দীনেশ গুপ্ত
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
দীনেশ গুপ্ত। ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর রাইটার্স ভবন আক্রমণ করেন তিনি, বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত। কারাবিভাগের অত্যাচারী ইনস্পেক্টর জেনারেল সিম্পসন-কে হত্যা করেন তাঁরা। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের পর বিনয় ও বাদল আত্মহত্যা করলেও, কোনওক্রমে বেঁচে যান দীনেশ। তাঁকে সারিয়ে তুলে বিচারের পর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দীনেশের ফাঁসি হয়ে ৭ জুলাই, ১৯৩১ সালে, মাত্র ২০ বছর বয়সে। ফাঁসির আগে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বসে অনেকগুলি চিঠি লিখেছিলেন তিনি বিভিন্নজন-কে। সেই চিঠিগুলির মধ্যে থেকেই একটি, ফাঁসির ৭ দিন আগে তাঁর মা-কে লেখা চিঠি এখানে উপস্থিত করা হল -
মা,
যদিও ভাবিতেছি কাল ভোরে তুমি আসিবে, তবু তোমার কাছে না লিখিয়া পারিলাম না।
তুমি হয়তো ভাবিতেছ, ভগবানের কাছে এত প্রার্থনা করিলাম, তবুও তিনি শুনিলেন না! তিনি নিশ্চয় পাষাণ, কাহারও বুক-ভাঙা আর্তনাদ তাঁহার কানে পৌঁছায় না।
ভগবান কি আমি জানি না, তাঁহার স্বরূপ কল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তবু এ-কথাটা বুঝি, তাঁহার সৃষ্টিতে কখনও অবিচার হইতে পারে না। তাঁহার বিচার চলিতেছে। তাঁহার বিচারের উপর অবিশ্বাস করিও না, সন্তুষ্ট চিত্তে সে বিচার মাথা পাতিয়া নিতে চেষ্টা কর। কি দিয়া যে তিনি কি করিতে চান, তাহা আমরা বুঝিব কি করিয়া?
মৃত্যুটাকে আমরা এত বড় করিয়া দেখি বলিয়াই সে আমাদিগকে ভয় দেখাইতে পারে। এ যেন ছোট ছেলের মিথ্যা জুজুবুড়ির ভয়।
যে মরণকে একদিন সকলেরই বরণ করিয়া লইতে হইবে, সে আমাদের হিসাবে দুই দিন আগে আয়ছিল বলিয়াই কি আমাদের এত বিক্ষোভ, এত চাঞ্চল্য?
যে মরণকে একদিন সকলেরই বরণ করিয়া লইতে হইবে, সে আমাদের হিসাবে দুই দিন আগে আয়ছিল বলিয়াই কি আমাদের এত বিক্ষোভ, এত চাঞ্চল্য?
যে খবর না দিয়া আসিত, সে খবর দিয়া আসিল বলিয়াই কি আমরা তাহাকে পরম শত্রু মনে করিলাম? ভুল, ভুল-মৃত্যু ‘মিত্র’ রূপেই আমার কাছে দেখা দিয়াছে। আমার ভালোবাসা ও প্রণাম জানিবে।
- তোমার নসু
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
৩০. ৬. ৩১. কলিকাতা।
৩০. ৬. ৩১. কলিকাতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন