রূপক রায়-এর কলাম ( চার )
শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
ফটো হিসেবে এই প্রবন্ধের সাথে যেটা যুক্ত করেছি, তার জবাব দেওয়া ই আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য। তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক:
হিন্দু নামে এই লেখাটা ছাড়া হলেও এটা যে কোনো মুসলমানের কাজ সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই; কারণ, এটা মুসলমানদের বহুল চর্চিত কপি পেস্ট-
যা হোক, ফটোপোস্টের শুরুতেই লিখা হয়েছে,
“সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই, কোন প্রতিমূর্তি নেই, কোন প্রতিকৃতি নেই, কোন রূপক নেই, কোন ফটোগ্রাফ নেই, তাঁর কোন ভাস্কর্য নেই।”
এর রেফারেন্স হিসেবে লিখা হয়েছে,
“শ্বেতাসত্র উপনিষদ, অধ্যায় ৪, পরিচ্ছেদ ১৯ এবং যযুর্বেদ অধ্যায় ৩২, অনুচ্ছেদ ১৯।”
এবার দেখা যাক, সত্যিই সেখানে কী লিখা আছে এবং তার প্রকৃত অনুবাদটা কী ?
রেফারেন্স হিসেবে প্রথম বইয়ের নাম লিখা হয়েছে, “শ্বেতাসত্র উপনিষদ”, কিন্তু এর নাম প্রকৃতপক্ষে “শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ”, লিখেছে তো কোনো এক মুসলমান, তার কাছ থেকে আপনি আর কত শুদ্ধ বানান আশা করতে পারেন ? রেফারেন্সের বাকি অংশে লিখা হয়েছে- “অধ্যায় ৪, পরিচ্ছেদ ১৯”, অধ্যায় ৪ ঠিক থাকলেও এই উপনিষদে অনুচ্ছেদ বলে কিছু হয় না, এটি হবে আসলে শ্লোক নং ১৯। শুধু এই রেফারেন্সেই নয়, প্রতিটি রেফারেন্সেই দেখবেন কিছু না কিছু উল্টা পাল্টা আছেই। যে মুসলমানরা একটা রেফারেন্স ঠিক মতো দিতে পারে না, সেই মুসলমানরা যে এই সব সংস্কৃত শ্লোকের অর্থ ঠিক মতো বুঝতে পারবে বা দিতে পারবে, আপনি সেই আশা করছেন কিভাবে ? যা হোক, এই রেফারেন্সে গিয়ে পাওয়া গেলো, মুসলমানদের সেই বিখ্যাত ব্রহ্মাস্ত্র নয় আল্লাস্ত্র,
“ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশ”,
এর অর্থ হিসেবে তারা যা লিখেছে তা তো উপরেই উল্লেখ করেছি এবং ফটোপোস্টেও দেখতে পাচ্ছেন; এবার দেখা যাক, এই একই বিষয়ের দ্বিতীয় রেফারেন্স এর কী অবস্থা ?
দ্বিতীয় রেফারেন্স হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, “যযুর্বেদ অধ্যায় ৩২, অনুচ্ছেদ ১৯।”
এখানে ‘যযুর্বেদ’ বানানটাও ভুল, এটা হবে ‘যজুর্বেদ’, এছাড়া মুসলমানরা হয়তো জানেই না যে, ‘যজুর্বেদ’ একটা নয়, দুইটা- ‘শুক্লযজুর্বেদ’ ও ‘কৃষ্ণযজুর্বেদ’, তাই এই রেফারেন্সটা কোন ‘যজুর্বেদ’ থেকে নেওয়া হয়েছে, সেটা তারা উল্লেখ করতে পারে নি। আর পারবেই বা কিভাবে, তারা কি বেদ ঘেঁটে এসব লিখেছে ? তারা তো এসব লিখেছে জাকির নায়িকার কোনো বক্তব্য শুনে বা বক্তব্যের বই দেখে, তাই জাকির যা বলেছে, তারা তাই লিখে দিয়েছে, ফলে যা হবার তাই হয়েছে, ভুলে ভরা কোরানের মতো হয়েছে ভুলে ভরা রেফারেন্স।
যা হোক, এই রেফারেন্সটা কোন ‘যজুর্বেদ’ থেকে নেওয়া হয়েছে, সেটা মুসলমানরা বলতে না পারলেও আমি বলছি, এটা নেওয়া হয়েছে, “শুক্লযজুর্বেদ” এর ৩২ নং অধ্যায়ের ৩ নং অনুচ্ছেদ থেকে নয়, ৩ নং মন্ত্র থেকে । কারণ, শুক্লযজুর্বেদ এর অধ্যায় এর পর অনুচ্ছদে হয় না, হয় মন্ত্র।
যা হোক, এই মন্ত্রের অর্থ মুসলমানরা কী করেছে, সেটা তো জানেন; কিন্তু এই মন্ত্রের অর্থ হিসেবে- কোলকাতার হরফ প্রকাশনী, যার মালিক একজন মুসলমান, তার প্রকাশিত বেদ এ, এর অনুবাদ দেওয়া আছে,
“এ পুরুষের তুলনা দেবার কোনো বস্তু নেই। তার মহৎ যশ আছে।”
যেহেতু এই শ্লোকের মধ্যে প্রতিমা ব’লে একটা শব্দ আছে, সেহেতু মুসলমানরা এর অনুবাদ করে, “ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই”, তাহলেও এতে কোনো ভুল নেই; কারণ, হিন্দুরা যাকে ঈশ্বর বলে মনে করে সেই পরমব্রহ্ম বা ব্রহ্মের তো কোনো প্রতিমা নেই ই। ব্রহ্মের তিনটা রূপ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের মূর্তি আছে, আছে আরো অন্য দেব-দেবীর, কিন্তু ব্রহ্মের কি কোনো মূর্তি আছে ? ব্রহ্মের তো কোনো মূর্তি বা প্রতিমা নেই। তাহলে তো তা ঠিকই আছে, বেদ এর নির্দেশকে মেনে হিন্দুরা ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের কোনো মূর্তি তৈরি করে নি।
কিন্তু এর বিপরীতে ইসলামের অবস্থা কী, সেটা এবার দেখা যাক :
মুসলমানরা জোর গলায় বলে যে, আল্লা নিরাকার। কিন্তু আল্লা যে নিরাকার নয়, তার বহু প্রমান কোরান হাদিসে আছে, কয়েকটির উদারহণ দিচ্ছি-
কোরানের ৬৯/১৩-১৮ আয়াতে বলা আছে,
“পরে যখন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। তখন ভূতল ও পর্বতরাশিকে উপরে তুলে একই আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।...সেই দিন আকাশ দীর্ণ বিদীর্ণ হবে এবং তার বাঁধন শিথিল হয়ে পড়বে। ফেরেশতাগণ তার আশ পাশে উপস্থিত থাকবে। আর আটজন ফেরেশতা সেই দিন তোমার রবের আরশ নিজেদের উপর বহন করতে থাকবে।”
এই সূরা অনুযায়ী, এটা বোঝা যায় যে, কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আল্লা সপ্তম আসমানের উপর স্থাপিত একটি সিংহাসন, যার ইসলামিক নাম আরশ, তাতে বসে থেকে পৃথিবীসংশ্লিষ্ট সবকিছুর পরিচালনা করে। আবার শব-ই-বরাতের রাতে আল্লা নাকি সেই সপ্তম আসমান থেকে নেমে প্রথম আসমানে আসে এবং হকারের মতো নাকি চিৎকার করে বলতে থাকে যে, “কে আছো ক্ষমা প্রা্র্থনাকারী, আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেবো, ইত্যাদি ইত্যাদি”। এটা শব-ই-বরাতের রাতের মহিমা বোঝানোর জন্য মুসলমানদের বহুল প্রচারণা থেকেই শোনা, তাই এটার আর রেফারেন্স দিলাম না। ঘটনা যদি তাই হয়, তাহলে আল্লা শুধু শব-ই-বরাতের রাত বাদ দিয়ে সারা বছর সপ্তম আসমানে একটি আরশের উপর বসে থাকে, যে সপ্তম আসমান কেয়ামতের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আল্লা সমেত, আল্লার সেই আরশ, ৮ জন ফেরেশতা বহন করবে বলে কোরানের ৬৯/১৩-১৮ আয়াতে বলা আছে। এই প্রেক্ষাপটে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে আল্লা, আরশ নামের কোনো সিংহাসনে বসে থাকে, সে নিরাকার হয় কিভাবে ?
শুধু এখানেই শেষ নয়, মুসলিম হাদিসের ৪০/৬৮০৯ ও ৩২/৬২৩৫ এবং বুখারির ৪/৫/৫৪৩ নং হাদিসে বলা হয়েছে যে, আল্লা ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা।
নিরাকার আল্লা ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা হয় কিভাবে ?
আল্লা যে ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা, এই কাহিনীর উৎস হলো, হাদিসে বলা আছে, প্রথম মানব আদম ছিলেন ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা, আর আল্লা, নিজের আদলে মানব আদমকে সৃষ্টি করেছেন (সহীহ মুসলিম, ২৮৭২), সেই হিসেবে আল্লা ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা।
আল্লা যদি নিরাকার ই হয়, তাহলে ইসলামে আল্লার এই রূপের স্বীকৃতি কেনো ?
বেদ এ ঈশ্বরের কোনো রূপের বর্ণনা দেওয়া নেই এবং যেহেতু বলা আছে, যে ঈশ্বরের কোনো রূপ বা প্রতিমা নেই, সেহেতু হিন্দুরা ঈশ্বর বা ব্রহ্মের কোনো প্রতিমা নির্মান করে নি। অন্য দেব-দেবতার যেহেতু আকার আকৃতির বর্ণনা দেওয়া আছে, সেহেতু হিন্দুরা তাদের রূপ অনুযায়ী তাদের মূর্তি নির্মান করেছে, এটা হিন্দুরা পারে বলেই করেছে, কিন্তু মুসলমানরা যেহেতু শিল্পসংস্কৃতি বর্জিত একটি বর্বর জাতি এবং এজন্য যেহেতু তাদের কোনো কিছু নির্মান বা গড়ার কল্পনা শক্তি নেই, সেহেতু তারা কোরান হাদিসে আল্লার স্পষ্ট রূপের বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও প্রচার করে যে, আল্লা নিরাকার, যাতে তাদেরকে আল্লার মূর্তি বানানোর মতো কষ্ট স্বীকার না করতে হয়।
মুসলমানদের বলছি, হিন্দুরা একটি সৃষ্টিশীল জাতি, যদি তোরা বলিস, কোরান হাদিসের বর্ণনা মতো, তোদেরকে একেবারে বিনা পয়সায় আল্লার মূর্তি তৈরি করে দেবো, তাকে মসজিদের ভেতর স্থাপন করে তার উদ্দেশ্যে প্রা্র্থনা করিস; কেননা, এটা অনেক মুসলমানেরই উপলব্ধি যে, হিন্দুদের তো সামনে মূর্তি থাকে, যার সামনে বসে তারা পূজা প্রার্থনা করে, আমাদের সামনে কী থাকে, কার উদ্দেশ্যে আমরা প্রার্থনা করি ? এর মানে হলো- কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করার জন্য হিন্দুদের সামনে কিছু থাকে, মুসলমানদের সামনে তো সেটাও থাকে না।
জয় হিন্দ।
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন