সনাতন ধর্ম
শেয়ার করেছেন, ফেসবুক থেকে, প্রণব কুমার কুণ্ডু।
Sanatan Dharma / সনাতন ধর্ম তাদের পোস্ট শেয়ার করেছেন৷
Sanatan Dharma / সনাতন ধর্ম
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা- ( ১ থেকে ৫ )
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-১
বেদ বলছে, “ঈশ্বরস্য প্রতিমা নাস্তি”।
ঈশ্বরকে অন্য কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। প্রতিমা মানে তুলনা। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন,-
“দ্যোততে ক্রীড়তে যস্মাদুদ্যতে দ্যোততে দিবি।
তস্মাদ্দেব ইতি প্রোক্তঃ স্তূয়তে সর্ব দেবতৈঃ”।।
অর্থাৎ যার দ্বারা সৃষ্টি-স্থিতি-লয় একীভূত হয় তাকেই ‘দেব’ নামে অভিহিত করা হয়। আসলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার জন্যে বিশেষ বিশেষ ক্রিয়া ব্রহ্মেরই মানস ক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্রহ্মের এই এক এক ধরণের অভিব্যক্তিকে এক একটা ‘দেব’ বলা হয়।
তন্ত্র বলছে, আত্মার যে অভিস্ফুরণ অনুদেহে ও অনুমানসে অজস্রভাবে হয়ে চলেছে ও সেই অভিব্যক্তিগুলো যাতে ভাল ভাবে হতে পারে সেই জন্যে মানুষের শরীরে অজস্র স্নায়ুতন্তু (nerves) রয়েছে। এই অভিব্যক্তিগুলির বাহক হিসেবে মানুষের এক একটা স্নায়ুতন্তুকে এক একটা ‘দেব’ বলা যায়।
-------------------------------------
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-২
ঈশ্বরকে অন্য কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। প্রতিমা মানে তুলনা। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন,-
“দ্যোততে ক্রীড়তে যস্মাদুদ্যতে দ্যোততে দিবি।
তস্মাদ্দেব ইতি প্রোক্তঃ স্তূয়তে সর্ব দেবতৈঃ”।।
অর্থাৎ যার দ্বারা সৃষ্টি-স্থিতি-লয় একীভূত হয় তাকেই ‘দেব’ নামে অভিহিত করা হয়। আসলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার জন্যে বিশেষ বিশেষ ক্রিয়া ব্রহ্মেরই মানস ক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্রহ্মের এই এক এক ধরণের অভিব্যক্তিকে এক একটা ‘দেব’ বলা হয়।
তন্ত্র বলছে, আত্মার যে অভিস্ফুরণ অনুদেহে ও অনুমানসে অজস্রভাবে হয়ে চলেছে ও সেই অভিব্যক্তিগুলো যাতে ভাল ভাবে হতে পারে সেই জন্যে মানুষের শরীরে অজস্র স্নায়ুতন্তু (nerves) রয়েছে। এই অভিব্যক্তিগুলির বাহক হিসেবে মানুষের এক একটা স্নায়ুতন্তুকে এক একটা ‘দেব’ বলা যায়।
-------------------------------------
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-২
এ তো যোগশাস্ত্র বা তন্ত্রের ব্যাপার। সাধারণতঃ দেব-দেবী বলতে যা বোঝায় মুখ্যতঃ তারা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন,-
১) লৌকিক দেব-দেবী,
২) পৌরাণিক দেব-দেবী,
৩) বৈদিক দেব-দেবী ও
৪) তান্ত্রিক দেব-দেবী।
১) লৌকিক দেব-দেবী,
২) পৌরাণিক দেব-দেবী,
৩) বৈদিক দেব-দেবী ও
৪) তান্ত্রিক দেব-দেবী।
১) লৌকিক দেব-দেবীঃ
যেখানে যে জিনিসের ভয়, তা থেকে বাঁচবার জন্যে সেখানকার সাধারণ মানুষ ভয় ও অজ্ঞতার কারণে সেই সম্পর্কিত কোন দেবী বা দেবতার কল্পনা করে। এদের লৌকিক দেব-দেবী বলা হয়। এই লৌকিক দেব-দেবীদের পরিচিতি ও প্রভাব সেই বিশেষ অঞ্চলেই সাধারণতঃ সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন,- যেখানে সাপের ভয়, সেখানকার মানুষ সাপের ভয় থেকে বাঁচাবার জন্যে একটি দেবীকে কল্পনা করলো- ‘মনসা’।
দক্ষিণ বাঙলায় সমুদ্রের কাছে কুমীরের উপদ্রব রয়েছে, দক্ষিন চব্বিশ পরগনায় সুন্দরবন এলাকায় বাঘের উপদ্রব রয়েছে সুতরাং দেবতা তৈরী হলেন- ‘কালু রায়’, ‘দক্ষিন রায়’।
দক্ষিন রায়কে সন্তুষ্ট রাখলে বাঘে খাবে না, বাঘ হামলা করবে না। তেমনি ভয়ের চোটে তৈরী হ’ল ‘বনবিবি’।
বনে ঢোকার আগে তার পূজা দিলে বিপদ হবে না। এই ভাবে অজস্র দেব-দেবী তৈরী হ’ল। এই সব দেবতার অস্তিত্বও স্বীকার করতে হয়, কারণ-এক একটা অভিব্যক্তিকেই বলা হচ্ছে এক একটা দেবতা।
এখানে এই লৌকিক দেবী-দেবতারা তৈরী হলেন ভয় থেকে। এখন এই সব দেবী-দেবতার মহিমা প্রচার না হলে তো লোকে তাকে মানবে না। তাই লেখা হল পদ্ম পুরাণ, লেখা হ’ল মনসা মঙ্গল, লেখা হ’ল পদ্মাবতী কাব্য, আরও কত কিছু। বেহুলা-লখীন্দরের গল্প তৈরী করে বোঝানো হলো যে এ দেবীটি যে-সে নয়। একে তুষ্ট রাখতে না পারলে নানান ধরণের বিপদ হবে। শুধু তাই নয়, এই দেবী-দেবতাদের মধ্যে মানুষের মত পারস্পরিক লড়াই আছে, ঝগড়া আছে, রেষারেষিও আছে, কামড়া-কামড়িও আছে।
এই লৌকিক দেব-দেবীর অধিকাংশের মন্ত্রগুলো একেবারে আধুনিক ভাঙ্গা সংস্কৃতে তৈরী, আবার কোথাও সংস্কৃতও নয়, স্থানীয় ভাষায় পুজাপাঠ হয়। যেমন-সত্য নারায়ণের পাঁচালী, লক্ষ্মীর পাঁচালী, দক্ষিণ রায়ের পাঁচালী আছে। সংস্কৃত মন্ত্র জোটেনি, তাই বাংলা পাঁচালীতেই কাজ সারা হয়। আবার এক অংশের লৌকিক দেব-দেবীকে অন্য অংশের লোকেরা জানেও না।
--------------------------------------
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-৩
যেখানে যে জিনিসের ভয়, তা থেকে বাঁচবার জন্যে সেখানকার সাধারণ মানুষ ভয় ও অজ্ঞতার কারণে সেই সম্পর্কিত কোন দেবী বা দেবতার কল্পনা করে। এদের লৌকিক দেব-দেবী বলা হয়। এই লৌকিক দেব-দেবীদের পরিচিতি ও প্রভাব সেই বিশেষ অঞ্চলেই সাধারণতঃ সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন,- যেখানে সাপের ভয়, সেখানকার মানুষ সাপের ভয় থেকে বাঁচাবার জন্যে একটি দেবীকে কল্পনা করলো- ‘মনসা’।
দক্ষিণ বাঙলায় সমুদ্রের কাছে কুমীরের উপদ্রব রয়েছে, দক্ষিন চব্বিশ পরগনায় সুন্দরবন এলাকায় বাঘের উপদ্রব রয়েছে সুতরাং দেবতা তৈরী হলেন- ‘কালু রায়’, ‘দক্ষিন রায়’।
দক্ষিন রায়কে সন্তুষ্ট রাখলে বাঘে খাবে না, বাঘ হামলা করবে না। তেমনি ভয়ের চোটে তৈরী হ’ল ‘বনবিবি’।
বনে ঢোকার আগে তার পূজা দিলে বিপদ হবে না। এই ভাবে অজস্র দেব-দেবী তৈরী হ’ল। এই সব দেবতার অস্তিত্বও স্বীকার করতে হয়, কারণ-এক একটা অভিব্যক্তিকেই বলা হচ্ছে এক একটা দেবতা।
এখানে এই লৌকিক দেবী-দেবতারা তৈরী হলেন ভয় থেকে। এখন এই সব দেবী-দেবতার মহিমা প্রচার না হলে তো লোকে তাকে মানবে না। তাই লেখা হল পদ্ম পুরাণ, লেখা হ’ল মনসা মঙ্গল, লেখা হ’ল পদ্মাবতী কাব্য, আরও কত কিছু। বেহুলা-লখীন্দরের গল্প তৈরী করে বোঝানো হলো যে এ দেবীটি যে-সে নয়। একে তুষ্ট রাখতে না পারলে নানান ধরণের বিপদ হবে। শুধু তাই নয়, এই দেবী-দেবতাদের মধ্যে মানুষের মত পারস্পরিক লড়াই আছে, ঝগড়া আছে, রেষারেষিও আছে, কামড়া-কামড়িও আছে।
এই লৌকিক দেব-দেবীর অধিকাংশের মন্ত্রগুলো একেবারে আধুনিক ভাঙ্গা সংস্কৃতে তৈরী, আবার কোথাও সংস্কৃতও নয়, স্থানীয় ভাষায় পুজাপাঠ হয়। যেমন-সত্য নারায়ণের পাঁচালী, লক্ষ্মীর পাঁচালী, দক্ষিণ রায়ের পাঁচালী আছে। সংস্কৃত মন্ত্র জোটেনি, তাই বাংলা পাঁচালীতেই কাজ সারা হয়। আবার এক অংশের লৌকিক দেব-দেবীকে অন্য অংশের লোকেরা জানেও না।
--------------------------------------
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-৩
২) পৌরাণিক দেব-দেবীঃ
পৌরাণিক দেব-দেবীদের সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আগেই জানতে হবে পুরাণ কাকে বলে। সংস্কৃত সাহিত্যকে মোটামুটি চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।যেমন,- ইতিকথা, ইতিহাস, কাব্য ও পুরাণ।
‘ইতিকথা’ মানে ইতি কথ্যতে অর্থাৎ এই রকমই বলা হয়েছে। ঘটনার পঞ্জীকরণের নাম ‘ইতিকথা’ ইংরেজীতে History, অর্থাৎ যেমনটি ঘটেছে তারই পঞ্জীকরণ, তারই রেকর্ড। তাতে ভাল-মন্দের কোন প্রশ্নই নেই।
আর ‘ইতিহাস’ হ’ল- ‘ইতি হসতি ইত্যর্থে ইতিহাস’ অর্থাৎ ইতিকথার যে অংশগুলো থেকে মানুষের কল্যাণ হয়, সেই অংশগুলোর নাম ‘ইতিহাস’।
ইতিহাসের কোন ইংরেজী প্রতিশব্দ নেই। যেমন- চৈতন্য চরিতামৃতম, মহাভারত। আজকাল স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েদের ইতিকথা পড়ানো হয়, ইতিহাস পড়ানো হয় না।
কাব্য হ’ল – ‘বাক্যং রসাত্মকং কাব্যং’।
ঘটনাটা সত্যই হোক বা মিথ্যাই হোক, যদি তা রসাত্মক হয়, রসযুক্ত হয়, তাকে বলা হয় কাব্য।
আর পুরাণ হলো- ঘটনাটা সত্য নয়, কিন্তু লোক শিক্ষার উপাদান রয়েছে, Educative value রয়েছে। যেমন- রামায়ণ। এক একটা চরিত্র ঠিক ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এক একটা চরিত্রের মধ্যে থেকে এক এক ধরণের লোক শিক্ষা আমরা পাচ্ছি। পুরাণের মূল্যটা ওই লোক শিক্ষাতেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ঘটনাটা সত্য নয়। বর্তমান যুগেও এমন অনেক উপন্যাস আছে, অনেক নাটক আছে, যাতে লোক শিক্ষার পুরো উপাদান রয়েছে। কিন্তু সেই নাটকের চরিত্রগুলো তো আর বাস্তব নয় বা সেই চরিত্রগুলোকে নিয়ে ফুল বিল্বপত্র দিয়ে পুজা করাও চলে না। মূর্ত্তি গড়ে ষোড়শপচারে পূজা করাও যায় না, তা করতে গেলে মস্ত বড় একটা ভুল হয়ে যাবে। এই ধরণের ভুলকে সংস্কৃতে ‘প্রমাদ’ বলে অর্থাৎ যার গোড়াতে ভুল, মাঝে ভুল আর শেষেও ভুল। গোড়াতেই ভুল কারণ চরিত্রগুলোই তো কাল্পণিক, যদিও লোক শিক্ষার জন্যে মহৎ উদ্দেশ্যেই তৈরী করা হয়েছে।
পৌরাণিক দেব-দেবীদের সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আগেই জানতে হবে পুরাণ কাকে বলে। সংস্কৃত সাহিত্যকে মোটামুটি চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।যেমন,- ইতিকথা, ইতিহাস, কাব্য ও পুরাণ।
‘ইতিকথা’ মানে ইতি কথ্যতে অর্থাৎ এই রকমই বলা হয়েছে। ঘটনার পঞ্জীকরণের নাম ‘ইতিকথা’ ইংরেজীতে History, অর্থাৎ যেমনটি ঘটেছে তারই পঞ্জীকরণ, তারই রেকর্ড। তাতে ভাল-মন্দের কোন প্রশ্নই নেই।
আর ‘ইতিহাস’ হ’ল- ‘ইতি হসতি ইত্যর্থে ইতিহাস’ অর্থাৎ ইতিকথার যে অংশগুলো থেকে মানুষের কল্যাণ হয়, সেই অংশগুলোর নাম ‘ইতিহাস’।
ইতিহাসের কোন ইংরেজী প্রতিশব্দ নেই। যেমন- চৈতন্য চরিতামৃতম, মহাভারত। আজকাল স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েদের ইতিকথা পড়ানো হয়, ইতিহাস পড়ানো হয় না।
কাব্য হ’ল – ‘বাক্যং রসাত্মকং কাব্যং’।
ঘটনাটা সত্যই হোক বা মিথ্যাই হোক, যদি তা রসাত্মক হয়, রসযুক্ত হয়, তাকে বলা হয় কাব্য।
আর পুরাণ হলো- ঘটনাটা সত্য নয়, কিন্তু লোক শিক্ষার উপাদান রয়েছে, Educative value রয়েছে। যেমন- রামায়ণ। এক একটা চরিত্র ঠিক ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এক একটা চরিত্রের মধ্যে থেকে এক এক ধরণের লোক শিক্ষা আমরা পাচ্ছি। পুরাণের মূল্যটা ওই লোক শিক্ষাতেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ঘটনাটা সত্য নয়। বর্তমান যুগেও এমন অনেক উপন্যাস আছে, অনেক নাটক আছে, যাতে লোক শিক্ষার পুরো উপাদান রয়েছে। কিন্তু সেই নাটকের চরিত্রগুলো তো আর বাস্তব নয় বা সেই চরিত্রগুলোকে নিয়ে ফুল বিল্বপত্র দিয়ে পুজা করাও চলে না। মূর্ত্তি গড়ে ষোড়শপচারে পূজা করাও যায় না, তা করতে গেলে মস্ত বড় একটা ভুল হয়ে যাবে। এই ধরণের ভুলকে সংস্কৃতে ‘প্রমাদ’ বলে অর্থাৎ যার গোড়াতে ভুল, মাঝে ভুল আর শেষেও ভুল। গোড়াতেই ভুল কারণ চরিত্রগুলোই তো কাল্পণিক, যদিও লোক শিক্ষার জন্যে মহৎ উদ্দেশ্যেই তৈরী করা হয়েছে।
-----------------------------------------
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-৪
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-৪
কথিত আছে, এই ধরণের আঠারটি পুরাণ ব্যাসদেব লিখেছিলেন। এই পুরাণগুলি লেখার পরে ব্যাসদেব বলেছেন,-
“রূপ রূপবিবর্জিতস্য ভবতো যদ্ধানেন কল্পিতম্।
স্তুত্যাহনির্বচনীয়তাহখিল গুরো দূরীকৃত্য যন্ময়া।।
ব্যাপিত্বং চ নিরাকৃতং ভগবতো যৎতীর্থ যাত্রাদিনা।
ক্ষন্তব্যং জগদীশো তদ্বিকলতাদোষত্রয়ং মৎকৃতম্”।।
“রূপ রূপবিবর্জিতস্য ভবতো যদ্ধানেন কল্পিতম্।
স্তুত্যাহনির্বচনীয়তাহখিল গুরো দূরীকৃত্য যন্ময়া।।
ব্যাপিত্বং চ নিরাকৃতং ভগবতো যৎতীর্থ যাত্রাদিনা।
ক্ষন্তব্যং জগদীশো তদ্বিকলতাদোষত্রয়ং মৎকৃতম্”।।
“রূপ রূপবিবর্জিতস্য ভবতো যদ্ধানেন কল্পিতম্”।
ব্যাসদেব বলছেন,- হে পরমপুরুষ, তুমি রূপাতীত, তোমার কোন রূপ নেই। আমি তোমার রূপের বর্ননা করে অন্যায় করেছি। আমি তোমার ধ্যান মন্ত্র রচনা করতে গিয়ে তোমাকে নানান রূপের বন্ধনে আবদ্ধ করেছি।কোথাও বলেছি তিন চোখ, কোথাও বলেছি পঞ্চমুখ, কোথাও বলেছি চার হাত ইত্যাদি। এ ধরণের বলাটাই আমার প্রথম অন্যায় হয়ে গেছে।
“স্তুত্যাহনির্বচনীয়তাহখিল গুরো দূরীকৃত্য যন্ময়া”।
গুণাতীত সত্তার গুণের বর্ননা করা যায় না অথচ স্তুতি করতে গেলে বলতে হচ্ছে – তুমি এই করেছ, ওই করেছ; তুমি এই করতে পার, ওই করতে পার ইত্যাদি। অর্থাৎ স্তুতি করতে গিয়ে যাঁর গুণের শেষ নেই তাঁকে গুণের বাঁধনে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। তাঁর অনির্বচনীয়তাকে খণ্ডিত করে ফেলা হচ্ছে। তাই ব্যাসদেব বললেন, এটা আমার দ্বিতীয় অপরাধ।
“ ব্যাপিত্বং চ নিরাকৃতং ভগবতো যৎতীর্থ যাত্রাদিনা”।
যিনি সর্বব্যাপী সত্তা, যিনি সর্বানুস্যূত, সবকিছুতেই সাক্ষীরূপে স্থিত তাঁর সম্বন্ধে এই স্থানটিতে তিনি মাখন খেয়েছিলেন, এই খানে তিনি গঙ্গাস্নান করেছিলেন এইসব বলে তাঁকে বিশেষ দেশের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেছি, এটা আমার তৃতীয় অপরাধ।
“ক্ষন্তব্যং জগদীশো তদ্বিকলতাদোষত্রয়ং মৎকৃতম্”।
তাই সবশেষে পুরাণকার ব্যাসদেব পরমপুরুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন- হে জগদীশ আমার এই চিত্ত বিকলতা প্রসূত অপরাধত্রয়কে তুমি ক্ষমা করো।
---------------------------------
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-৫
ব্যাসদেব বলছেন,- হে পরমপুরুষ, তুমি রূপাতীত, তোমার কোন রূপ নেই। আমি তোমার রূপের বর্ননা করে অন্যায় করেছি। আমি তোমার ধ্যান মন্ত্র রচনা করতে গিয়ে তোমাকে নানান রূপের বন্ধনে আবদ্ধ করেছি।কোথাও বলেছি তিন চোখ, কোথাও বলেছি পঞ্চমুখ, কোথাও বলেছি চার হাত ইত্যাদি। এ ধরণের বলাটাই আমার প্রথম অন্যায় হয়ে গেছে।
“স্তুত্যাহনির্বচনীয়তাহখিল গুরো দূরীকৃত্য যন্ময়া”।
গুণাতীত সত্তার গুণের বর্ননা করা যায় না অথচ স্তুতি করতে গেলে বলতে হচ্ছে – তুমি এই করেছ, ওই করেছ; তুমি এই করতে পার, ওই করতে পার ইত্যাদি। অর্থাৎ স্তুতি করতে গিয়ে যাঁর গুণের শেষ নেই তাঁকে গুণের বাঁধনে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। তাঁর অনির্বচনীয়তাকে খণ্ডিত করে ফেলা হচ্ছে। তাই ব্যাসদেব বললেন, এটা আমার দ্বিতীয় অপরাধ।
“ ব্যাপিত্বং চ নিরাকৃতং ভগবতো যৎতীর্থ যাত্রাদিনা”।
যিনি সর্বব্যাপী সত্তা, যিনি সর্বানুস্যূত, সবকিছুতেই সাক্ষীরূপে স্থিত তাঁর সম্বন্ধে এই স্থানটিতে তিনি মাখন খেয়েছিলেন, এই খানে তিনি গঙ্গাস্নান করেছিলেন এইসব বলে তাঁকে বিশেষ দেশের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেছি, এটা আমার তৃতীয় অপরাধ।
“ক্ষন্তব্যং জগদীশো তদ্বিকলতাদোষত্রয়ং মৎকৃতম্”।
তাই সবশেষে পুরাণকার ব্যাসদেব পরমপুরুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন- হে জগদীশ আমার এই চিত্ত বিকলতা প্রসূত অপরাধত্রয়কে তুমি ক্ষমা করো।
---------------------------------
দেব-দেবী তত্ত্ব ও মূর্ত্তিপূজার যৌক্তিকতা-৫
মানুষের কল্পনা প্রসুত এইসব দেব-দেবীর মূর্ত্তি গড়ে তার পূজা করে মানুষ মুক্তি বা মোক্ষ পেতে পারে না। তাই ভগবান শিব বলে গেছেন-
“মনসা কল্পিতা মূর্ত্তিঃ নৃণাং চেন্মোক্ষসাধনী।
স্বপ্ন লব্ধেন রাজ্যেন রাজানঃ মানবাস্তথা”।।
অর্থাৎ কোন মানুষ যদি স্বপ্নে মনে মনে একটা রাজ্য তৈরী করে, আর মনে মনেই সেই রাজ্যের একটি রাজ প্রাসাদে, মনের তৈরী একটি স্বর্ণ সিংহাসনে উপবেশন করে; সেক্ষেত্রে স্বপ্নকালে সে রাজা হ’ল সত্যি- কিন্তু আসলে সে কি রাজা হ’ল? ঘুম ভাঙ্গার পর সে দেখে যে বাস্তব জগতে সে ছেঁড়া মাদুরে ছেঁড়া কাঁথা জড়িয়ে ঘুমোচ্ছিল।
স্বপ্ন লব্ধ রাজ্যের রাজা হওয়া যেমন উদ্ভট, অবাস্তব জিনিস, ঠিক তেমনই মানুষের কল্পিত মূর্ত্তির কাছে মুক্তি-মোক্ষ পাবার আশা আসলে শুধু দুরাশা নয়, আগা গোড়াই হতাশা।
\কারণ, ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন, মানুষ সৃষ্টি করেছে মূর্ত্তি। তাই মানুষের সৃষ্ট মূর্ত্তি তাকে অর্থাৎ মানুষকে তার স্রষ্টার কাছে পৌঁছে দিতে পারে না।
“মনসা কল্পিতা মূর্ত্তিঃ নৃণাং চেন্মোক্ষসাধনী।
স্বপ্ন লব্ধেন রাজ্যেন রাজানঃ মানবাস্তথা”।।
অর্থাৎ কোন মানুষ যদি স্বপ্নে মনে মনে একটা রাজ্য তৈরী করে, আর মনে মনেই সেই রাজ্যের একটি রাজ প্রাসাদে, মনের তৈরী একটি স্বর্ণ সিংহাসনে উপবেশন করে; সেক্ষেত্রে স্বপ্নকালে সে রাজা হ’ল সত্যি- কিন্তু আসলে সে কি রাজা হ’ল? ঘুম ভাঙ্গার পর সে দেখে যে বাস্তব জগতে সে ছেঁড়া মাদুরে ছেঁড়া কাঁথা জড়িয়ে ঘুমোচ্ছিল।
স্বপ্ন লব্ধ রাজ্যের রাজা হওয়া যেমন উদ্ভট, অবাস্তব জিনিস, ঠিক তেমনই মানুষের কল্পিত মূর্ত্তির কাছে মুক্তি-মোক্ষ পাবার আশা আসলে শুধু দুরাশা নয়, আগা গোড়াই হতাশা।
\কারণ, ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন, মানুষ সৃষ্টি করেছে মূর্ত্তি। তাই মানুষের সৃষ্ট মূর্ত্তি তাকে অর্থাৎ মানুষকে তার স্রষ্টার কাছে পৌঁছে দিতে পারে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন