩ হিসেবে ঘোষণা ক‌'রে বাংলা সনের চালু করা হয়।
যে তিনটি প্রশ্ন করলে এই পুরো থিয়োরি ধ্বসে পড়বে, সেই প্রশ্ন তিনটি আপনাদেরকে জানিয়ে দেবো এই লেখার মাঝখানে। তার আগে ইতিহাসের অন্যান্য আলোচনাগুলো সেরে নেওয়া যাক।
খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতকের কিছু সময় বাংলা তথা গৌড়ের রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। ইনি প্রথমে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনস্থ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা অর্থাৎ বর্তমানের ভারত বাংলাদেশের বাংলা এলাকার সামন্ত শাসক ছিলেন। ষষ্ঠ শতকের শেষ দশকে, শেষ গুপ্ত সম্রাট, হীনবল হয়ে পড়লে, শশাঙ্ক, গুপ্ত অধীনতা মুক্ত হয়ে নিজেকে বাংলা তথা গৌড় রাজ্যের রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। এই ঘটনা ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের এবং সেই বছর থেকেই রাজা শশাঙ্কের সিংহাসনে আরোহনের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বাংলা সনের চালু হয়। এই ব্যাপারে শ্রীসুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, "বঙ্গাব্দের উৎস কথা" শীর্ষক একটি পুস্তিকায় বলেছেন,
"সৌর বিজ্ঞান ভিত্তিক গণিত হিসাবে ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ এপ্রিল, সোমবার, সূর্যোদয় কালই বঙ্গাব্দের আদি বিন্দু।"
বহু ভাষাবিদ ‘রহমতুল্লাহ বাঙ্গালী’ তাঁর "বঙ্গাব্দের জন্মকথা" গ্রন্থেও ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দের সূচনা এবং রাজা শশাঙ্কই বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এখন দেখা যাক, বাংলা সনের প্রবর্তক হিসেবে সম্রাট আকবরকে, তারই আমলের রচিত ইতিহাস, তাকে কতটুকু স্বীকৃতি দেয় ?
"আইন-ই-আকবরী" নামে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের সময়ের একটি বিখ্যাত গ্রন্থ আছে, কিন্তু এই গ্রন্থে বাংলা সন বা ফসলী সন চালুর ব্যাপারে কোনো কথার উল্লেখ নেই। কিন্তু আকবর, ১০৭৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইরানে প্রচলিত "জেলালি সৌর পঞ্জিকা" অনুসরণে ভারতে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে "তারিখ-ই-ইলাহী" নামে একটি সৌর পঞ্জিকা চালু করেছিলো, কিন্তু কয়েক দশক পর এই "তারিখ-ই- ইলাহী" পঞ্জিকার ব্যবহার সম্পূর্ণরুপে মুখ থুবড়ে পড়ে, এ ব্যাপারে আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
এবার একটু তুলনামূলক আলোচনায় যাওয়া যাক। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি আকবরের রাজ্যভিষেক হয়, বলা হয়, সেই সময় থেকে বাংলা সন চালু হয়, এটা হলে পহেলা বৈশাখ ১৪ বা ১৫ এপ্রিল না হয়ে তো ১৪ ফেব্রুয়ারি হতো। তাহলে বর্তমানে পহেলা বৈশাখ ১৪ বা ১৫ এপ্রিল হয় কেনো ? রাজ্যভিষেকের সময় আকবরের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর, সেই সময় কি তার পক্ষে খাজনা আদায়ের সুবিধার কথা ভেবে, ফসল তোলার সাথে সঙ্গতি রেখে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্যালেণ্ডার চালু করার আদেশ দেওয়া সম্ভব ?
এর বিপরীতে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের "তারিখ-ই-ইলাহী"র মতো সৌর পঞ্জিকা প্রচলন বেশি যুক্তিসঙ্গত; কারণ, ইতোমধ্যে তাকে বেশ কিছুদিন রাজ্য পরিচালনা করতে হয়েছে এবং আরবী হিজড়া সালের অবাস্তবতা তাকে একটি সৌর পঞ্জিকা প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে। কারণ, আকবর বুঝতে পেরেছিলো যে, ইসলামের নবী, বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানী মুহম্মদ এবং তার অনুসারী খলিফা কর্তৃক প্রবর্তিত হিজড়া মাসের কোনো জন্ম পরিচয়ের ঠিক-ঠিকানা নেই, এই হিজড়া ক্যালেণ্ডার মুসলমানদের রমজান মাস এবং ঈদের দিন নির্ধারণ করা ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো কাজে লাগে না। তাছাড়া এই সময়ের পূর্বেই, ইরান থেকে নূরজাহানের পিতা, আকবরের সভায় এসে পড়েছিলো, সুতরাং তার কাছ থেকে ইরানি সৌর পঞ্জিকা এবং তার কার্যকারিতার বিষয়ে আকবেরর জেনে যাওয়া অসম্ভব কিছু ছিলো না।
রাজা শশাঙ্ক প্রবর্তিত বাংলা সনের আদি বিন্দু ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ এপ্রিল। পরে বেশ কয়েকবার পঞ্জিকা সংস্কারের কারণেই মনে হয় এই ১২ এপ্রিল, বর্তমানের ১৪ বা ১৫ এপ্রিলে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু সম্রাট আকবরের নামে চালানো বাংলা সনের আদি বিন্দু ১৫৫৬ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি তো কিছুতেই ১৫ এপ্রিলে এসে পৌঁছতে পারে না। যদি বলা হয় যে, পঞ্জিকা সংষ্কারের কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারি, বর্তমানের ১৪/১৫ এপ্রিলে পৌঁছেছে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই পঞ্জিকা কে, কবে সংস্কার করলো ?
কোনো ঘটনা ঘটার আগে, সেই বিষয়ে কোনো কথাবার্তা ইতিহাসে থাকা একেবারেই অসম্ভব। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে যদি বাংলা সন চালু হয়, তাহলে তার আগে বাংলা সন তারিখ ইতিহাসে থাকতে পারে না। কিন্তু আকবরের বহু পূর্বে প্রতিষ্ঠিত- মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক, পুঁথি বা বইপুস্তকে বাংলা সন ও তারিখের উল্লেখ পাওয়া গেছে, এগুলো এলো কোথা থেকে ?
পৃথিবীর সকল সাল শুরু হয়েছে ১ থেকে এবং এটাই যুক্তিসঙ্গত। তাহলে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ অনুযায়ী ৯৬৩ হিজরি সালকে ভিত্তি ধরে বাংলা সন চালু করতে হবে কেনো এবং বাংলা সন ১ থেকে শুরু না হয়ে ৯৬৩ থেকে শুরু হবে কেনো ? আকবর যদি বাংলা সন চালু করেই থাকে, তাহলে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দকেই বাংলা ১ সন হিসেবে ধরে হিসেব করতে তার অসুবিধে কী ছিলো ?
বাংলা বার ও মাসের নামগুলো এসেছে, ভারতীয় জ্যোতিষ বিজ্ঞানের দেওয়া বিভিন্ন গ্রহ ও নক্ষত্রের নাম থেকে। রবি, সোম বা বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ-এই নামগুলো কি আকবরের সময় থেকে ভারতে প্রচলিত হয়েছে, না অনেক আগে থেকেই প্রচলিত আছে ? যদি আকবরের সময় থেকেই এগুলো প্রচলিত হয়ে থাকে, তাহলে মহাভারতে উল্লিখিত মহর্ষি জৈমিনী এবং পরে- বরাহ, মিহির, খনার মতো বিখ্যাত জ্যোতিষীগণ কিভাবে এবং কোন ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী তাদের হিসেবে নিকেশ করতেন ?
উপরে অনেকগুলো প্রশ্ন অলরেডি করে ফেলেছি, এবার সংক্ষেপে যে তিনটি প্রশ্ন করলে আকবরের বাংলা সন চালু করার এই মুসলমানি ইতিহাস সম্পূর্ণ ধ্বসে পড়বে, সেই তিনটি প্রশ্ন এবার আপনাদেরকে বলি।
প্রথম প্রশ্ন, আকবর সমগ্র ভারতের সম্রাট ছিলো, নাকি শুধু বাংলার সম্রাট ছিলো ? উত্তর হলো, আকবর ছিলো সমগ্র ভারতের সম্রাট।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, ফসল কি শুধু বাংলাতেই হতো, না সমগ্র ভারতে হতো ? উত্তর- সমগ্র ভারতেই হতো, এখনও হয়।
তাহলে এখন তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে - সমগ্র ভারতে ফসল হওয়া সত্ত্বেও এবং আকবর, সমগ্র ভারতের সম্রাট হওয়ার পরেও কেনো শুধু বাংলা এলাকার জন্য সে বাংলা সন চালু করতে যাবে ? বাংলা ছাড়া অন্যান্য রাজ্যের খাজনা বা কর কি তার প্রয়োজন ছিলো না ?
প্রথম দুটির দরকার নেই, আকবরের অনুসারীরা শেষ প্রশ্নটার উত্তর দিয়ে যাবেন।
*****************************************************************
বর্তমানে যে বাংলা সনের বয়স ১৪২৯ বছর, সেই অনুযায়ী রাজা শশাঙ্কই যে বাংলা সনের প্রবর্তক, আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে তা পাঠক বন্ধুদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, রাজা শশাঙ্ক, যে দিন এবং মাসের নামগুলোর সাহায্যে বাংলা সন চালু করলেন, সেগুলো তিনি পেলেন কোথায় ?
উপরেই উল্লেখ করেছি, সপ্তাহের ৭ দিনের নামগুলো এসেছে ভারতীয় জ্যোতিষ বিজ্ঞানের দেওয়া বিভিন্ন গ্রহের নাম থেকে এবং এই নামগুলোই বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশে, সেই সব দেশের ভাষার শব্দে রূপান্তরিত হয়ে ব্যবহার হচ্ছে। আর্য সভ্যতা যে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা এবং পৃথিবীর সব লোক যে এক সময় সনাতনী ছিলো, এটি তার একটি প্রমাণ।
বার, মাসের হিসেব-- জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি অপরিহার্য অংশ এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র হলো বেদ এর একটি অঙ্গ, যে বেদ রচিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৮/১০ হাজার বছর আগে।
বর্তমানে প্রচলিত সবচেয়ে প্রাচীন সাল গণনা পদ্ধতি হলো খ্রিষ্টাব্দ, এর বর্তমান বয়স ২০২২ বছর। ইংরেজরা যেহেতু এক সময় প্রায় সমগ্র পৃথিবীর উপর রাজত্ব করেছে এবং এখনও জ্ঞান বিজ্ঞান ও অর্থশক্তি দিয়ে যেহেতু এক প্রকারের পরোক্ষ রাজত্ব করছে, তাই তাদের সাল গণনা পদ্ধতি এবং ইংরেজি ভাষাকে আমরা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু আর্য সভ্যতা এবং তার পরবর্তী লোকজন যে, তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত দিন ও বর্ষ গনণা রীতি ব্যবহার করতো, তার বহু প্রমাণ আছে আর্য সভ্যতার দুই মহাকাব্য রামায়ণ এবং মহাভারতে; এখন সেখান থেকে কিছু উদাহরণ দিচ্ছি-
প্রথমে রামায়ণ থেকে, আজ যে আমরা ভগবান রামচন্দ্রের জন্মদিন উপলক্ষে রাম নবমী পালন করি, যে রাম নবমী পড়ে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের নবম দিনে, প্রায় ৭১০০ বছর আগে রামের জন্মের সময় যদি দিন ও মাসের হিসেব না থাকতো, তাহলে এই দিনটি কিভাবে রাম নবমী হিসেবে খ্যাত হলো এবং কিভাবেই বা তা বর্তমান সময় পর্যন্ত চলে আসলো ?
এছাড়াও আমরা প্রায় সবাই জানি, রাম-সীতা-লক্ষণ, ১৪ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলো, বনবাসের ১৩ তম বর্ষে, সীতা, রাবন কর্তৃক অপহৃত হয় এবং সেই বছরেই যুদ্ধ হয়, অর্থাৎ বনবাসের ১৩ তম বছর ছিলো রাম-সীতা-লক্ষণের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়, এ থেকেই উদ্ভব হয়েছে আনলাকি থার্টিন বা ১৩ হলো অশুভ বা অসৌভাগ্যের প্রতীক বলে একটা বিশ্বাসের; রামায়ণের যুগে, যদি দিন-মাস-বছরের হিসেব না থাকতো, তাহলে বনে বাস করার পরেও কিভাবে তারা ১৪ বছরের হিসেব করতে পেরেছিলো ?
এবার আসি মহাভারতে, ১৩ যে সত্যিই অশুভ সংখ্যা, তার প্রমাণ আছে মহাভারতেও। কারণ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ১২ তম দিন পর্যন্ত পাণ্ডব পক্ষের অবস্থা অনুকূল থাকলেও, যুদ্ধের ১৩ তম দিন ছিলো তাদের জন্য সবচেয়ে প্রতিকূল; এই দিনেই অর্জুন পুত্র অভিমন্যুর মৃত্যু হয়। ভাবছেন, ১৩ তম দিন পাণ্ডবদের জন্য প্রতিকূল বা অশুভ হলে তো তা ছিলো কৌরবদের জন্য অনুকূল বা শুভ, তাহলে ১৩ সবার জন্য অশুভ হয় কিভাবে ? প্রকৃতপক্ষে ১৩ তম দিন পাণ্ডবদের জন্য অশুভ হলেও, তা কৌরবদের জন্যও শুভ ছিলো না; কারণ, ১৩ তম দিনে কৌরবরা হয়তো অভিমন্যুকে মারতে পেরেছিলো, কিন্তু এর ফলেই অর্জুনের রাগ বৃদ্ধি পায় এবং কৌরবদের বিনাশ ত্বরান্বিত হয়, যার কারণে পরবর্তী ৫ দিনে কৌরব পক্ষের সবাই নিহত হয়।
যা হোক, এই মহভারতেও-- দিন, মাস ও বছর গণনার রয়েছে অনেক উদাহরণ। প্রথমত, দেবী গঙ্গা যখন ভীষ্মকে বিদ্যা শিক্ষা শেষে, রাজা শান্তনুর কাছে দিয়ে যায়, তখন ভীষ্মের বয়স ২৫ বছর; বনে জন্ম হওয়ার পর, পাঁচ ভাইয়ের সাথে অর্জুন যখন প্রথম হস্তিনাপুর আসে, তখন তার বয়স ১৪ বছর; পাণ্ডব ও কৌরবের ১০৫ ভাই, গুরু দ্রোণের কাছে গিয়ে শিক্ষা লাভ করে ১২ বছর ধরে; দুর্যোধন ও শকুনি পাশা খেলায় ছলনা করে যুধিষ্ঠিরের রাজ্য কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ১২ বছরের বনবাস এবং ১ বছরের জন্য অজ্ঞাত বাস দেয়; দিন-মাস-বছরের হিসেব যদি তখন চালু না থাকতো, তাহলে এই হিসেবগুলো তারা কিভাবে করেছিলো ?
শুধু তাই নয়, তারা এই হিসেবগুলো এত সূক্ষ্মভাবে জানতো যে, অজ্ঞাতবাস যেদিন শেষ হয়, সেই দিন সূর্যাস্তের পর অর্জুন নিজেকে প্রকাশ করে, বিরাট নগরীকে রক্ষায় হস্তিনাপুরের সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে; এর ফলে দুর্যোধন গোঁ ধর বলে, তারা শর্ত মানতে পারে নি, অজ্ঞাত বাস শেষ হওয়ার আগেই তাদেরকে আমরা দেখে ফেলেছি, সুতরাং শর্ত মোতাবেক রাজ্য তাদেরকে দেবো না, তাদেরকে আবার ১২ বছরের জন্য বনে যেতে হবে, দুর্যোধনের এই গোঁড়ামির জন্যই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়।
এছাড়াও সূর্যের উত্তর গোলার্ধে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে চলার যে হিসেব, যাকে বলা হয় উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন, সেটাও মহাভারতের সময়ের লোকজন এত ভালো করে জানতো যে, সেই হিসেব অনুযায়ীই, ইচ্ছা মৃত্যুর বর প্রাপ্ত ভীষ্ম, প্রাণ ত্যাগ করে।
তার মানে দিন-মাস-বছরের হিসেব, আর্য সভ্যতার মুনি ঋষিরা খুব ভালো করেই আবিষ্কার করেছিলো এবং তার পরবর্তী লোকজন তার ব্যবহার খুব ভালো করেই জানতো; যেটা বর্তমান থেকে কমপক্ষে ৫ হাজার বছর আগে, খ্রিষ্টাব্দ চালুর অন্তত ৩ থেকে ৬ হাজার বছর আগে।
এছাড়াও আপনারা জানেন যে, পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন পালন করা হয় ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে; দিন-মাস-বছরের হিসেব জানা না থাকলে সেই সময় থেকে এটা প্রচলিত হলো কিভাবে ?
রাজা শশাঙ্ক, তার সিংহাসন আরোহনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য অনেক রাজা বাদশা ও ধর্মগুরুদের মতো, তার জন্মের অনেক আগে, সুদূর বেদ এর যুগ থেকে প্রচলিত, রামায়ণ-মহাভারতে প্রচলিত, দিন-মাস-বছরের হিসেবকে ভিত্তি করেই বাংলা সন চালু করেছিলেন।
সুতরাং হিন্দু কাল গণনা অর্থাৎ বর্ষ গণনা রীতি যে কত প্রাচীন এবং তা কত সমৃদ্ধ, আশা করছি তা পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। শুধু মাত্র রাজনৈতিক সচেতনতার জ্ঞান অর্থাৎ ভূমি দখল ও ভূমি রক্ষার জ্ঞানে পরবর্তী হিন্দুরা নির্বোধ বলে, বিদেশী শক্তি, বিদেশী কালচার ও বিদেশী ধর্মের কাছে আমরা বার বার পরাস্ত ও পদানত হয়েছি এবং তাদের মিথ্যা প্রচারে নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে না জেনে মিথ্যাটাকে জেনেছি এবং তাকেই সত্য বলে মনে করেছি। কিন্তু প্রকৃত সত্যকে উম্মোচন করার জন্যই হয়তো আমার জন্ম হয়েছে, তাই কোনো ব্যক্তিমত বা পথের অনুসারী বা ভক্ত না হয়ে এবং কারো দালালী না ক’রে শত হুমকি ধামকিকে উপেক্ষা করেও আমি চেষ্টা করছি সেই সত্যের উম্মোচনের এবং তা করে যাবো।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
পরিশিষ্ট : কেনো দুই দেশে নববর্ষ দুই দিনে ?
বাংলাদেশে সাধারণত পহেলা বৈশাখ পালিত হয় ১৪ এপ্রিল, আর পশ্চিমবঙ্গে পালিত হয় সাধারণত ১৫ এপ্রিল; তবে লিপ ইয়ার জনিত সমস্যার কারণে কখনো কখনো দুই বাংলায় একই দিনে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়, যেমন হয়েছিলো ২০১৬ সালে। কিন্তু প্রতি বছর দুই বাংলায় কেনো একই দিনে পহেলা বৈশাখ পালিত হয় না ?
এটা বাংলাদেশ সরকার, বিশেষ করে এরশাদ সরকারের ছিলো একটি সূক্ষ্ম চাল। এরশাদ সরকারের শেষ সময়, সম্ভবত ১৯৮৮ সালের দিকে বাংলা ক্যালেন্ডার সংস্কারের নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়, এই কমিটি এমনভাবে ক্যালেন্ডার সংস্কার করে যাতে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে পালিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিন একইদিনে অনুষ্ঠিত না হয়ে, কমপক্ষে একদিন আগে পিছে হয়।
এর কারণ ছিলো, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সাথে বাংলাদেশের হিন্দু এবং হিন্দু মানসিকতা সম্পন্ন মুসলমানদের মানসিক দূরত্ব বৃদ্ধি করা; যাতে বাংলাদেশের হিন্দু মানসিকতা সম্পন্ন মুসলমানরা আরো গোঁড়া মুসলমান হয় এবং হিন্দুরা আস্তে আস্তে হিন্দুত্ববাদ থেকে সরে এসে ইসলামে বিলীন হয়ে যায়। কেননা, দুই দেশে কোনো জাতি যখন একই অনুষ্ঠান একই দিনে পালন করে, তখন তাদের মধ্যে একটি অলিখিত মানসিক বন্ধন তৈরি হয়, মনের দিক থেকে তারা একটি নৈকট্য অনুভব করে। এরশাদ সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, বাংলাদেশের হিন্দু এবং হিন্দু মানসিকতা সম্পন্ন মুসলমানদেরকে, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের থেকে মানসিকভাবে দূরে রেখে, তাদেরকে আস্তে আস্তে প্রকৃত মুসলমান বা মুসলমান বানানো।
তাছাড়া আর কী কারণ ছিলো, এই ক্যালেন্ডার সংস্কারের ? ক্যালেণ্ডার সংস্কার না করলে কি অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো, না জিডিপি কমে যাচ্ছিলো ? প্রকৃতপক্ষে ক্যালেন্ডার সংস্কার করার কোনো দরকারই ছিলো না, বরং এটা করে জটিলতা আরো বেড়েছে; বাংলাদেশে প্রকাশিত পঞ্জিকায় এখন দুইটা বাংলা তারিখ লিখা থাকে, একটা প্রকৃত বাংলা তারিখ, আর একটা বাংলাদেশ সরকারের বাংলা তারিখ। যদিও বাংলাদেশের কোনো মুসলমান বাংলা তারিখ ব্যবহার করে না, যেটুকু করে তা হিন্দুরা। তাহলে ক্যালেন্ডার সংস্কারের নামে একে জগাখিচুড়ি না বানাল কি হতো না ? বাংলাদেশের কোনো হিন্দু কি এখনো বাংলাদেশ সরকারের বাংলা তারিখ মানে ? মানে না। আবার কোনো মুসলমানও এই তারিখ ফলো করে না। নিতান্ত দিতে হয়, তাই বাধ্য হয়ে বাংলা পত্রিকাগুলো তাদের প্রথম পেজে বাংলাদেশ সরকারের বাংলা তারিখটা ছাপায়; এর না আছে কোনো দরকার, না আছো কোনো তাৎপর্য; তাহলে কেনো এই ক্যালেন্ডার সংস্কার ?
সংস্কার, এ কারণেই যে, যেটা উপরেও বললাম, যাতে বাংলাদেশের হিন্দুরা. পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের কাছ থেকে মানসিকভাবে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয় এবং তারা আস্তে আস্তে ইসলামে বিলীন হতে বাধ্য হয়, সরকারের সেই আশায় গুড়ে বালি; কারণ, বাংলাদেশের হিন্দুরা বাংলাদেশ সরকারের এই ক্যালেন্ডর মানে না, আর কোনোদিন মানবেও না।
আবারও
জয় হিন্দ।