মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সরস্বতী


সরস্বতী

শেয়ার করেছেন            প্রণব কুমার কুণ্ডু


📚সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্তপঞ্চমী (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী) তিথিতে সরস্বতী পূজা করে।
📓সরস্বতী বৌদ্ধধর্মের একজন অভিভাবক হিসেবেও পরিচিত, তিনি গৌতম বুদ্ধের শিক্ষাকে সমর্থন করেন এবং অনুশীলনকারীদেরকে সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদান করেন।
বৌদ্ধ এবং পশ্চিম ও মধ্য ভারতের জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন।
জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে, জাপান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে। 
সরস্বতী,  মায়ানমারে থুরাথাদি হিসাবে পরিচিত, চীনে বিয়ানকৈটিয়ান, থাইল্যাণ্ডে সুরস্বাদী হিসাবে এবং জাপানে বেনজায়টেন হিসাবে পরিচিত।
📓ঋগ্বেদে, সরস্বতী একটি নদীদেবী হিসাবে পূজিত হলেও, পরবর্তী বৈদিক যুগে, সরস্বতী,  নদীদেবী হিসাবে তাঁর মর্যাদা হারান; এবং সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত প্রভৃতির সঙ্গে ক্রমবর্ধিতভাবে সংযুক্ত হন। হিন্দুধর্মে, সরস্বতী বুদ্ধিমত্তা, চেতনা, মহাজাগতিক জ্ঞান, সৃজনশীলতা, শিক্ষা, সঙ্গীত, কলা, বাকশক্তি এবং ক্ষমতার দেবী।
বেদান্তে তাকে আদি শক্তির নারীশক্তি ও জ্ঞানশক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
হিন্দুরা শুধুমাত্র "পুঁথিগত বিদ্যা" অর্জনের জন্যই তাঁর উপাসনায় ব্রতী হয়, এমন নয়; তাঁর "দিব্য জ্ঞান",  মোক্ষলাভের পন্থা হিসেবেও অপরিহার্য।
📓 সরস্বতী তাঁর চার হাতের মধ্য দিয়ে, মানুষের ব্যক্তিত্বের চার অভিমুখের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেগুলি হলো, মন, বুদ্ধি, সতর্কতা, এবং অহং।
অন্যদিকে এই চারটি অভিমুখ হিন্দুদের প্রধান পবিত্র গ্রন্থ,  চারটি বেদের প্রতিনিধিত্ব করে।
বৈদিক সাহিত্যের ৩টি রূপের প্রতিনিধিত্ব করে বেদ, ৩টি রূপ হলো, কবিতা, গদ্য ও সঙ্গীত।
"কবিতা" - ঋগ্বেদে কবিতার মধ্য দিয়ে স্তোত্র গাওয়া হয়,
"গদ্য" - যজুর্বেদে গদ্যগত রচনা প্রধান ও
"সঙ্গীত" - সামবেদ সঙ্গীতের উপস্থাপনা করে।
📓দেবীর চার হাতও এইভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গদ্য উপস্থাপিত হয়েছে এক হাতে গ্রন্থের দ্বারা, স্ফটিকের পুষ্প দ্বারা কবিতা ও বীণা দ্বারা সঙ্গীত। এবং পবিত্র জলের পাত্র মানুষের চিন্তার পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতার পরিচয় বহন করে।দেবী সরস্বতী অনুরাগের সাথেও যুক্ত, সঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা এবং সুর; যা বক্তৃতা বা সঙ্গীতের মাধ্যমে সকল আবেগ এবং অনুভূতিকে প্রকাশ করে।
📓তিনি তাঁর হাতে ধরেছেনঃ- একটি গ্রন্থ "পবিত্র বেদ", যা সার্বজনীন, ঐশ্বরিক, অনন্ত ও সত্যিকারের জ্ঞান এবং বিজ্ঞান ও ধর্মগ্রন্থের সম্পূর্ণতার পরিচয় বহন করে। "বীণা",  একটি বাদ্যযন্ত্র যন্ত্র,  যা সমস্ত শিল্প ও বিজ্ঞান তার পরিপূর্ণতার পরিচয় বাহক। দেবীর পাশে অধিষ্ঠিয়মান ময়ূর তার সৌন্দর্যের প্রতি অহংকার ও গর্বের পরিচয় বহন করে এবং তার ময়ূরের মাধ্যমে দেবী শিক্ষা দেন যে, বাইরের গড়ন বা চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে শাশ্বত সত্যের প্রতি জ্ঞানী হউয়া উচিৎ।
📓মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারতে সরস্বতী পূজা হয়, মহা সপ্তমীতে সরস্বতী আবাহন দিয়ে এবং শেষ হয় বিজয়দশামীতে সরস্বতী বিষর্জনের মাধ্যমে। অন্যদিকে উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও আসামের পূর্ব অংশে সরস্বতী পূজা মাঘ মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) পালিত হয়। এটি বসন্ত পঞ্চমীতে পালিত হয়। দেবী মূর্তি বা ছবির কাছে মানুষ বই রাখে এবং দেবীকে পূজা করে। এই দিনে বই পড়া অনুমোদিত নয়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন