রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৭

হাস্যকৌতুক ( গদ্যরচনা )



হাস্যকৌতুক  ( গদ্যরচনা )


অভিকর্ষ

সংসদের বাংলা-বাংলা অভিধানে

"ভূকেন্দ্রাভিমুখে

জড় পদার্থের

অাকর্ষণ"

gravitational
attraction  ( বি. প ) ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা।



সংসদের অভিধান

অনুযায়ী

জীব পদার্থের

আকর্ষণ নয় !



তাহলে তো

কেউ ছাদথেকে

পড়ে যাবেন

না !



কেউ ছাত থেকে

পড়ে গিয়ে

আত্মহত্যাও

করতে পারবেন

না !


সকলের কাছে বিনম্র নিবেদন

সাপ্তাহিক বর্তমান, আমার 'প্রচ্ছদ প্রবন্ধের জন্য', পত্রিকার 'লেখকের কপি' এবং 'সম্মান দক্ষিণা' দেয় নি !



গত ১৬ই আগস্ট ২০১৪ সালের 'সাপ্তাহিক বর্তমান'-এ প্রকাশিত আমার প্রচ্ছদ প্রবন্ধ সম্বন্ধে আপনাদের সকলকে জানাচ্ছি।

পত্রিকাটির  'লেখকের কপি'  আমাকে পাঠানো হয় নি। 
 
ঐ প্রবন্ধটির জন্য আমার 'সন্মান-দক্ষিণা'ও  দেওয়া হয় নি।

আমি, সে ব্যাপারে, 'সাপ্তাহিক বর্তমান কর্তৃপক্ষ',
 
'বর্তমান গ্রুপ কর্তৃপক্ষ', 
 
পশ্চিম বঙ্গের পুলিশ,
 
পশ্চিম বঙ্গের সরকারি প্রশাসন, 
 
এবং আমার পাঠক-পাঠিকা সহ, 
সমুদায় মানুষ, 
 
অন্যান্য লেখক-লেখিকাদের, 
 
এবং  আপনাদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ঐ পত্র্রিকার একটি কপি ও আমার সম্মান-দক্ষিণা দেওয়া হোক, এই দাবি, এখনো জানাচ্ছি।

উক্ত প্রবন্ধটি ছিল একটি ফরমায়েশি ( অর্ডারি ) প্রবন্ধ।

নমস্কার।

প্রণব কুমার কুণ্ডু ২৫/২ /২০১৬ ।

২২৩ মিত্রপাডা রোড
নৈহাটি,উত্তর ২৪ পরগনা, পিন ৭৪৩১৬৫ ।

ফোন ০৩৩ ২৫০২ ৩৮৭৮ ।

শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭

হজরত মহম্মদ ( গদ্যরচনা )


কবি, লেখক, প্রবন্ধকার, ছড়াকার, লিমেরিক লিখিয়ে, 

বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ লিখিয়ে, শ্রী প্রণব কুমার কুণ্ডুর ছবি










                                                       লেখক   প্রণব কুমার কুণ্ডু


হজরত মহম্মদ  ( গদ্যরচনা )


'হজরত মহম্মদ',  'ইসলাম ধর্মের',  প্রবর্তক। তিনি ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি ধর্মাচার্যও ছিলেন। পাঁচশো সত্তর খ্রিস্টাব্দে আরব দেশের 'মক্কা' নামক বাণিজ্যস্থলে তিনি জন্মেছিলেন। বলা হয় তিনি ঈশ্বরের দূত। কথাটা আমার কাছে শোনায় ভারি অদ্ভুত !
মহম্মদের পিতা আব্দুল্লা। মাতা অমীনা।
কন্যা ফতেমা। জামাতা আলি। দৌহিত্র হাসেন ও হুসেন।
মহম্মদের মৃত্যুর পরে খেয়োখেয়িতে আর তরবারিতে তরবারিতে তখন অনেকে মাতেন। প্রচুর, খুন-জখম, হানাহানি চলে।

সূত্র  'বঙ্গীয় শব্দকোষ, পৃষ্ঠা ১৭৪৬।


হজরত মহম্মদ-এর পূর্বপুরুষেরা, সিরিয়ার লোক ছিলেন !

পুর্বপুরুষদের একজন, তিনিও 'হজরত' ছিলেন, নাম হজরত এব্রাহিম।
তাঁর দুই 'বৌ' ছিল!

এক  'বৌ' 'হাজেরা'-কে, শিশুপুত্রসহ, হজরত এব্রাহিম, নির্মমভাবে আরবের মরুভূমিতে, নির্বাসিত করেছিলেন !

অন্য পত্নী, 'সারা খাতুন'-কে নিয়ে, হজরত এব্রাহিম, সিরিয়াতে বাস করতে থাকেন।

সারা খাতুনের ছেলে, এস্‌হাক্।

এস্‌হাক্-এর ছেলে, ইয়াকুব।
ইবাকুব, ' হজরত এস্‌রাইল'  নামে পরিচিত ছিলেন।

এস্‌রাইল-এর বংশে, হজরত ইউসুফ,  'হজরত ইসার ( Jesus Christ )',  'মাতা মেরী',  হজরত মুসা,  হজরত সোলেমান প্রভৃতি মহাত্মাগণ জন্মেছিলেন।

'হজরত ইসার', উনিই,  'Jesus Christ'.  উনিই, 'যিশু খ্রিস্ট'।

এখানে, 'হজরত' শব্দের অর্থ, সম্ভবত, 'অতি সম্মানীয় ব্যক্তি'।

এখানে পেয়ে গেলেন, যিশু খ্রিস্টের,  এবং, যিশু খ্রিস্টের বংশের,  সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও ! 'মাতা মেরী'কেও পেলেন।

হজরত এব্রাহিমের নির্বাসিতা  'স্ত্রী', হাজেরার পুত্র,  'এস্‌মাইল'-এর বংশে, 'হজরত মহম্মদ'-এর জন্ম।

এসমাইল 'মক্কা' বাণিজ্যকেন্দ্রের সংগঠক ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

এসমাইলের একাদশ পুরুষ থেকে, 'কোরেশ' নামক বিখ্যাত বংশের উদ্ভব হয়।

কোরেশ বংশের অষ্টম পুরুষ, 'হাসেম'।

হাসেমের পুত্র, 'আবদুল মত্‌লেব'।

আবদুল মত্‌লেবের ছেলে, 'আবদুল্লা'।

এই আবদুল্লা, 'মহম্মদ'-এর জনক।

আমিনার গর্ভাবস্থায়, আমিনার স্বামী, আবদুল্লা, আমিনাকে সঙ্গে নিয়ে,  'মদিনা'য় চলে যান, এবং সেখানেই আকস্মিক ভাবে, আবদুল্লার মৃত্যু ঘটে।

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হজরত মহম্মদের জন্ম।

জন্মের অল্প কিছুদিন পরে, মহম্মদের মা, মহম্মদকে, আরবের যাযাবর জাতি, 'বেদুইন'-দের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, মহম্মদকে বড় করে তুলতে এবং দেখভাল করার জন্য।  মায়ের কোল ছেড়ে মহম্মদ তখন বেদুইনদের সাথে মরুভূমিতেই থাকত। এর ফলে শিশুরা অনেক বেশি কর্মঠ ও মরুভূমির ধকল সইতে পারত।
বেদুইন, আরবের যাযাবর জাতিবিশেয। আরবিতে বলা হয়, 'বদবী'। অর্থ মরুবাসী। ইংরেজিতে  'bedouin'.

হজরত মহম্মদের ছয় বৎসর বয়সে, তাঁর মা, আমিনার মৃত্যু ঘটে।

মহম্মদের আট বৎসর বয়সে, মহম্মদের ঠাকুরদা, আবদুল মত্‌লেব মারা যান।

তখন মহম্মদের কাকা, আবুতালের ভাই-এর ছেলে, মহম্মদকে, দেখভাল করেন।

এইসব কারণে, মহম্মদের, বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ ঘটে নি।

সম্ভবত, মহম্মদ 'নিরক্ষর' ছিলেন।

তবে 'নিরক্ষর' থাকা মানেই,  'আশিক্ষিত' নয়।

মহম্মদের সাধারণ জ্ঞান এবং অনেক ক্ষেত্রে, 'কাণ্ডজ্ঞান', যথেষ্ট উঁচু পর্যায়ের ছিল।

মহম্মদ, সুনিপুণ সংগঠক ছিলেন।

হজরত মহম্মদ,  posthumous সন্তান ছিলেন।
তাঁর পিতার মৃত্যুর পর, তাঁর জন্ম।

অনেকে এটাকে 'অপয়া', বলে মনে করে। কিন্তু, হজরত মহম্মদের 'জন্ম',  'অপয়া' ছিল না। তিনি, 'বিখ্যাত',  'অতিবিখ্যাত',  'লোক' হয়েছিলেন। যদিও তাঁর, 'অখ্যাতি'ও ছিল। তিনি একাধিক বিবা্হ করেছিলেন। শোনা যায়, তাঁর, নয় থেকে তেরো জন,  বিবাহিত পত্নী ছিল। একটি. নয় বছরের কম বয়সি শিশু কন্যাকেও,  তিনি বিবাহ করেছিলেন। তিনি  দাঙ্গা-হাঙ্গামাকে প্রশ্রয় দিতেন, তিনি নিজেও,  'যুদ্ধে' জড়িয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তিতে, তাঁর প্রবর্তীত 'ইসলামের'  'ধর্মবিজয়', সংঘটিত হয়েছিলছিল, 'যুদ্ধবিজয়ের' বিজয় উৎসবের উপর ভর করে।  'ইসলাম', অন্য  ধর্মমতকে শ্রদ্ধা জানায় না। তাদের  'বিধর্মী' এবং 'কাফের' বলে। যেখানে ইসলাম ধর্মমতের প্রাধান্য আছে, সেখানে তারা এখনো বড়ই নিষ্ঠুর।

হজরত মহম্মদ, অতগুলো বিবাহ করেছিলেন, কিন্তু তিনি, বা তাঁর লোকজন বিধান দিয়েছিলেন, একজন মুসলমান পুরুষ একই সময়ে চারটির বেশি নারীকে,   বিবাহ করতে পারবে না।

'এ যেন নিজের বেলায় অাঁটিসুটি, পরের বেলায় চিমটি কাটি'।

যেকোন জনগোষ্ঠিতে, মোটামুটি ভাবে, নারীপুরুষের সংখ্যা,  অর্ধেক অর্ধেক। একজন পুরুষ যদি চারটে করে বিবাহ করে, তবে অতজন নারী পাবে কোথা থেকে ? তাই নারীর প্রতি 'লোলুপতা' তাদের থেকে গেছে ! অন্য জাতিগোষ্ঠি থেকে তারা জোর করে 'নারী' ধরে নিয়ে গেছে, 'নারী' লুণ্ঠন করেছে।

বছর তেরো বয়স হলে, মহম্মদ, তার কাকা  আবুতালের  'উটবাহিনীতে' ( caravan )  যোগ দিয়ে, কাকার সাথে 'সিরিয়ার' দিকে ব্যবসাবাণিজ্যে বেরোত।
caravan, a company of traveller across the deserts.

নিরাপত্তার জন্য, একত্রে ভ্রমণকারী মরুযাত্রী দল।

পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত, মহম্মদ অনেক কষ্ট ও ক্লেশ স্বীকার করেছিলেন।

এরপরে মহম্মদ, 'খাদিজা' নাম্নী এক ধনবতী আর ব্যবসায়ী নারীর সংস্পর্শে আসেন। খাদিজা 'বিধবা' ছিলেন ! তার আগে খাদিজার কতবার বিবাহ হয়েছিল জানা যায় না। মহম্মদ তাঁর কাছে 'কাজ' নেন। খাদিজা,  মহম্মদের  চেয়ে প্রায় কুড়ি বছরের বড়ো ছিলেন। পরবর্তিতে খাদিজা মহম্মদকে বিবাহ করেন।
ততদিনে মহম্মদ অর্থনৈতিক ভাবে, ভালো অবস্থায় পৌঁছে যান !

মহম্মদ, একেশ্বরবাদ প্রচার করেন যখন তাঁর বয়স চল্লিশ বছর। তার মানে তখন ৬১০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। মক্কাবাসিরা, মহম্মদের 'একেশ্বরবাদ' মানতে চায়নি। ফলে, মারামারি হানাহানি কাটাকাটির উপক্রম হয়েছিল।
নিজের প্রাণ বাঁচাতে মহম্মদ মক্কা থেকে মদিনায়  পালিয়ে গেলেন, মরুভূমির রাস্তায়। সেটা ৬২২ খ্রিস্টাব্দ।
একথা জানতে ভুলবেন না মহম্মদের মত জাঁদরেল লোকও পালিয়ে বেঁচেছিলেন !
সেই সময়কে মনে রাখার জন্য পরবর্তিতে, সেই সময় থেকে 'হিজরী' ক্যালেণ্ডারের শুরু হয়।
হিজরী ক্যালেণ্ডার, পলায়মান ব্যক্তির পলায়নের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়।

ইসলামের 'একেশ্বরবাদ' আর কিছু নয়,  আমাদের 'ব্রহ্ম'বাদ। যেটা বেদান্তসারের,  উপনিষদ্-এর মূল কথা !

ইসলামের 'কাবা', ওটা 'প্রাচীন শিবমন্দির' ছিল !
মারামারি হানাহানি, মন্দির লুঠপাটে, কালো রঙের  'শিবলিঙ্গ'টি ভেঙ্গেচুড়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে !
কিন্তু কালো রঙের  'সতীপীঠ'টি  অক্ষত  থেকে  গেছে !
'লিঙ্গপীঠ' আসলে ক্লীবলিঙ্গ !
'লিঙ্গবেদি'  'স্ত্রীলিঙ্গ' !
এখনকার ধার্মিক মুসলমানেরা 'মক্কায়' 'হজ'-এ গিয়ে,  ঐ কালো রঙের  'লিঙ্গবেদি'টি, অর্থাৎ,  'সতীপীঠ'টি  'চুম্বন' করেন !
হজ-এ গেলে ওটা একটা অবশ্য কর্তব্য !
এই 'লিঙ্গবেদি'/'সতীপীঠ' চুম্বন, গৃহস্থালি পর্যায় পয্যন্ত সম্ভবত প্রসারিত হয়, ভালোবাসার আবেগ মথিত করার জন্য।

মহম্মদের  'ইসলামধর্ম'-এর প্রথম জয়যাত্রা শুরু,  'মক্কা'র  'পুরনো শিবমন্দির' দখল, যা আসলে প্রচুর লোকজন  অস্ত্রশস্ত্র সাথে নিয়ে,  বিনা বাধায়  'বলপ্রয়োগ' এবং  fear psychosis-এ দখল !
ঐ মন্দিরে  'মক্কা'র/'আরব'-এর অনেক স্থানীয় দেবদেবীর মূর্তি সংরক্ষিত/গচ্ছিত থাকত।
ঐসব  দেবদেবীর মুর্তিগুলো, সংখ্যায় তিনশোর ওপর,  চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হয়।

আত্মরক্ষার্থে এবং নিজ গোষ্ঠী বাড়াতে, মহম্মদ অস্ত্রধারণও করেন।

'কাবা' দখল নেওয়ার পর, সমগ্র আরব দেশ দখল করে নেন, মহম্মদ আর তার বাহিনী।
এবং ওখান থেকে ইসলামের জয়যাত্রার সূচনা হয়।

এর পরে মহম্মদের ইচ্ছা ছিল, সিরিয়া জয় করা।
কিন্তু তার আগেই, ৬৩২ খ্রীস্টাব্দের সফর চাঁদের বিশ তারিখে, অসুস্থ হয়ে দেহ রাখেন।
তখন মহম্মদের বয়স হয়েছিল ৬২ বৎসর।



* অতিরিক্ত সূত্র, 'সরল বাঙ্গালা অভিধান", পৃষ্ঠা ১০২৮- ২৯। আকাশ তথ্য। বিভিন্ন ইউ টিউব।



লিম্যারিক্



















                                           কবি ও প্রবন্ধকার প্রণব কুমার কুণ্ডু




লিম্যারিক‌্

পঞ্চপদী অর্থহীন ছড়ার স্তবক। যে কোন বিষয়ের ওপর,  অসম্ভব অদ্ভুত বিস্ময়কর  বিরক্তিকর বিষয়ের ওপর  ছড়া।

তুচ্ছ বা বাজে বিষয়ও লিম্যারিকের বিষয় বস্তু হয়ে ওঠে।

কখনও মনে হতে পারে লিম্যারিকের পুরোটাই বোকামো কিংবা খ্যাপামো।

মনে হতে পারে, কোনো হাবাগোবা বা বকাটে কেউ সেটা লিখেছে, অথবা লিখেছে কোন নির্বোধ বা মহামূর্খ।
কখনো লিম্যারিক হতে পারে হালকা রসের, কখনো বা হতে পারে শুধুই কৌতুক,  কিংবা রঙ্গকৌতুকে ভরা ।

আবার লিম্যারিকে তীক্ষ্ণ ব্যঞ্জনাপূর্ণ উক্তিও থাকতে পারে। অর্থাৎ শব্দের গূঢ়ার্থ বা আভিধানিক অর্থের বাইরেও ছড়াকারের অভিপ্রেত অনুযায়ী অন্য এক গূঢ় অর্থের দ্যোতনা ও তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।

লিম্যারিকে থাকতে পারে শ্লেষাত্মক শব্দ,  আবার একাধিক অর্থে একই শব্দের ব্যবহার, বা প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ, অথবা থাকতে পারে অন্য কোন অভাবনীয় সংযোগ সংস্রব।

তবে লিম্যারিকে গুরুগম্ভীর,  তাত্ত্বিক এবং সাত্ত্বিক তত্ত্ব, থাকবে না, এটা মেনে নেওয়াও ঠিক নয়।
কখনও কখনও নিম্যারিকের বক্তব্য অর্থবোধক  হয় না। আবার নির্দিষ্টভাবে অর্থবোধকও হতে পারে।
তবে অর্থবোধক না হলে, তা 'নিরর্থ' বা 'নিরর্থক' নয়।
স্রেফ মজা করার জন্যও লিম্যারিক্ লেখা হয়।
তবে অর্থ না বুঝলে, আমাদের অনেকের কাছে বোঝাটা ( to understand ),  'বোঝা'  ( burden } হয়ে দাঁড়ায় !

লিম্যারিক্-এর ইংরেজি উচ্চারণ  lim-er-ick,  লিম্-আর-ইক্। চলতি বাংলা ভাষায় 'লিমেরিক' লেখা হয়। সম্ভবত ইংরেজি 'নার্সারি রাইম' ( nursery rhyme ) থেকে এর উৎপত্তি।


লিম্যারিক্-এ কবিতার চরণ ছন্দে গ্রথন। ত্রিমাত্রিক,  তিন মাত্রাযুক্ত প্লুতস্বর,  ছন্দ।

শেষ মাত্রাটিতে বা শেষ স্বরধ্বনিটির,  শেষ প্রকাশভঙ্গিতে,  জোর দেওয়া হয়,  বা অন্য কোন কিছুর ঝোঁক থাকে। থাকে স্বরভঙ্গিতে বাচনভঙ্গিতে উচ্চারণভঙ্গিতে স্বরসঙ্ঘাতে ব্যঞ্জনা। কখনো ধ্বনির তীক্ষ্ণ তীব্রতা। কখনো উদাত্তকণ্ঠ।কখনো বা বিশেষ অর্থবোধক শব্দ থাকতে পারে। স্থানীয় ভাষা, কথ্যভাষার অক্ষররূপ,  টেনে নিয়ে আসা হয়।

অনেক সময় অশোভন অভদ্র ইতর বা অশ্লীল ইঙ্গিতও,থাকতে পারে।

অবার প্রস্তুতিহীন প্রস্তুতিতে, সমস্বরে,  ছন্দগঠিত হয় এবং যৌথভাবে, ঐকতানে, হাততালি দিয়ে,  'কোরাস' গাওয়া হয়।



লিম্যারিকে প্রথম দ্বিতীয় ও পঞ্চম পঙ‌্ক্তিতে সাধারণত অন্তত তিনটি করে ' শব্দ ' থাকতে পারে।

তৃতীয় ও চতুর্থ পঙ‌্ক্তিতে থাকতে পারে সাধারণত অন্তত দুটি করে 'শব্দ '।

লিম্যারিক্ কবিতায়  প্রথম পঙ্‌ক্তির সাথে দ্বিতীয় পঙ্‌ক্তির অন্ত্যমিল থাকে। যেমন ' ক '-এর সাথে ' ক '। তৃতীয় পঙ্‌ক্তির সাথে চতুর্থ পঙ্‌ক্তির অন্ত্যমিল থাকবে। যেমন ' খ '-এর সাথে ' খ '। আবার থাকবে প্রথম দুই পঙ্‌ক্তির সাথে শেষের পঞ্চম পঙ্‌ক্তিটির অন্ত্যমিল । এক্ষেত্রে যেমন  প্রথম পঙ্‌ক্তির ' ক '-এর সাথে  শেষ পঙ্‌ক্তির সম্ভাব্য ' ক '।

লিম্যারিকে তৃতী্য় ও চতুর্থ পঙ্‌ক্তি সাধারণভাবে  অন্য পঙ্‌ক্তিগুলোর চেয়ে আকারে ছোট হবে।

প্রথম দ্বিতী্য ও পঞ্চম পঙ্‌ক্তি  সাধারণভাবে  তৃতীয় ও চতুর্থ পঙ্‌ক্তির চেয়ে  আকারে বড় হবে।

অন্ত্যমিল। অর্থাৎ মিত্রাক্ষর বা মিতাক্ষর।  অর্থাৎ থাকবে এক শব্দের অন্ত্যের সঙ্গে অন্ত্যমিলবিশিষ্ট অন্য শব্দ। বা থাকবে সমধ্বনিযুক্ত শব্দ।

নির্দিষ্ট পঙ্‌ক্তিতে ' মিল ' দিতে হবে বা ' মিল ' খুঁজে নিতে হবে। থাকবে ধ্বনি সাদৃশ্য।

কখনো ধ্বনি পরম্পরা বা ধ্বনি সঙ্গতি বজা্য় রেখে  নিনাদিত হতে হবে।

ছন্দে সমান তাল বা মাত্রা রাখতে হবে।

ছন্দঃপূর্ণ ছান্দস  সমতালের উল্লিখিত উপায়িভূত কবিতাই এক ধরণের বিশেষ ছড়া  এবং সেই সবিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ  ছড়াই, কেতাবি ভাষায়, লিম্যারিক্। 


অন্যরকম ভাবেও লিম্যারিক্ লেখা হয়।

ইংরেজিতে syllable ( সিল্যাব্‌ল ) বলে একটা শব্দ আছে।

উচ্চারণের সময় জিব নাড়ানোর গতি না বাড়িয়ে, একবারেই উচ্চারণ করা যায় এমন শব্দ বা শব্দাংশ, একস্বরবিশিষ্ট শব্দ বা শব্দাংশ সিল্যাব্‌ল।

অনেক লিম্যারিকে প্রথম দ্বিতীয় ও পঞ্চম পঙ্‌ক্তিতে সাধারণত আট বা নয় সংখ্যক সিল্যাব্‌ল থাকে।

তৃতীয় ও চতুর্থ পঙ্‌ক্তিতে সাধারণত থাকে পাঁচ বা ছয় সংখ্যক সিল্যাব্‌ল ।

এক সময়ে লিম্যারিক্ লেখা হত

প্রথম পঙ্‌ক্তি এই রকম ভাবে

' একদা কোন এক সময়ে................'

বা

' এক যা ছিল রাজা......................'



লিম্যারিক্ লেখার যে ধারণাগুলো দেওয়া হয়েছে,   অনুরূপ লিম্যারিক্ লেখা  কবির ধৈর্য সাপেক্ষ ।

জ্ঞান এবং বিচক্ষণতার প্রভায় তা বিকসিত হতে হবে ।

লিম্যারিক্ ছড়াকারকে যথার্থ আগ্রহী ও প্রতিশ্রুতিবান হতে হবে।

বাংলায় একটা বহু প্রচারিত বহুল শ্রুত ছড়ার উদাহরণ দিচ্ছি--

এটিকে লিম্যারিক্ হিসাবে গ্রহণ করা যায় !


' তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা

কোলা ব্যাঙের ছা

খায় দায়

গান গায়

তাইরে নাইরে না ! '


কিস্তিতে কিস্তিতে আলোচনায়
লিম্যারিক্ সম্বন্ধে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে !

তবে বাস্তবিক ক্ষেত্রে,  অত বাঁধাধরা নিয়মকানুন এবং গৎ- এর গতিধারার মধ্যে থেকে লিম্যারিক্ লেখা কষ্টসাধ্য !

তাই ছড়াকারেরা,  লিম্যারিক্-লিখিয়েরা,  লিম্যারিক্ লেখার ক্ষেত্রে,  তাদের বিচারবিবেচনায়  একটা মধ্যবর্তী পন্থা বার করে নেন ! 

এটা বলা হয়, প্রথম লিম্যারিক্-জাতীয় কবিতা লেখা হয়েছিল ল্যাটিন ভাষায় !

ইংরেজি তেরোশো শতাব্দতে।

সেটা ছিল একটা প্রার্থনা সঙ্গীত।

লিখেছিলেন থমাস অ্যাকুইন্যাস  ( Thomas Aquinas. )।

তখনও লিম্যারিকের নামকরণ হয়নি !

লিম্যারিক্ ছিল অনামা। 


' লিম্যারিক্ '-এর নামকরণ করা হয়েছিল  'ইরিল্যাণ্ড'-এর ( আয়ারল্যাণ্ড-এর  ),   'লিম্যারিক্' নামক জনপদের নাম অনুসারে। লিম্যারিক্ একটি ইংরেজি শব্দ। বানান  Limerick.। শব্দটি বাংলায় গৃহীত হয়েছে। তবে Limerik-এর সঠিক বাংলা বানান নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক আছে।

লিম্যারিক আসলে ছোট কবিতা। পাঁচ লাইনের কবিতা।

ফ্রান্সের সৈন্যদলের আইরিশ সৈন্যরা, ঐ লিম্যারিক্  'সামগান'-এর মতো সুর দিয়ে,  'জয়গান'-এর মতো, সুর তুলে গাইত।

লিম্যারিক্, ছোটখাট পাঁচ লাইনের 'গীতি কবিতা"।

লিম্যারিক্, শুরুতে ছিল, হাস্যরসাত্মক ছোট ছোট গীতি কবিতা। লিম্যারিকের অর্থ অনেক সময় 'দ্যোতনাযুক্ত'।

প্রথম 'লিম্যারিক'-এর  নাম ব্যবহার করা হয়েছিল, ইংরেজি আঠারোশো আশি সালে, কানাডার একটি খবরের কাগজের সৌজন্যে।


লিম্যারিক্ সম্বন্ধে বলা হয়েছিল, কিছু লিম্যারিক‌্  'বলা'  হবে, যেখানে শুধু মহিলারা থাকবেন ।

কিছু লিম্যারিক্ বলা হবে, যেখানে মহিলারা অনুপস্থিত।

কিছু লিম্যারিক্ বলা হবে, যেখানে খ্রিস্টধর্মের বা অন্য ধর্মের যাজকমণ্ডলী উপস্থিত থাকবেন।

কিছু লিম্যারিক্, আলাদাভাবে লেখা হবে শিশুদের জন্য।

কিছু ছোটদের জন্য।

আঠারোশো  খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে, লিম্যারিকের প্রচলন সাহিত্যে শুরু হতে থাকে।

পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন, এড‌ওয়ার্ড লিয়ার  ( Edward Lear. )।

লিম্যারিক্ জনপ্রিয়তা পায় ইংল্যাণ্ডের ঐ এড‌ওয়ার্ড লিয়ার ( Edward Lear )-এর প্রচেষ্টায় ।

তিনি ইংরেজি আঠারোশো  ছেচল্লিশ সালে লিম্যারিকের ওপর বই লেখেন,  ' এ বুক অফ ননসেন্স' ( A  Book  Of  Nonsense  ) !

সেই সময়ে সেই বই-এর দুটি অতিরিক্ত সংস্করণও  প্রকাশিত হয়েছিল।


এখন প্রশ্ন থেকে যায়,  অন্ত্যমিল ছাড়া কি লিম্যারিক্ হবে না ?

পরিবর্তনশীল জগতে সবই পরিবর্তনশীল।

কিছুই অপরিবর্তনশীল অচলায়তন নয় !

তাহলে অন্ত্যমিলবিহীন লিম্যারিক্ হবে না কেন ?

কেউ যদি অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিম্যারিক্ লেখেন, পাঠক-পাঠিকারা, অন্যরা,  তা মেনে নেবেন ?

নয়া প্রজন্মের লিখনপটু লিমেরিক-লিখিয়ে বুলবুল-বুলবুলিরাই,  শেষ কথা বলবেন !



এটা জানা যায় যে Shakespeare, Kipling, Eliot  এঁরাও লিম্যারিক্ জাতীয়  'কবিতা' লিখেছিলেন ।

সত্যজিৎ রায়ের নিজস্ব ঢঙে, ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা একটা লিম্যারিক্--

" কেনারাম ব্যাপারীর ভৃত্য
বায়সের সাথে করে নৃত্য।
লোকে বলে, 'এইভাবে
কাকটার মাথা খাবে।
ঢং দেখে জ্বলে যায় পিত্ত'।  "

সত্যজিৎ রায় লিম্যারিক্  লিখতেন, আবার তাঁর  মতন করে,  ইংরেজি থেকে স্বচ্ছন্দে বাংলায় অনুবাদ করতেন !

লিম্যারিক্,  ছোট পদ্যের, পাঁচ লাইনের পদ্যের, বিশেষ ধরণের পংক্তিসাপেক্ষ রচনা শৈলী।

তবে ভবিষ্যতে, লিম্যারিকের পাঁচটি লাইনই থেকে যাবে।

অন্যসব নিয়ম-নীতি, রীতি-নীতি, যুগের সাথে পালটে যাবে !

এ ব্যাপারে আমার লেখা একটি লিম্যারিক্--


লিম্যারিকের পাঁচটা লাইনই থেকে যাবে।
অন্যসব নিয়ম-নীতি রীতি-নীতি বদল হবে !
যুগের সাথে পালটে যাবে !
হয়তো বা সবশুদ্ধই  পালটি খাবে !
তবে কিছু রক্ষণশীল, গোঁড়া মানুষজন থেকেই যাবে !


যে কোন ছড়ায়, কবিতায়, লিম্যারিক্-এ, আসলে  'ভাব'ই হচ্ছে, আসল। 'ভাব' না থাকলে, অনেক কিছুরই অভাব দেখা যায়।

শুধু 'ফাজলামো' ছড়ায়, চাটুকারেরা দলছাড়া হলে, ছড়াকার/লিম্যারিক্-কার,  আর পাত্তা পাবে না !

এক প্রাণির সাথে, আরেক প্রাণির সঙ্গম ঘটিয়ে, তাদের বাচ্চা প্রসব করিয়ে, নতুন নামকরণ করিয়ে, 'বাহবা' দু'চারদিন পাওয়া যেতে পারে, তবে তা চিরকালীন নয় !

এটা কোন প্রগতিবাদী সংস্কারও নয় !


'লিম্যারিক্'  নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছু 'কাজ' করেছি।
তার ফলশ্রুতিতে, আমি, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায়, এখন পর্যন্ত, ২৯৪টি লিম্যারিক্  লিখে ফেলেছি।
এক থেকে একশোটি লিম্যারিক্, কথায় ক্রমিক সংখ্যায়, 'এক' দুই...ইত্যাদি করে একশো পর্যন্ত টেনে নিয়েছি। তারপর ১০১ থেকে শেষ পর্যন্ত, অঙ্কে, যেমন ১০১, ১০২ প্রভৃতি ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছি।

আমি 'জোড়া' লিম্যারিক্ও লিখছি।
জোড়া লিম্যারিক-এ, এক-এর সঙ্গে দুই-এর 'ভাব' সদৃশতা থাকছে।

এখন পর্যন্ত, একটা মাত্র  'ত্রয়ী' লিম্যারিক্ লিখেছি।
ওখানে আলাদা আলাদা তিনটি লিম্যারিক্, ভাবের দিক থেকে সুসঙ্ঘবদ্ধভাবে,  সাযুজ্যপূর্ণভাবে,  রয়েছে।

লিম্যারিক্ লেখার সময়, ছন্দের মিল-এর চাইতে, ভাব-ভাবনায় গুরুত্ব দিয়েছি।

যেটা কষ্ট না করে, স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ ভাবে, সাবলীল গতিতে লেখা যায়, সেই চেষ্টাই করেছি।

আমার একটা লিম্যারিক্ 'চতুর্থী' আছে। চারটে লিমেরিক একসাথে।
আমরা যে লিম্যারিক,  শব্দটা নিয়েছি, তা ইংরেজি শব্দ, LIMERICK-থেকে নিয়েছি।
'Webster' যে ভাবে শব্দটি উচ্চারণ করিয়েছে, তা, lim-er-ick.।
বাংলা ভাষায় উচ্চারণটা কেমন হবে, 'লিমেরিক' না  'লিম-আর-ইক'  না  'লিম্যারিক্' হবে, তা ভাষাবিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে নিরুপণ করতে পারবেন।
আমার ব্যক্তিগত ধারণায়, উচ্চারণটা, 'লিম্যারিক‌্' হওয়াই যুক্তিসঙ্গত।

তবে লেখালেখির জগতে, কবিতার জগতে, ছড়ার জগতে, একজন  'লিম্যারিক্-কার' হিসাবে, আমার মতামতটা শুধু উপস্থাপনা করলাম

মতামতটা নেওয়া, ধরে রাখা, শুধু পত্রিকা সম্পাদকের একার ব্যাপার নয় ! ব্যাপারটা সকল লিম্যারিক্  লিখিয়েদের, পাঠক-পাঠিকাদের,  সমবেত দায়িত্ব।
আমার কাছে 'সংসদ'-এর ইংরেজি-বাংলা  dictionary আছে। ওরা উচ্চারণটা দেখিয়েছে "লিম্যারিক্"।

কে প্রথম  'লিমেরিক' বানান লিখল, আর ওভাবে বংশপরস্পরায় চলে গেল, তা আমার দেখবার নয় !

বানান আর উচ্চারণটা যদি ভুল হয়, তবে, তা সংশোধন করে নেওয়া উচিত !

আমি অবিশ্যি, ছোট পাঁচ লাইনের কবিতাকে লিম‍্যারিক্ আখ্যা দিতে চাই।

তবে লাইনের দৈর্ঘ্য ফিতে দিয়ে মেপে নয়, অন্তমিলও স্বাভাবিক ভাবে না এলে' জোর খাটানো যাবে না ।

তবে কোন ভাবেই লিম্যারিকের মূল ভাবের সাথে, compromise করাও যাবে না।


আমার লেখা কয়েকটি লিম্যারিক্ তুলে ধরলাম--

 

                                                                             লিম্যারিক্ 


যৌনতা
মৌখিক ঐতিহ্যের অংশভূত নয়।
তবু যৌনতা মৌখিক ঐতিহ্যের অঙ্গীভূত হয়ে যায় !
চোখ বন্ধ রাখে।
মন তাকায়।



জোড়া লিম্যারিক্

( এক )

একবার মুক্তি হলে
অাত্মবীজের বীজ
তার আধার
সব
নষ্ট হয়ে গোল্লায় যাবে !

( দুই )

তখন আত্মাকে
পথে-ঘাটে
সহজেই
কুড়িয়ে পাওয়া
যাবে !



ত্রয়ী লিম্যারিক্


 ( এক )

চক্রবাক চক্রবাকী
দিনের বেলায় মিলিত হয় !
সারাদিন ধরে চলে খুনসুটি !
কেবল রাত্রে ছাড়াছাড়ি থাকে
পাখি দুটি !

( দুই )

চক্রবাক মিথুন   চক্রবাক মৈথুন
সারারাত বিচ্ছিন্ন থাকে
সূর্যোদয়ে মিলিত হয় !
কারে কি কই ?
ও কথা কি কইতে হয় ?

( তিন )

চক্রবাকী বধূ
যদি হয় আপনার
জানবেন
কোন কৌতূহল নেই আমার
সেকথা জানার !





লিম্যারিক্  চতুর্থী

( এক )

সূক্ষ্ম শরীরের কোষত্রয়াত্মক
শরীর-আত্মা-আত্মক !
প্রাণময়কোষ।
বিজ্ঞানময়কোষ।
মনোময়কোষ।

( দুই )

প্রাণ দিয়ে
কর্ম করবে।
তাই পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়ের সঙ্গে
প্রাণ
প্রাণময়কোষ।

( তিন )

বুদ্ধি দিয়ে
জ্ঞান সঞ্চয় করবে।
তাই পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়ের সঙ্গে
বুদ্ধি
বিজ্ঞানময়কোষ।

( চার )

মন দিয়ে
কর্ম করবে।
তাই পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়ের সঙ্গে
মন
মনোময়কোষ।



শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৭

সহজকর্তাভজা সম্প্রদায় আউলচাঁদ ( গদ্যরচনা ) [ এক ]







                       কবি প্রাবন্ধিক প্রণব কুমার কুণ্ডু'র ছবি 


লিমেরিক-ছড়াকার   প্রণব কুমার কুণ্ডু


সহজকর্তাভজা সম্প্রদায় আউলচাঁদ  ( গদ্যরচনা )  [ এক ]


চৈতন্য সম্প্রদায়ের মতো, ঐ রূপ, কিন্তু ভিন্ন শাখা সম্প্রদায় !

প্রবর্তক 'আউলচাঁদ'।
যিনি 'উদাসীন' হিসাবে সম্যক প্রসিদ্ধ ছিলেন।

সামগ্রিকভাবে, এদের 'কর্তাভজা' সম্প্রদায় বলে অভিহীত করা হত।

আউলচাঁদের সম্প্রদায়, আসলে বৈষ্ণব সম্প্রদায়, তবে তাঁরা আলাদাভাবে ভগবান বিষ্ণুর, কিংবা শ্রীকৃষ্ণের বা মহাপ্রভু গৌরাঙ্গের পূজা বা অর্চনা করত না !

তাঁদেরটা ছিল মূলত সামাজিক নীতি পরায়ণ সম্প্রদায় !

আউলচাঁদের গুরু, নামে 'মহাশয়', ওদের প্রথম ও প্রধান মন্ত্র, 'গুরুসত্য'।

আউলচাঁদ সম্প্রদায়ের কা্ছে, 'গুরু'ই পরমেশ্বর !

আউলচাঁদের শিষ্যেরা, আউলচাঁদকে মনে করত, 'ঈশ্বরের অবতার'।

আর ভাবত, 'কৃষ্ণচন্দ্র' 'গৌরচন্দ্র' আর 'আউলচন্দ্র', তিনে মিলেই 'এক'। আর এক-এক জন, একেই তিন জন !

অধুনা নদিয়া জেলার কল্যাণীর ঘোষপাড়াকে কেন্দ্র করে, আউলচাঁদের আখড়া গড়ে ওঠে।

ঐ ঘোষপাড়া নিবাসী সদগোপ রামশরণ পাল ছিল,কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রচারক।

ওদের মূল বক্তব্য
'কর্মকরো তবে বাক্যকর্ম নয়'।
'বাতেলা দিও না'।
'শুধু কর্তব্য কাজ করো'।

কর্তাভজা সম্প্রদায়ের শিষ্যদের মধ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকত।
যেমন
পরস্ত্রীগমন
পরস্ত্রীগমনে ইচ্ছা
মনে বা মনে মনে বাজে কাজ করার ইচ্ছা
মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি।

ওদের সাধন ছিল, 'প্রেমানুষ্ঠান'। ওটাই ছিল প্রধান সাধন।

তাঁদের মতে, তাঁদের 'মন্ত্রজপ'-এ, প্রেমানুষ্ঠান সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

একমাত্র, 'বিশ্বকর্তা'র ভজনাই তাদের ধর্ম।

আউলচাঁদ কৌপীন পরতেন। সাদাসিধা থাকতেন। দরকার পড়লে গায়ে 'খেলকা' কাঁথা দিতেন।

আউলচাঁদ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন।

উনি বাংলাভাষী ছিলেন।
সরল সহজ বাংলা কথায় উনি উপদেশ দিতেন।

সকলের হাতের রান্না খেতেন।
জন্মসূত্রে তিনি হিন্দু ছিলেন, না মুসলমান ছিলেন, সেকথা সঠিকভাবে জানা যায় না।

তবে তিনি হিন্দুপন্থায় ধর্মকর্ম প্রচার করতেন ।



*  সূত্র 'বঙ্গীয় শব্দকোষ', পৃষ্ঠা ৫৫৬।

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

কালোটাকা ( গদ্যরচনা )







                      কবি প্রাবন্ধিক প্রণব কুমার কুণ্ডু'র ছবি 


লিমেরিক-ছড়াকার   প্রণব কুমার কুণ্ডু








কালোটাকা  ( গদ্যরচনা )


মোদিজি !

আমার মনে হয়, কালো টাকার বড় বড় অঙ্কের গ্রহণীয় গ্রহীতারা, বিভিন্ন হিন্দু ধর্ম প্রতিস্থানগুলি !

কারণ শাস্ত্রের যা বক্তব্য,  তা বিশ্লেষণ করলে,  একথা জানা যাবে,   যে টাকা টাকাই, যে কোন  source থেকে,  তা যে কোন ভাবেই আসুক না কেন ( ! ), তা নেয়া যাবে বা নেয়া হবে !

'সোনা'র ব্যাপারেও তাই ! ডাকাতি করা গয়না, অলংকার, গয়নাগাটি, নানাবিধ অলংকার ও  অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রীও, নেওয়া যাবে !

মোদিজি !

এই সব ব্যাপারে, আপনি কি সাহসী হবেন ?  বা  সাহসী হতে পারবেন ?

দেখা যাক !

বিদ্যা-অবিদ্যা ( গদ্যরচনা )


বিদ্যা-অবিদ্যা  ( গদ্যরচনা )

                           প্রণব কুমার কুণ্ডু







বিদ্যা-অবিদ্যা  ( গদ্যরচনা )


'বিদ্যা'
যখন আমরা শিখি,  তখন বিদ্যার মধ্যে,  লুকনো থাকা,  'অবিদ্যা'র  বিদ্যা  শেখার  ওপর,  আমাদের  ঝোঁক  থাকে  বেশি  !

সেই অবিদ্যার প্রভাবে, যেমন আমরা বিদ্যা শিখি, তেমন আবার অবিদ্যাও শিখি !

অবিদ্যাই আমাদের জীবনে বেশি প্রভাব বিস্তার করে !

শিক্ষার  'বিদ্যা অংশ', আমরা যত্ন করে 'তাক'-এ তুলে রাখি !

অবিদ্যা নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করি !

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৭

গর্ভাধান ( গদ্যরচনা )





কবি প্রণব কুমার কুণ্ডু'র ছবি 


লিমেরিক-ছড়াকার   প্রণব কুমার কুণ্ডু






গর্ভাধান  ( গদ্যরচনা )


সংস্কার।

হিন্দুদের, দশরকমের শাস্ত্রীয় সংস্কার-অনুষ্ঠান আছে।

তার মধ্যে একটি পড়ে 'গর্ভাধান' !

এখন কতগুলো হিন্দু পরিবারে, 'গর্ভাধান'  নামক শাস্ত্রীয় সংস্কার, মানা হয় ?

'গর্ভাধান' ছিল,  'দ্বিজাতি'র অবশ্য কর্তব্য।

'দ্বিজাতি', শাস্ত্রমত অনুযায়ী, যারা  'পৈতে'  ধারণ করতে সক্ষম। তাদের 'উপনয়ন' হয়।
যেমন 'ব্রাহ্মণ'  'ক্ষত্রিয়'  'বৈশ্য' জাতি।

শাস্ত্র,  'শূদ্র'দের ( শূদ্রজাতিভূক্ত মানুষদের ), পৈতে ধারণ করার  ক্ষমতা  দেয় নি !

কাজেই,শূদ্ররা, 'দ্বিজাতির' মধ্যে পড়ে না।


পৈতে। পৈতা। পইতা। পইতে।
যজ্ঞসূত্র। উপবীত। কথ্যে, 'পইতা/পইতে'।


উপনয়ন।
যজ্ঞোপবীত ধারণের সংস্কার। পৈতে ধারণের সংস্কার।
প্রাচীন কালে,  'বেদ' অধ্যয়নের জন্য  'গুরু' গৃহে নিয়ে যাওয়া হত।
এখন  সাধারণত গৃহস্থের কাছে  'যজ্ঞ' প্রায় উঠেই গিয়েছে। শুধু, কোথাও কোথাও যজ্ঞের এক  miniature সংস্কার থেকে গেছে !


দ্বিজ। দ্বিজন্মা।
একবার মায়ের 'গর্ভ' থেকে, আর একবার  'উপনয়ন'-এর  ফলে 'নবজন্ম' লাভ !

ব্রাহ্মণ ছাড়াও, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যরাও, পৈতে ধারণের অধিকারী।

তবে এখন সাধারণত ক্ষত্রিয় এবং  বৈশ্যরা পৈতে ধারণ করে না।
অনেক ব্রাহ্মণও, হয়তো একসময়ে তাদের  'উপনয়ন' হয়েছে,  কিন্তু পরবর্তিতে,  'পৈতে' ধারণ করে না।

'দ্বিজাতিতত্ত্ব', আবার, আলাদা !
ভারতে হিন্দু ও মুসলমান, এই দুই সম্প্রদায়, তারা নাকি, ভিন্ন জাতির  ( ! ) লোক ! এবং তাদের বিশেষত, মুসলমানদের ক্ষেত্রে, ভিন্ন রাষ্ট্র সৃষ্টি করা, এবং সেখানে, 'ইসলামি তত্বে' বিশ্বাসী, 'ইসলামিক রাষ্ট্র' গঠন করা !
'আল্লাহ'-কে  'আবাহন' করে, আল্লাহকে,  সেই রাষ্ট্রের,  সব চেয়ে উঁচু পদে,  প্রতিষ্ঠিত করা !

গর্ভাধান।
'গর্ভাধান' আসলে, 'নিষেক' ক্রিয়া।
'গর্ভ' উৎপাদন করা। গর্ভের সন্তান উৎপাদন করা। ওটা,  'ভ্রূণোৎপাদন'।  ওটি গর্ভের একটি  'আধানসাধ্য কর্ম'।

আধান। স্থাপন। গর্ভাধান।  নিষেক !
উৎপাদন। জনন।
গর্ভে গ্রহণ। গর্ভে ধারণ।

এটিকে ধরে নেওয়া হত, বিবাহিত  'স্ত্রীলোকের' 'দ্বিতীয়' বিবাহরূপ সংস্কার।

গর্ভ।

গর্ভাশয়ে সন্তান ধারণ।  'ভ্রূণ' উৎপাদন। উদরস্থ সন্তান। প্রসূতি 'অন্তঃসত্ত্বা' আবস্থায় থাকে। কয়েক মাস পরে, বাইরে থেকে, গর্ভলক্ষণ বোঝা যায়। গর্ভকাল  gestation period.

গর্ভলক্ষণ।
গর্ভসূচক চিহ্ন।
যেমন, উদরের স্ফীতি।
মুখের পাণ্ডুরতা।
চুচুকের  'শ্যামিকা'।
অরুচি। ইত্যাদি ইত্যাদি !

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

প্রাণশক্তি ইচ্ছাশক্তি ( গদ্যরচনা )



















                     লেখক প্রণব কুমার কুণ্ডু

Image may contain: 1 person, standing and eyeglasses
















 প্রাণশক্তি ইচ্ছাশক্তি  ( গদ্যরচনা )



আমাদের 'প্রাণশক্তি' বা,  'জীবনীশক্তি'র দরুণ, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চলে।
 নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মানুষ বেঁচে থাকে।
মানুষ বেঁচে থাকে, বাতাসের অক্সিজেনের প্রভাবে। তার জন্য, শরীরে  metabolism-এর ( বিপাকের ) কাজ, প্রাথমিক ভাবে চালু থাকে।

আমাদের  'ইচ্ছাশক্তি'র   দ্বারা, মনের  'ইচ্ছেগুলো' জেগে ওঠে। ভোগ-আকাঙক্ষা, কামনা-বাসনা, কাজ করবার ইচ্ছা ইত্যাদি জন্মায়।
ইচ্ছাশক্তি, মূলত,  মনের দ্বারা পরিচালিত হয়।

শাস্ত্রের ধারণায়,  'প্রাণশক্তি' কর্মফল দ্বারা প্রাপ্ত। সেই 'প্রাপ্ত'র প্রাপ্তি, বেঁচে থাকা। বেঁচে থেকে,  'জীবন্ত' থাকা। life full  এবং cheerful  থাকা।

যেহেতু,  'প্রাণশক্তি', কর্মফল দ্বারা প্রাপ্ত, তাই,  প্রারব্ধের ক্রিয়ায় আটকিয়ে গিয়ে, সাধারণভাবে,  'প্রাণশক্তি'র স্থিতি অপরিবর্তনীয় !

'ইচ্ছাশক্তি'র ফলশ্রুতি কিন্তু  'পুরুষকার'। এই 'পুরুষকার' গুণ কিন্তু, 'পরিবর্তনশীল'।
সেটা  'পুরুষকার'-এর দৌলতে, 'পুরুযকার'-এর জন্য উদ্যোগ-উদ্যমে, উন্নতশীল পরিবর্তনের,  'পুরস্কার'।
'পুরুষকার', পরিবর্তন করা যায়। পরিবর্তন করাও হয়। পরিবর্তন, করা যেতেও পারে !
'পুরুষকার', পৌরুষ। দৈব নিরপেক্ষ প্রযত্ন বা প্রচেষ্টা।

'প্রাণশক্তি',  ধীরে ধীরে, নিত্যক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ক্ষয় হতে হতে, একসময়  একদম  ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেলে,  মৃত্যু আসে !

সত্যি সত্যি যারা  'জীবন্মৃত',  তাদের  'ইচ্ছাশক্তি',  একদম  'নষ্ট' হয়ে যায় !
অন্যদের ক্ষেত্রে, 'ইচ্ছাশক্তি' জাগ্রত থাকে।

'প্রাণশক্তি' বজাব থাকতে থাকতে, যদি  'ইচ্ছাশক্তি' দূর হয়ে যায়, তবে সেই ব্যক্তি,  'জীবনমুক্ত' !
বেঁচে থাকাকালীন এই 'মুক্তঅবস্থা', ( 'মুক্ত'-তা ), নয় পুরোপুরি মুক্ত ! শুধু 'ইচ্ছা' মুক্ত !

আর 'প্রাণশক্তি' শেষ হলেও, যদি ইচ্ছাশক্তি থেকে যায়, তবে সেই ইচ্ছাশক্তির  'ইচ্ছা'র প্রভাবে, মানুষ নাকি  'ফের' জন্মগ্রহণ করে ! ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকলে, ফের জন্মগ্রহণ করাই নাকি 'নিয়তি' !

কাজেই মৃত্যুর পরে,  'চূড়ান্ত' মুক্ত সে হতে পারে না !
'মুক্ত-তা' তাঁকে,  'শুচিস্মান'  করে না !

পুনর্জন্মে বা নবজন্মে, নতুন শরীরে, নতুন মনে,  নতুন বুদ্ধিতে, পুরনো 'ইচ্ছাশক্তি' সংস্কার রূপে নিয়ত বজায় থাকে এবং তার প্রভাব বিস্তার করে !

তবে , পুনর্জন্মে,  'প্রাণশক্তি' নতুন করে লাভ হয় !



*  সূত্র  'গীতা রসামৃত', পৃষ্ঠা ৪৫৩, গীতা প্রেস।

শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

অথো 'সংস্কার' কথা ( গদ্যরচনা )


অথো  'সংস্কার' কথা


শরীরের অধিপতি জীবাত্মা।

এক শরীর ত্যাগ করে, অন্যশরীরের, সৃষ্টিসাধনার সময়,  সৃষ্টিশীল অবস্থার শুরুতেই,  জীবাত্মা,  সেই নতুন শরীরে, আশ্রয়গ্রহণ করেন।

এই আশ্রয়্গ্রহণ করার কালে, সেই আগের শরীরের, বা,  তারও আগের আগের শরীরের,  'মন  এবং  ইন্দ্রিয়সমুদয়ের সমবেত সংস্কারগুলি',  সঙ্গে নিয়ে যান।

জীবাত্মা, কখনোও, 'মন এবং ইন্দ্রিয়সমূহ', সঙ্গে নিয়ে, যান না।

ওটা ভুল ধারণা।

সেই ইচ্ছা বা ক্ষমতাও,  জীবাত্মার নেই।

জীবাত্মা সঙ্গে নিয়ে যান, কেবল মন এবং ইন্দ্রিয়গুলির, "সংস্কার" অংশগুলি।

কাজেই আমাদের আজকের সংস্কার, এই  জীবনের,  মনের,  এবং ইন্দ্রিয়গুলির সংস্কার, এবং, তার সঙ্গে সঙ্গে, পূর্ব পূর্ব জন্মের মনের, এবং ইন্দ্রিয়সমুদয়ের সংস্কারের সমাহার।

তবে  'সংস্কার', কি, বা,  কিবস্তু , তা, সঠিক ভাবে, জানা বা বোঝা যায় না।

সংস্কার, সম্ভবত, না-জানা  'স্মৃতিহেতু',  মনোবৃত্তির  গুণবিশেষ হতে পারে ! হতে পারে, পূর্ব বা পূর্ব পূর্ব জন্মের, কামনা-বাসনার প্রতিফলনের অঙ্গবিশেষ ! হতে পারে,  আগের  আগের  জন্মের,  বুদ্ধিগত প্রবৃত্তির ঝোঁক !

তবে, তাই বা হবে কেন ?

সংস্কার কি, বা কি বস্তু, তা, আপনারা, আপনাদের আপন আপন জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে, বোঝবার চেষ্টা করতে পারেন !

 আমার মতে, সংস্কারগুলোতে, গালগল্পের বাইরে, অন্য কোন গল্প  নেই !

'গালগল্প' বলতে, আমি, মনগড়া  কথা, বানানো গল্প, বা, বানানো বর্ণনা ইত্যাদি কথা, বোঝাতে চেয়েছি !

আমরা সচরাচর দেখে থাকি,  if you cannot convince a person,  confuse him/her.

সংস্কারের, 'সংস্কার' ওটাই !

confuse করা, এবং, ইচ্ছাকৃতভাবে, confuse করানো।

যাতে, ব্যক্তিবিশেষ, তাঁর জ্ঞানবিদ্যার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন।

অন্যদের হাতে, বিশেষত, ধর্মধ্বজাধারীদের হাতের,  ক্রীড়নক হন।  

শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৭

মা দুর্গার শ্রীচরণদ্বয়ের পাদুকা ( গদ্যরচনা )


মা দুর্গার শ্রীচরণদ্বয়ের পাদুকা  ( গদ্যরচনা )


দুর্গা পূজায়, অসুরের পায়ে, 'পাদুকা' আমি দেখেছি।

কিন্তু, মা দুর্গার পাদুকা ?

আলতা পরা, মা দুর্গার পাদুটি তো, পাদুকা ছাড়াই থাকে। মা দুর্গার ভক্তরা, যেখানে, পায়ে হাত দিয়ে,  'প্রণাম' করবে বলে।

মা দুর্গার পাদুকা কিন্তু আছে !

'শ্রীশ্রীচণ্ডী'তে  লেখা আছে !

মা দুর্গার পাদুকা জোড়া, বহুমুল্য মণিমাণিক্য দিয়ে রচিত ও সজ্জিত।

উত্তম রক্তচন্দন ও কুঙ্কুমের মিলিত লাল জলে ধোওয়া।

প্রস্তুত করেছে, এবং পরিষ্কার করে নির্মল করেছে, দেবাঙ্গনারা।

মণি।
দীপ্তশালী মূল্যবান পাথর। মানিক।

মানিক।
বহুমূল্য রত্ন।
মনিমাণিক্য।
বিবিধ রত্নাদি।

রত্ন।
মণিমাণিক্য ইত্যাদি। বহুমূল্য মণিমুক্তা।

কুঙ্কুম।
জাফরান বা জাফরান ফলের নির্যাস।
কুঙ্কুম, প্রসাধনী হিসাবে ব্যবহার হয়।

জাফরান, কুসুম ফুলের শুষ্ক কেশর।
জাফরানি রং হলদে রঙ। অন্য নাম  'পীত' রঙ।

কেশর।
ফুলের ভেতরের কেশতুল্য সূক্ষ্ম বস্তু। জাফরান।
কেশর জাফরান-এর রংবিশিষ্ট।
আনেক সময় বলা হয়, 'কেশরী' রং।


'দেবাঙ্গনা' হচ্ছে,  'দিব্যাঙ্গনা' বা দিব্যনারী। যেমন, অপ্সরা।


তবে, মা দুর্গার পাদুকা, কি চটি জুতো, না গোড়ালি সমেত পা-ঢাকা জুতো, তা আমি বলতে পারব না।

চটি জুতো, গোড়ালি খোলা থাকে, এমন জুতো। অর্থাৎ, গোড়ালির উপরিভাগ ঢাকা ধাকে না।

চটি জুতোয়, পায়ের পাতার উপরিভাগ-এর অনেক অংশ, বা  বেশিরভাগ অংশ,  ঢাকা থাকে না।  অর্থাৎ খোলা থাকে।



*  সূত্র  'শ্রীশ্রীচণ্ডী', গীতা প্রেস। পৃষ্ঠা ২০৩।

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৭

রামকৃষ্ণদেব ( গদ্যরচনা )



রামকৃষ্ণদেব  ( গদ্যরচনা )



রামকৃষ্ণদেবের হাতে আগুন তোলবার চিমটা,  কখনোও ছিল না।

রামকৃষ্ণদেবের মাথায় জটাজুটও কখনোও ছিল না।

রামকৃষ্ণদেবের গায়েও, কখনোও, শিবঠাকুরের মতন,  ভস্ম লাগানো থাকত না।

অথচ, তিনি কালীভক্ত ছিলেন।

কালীঠাকুরের স্বামী, শিবঠাকুরকে,  কি তিনি,অবজ্ঞা করতেন ?

শ্রীরামকৃষ্ণের,  কালীমায়ের সাথে কথা বলা, আলৌকিক ঘটনা।

কালীমাকে খাওয়ানোও, অলৌকিক।

কালীমাকে শাড়ি পরানো, তা অবিশ্যি হতে পারে।

কালীমায়ের ল্যাংটা ঘোচানো, তা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

শুধু শাড়ি কেন, শায়া ব্লাউজ কাঁচুলি, এগুলোও পরাতে পারেন।

এমনিতে তো কালীঠাকুর ল্যাংটাই। আমরা কালীপূজার সময়, নৈহাটিতে যত বড় বড় কালীঠাকুর দেখি, তা বলতে গেলে, সবই ল্যাংটা।

তবে উনি কালীমায়ের চরণতলে শুয়ে থাকা শিবঠাকুরকে, আন্ডারপ্যান্ট-ধুতি, গেঞ্জি-পাঞ্জাবি এগুলো, পায়ে চটি, পরাতেন কিনা,  জানা যায় না।

শিব ঠাকুরের হাতের কল্কেতে তামাকু সাজাতেন কিনা,তাও, বলতে পারব না।

তবে, তামাকু সাজালে, তাঁর হাতে সুগন্ধি তামাকের 'ভু ভু' গন্ধ লেগে যেত।

তবে যদি করে থাকেন, সেইগুলিই ছিল, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের  আত্মার অহংকার।


আর, অহংকার ছিল, নরেনের মতন শিক্ষিত ছেলেকে, হিপ্নোটাইজ করে বশীভূত করা।



তারপরে নরেনের গুরুদেব হওয়া।


সেটাও ছিল তাঁর  মাত্রাতিরিক্ত অহংকার।



শ্রীরামকৃষ্ণদেব, তান্ত্রিক মতে সাধনা করেছিলেন।

সাধনা করার পরে সেই অপূর্ব সুন্দরী, অল্পবয়সী যুবতি সাধিকাকে, আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।

ঐ না পাওয়া যাওয়াটাও ছিল,যুবক রামকৃষ্ণদেবের সত্যিকারের অহংকার।


রামকৃষ্ণ, মুসলমান ধর্মমতে সাধনা করেছিলেন।

তা করতে গেলে লিঙ্গমুণ্ডের ত্বকছেদন করা তো ছিল অবশ্যকর্তব্য।

তিনি কি তা করেছিলেন ?

তিনি যদি তা না করে থাকেন,ব্যথার ভয়ে, তবে তাও ছিল, রামকৃষ্ণদেবের আতঙ্কের অহংকার।








*  লেখার যোগসুত্র, 'স্বামী ভূতেশানন্দ'-এর, "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত- প্রসঙ্গ"।


হেনরিয়েটা এবং মাইকেল ( গদ্যরচনা )


হেনরিয়েটা এবং মাইকেল  ( গদ্যরচনা )



হেনরিয়েটা এবং মাইকেল পনেরো বছর ধরে একসাথে সংসার করেছিলেন।
আলাপ-পরিচয়ের সময় ধরে, কুড়ি বছর ধরে ছিল,  তাদের ভাব-তাদের ভালোবাসা। সম্পর্ক।


তবে মাইকেল হেনরিয়েটাকে বিবাহ করেন নি !


কিংবা হয়তো, বিয়ে করতে, রাজি হন নি।


আগের  স্ত্রী,  'রেবেকা'র সাথে, মাইকেলের, বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটেনি।


হেনরিয়েটা কি মাইকেলকে, বিবাহ করতে চেয়েছিলেন ?


তবে একসাথে ছিলেন।


হেনরিয়েটার চেয়ে মাইকেল ছয় বৎসরের বড় ছিলেন।
হেনরিয়েটা কবির সত্যিকারের সঙ্গিনী ছিলেন। হেনরিয়েটা বাংলা শিখেছিলেন।

হেনরিয়েটাকে, মাইকেল, সরাসরি 'স্ত্রী' বলে পরিচয় দিতেন। মাইকেল, তাঁর অন্তরে, হেনরিয়েটাকে, নিজের 'স্ত্রী' ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেন না।

হেনরিয়েটা-মাইকেলের প্রেম ছিল, সত্যিকারের " অমর প্রেম "।

বাস্তব জীবনে, মাইকেল,  অর্ধেক বাস্তব বিশ্বে থাকতেন, অর্ধেক স্বপ্নের জগতে বিচরণ করতেন।






গণেশ ( গদ্যরচনা )



গণেশ  ( গদ্যরচনা )




শিবপত্নী পার্বতী, নিজপুত্র গণেশকে, দুটি 'বর' দিয়েছিলেন।
'বর'।
দেবতার কাছ থেকে, লব্ধ অনুগ্রহ। আশীর্বাদ।
এক্ষেত্রে, গণেশ, মায়ের কাছ থেকে,  অনুগ্রহ  এবং আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।
'বর'-এর সাথে, 'বরাভয়'ও  সাধারণত সংযুক্ত থাকে।
'বরাভয়'।
আশীর্বাদের বা অভয়দানের ভাবযুক্ত, হাতের  আঙুল দ্বারা করণীয় বিশেষ ভঙ্গি, বা  'মুদ্রা'। 
আশীর্বাদ  ও  অভয়দান বা আশ্বাস দান।
'মুদ্রা'।
আশীর্বাদের সময়, বা উপাসনার সময়ে,  বিভিন্ন ভঙ্গিতে, করাঙ্গুলি বিন্যাস।

মায়ের কাছ থেকে পাওয়া, 'বর'।  এক।
সমস্ত দেবতাদের মধ্যে, গণেশ, সবার আগে পূজা পাবেন।

মায়ের কাছ থেকে পাওয়া, 'বর'। দুই।
গণেশকে, জীবনে কখনও দুঃখের সম্মুখীন হতে হবে না।

তাই, গণেশ ভক্তরা, ভুল করে, পা দিয়ে, গণেশের বাহন, ইুঁদুরকে পিষে দিলেও, কিংবা, গৃহিণীরা, ইঁদুরকে, বিষ দিয়ে মেরে ফেললেও, গণেশ একটুকুও  দুঃখ পান না ।

গণেশ বরং, তাঁর ভক্তরা যারা পা দিয়ে গণেশের বাহন ইুঁদুরকে পিষে দেয়, কিংবা সেই সব গৃহিণীরা,  যারা বিষ দিয়ে ইঁদুরকে মেরে ফেলে,  তাদের কিছুই বলেন না !

বরং নাড়ু খাবেন বলে, তাদের কাছ থেকে, হাত পেতে,  'নাড়ু' চান !



নাড়ু খেয়ে,  গণেশ, দারুণ মজা আর আনন্দ পান !




পরমাত্মা-জীবাত্মা ( গদ্যরচনা )


পরমাত্মা-জীবাত্মা  ( গদ্যরচনা )



পরমাত্মা  প্রকৃতিকে নিজের বশীভূত করে অবতাররূপে পৃথিবীতে আসেন।

জীবাত্মা প্রকৃতির বশীভূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন, আর, কর্মফল ভোগ করেন।

পরমাত্মা সর্বদাই নির্লিপ্ত।

জীবাত্মার নির্লিপ্ততার জন্য, 'সাধনা' নামক সাধন, করতে হয়।

তবে,  জীবাত্মার,  নির্লিপ্ততা ভাব আসে !



* সূত্র 'গীতা রসামৃত', পৃষ্ঠা ৪৬৪, গীতা প্রেস। গীতা ৪।১৪।








বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৭

পরমেশ্বরের আকুতি ( গদ্যরচনা )



পরমেশ্বরের আকুতি  ( গদ্যরচনা )


মানুষেরা যজ্ঞের দ্বারা দেবতাদের সংবর্ধন করো !

দেবতারা তোমাদের উন্নত করবেন !

তোমাদের মানোন্নয়ন হবে !

এইভাবে নিঃসার্থভাবে, পরস্পর পরস্পরের সংবর্ধন দ্বারা, মানুষদের এবং দেবতাদের পরমকল্যাণ হবে !

মানুষদের পরমকল্যাণ হলে, মানুষেরা দেবতায় উন্নীত হবেন !

দেবতাদের পরমকল্যাণ হলে, দেবতারাও, ঈশ্বরের  এবং পরবর্তিতে, পরমেশ্বরের উন্নত স্থিতিতে,  চলে যাবেন !

সকল দেবতারা, উন্নত স্থিতিতে চলে গেলে, আর দেবতাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না !

তখন দেবতাহীন হয়ে, আমাকে আপনাকে, দিন গুজরান করতে হবে !




*  সুত্র  'গীতা', ৩/১১।







মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

চাঁদের পেছন দিক ( গদ্যরচনা )







Image result for moon images
Image result for moon images
Image result for moon images
চাঁদের সামনের দিকের একগুচ্ছ ছবি। কোনোটাই চাঁদের পেছন দিকের ছবি নয় !
Image result for moon images
Image result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon imagesImage result for moon images



চাঁদের পেছন দিক

চাঁদের পেছন দিক অন্ধকার নয়।

সামনের দিকের চাঁদের মতোই সূর্যের আলোয় আলোকিত।

পৃথিবী থেকে চাঁদের পিছন দিক আমরা দেখতে পাই না।

চাঁদের পেছন দিকের প্রথম ছবি পাওয়া যায় সোভিয়েত আকাশযান 'লুনা-৩'  থেকে। দিনটা ছিল  ১৯৫৯ সালের ৭ই অক্টোবর।

মানুষের চোখে চাঁদের পেছন দিক প্রথম সরাসরি দেখা হয়, আমেরিকার  'অ্যাপোলো-৮' মিশনের চন্দ্রযান অভিযান থেকে।
তিনজন অভিযাত্রী সেই চন্দ্রযানে ছিলেন। সেটা  ১৯৬৮ সলের  ২১শে ডিসেম্বরের অন্যতম বলার মতো ঘটনা। অভিযাত্রীরা চাঁদের কক্ষপথ পরিভ্রমণের সময়, চাঁদের পেছন দিকটা দেখেন।