সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

যিশু

 যিশু

যিশু : শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু











এক বা আরও বেশি ব্যক্তি এবং যে টেক্সটে 'Jesus lived in India his unknown life before and after the crucifixion Holger Kersten' লেখা আছে-এর একটি ছবি হতে পারে
Subhankar NagSubhankar H A Nag-এর সাথে আছেন।
সত্য উন্মোচিত হোক
হোক নকলের পতন
বেদান্তবাদী যিশু... ও যিশুখ্রিস্টের মুখে উপনিষদের বাণী...
অবিশ্বাস্য হলেও নতুন পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সত্য। সুপরিচিত টিভি চ্যানেল 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' এ টেলিকাস্ট করা 'সিক্রেট বাইবেল সিরিজ' অনুষ্ঠানে এ সত্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই বৈপ্লবিক সত্য তথাকথিত ধ্বজাধারীদের সচেতন ঔদাসিন্যের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই জনসমক্ষে আসে নি এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে নি। টিভি কমেন্টেটর বলছেন: "এই আমরা প্রথম পড়তে যাচ্ছি 'দি গসপেল অব জুডাস'। যেটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ঘটনাচক্রে, যেটি দুবার বিক্রি হয়ে গেছিল, আর একবার চুরি হয়ে গেছিল, যার পাতাগুলো রহস্যে ভরা। প্রাচীন একটি বৈপ্লবিক চিন্তার দলিল এটি। এই দলিল কি কবরেই রেখে দেওয়া হবে? না কি এটি সেই ইহুদি ভদ্রলোকের যাকে আমরা যিশু বলে জানি তার সম্বন্ধে একটি সত্যনিষ্ঠ যথার্থ দলিল?"
এই প্রশ্ন রাখার পর কমেন্টেটর জানাচ্ছেন-- গস্পেল অফ জুডাস আবিষ্কারের পেছনে বেশ কয়েকটি গল্প আছে। তবে সবচেয়ে সম্ভাব্য যে গল্পটি সেটি এরকম। ১৯৭৮ সাল, ইজিপ্টের নাইল নদীর পাড়ে একটি গুহার মধ্যে এক কৃষক একটি পাথরের বাক্স দেখতে পায়। ভেতরে ছিল চামড়ায় বাঁধানো একটি বই, যাকে কোডেক্স (দলিল) বলে, যে বইটীকে ১৮০০ বছর আগে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। এর ২২ বছর পর অর্থাৎ ২০০০ সালে নিউ ইয়র্কে অ্যান্টিক ডিলার ফ্রিডা নুসবার্গার চাকোস একটি ইজিপশিয়ান অ্যান্টিক দোকান থেকে একটি প্রাচীন পুঁথি কেনেন আর সেটিকে আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটি তে পাঠিয়ে দেন সেটি খাঁটি কিনা জানবার জন্য। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারলেন এটি 'গস্পেল অফ জুডাস'। ২০০২ সালে সুইজারল্যান্ডে পাপাইরাস ও বিভিন্ন ধরনের কাগজ রক্ষণাবেক্ষণকারী, ফ্লোরেন্স ডব্রে, এবং ড. রুডল্ফ কাসার, যিনি একজন কপটিক ভাষা- (একটি প্রাচীন ইজিপশিয়ান ভাষা) বিশেষজ্ঞ, একসঙ্গে কয়েক বছর ধরে কাজ করে একটি অনাবিষ্কৃত কাহিনী খুঁজে পেলেন যে কাহিনীটিকে প্রথম বা আদি চার্চ কর্তৃপক্ষ নিন্দা করে (Heresy তকমা দিয়ে) বহিষ্কৃত করেছিলেন।
২০০৫ সালে কপটিক ভাষা বিশেষজ্ঞ মারভিন মেয়ার ইঙ্গিত দিলেন যে মূল গ্রন্থটি মধ্যপ্রাচ্যে কোথাও গ্রীক ভাষায় লেখা হয়েছিল পরে একটি খ্রিস্টান গোষ্ঠী সেটা ইজিপ্টে নিয়ে আসে ও কপ্টিক ভাষায় অনুবাদ করে। যখন সেটি অনুবাদ করা হয় সে সময়ে ওই অঞ্চলটি বিভিন্ন ভাবধারার মানুষের সঙ্গমস্থল ছিল। বিভিন্ন ভাবধারা অর্থাৎ অর্থোডক্স খ্রিস্টান, গ্নস্টিক, ও প্রাচ্যের সন্ন্যাসীদের মিলনক্ষেত্র ছিল, যেখানে তারা পরস্পর নিজেদের ভাব বিনিময় করত - সমর্থন বা বিরোধ করত। তার মধ্যে একটি ছিল ওই দলিল যার মধ্যে ছিল গস্পেল অফ জুডাস।
২০০৬ সালে সুইজারল্যান্ডে একটি বিশেষজ্ঞ দল নিশ্চিত ভাবে জানালেন বইটির শতকরা ১৫ ভাগ চিরতরে হারিয়ে গেলেও, বাকি যে ৮৫ ভাগ উদ্ধার করা গেছে তা দু হাজার বছর পর এই প্রথম পড়বার সুযোগ পাওয়া গেছে। উৎসাহী পাঠক মূল দলিলের কিছু অংশ ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে প্রকাশিত একটি পিডিএফ ফাইল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
অধুনা প্রচলিত বাইবেলে মার্ক, ম্যাথু, লূক, ও জন, যিশুখ্রিষ্টের এই চারজন শিষ্যের নামে চারটি গসপেল বা সুসমাচার আছে। এটা খুবই আশ্চর্যের যে, যে জুডাসকে সমস্ত খ্রিস্টান জগৎ এতদিন একজন অত্যন্ত হীন মানুষ বলে জেনে আসছে যে কিনা মাত্র কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রার জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করে যীশুকে ধরিয়ে দিয়েছিল তারই নামে কিনা প্রচলিত ছিল এরকম একটি মূল্যবান পুঁথি! কারা লিখেছিল সেই পুঁথি? প্রাচীন কপটিক ভাষায় লেখা এই পুঁথিতে জুডাসকে যীশুর অন্তরঙ্গ চিহ্নিত শিষ্য বলা হয়েছে, যাকে যীশু আধ্যাত্মিক জগতের অতীন্দ্রিয় বিষয় নিয়ে বিশেষ শিক্ষা দিয়েছেন, আর পরে নিজের দেহনাশের যন্ত্ররূপে ব্যবহার করেছেন। সত্যিই আশ্চর্য এই আবিষ্কার।
'গসপেল অব জুডাস'এ যিশুর নামে এমন এক মতবাদ প্রচার করা হয়েছে যা শুধু বেদান্ত দর্শনের খুব কাছাকাছিই নয় কোন কোন অংশ যেন হুবহু উপনিষদের মন্ত্রের উদ্ধৃতি। এখানে কয়েকটি উদাহরণ নিচ্ছি। এক জায়গায় জুডাসকে যিশু বলছেন, "ওদের (অন্য শিষ্যদের) থেকে সরে এসো আমি তোমাকে সেই জগতের রহস্য বলবো।কারণ তোমার পক্ষে ওইখানে পৌঁছানো সহজ, তবে তার জন্য তোমায় অনেক কষ্ট করতে হবে।" তারপর অন্য প্রসঙ্গে যীশু বলছেন, "মানুষের শরীর মরে যাবে কিন্তু তাদের আত্মা বেঁচে থাকবে এবং তাকে গ্রহণ করা হবে"। তুলনীয় - - কঠোপনিষদ এর মন্ত্র "অজো নিত্যঃ শাশ্বতোয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে"। আবার পরে বলছেন, "এসো তোমাকে সেই রহস্যের কথা বলি যা কেউ কখনো দেখেনি। কারণ এমন একটি অন্তহীন জগত আছে যা কোন দেবদূতও দেখতে পায় নি। যেখানে এক বিশাল আত্মা বিরাজ করছেন, যাকে কোন দেবদূতের চোখ দেখতে পায় নি, মন যাকে কখনো বুঝতে পারেনি, যাকে কোনও নামে ডাকা যায়নি। তুলনীয়-- কেন উপনিষদের মন্ত্র, "ন তত্র চক্ষুর্গচ্ছতি ন বাক গচ্ছতি নো মনঃ"। " যদ্ বাচা অনভ্যুদিতং"।
যিশু বলছেন, "সেখানে এক জ্যোতিপুঞ্জ আবির্ভূত হয়ে বললেন, 'আমার সহকারী রূপে এক দেবদূতের আবির্ভাব হোক।' তখন এক বিরাট দ্যুতিময় স্বয়ম্ভু দেবতার আবির্ভাব হলো। পরে আবার চারজন দেবদূতের আগমন হল। এই চারজন সেই স্বয়ম্ভু দেবতার অনুগামী হলেন।" এখানে সৃষ্টিকর্তা প্রজাপতি ব্রহ্মা ও তার চার মানস পুত্রের কথা মনে হচ্ছে না কি?
আরেক জায়গায় যিশু বলছেন "প্রত্যেকের অন্তরে আছে সেই দিব্য স্ফুলিঙ্গ। ভিতরের স্ফুলিঙ্গ আর বাইরের যিনি ঈশ্বর দুইই এক। আর এইটি জানাই যথার্থ জ্ঞান। এই জ্ঞান লাভ হলে পর মানুষের মধ্যেকার যে দিব্য তত্ত্ব সেটি তার অতীন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক জগতে আপন আবাসে ফিরে যায়, আর আসে না"। তুলনীয় মান্ডুক্য উপনিষদের মন্ত্র - - "সর্বং হ্যেতদ্ ব্রহ্ম স আত্মা। স বিজ্ঞেয়ঃ।" তৈত্তিরীয় উপনিষদ এর মন্ত্র--"স যশ্চায়ং পুরুষে যশ্চাসাবাদিত্যে স একঃ। স য এবম্ বিত্। অস্মাল্লোকাত্ প্রেত্য"। এবং ছান্দোগ্য উপনিষদ এর মন্ত্র-- "ব্রহ্মলোকমভিসম্পদ্যতে ন চ পুনরাবর্ততে,
ন চ পুনরাবর্ততে"।
তবে 'গস্পেল অফ জুডাস'কে কেন যে কবরে পাঠানো হয়েছিল, কেন খ্রিস্টান জগৎ সেটি গ্রহণ করল না - সে আরেক গল্প। উৎসাহী পাঠক গসপেল অব জুডাসের ওপর যে ভিডিও সিডি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল প্রস্তুত করেছিল সেটি দেখে নিতে পারেন।
(এ লেখাটি আরো বিস্তারিত ভাবে আগে 'স্বামীজীর স্বপ্ন' শিরোনামে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল।)
সূত্র:
১. "সিক্রেট বাইবেল সিরিজ", ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল দ্বারা প্রস্তুত।
স্বামী প্রিয়ব্রতানন্দ (নিশীথ মহারাজ)
Collect from Bhaswar Das
লাইক করুন
কমেন্ট করুন
0টি কমেন্ট