সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮

ভূগোল বইতে ভুল


      ভূগোল বইতে ভুল


      শেয়ার করেছেন                    প্রণব কুমার কুণ্ডু।



Subhasis Chirakalyan Patra      ফেসবুক থেকে



রাজ্যের ভূগোল বইগুলিতে পৃথিবীর সূর্য্যাবর্ত্তনকালের ভুল মান

পৃথিবী সূর্য্যের চারদিকে এক পাক খেতে ৩৬৫দিন ৬ঘণ্টা ৯ মিনিট ৯.৫ সেকেণ্ড সময় নেয়। আমাদের রাজ্যের ভূগোল বইগুলিতে বলা হয়েছে পৃথিবী ৩৬৫দিন ৫ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেণ্ডে সূর্য্যকে এক পাক খায়। ভূগোল বইগুলিতে ভুল তথ্য আছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্রথম সময়কালটাকে নাক্ষত্রবৎসর এবং দ্বিতীয় সময়কালটাকে ক্রান্তিবৎসর বলে। প্রথমটা দ্বিতীয়টার চেয়ে প্রায় ২০মিনিট বেশী এবং পৃথিবীর সূর্য্যাবর্ত্তনকাল বলতে সেটাকেই (প্রথমটাকেই) বুঝতে হবে। তাহলে ভূগোললেখকরা ভুল করলেন কেমন করে? উত্তরে বলি যে, দুই প্রকার বর্ষমানের মধ্যে ২০ মিনিটের ফারাক হয় পৃথিবীর অয়নচলনের জন্য। পৃথিবীর এই গতির জন্যই (অয়নচলনেরজন্য) পৃথিবী সূর্য্যের চারদিকে এক পাক খাওয়ার ২০ মিনিট আগেই ঋতুচক্র শেষ হয়। সেটা ভালো করে না বুঝার ফলেই ভুগোল লেখকরা ভুল করে ক্রান্তিবৎসরের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবী ৩৬৫দিন ৫ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেণ্ডে সূর্য্যকে এক পাক খায় বলে বলেছেন, সেই ভুল সংশোধন করা দরকার। বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করছি।

অয়নচলন

পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্ত্তনে পৃথিবীর বার্ষিকগতি এবং অয়নচলন উভয়েরই প্রভাব আছে।
অয়নচলন সম্বন্ধে বিস্তারিত বলার আগে বঙ্গাব্দ ও খ্রীষ্টাব্দের তফাৎ নিয়ে কিছু কথা বলি। বিষয়টা এইভাবে শুরু করা যাক। আজকাল বৈশাখ মাসের শুরুতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি হয়। তাহলে বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে কখনও খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারী মাস হতে পারে কি? উত্তর: হ্যাঁ পারে। বঙ্গাব্দে ৪০০ বছরে ১০০টা অধিবর্ষ (leap year) হয়, খ্রীষ্টাব্দে ৪০০ বছরে ৯৭টা। এখান থেকে হিসাব করে দেখুন যে বেশী সংখ্যক অধিবর্ষ থাকার জন্য বঙ্গাদের বছরগুলি গড়ে খ্রীষ্টাব্দের বছরগুলির চেয়ে ২০ মিনিট করে বেশী হয়। অতএব ইংরেজী নববর্ষ বাংলা ক্যালেণ্ডারের মধ্য দিয়ে প্রতি বছরে গড়ে ২০ মিনিট করে এগিয়ে আসে, বা বাংলা নববর্ষ ইংরেজী ক্যালেণ্ডারের ভিতর দিয়ে বছরে ২০ মিনিট করে পরে আসে। এইভাবে ৭০ বছরে ১দিন, কিঞ্চিদধিক ২০০০ বছরে একমাস এবং ৭৫০০ বছরে সাড়ে তিন মাসের ফারাক হয়। তাহলে এখন যেখানে বৈশাখে এপ্রিল হয়, আজ থেকে সাড়ে সাত হাজার বছর আগে বৈশাখে জানুয়ারী মাস ছিল বলে বলতে হবে। সহজ গণনায় দেখা যায় যে আজ থেকে প্রায় ১২০০০ থেকে ১৩০০০ হাজার বছর পরে নভেম্বর মাসে বৈশাখ মাস পড়বে। তখন বৈশাখ মাসে শীত পড়বে, শরৎকালে (চৈত্র সংক্রান্তিতে) শিবের গাজন হবে। ব্যাপারটা অনেকের আজব লাগতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এমনটাই ঘটবে যদি না বাংলা পঞ্জিকার বর্ষমান ২০ মিনিট কমিয়ে তাকে খ্রীষ্টাব্দের (গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডারের) বর্ষমানের সমান করা হয়। তা নাহলে যে আজ থেকে প্রায় ১৩০০০ হাজার বছর পরে আশ্বিন মাসে শিমূল আর পলাশ ফুল ফুটবে তাতে সন্দেহ নাই।

অধিবর্ষ ও বর্ষমানের ব্যাপারটা আর একটু বুঝিয়ে বলি। খ্রীষ্টাব্দের বর্ষসংখ্যা ৪ দিয়ে বিভাজ্য হলে তা অধিবর্ষ হয়, কিন্তু এর একটু ব্যতিক্রম আছে। বর্ষসংখ্যার শেষ দুটি অঙ্ক শূন্য হলে তা যদি ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য হয় তবেই তা অধিবর্ষ। খ্রীষ্টাব্দের ২১০০, ২২০০, ২৩০০ প্রভৃতি সালগুলি ৪ দিয়ে বিভাজ্য হলেও এরা অধিবর্ষ নয়।বতবে ২৪০০ খ্রীষ্টাব্দ অধিবর্ষ হবে কারণ তা ৪ দিয়ে বিভাজ্য। এইভাবে ৪০০ বছরে ১০০টি নয়, ৯৭টি অধিবর্ষ হয় (৩টি বাদ)। কিন্তু বাংলায় অধিবর্ষের নিয়মটা আলাদা (তার বিস্তারিত আলোচনা এখানে সম্ভব নয়)। বঙ্গাব্দে ৪০০ বছরে ১০০টি অধিবর্ষ হয়। এর ফলে আমাদের বছর গুলির গড় মান খ্রীষ্টাব্দের চেয়ে প্রায় ২০মিনিট বেশী হয়।

এখন পৃথিবী সূর্য্যের চারদিকে এক পাক খেতে কত সময় নেয় সেই প্রসঙ্গে আসি। এই সময়কালটা বঙ্গাব্দের বর্ষমানের সমান (প্রায়) এবং জ্যোতিঃবিজ্ঞানে একে বলে নাক্ষত্রবৎসর (sideral year)। ঋতুচক্রের এক বার আবর্ত্তনে কত সময় লাগে?  উত্তর : সেটা খ্রিষ্টাব্দের বর্ষমানের সমান এবং জ্যোতিঃবিজ্ঞানে একে বলে ক্রান্তিবৎসর (tropical year)। উভয়ের মধ্যে ২০ মিনিটের তফাৎ আছে। এই ফারাক কেন আসে? উত্তর : সেটা হয় পৃথিবীর অয়নগতির (precession-এর) জন্য। এটি পৃথিবীর আহ্নিকগতি ও বার্ষিকগতি ছাড়াও আর এক ধরণের গতি। এই গতির জন্য পৃথিবী সূর্য্যের চারদিকে এক পাক খাওয়ার ২০ মিনিট আগেই ঋতুচক্র শেষ হয় (এটি পরিষ্কার করে বুঝতে গেলে ঋতুপরিবর্ত্তনের কারণ বুঝতে হবে)।

প্রাচীন ভারতীয় ও গ্রীক জ্যোতিঃবিজ্ঞানীরা ভালোভাবে আকাশ পর্য্যবেক্ষণের ফলে অয়নচলনের বিষয়টা (ক্রান্তিবৃত্তের পথ ধরে বিষুববিন্দুদ্বয়ের গতির ব্যাপারটা) জানতেন, কিন্তু তার কারণটা নিউটনের আগে কেউ বুঝতে পারেননি। পৃথিবীর স্ফীত নিরক্ষীয় অঞ্চলের উপর সূর্য্যচন্দ্রের টানে ফলে পৃথিবীর মেরুদণ্ডটা তার কক্ষতলের উপর অঙ্কিত লম্বের চারদিকে ২৬০০০ বছরে একটি শঙ্কু রচনা করে বলেই এটা হয়। ঘূর্ণনবেগ কমে এলে একটা লাটিম যেমন হেলে গিয়ে মাথা চালে, পৃথিবীর এই গতিও সেই রকম। এর ফলে আকাশের মেরুতারাগুলিও বদলায়। বর্ত্তমানে যে তারাটি ধ্রুবতারা, মিশরের পিরামিডগুলি নির্ম্মাণের সময় সেই তারাটি যে ধ্রুবতারা ছিল না (থুবন নামের অন্য একটি তারা তখন ধ্রুবতারা ছিল)। এর থেকে এবং আরও নানা প্রমাণ থেকে পৃথিবীর অয়ন চলনের সত্যতা প্রমাণিত হয়। বিষয়টার পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছেন স্যার আইজ্যাক নিউটন, তাঁর গতিসূত্র ও মহাকর্ষ সূত্রের সাহায্যে। পৃথিবীর এই মাথাচালার পর্য্যায়কালটা যে ২৬০০০ হবে তাও নিউটনের সূত্রের সাহায্যে হিসাব করে দেখানো যেতে পারে।

অবশ্য ইতিমধ্যে যদি বাংলা ক্যালেণ্ডারের বর্ষমানকে ২০মিনিট কমিয়ে (অধিবর্ষের সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে সেটা করা সম্ভব) গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডারের বর্ষমানের সমান করে দেওয়া যায় তাহলে পৃথিবীর অয়ন চলন ঘটলেও বাংলা মাসগুলি বরাবারই ঋতুনিষ্ঠ থাকবে (যথা আশ্বিনে চিরকাল শরৎ থাকবে)। গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডারে বর্ষমান বঙ্গাব্দের চেয়ে ২০ মিনিট কম বলে জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী প্রভৃতি মাসগুলি বরাবর ঋতুনিষ্ঠই থাকে (যথা জানুয়ারীতে বরাবর শীতকাল)। ১৫৮২ খ্রীষ্টাব্দে পোপ ষোড়শ গ্রেগরির আমলে ইউরোপে এই পঞ্জিকা সংস্কার করা হয়েছিল। এদেশের পঞ্জিকাকারেরা বঙ্গাব্দেও এইরকম সংস্কার করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

সঙ্গের ছবিতে ড্রাকো তারা মণ্ডলে অবস্থিত ক্রান্তিবৃত্তের উত্তর মেরুকে কেন্দ্র করে ২৩.৫ ডিগ্রী ব্যাসার্ধের বৃত্ত বরাবর ২৬০০০ বছরে খ-গোলের উত্তর মেরুর এক পাক খাওয়াটা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পৃথিবীর মেরুরেখাটি যখন যে তারার কাছে গিয়ে পড়ে তখন সেই তারাটিই ধ্রুবতারা (pole star) হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণাক্ষের উপর অবস্থান করার জন্য ঐ তারাটিকে স্থির বলে মনে হয় অন্য তারাগুলিকে তার চারদিকে ঘুরতে দেখা যায় (তারকাদের দৈনিক ঘূর্ণন)। কয়েক হাজার বছর ধরে দেখলে ধ্রুবতারা ধীরে ধীরে পাল্টায়। ছবিতে দেখুন যে ১৪০০০ খ্রীষ্টাব্দে অভিজিৎ ধ্রুবতারা হবে।

অয়নচলন সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য বঙ্কিমচন্দ্রের 'কৃষ্ণচরিত্র', যোগেশচন্দ্র রায়বিদ্যানিধির 'পূজাপার্ব্বণ' এবং বর্ত্তমান লেখকের 'প্রাথমিক জ্যোতির্বিজ্ঞান' ইত্যাদি গ্রন্থগুলি দ্রষ্টব্য।

পরিশেষে আমার বক্তব্য :
অয়নচলনের বিষয়টি একটু জটিল বলে সব ছাত্রছাত্রীকে না বুঝানো গেলেও, পৃথিবী যে ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ৯মিনিট ৯.৫ সেকেণ্ডে সূর্য্যকে এক পাক খায়, এই সত্যি কথাটুকু বলতেই হবে। এখানে নাক্ষত্র বৎসরের বদলে ক্রান্তিবৎসরের মান দিয়ে দিলে চলবে না। আপনাদের মতামত কাম্য।



* ছবি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে দঃখিত -- প্রণব কুমার কুণ্ডু।

ভারতে সনাতন পন্থী ধার্মিকদের হত্যার কিছু ইতিহাস


        ভারতে সনাতন পন্থী ধার্মিকদের হত্যার কিছু ইতিহাস


        ভাগ করেছেন                প্রণব কুমার কুণ্ডু


সনাতন ধর্ম হিন্দু যোদ্ধা           ফেসবুক থেকে



ওরা  ৭১২ খ্ৰীষ্টাব্দ থেকেই মেতে উঠেছে ‘কাফের’ হিন্দুদের গর্দান নামিয়ে দেওয়ার খেলায়। পেট্রোডলারের দাসত্ববৃত্তিকারীরা অনেক চেষ্টা করেও শেষমেশ ৮ কোটি হিন্দুর গণহত্যার কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। তাহলেও সেই গণহত্যাগুলিকে ‘অসাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দিতে তারা সদা সচেষ্ট। কিন্তু বাস্তব এটাই যে, ‘কাফের’ হিন্দুদের হত্যা করে তাঁদের মহিলাদের ধর্ষণ ও মন্দিরগুলি ধ্বংস করে সেই মন্দিরের প্রতিষ্ঠিত দেব-দেবতাদের মূর্তি দিয়ে মসজিদের সিঁড়ি (যাতে সেগুলি পায়ে মাড়িয়ে চরম শান্তি পায় বিশ্বাসী মুসলমানেরা) বানানোর খেলায় সর্বদাই মেতে থাকত মুঘল-সুলতানি বর্বরেরা। আসুন, এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক – সেই রক্তে ভারতভূমির মাটি কর্দমাক্ত হওয়ার ঘটনাক্রম।

১) মথুরার গণহত্যা : ১০১৮ সালে মহাওয়ান জেলায় প্রায় ৫০,০০০ হিন্দুদের জলে ডুবিয়ে ও তলোয়ারের কোপে হত্যা করা হয়। সেইসঙ্গে হয় সেই জেলার ১,০০০ হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসসাধন।

২) সোমনাথ মন্দিরের গণহত্যা : ১০২৪ সালে গুজরাটের প্রভাস পাটনে ৫০,০০০-এর বেশি হিন্দু হত্যার পর গজনী’র বর্বর মেহমুদ গুজরাট লুট করে ধ্বংস করে সোমনাথ মন্দিরকে।

৩) ১১৯৩ খ্রীষ্টাব্দে ও ১১৯৬ খ্রীষ্টাব্দে যথাক্রমে আজমেঢ় ও গোয়ালিয়র দুর্গে মোট ২ লাখ হিন্দুহত্যা হয়। প্রথমটির তত্ত্বাবধায়ক ছিল মেহমুদ ঘোরী ও দ্বিতীয়টির নায়ক ছিল কুতুবউদ্দিন আইবক নামক নরপশু।

৪) ১১৯৭ খ্ৰীষ্টাব্দে নালন্দা জেলায় (বিহার) প্রায় ১০, ০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করে বখতিয়ার খিলজি।

৫) এর কিছুকাল পর ১২৬৫ খ্ৰীষ্টাব্দে নেওয়াতের প্রায় সব রাজপুতের (সংখ্যায় ১লাখ) নিধনযজ্ঞ সাধিত হয় গিয়াসুদ্দিন বলবন নামক উন্মত্ত জেহাদীর রক্তপিপাসা শান্ত করার জন্য।

৬) ১৩২৩ খ্ৰীষ্টাব্দে ১২,০০০ নিরীহ হিন্দুর রক্তে প্লাবিত হয় পান্ড্যরাজ বংশের রঙ্গনাথস্বামী মন্দির (শ্রীরঙ্গম)। ১২, ০০০ প্রার্থনারত হিন্দুদের জবাই করে মহম্মদ-বিন-তুঘলকের বর্বর সেনাবাহিনী।
একই কায়দায় আজও চলছে অমরনাথ যাত্রীদের হত্যালীলা।

৭) ১৩৫৩ সালে বাংলার ১,৮০,০০০ হিন্দুদের শিরচ্ছেদের কারণে ফিরোজ শাহ তুঘলক তার পশুসম সেনাদের পুরস্কৃত করে।

৮) ১৩৬৬ সালে বিজয়নগরের পাশ্ববর্তী জেলাগুলিতে ঘটে এক বিভৎস হিন্দুমেধ যজ্ঞ। ৫,০০,০০০ হিন্দু হত্যা হয় বাহামনী’র মুসলিম সেনাবাহিনী দ্বারা। শুধু রায়চূড় দোয়াবেই ৭০,০০০ হিন্দুর (সব বয়সের) হত্যা হয়। রেহাই পাননি গর্ভবতী হিন্দু মহিলারাও। সেই জেলাগুলি পরিণত হয ধ্বংসস্তুপে।

৯) ১৩৯৮ সালে হরিয়ানায় তিমুরের হিংস্র, বর্বর ও উন্মত্ত নরপশুসম সেনা প্রায় ৪৫ লাখ হিন্দুর শিরচ্ছেদ করে। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও ওই কথা খাঁটি সত্য। তিমুর নামক নরপশুর নিজেরই বয়ান অনুযায়ী তার প্রত্যেক সেনা অন্ততঃ ৫০ থেকে ১০০ হিন্দু হত্যা করেছিল। তাহলে, তার ৯০,০০০ লোকের/ নরপশুর সেনাবাহিনী অন্ততঃ যে ৪৫ লাখ হিন্দু হত্যা করেছিল, সেকথা জলের মতো স্পষ্ট। সত্যিই, বাস্তব বড় রূঢ়। ১৩৯৮-এ এই তিমুর নামক নরপশু ভাটনের দুর্গের সব হিন্দুদের হত্যা করে। ঐ বছরের ডিসেম্বরে গাজিয়াবাদের লোনিতে প্রায় ১লাখ হিন্দু মহিলা ও শিশুদের বন্দী করে হত্যা করে এই একই নরপশু।

১৩৯৮ সালে দিল্লির প্রায় দেড় লাখেরও বেশি হিন্দুর গণহত্যা হয় তিমুরের হাতে। এই নরসংহার ও হিন্দুরক্ত দিয়ে হাোলি খেলার পর সেই নরপশু আনন্দ করে বলে, “মুসলিম সৈয়দ, উলেমা ও মুসলিম জনগণ ছাড়া পুরো শহরকে আমি ছারখার করেছিলাম”। তারপর দিল্লিতে হিন্দু মৃতদেহের খুলি দিয়ে পিরামিড বানানো হয়। বাকি জীবিত হিন্দুদের দাস বানিয়ে নেওয়া হয়। ১৩৯৯ খ্ৰীষ্টাব্দে মীরাটে ৩লাখ হিন্দুর রক্তবন্যা বয়ে যায় তিমুরের সেনাদের হাতে। কারণ কি ছিল জানেন? তিমুরের সেনারা হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণ করতে চাইলে স্থানীয় হিন্দুরা প্রতিবাদ করেন। ‘গণিমতের মাল’-দের ধর্ষণের প্রতিবাদ ? ‘কাফের’-দের এতো সাহস ?

১০) ১৫২৭ -এর মার্চে উদয়পুর রাজ্যের খানুয়ায় ২লাখ হিন্দুর গণহত্যা হয়। এর মধ্যে ১লাখ রাজপুত বীরযোদ্ধা ছাড়াও ছিলেন সাধারণ নিরীহ হিন্দুরাও। এই হত্যালীলার নায়ক-‘বর্বর বাবর’। এরপর ১৫৬০-এ হয় গরহা-কাটাঙ্গা রাজ্যের ৪৮,০০০ হিন্দু চাষীর গণহত্যা। হত্যাকরী আর কেউ না। আমাদের ‘সেকু’ বুদ্ধিজীবীদের অত্যন্ত প্রিয় আকবর।

১১) ১৫৬৫ খ্ৰীষ্টাব্দে বিজয়নগর প্রত্যক্ষ করে ১লাখেরও বেশি হিন্দুর রক্তবন্যা। সুলতানি সেনারা এই সময়েই সেই শহরের অপূর্ব ভাস্কর্যমন্ডিত মন্দিরগুলির ধ্বংসসাধন করে। ১৫৬৮-র ফেব্রুয়ারীতে উদয়পুর রাজ্যের চিতোর দুর্গে আকবরের নির্দেশে ৩০,০০০ হিন্দুর হত্যা হয়। ৮,০০০ রাজপুত রমনী জেহাদী পশুদের থেকে নিজেদের দেহরক্ষার জন্য "জহরব্রত’ পালন করে ঝাঁপ দেন আগুনে। আর আজ কিনা হিন্দু বালিকারা পড়ছে ‘লাভ জিহাদ'-এর খপ্পরে? ছিঃ ছি! কি হল আমাদের সংস্কৃতির ?

১২) (১৬৬৮—১৭০৭) সালের মধ্যে সংঘটিত আজ পর্যন্ত হওয়া সমস্ত গণহত্যার সবচেয়ে কালো অধ্যায়। আমাদের এই ভারতভূমিতে। প্রায় ৪৬ লাখ হিন্দুর হত্যা হয় নরপশু ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে।
এমনই এক হিন্দুগণহত্যা’র ঘটনা ঘটে বারানসীতে। সেখানে প্রায় ১,৫০,০০০ ব্ৰাহ্মণের নৃশংসভাবে হত্যা করার পর ঔরঙ্গজেব গঙ্গা ঘাট ও হরিদ্বারে হিন্দু ব্ৰাহ্মণের খুলি দিয়ে তৈরি করে এক পাহাড়, যা দেখা যেত ১০ মাইল দূর থেকেও! সত্যি, জানোয়ারেও যা করে না, ইসলামী জেহাদীরা তাও হাসতে হাসতে করে।

১৩) (১৭৩৮– ১৭৪০) সালে উত্তর ভারতে পারস্যের হামলাকারীরা ৩লাখের মতো হিন্দুর রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল।

১৪) লাহোরের কাছে ১৭৪৬-এ শিখদের দিতে হয়েছিল অমুসলিম হওয়ার মূল্য। প্রায় ৭,০০০ শিখদের হত্যা হয়েছিল জেহাদীদের হাতে।
১৭৬৩-তে পাঞ্জাবে প্রায় ৩০,০০০ শিখদের মেরে আফগান মুসলিম জেহাদীরা শিখ জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশই নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

১৫) ১৭৬১ সালে পানিপথের যুদ্ধে প্রায় ৭০,০০০ মারাঠী পুরুষ ও ২২,০০০ মারাঠী মহিলা ও শিশুদের দাস বানানো হয়। আফগান মুসলিমরা বড্ড মজা পেয়েছিল এত ‘গণিমতের মাল’ পেয়ে।

১৬) ম্যাঙ্গালোরে (শ্রীরঙ্গপত্তমে) প্রায় ৫,৬০০ দেশীয় খ্রীষ্টানদের হত্যা করা হয়েছিল টিপু সুলতান নামক নরপশুর নেতৃত্বে। এই নরপশুরাই কিন্তু ভারতীয় মুসলিমদের চোখে হিরো বা নায়ক। তাহলে এই হিরোর ফ্যানদের উদ্দেশ্য কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ভারতীয়দের হিন্দুরা ?

১৭) ১৯২২-এ মোপলা বিদ্রোহের সময় ১০,০০০ হিন্দুর হত্যা হয় কেরালার মালাবারে। প্রায় ১লাখ হিন্দুর বিতাড়নও হয় সেখান থেকে। এর কৃতিত্ব গান্ধীর খিলাফৎ আন্দোলনের মুসলিম নেতাদের। পরে এরাই দেশভাগ করেও এখানেই থেকে যায় অবশিষ্ট ভারতকেও পাকিস্তান বানাতে।

১৮) ১৯৪৬-এর ১৫ই আগষ্ট থেকে ১৭ই আগষ্টে হওয়া ‘দ্য গ্রেট ক্যালাকাটা কিলিং’-এর শিকার হন ১০,০০০ হিন্দু। কোলকাতায় হিন্দু হত্যা হয় পাইকারী রেটে। মুসলিম লীগের নরপশুরা কোলকাতার পর নোয়াখালিতেও সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে (১৯৪৬) ৫,০০০ হিন্দুর কোরবানী’ করে। ১লাখ হিন্দুর ঠাই হয় ‘রিলিফ ক্যাম্পে’। পরে ভারত ভাগের সময় ১৪ই এপ্রিল ও ১৫ই এপ্রিল-এই দুই দিনে শুধু দিল্লিতে হত্যা হয় প্রায় ২৫,০০০ হিন্দুর। সারা ভারতে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১লাখ ৪০ হাজার।

কংগ্রেসী সেকুলার নেতারা তখন অহিংসার বুলি আউড়ে বেড়াচ্ছিল। অবশ্যই শুধু হিন্দুপ্রধান এলাকাগুলিতে!

১৯) ১৯৬৯-এ গুজরাতে বর্বর জেহাদীরা প্রায় ২০০ হিন্দুদের হত্যা করে। প্রত্যক্ষ মদতদাতা ছিল তৎকালীন কংগ্রেসের গুজরাত রাজ্য সরকার।

২০) একইভাবে হত্যা হয় ৫০০ বাঙালী হিন্দু শরণার্থীদের। স্থান ছিল ত্রিপুরার মান্তাই। সাল ১৯৮০।

২১) হাজারিবাগে ১৯৮৯-এর সেপ্টেম্বরে ৫৩ জন হিন্দুকে ও অক্টোবরে (১৯৮৯) প্রায় ৩৩১ জন হিন্দুকে জেহাদীরা হত্যা করে।

২২) ‘স্বাধীন’ ভারতে ১৯৯০ থেকে কাশ্মীরে শুরু করা হয় “হিন্দুমেধ যজ্ঞ”। প্রায় ৫০০ হিন্দুকে মারা হয় ও প্রায় ২লাখ কাশ্মীরী হিন্দু পন্ডিতদের বাধ্য করা হয় তাঁদের নিজের সম্পত্তি ত্যাগ করে কাশ্মীর ছাড়তে।

এরপর ১৯৯৮-এ ওয়ানাধামায় ২৩ জন হিন্দুকে গুলি করে মারা হয়। তারিখটা ছিল ২৫শে জানুয়ারী। ওই বছরেরই ১৭ই এপ্রিল মুসলিম সন্ত্রাসবাদীরা কাশ্মীরে (প্রাণকোটে), ২৬ জন হিন্দুকে আবারও হত্যা করে। না, এখানেই শেষ নয়। ১৯শে জুন (১৯৯৮) কাশ্মীরের চাপনারিতে আরও ২৫ জন হিন্দুর গণহত্যা হয় মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা।
১৯৯৮-তেই ৩৫ জন হিন্দুর (৩ রা আগষ্ট) হিমাচল প্রদেশের চম্বা জেলাতেও হত্যা হয়।

১৯৯২-এর ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করে ১৯৯৩ সালের জানুয়ারী মাসে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাই প্রত্যক্ষ করে ২৭৫ জন হিন্দুর গণহত্যা। হত্যাকারীরা সেই জেহাদী নরপশুরাই।
ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করা নেতারাও মুসলিম তোষণের জন্য হিন্দু হত্যায় মোটেই পিছুপা না। হিন্দু হত্যাই যে মুসলিম ভোট পাবার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চাবিকাঠি!
তাই তো ১৯৯০ সালের ৩০শে অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের রামজন্মভূমি অযোধ্যাতেও অসংখ্যা হিন্দুর মৃত্যু হয় ‘মৌলানা” মুলায়ম সিং যাদবের নির্দেশে পুলিশের গুলি চালনায়।
১৯৯৪ সালের (১ম-২য়) অক্টোবরেও মারা হয় একইভাবে গুলি করে আরো ৬ জন হিন্দুকে।

২৩) মুসলিম সন্ত্রাসবাদীরা ২০০০ সালের ১লা আগষ্ট ৩০ জন অমরনাথ যাত্রীদের নৃশংভাবে হত্যা করে। এই “স্বাধীন” ভারতেরই অঙ্গরাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরে ২০০১ সালের ৩রা আগষ্ট কিশতোয়ার গণহত্যা কাণ্ডে শহীদ হতে হয় আরও ১৯ জন হিন্দুদের - সেই ইসলামীক জেহাদীদেরই হাতে।

২৪) আরও এক বর্বর ঘটনা ঘটে ২০০২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারী। স্থান- গুজরাটের আহমেদাবাদ। গোধরায় ৫৯ জন হিন্দুদের কংগ্রেসের এক মুসলিম কাউন্সিলারের নেতৃত্বে জেহাদী ও উন্মত্ত সন্ত্রাসীরা জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এই কাজে ১০০০-২০০০ মুসলিমের মদত ছিল আর এই কাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে ৩১ জন জেহাদী মুসলিম। শুধু তাই না- এর পরদিন (২৮ শে ফেব্রুয়ারী) দাঙ্গায় মৃত্যু হয় আরও ৭৯০ জন হিন্দুর।

২৫) ২০০২ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের রঘুনাথ মন্দিরে জেহাদী হামলা হয় ২ বার। ২৮শে ফেব্রুয়ারী আর ২৪শে নভেম্বর। প্রথম হামলায় ১৪ জন হিন্দুর মৃত্যু হয়। মোট আহত হন ৬৫ জন হিন্দু। ২০০২ সালের ১৩ই জুলাই জম্মু ও কাশ্মীরের কাশিমনগরে ২৯ জন হিন্দুর গণহত্যা হয় মুসলিম জেহাদীদের দ্বারা। ওই সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর গুজরাটের অক্ষরধামে মন্দিরে হামলা করে জেহাদী নরপশুরা হত্যা করে ২৯ জন হিন্দুদের। আহত হন ৭৯ জন হিন্দু। ওই সালের ১৪ই মে-র হামলায় জম্মু ও কাশ্মীরের বালুচকে ভারতীয় সেনা ও হিন্দু জনতা মিলিয়ে হত্যা হয় ৩১ জনের।
২০০২ সালে এত জায়গায় এত হিন্দুর হত্যা হলেও মেকি সেক্যুলার বুদ্ধিজীবিরা শুধু গোধরা পরবতী কান্ড নিয়েই ব্যস্ত। এমনকি গোধরাতেও যে প্রায় ৮০০ জন হিন্দুর মৃত্যু হল তা নিয়ে তারা নির্বিকারে। হিন্দু প্ৰাণের কোন দামই যে নেই এই পেট্রেডলারের দাসত্ববৃত্তিকারীদের কাছে।

২৬) ২০০৬ সালে মার্চে বারানসীতে বোমা বিস্ফোরণ প্রাণ নেয় ২৮ জন হিন্দুর। সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দিরে পূজারত, প্রার্থনায় ব্যস্ত ২০১ জন হিন্দু আহত হন।
মিলিয়ে দেখুন আগের ঘটনাগুলির সাথে। এদের পূর্বপুরুষেরা একইভাবে, একই কায়দায় সোমনাথ মন্দিরে হিন্দু হত্যা করেছিল। করেছিল অন্যান্য মন্দিরগুলিতেও | সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। আগে শুধু ব্যবহার হত তরবারী, আর এখন হচ্ছে বন্দুক আর বোমা।

২৭) ২০০৬ সালের এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডায় হয় আরও এক গণহত্যা। ইসলামী জেহাদীরা হত্যা করে। ৩৫ জন নিরীহ হিন্দুকে।

২৮) ২০০৮-এর ২৬শে নভেম্বর মুম্বইয়ে পাকিস্তানী নরপশুরা ১৬৪ জন অ-মুসলিমদের হত্যা করে। আহত হন ৬০০-রও বেশি। ১১ জন ইসরায়েলি ইহুদীদের হত্যা করার আগে তাঁদের ওপর হয় অমানবিক অত্যাচার। যৌনাঙ্গ (তাঁদের) চিরে দেওয়া হয় ব্লেড দিয়ে। নিজেদের লুটেরা ও খুনী পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য সুন্দরভাবে ধরে রাখা একেই তো বলে!

২৯) ২০১২-য় আসামে কংগ্রেস সরকারের প্রশ্রয় পেয়ে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা জুলাই মাসে আসামের বোড়ো, খ্ৰীষ্টান ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে। নিহত হন ৭৭ জন। বহিরাগত মুসলিমদের (বাংলাদেশীদের) দিয়ে দেশের হিন্দু নাগরিকদের হত্যাও চলে এই ভোট ভিখারী নেতাদের দেশে।

৩০) ২০১৩-য় উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে মুসলিম দুষ্কৃতীরা এক হিন্দু মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলা করলে, সেই মেয়ের ভাই প্রতিবাদ করায় তাকে খুন করে মুসলিমরা। ক্ষমা না চেয়ে (এই জঘন্য কাজের জন্য) বরং মুসলিমরাই দাঙ্গা বাধিয়ে ওই সালের ২৫শে আগষ্ট থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০ জন হিন্দুকে হত্যা করে। আহত ও গৃহহীন হন প্রায় ৯৩ জন। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সরকার নির্দেশ জারি করে যে, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা হবে শুধু দাঙ্গাপীড়িত মুসলিমদেরই, দেশভক্ত ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক হিন্দু জাতিদের সেখানে NO ENTRY। এইতো আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা। ওই রাজ্যেই ২০১৪ সালের ২৫শে জুলাই সাহারাননুর দাঙ্গায় ৩জনের (শিখ) মৃত্যু হয়।

এই লিস্ট কিন্তু Never ending। এই তো, অমরনাথ যাত্রীরা আবার শহীদ হলেন এই সেদিনও। তাই, হিন্দুদের ভাবতে হবেই যে, ৭১২ খ্ৰীষ্টাব্দ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর ধরে যারা শুধু হিন্দু নিধনযজ্ঞে মেতে আছে, তাদের সাথে একসাথে থাকার আবার বৃথা চেষ্টা করবে নাকি শিবাজী, গুরু গোবিন্দ সিং-এর মতো দেশ, জাতি, ধর্ম ও সর্বোপরি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার শেষ ও মরণপণ চেষ্টা করবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। সময় কিন্তু বয়ে চলেছে। ইতিহাস থেকে যারা শিক্ষা নেয়না ইতিহাস তাদের কখনো ক্ষমা করে না। কারণ, History repeats itself। হিন্দুরা কি চায়? সোমনাথ মন্দির বা হিন্দুকুশের গণহত্যায় লক্ষ লক্ষ হিন্দুর হত্যা আবার হোক ? নিশ্চয় না। তাহলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হয়ে থেকে এখন থেকেই হিন্দু রক্ষার দায়িত্ব হিন্দুদেরকেই নিজেদের কঁধে তুলে নিতে হবে।

কৃতজ্ঞতাঃ স্বদেশ সংহতি সংবাদ। পূজা সংখ্যা ২০১৭; পৃষ্ঠা-২২

ওঁ


        ওঁ




Chinmoy Bose           ফেসবুক থেকে অংশভাগ করেছেন 
                                                 প্রণব কুমারকুণ্ডু


"ওম"
-----------------

অ (A), উ (U) এবং ম(M) এই ত্র্যক্ষর (তিন অক্ষর) মিলে এক ‘ওম্’ সৃষ্টি হয়েছে। ‘অ’ মানে ব্রম্ভা, ‘ও’ মানে বিষ্ণু, আর ‘ম’ অর্থে শিব। এককথায়, ওম হল এই ত্রিশক্তির বা ত্রিদেবের সমাহার। ‘অ’ হল সৃষ্টি বা ক্রিয়েটিং শক্তি, ‘উ’ হল স্থিতি বা সাস্টেনিং শক্তি আর ‘ম’ হল ধ্বংসের শক্তি। এই ওঁ থেকে পরমেশ্বরের অনেক নাম সূচিত হয়। যেমন-‘অ’-কার থেকে বিরাট, অগ্নি এবং বিশ্ব প্রভৃতি; ‘উ’-কার থেকে হিরণ্যগর্ভ, বায়ু এবং তৈজস প্রভৃতি; ‘ম’-কার থেকে ঈশ্বর, আদিত্য এবং প্রাজ্ঞ প্রভৃতি নাম সূচিত ও গৃহীত হয়। প্রকরণানুসারে এই সকল যে পরমেশ্বরেরই নাম তাহা বেদাদি সত্যশাস্ত্রে সুস্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে (সত্যার্থপ্রকাশ : পৃঃ ১। ‘‘ওম খং ব্রহ্ম’’ \ ১\ যজুঃ অ. ৪. ম. ১৭\)। ৮ম সংস্করণের সুবলচন্দ্র মিত্র সংকলিত ‘সরল বাঙ্গালা অভিধান’-এর ৩২০ পৃষ্ঠায় ‘ওঁ’-এর ব্যখ্যায় বলা আছে, ‘‘ওংকার, প্রণব, আদ্যবীজ।’’ পরে ৩২১ পৃষ্ঠার ১ম কলামে ‘ওম’-এর অর্থ লেখা আছে ‘‘প্রণব, বিষ্ণুশিবব্রহ্মাত্মক বীজমন্ত্র; স্বীকার; মঙ্গল; আরম্ভ; অপাকরণ। অব (রক্ষা করা)+ম কর্তৃ; অথবা অ (বিষ্ণু)+ উ (শিব)+ম (ব্রহ্মা), সমাহার দ্বন্দ্ব সমাসে সন্ধি করিয়া পদটি নিষ্পন্ন হইয়াছে।’’
মানব জীবনের শুরুতে একটি শিশু যখন কথা বলা শুরু করে, প্রথমে অ-অ উচ্চারন করে। এর কিছু পরে উ-উ বা ও-ও (প্লুতস্বরে) উচ্চারণ শেখে। এর পরে মা, মা-মা বলে ডাকা শুরু করে। এক শিশু ॐ দিয়েই কথা বলা শুরু করে। কেবল হিন্দু নয়, সারা বিশ্বই শিশুদের ভীষণ পবিত্র ভাবে তার নিষ্পাপ উপস্থিতিতের জন্য। শিশুর মধ্যে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান।

আমরা যদি ভিন্ন ভাবে দেখি, GOD তেও একই সত্যের প্রকাশ (G= Generative power, O=Operative power and D= Destructive power)।

বিভিন্ন ভাষায় ধর্মে প্রকাশ
--------------------
বিভিন্ন উপনিষদ, বেদ, গীতা ও অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্রে সর্বত্রই ওঁ-কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কঠোপনিষদ মতে, ওঁ-কার পরব্রহ্ম। মুণ্ডক উপনিষদে ওঁ-কার অবলম্বনে ঈশ্বর উপাসনার কথা বলা হয়েছে। অথর্ববেদের গোপথব্রাহ্মণের একটি কাহিনি অনুসারে দেবরাজ ইন্দ্র ওঁ-কারের সহায়তায় দৈত্যদের পরাস্ত করেন। এই কাহিনির অন্তর্নিহিত অর্থ, ওঁ-কারের বারংবার উচ্চারণে মানুষ তার পাশব প্রবৃত্তি জয় করতে সমর্থ হয়। শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, তিনি সকল অক্ষরের মধ্যে ওঁ-কার। মৃত্যুকালে ওঁ-কারের উচ্চারণে পরম সত্য লাভ হয়। পতঞ্জলির যোগসূত্র-এ ওঁ-কারকে ঈশ্বরের প্রতীক বলে বর্ণিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ওঁ-কারের স্মরণ ও উচ্চারণে সমাধি লাভ করা যায়। এটি কেবল হিন্দু দর্শনের সর্বোচ্চ ঈশ্বর, ব্রহ্মের বাচক বোধক শব্দ নয়। এই ধর্মের প্রতিটি সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়, ছাড়াও হিন্দু ধর্ম থেকে সৃষ্টি হওয়া বৌদ্ধ, জৈন্য, শিখদের (ੴ ) কাছে এটি পবিত্র প্রতীক হিসাবে গণ্য করা হয়। এই প্রতীকের দেবনাগরী রূপ ॐ, চীনা রূপ (pinyin – ǎn), কিম্বা সরল চীনাঅক্ষরে (pinyin – wēng), এবং তিব্বতীয় রূপ ༀ। ভারতের উত্তরে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তারে ॐ সেখানে ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়। ওঁ- কার বাংলায় এবং ঔঁ-কার সংস্কৃতিতে। শ্রী শ্রী স্বামী স্বরুপানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন- “ওঁ, ওম, ঔং, অউম, ঔঁ” এই পাঁচ প্রকার উচ্চারণের মধ্য বস্তুগত বা অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। এই শব্দ ক্রিশ্চানিটিতে ‘আমেন’ এ পরিবর্তীত হয়েছে পরবর্তী কালে।

বিভিন্ন দেশে প্রকাশ
----------------
ॐ লেখা মুদ্রা বা পুঁথি পূর্বএশিয়ার নানান দেশের প্রাচীন সভ্যতায় পাওয়া যেত। ওমকে উনালোম বা ওউম হিসাবে ডাকা হয় থাইল্যান্ডে। বিভিন্ন সরকারি কাজে বা পতাকায় এর উপস্থিতি রাজা চতুর্থ রামের (r. 1851–1868) সময়ে দেখা যায়। শ্রীলঙ্কার Anuradhapura যুগের মুদ্রায় (প্রথম থেকে চতুর্থ শতকে)) ॐ দেখা যেত। মেডিয়াভেল ভাস্কর্য্যেও বা শিল্পেও এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

শরীরের সাতচক্রে ওঁ-এর প্রভাব
-------------------------
ওঁ বা ॐ বা ওম হল একটি প্রকৃতির বা ব্রম্ভান্ডের আদিম শব্দ। এই শব্দ সমগ্র ব্রম্ভান্ড থেকে আমাদের শরীরের কোষের মাইক্রোটিউবিউলসে অনুরণিত হয়।অনেকে মনে করেন, ৪১৭ হার্জের মধ্যে এই ‘ওম্’ শব্দের এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে, যা দিয়ে শরীর-মন থেকে সকল নেগেটিভ শক্তি, যেমন ক্লান্তি, মর্মপীড়া, শোক, অবসাদ, দূর হয়। তবে ॐ এর শক্তি কেবল ৪১৭ হার্জে সীমাবদ্ধ নেই। ॐ যখন লেখা হয়, এই অ, উ, ম এর অ হল কনসাস স্টেট, উ হল ড্রিম স্টেট, ম হল ড্রিমলেস স্লিপ স্টেট আর অ,উ,ম এর সাথে চন্দ্রবিন্দু যোগ করা হলে, একসাথে চতুর্থ এক স্টেট বা তাদেরকে ছাপিয়ে নূতন এক স্টেটে উন্নীত হওয়া বোঝায়।

ॐ উচ্চারণে দেহের সাতটি চক্র জাগরিত এবং পরষ্পরের সাথে সংযুক্ত হয়। আমাদের দেহের নিম্নাঙ্গে, তলপেটে, নাভিতে, হৃদয়ে, কণ্ঠে, দু চোখের মাঝে ও মাথার ওপরে আছে সাতটি চক্রের অবস্থান। চক্রগুলো হলো, মূলাধার চক্র, স্বাধিষ্ঠান চক্র, নাভিচক্র, হৃদচক্র, বিশুদ্ধ চক্র, আজ্ঞা চক্র ও সহস্রার চক্র। প্রতিটি চক্রের সাথে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জড়িত। যখন যে চক্রে দিব্যশক্তি খেলা করে তখন সে চক্রের ওপর ভাল-মন্দ দুরকমের প্রভাব পড়ে। যেমন, বিশুদ্ধ চক্রে খেলা করলে কথা বলার শক্তি ও গানের সুরধারা আসে। আবার সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও মন খারাপ হয়ে থাকে। এভাবে অন্যান্য চক্রের ওপরও প্রভাব ফেলে থাকে।
ওঁ উচ্চারণে বিশেষত ব্রম্ভতালুতে অবস্থিত সহস্রার চক্র খুলে যায়। তখন ঈশ্বরের অবস্থান সেখানে অনুভূত হয়। ঈশ্বরের সাথে সংযুক্তি সাধন করে। এই চক্রেরা তখন কিছু বর্ণের বা রঙের সৃষ্টি করে। তখন ব্যক্তি নিজের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হন।
দেহে ত্রিশক্তির অবস্থান
------------------
আমাদের নিজের মধ্যেও এই তিন শক্তি লুকিয়ে আছে। আমাদের দেহের মাঝেও সবসময় কিছু না কিছু সৃষ্টি হচ্ছে সৃষ্টির জন্য। নূতন কোষ, চুল। তেমনি সততই এরা মারা যাচ্ছে। তেমন কিছু না কছু রয়েই যাচ্ছে। আমাদের স্মৃতি কিন্তু রয়ে যাচ্ছে। এটাই অপারেটিং বা সাস্টেনিং পাওয়ার বা স্থিতি শক্তি।
****বিশ্বব্রম্ভান্ডে উপস্থিতি এবং শরীরে প্রভাবের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।*****
১৯৫২ সালে বিজ্ঞানী উইনিফ্রেড সুম্যান (Winifried Schumann) এ পৃথিবীর ৭.৮৩ হার্জে একটি স্বাভাবিক কম্পাঙ্ক খুঁজে পান। এটি ঠিক যেন পৃথিবীর হৃদস্পন্দন। অনেক বিজ্ঞানী এই সুম্যান কম্পাঙ্ককের মাধ্যমে পৃথিবীর তড়িৎ-চুম্বকীয় আবহ এবং পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল জীবকুলের জৈব-তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের সম্পর্ক খুঁজে পান। গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মোবাইল, স্মার্ট মিটার থেকে যে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নির্গত হয়, তা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে শরীরের সাম্যের বিঘ্ন ঘটায়। মস্তিষ্কের মেলাটোনিনের ক্ষরণ ব্যাহত করে। আরো নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই সুম্যান তরঙ্গ কেবল এই পৃথিবীর নিজস্ব তরঙ্গ নয়, সেই তরঙ্গেই সকল জীবকুল অনুরণিত হয়। ডাক্তার আঙ্কেরমুলার সর্বপ্রথম সুম্যান তরঙ্গ আর মস্তিষ্কের আলফা তরঙ্গের সম্পর্ক আবষ্কার করেন। এই গবেষণা ডঃ সুম্যানের কাছে আনলে, সুম্যান তার পিএইচডির ছাত্র, হারবার্ট কোনিগকে (Herbert König) এই নিয়ে গবেষণা করতে বলেন। পরবর্তীকালে কোনিগ সুম্যান তরঙ্গ আর ব্রেন ওয়েভ এর সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেন ইসিজির মাধ্যমে। উনি দেখান যে, ৭.৮৩ হার্জের এর সুম্যান তরঙ্গ মস্তিষ্কের আলফা এবং থিটা কম্পাঙ্কের মধ্যেই অবস্থিত।
আধুনিক চিকিৎসায় ওষুধ বানাতে একটা বিষয় মাথায় রাখা হয়, মলিকুলার লেভেলে আমাদের শরীর হল পরমাণুর ভাইব্রেটিং সিস্টেম। যার মাধ্যমে আমরা শব্দকে গ্রহণ করতে পারি ও প্রেরণ করতে পারি। আমরা শব্দের মাধ্যমেই আমাদের শরীরে কম্পন পাঠিয়ে আরোগ্যলাভ করতে পারি এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অংশের পুননির্মাণ করতে পারি। এই কম্পাঙ্কের সাহায্যে ইথারিক প্যাটার্ণ পালটে অসুস্থতার মানসিক কারণের আরোগ্যলাভ করাতে পারি। প্রতিটি মানুষের/জীবের নিজস্ব কম্পাঙ্ক (ভাইব্রেসনাল ফ্রিকুএন্সি) আছে। অসুখের সময়, শক্তির বা কম্পাঙ্কের ওষুধগুলো ব্যবহার করে আরোগ্যলাভ সম্ভবপর হয়।
এই 'ওম' শব্দের মাধ্যমেই শরীরের সাত চক্রের মধ্যে ব্রম্ভতালুতে অবস্থিত সহস্রার চক্র জাগরিত করার চাবি কাঁঠিটি লুকিয়ে আছে। আর, সুম্যান ফ্রিকোয়েন্সি অনেকটা ওম এর মত শুনতে হয়, যা দিয়ে আধ্যাত্মিক উন্মেষ সম্ভবপর বলে বিশেষজ্ঞগন দাবী করেন।
ॐ এর সিমাটিক্স
-------------
সিমাটিক্সের মাধ্যমে শব্দবিজ্ঞানে শব্দের জ্যামিতিক বিন্যাস দেখা হয়। পাতলা মেম্ব্রেন বা প্লেটের উপরিতল খুব মিহি দানা বা বালি বা জল দিয়ে ঢেকে রেখে তাতে কোনো নির্দিষ্ট শব্দ প্রয়োগ করে শব্দ তরঙ্গের দ্বিমাত্রিক বিস্তার দেখা হয় জল বা বালির বিন্যাসের মাধ্যমে। ১৯৩০সালে জার্মান বিজ্ঞানী ডঃ হান্স জেনি (Dr. Hans Jenny) তা আবিষ্কার করেন। ওম এর চিত্র সিমাটিক্স করলে তার ভারসাম্য যুক্ত বিন্যাস দেখা যায়।
বস্তুত, কেবল পৃথিবীর জন্য নয়, সূর্যের থেকেও ওম শব্দ তৈরি হয়। এ শব্ধ রেকর্ড করা যায় না, কিন্তু সূর্যের করোনাল লুপের ভাইব্রেসনের অনুপ্রস্থ (গিটারের তারের মত) আর অনুদৈর্ঘ্য (বাঁশির মত) কম্পন স্যাটেলাইট ইমেজ আর ভিডিও ইমেজ থেকে তৈরি করেছেন। সংগ্রহ করা ইমেজ থেকে সেই সূর্যের সেই ভাইব্রেসনকে শোনাযায়, এমন কম্পাঙ্কে কনভার্ট করা হয়েছে। তা কিছুটা ওম এর মত শোনায়। তবে সাতদিন ধরে সংগ্রহ করা ভাইব্রেসনকে কিছু সেকেন্ডের শব্দে পরিণত করা হয়েছে।

সংগৃহীত।

সুত্র-ইন্টারনেট ( আকাশতথ্য )।