মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

শরৎ চ্যাটুজ্যে


শরৎ চ্যাটুজ্যে

শেয়ার করেছেন, ফেসবুক থেকে, প্রণব কুমার কুণ্ডু।

শরৎচন্দ্র মারা গেছেন প্রায় আশী বছর আগে। এখন ওনাকে নিয়ে কিছু খুলাখুলি আলোচনা হতেই পারে। শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ , দুজনে এমন মাপের মানুষ, যাদের নিয়ে বহু লোক সারা জীবন পড়াশোনা করে গিয়েছেন। তবে রবীন্দ্রনাথের পড়ুয়া সংখ্যা আমার মনেহয় বিশ্বে সর্বাধিক। এত বেশী বিদেশী ভাষাভাষী, একক একজন লেখককে নিয়ে পড়াশোনা করেননি।
শরৎচন্দ্রের সঙ্গে পাঠকের সম্পর্কটা ওয়ান ইজ টু ওয়ান। মাঝে না ছিল কোন প্রচার, না ছিল বিজ্ঞাপন। বাঁধা ছিল বিস্তর, তার উপর,পথের দাবী, বাজেয়াপ্ত হলে, সাধারন মানুষ, শরৎ চন্দ্র সম্পর্কে ভয় পেয়ে গেলো। লোকের মূখে মূখে শরৎ চন্দ্র বাংলার কোনে কোনে পৌছে গেলেন।
এখন জানতে ইচ্ছে করে উনি মানুষ হিসাবে কেমন ছিলেন?
আমি শরৎ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্যাম সুন্দর বন্দোপাধ্যায় কে খুব কাছ থেকে দেখার সূযোগ পেয়েছি। উনি শরৎ চন্দ্রকে দেবতা জ্ঞানে শ্রদ্ধা করতেন।বাংলায় ডক্টরেট করেন শরৎ চন্দ্রের উপর লিখে। ওনার একটি বই শরৎ চেতনা। বইটির একটি কপি, আমার মা কে উপহার দিয়েছিলেন। আমার মা ও বাংলার শিক্ষিকা ছিলেন।
বইটি পড়ে আমি শরৎ চন্দ্রের ব্যক্তিগত জীবন কিছু জানতে পারি। ডঃ শ্যাম সুন্দর বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ঐ, শরৎ চেতনা, ই একটু ঘষে মেজে ওনার ডক্টরেট ডিগ্রী হয়েছিলো।
শরৎ চন্দ্র ও রবি ঠাকুরের একটু বিবাদ হয়, পথের দাবীকে অবৈধ ঘোষনা করা নিয়ে। রবি ঠাকুর এক পত্র দেন শরৎ চন্দ্রকে। বিষয়টা পথের দাবী প্রকাশে ওনার আপত্তি। শরৎ চন্দ্র একটু কড়া জবাব দেন।তবে পত্রবাহক শরতের পত্র বিশ্বকবিকে দেন নি।
এ সম্পর্কে শ্যাম সুন্দর ব্যানার্জীর বক্তব্য - বাপ জ্যাঠার বিবাদে সন্তানের কথা বলা অনুচিত।
শরত মারা গেলে, ব্রাহ্ম সমাজের মূখপাত্র, এক লাইন খবর ছাপে - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামক এক লেখক পরলোকে।
শরতের চরিত্রহীন, প্রকাশিত হলে, রবি ঠাকুরের উক্তি - এত দিনে চরিত্রহীনের চরিত্র বোঝা গেলো। উত্তরটা শরত দেন, ভ্রাতা ও ভগিনী মিলনে যে বালকের সৃষ্টি, তাহা টিকিলো না,টিকিতে পারেনা।রবি ঠাকুর ও তার বোন একটি পত্রিকা প্রকাশের চেষ্টা করে, যা কয়েক সংখ্যার পর, বন্ধ হয়ে যায়। নাম বালক।
শরত বর্মায় ১৯০৬ সালে শান্তি দেবীকে বিয়ে করেন, তার একটি পুত্র সন্তান হয়। দুজনে প্লেগে ১৯০৮ এ মারা যায়।
দুঃখে উনি ফিরে আসেন। তারপর হাওড়ায় মোক্ষদা,উনি নাম দেন হিরন্ময়ী, নামে এক মহিলার সঙ্গে থাকেন, ১৯১০.থেকে।তখন ওনার বয়স চৌত্রিশ। ওনাকে নাকি বিয়েই করেন নি।তবে এক নিষ্ঠভাবে ভালোবেসেছিলেন, সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
শরত বাবুর সঙ্গে বিপ্লবীদের গোপন যোগাযোগ ছিলো।উনি দেশপ্রেমী বিপ্লবীদের সমর্থন করায় অনেকে ওনাকে সমালোচনা করতো।উনি নোবেল পাননি। অথচ বহু নোবেল জয়ী ওনার ধারে কাছে আসে কিনা, সন্দেহ আছে।১৯৭৫ নাগাদ দেশ পত্রিকায়, সাহিত্যে নোবেল লরিয়েট দের লেখা, ধারাবাহিক প্রকাশিত হতো, পড়ে যতটুকু বুঝেছি,, শরতচন্দ্র কারুর থেকে কম নন। তবে পথের দাবীর একটি লাইন মনে আছে - সাপটা তোমাকে অকারনে ছোবল মারিবেনা, উহা ইংল্যান্ড হইতে আসে নাই।
সমালোচক রা শরতচন্দ্রকে দুশ্চরিত্র, খারাপ পাড়ার খদ্দের বলতেও ছাড়েন নি। এসম্পর্কে শরতের বক্তব্য, যাকে ভালোবাসিনা, তাকে ভোগ করার কথা চিন্তাও করিনা।
ওনার মত স্পষ্টবাদী মানুষকে ভরসা করা যেতেই পারে। হয়তো গিয়ে মদ্যপান করতেন। সম্পর্ক তৈরী করলে, ওনার লেখায় প্রকাশ পেতো।
মৃত্যুর পর সম্পত্তি ছিলো সামান্য। বই লিখেও ঠকে গেছেন। এনারা বাঙালীকে শুধু দিয়েই গেছেন। বিনিময় নেননি কিছুই।পাঠকের শ্রদ্ধাটাই এনাদের সেরা পাওনা

Soumen Dutta খুব সুন্দর পোস্ট। ধন্যবাদ
পরিচালনা করুন



Laboni Kundu রামের সুমতি...মেজদিদি....চন্দ্রনাথ,...অরক্ষনাীয়া....গগৃহদাহ ---- পড়ার সময় যখন কেঁদে ফেলি তখন অন্তঃস্থলের সাম্রাজ্যের সম্রাট তিনি., নোবেল সেখানে তুচ্ছ ,...
পরিচালনা করুন



Prince Nandy শ্রদ্ধেয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বেশি কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই,তবে বাংলা সাহিত্যে কথা সম্রাট একজনই ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন; ওঁনার 'ইন্দ্রনাথ ও শ্রীকান্ত' যে বয়সে পড়েছিলাম,সেটা ইন্দ্রনাথের মতোই দামাল বয়স ছিল,গল্পটা পড়ার সময় নিজেকে ইন্দ্রনাথ আর বাস্তবে সেই কাজগুলো করছি সেটাই মনে হত l লেখকের জয় তো এখানেই, যে পাঠককে গল্পের চরিত্রের সাথে মিলিয়ে দিতে পারে
1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন