শুক্রবার, ৬ জুলাই, ২০১৮

স্বামী বিবেকানন্দ ( তিন )


    স্বামী বিবেকানন্দ ( তিন )



    শেয়ার করেছেন                প্রণব কুমার কুণ্ডু





Pratap C Saha    ফেসবুক থেকে



"আধুনিক ভারতের স্রষ্টা", লেখক এবং সন্ন্যাসী পরিব্রাজক
স্বামী বিবেকানন্দ (জন্মঃ- ১২ জানুয়ারি, ১৮৬৩ – মৃত্যুঃ- ৪ জুলাই, ১৯০২)

সমাজ সংস্কারক চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজের ভাষায়, "স্বামী বিবেকানন্দের নির্ভীক দেশাত্মবোধ সারা ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ভারতের নবজাগরণে স্বামী বিবেকানন্দের যতটা অবদান রেখেছিলেন, ততটা অন্য কেউ এককভাবে রাখতে পারেননি।"

বিবেকানন্দ ভারতের সর্বব্যাপী দারিদ্রের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, এই দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্যই ভারতে জাতীয় নবজাগরণের প্রয়োজন আছে। তাঁর জাতীয়তাবাদী ধারণা ভারতীয় দার্শনিক ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবিত করেছিল।

শ্রীঅরবিন্দ বলেছিলেন, বিবেকানন্দ ভারতকে আধ্যাত্মিক চেতনায় জাগরিত করেছিলেন।

মহাত্মা গান্ধীর মতে বিবেকানন্দ ছিলেন সেই অল্প কয়কজন হিন্দু ধর্মসংস্কারকদের একজন "যিনি হিন্দুধর্মের প্রথা ও রীতিনীতির মৃত শাখাপ্রশাখাগুলিকে ছেঁটে ফেলে হিন্দুধর্মের সৌন্দর্য রক্ষা করেছিলেন।"

বিবেকানন্দের রচনা তাঁর "দেশপ্রেম হাজারগুণ" বৃদ্ধি করেছিল।

স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী বলেছিলেন, "বিবেকানন্দ হিন্দুধর্ম ও ভারতকে রক্ষা করেছিলেন।"

বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, বিবেকানন্দ ছিলেন "আধুনিক ভারতের স্রষ্টা"।

বিবেকানন্দ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীঅরবিন্দ, বাল গঙ্গাধর তিলক ও বাঘা যতীন প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং অলডাস হাক্সলি, ক্রিস্টোফার ইশারউড, রোম্যাঁ রোলাঁ প্রমুখ বুদ্ধিজীবীকে বিবেকানন্দের রচনা অনুপ্রাণিত করেছিল।

বিবেকানন্দের মৃত্যুর বহু বছর পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কারবিজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক রোম্যাঁ রোলাঁকে লিখেছিলেন, "ভারতকে জানতে চাইলে বিবেকানন্দের লেখা পড়ো। তাঁর মধ্যে সব কিছুই ইতিবাচক। নেতিবাচক কিছুই নেই।"

রোম্যাঁ রোলাঁ লিখেছেন, "তাঁর লেখাগুলি মহান সংগীতের মতো। পংক্তিগুলি বিঠোভেনের শৈলীর মতো। চিত্তাকর্ষক ছন্দগুলি হ্যান্ডেল কোরাসের কুচকাওয়াজের মতো। আজ ত্রিশ বছর পরেও তাঁর বাণীগুলিকে স্পর্শ করলে আমার শরীরে বৈদ্যুতিক আঘাতের মতো শিহরণ জাগে। এই মহানায়কের মুখ থেকে যখন এই জ্বলন্ত শব্দগুলি উচ্চারিত হয়েছিল, তখন নিশ্চয় অনেকে এই শিহরণ অনুভব করেছিলেন!"

বিবেকানন্দের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে জামশেদজি টাটা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। এটি এখন ভারতের একটি প্রথম সারির গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিদেশে বিবেকানন্দ প্রাচ্যবিদ ম্যাক্স মুলার ও বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এঁরা দুজনেই তাঁর বৈদিক শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

ভারতে তাঁর জন্মদিন ১২ জানুয়ারি পালিত হয় জাতীয় যুব দিবস (ভারত) হিসেবে।

অন্যদিকে, ১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে বিবেকানন্দ বিশ্বধর্ম মহাসভায় তাঁর বিখ্যাত "শিকাগো বক্তৃতা" উপস্থাপন করেছিলেন বলে ১১ সেপ্টেম্বর তারিখটি "বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব দিবস" হিসেবে পালিত হয়।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ট্রেনিং কলেজের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "স্বামী বিবেকানন্দ রাজ্য পুলিশ আকাদেমি"।

ছত্তীসগঢ়ের রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পালটে রাখা হয়েছে "ছত্তীসগঢ় স্বামী বিবেকানন্দ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়"।

২০১২ সালে রায়পুরের বিমানবন্দরটির নামও পালটে রাখা হয়েছে "স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দর"।

বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক উৎপল সিংহ বিবেকানন্দের ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দ্য লাইট: স্বামী বিবেকানন্দ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ সমীপে

১৮৮১ সালের নভেম্বর মাসে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত নরেন্দ্রনাথের জীবনের ধারাটিকে পরিবর্তিত করে দেয়। এই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "তাঁহাকে [রামকৃষ্ণ] একজন সাধারণ লোকের মতো বোধ হইল, কিছু অসাধারণত্ব দেখিলাম না। অতি সরল ভাষায় তিনি কথা কহিতেছিলেন, আমি ভাবিলাম, এ ব্যক্তি কি একজন বড় ধর্মাচার্য হইতে পারেন? আমি সারা জীবন অপরকে যাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছি, তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকেও সেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলাম, 'মহাশয়, আপনি কি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন?' তিনি উত্তর দিলেন- 'হাঁ।' 'মহাশয়, আপনি কি তাঁহার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারেন?' 'হাঁ'। 'কি প্রমাণ? ' 'আমি তোমাকে যেমন আমার সম্মুখে দেখিতেছি, তাঁহাকেও ঠিক সেইরূপ দেখি, বরং আরও স্পষ্টতর, আরও উজ্জ্বলতররূপে দেখি।' আমি একেবারে মুগ্ধ হইলাম। আমি দিনের পর দিন এই ব্যক্তির নিকট যাইতে লাগিলাম। ধর্ম যে দেওয়া যাইতে পারে, তাহা আমি বাস্তবিক প্রত্যক্ষ করিলাম। একবার স্পর্শে, একবার দৃষ্টিতে একটা সমগ্র জীবন পরিবর্তিত হইতে পারে। আমি এইরূপ ব্যাপার বারবার হইতে দেখিয়াছি।"

যদিও প্রথমে নরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণকে নিজের গুরু রূপে স্বীকার করতে সম্মত ছিলেন না। তিনি তাঁর ধ্যানধারণার বিরুদ্ধের প্রায়শই বিদ্রোহ প্রকাশ করতেন। তবু শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে বার বার তাঁর দর্শনে ছুটে যেতেন। প্রথম দিকে শ্রীরামকৃষ্ণের তুরীয় আনন্দের ভাব ও দর্শনকে কেবলমাত্র মনগড়া কল্পনা বলে মনে করতেন। ব্রাহ্মসমাজের সদস্য হিসেবে তিনি মূর্তিপূজা ও বহুদেববাদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করতেন। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন কালীর উপাসক। অদ্বৈত বেদান্ততত্ত্বকেও নরেন্দ্রনাথ নাস্তিকতা ও পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতেন; এবং মাঝে মাঝেই তা নিয়ে উপহাস করতেন।
প্রথমদিকে শ্রীরামকৃষ্ণের ধ্যানধারণা গ্রহণ করতে না পারলেও নরেন্দ্রনাথ তা উড়িয়ে দিতে পারতেন না। কোনো মত গ্রহণ করার আগে তা যাচাই করে নেওয়াই ছিল নরেন্দ্রনাথের স্বভাব। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে পরীক্ষা করেন। শ্রীরামকৃষ্ণও কোনোদিন তাঁকে যুক্তিবর্জনের পরামর্শ দেননি। তিনি ধৈর্য সহকারে নরেন্দ্রনাথের তর্ক ও পরীক্ষার সম্মুখীন হন এবং তাঁকে সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই সত্য পরীক্ষা করতে বলেন। পাঁচ বছর শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে থেকে নরেন্দ্রনাথ এক অশান্ত, বিভ্রান্ত, অধৈর্য যুবক থেকে এক পরিণত ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হন। ঈশ্বরোপলব্ধির জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগে স্বীকৃত হন এবং শ্রীরামকৃষ্ণকে নিজের গুরু রূপে স্বীকার করে নিয়ে গুরুর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেন।

১৮৮৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ গলার ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
এই সময় তাঁকে কলকাতার কাশীপুরে স্থানান্তরিত করা হয়।
জীবনের অন্তিম পর্বে নরেন্দ্রনাথ ও তাঁর গুরুভ্রাতাগণ তাঁর সেবাশুশ্রূষা করেছিলেন।
এখানেই শ্রীরামকৃষ্ণের তত্ত্বাবধানে তাঁদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা চলে।
কথিত আছে, কাশীপুরেই বিবেকানন্দ নির্বিকল্প সমাধির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনের শেষ পর্বে বিবেকানন্দ ও তাঁর কয়েকজন গুরুভ্রাতা গুরুর নিকট থেকে সন্ন্যাসীর গৈরিক বস্ত্র লাভ করেছিলেন।
যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম রামকৃষ্ণ সংঘ।
গুরুর নিকট থেকে বিবেকানন্দ এই শিক্ষাই পান যে মানবসেবাই সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ঈশ্বরোপাসনা।
কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণের অবতারত্ব নিয়ে বিবেকানন্দের মনে সন্দেহের উদ্রেক হলে শ্রীরামকৃষ্ণ ঘোষণা করেছিলেন, "যে রাম, যে কৃষ্ণ, সে-ই ইদানীং এ শরীরে রামকৃষ্ণ... "
শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর অবর্তমানে নিজের শিষ্যদের দেখাশোনার দায়িত্ব দেন বিবেকানন্দের উপর, এবং শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যরাও সবসময়ই বিবেকানন্দকে তাদের নেতা বলে স্বীকার করতেন।

দীর্ঘ অসুস্থতার পর ১৮৮৬ সালের ১৬ আগস্ট অতিপ্রত্যুষে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে রামকৃষ্ণ পরমহংসের মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর শিষ্যদের মতে, এ ছিল তাঁর মহাসমাধি।

বরানগর মঠ

শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁর গৃহী শিষ্যদের আর্থিক সহায়তায় বিবেকানন্দের নেতৃত্বে তাঁর তরুণ সন্ন্যাসী শিষ্যরা বরানগরে এক পোড়ো বাড়িতে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ছিল রামকৃষ্ণ সংঘের সদস্যদের দ্বারা স্থাপিত প্রথম মঠ।
বরানগরের এই পোড়ো বাড়িটি মঠ স্থাপনের জন্য নির্বাচিত হয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত বাড়িটির ভাড়া ছিল কম। দ্বিতীয়ত বাড়িটি শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যেষ্টিস্থল কাশীপুর মহাশ্মশানের অত্যন্ত নিকটবর্তী ছিল। নরেন্দ্রনাথ ও মঠের অন্যান্য সদস্যরা এখানে জপধ্যান ও সাধন-ভজনে নিমগ্ন থাকতেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণ, শঙ্করাচার্য, রামানুজ ও যিশু খ্রিষ্ট প্রমুখ ধর্মগুরুদের দর্শন ও শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করতেন। এই মঠের প্রথম দিনগুলির কথা বলতে গিয়ে নরেন্দ্রনাথ পরে বলেছিলেন, "বরাহনগর মঠে আমরা অনেক ধর্মাচরণ করেছি। রাত তিনটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে জপধ্যানে মগ্ন হতাম। সেই দিনগুলিতে বৈরাগ্য কি প্রবল ছিল! বাইরের জগৎ আছে কি নেই, সেকথা একবার মনেও হত না।"
১৮৮৭ সালের প্রথম দিকে নরেন্দ্রনাথ ও তাঁর আটজন গুরুভ্রাতা আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের অনেক পরে, নরেন্দ্রনাথ, একবার নাম পালটিয়ে, শিকাগো ধর্মমহাসভায় যাবার আগে,  স্বামী 'বিবেকানন্দ' নাম ধারণ করেছিলেন।

পরিব্রাজক বিবেকানন্দ

১৮৮৮ সালে পরিব্রাজক রূপে মঠ ত্যাগ করেন বিবেকানন্দ। পরিব্রাজক হিন্দু সন্ন্যাসীর এক ধর্মীয় জীবন – এই জীবনে তিনি স্বাধীনভাবে পর্যটন করে বেড়ান কোনো স্থায়ী বাসস্থান বা বন্ধন ছাড়াই। পরিব্রাজক জীবনে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গী ছিল একটি কমণ্ডলু, লাঠি, এবং তাঁর প্রিয় দুটি গ্রন্থ - ভগবদ্গীতা ও ইশানুসরণ। পাঁচ বছর ধরে ভারতের সর্বত্র ভ্রমণ করেন বিবেকানন্দ – প্রত্যেক শিক্ষাকেন্দ্র দর্শন করেন এবং বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায় ও সমাজব্যবস্থার সহিত সুপরিচিত হন। সাধারণ মানুষের দুঃখকষ্টের প্রতি তাঁর সহানুভূতি জন্মায় এবং তিনি জাতির উন্নতিকল্পে আত্মনিয়োগ করেন। এই সময় ভিক্ষোপজীবি হয়ে সারা ভারত পদব্রজেই পর্যটন করেন বিবেকানন্দ। কখনও সখনও তাঁর গুণমুগ্ধেরা তাঁকে ট্রেনের টিকিট কিনে দিতেন। ভারত পর্যটনের সময় তিনি বিভিন্ন পণ্ডিত, দেওয়ান, রাজা, এবং হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান এমনকি নিম্নবর্ণীয় পারিয়া ও সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গেও মেলামেশা ও একত্রবাস করেছিলেন।
বিবেকানন্দ বলেছিলেন, "আমার জ্ঞানের বিকাশের জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।"

জন্ম ও বাল্যজীবন

কলকাতার সিমলা অঞ্চলের ৩ নং গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম। তাঁর নামকরণ করা হয় নরেন্দ্রনাথ দত্ত। পিতা বিশ্বনাথ দত্তর যুক্তিবাদী মন ও জননীর ধর্মীয় চেতনা,  স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তা ও ব্যক্তিত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। প্রথম জীবনেই পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানের সহিত তাঁর পরিচিতি ঘটেছিল। এই কারণে অকাট্য প্রমাণ ও ব্যবহারিক পরীক্ষা ছাড়া কোনো বক্তব্যই তিনি গ্রহণ করতেন না। অন্যদিকে অতি অল্পবয়সেই ধ্যান ও বৈরাগ্যের আধ্যাত্মিক আদর্শের প্রতি তাঁর মন আকৃষ্ট হয়।
নরেন্দ্রনাথের বাল্যশিক্ষার সূচনা ঘটে স্বগৃহেই। ১৮৭১ সালে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং ১৮৭৯ সালে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দর্শন, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ ও পাণ্ডিত্য। বেদ, উপনিষদ, ভগবদ্গীতা, রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থের প্রতিও তাঁর আগ্রহের কথা সুবিদিত। কণ্ঠসঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত - শাস্ত্রীয় সংগীতের উভয় শাখাতেই তাঁর বিশেষ পারদর্শীতা ছিল। বাল্যকাল থেকেই খেলাধুলা, শারীরিক ব্যায়াম ও অন্যান্য সংগঠনমূলক কাজকর্মেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। অতি অল্পবয়সেই বিভিন্ন কুসংস্কার এবং ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য বিচারের যুক্তিগ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
নরেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক বিকাশে তাঁর মায়ের ভূমিকাটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী জীবনে তিনি তাঁর মায়ের একটি কথা বারংবার উদ্ধৃত করতেন, সারা জীবন পবিত্র থাকো, নিজের সম্মান রক্ষা কোরো, অন্যের সম্মানে আঘাত কোরো না। কোমল হও, কিন্তু প্রয়োজনবোধে নিজের হৃদয়কে শক্ত রেখো। কথিত আছে, নরেন্দ্রনাথ ছিলেন ধ্যানসিদ্ধ; ঘুমের মধ্যে তিনি এক জ্যোতি দর্শন করতেন এবং ছোটবেলায় একবার ধ্যানের সময় বুদ্ধের দর্শন পেয়েছিলেন।
কলেজে ও ব্রাহ্মসমাজে
১৮৮০ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রথম বর্ষের কলা বিভাগে ভর্তি হন নরেন্দ্রনাথ। পরের বছর তিনি চলে যান স্কটিশ চার্চ কলেজে। এই সময়েই তিনি অধ্যয়ন করেন পাশ্চাত্য যুক্তিবিজ্ঞান, পাশ্চাত্য দর্শন ও ইউরোপীয় জাতিসমূহের ইতিহাস। ১৮৮১ সালে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৮৪ সালে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন।
ছেলেবেলা থেকে আধ্যাত্মিকতা, ঈশ্বরোপলব্ধি ও সর্বোচ্চ অধ্যাত্ম সত্যের উপলব্ধির জন্য তাঁর ব্যাকুলতা দৃষ্ট হয়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ধর্মীয় ও দার্শনিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেযুগের এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন ব্রাহ্মসমাজের সংস্পর্শে আসেন এবং ব্রাহ্মসমাজের একেশ্বরবাদ, অপৌত্তলিকতা ও সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার চেতনার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। এই সময়ে ব্রাহ্মসমাজের দুই সর্বোচ্চ নেতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁদের কাছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন। কিন্তু কোনো সদুত্তর পান না।
কথিত আছে, নরেন্দ্রনাথ ডেভিড হিউম, ইমানুয়েল কান্ট, জোহান গটলিব ফিচ, বারুখ স্পিনোজা, গেয়র্গ ভিলহেল্ম হেগল, আর্থার সোফেনহয়্যার, ও গুস্ত কোঁত, হার্বার্ট স্পেন্সার, জন স্টুয়ার্ট মিল ও চার্লস ডারউইন প্রমুখের রচনাবলি অধ্যয়ন করেছিলেন। হারবার্ট স্পেনসারের বিবর্তনবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি নিজের প্রকাশক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের জন্য স্পেনসারের এডুকেশন (Education) নামক গ্রন্থখানি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। কিছুকাল তাঁর সঙ্গে হারবার্ট স্পেনসারের পত্রালাপও হয়। পাশ্চাত্য দার্শনিকদের রচনা অধ্যয়নের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভারতীয় সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ তথা বহু বাংলা গ্রন্থও অধ্যয়ন করেছিলেন।
অধ্যক্ষ হেস্টি সাহিত্যের এক ক্লাসে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের দি এক্সকার্সন (The Excursion) কবিতাটির আলোচনাকালে কবির প্রাকৃতিক-ভাবতন্ময়তার (nature-mysticism) বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে রামকৃষ্ণ পরমহংসের উল্লেখ করলে নরেন্দ্রনাথ প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণের কথা জানতে পারেন। কবিতায় ব্যবহৃত trance শব্দটির অর্থ বোঝাতে গিয়ে হেস্টি তাঁর ছাত্রদের বলেন যে এই শব্দটির প্রকৃত অর্থ জানতে হলে তাদের দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যেতে হবে। এতে তাঁর কয়েকজন ছাত্র উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শনে যান। তাঁদের মধ্যে নরেন্দ্রনাথ ছিলেন অন্যতম। পাঁচ বছর শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে থেকে নরেন্দ্রনাথ এক অশান্ত, বিভ্রান্ত, অধৈর্য যুবক থেকে এক পরিণত ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হন। ঈশ্বরোপলব্ধির জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগে স্বীকৃত হন এবং শ্রীরামকৃষ্ণকে নিজের গুরু রূপে স্বীকার করে নিয়ে গুরুর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেন।
১৮৮৭ সালের প্রথম দিকে নরেন্দ্রনাথ ও তাঁর আটজন গুরুভ্রাতা আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর নরেন্দ্রনাথ স্বামী বিবেকানন্দ নাম ধারণ করেছিলেন।

রচনা

বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই বিবেকানন্দ ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাগ্মী ও লেখক। তাঁর অধিকাংশ বইই হল বিশ্বের বিভিন্ন শহরে দেওয়া বক্তৃতার সংকলন। তিনি গায়ক ও কবি ছিলেন। "গায়ক, চিত্রশিল্পী, আশ্চর্য ভাষাবিশারদ ও কবি বিবেকানন্দ ছিলেন একজন সম্পূর্ণ শিল্পী"। তিনি অনেকগুলি গান ও কবিতা লিখেছিলেন (তার মধ্যে তাঁর প্রিয় রচনা "মৃত্যুরূপা কালী" কবিতাটি অন্যতম)। বিবেকানন্দ উপদেশগুলির মধ্যে রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁরা ভাষা ছিল সহজ ও সরল। বাংলা রচনার ক্ষেত্রে তিনি মনে করতেন, ভাষা (কথ্য ও লিখিত) এমন হওয়া উচিত যা লেখকে পাণ্ডিত্য প্রদর্শনের বদলে, লেখকের বক্তব্যের মূল ভাবটিকে ফুটিয়ে তুলতে পারবে।
'বর্তমান ভারত' হল বিবেকানন্দের লেখা একটি বিখ্যাত বাংলা প্রবন্ধ। ১৮৯৯ সালে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একমাত্র বাংলা মুখপত্র উদ্বোধন পত্রিকার মার্চ সংখ্যায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯০৫ সালে প্রবন্ধটি বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং পরে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে সংকলিত হয়। এই প্রবন্ধেই বিবেকানন্দ দরিদ্র ও তথাকথিত হীন বর্ণে জন্ম নেওয়া ভারতীয়দের নিজের ভাই বলে উল্লেখ করেছিলেন।



২১শে জুন


      ২১শে জুন


      শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু




A D Abhik Dey এতে ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য   ফেসবুক থেকে


২১ জুন কেন সবাই জড় হন ২০০০ বছরের পুরনো স্টোনহেঞ্জে?

**********************************************************

ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শীত কখন আসে, আর কখন যায়, তা ঠাহর করা মুশকিল৷ কিন্তু গরমকাল থাকে প্রায় সারা বছর ধরেই৷ তাই গরমের হাত থেকে রেহাই নেই মানুষের৷ তার ওপর ২১ শে জুন ছিল গ্রীষ্মকালীন সবচেয়ে বড় দিন!
ইংল্যান্ডের বহু মানুষ ২১ জুন উপস্থিত হন ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জে। যা তৈরি হয়েছিল প্রায় ২০০০ বছর আগে। যেখানে প্রথম চিহ্নিত করা হয় ২১ জুন তারিখটি। তবে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে ঘিরে রয়েছে আরও অনেক রহস্য। বছরের এই একটি দিন সূর্যের আলো পৌঁছয় স্টোনহেঞ্জ পাথর বৃত্তের একেবারে মাঝখানে। আর সেই উপলক্ষেই শয়ে শয়ে মানুষ ভীড় জমান স্টোনহেঞ্জে।
স্টোনহেঞ্জের নির্মাতা, নির্মাণের উপকরণ এবং নির্মাণকাল নিয়ে যেমন বিতর্কের শেষ নেই,তেমনি রহস্যের শেষ নেই এর কার্যকারণ নিয়েও। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন ঠিক কী কারণে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বিখ্যাত ব্রিটিশ পণ্ডিত উইলিয়াম স্টাকলে তার বিখ্যাত এক বইয়ে স্টোনহেঞ্জকে গ্রীষ্মকালীন সূর্যোদয়ের মানমন্দির বলেছেন।


😊
বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন ২১ জুন। দিনটির দৈর্ঘ্য ১৩ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ২ সেকেন্ড। এই দিনে সূর্য তার উত্তরায়ণের সর্বোচ্চ বিন্দুতে অবস্থান করে এবং সবথেকে উত্তরে উদয় হয়। কর্কট রেখায় সূর্যকে মধ্যাহ্নে আকাশের ঠিক মাঝখানে দেখা যায় এদিন। এই দিনে সূর্য সর্বোচ্চ উত্তরে অস্ত যায়।
২১ জুন, উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন। বছরের এ দীর্ঘতম দিনে সূর্য থাকবে মোট ১৩ ঘন্টা ৩৬ মিনিট এক বা দুই সেকেন্ড। সূর্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বাভাবে অবস্থান করে। কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের ৮টি রাজ্যের ওপর দিয়ে গিয়েছে৷
ভারতের ৮টি রাজ্য দিয়ে বা প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা যাওয়ার ফলে সব জায়গা থেকেই মধ্যাহ্নে সূর্য ছিল প্রায় মাথার ওপর। ওই সময় কোনও লাঠি ভূমির সঙ্গে লম্বভাবে রাখলে তার কোনো ছায়া পড়বে না। ২১ জুন বেলা ১২টায় সূর্য মধ্যগগন থেকে মাত্র ০.৩ কৌণিক ডিগ্রি দূরে থাকবে৷
অনেক দেশ এই দিনটিকে পালন করে থাকে। জার্মানরা এদিন সূর্যকে পুজো করেন, এবং সুইডেনের মহিলারা এবং ইংল্যান্ডবাসীরা সুর্যোদয় দেখেন ফুলের গয়না পরে।


#collected*





শতকরা হিসাবে হিন্দু-মুসলমান


   শতকরা হিসাবে হিন্দু-মুসলমান



   শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু





Amartya Ghosh গোষ্ঠীটিতে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন: 💥ALL BENGAL RSS💥রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ💥




কোনো স্বয়ংক্রিয় বিকল্প পাঠ্য উপলব্ধ নেই৷

ভালোবাসা ও প্রেম


ভালোবাসা ও প্রেম



শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু



স্বামী পরমানন্দের,  'সহজতা ও প্রেম'  থেকে



'ভালবাসা মানে শুধু হা-হুতাশ নয়, কিংবা কেবলমাত্র সুখের কথা বা চোখের জল ফেলা নয় অথবা কেবল মনের বৃত্তি বা মানসিক উত্তেজনাও নয়। ভালবাসার তাড়নায় মানব অপরের কষ্ট মোচনের জন্য নিজেকে ভুলে যায়। ভালবাসার তাড়না আচরণে প্রকটিত হয়। ভালবাসার তাড়নাতেই ঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন মহামানবগণ। আদর্শ প্রেমিক চরিত্রের উৎকর্ষ মানবকে যেরূপ মহিমান্বিত করে থাকে, দেবতারাও তার কাছে নত হন। সমগ্র প্রাণী-জগতের প্রতি অতলান্ত ভালবাসাই হল মহাপ্রেমিকের লক্ষণ। প্রেম হল অন্ধকার হতে জ্যোতিতে উত্তরণের আকূতি। প্রেমের প্রভাব সুদূর প্রসারী। বস্তুতঃ মানব একটি ভাবসত্তা আর এই জড় দেহকে আশ্রয় করে ঐ ভাবসত্তারই অভিবিকাশ বা প্রকাশ। অখণ্ড প্রেমই হল ধর্ম। প্রেম ছাড়া মানবের আর কি ধর্ম হতে পারে! প্রেমিক ভেদবুদ্ধিরহিত। তিনি কারও প্রতি ভেদবুদ্ধি পোষণ করতে পারেন না। কারণ এই বিশ্ব অখণ্ড প্রেমের প্রকাশ। খণ্ড খণ্ড মহাবিশ্বকে অখণ্ড প্রেমই ধরে রাখছে বা ধারণ করে আছে।
বিশ্ব জুড়ে ঐ অখণ্ড প্রেম বিরাজিত আর সসীম ও সীমিত ব্যক্তিত্বের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে তার ভেতর দিয়ে সীমাহীন, অপার, অখণ্ড প্রেমের স্ফুরণ ও প্রকাশই হল তার ভাগবত্ব। এইজন্য এই বিশ্ব সংসারে অসংখ্য ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ হচ্ছে।'