সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের পুত্র ছত্রপতি সম্ভাজী মহারাজ

 

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের পুত্র   ছত্রপতি সম্ভাজী মহারাজ

বজরঙ্গি খোকন
 
Gajanan Gonte
-এর সাথে আছেন।

হিন্দুত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবন বলিদান দিয়েছিলাম ছত্রপতি #সম্ভাজী_মহারাজ (শিবাজীর পুত্র)।
ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের পুত্র ছিলেন সম্ভাজী মহারাজ..ছোট বেলা থেকে খুব সংঘর্ষের মধ্যে কেটেছে তার..2 বছর বয়সে তার মা মারা যান...তার ঠাকুমা "জিজা বাঈ"(শিবাজী মহারাজের মা)এর কাছে মানুষ..ছোট থেকেই শাস্ত্র ও অস্ত্রতে নিপুণ ছিলেন...মাত্র 13 বছর বয়সে 13 ভাষা জানতেন..ইংলিশ,পর্তুগীজ,স্পেনিশ,ভারতের রিজোনাল ভাষা,মোগল দের ভাষা সব...13 বছর বয়সেই সে বুদ্ধভূষণ সহ অনেক বই লেখেন...16 বছর বয়সে 60 কেজির তরোয়াল নিয়ে রায়গড় এর যুদ্ধ জয় করেন...9 বছর বয়সে 1200 কিলোমিটার দূরে ঔরঙ্গজেবের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন শিবাজী মহারাজ এবং সম্ভাজী মহারাজ..তখন তাঁদের বন্দি করে নেয়..কিন্তু সম্ভাজী মহারাজের চতুরতায় প্রথমে শিবাজী মহারাজ বন্দিদশা থেকে বের হয়ে আসেন, তারপরে সম্ভাজী মহারাজ বের হয়ে রাজ্যে ফিরে আসেন...সম্ভাজী মহারাজ খুব চতুর ছিলেন...
"কবি কলস"তার এডভাইজার ছিলেন...23 বছর বয়সে শিবাজী মহারাজের মৃত্যুর সাথে সাথে সে রাজ্য ভার গ্রহণ করেন...ওরঙ্গাবাদে মোগলদের সব থেকে বড় কেল্লা ছিলো...প্রথম বারেই মোগলদের ঔরঙ্গজেবের সেনাদের পরাজিত করে সেই কেল্লা দখল করেন...ঔরঙ্গজেবের ঘুম উড়ে যায়...সম্ভাজী মহারাজ ঘোষণা করেন, যদি কেউ ঔরঙ্গজেবের দ্বারা হিন্দুদের ধর্মপরিবর্তনে সাহায্য করে, তাহলে তার ছাতি ছিঁড়ে হৃদপিন্ড বের করে নেবেন...হুসেন আলী খানকে 2 লক্ষ সেনা নিয়ে পাঠায় ঔরঙ্গজেব, সম্ভাজী মহারাজ কে মারতে...কিন্তু 1 বছর চেষ্টা করেও একটা যুদ্ধ জিততে পারে না মোগলরা...ভারতবর্ষের ইতিহাসে সম্ভাজী মহারাজ এক মাত্র রাজা ছিলেন 9 বছরে 120টা যুদ্ধ লড়েছেন, কিন্তু একবারও পরাজিত হয়নি..

ঔরঙ্গজেব পর্তুগীজ, এবং অন্য অনেক রাজার সাহায্য নিয়ে, সম্ভাজীকে পরাজিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু সম্ভাজী গোয়াতে গিয়ে পর্তুগীজদের নাম-নিশান শেষ করে দেন...যে সব রাজারা সাহায্য করেছিল, তাদের সব- গুলোকে হত্যা করেন..
সম্ভাজী মহারাজের যুদ্ধ কৌশল ছিলো যথেষ্ট উন্নত..নতুন নতুন পদ্ধতিতে যুদ্ধ করতেন, যার জন্য শত্রুরা বুঝে উঠতে পারতো না...রাবারের কাপড়ের সাথে তেল আর বারুদ দিয়ে তীর বানিয়ে আক্রমণ করতেন...এতে বেশি বিস্ফোরণ হতো আর বেশি ক্ষতি হতো শত্রু পক্ষের....
ঔরঙ্গজেব বার বার মার খেতো আর হারতো...তখন সে ফন্দি করে সম্ভাজীকে পরাজিত করার...
সম্ভাজী মহারাজের শালার সাথে মিলে ঔরঙ্গজেব শত্রুতা করে...কবি কলস আর সম্ভাজী মহারাজ একদিন গোপন মিটিং এ যাচ্ছিলেন, তখন সেই খবর ওরঙ্গজেবকে তার শালা দিয়ে দেয়...মাত্র 2 হাজার সেনা নিয়ে তাকে বন্দি করে...যাকে 8 লক্ষ সেনা কিছু করতে পারেনি মাত্র 2 হাজার সেনার কাছে সম্ভাজী বন্দি হন...কারণ নিজের লোক বেইমানি করেছিল...
ঔরঙ্গজেব সম্ভাজীকে খুব অত্যাচার করে...গায়ের চামড়া ছাড়িয়ে লবণ লাগায়,নখ উপরে ফেলে, হাত পা কেটে দেয়...ঔরঙ্গজেব বলেছিলো মারাঠা সাম্রাজ্য দিয়ে দাও. আর ইসলাম কবুল করো, তা হলে ছেড়ে দেবো...সম্ভাজীর উত্তর ছিলো মারাঠা আমি,দেশের জন্য হাজার বার মরবো, আবার জন্ম নেবো, আবার ভারত মায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো....তারপর তাকে ঔরঙ্গজেব টুকরো টুকরো করে কেটে কেটে হত্যা করে....
দুর্ভাগ্যের বিষয় এই মহান ভারতীয় বীর পুত্রের ইতিহাস. আমাদের পড়ানো হয় না...ওনার প্রাপ্য সম্মান এখনো দেয়া হয়নি ভারতের ইতিহাসে... কিছু বিকৃত,বিক্রি হওয়া মানসিকতার মানুষ ভারত মায়ের বীর পুত্রদের ইতিহাস লুকিয়েছে এবং বর্বরদের মহান বানানোর চেষ্টা করেছে.... 🙂

জয় হিন্দ,জয় ভারত.জয় শ্রীরাম 🕉🚩🇮🇳🙏🏻❤💝

শেয়ার অপশন না থাকলে কপি পেস্ট করে শেয়ার করুন, বারবার লেখার প্রয়োজন নেই। হিন্দু ধর্মের সত্যকে তুলে ধরে মানুষ কে জাগিয়ে তুলুন ।


শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু


1


ইসকন ভক্তদের মধ্যেও ব্যভিচার, পুনর্বিবাহ ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা দেখা যায়

ইসকন ভক্তদের মধ্যেও ব্যভিচার, পুনর্বিবাহ ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা দেখা যায়



শেয়ার করছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু




















Rina Baral Rinky
 


"ঋণগ্রহণকারী পিতা, অসতী মাতা,অধিক সুন্দরী স্ত্রী এবং অজ্ঞপুত্র পারিবারিক জীবনের শত্রু।"
"ঋণকর্তা পিতা শত্রুর্মাতা চ ব্যভিচারিনী।
ভার্যা রূপবতী শত্রুঃ পুত্রঃ শত্রুরপন্ডিতঃ।।"
~ চাণক্য-নীতিশাস্ত্র

তাৎপর্যঃ
কলিযুগের একটি লক্ষণ হলো গৃহশত্রু।কলিযুগ কলহের যুগ। বিশ্বজুড়ে মানুষ যুদ্ধে লিপ্ত -দেশের সাথে দেশের যুদ্ধ, দেশের ভেতরে যুদ্ধ, সম্প্রদায়ের সাথে সস্প্রদায়ের যুদ্ধ,এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও যুদ্ধ,কারও শান্তিতে বসবাসের জো নেই। ভক্তরা প্রশ্ন করতে পারেন, কৃষ্ণভাবনাময় গৃহস্থ জীবনে এসব বিষয় আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে কি? কিন্তুু ইসকন ভক্তদের মধ্যেও তো ব্যভিচার, পুনর্বিবাহ ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা দেখা যায়, তাই চাণক্যের নীতাশিক্ষা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। আমরা কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে একটি পরিবারের সাথে তুলনা করতে পারি, শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়ই গুরুদেবকে পিতা এবং শিষ্যকে সন্তান হিসেবে বিবেচনা করতেন। সে জন্যেই পুত্র যদি বোকার মত আচরণ করে বা নারী যদি অসতী হয়, তবে সেই প্রভাব সবার ওপর পড়বে। একই ভাবে ভক্তরা যদি পরিশুদ্ধ আচরণ করে, তবে সমগ্র ইসকন পরিবারই উপকৃত হবে। প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন যে, মন ও ইন্দ্রিয় ছাড়া আমাদের আর কোনো শত্রু নেই। এটিই মহা ভাগবতের লক্ষণ। যাই হোক, শ্রীল প্রভুপাদ বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার শত্রুর হাত থেকে আমাদের আন্দোলনকে রক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করতেন। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, আমাদের আন্দোলনের প্রকৃত বিপদ নিজেদের মধ্য থেকেই আসবে। বিপদই আমাদের মতবিভেদ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করে। ইসকন হলো ঐক্যবদ্ধ পরিবার। পরিবার হলো সাধারণ উদ্দেশ্যে নিবেদিত শান্তিপূর্ণ সুখী সংঘ। তবু পরিবারে শত্রু থাকতে পারে । উদাহরণ স্বরূপ, কেউ যদি কৃষ্ণভাবনা প্রচারের নাম করে অপব্যয় করে, তবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে। প্রচারের জন্যে এ ধরনের ব্যক্তি শত্রুও বটে।

হিন্দুদের বর্ণ প্রথা, কৌলীন্য প্রথা বা পদবি প্রথা ইত্যাদি

 

হিন্দুদের বর্ণ প্রথা, কৌলীন্য প্রথা বা পদবি প্রথা ইত্যাদি

Dip Haldar 

বর্ণ প্রথা, কৌলীন্য প্রথা বা পদবি প্রথা ও শ্রেণী বৈষম্য নিয়ে কিছু কথা :

মহাভারতে কৃষ্ণের নাম ছিলো “শ্রীকৃষ্ণ”। এবং পঞ্চপাণ্ডবের নাম ছিলোঃ যুধিষ্ঠির,ভীম, অর্জুন,নকুল,সহদেব। রামায়ণে রামের নাম “রামচন্দ্র”। এই উদাহরণগুলোতে আমরা কি মিল দেখতে পেলাম? কোন নামের শেষেই কিন্তু কোন পদবি নেই!! ঠিক একইভাবে দশরথ, বলরাম, বিশ্বামিত্র, শঙ্করাচার্য, শ্রীচৈতন্য প্রমুখ মহামানবের নামের শেষেও কিন্তু কোন পদবি বা টাইটেল ছিলোনা। ঈশ্বর শোষণ, মানুষে মানুষে ছোট-বড় শ্রেণীর ভেদাভেদ বা বৈষম্য সৃস্টি করতে বলেননি । তিনি চান তাঁর সন্তানরা সকলেই সকলের সঙ্গে সমব্যবহার করুন, পীড়িতের সেবা করুন।

এই বিষয়ে সাম বেদের একটি শ্লোক খুবই প্রাসঙ্গিক মনে করিঃ যো দদাতি বুভূক্ষিতেভ্য পিড়িতানাং সহায়ক : দুঃখার্তাণাং সমাশিলষ্যতি তমেব ইশঃ প্রসীদতি। বঙ্গানুবাদঃ ঈশ্বর খুশি হন, যখন তুমি সমব্যবহারের মাধ্যমে কোনো মানুষের চিত্তকে আনন্দ প্রদান কর। দুঃখীর দুঃখ ভার লাঘব কর, অত্যাচারিতের প্রতি অন্যায় আচরণের অবসান কর, আর্তকে সাহায্য কর এবং ক্ষুধার্তকে অন্নদান কর।
এর থেকে কি স্পষ্ট বোঝা যায়না ? সনাতন ধর্ম এবং সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রে কৌলীন্য প্রথা বা পদবি প্রথা ও শ্রেণী বৈষম্যের কোন স্থান নেই। তাহলে, আমাদের সনাতন সমাজে নামের পিছনে পদবি বা টাইটেল ব্যবহারের প্রচলন ও বৈষম্যে কিভাবে শুরু হলো??

আসুন তার সঠিক ইতিহাস আমরা সকললেই একটু জেনে নেই। ১৫১০ সালে আনন্দ ভট্ট রচিত ও ১৯০৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত “বল্লাল চরিত” নামক বইয়ে হিন্দু সমাজে পদবি প্রথার প্রচলন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছিলো। (তথ্যসূত্র: সমাজদর্পণ ১৫ বর্ষ, সংখ্যা ১২; জুন ১৯৯৯)

উক্ত গ্রন্থটিতে উল্লেখ করা হয়েছিলো, গৌড়ের বৈদ্য বংশীয় রাজা বল্লাল সেন (১১৫৮ – ১১৭৯) তার নিজ সহধর্মিণী থাকা অবস্থায় অধিক বয়সে পদ্মিনী নাম্নী এক সুন্দরী ডোম নর্তকীকে বিয়ে করেন। এই নিয়ে আনন্দভট্ট লিখেছিলেন, বিজয় সেনের জারজ পুত্র বল্লাল সেন সাধুপীড়ক, দূস্কর্মপরায়ণ, ডোম এবং চন্ডাল কন্যায় আসক্ত ছিলেন। এরফলে দেশজুড়ে রাজার সুনাম বিনষ্ট হতে থাকে এবং এসকল কুকীর্তি নিয়ে প্রজারা অনেক সমালোচনা শুরু করেদেন। রাজা এইসব কলঙ্ক, সমালোচনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে সকল সম্প্রদায়ের প্রজাদের জন্য একটি সম্মিলিত ভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই ভোজ অনুষ্ঠানে সকল সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত থাকেন কিন্তু শাস্ত্রীজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ রাজার এইরূপ কুকীর্তিকে সমর্থন করেননি ফলে এই ভোজ অনুষ্ঠানে যোগদান হতে বিরত থাকেন। রাজা তাদের এই ব্যবহারে খুবই অসন্তুষ্ট হন ফলে তাদের সমস্ত চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে তাদের রাজ্য থেকে বহিস্কৃত করেন। অপরদিকে, ভোজ সভায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সম্প্রদায়ভুক্তরা রাজার সকল কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেন এবং রাজার অনুগ্রহ লাভ করতে থাকেন। রাজা এই সকল সম্প্রদায়কে সাহায্য করেন এবং অনেক সম্প্রদায়কে পুরস্কারস্বরুপ কৌলীন্য বা টাইটেল প্রদান করেন। অপরদিকে রাজ্যহারা ব্রাহ্মণেরা জঙ্গল, বিল, বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে বসবাস করতে থাকেন। আর বল্লাল সেন এই সকল ব্রাহ্মণদের “নমঃশূদ্র” বলে ঘোষনা করেন।

এখানে নমঃশূদ্র শব্দটি সম্পর্কে একটু বলে নেই। নমঃশূদ্র শব্দটির দুইটি অংশ। নমঃ বা নমো শব্দের অর্থ হলো প্রণাম, আর শূদ্র বলতে বুঝায় যারা শ্রমজীবী মানুষ তাদেরকে। অর্থাৎ, বল্লাল সেন এখানে নমঃশূদ্র শব্দের মাধ্যমে ব্রাহ্মণদের বুঝিয়েছেন, প্রণাম পাবার যোগ্য শ্রমজীবী মানুষদেরকে। এভাবেই, বল্লালসেন হিন্দু সমাজে পদবি বৈষম্যের বিষাক্তবীজ বপন করেছিলেন যা বর্তমান সময়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। মানুষের তৈরী এই সকল পদবি ও শ্রেণী বৈষম্যের ফলে মানুষে মানুষে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ম-দ্বন্দ্ব, বর্ণভেদ বৈষম্যকে করেছে অনেক বেশি শক্তিশালী। এরফলে হিন্দু সমাজের হয়ে গেছে অপূরণীয় ক্ষতি। মানুষের তৈরী এসব বৈষম্য, বিভাজন-বিভক্তির ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে তথাকথিত নিম্নশ্রেণী ও বর্ণের হিন্দু সমাজের অসংখ্য মানুষ । অথচ সনাতন ধর্মের সংবিধানে এমন বৈষম্য,বিভাজন-বিভক্তির কোনো ভিত্তি বা অনুমোন নেই। আর হিন্দু সমাজে এই কৌলীন্য প্রথা বা পদবি প্রথা ও শ্রেণী বৈষম্যের বিড়ম্বনার সাথে সাথে দেখছি বর্ণভেদ প্রথার বিড়ম্বনা খুববেশী প্রকট হচ্ছে।

বর্ণভেদ প্রথা নিয়ে বলার পূবে একটু জেনে নেই বর্ণ কি?? এখানে বর্ণ বলতে বোঝানো হচ্ছে। মূলত যে শব্দ ব্যবহার করে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এগুলোকে বোঝানো হয় তাই “বর্ণ”। “বর্ণ” অর্থ হলো তাহাই যা গ্রহণ করা হয় পছন্দের দ্বারা। “বর্ণ প্রথা” বলে সনাতন শাস্ত্রীয় ধর্মগ্রন্থ সমূহে মূলত কোন শব্দ নেই। আছে “বর্ণাশ্রম”। এখানে “বর্ণাশ্রম” এর শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় “বর্ণ” শব্দটি এসেছে “Vrn” root বা মূল হতে যার অর্থ হলো “To choose” বা পছন্দ করা। অর্থাৎ, পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্ধারণ করা। ‘বর্ণ’ হচ্ছে আমাদের নিজস্ব কর্ম অনুযায়ী পছন্দ করা। বর্ণর সাথে জাতি বা জন্মের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু,দুর্ভাগ্যজনকভাবে কালের পরিবর্তনে বর্ণাশ্রম হয়ে গেছে বর্ণ প্রথা!

আমাদের সনাতন সমাজে চারটি বর্ণ প্রচলিত আছে। যথাঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র। আমরা অনেকেই মনে করি যে, একজন ব্রাহ্মণের পুত্র হলেই সে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়ের পুত্র হলেই সে ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের পুত্র হলেই সে বৈশ্য এবং শূদ্রের পুত্র হলেই সে শূদ্র। সত্যিই কি তাই?? এই সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে ব্রাহ্মণ কি, ক্ষত্রিয় কি, বৈশ্য কি এবং শূদ্র কি ?

ব্রাক্ষ্মণঃ ঋগবেদ ৭.১০৩.৮ যিনি ঈশ্বরের প্রতি অনুরক্ত, সৎ, অহিংস, নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী ও বেদ জ্ঞানী সেই ব্রাক্ষ্মণ।

ক্ষত্রিয়ঃ ঋগ্বেদ ১০.৬৬.৮ যিনি দৃঢ়ভাবে আচার পালন করেন, ঈশ্বরের সাধক, সৎ কর্ম করেন, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন। অহিংস, সত্যের ধারক, ন্যায়পরায়ণ ও অসৎ এর বিনাশকারী এবং বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা সেই ক্ষত্রিয়।

বৈশ্যঃ অথর্ববেদ ৩.১৫.১ দক্ষ ব্যবসায়ী, চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী এবং দানশীল সেই বৈশ্য।

শূদ্রঃ ঋগ্বেদ ১০.৯৪.১১ যিনি অদম্য পরিশ্রমী। অক্লান্ত জরা যাকে সহজেই গ্রাস করতে পারেনা। যিনি লোভ-লালসা মুক্ত, কষ্টসহিষ্ণু তিনিই শূদ্র।
অর্থাৎ, ব্রাহ্মণরা তপস্যা করেন, ক্ষত্রিয়রা শাসন,যুদ্ধ করেন, বৈশ্যরা ব্যবসায়,চাকুরী করেন এবং শূদ্ররা শ্রমবিক্রি করে জিবিকা নির্বাহ করেন । আমরা এর মাধ্যমে কি বুঝতে পারি? যে যেরকম কর্ম করবে। সে সেই উল্লিখিত বর্ণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন। অর্থাৎ, একজন বৈশ্যের সন্তান যদি ব্রহ্মজ্ঞানে দীক্ষিত হয় তাহলে সে ব্রাহ্মণ হবেন এবং ঠিক এভাবেই একজন ব্রাহ্মণের পুত্র যদি ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করে তাহলে সে বৈশ্য হবে। এই যে বর্ণবিভাজন এটা কিন্তু জন্মভেদে নয় কর্মভেদে।
এ বিষয়ে পবিত্র বেদ ও গীতার কিছু শ্লোক উল্লেখ করা যেতে পারে।

ঋগবেদ ৯.১১২.১ একেক জনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেক রকমের হয়ে থাকে আর সে অনুসারে কেউ ব্রাক্ষ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য, কেউ শূদ্র।
ঋগবেদ ৫.৬০.৫ অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায় যুবা পিতা স্বপা রুদ্র এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥
বঙ্গানুবাদঃ কর্ম ও গুণভেদে কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য এবং কেউ শুদ্র। এদের মধ্যে কেউ বড় বা ছোট নয়। ইহারা সকলেই ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে। ইহাদের পিতা ঈশ্বর এবং জননীরূপ প্রকৃতি। পুরুষার্থী সন্তানই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হয়।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতভগবত গীতার ১৮ অধ্যায়ের ৪১ নং শ্লোকে বলেছেন,
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ । কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ ॥ বঙ্গানুবাদঃ “হে পরন্তপ! স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত করা হয়েছে” অথ্যাৎ, স্বভাবজাত গুণের ভিত্তিতে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্ম বিভক্ত হয়েছে। জন্ম অনুসারে নয়।
বৈদিক ধর্মীয়শাস্ত্রগুলোতে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছেঃ (১) ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র। কিন্তু, পরে তিনি ব্রাহ্মণ হন। তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২) (২) ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া হরিৎ ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫) (৩) শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও তিনি ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১) (৪) রামায়নের রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে তিনি রাক্ষস হন। (৫) বিশ্বামিত্র ছিলেন একজন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্রেরা হন শূদ্র।
(৬) বিদুর ছিলেন চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন। এরপর তিনি হস্তিনাপুর রাজ্যের একজন মন্ত্রী হন।
যদি মহাঋষি ব্যাসদেবের কথাই বলি। মহাঋষি ব্যাসদেব চারটি বেদ, অষ্টাদশ মহাপুরাণ, উপপুরাণ, বেদান্ত দর্শন, ভাগবত পুরাণ প্রভূতি সংগ্রহ করে সংকলন করেন। ব্যাসদেবের মা ছিলেন জেলেনী এবং সেই জেলেনী মায়ের বিবাহ বহির্ভূত কুমারীকালের সন্তান তিনি। যদি জন্মই জাতপাত নির্ধারণের মাধ্যম হতো তাহলে তো তিনি সর্বনিন্ম স্তরে পড়ে যান। শূদ্রানী মায়ের সন্তান হিসেবে নিজেই শূদ্র বলে বিবেচিত হতেন। কিন্তু বাস্ততপক্ষে, তিনি তার কর্মগুণ বিচারে একজন মহাঋষি। সুতরাং মানুষের জাত নির্ধারণের জন্য জন্মসূত্রকে কোনভাবেই বোঝাতে চাওয়া হয়নি। যা পরবর্তীকালে শাসক শ্রেণীর দ্মারা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এটি বর্ণ বৈষম্য ও শ্রেণীবিভাজন স্তুতিতে ব্যবহৃত হয়েছে। সময় এখন এসব বর্ণ প্রথা, কৌলীন্য প্রথা বা পদবী প্রথা ও শ্রেণী বৈষম্য গুলোকে বিদায় জানানোর। এসকল কুসংস্কার, বৈষম্য,বিভাজন আমাদের জন্য অনেক বেশী লজ্জাজনক। এই বৈষম্য গুলোকে বিদায় জানিয়ে আমাদের সনাতন সমাজকে কলংকমুক্ত করতে না পারলে সামনে এগিয়ে যাবার পথ কখনোই সুন্দ্রর,মসৃণ ও সুদৃঢ় হবেনা।
(লেখা সংগৃহীত)
18
1টি কমেন্ট
7 বার শেয়ার করা হয়েছে
লাইক করুন
কমেন্ট করুন
শেয়ার করুন