বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭

রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা

'হিন্দু'-র পোস্ট, সকলের সাথে,  ভাগ করেছেন                      প্রণব কুমার কুণ্ডু
রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী হামলা করে যাচ্ছে রাখাইনে আর অসহায় নিরাপরাধ সাধারণ লোকদের হত্যা করছে !
শুধু শুধুই কি মায়ানমারের বৌদ্ধরা ক্ষেপেছে ঐ জংঙ্গি রোহিঙ্গাদের সাথে ?

অন্যান্য কোন মুসলিম দেশ,  এই সমস্ত রোহিঙ্গাদের নিতে চায় না --- এমনকি,  মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াও,  স্পষ্ট করে "না" করে দিয়েছে !
সুতরাং কেবলমাত্র নিরীহ ৫% রোহিঙ্গা,  যাদের নারী-শিশু-বৃদ্ধদের রক্ষা করা,   মানবিক দ্বায়িত্ব,   আর বাকি ৯৫% সন্ত্রাসী বর্বর রোহিঙ্গাদের শাস্তি দেয়া উচিৎ,  ওদের কৃতকর্মের জন্যে....







-1:13




-4:46

72

বাঙালির ভূতচর্চা


বাঙালির ভূতচর্চা





বাঙালির ভূতচর্চা            শেয়ার করেছেন            প্রণব কুমার কুণ্ডু




প্রথম পাতা   ব্লগ
বাঙালির ভূতচর্চা, পর্ব ১: প্ল্যানচেটে সেদিন কোন ভূত এসেছিল
দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় ।


ইউরোপে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অন্য ভুবন’ নিয়ে চর্চার সূত্রপাত হয়েছিল উনিশ শতকের মাঝামাঝি, কয়েক দশকের মধ্যেই সেই চর্চা আটলান্টিকের অন্য পারে আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডে প্রেততত্ত্বের গবেষকদের মধ্যে ছিলেন দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীরা, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন খ্যাতিমান অধ্যাপক— হেনরি  সিজউইক,  ফ্রেডারিক মায়ার্স ও এডমন্ড গুরনি। এঁদের আগ্রহে ১৮৮২ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সোসাইটি অফ সাইকিক রিসার্চ, সংক্ষেপে এসপিআর। নিয়মিত নিজেদের গবেষণা আদান-প্রদানের জন্য সোসাইটি একটি মাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করতো। অচিরেই সোসাইটি অফ সাইকিক রিসার্চ-এর খ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকাতেও এর শাখা খোলা হয়। এই সমিতির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কবি লর্ড টেনিসন, সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন, জন রাসকিন, ‘আ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এর স্রষ্টা লুইস ক্যারল, এবং এক ঝাঁক বৈজ্ঞানিক— স্যর উইলিয়াম ক্রুক্স, লর্ড রলে, জে জে টমসন এবং ইংল্যান্ডের দুই প্রধানমন্ত্রী— গ্ল্যাডস্টোন ও আর্থার বালফুর। বিদগ্ধ মহলে এই সমিতির এতটাই সুনাম ছিল যে, সিগমন্ড ফ্রয়েড তাঁর মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে যুগান্তকারী গবেষণা প্রথম এঁদের জার্নালেই প্রকাশ করেছিলেন।

হেনরি  সিজউইক,  ফ্রেডারিক মায়ার্স ও এডমন্ড গুরনি
আমাদের দেশের আজকের যুক্তিবাদীদের মতো এঁরা 'সব বুজরুকি' বলে উড়িয়ে না দিয়ে ভূত, প্রেততত্ত্ব, জন্মান্তর, জাতিস্মর, ইত্যাদির মূলে কোনও সত্য রয়েছে কি না তা জানতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাঁদের জ্ঞাতব্য ছিল ধর্ম যখন অস্তিত্বের বিভিন্ন রহস্যের সমাধানে অসমর্থ, তখন এ ব্যাপারে প্রেতযোনিদের সাহায্য নিলে কেমন হয়? আমাদের চিন্তার ইতিহাসে প্রথম অলৌকিক ও অতীন্দ্রিয় ঘটনার বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূত্রপাত তখনই।
কিন্তু ঠিক কিভাবে কাজ করত এই সমিতি? প্রধানত গুর্নি আর মায়ার্স কোথাও কোনও বিচিত্র ঘটনার খবর পেলেই অকুস্থলে হাজির হয়ে ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করতেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং তার পর যুক্তি-বুদ্ধির আলোকে তাকে বিশ্লেষণ করতেন। তাঁদের উৎসাহ আর কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি দু’টি মহাগ্রন্থ— ‘The Phantasms of the Living’ এবং ‘Human Personality  and its Survival of Bodily Death’। বইদু’টি এখনও গবেষণার জন্য এযুগেও খুবই কাজে লাগে, কারণ অসংখ্য তথ্যে ঠাসা এগুলি। কিন্তু লেখায় সরসতা বড় কম, পড়তে পড়তে মনে হয় যেন থানার দারোগার রিপোর্ট পড়ছি ।
এতটা সংগঠিতভাবে না হলেও উনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা শহরেও মৃতের সঙ্গে কথোপকথন শুরু হয়েছিল। ইতিহাস বলছে, ১৮৬৩ সালে কলকাতায় যখন প্রথম প্রেতচক্র অনুষ্ঠিত হয়, তখনও সোসাইটি অফ সাইকিক রিসার্চ রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে। প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন এক বিখ্যাত মানুষ, বেঙ্গল লাইব্রেরির মুখ্য গ্রন্থাগারিক প্যারীচাঁদ মিত্র। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ও অনুরাগীদের মনে পড়বে, ইনিই টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে উনিশ শতকের সাড়া জাগানো বই ‘আলালের ঘরের দুলাল’ লিখেছিলেন। প্রেতচর্চায় তাঁর আগ্রহের কারণ ১৮৬০ সালে তাঁর স্ত্রীবিয়োগ। অকস্মাৎ মনের মানুষটিকে হারিয়ে তিনি বিশেষ কাতর হয়ে পড়েছিলেন এবং বিদেশ থেকে প্রেততত্ত্বের বই আনিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। বেরিনি নামে এক ফরাসি বিশেষজ্ঞের রচনা থেকে তিনি প্লানচেট মারফৎ আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় জানতে পারেন এবং এর পরে নিয়মিত চক্রে বসে প্ল্যানচেট করার সঠিক পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছিলেন। মনে হয়, তাঁর প্ল্যানচেট গবেষণার ফল ভালই হয়েছিল। কারণ গল্প আছে, তাঁর মৃতা স্ত্রী নাকি প্রত্যহ দু’বেলা তাঁর স্বামীর আহারের তদারক করে যেতেন এবং রান্নায় নুন-মিষ্টি কমবেশি হলে পূত্রবধূদের উপরে চোটপাটও করতেন ।

সঞ্জীবচন্দ্র ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ওই সময়েই কলকাতা থেকে খুব বেশি দূরে নয়, যদিও এখন বাংলাদেশের অঙ্গ, যশোহর টাউনে, একটি সান্ধ্য প্রেতচক্র গড়ে উঠেছিল, যার সদস্য ছিলেন অনেক সরকারি কর্মচারী। দু’জন বিখ্যাত মানুষ— নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র ও সাহিত্যিক তথা বঙ্কিমচন্দ্রের অগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই প্রেতচক্রে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ‘নীলদর্পণ’ ও ‘পালামৌ’-র স্রষ্টারা অবশ্য কোনও মৃত্যুশোক ভুলতে বা আধ্যাত্মিক গবেষণা করতে আসর জমাতেন না। প্ল্যানচেট ছিল এঁদের কাছে নিছক বিনোদন। এক সন্ধ্যায় প্ল্যানচেটের আসরে একটি আত্মার আগমনে শহরে খুবই হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। চক্রধারীরা দাবি করলেন, বিনা আহ্বানেই হাজির হয়েছিলেন কবি জন মিল্টনের আত্মা এবং নিজের মিল্টনত্ব প্রমাণ করার জন্য ল্যাটিনে এক পিস কবিতাও লিখে দিয়েছিলেন।  চক্রধারীরা কেউই  ল্যাটিন  জানতেন না, তাই তাঁরা তখনকার মতো কিছুই না বুঝে ভূতকে প্রচুর সাধুবাদ দিয়ে বিদায় দিয়েছিলেন। ক’দিন পরে অবশ্য এক ল্যাটিন বিশারদকে লেখাটা দেখানো হয় এবং তিনি পড়ে বলেন— কবিতাটি অতি নিম্নশ্রেণীর, তাতে নাকি ব্যকরণের ভুলও রয়েছে। ‘অ্যারিওপ্যাজেটিকা’-র লেখকের কলম থেকে এমন কবিতা বেরোনো নিঃসন্দেহে বিস্ময়ের। চক্রধারীরা তখন খুশি হয়ে প্রচার করেন, মিলটন না হলেও একটা কোনো আত্মা অবশ্যই এসেছিল, নইলে ল্যাটিন ভাষায় লিখলো কে?

যশোহরের আড্ডার এক নিয়মিত সদস্য ছিলেন রাজকৃষ্ণ মিত্র। শোনা যায় পরিবারের কয়েকটি প্রিয়জনকে হারানোর পরে তিনি প্রেতচর্চা শুরু করেন। তাঁর প্রেতচর্চার বৈশিষ্ট্য হল— তিনি প্রতিটি কথোপকথন আদ্যোপান্ত লিখে রাখতেন। সেই লিখনগুলি তিনি ১৮৮২ প্রকাশ করেছিলেন  'শোকবিজয় ' নাম দিয়ে। এর আগে কোনও ভারতীয় ভাষায় এরকম বই লেখার নজির নেই। দুর্ভাগ্য, বইটি অনেকদিন ধরেই অপ্রাপ্য ।
যশোহরের আড্ডায় বঙ্কিমচন্দ্র কখনও যাননি, তবে ভূতে তাঁর বিশ্বাস ছিল মনে হয়, কারণ পরিণত বয়সে তিনি তাঁর নাতিদের নিজের অলৌকিক অভিজ্ঞতার গল্প বলতেন। তাঁর অসমাপ্ত উপন্যাস—  'নিশীথ রাক্ষসীর কাহিনী' শেষ করতে পারলে একখানা জমাটি ভূতের গল্প পাওয়া যেতো ।  মৃত্যুর পরেও এক নাতির মাধ্যমে তিনি একটি উপন্যাস লিখেছিলেন বলে তাঁর দৌহিত্র দাবী করেছিলেন, কিন্তু ব্যাপারটি যথাযথ ভাবে অনুসন্ধান করা হয়নি বলে এ সম্বন্ধে সঠিক কিছু বলা যায় না ।
(ক্রমশ)