রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রূপক রায়-এর কলাম ( ছয় )


    রূপক রায়-এর কলাম ( ছয় )


   রূপক রায়-এর কলাম ( ছয় )      ফেসবুক থেকে      শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু





“ শিব ৬০,০০০ বিবাহ করেছিল সে মারা যাবার পর তার লিঙ্গকে পূজা করা হয় একজন শিষ্টাচার হিন্দু কোন যুক্তিকতায় তার স্ত্রীর দুধ দিয়ে শিবের গোপন অঙ্গ ধৌত করে? এটা কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য? এমন কুরুচিপূর্ন আদেশ সৃষ্টিকর্তা দিতে পারেন কি?
এই মন্তব্যসহ আরও কিছু প্রশ্ন প্রথম পেয়েছিলাম Md Alhaz Hosain নামের এক মুসলমানের কাছ থেকে। মুসলমানদের স্বভাবই তো হলো একজনের কমেন্টকে কপি পেস্ট করে বারবার চালানো; কারণ, নতুন কিছু লিখতে গেলেও মেধার দরকার, সেটা ওরা পাবে কোথায় ? যা হোক, ঐ একই ধরণের কমেন্ট আপনারা মুসলমানদের কাছ থেকে আরো পাবেন, সেগুলোর জবাব জেনে নিন এই প্রবন্ধ থেকে-
“ শিব ৬০,০০০ বিবাহ করেছিল সে মারা যাবার পর তার লিঙ্গকে পূজা করা হয় একজন শিষ্টাচার হিন্দু কোন যুক্তিকতায় তার স্ত্রীর দুধ দিয়ে শিবের গোপন অঙ্গ ধৌত করে? এটা কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য? এমন কুরুচিপূর্ন আদেশ সৃষ্টিকর্তা দিতে পারেন কি? শিব তার নিজের ছেলে গনেশকে চিনতে পারেনি গর্দান কেটে ফেলেছিলেন তাহলে তিনি তার সৃষ্টিকে কি করে চিনবেন? ভুলে যাওয়া কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য? দেবদাসীর ও যোগিনীর মত পতিতা চরিত্রের সাথে ভগবান ও ব্রাহ্মনগণ কি করে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত হন? যদি তারা প্রকৃতার্থে ভগবান হয়ে থাকেন?"
শান্তির দূতেরা হলো সিলগালা মানসিক প্রতিবন্ধী, যতই রেফারেন্স দেওয়া হোক এরা কিছুই বিশ্বাস করবে না; কারণ এদের বিশ্বাস কোরান হাদিসের বাইরে কোনো জ্ঞান নেই এবং কোরান হাদিস ই শেষ কথা। তাই প্রশ্নগুলো ওদের হলেও এগুলোর জবাব দিচ্ছি আমার হিন্দু বন্ধুদের উদ্দেশ্যে, যাতে তারা হিন্দু ধর্ম নিয়ে হীনম্মন্যতায় না ভোগে বা হীনম্মন্যতা থাকলেও যেন তা কেটে যায় এবং তর্কযুদ্ধে মুসলমানদের সাথে সমানে সমান লড়তে পারে এবং জয়ী হতে পারে। উপরে প্রশ্নগুলো দেখেছেন, এবার নিচে দেখুন আমার জবাব-
সে লিখেছে, “শিব ৬০,০০০ বিবাহ করেছিল সে মারা যাবার পর তার লিঙ্গকে পূজা করা হয় একজন শিষ্টাচার হিন্দু কোন যুক্তিকতায় তার স্ত্রীর দুধ দিয়ে শিবের গোপন অঙ্গ ধৌত করে? এটা কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য? এমন কুরুচিপূর্ন আদেশ সৃষ্টিকর্তা দিতে পারেন কি?”
শিব যে ৬০ হাজার বিয়ে করেছে তার কোনো রেফারেন্স নেই, সুতরাং এটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ। তারপরও বলছি, শিবের স্ত্রী একজনই, সে সতী, এই সতীই মারা গেলে পরের জন্মে পার্বতী রূপে জন্ম নেয় এবং আবার শিবের সাথে তার বিয়ে হয়, পার্বতীরই অপর রূপের নাম দুর্গা, কালি, উমা, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি। শুধু এই বিষয় নিয়েই “শিবের নাকি ৬০ হাজার স্ত্রী” নামে আমার একটি পোস্ট আছে। ডিটেইলস জানতে চাইলে আমার টাইম লাইন বা পেজ এ গিয়ে খুঁজে দেখতে পারেন।
এর বিপরীতে দেখা যাক ইসলামের ইতিহাসে কার কয়টি স্ত্রী ?
হযরত সুলমানের ছিলো ১০০ স্ত্রী, এই ১০০ স্ত্রীর সাথে সে একরাতেই সেক্স করেছিলো ১০০ট পুত্র লাভের আশায়। কিন্তু ভুলবশত ইনশাল্লা বলে সেক্স শুরু না করায় একটি পুত্রও হয় নি। সেই হাদিসে জোর দিয়ে বলা হয়েছে ইনশাল্লা বলে সেক্স করলেই পুত্র সন্তান হবে (Sahih Bukhari 4/52/74)। এই কথা সত্য হলে মুসলমানদের জনসংখ্যার ৯০% হতো পুরুষ। কারণ, খুব কম পুরুষ ই আছে যারা কন্যা সন্তান কামনা করে। সুতরাং এই হাদিসটির মাধ্যমেও মুহম্মদের কথা যে মিথ্যা তা প্রমানিত।
সুলাইমান ছাড়াও ইসলামের মহানবী মুহম্মদের তো ১১ টা পূর্ণকালীন, আর ১৩ টা স্বল্পকালীন মানে তালাকপ্রাপ্তা, এর মধ্যে ৩ জন যৌনদাসী বা রক্ষিতাও ছিলো। মহানবী বলে কথা, তার স্ত্রীর সাথে সাথে যৌনদাসী না থাকলে হয় ? মুহম্মদের নাতী হাসান আবার মুহম্মদকে টেক্কা দিয়েছিলো, তার ছিলো ৩০০ স্ত্রী। অবশ্য এই ৩০০ জন এক সাথে ছিলো না, এক সাথে ৪ স্ত্রী রাখা যাবে কোরানের এই বিধান মতে, হাসান বিয়ে করতো, যত দিন ভালো লাগতো ভোগ করতো তারপর তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করতো। এর জন্য হাসানের নাম হয়ে গিয়েছিলো বিয়ের খলিফা। হাসানের এই লাম্পট্যের জন্যই হাসানের ২য় স্ত্রী জায়েদা, মুয়াবিয়ার সাথে ষড়যন্ত্র করে হাসানকে বিষ খাইয়ে মারে।
এরপর সে শিব সম্পর্ক আরো লিখেছে, “মারা যাবার পর তার লিঙ্গকে পূজা করা হয় একজন শিষ্টাচার হিন্দু কোন যুক্তিকতায় তার স্ত্রীর দুধ দিয়ে শিবের গোপন অঙ্গ ধৌত করে?”
শিব নাকি মারা গেছে ! শিব একটি পৌরাণিক চরিত্র। তার না আছে জন্ম, না আছে মৃত্যু। শিব মারা যাওয়ার পর নাকি তার লিঙ্গের পূজা শুরু হয়েছে ? মুসলমানরা একটি “যৌনানুভূতি আক্রান্ত” জাতি, তাই সব কিছুতেই তারা যৌনতাকে খুঁজে পায়। লিঙ্গ মানে প্রতীক বা চিহ্ন। পুংলিঙ্গ মানে যেমন পুরুষের প্রতীক, স্ত্রী লিঙ্গ মানে যেমন নারীদের প্রতীক, তেমনি শিবলিঙ্গ মানে শিবের প্রতীক। প্রাচীন কালে শিবের জটিল মূর্তি তৈরি করা সম্ভব না হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নির্মান পদ্ধতি সহজ বলে শিবলিঙ্গ তৈরি করা হয় এবং যেহেতু এর মধ্যে লিঙ্গ শব্দটি আছে এবং লিঙ্গ শব্দটির আরেক অর্থ যেহেতু পুরুষাঙ্গ, সেহেতু কালক্রমে মানুষের অবচেতন মনের ভুলেই মানুষ মনে করে যে এটি শিবের লিঙ্গ !
এরপর সে যে কথা বলেছে, “একজন শিষ্টাচার হিন্দু কোন যুক্তিকতায় তার স্ত্রীর দুধ দিয়ে শিবের গোপন অঙ্গ ধৌত করে?”- মনে হয়, এই বলদ ভেবেছে যে, বিয়ের পর তার মা যেভাবে গোপনে বাসর রাত উদযাপন করে তার বাপের লিঙ্গকে পূজা করে তার জন্ম দিয়েছে, ঠিক সেভাবেই শিবলিঙ্গের পূজা হিন্দুরা করে। আরে বলদা, আশে পা্শে দেখেও তো মানুষ অনেক কিছু জানতে পারে ? তুই কানা নাকি ? শিবলিঙ্গের পূজা কি গোপনে করা হয় ? এ তো প্রকাশ্যেই করা হয়। কেউ কি কখনো এমন দেখেছে যে, কোনো লোক তার স্ত্রীর দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গ ধুয়ে দিচ্ছে?
এরপর সে লিখেছে, “শিব তার নিজের ছেলে গনেশকে চিনতে পারেনি গর্দান কেটে ফেলেছিলেন তাহলে তিনি তার সৃষ্টিকে কি করে চিনবেন? ভুলে যাওয়া কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য ? ”
এবার এই প্রসঙ্গে আসি, গণেশের জন্ম নিয়ে বিভিন্ন পুরানে বিভিন্ন কথা বলা আছে, যেখানে গনেশকে চিনতে না পেরে শিব তার মাথা কেটে ফেলেছিলো বলে বলা আছে সেটা শিবপুরাণ, দেখে নিন আসলে সেই ঘটনাটা কী:
পৌরাণিক কাহিনী মতে, শিব একবার বাধ্য হয়ে সূর্যকে হত্যা করে, তখন সূর্যের পিতা কশ্যপ, শিবকে অভিশাপ দেয়, সে নিজেও একদিন তার নিজ পুত্রকে হত্যা করতে বাধ্য হবে। এরপর, পার্বতী, তার প্রথম পুত্র কার্তিককে, জন্মের পরপরই, ঘটনাচক্রে ছয় কৃতিকার কাছে রেখে আসতে বাধ্য হলে তার মাতৃত্বের শুন্যতা সৃষ্টি হয় এবং সেই শুন্যতা পূরণে, মনের মাধুরী মিশিয়ে কাদামাটি দিয়ে পার্বতী একটি মূর্তি গড়ে এবং সেই মূর্তিতে প্রাণ সঞ্চার ক’রে একটি পুত্রের জন্ম দেয়। পার্বতী এই পুত্রের নাম দেয় বিনায়ক এবং তাকে নির্দেশ দেয় বাড়ির দরজায় পাহারা দিতে, যাতে পার্বতীর সাধনার সময় কেউ বাড়িতে ঢুকে তাকে বিরক্ত না করে; বিনায়ক সেই দায়িত্ব পালন করার সময় শিব সেখানে আসে এবং বাড়িতে ঢুকতে চায়, তখন বিনায়ক, শিবকে বাধা দেয় এবং তার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে, বিনায়কের এই রূঢ় আচরণ এবং মাতৃ আদেশ পালনের অহংকারের কারণে, শিব, বিনায়কের মুণ্ডুচ্ছেদ করে তাকে হত্যা করে। এরপরই পার্বতী সেখানে আসে, এবং তার পুত্রকে জীবিত করে না দিলে সংসারকে লণ্ডভণ্ড করে দেবার হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত ত্রিদেব মিলে বিনায়ককে জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং শিব বলে, উত্তর দিকে গমন করে প্রথম যে প্রাণীকে দেখতে পাবে, সব শুনে সে যদি স্বেচ্ছায় তার মাথা দিতে রাজী হয়, সেই মাথা লাগালে বিনায়ক জীবিত হবে। এই প্রাণীর সন্ধানে দেবরাজ ইন্দ্রসহ অন্যান্যরা উত্তরদিকে গমন করে এবং প্রথমেই এক হাতিকে দেখতে পায়, সেই হাতিকে ঘটনা খুলে বলতেই সে রাজী হয়ে যায় এই কারণে যে, সে মহাদেবের একজন ভক্ত এবং পূর্বে কোনো এক সময় মহাদেবের কাছাকাছি থাকার একটা প্রার্থনা সে জানিয়েছিলো, সেই সময় মহাদেব তাকে, ভবিষ্যতে, কোনো এক সময় তার এই প্রার্থনা পূরণ হবে বলে বর দিয়েছিলো, তার কাটা মস্তকের মাধ্যমে তার সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে ব’লে, হাতি তার মাথা দিতে রাজী হয়ে যায়, এরপর বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা হাতির মাথা কেটে দেয়, সেই মাথা দেবরাজ ইন্দ্র নিয়ে এসে দিলে শিব তা বিনায়কের দেহের সাথে জুড়ে দেয়; এভাবে বিনায়ক জীবিত হয়ে ওঠে এবং তার নতুন নাম দেওয়া হয় গণেশ।
যা হোক, মুসলমানরা বলবে এটা একটা গাঁজাখোরি গল্প। ধরে নিলাম এই গল্প গাঁজাখোরি, তাহলে মুহম্মদের মেরাজের গল্পটা কী ? সারারাত উম্মে হানির সাপথে রাত কাটিয়ে ভোরে পাবলিকের কাছে ধরা পরার পর মুহম্মদ বলে দিলো যে সে নারী মস্তক সম্বলিত এক ঘোড়া, বোরাকের পিঠে চড়ে সাত আসমান ডিঙ্গিয়ে আল্লার সাথে দেখা করে দোযখ বেহেশত দেখে এসেছে, এটা গাঁজাখোরি গল্প নয় ? এছাড়াও ইসলামের আরো বহু গল্প আছে যেগুলো আজগুবি, যেমন- আঙ্গুলের ইশারায় মুহম্মদের চাঁদ ভাগ করা; এত বড় ঘটনা, অথচ পৃথিবীর আর কেউ এই ঘটনা দেখলো না ! যেন চাঁদ মুহম্মদের ঘরে লটকানো বাতি, যেটা মুহম্মদের ঘরেই শুধু উঠে, আলো দেয় আর ডুবে। ইসলামের এসব ঘটনা যদি মুসলমানদের কাছে গাঁজাখোরি মনে না হয়, তাহলে দেব-দেবীদের পৌরাণিক ঘটনা, সেটা যেমনই হোক না কেনো, তা হিন্দুদের কাছে গাঁজাখোরি বলে মনে হবে কেনো ?
যা হোক, শিবপুরানের এই গল্পে এটা স্পষ্ট যে শিব, গণেশকে জানতো যে সে কে এবং তার অহংকারকে বিনাশ করার জন্যই তার গলা কেটে ফেলেছিলো। তাহলে গলা কাটার আগে শিব গণেশকে চিনতো কি না চিনতো সেই প্রশ্ন আসবে কেনো ?
এই প্রসঙ্গে সে আরো প্রশ্ন তুলেছে, “ভুলে যাওয়া কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য ?”
শিব পুরানের এই কাহিনী থেকেই স্পষ্ট যে এখানে ভুলে যাওয়ার কোনো ব্যাপারই নেই; কারণ, জেনে বুঝেই শিব গনেশের মাথা কেটে ফেলেছিলো। শুধু তাই নয়, যার মাথা কাটা হয়েছে তার নামও তখন গনেশ ছিলো না। কিন্তু মুসলমানদের মহাশক্তিশালী, মহাজ্ঞানী আল্লা যে মাঝে মাঝে কোরান ভুলে যেতো সেই প্রমান কোরানেই আছে, দেখে নিন সেই আয়াতগুলো-
“আমি যে আয়াত বাতিল করি কিংবা ভুলিয়ে দিই, তার স্থানে তা্ অপেক্ষা উত্তম জিনিস পেশ করি, কিংবা অন্তত অনুরূপ জিনিস এনে দিই।– (কোরান, ২/১০৬)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে ইসলামের আল্লা মত বদলাতো। আল্লা যদি সর্বজ্ঞানী হয় তাহলে তার অতীত ভবিষ্যৎ সবই জানা থাকবে, তাহলে তাকে মত বদলাতে হবে কেনো ? এই মত বদলাতে হতো বলেই আল্লাকে আয়াত বাতিল করতে হতো অথবা আয়াত ভুলিয়ে দিতে হতো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোরান তো আল্লার ই বাণী, তাহলে আল্লা কাকে আয়াত ভুলিয়ে দিতো ? না আল্লা নিজেই ভুলে যেতো ? নিচে দেখুন এরকম আরও একটি আয়াত-
“আমি যখন এক আয়াতের স্থানে অন্য আয়াত অবতীর্ণ করি, আর আল্লা ভালোই জানেন যে তিনি কী অবতীর্ণ করেন।”- (কোরান, ১৬/১০১)
সেই একই প্রশ্ন, সর্বজ্ঞানী আল্লাকে এক আয়াতের স্থানে অন্য আয়াত অবতীর্ণ করতে হবে কেনো ? এই আয়াতের ২য় বাক্যে আবার বলা হচ্ছে, “আর আল্লা ভালোই জানেন যে তিনি কী অবতীর্ণ করেন।” এই কথাটা কে বলেছে, মুহম্মদ না আল্লা ?
এই হলো ইসলামের সর্বজ্ঞানী আল্লা যার কথার কোনো ঠিক নেই, একেক সময় একেক কথা বলে। এর বিপরীতে হিন্দুদের ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, যিনি এক কথা দুবার বলেন নি, কোনো সিদ্ধান্ত কোনো দিন চেঞ্জ করেন নি। এখন আপনি ই ভাবুন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা কে ?
এরপর সে বলেছে, “দেবদাসীর ও যোগিনীর মত পতিতা চরিত্রের সাথে ভগবান ও ব্রাহ্মনগণ কি করে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত হন? যদি তারা প্রকৃতার্থে ভগবান হয়ে থাকেন ? “
দেবদাসী ও যোগিনী বলে যে দুটি চরিত্রের কথা সে এখানে উল্লেখ করেছে, আসলে তারা এক। কোথাও তাদেরকে বলে দেবদাসী, আবার কোথাও যোগিনী। কোনো বিষয় সম্পর্কে ভালো করে না জেনেই হুটহাট করে মন্তব্য করা যে মুসলমানদের স্বভাব, এটা তার একটা প্রমান। যা হোক, এই দেবদাসীদের সাথে নাকি ভগবান অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হয়েছে! কোন ভগবান, কখন এই কাজ করলো তার যেহেতু কোনো রেফারেন্স নেই তাই এটাকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ বলে বিবেচনা করছি। কিন্তু দেবদাসীদের সাথে যে ব্রাহ্মণরা যৌনকর্মে লিপ্ত হতো তার প্রমান ইতিহাসে আছে, ইতিহাসে এটাও আছে যে এটা ভারতের কিছু কিছু এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত ছিলো, কিন্তু কোথাও কি এই প্রমান আছে যে এটা হিন্দু ধর্মের কোনো প্রথা ? না, নেই। কারণ, হিন্দু ধর্মের কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থে দেবদাসী প্রথার উল্লেখ নেই, তাহলে এই প্রথার জন্য হিন্দুধর্মকে দায়ী করা হবে কেনো ?
দেবদাসী একটি সামাজিক প্রথা, কিছু দুষ্ট লোক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই প্রথার সৃষ্টি করেছিলো; এতে কিছু মেয়ে হয়তো যৌন শোষণের শিকার হতো কিন্তু তারা ধর্ষিতা হতো না। কারণ, ঐ মেয়েরা স্বেচ্ছায় বা পরিবারের ইচ্ছায়, নিজের এবং পরিবারের মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে নিজেদেরকে মন্দিরের সেবায় উৎসর্গ করতো, সেখানে কোন জোর-জবরদস্তির ব্যাপার ছিলো না। কিন্তু ইসলামে গনিমতের মালের নামে যে মেয়েগুলোকে ধরে এনে ধর্ষণের পর যৌনদাসী বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা হতো, সেটা কী ? এটা তো ছিলো পুরাই জবরদস্তি। ৯ বছরের আয়েশার কথা না হয় বাদই দিলাম, ৮০০ কুরাইজার গণহত্যার দিনের রাতে রিহানাকে এবং খয়বরের যুদ্ধের পর সেই দিন রাতেই তো মুহম্মদ সাফিয়াকে ভোগ করেছিলো, এটা কি ধর্ষণ ছিলো না ? বাপ-ভাই-স্বামীসহ গোত্রের সকল পুরুষকে হত্যাকারী মুহম্মদকে কি সেই রাতেই সাফিয়া আর রিহানাকে স্বেচ্ছায় সব খুলে দিয়েছিলো ? মুসলমানরা বলবে, হ্যাঁ, সাফিয়া নিজের ইচ্ছাতেই মুহম্মদের শয্যাসঙ্গিনী হয়েছিলো, তাহলে নিচের ই হাদিসটি এলো কোথা থেকে-
“আবু আয়ুব খাইবারের যুদ্ধের পর রাতেরবেলা হজরত মহম্মদ আর সোফিয়ার তাবু পাহারা দিয়েছিল , পরদিন সকালে মহম্মদের সঙ্গে তার দেখা হলে তিনি মহম্মদকে বলেন " রাসুল , আমি আপনার জন্য সারারাত খুব চিন্তায় ছিলাম ৷ আপনি সাফিয়ার বাবাকে হত্যা করেছেন , স্বামীকে হত্যা করেছেন , পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছেন , আর আপনি সাফিয়ার সঙ্গে সারারাত এক তাবুতে কাটালেন ?! "- (Sira 517 , Ibn Ishaq 766) .
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পৃথিবী পরিবর্তনশীল, সমাজও পরিবর্তনশীল, হিন্দু সমাজ সেই পরিবর্তন কে স্বীকার করে, এই পরিবর্তনকে স্বীকার করেই দেবদাসী প্রথা্ আজ নিষিদ্ধ। কিন্তু ইসলামের বিধানের কি কোনো কিছুর পরিবর্তন আছে ? আজও ইসলামের এজেন্টরা ইরাক সিরিয়ায় নারীদেরকে ধর্ষণ করছে (ধর্ষণ করার আগে তারা নাকি নামাজও পড়ে নেয়), ধর্ষণ শেষে তাদেরকে বাজারে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করছে, যেই কাজগুলো করেছে মুহম্মদ এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা ১৪০০ বছর আগে, এই ১৪০০ বছর পরেও কি সেগুলোর কোনো পরিবর্তন আছে ? আছে মুসলমানদের সভ্য হওয়ার কোনো উপায় ?
জয় হিন্দ।
উপরে উল্লেখ করা একটি হাদিসের রেফারেন্স :
যৌনকর্মের সময় ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ বললেই জন্ম নেবে পুত্র সন্তান (Sahih Bukhari 4:52:74)
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜

জনৈক মৌলানার কীর্তি


   জনৈক মৌলানার কীর্তি


   ফেসবুক থেকে               শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু


Rudra Prasad Mukherjee গোষ্ঠীটিতে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন: 💥ALL BENGAL RSS💥রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ💥

Rastriya Hindu Jagriti Mission
অবশেষে পুলিশের হাতে অল ইন্ডিয়া মুসলিম ল বোর্ডের শান্তির দুত #মোলানা_কাসিম
ন্যাশানাল টিভি ডিবেটে যারা মহিলাদের বাপ, মা তুলে কথা বলে মহিলাদের গায়ে হাত তোলে তারা...
আরো দেখুন

জানুন জওহরলাল নেহরু-কে


    জানুন জওহরলাল নেহরু-কে


    ফেসবুক থেকে            শেয়ার করেছেন           প্রণব কুমার কুণ্ডু





ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্


ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
ফেসবুক থেকে          শেয়ার করেছেন            প্রণব কুমার কুণ্ডু

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্- ৪৯তম প্রয়াণ দিনে ক্ষণজন্মা মানুষটির জন্য রইলো হৃদয় মন্দিরের নৈবেদ্য।
****
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর কতোগুলো পরিচয় দেবো? তাঁর মতো বহু ভাষাবিদ সুপন্ডিত ব্যক্তি পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ আছেন কিনা সন্দেহ। তাঁকে বোঝার কতোটুকু ক্ষমতাই বা আছে আমাদের? তিনি ছিলেন এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাতত্ত্ববিদ, জ্ঞানতাপস, ভাষাবিদ, গবেষক, লোকবিজ্ঞানী, অনুবাদক, পাঠ-সমালোচক, সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যিক, কবি, ভাষা-সৈনিক। জ্ঞানপ্রদীপ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন বাঙলা ভাষার গবেষণায় অদ্বিতীয়। তিনি ছিলেন একটি কাল, একটি শতাব্দী, একটি জাতি, একটি সংস্কৃতি; অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, ধর্মবেত্তা ও সূফীসাধক। আর সবকিছুর উর্ধ্বে তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক বাঙালি, তাঁর হৃদয়ের আরশিতে বাঙালির, আর একটু ছোটো করে বললে (কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে নয়) বাঙালি মুসলমানের যে অবয়বটি ধরা পড়ে- তা তুলনারহিত।
(২)
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বহু ভাষাবিদ পন্ডিত ব্যক্তি হিসাবে সকলের নিকট সমাদৃত ছিলেন। তিনি যেসব ভাষা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারতেন তার সংখ্যা হলো ২০টি। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরাজি, সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, হিব্রু, আরবি, প্রাচীন ফারসি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি, ওড়িয়া, মৈথিলি, অহমিয়া, নেপালি, তিব্বতি, প্রাচীন সিংহলি, পোশতু, ফরাসি, জার্মান প্রভৃতি। এছাড়া, তামিল, তেলেগু, মালায়ালম, সিন্ধি, মহারাষ্ট্রি, বেলুচি, ল্যাটিন, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ড্যানিশ, ইতালীয়, মালদ্বীপি, তুর্কি প্রভৃতি আরো প্রায় দু'ডজন ভাষায় তাঁর যৎসামান্য দখল ছিল।
(৩)
তাঁর মতো বহু ভাষাবিদ সুপন্ডিত ব্যক্তি পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ আছেন কিনা সন্দেহ। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও তাঁর তুলনামূলক বিচারে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। তুলনামূলক ভাষাতত্তেব তাঁর মতো অভিজ্ঞ ও পারদর্শী ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া দুষ্কর। বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ ও কাল-নিরূপণে তাঁর সমকালীন পন্ডিত-গবেষকদের মতামত খন্ডন করে তিনি নিজের মতকে অকাট্য যুক্তিসহ উপস্থাপন করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রণয়নেও তিনি অনেক অজানা তথ্যের উপস্থাপন করে আমাদের ভাষা-সাহিত্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর অবদান কেবল তুলনাহীনই নয়, অনন্য বলা চলে।
(৪)
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা তাঁর জ্ঞানের তুলনায় হয়ত পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু তিনি যা লিখেছেন তার অধিকাংশই আকর গ্রন্থ হিসাবে সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে। বিশেষভাবে তাঁর সাহিত্যের ইতিহাস-বিষয়ক গ্রন্থ ‘বাংলা সাহিত্যের কথা' এবং ভাষাতত্ত্বের উপর গবেষণা গ্রন্থ ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত', ‘ভাষা ও সাহিত্য' এবং ‘বাংলা ব্যাকরণ' ইত্যাদি গ্রন্থের নামোল্লেখ করা যায়। তাঁর সম্পাদিত ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান' গ্রন্থটি আমাদের লৌকিক ভাষার পরিচয় সন্ধানে এক অসামান্য গ্রন্থ হিসাবে চিরকাল সমাদৃত হবে। তাঁর সম্পাদিত ‘হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালায় সিদ্ধ কানুপার গীত ও দোহা' সম্পর্কে অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান বলেন : ‘‘শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে যাবে, পৃথিবীর পরিবর্তন ঘটবে, কিন্তু শহীদুল্লাহ্র দোহাকোষ তার মূল্য হারাবে না।’’
(৫)
ভাষাতত্ত্বে তিনি ছিলেন উপমহাদেশের একজন স্বীকৃত ও সর্বজনমান্য পন্ডিত ব্যক্তি। প্রাচীন ও আধুনিক ভাষাসমূহের ইতিহাস, উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে তাঁর মতামতকে সকলে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ভাষাতত্ত্বের গবেষণায় তিনি শুধু উপমহাদেশেরই নয়, প্রাচ্য-গবেষকদের মধ্যেও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁর গবেষণা ও মতামত বিশ্ব-বিদ্বজ্জন মহলে বিশেষভাবে সুপরিচিত ও সমাদৃত। ভাষার ইতিহাস আলোচনা প্রসঙ্গে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রচলিত মত মেনে নিয়েও যুক্তিসংগত কারণে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্বন্ধে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। স্যার জন গ্রীয়ারসন, বিজয়চন্দ্র মজুমদার, ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং আরো অনেকের মতে, মধ্য-ভারতীয় আর্য ভাষার মধ্য স্তর মাগধী প্রাকৃত থেকে মাগধ অপভ্রংশ এবং তা থেকে প্রাচীন ‘বঙ্গকামরূপী' ভাষার উদ্ভব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষাগত বিবর্তন ও বৈয়াকরণিক লক্ষণাদি বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বাংলা ভাষার জন্ম মাগধী প্রাকৃত ও মাগধ অপভ্রংশ থেকে নয়, বরং প্রাকৃত স্তরে গৌড়ী প্রাকৃত নামে যে ভাষা প্রচলিত ছিল, সে গৌড়ী প্রাকৃত থেকে গৌড় অপভ্রংশ ভাষার জন্ম এবং তা থেকে কালক্রমে বঙ্গকামরূপী ভাষার উদ্ভব ঘটে। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এ মত প্রায় সকলেই যুক্তি-যুক্ত বলে মনে করেন। বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি বলেন :
‘‘বাংলা এবং পাক-ভারতীয় অন্যান্য আধুনিক ভাষা মূলত আদিম প্রাকৃত থেকে এসেছে, সংস্কৃত থেকে নয়। বাংলা ও উর্দ্দু ভাষায় এমন শব্দের প্রাচুর্য রয়েছে যাদের মূল সংস্কৃত নয়। যেমন ‘তুমি দেখো' কিংবা ‘তুম্ দেখো'। সংস্কৃতে এ হচ্ছে ‘ইয়ম পশ্য য'-এর কোন শব্দ থেকে ‘তুমি' বা ‘দেখ' আসেনি। এসেছে প্রাচীনকালের জনসাধারণের কথ্য ভাষা প্রাচীন প্রাকৃত থেকে ‘তুম্মে দেক্খ হ'। এ রকম বহু শব্দ ও বাক্য গঠন চোখে পড়ে বাংলা উর্দ্দু প্রভৃতিতে সংস্কৃতে যার মূল খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেমন: বড়, ছোট এগুলো সংস্কৃতের বৃহৎ বা ক্ষুদ্রের ভিন্নরূপ নয়, বরং আদিম প্রাকৃতের ‘বড্ড' ‘কষুট' কিংবা পরবর্তীকালে প্রাকৃত ‘বড্ড' ‘ছুটট' থেকে। এমনি ধ্বনিতত্ত্বের দিক দিয়েও বাংলা উর্দ্দুর জন্ম প্রাকৃতের কাছে যতটা ঋণী সংস্কৃতের কাছে ততটা নয়। সংস্কৃত ছিল দ্বিজ বর্ণের/ভাষার ভাষা, উচ্চ শ্রেণীর ধর্মীয় ও পোশাকী ভাষা-প্রাকৃত ছিল জনসাধারণের ভাষা, সেদিন পর্যন্ত সংস্কৃত তেমনি বেuঁচ ছিল- কিন্তু আদিম প্রাকৃত জনসাধারণের ভাষা হয়ে নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে নানারূপ গ্রহণ করে।’’
বাংলা ভাষার ইতিহাস রচনায় ডক্টর শহীদুল্লাহর অবদান অসামান্য। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎপত্তি ও বিকাশে মুসলমানদের ঐতিহাসিক অবদান সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু হিন্দু ঐতিহাসিকগণ অনেকে এতকাল পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে এ ইতিহাস বিকৃত করেছেন, সত্য চাপা দিয়েছেন এবং মুসলমানদের অবদানকে বিকৃত বা অবমূল্যায়িত করেছেন। ডক্টর শহীদুল্লাহ এক্ষেত্রে সত্যসন্ধ গবেষকের দৃষ্টি নিয়ে অনেক অজানা, ভুলে যাওয়া এবং বিকৃত তথ্যের সঠিক মূল্যায়ন ও যথাযথভাবে তা উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিক্ষাবিদ হিসাবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন এক প্রবাদতুল্য ব্যক্তি। ক্লাস রুমে বক্তৃতারত অবস্থায় তাঁকে মনে হতো যেন তিনি জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডার। ক্লাস রুম ছাড়াও সারা বাংলাদেশ জুড়ে বিভিন্ন শিক্ষায়তনে, সভা-সেমিনার, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মিলাদ মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদিতে তিনি সর্বশ্রেণীর শ্রোতার সামনে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা করতেন।
(৬)
তিনি একজন ‘চারণ শিক্ষকে'র ভূমিকা পালন করেছেন। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পেলেও যথার্থ অর্থে তিনি ছিলেন আমাদের ‘জাতীয় শিক্ষক'। শিক্ষাবিদ হিসাবে তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি:
‘‘প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অভাব পাঁচটি- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। প্রথম চারটি তার জৈব ও সামাজিক অভাব, এদের অভাবে সে সমাজে জীবনধারণ করতে পারে না। কিন্তু শিক্ষার অভাবে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনও ভেদ থাকে না।’’
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন ঃ
‘‘আমি মনে করি শিক্ষার আদর্শ হচ্ছে VIM. V অর্থাৎ Vernacularization অর্থাৎ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা, এতে হবে মনের পরিপুষ্টি; I হলো Islamization অর্থাৎ ধর্মীয় শিক্ষা; এতে হবে আত্মার পরিপুষ্টি; M হলো Militarization অর্থাৎ সামরিক শিক্ষা, এতে হবে দেহের পরিপুষ্টি।’’
(৭)
ডক্টর শহীদুল্লাহর বাংলা ভাষা-প্রীতি সর্বজনবিদিত। তাঁর সারা জীবনের সাধনা, গবেষণা, লেখালেখি, সভা-সমিতি-বক্তৃতায় এর যথার্থতা প্রমাণিত। বাংলা ভাষাকে শিক্ষার বাহন, অফিস-আদালতের ভাষা ও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত করার জন্য তিনি সর্বদা সোচ্চার ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এ সম্পর্কে তাঁর কয়েকটি উদ্ধৃতি পেশ করছি :
এক. ১৯১৫ সনে কলকাতায় বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মিলনীর সভাপতি হিসাবে ভাষণ দিতে গিয়ে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেন: ‘‘একমাত্র মাতৃভাষার মাধ্যমেই জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা সার্থক হতে পারে। ...চীন ও জাপানে যদি তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে আণবিক বিজ্ঞান শিক্ষা সম্ভব, তবে বাংলা ভাষাতেই বা তা হবে না কেন? তবে ইংরাজি, ফারসি, ল্যাটিন, জার্মান, রুশ ভাষা থেকে অনেক শব্দ আমাদের গ্রহণ করতে হবে- তা সবাই করেছে। ইংরাজি ভাষাতেও বহু বিদেশী শব্দ আছে।... এতে ভাষা শক্তিশালীই হবে।’’
দুই. বাংলা ১৩২৪ সনে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি'র বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন ঃ ‘‘আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ... মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষা কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিয়া পরাণ আকুল করে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন্ ভাষার ধ্বনির জন্য প্রবাসীর কোন পিয়াসী থাকে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন্ ভাষায় কল্পনা-সুন্দরী তাহার মনমজান ভাবের ছবি অাঁকে?... সেদিন অতি নিকট, যেদিন বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভাষার স্থান অধিকার করিবে। বিদেশীয় ভাষার সাহায্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার মতন সৃষ্টি ছাড়া প্রথা কখনও টিকিতে পারে না।’’
তিন. ১৯১৮ সনে বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে ভবিষ্যৎ ভারতের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে মতামত গ্রহণের জন্য সর্বভারতীয় পর্যায়ে বিশিষ্ট পন্ডিতজনদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সকলেই হিন্দীর পক্ষে মতামত দিলেও সে সভায় উপস্থিত একমাত্র ডক্টর শহীদুল্লাহ দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন : ‘‘শুধু ভারত কেন, সমগ্র এশিয়া মহাদেশেই বাংলা ভাষার স্থান হবে সর্বোচ্চে। ভাব-সম্পদ ও সাহিত্য-গুণে বাংলা ভাষা এশিয়ার ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে অদ্বিতীয়।’’
সেদিন ডক্টর শহীদুল্লাহর এ সত্যোচ্চারণে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্ডিত ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকেই অগ্নিশর্মা হলেও শহীদুল্লাহ তাঁর যুক্তিসঙ্গত মতের উপর ছিলেন দৃঢ়-অবিচল। সততা, বলিষ্ঠতা ও সত্যোচ্চারণ ছিল জ্ঞান-তাপস ডক্টর শহীদুল্লাহর অন্যতম চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্য।
চার. ১৯৪৭ সনের জুলাই মাসে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দিলে ডক্টর শহীদুল্লাহ তার কঠোর সমালোচনা করে ইংরাজি ‘দি কমরেড' পত্রিকায় 'The Language Problem of Pakistan’ এবং বাংলায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার সমস্যা' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লেখেন (২৯ জুলাই ১৯৪৭ তারিখে ‘দৈনিক আজাদে' প্রকাশিত)।
(৮)
ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আগ্রহ ও পান্ডিত্য ছিল গভীর। তিনি উদার ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠ করেন। একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম হিসাবে তিনি পৃথিবীর সব বড় বড় ধর্মের সাথে তুলনামূলক বিচার করে ইসলামকেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম মনে করতেন। তবে সর্বক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা ছিল তাঁর অন্যতম চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্য। ইসলামী বিষয় নিয়ে লেখা তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ তাঁর এ নিষ্ঠাপূর্ণ, অনুসন্ধিৎসূ ধর্মীয় আবেগেরই প্রমাণ বহন করে। এ কারণে অনেকের নিকট তিনি ধর্মগুরু হিসাবেও বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
(৯)
সাহিত্য ক্ষেত্রে ডক্টর শহীদুল্লাহর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। বড়দের জন্য, শিশুদের জন্য তথা সর্বশ্রেণীর পাঠকের জন্যই তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনুবাদের ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তাঁর রচিত গ্রন্থের তালিকা থেকে এটা প্রতীয়মান হয়। বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্য-পুস্তক রচনার ক্ষেত্রেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল তুলনাহীন। ডক্টর সুকুমার সেন বলেন : ‘‘ডক্টর শহীদুল্লাহ্ শব্দবিদ্যাবিদ ছিলেন, সেই সঙ্গে সাহিত্যিকও ছিলেন। তিনি চমৎকার ঝরঝরে বাংলা লিখতেন এবং তাঁর প্রসন্ন সাহিত্যবোধও ছিল।’’ এ সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা সাহিত্যিক হিসাবে ডক্টর শহীদুল্লাহ্র যথার্থ পরিচিতি খুঁজে পাই।
(১০)
আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ধর্ম, দর্শন, জাতীয় জাগরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডক্টর শহীদুল্লাহর অবদান অসামান্য। বিংশ শতাব্দীর উন্মেষ-লগ্ন থেকে প্রায় সাত দশক কাল পর্যন্ত তিনি এসব ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তার ফলে জাতি নানাভাবে সমৃদ্ধ ও উপকৃত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, গবেষণা ও মনন-চর্চার ক্ষেত্রে সকলের নিকট তিনি ছিলেন এক অনুকরণীয় অনন্য আদর্শ। যেসব মহান ব্যক্তির নিকট জাতি নানাভাবে চিরদিন ঋণী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ।
১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তাঁর অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল।
Moving Encyclopedia of Bangladesh খ্যাত এই প্রাজ্ঞজনকে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
Khalid
১০ জুলাই ২০১৮


আরএসএস


     আরএসএস


     ফেসবুক থেকে       শেয়ার করেছেন             প্রণব কুমার কুণ্ডু


৮০ হাজার শাখা
১ কোটি স্বয়ংসেবক
৪০ হাজার বিদ্যামন্দির
৬ লক্ষ আচার্য্য
৮০ লক্ষ বিদ্যার্থী 
১ কোটি ভারতীয় মজদুর সংঘের সদস্য
৮০ লক্ষ ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কার্যকর্তা
১৫ কোটি বিজেপি সদস্য
৫০০ প্রকাশন সমূহ
৭ হাজার পূর্ণকালীন
৫ লক্ষ পূর্ব সৈনিক পরিষদ
৯০ লক্ষ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আর বজরং দল সদস্য
২১ রাজ্যে সরকার
২৮৩ জন সাংসদ
১১০০ বিধায়ক
RSS শুধুমাত্র এইটুকুই....... মমতা ব্যানার্জি । তাই সংঘ মুক্ত ভারত করার জন্য ৫ লক্ষ মমতাও কম পড়বে.....
কি বলেন বন্ধুরা......???