মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০

পদবি ( দুই )


পদবি ( দুই )




শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু



অভিরূপ মুখার্জী এতে BoiPoka (বইপোকা)

Elomelo Alochona - এলোমেলো আলোচনা
 
১.বসু পদবী মূলত একটি কায়স্থ পদবী।মনে করা হয় বিশ্বাবসু,পৃথ্বী বসু জাতীয় নাম থেকে বসু এসেছে। তবে গ্রামের নাম থেকেও এই পদবিটি এসে থাকতে পারে। মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের নাম ছিল বসু,বর্তমানে বসুয়া এবং সেই নাম থেকেই ওই গ্রামের ব্রাহ্মণদের পদবী বসুয়ারী।ঋক বেদের আদিত্য ,মরুৎ, ইন্দ্র ঊষা সকলেই বসু। মহাভারতে শিব ও কুবেরও বসু।আবার আটে অষ্ট বসু। তবে এরা কেউ বাঙালি কায়স্থ ছিলেন না।
২.যে ব্যক্তি বাজারে বা আড়তে ধানচাল ইত্যাদি ওজন করে মূলত তাদের পদবী কয়াল। শস্য সংগ্রহকারী ও শস্য রক্ষণ কারী হিসেবেও কয়াল পরিচিত।
৩.বাঙালির অসংখ্য পদবীর মধ্যে একটি হলো পাঁজা। মনে হয় এটি পাঞ্জা বা পঞ্জা শব্দের অপভ্রংশ। ফার্সি পাঞ্জার অর্থ হলো থাবা,বিস্তৃত করতল , দস্তখত বা মোহরের পরিবর্তে করতলের ছাপ যা সম্রাট বা নবাবরা ব্যবহার করতেন সরকারি কাজে। পাঁজা পদবিযুক্ত মানুষদের কোনো পূর্বপুরুষ হয়তো মোগল আমলে কোন পাঞ্জা ব্যবহারের জন্য নিয়োজিত সরকারি প্রতিনিধি ছিলেন কিংবা পাঞ্জা বহনকারী ছিলেন অথবা পাঞ্জা ছাপযুক্ত সনদ লাভ করেছিলেন জমিদার হিসেবে।
৪.সৈয়দ পদবী মূলত এসেছে নবী নন্দিনী হজরত ফাতেমা ও হজরত আলীর বংশ ধর থেকে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগের এই বংশের সঙ্গে কোনা যোগসূত্র না থাকলেও বাংলাদেশের অনেক মুসলমান পরিবার সৈয়দ বংশ পদবী ব্যবহার করে নিজেদের সম্ভ্রান্ত ও কুলীন মুসলমান বলে দাবি করে থাকেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে সৈয়দ পদবীর অপব্যবহার ও পক্ষেপণ ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। প্রকৃত পক্ষে সৈয়দ নন এবং পারিবারিক কোনো কুলীন পদবীও নেই, অথবা পূর্ব পদবী ঐতিহ্য পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক এমন অনেক বংশ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বিশেষে বাংলাদেশে সৈয়দ পদবী আরোপিতভাবে ব্যবহার শুরু করেছিলেন।
৫.বল পদবি নামের শেষাংশ থেকেই এসে থাকতে পারে ।মহাবল,ইন্দ্রবল জাতীয় নাম থেকে। আবার দেবল গোত্রপদবীর ছিন্নমস্তা রূপও হতে পারে।
৬.কাঁঠাল বা কাঁটাল এসেছে কাটাল থেকে । সম্ভবত দিঘী বা পুকুর কাটানোর ভারপ্রাপ্ত ওভারসিয়ারদের কাটাল বলা হত।
৭.ভূঁইয়া: এই বংশ পদবীটি এসেছে খোদ ভূমির মালিকানা অর্থ থেকে। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় এর মধ্যে এ পদবীর প্রচলন আছে। বাঙালি হিন্দু সমাজে যারাই ভৌমিক’ বাঙালি মুসলমান সমাজে তারা ভূঁইয়া’ হিসেবে পদবী ধারণ করেছেন। মূল সংস্কৃত শব্দ ভৌমিক > (প্রাকৃত) ভূমিকা > (বাংলা) ভূঁইয়া > থেকে ভূঁইয়া বা ভূঁঞা এসেছে। প্রাচীন বড় জমিদার বা সামন্ত রাজার উপাধিও ছিল ভূঁইয়া। প্রকৃত পক্ষে কুলীন বংশ পদবীই ছিল তা। আবার যে সব মানুষ আগে স্থান বিশেষে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি ও চাষাবাদের পত্তন করেছে তারা স্থানীয় জমিদার রাজার কাছ থেকে ভূঁইয়া নামে অভিহিত হয়ে ঐসব জমি জমার স্বত্ব লাভ করেছে।
৮.প্রামানিক পদবীর মধ্যেই প্রমাণপত্র উপস্থিত। অর্থাৎ সাক্ষী।বিবাহ থেকে শুরু করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সামাজিক সাক্ষ্য রাখা হত, কারণ লেখালেখির ব্যাপারটা ছিল সীমিত।
৯.ভৌমিক:এটি ভূমি সংশ্লিষ্ট পদবী।ভূঁইয়ার সংস্কৃত রূপ হলো ভৌমিক।এরা অতীতে সামন্তরাজ, জমিদার, জোতদার, ভূস্বামী হিসাবে কাজ করতো।ভূঁইয়া থেকে ভৌমিক এসেছে বলে মনে করা হয়।
তথসূত্র-১.আমাদের পদবীর ইতিহাস- লোকেশ্বর বসু।
২.পদবীর উৎসসন্ধান- সমর পাল
বাঙালির পদবীর ইতিহাসের আগের পর্ব গুলি -
পর্ব-১
https://www.facebook.com/259328965017234/posts/371463087137154/?sfnsn=scwspmo

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন