বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯

যূপকাষ্ঠ


যূপকাষ্ঠ



প্রণব কুমার কুণ্ডু













যূপকাষ্ঠ প্রতিষ্ঠা করার সময়, ছয়টি বেল গাছের শাখার সঙ্গে, ছয়টি পলাশ বা খয়ের গাছের ডাল, স্থাপিত করতে হত।

অশ্বমেধ যজ্ঞের যূপ নির্মাণে, একটি বহেরা গাছের শাখা, ও দুটি দেবদারু গাছের শাখাও, যোগ করার নির্দেশ ছিল।

যজ্ঞের পশুবন্ধনের খুঁটিকে, যূপ বলে।

অনেক সময়, আভিজাত্য বাড়ানোর জন্য এবং সৌন্দর্য বিধানের জন্য, যূপকাষ্ঠ স্বর্ণমণ্ডিতও করা হত।



* সূত্র : 'শ্রীমদ্‌বাল্মীকীয় রামায়ণ', পৃষ্ঠা ৩০, গীতা প্রেস।


অতীশ দীপঙ্কর


ফেসবুক থেকে  শেয়ার করছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু

প্রণব কুমার কুণ্ডু









পোস্টটি লিখেছেন
বোতল কুমার

from: dw.com
অতীশ দীপঙ্কর

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৫৫


বৌদ্ধর্ধমাবলম্বী বাঙালি পন্ডিত, র্ধমগুরু, শিক্ষাবিদ, দর্শনিক, লেখক , র্সবকালের র্সবশ্রেষ্ঠ বাঙালি জ্ঞানতাপস শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর 980 খৃস্টাব্দে ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কল্যাণশ্রী, মা প্রভাবতী দেবী। পিতামাতা নাম রেখেছিলেন - আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ। 19 বছর বয়সে বৌদ্ধর্ধমে দীক্ষিত হ'লে নতুন নাম হয় - দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।

পান্ডিত্যে প্রথম হাতে-খড়ি হয় জননীর কাছে। পরে অবধূত জেতারির কাছে শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং বিহারের কৃষ্ণগিরি রাহুলের কাছে শাস্ত্রে দীক্ষিত হ'লে গুহ্যজ্ঞানবজ্র উপাধি লাভ করেন।

মাত্র 31 বছর বয়সে তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষু হন। 1011 খৃস্টাব্দে বহুসংখ্যক শিষ্য নিয়ে তিনি সুর্বণ দ্বীপ বা মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে 12 বছর বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে গবেষণা করে জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। এবং তৎকালীন রাজা মহীপালের অনুরোধে বিক্রমশীলা মহাবিহারের প্রধান অধ্যক্ষের পদে যোগ দেন। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান একজন  সর্ববিষয়ের পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি পান।

1041 খৃস্টাব্দে তিব্বতের রাজা চ্যান-চাব জ্ঞানপ্রভ র্কতৃক নিমন্ত্রিত হয়ে সেখানে যান র্ধমপ্রচারের জন্য। ঐ বছর তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে দুর্গম হিমালয় র্পবতমালা অতিক্রম করেন এবং যাত্রাপথে নেপালের রাজা র্কতৃক সম্মানিত হন। নেপালের রাজপুত্র পথপ্রভা তাঁর কাছ থেকে বৌদ্ধর্ধম গ্রহণ করেন। তিব্বতে গিয়ে তিনি পান রাজকীয় সম্মান। এখনো তিব্বতের মঠের দেয়ালে সেই সংর্বধনার দৃশ্য আঁকা আছে।

তিব্বতে গিয়ে তিনি র্ধম প্রচারের সাথে সাথে বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসা ও কারিগরিবিদ্যা বিষয়ে তিব্বতী ভাষায় বই লেখেন। এবং তিব্বতে সম্মানজনক অতীশ উপাধি পান।

তিব্বতে তিনি গবেষণা কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সেখানে বহু প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথি আবিষ্কার করেন। এবং এগুলোর প্রতিলিপি তৈরি করে বাঙলা দেশে পাঠান। এছাড়াও তিনি বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেন ভোট ভাষায়। জানামতে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের রচিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় 200।

তিব্বতে অবস্থানকালে তিনি সেখানে শান্তিস্থাপনে কাজ করেন। তাঁর উদ্যোগেই রাজা ন্যায়পাল ও পশ্চিমদেশিয় র্কণরাজের মধ্যকার বিবাদ মিটে যায়।

তিব্বতে কাজ করে তিনি যে অর্থ আয় করেছিলেন, তাও নিজের জন্য ব্যয় করেন নি। স্থানীয় একটি নদীর পানি থেকে প্রতিবছর বন্যা হতো সেটি ঠ্যাকাতে তিনি সে অর্থ ব্যয় করে বাধ র্নিমাণ করেন। এবং বন্যা প্রতিরোধে সফল হন।

অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে খুবই শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিব্বতীয়দের কাছে তিনি বুদ্ধের অবতার বলে আজো পূজিত হন। শ্রীজ্ঞান তিব্বতে ছিলেন 17 বছর এবং সেখানেই 1053 খৃস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। তিব্বতের লামায় তাঁর সমাধি আছে। তিনি লামা র্ধম প্রর্বতন করেন

দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে তিব্বত যাত্রা করেন৷ তখন তার বয়স ৫৯ বছর৷ ১০৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি নেপালে কাটান৷ মানস সরোবর থেকে তিব্বতে যাওয়ার দুটি প্রাচীন পথ আছে৷ তাদের মধ্যে অতীশ কোনটি গ্রহণ করেন তা সঠিক জানা যায় না৷ শ্রী শরৎচন্দ্র দাস তার অনুবাদে অতীশের সঙ্গীসহ যাত্রীদের একটি সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন, “৩৫ জন সঙ্গী পরিবৃত হয়ে অতীশ খোলিংয়ের পথে চলেছেন৷ (তার বাহন) অশ্বটি সুবর্ণ হংসের মতো মৃদুমন্দ গতিতে এই মহামুনিকে বহন করে চলেছে৷ অতীশের বয়স তখন ৬০ বছর৷ তবুও তার প্রশানত্ম মুখশ্রী ও অঙ্গসৌষ্ঠব তাকে দেবদুর্লভ মহিমামণ্ডিত করেছেন৷ সুস্মিতমুখে, উদাত্ত গম্ভীর স্বরে তিনি অনর্গল সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছেন৷ তার সুমিষ্ট বাচনভঙ্গিতে প্রতি বাক্যের শেষে তিনি বলছেন, ‘অতি ভালো! অতি ভালো! অতি মঙ্গল! অতি ভালো হত্র (হয়)৷”

অতীশের তিব্বতি শিষ্য ও পথসঙ্গী নাগছো ছুলঠিম জলবা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই বর্ণনাটি দিয়েছেন৷ ভাষাতত্ত্বের বিচারে দেখা যায়, ভালো বা ভালা- এই শব্দটি একাদশ শতকের বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল৷ অতীশের নিজমুখে উচ্চারিত বাক্যের এ নিদর্শন থেকে তিনি যে বাঙালি ছিলেন এ অনুমানই স্বাভাবিক৷

তিব্বতি সীমানত্মে রাজপ্রতিনিধিরা অতীশকে বিপুল সংবর্ধনা জানান৷ তারপর তারা চীনের ড্রাগন আঁকা একটি পাত্রে তিব্বতি প্রথায় প্রস্তুত চা অতীশকে নিবেদন করেন৷ তারা বলেন, এই স্বর্গীয় পানীয় কল্পদ্রম্নমের নির্যাস থেকে তৈরি৷ অতীশ এই উচ্চ প্রশংসিত পানীয়টির নাম জানতে চান৷ লোচাবা ছুলঠিম জলবা বলেন, ‘গুরম্নদের, এর নাম চা৷ তিব্বতের ভিক্ষুরাও এটি পান করেন৷ অতীশ তখন মনত্মব্য করেন, ‘তিব্বতের ভিৰুদের উন্নতশীলের গুণেই চায়ের মতো এমন চমৎকার পানীয় প্রস্তুত হয়েছে৷’ তিব্বতিরা বলেন, প্রথম চা পানের পর অতীশ চায়ের প্রশসত্মিমূলক একটি কবিতাও প্রকাশ করেন৷ আমার দুঃখ এই যে, সেই কবিতাটি আমি এখনো পাইনি৷

অতীশের জীবনীতে চা কে এত গুরম্নত্ব দেয়ার সম্ভবত অন্য কারণ আছে৷ তিব্বতের সম্রাট স্রোংচান গামপো-র পৌত্র চীন থেকে এ পানীয়টি আমদানি করার পর তিব্বতে চা জাতীয় পানীয়ের স্থান দখল করে৷ সম্পন্ন তিব্বতিরা দিনে ৩০ থেকে ৭০ কাপ চা পান করেন৷ স্বাভাবিকভাবেই তিব্বতের মানুষ তাদের জাতীয় ধর্মগুরম্ন অতীশকে চায়ের পরম সমঝদার রূপে চিত্রিত করেছেন৷ আজ পর্যনত্ম আমাদের পাওয়া তথ্যে অতীশই প্রথম বাঙালি চা পানকারী ও চা সম্পর্কিত কবিতার রচয়িতা৷