শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭

লিম্যারিক্



















                                           কবি ও প্রবন্ধকার প্রণব কুমার কুণ্ডু




লিম্যারিক‌্

পঞ্চপদী অর্থহীন ছড়ার স্তবক। যে কোন বিষয়ের ওপর,  অসম্ভব অদ্ভুত বিস্ময়কর  বিরক্তিকর বিষয়ের ওপর  ছড়া।

তুচ্ছ বা বাজে বিষয়ও লিম্যারিকের বিষয় বস্তু হয়ে ওঠে।

কখনও মনে হতে পারে লিম্যারিকের পুরোটাই বোকামো কিংবা খ্যাপামো।

মনে হতে পারে, কোনো হাবাগোবা বা বকাটে কেউ সেটা লিখেছে, অথবা লিখেছে কোন নির্বোধ বা মহামূর্খ।
কখনো লিম্যারিক হতে পারে হালকা রসের, কখনো বা হতে পারে শুধুই কৌতুক,  কিংবা রঙ্গকৌতুকে ভরা ।

আবার লিম্যারিকে তীক্ষ্ণ ব্যঞ্জনাপূর্ণ উক্তিও থাকতে পারে। অর্থাৎ শব্দের গূঢ়ার্থ বা আভিধানিক অর্থের বাইরেও ছড়াকারের অভিপ্রেত অনুযায়ী অন্য এক গূঢ় অর্থের দ্যোতনা ও তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।

লিম্যারিকে থাকতে পারে শ্লেষাত্মক শব্দ,  আবার একাধিক অর্থে একই শব্দের ব্যবহার, বা প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ, অথবা থাকতে পারে অন্য কোন অভাবনীয় সংযোগ সংস্রব।

তবে লিম্যারিকে গুরুগম্ভীর,  তাত্ত্বিক এবং সাত্ত্বিক তত্ত্ব, থাকবে না, এটা মেনে নেওয়াও ঠিক নয়।
কখনও কখনও নিম্যারিকের বক্তব্য অর্থবোধক  হয় না। আবার নির্দিষ্টভাবে অর্থবোধকও হতে পারে।
তবে অর্থবোধক না হলে, তা 'নিরর্থ' বা 'নিরর্থক' নয়।
স্রেফ মজা করার জন্যও লিম্যারিক্ লেখা হয়।
তবে অর্থ না বুঝলে, আমাদের অনেকের কাছে বোঝাটা ( to understand ),  'বোঝা'  ( burden } হয়ে দাঁড়ায় !

লিম্যারিক্-এর ইংরেজি উচ্চারণ  lim-er-ick,  লিম্-আর-ইক্। চলতি বাংলা ভাষায় 'লিমেরিক' লেখা হয়। সম্ভবত ইংরেজি 'নার্সারি রাইম' ( nursery rhyme ) থেকে এর উৎপত্তি।


লিম্যারিক্-এ কবিতার চরণ ছন্দে গ্রথন। ত্রিমাত্রিক,  তিন মাত্রাযুক্ত প্লুতস্বর,  ছন্দ।

শেষ মাত্রাটিতে বা শেষ স্বরধ্বনিটির,  শেষ প্রকাশভঙ্গিতে,  জোর দেওয়া হয়,  বা অন্য কোন কিছুর ঝোঁক থাকে। থাকে স্বরভঙ্গিতে বাচনভঙ্গিতে উচ্চারণভঙ্গিতে স্বরসঙ্ঘাতে ব্যঞ্জনা। কখনো ধ্বনির তীক্ষ্ণ তীব্রতা। কখনো উদাত্তকণ্ঠ।কখনো বা বিশেষ অর্থবোধক শব্দ থাকতে পারে। স্থানীয় ভাষা, কথ্যভাষার অক্ষররূপ,  টেনে নিয়ে আসা হয়।

অনেক সময় অশোভন অভদ্র ইতর বা অশ্লীল ইঙ্গিতও,থাকতে পারে।

অবার প্রস্তুতিহীন প্রস্তুতিতে, সমস্বরে,  ছন্দগঠিত হয় এবং যৌথভাবে, ঐকতানে, হাততালি দিয়ে,  'কোরাস' গাওয়া হয়।



লিম্যারিকে প্রথম দ্বিতীয় ও পঞ্চম পঙ‌্ক্তিতে সাধারণত অন্তত তিনটি করে ' শব্দ ' থাকতে পারে।

তৃতীয় ও চতুর্থ পঙ‌্ক্তিতে থাকতে পারে সাধারণত অন্তত দুটি করে 'শব্দ '।

লিম্যারিক্ কবিতায়  প্রথম পঙ্‌ক্তির সাথে দ্বিতীয় পঙ্‌ক্তির অন্ত্যমিল থাকে। যেমন ' ক '-এর সাথে ' ক '। তৃতীয় পঙ্‌ক্তির সাথে চতুর্থ পঙ্‌ক্তির অন্ত্যমিল থাকবে। যেমন ' খ '-এর সাথে ' খ '। আবার থাকবে প্রথম দুই পঙ্‌ক্তির সাথে শেষের পঞ্চম পঙ্‌ক্তিটির অন্ত্যমিল । এক্ষেত্রে যেমন  প্রথম পঙ্‌ক্তির ' ক '-এর সাথে  শেষ পঙ্‌ক্তির সম্ভাব্য ' ক '।

লিম্যারিকে তৃতী্য় ও চতুর্থ পঙ্‌ক্তি সাধারণভাবে  অন্য পঙ্‌ক্তিগুলোর চেয়ে আকারে ছোট হবে।

প্রথম দ্বিতী্য ও পঞ্চম পঙ্‌ক্তি  সাধারণভাবে  তৃতীয় ও চতুর্থ পঙ্‌ক্তির চেয়ে  আকারে বড় হবে।

অন্ত্যমিল। অর্থাৎ মিত্রাক্ষর বা মিতাক্ষর।  অর্থাৎ থাকবে এক শব্দের অন্ত্যের সঙ্গে অন্ত্যমিলবিশিষ্ট অন্য শব্দ। বা থাকবে সমধ্বনিযুক্ত শব্দ।

নির্দিষ্ট পঙ্‌ক্তিতে ' মিল ' দিতে হবে বা ' মিল ' খুঁজে নিতে হবে। থাকবে ধ্বনি সাদৃশ্য।

কখনো ধ্বনি পরম্পরা বা ধ্বনি সঙ্গতি বজা্য় রেখে  নিনাদিত হতে হবে।

ছন্দে সমান তাল বা মাত্রা রাখতে হবে।

ছন্দঃপূর্ণ ছান্দস  সমতালের উল্লিখিত উপায়িভূত কবিতাই এক ধরণের বিশেষ ছড়া  এবং সেই সবিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ  ছড়াই, কেতাবি ভাষায়, লিম্যারিক্। 


অন্যরকম ভাবেও লিম্যারিক্ লেখা হয়।

ইংরেজিতে syllable ( সিল্যাব্‌ল ) বলে একটা শব্দ আছে।

উচ্চারণের সময় জিব নাড়ানোর গতি না বাড়িয়ে, একবারেই উচ্চারণ করা যায় এমন শব্দ বা শব্দাংশ, একস্বরবিশিষ্ট শব্দ বা শব্দাংশ সিল্যাব্‌ল।

অনেক লিম্যারিকে প্রথম দ্বিতীয় ও পঞ্চম পঙ্‌ক্তিতে সাধারণত আট বা নয় সংখ্যক সিল্যাব্‌ল থাকে।

তৃতীয় ও চতুর্থ পঙ্‌ক্তিতে সাধারণত থাকে পাঁচ বা ছয় সংখ্যক সিল্যাব্‌ল ।

এক সময়ে লিম্যারিক্ লেখা হত

প্রথম পঙ্‌ক্তি এই রকম ভাবে

' একদা কোন এক সময়ে................'

বা

' এক যা ছিল রাজা......................'



লিম্যারিক্ লেখার যে ধারণাগুলো দেওয়া হয়েছে,   অনুরূপ লিম্যারিক্ লেখা  কবির ধৈর্য সাপেক্ষ ।

জ্ঞান এবং বিচক্ষণতার প্রভায় তা বিকসিত হতে হবে ।

লিম্যারিক্ ছড়াকারকে যথার্থ আগ্রহী ও প্রতিশ্রুতিবান হতে হবে।

বাংলায় একটা বহু প্রচারিত বহুল শ্রুত ছড়ার উদাহরণ দিচ্ছি--

এটিকে লিম্যারিক্ হিসাবে গ্রহণ করা যায় !


' তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা

কোলা ব্যাঙের ছা

খায় দায়

গান গায়

তাইরে নাইরে না ! '


কিস্তিতে কিস্তিতে আলোচনায়
লিম্যারিক্ সম্বন্ধে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে !

তবে বাস্তবিক ক্ষেত্রে,  অত বাঁধাধরা নিয়মকানুন এবং গৎ- এর গতিধারার মধ্যে থেকে লিম্যারিক্ লেখা কষ্টসাধ্য !

তাই ছড়াকারেরা,  লিম্যারিক্-লিখিয়েরা,  লিম্যারিক্ লেখার ক্ষেত্রে,  তাদের বিচারবিবেচনায়  একটা মধ্যবর্তী পন্থা বার করে নেন ! 

এটা বলা হয়, প্রথম লিম্যারিক্-জাতীয় কবিতা লেখা হয়েছিল ল্যাটিন ভাষায় !

ইংরেজি তেরোশো শতাব্দতে।

সেটা ছিল একটা প্রার্থনা সঙ্গীত।

লিখেছিলেন থমাস অ্যাকুইন্যাস  ( Thomas Aquinas. )।

তখনও লিম্যারিকের নামকরণ হয়নি !

লিম্যারিক্ ছিল অনামা। 


' লিম্যারিক্ '-এর নামকরণ করা হয়েছিল  'ইরিল্যাণ্ড'-এর ( আয়ারল্যাণ্ড-এর  ),   'লিম্যারিক্' নামক জনপদের নাম অনুসারে। লিম্যারিক্ একটি ইংরেজি শব্দ। বানান  Limerick.। শব্দটি বাংলায় গৃহীত হয়েছে। তবে Limerik-এর সঠিক বাংলা বানান নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক আছে।

লিম্যারিক আসলে ছোট কবিতা। পাঁচ লাইনের কবিতা।

ফ্রান্সের সৈন্যদলের আইরিশ সৈন্যরা, ঐ লিম্যারিক্  'সামগান'-এর মতো সুর দিয়ে,  'জয়গান'-এর মতো, সুর তুলে গাইত।

লিম্যারিক্, ছোটখাট পাঁচ লাইনের 'গীতি কবিতা"।

লিম্যারিক্, শুরুতে ছিল, হাস্যরসাত্মক ছোট ছোট গীতি কবিতা। লিম্যারিকের অর্থ অনেক সময় 'দ্যোতনাযুক্ত'।

প্রথম 'লিম্যারিক'-এর  নাম ব্যবহার করা হয়েছিল, ইংরেজি আঠারোশো আশি সালে, কানাডার একটি খবরের কাগজের সৌজন্যে।


লিম্যারিক্ সম্বন্ধে বলা হয়েছিল, কিছু লিম্যারিক‌্  'বলা'  হবে, যেখানে শুধু মহিলারা থাকবেন ।

কিছু লিম্যারিক্ বলা হবে, যেখানে মহিলারা অনুপস্থিত।

কিছু লিম্যারিক্ বলা হবে, যেখানে খ্রিস্টধর্মের বা অন্য ধর্মের যাজকমণ্ডলী উপস্থিত থাকবেন।

কিছু লিম্যারিক্, আলাদাভাবে লেখা হবে শিশুদের জন্য।

কিছু ছোটদের জন্য।

আঠারোশো  খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে, লিম্যারিকের প্রচলন সাহিত্যে শুরু হতে থাকে।

পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন, এড‌ওয়ার্ড লিয়ার  ( Edward Lear. )।

লিম্যারিক্ জনপ্রিয়তা পায় ইংল্যাণ্ডের ঐ এড‌ওয়ার্ড লিয়ার ( Edward Lear )-এর প্রচেষ্টায় ।

তিনি ইংরেজি আঠারোশো  ছেচল্লিশ সালে লিম্যারিকের ওপর বই লেখেন,  ' এ বুক অফ ননসেন্স' ( A  Book  Of  Nonsense  ) !

সেই সময়ে সেই বই-এর দুটি অতিরিক্ত সংস্করণও  প্রকাশিত হয়েছিল।


এখন প্রশ্ন থেকে যায়,  অন্ত্যমিল ছাড়া কি লিম্যারিক্ হবে না ?

পরিবর্তনশীল জগতে সবই পরিবর্তনশীল।

কিছুই অপরিবর্তনশীল অচলায়তন নয় !

তাহলে অন্ত্যমিলবিহীন লিম্যারিক্ হবে না কেন ?

কেউ যদি অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিম্যারিক্ লেখেন, পাঠক-পাঠিকারা, অন্যরা,  তা মেনে নেবেন ?

নয়া প্রজন্মের লিখনপটু লিমেরিক-লিখিয়ে বুলবুল-বুলবুলিরাই,  শেষ কথা বলবেন !



এটা জানা যায় যে Shakespeare, Kipling, Eliot  এঁরাও লিম্যারিক্ জাতীয়  'কবিতা' লিখেছিলেন ।

সত্যজিৎ রায়ের নিজস্ব ঢঙে, ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা একটা লিম্যারিক্--

" কেনারাম ব্যাপারীর ভৃত্য
বায়সের সাথে করে নৃত্য।
লোকে বলে, 'এইভাবে
কাকটার মাথা খাবে।
ঢং দেখে জ্বলে যায় পিত্ত'।  "

সত্যজিৎ রায় লিম্যারিক্  লিখতেন, আবার তাঁর  মতন করে,  ইংরেজি থেকে স্বচ্ছন্দে বাংলায় অনুবাদ করতেন !

লিম্যারিক্,  ছোট পদ্যের, পাঁচ লাইনের পদ্যের, বিশেষ ধরণের পংক্তিসাপেক্ষ রচনা শৈলী।

তবে ভবিষ্যতে, লিম্যারিকের পাঁচটি লাইনই থেকে যাবে।

অন্যসব নিয়ম-নীতি, রীতি-নীতি, যুগের সাথে পালটে যাবে !

এ ব্যাপারে আমার লেখা একটি লিম্যারিক্--


লিম্যারিকের পাঁচটা লাইনই থেকে যাবে।
অন্যসব নিয়ম-নীতি রীতি-নীতি বদল হবে !
যুগের সাথে পালটে যাবে !
হয়তো বা সবশুদ্ধই  পালটি খাবে !
তবে কিছু রক্ষণশীল, গোঁড়া মানুষজন থেকেই যাবে !


যে কোন ছড়ায়, কবিতায়, লিম্যারিক্-এ, আসলে  'ভাব'ই হচ্ছে, আসল। 'ভাব' না থাকলে, অনেক কিছুরই অভাব দেখা যায়।

শুধু 'ফাজলামো' ছড়ায়, চাটুকারেরা দলছাড়া হলে, ছড়াকার/লিম্যারিক্-কার,  আর পাত্তা পাবে না !

এক প্রাণির সাথে, আরেক প্রাণির সঙ্গম ঘটিয়ে, তাদের বাচ্চা প্রসব করিয়ে, নতুন নামকরণ করিয়ে, 'বাহবা' দু'চারদিন পাওয়া যেতে পারে, তবে তা চিরকালীন নয় !

এটা কোন প্রগতিবাদী সংস্কারও নয় !


'লিম্যারিক্'  নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছু 'কাজ' করেছি।
তার ফলশ্রুতিতে, আমি, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায়, এখন পর্যন্ত, ২৯৪টি লিম্যারিক্  লিখে ফেলেছি।
এক থেকে একশোটি লিম্যারিক্, কথায় ক্রমিক সংখ্যায়, 'এক' দুই...ইত্যাদি করে একশো পর্যন্ত টেনে নিয়েছি। তারপর ১০১ থেকে শেষ পর্যন্ত, অঙ্কে, যেমন ১০১, ১০২ প্রভৃতি ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছি।

আমি 'জোড়া' লিম্যারিক্ও লিখছি।
জোড়া লিম্যারিক-এ, এক-এর সঙ্গে দুই-এর 'ভাব' সদৃশতা থাকছে।

এখন পর্যন্ত, একটা মাত্র  'ত্রয়ী' লিম্যারিক্ লিখেছি।
ওখানে আলাদা আলাদা তিনটি লিম্যারিক্, ভাবের দিক থেকে সুসঙ্ঘবদ্ধভাবে,  সাযুজ্যপূর্ণভাবে,  রয়েছে।

লিম্যারিক্ লেখার সময়, ছন্দের মিল-এর চাইতে, ভাব-ভাবনায় গুরুত্ব দিয়েছি।

যেটা কষ্ট না করে, স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ ভাবে, সাবলীল গতিতে লেখা যায়, সেই চেষ্টাই করেছি।

আমার একটা লিম্যারিক্ 'চতুর্থী' আছে। চারটে লিমেরিক একসাথে।
আমরা যে লিম্যারিক,  শব্দটা নিয়েছি, তা ইংরেজি শব্দ, LIMERICK-থেকে নিয়েছি।
'Webster' যে ভাবে শব্দটি উচ্চারণ করিয়েছে, তা, lim-er-ick.।
বাংলা ভাষায় উচ্চারণটা কেমন হবে, 'লিমেরিক' না  'লিম-আর-ইক'  না  'লিম্যারিক্' হবে, তা ভাষাবিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে নিরুপণ করতে পারবেন।
আমার ব্যক্তিগত ধারণায়, উচ্চারণটা, 'লিম্যারিক‌্' হওয়াই যুক্তিসঙ্গত।

তবে লেখালেখির জগতে, কবিতার জগতে, ছড়ার জগতে, একজন  'লিম্যারিক্-কার' হিসাবে, আমার মতামতটা শুধু উপস্থাপনা করলাম

মতামতটা নেওয়া, ধরে রাখা, শুধু পত্রিকা সম্পাদকের একার ব্যাপার নয় ! ব্যাপারটা সকল লিম্যারিক্  লিখিয়েদের, পাঠক-পাঠিকাদের,  সমবেত দায়িত্ব।
আমার কাছে 'সংসদ'-এর ইংরেজি-বাংলা  dictionary আছে। ওরা উচ্চারণটা দেখিয়েছে "লিম্যারিক্"।

কে প্রথম  'লিমেরিক' বানান লিখল, আর ওভাবে বংশপরস্পরায় চলে গেল, তা আমার দেখবার নয় !

বানান আর উচ্চারণটা যদি ভুল হয়, তবে, তা সংশোধন করে নেওয়া উচিত !

আমি অবিশ্যি, ছোট পাঁচ লাইনের কবিতাকে লিম‍্যারিক্ আখ্যা দিতে চাই।

তবে লাইনের দৈর্ঘ্য ফিতে দিয়ে মেপে নয়, অন্তমিলও স্বাভাবিক ভাবে না এলে' জোর খাটানো যাবে না ।

তবে কোন ভাবেই লিম্যারিকের মূল ভাবের সাথে, compromise করাও যাবে না।


আমার লেখা কয়েকটি লিম্যারিক্ তুলে ধরলাম--

 

                                                                             লিম্যারিক্ 


যৌনতা
মৌখিক ঐতিহ্যের অংশভূত নয়।
তবু যৌনতা মৌখিক ঐতিহ্যের অঙ্গীভূত হয়ে যায় !
চোখ বন্ধ রাখে।
মন তাকায়।



জোড়া লিম্যারিক্

( এক )

একবার মুক্তি হলে
অাত্মবীজের বীজ
তার আধার
সব
নষ্ট হয়ে গোল্লায় যাবে !

( দুই )

তখন আত্মাকে
পথে-ঘাটে
সহজেই
কুড়িয়ে পাওয়া
যাবে !



ত্রয়ী লিম্যারিক্


 ( এক )

চক্রবাক চক্রবাকী
দিনের বেলায় মিলিত হয় !
সারাদিন ধরে চলে খুনসুটি !
কেবল রাত্রে ছাড়াছাড়ি থাকে
পাখি দুটি !

( দুই )

চক্রবাক মিথুন   চক্রবাক মৈথুন
সারারাত বিচ্ছিন্ন থাকে
সূর্যোদয়ে মিলিত হয় !
কারে কি কই ?
ও কথা কি কইতে হয় ?

( তিন )

চক্রবাকী বধূ
যদি হয় আপনার
জানবেন
কোন কৌতূহল নেই আমার
সেকথা জানার !





লিম্যারিক্  চতুর্থী

( এক )

সূক্ষ্ম শরীরের কোষত্রয়াত্মক
শরীর-আত্মা-আত্মক !
প্রাণময়কোষ।
বিজ্ঞানময়কোষ।
মনোময়কোষ।

( দুই )

প্রাণ দিয়ে
কর্ম করবে।
তাই পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়ের সঙ্গে
প্রাণ
প্রাণময়কোষ।

( তিন )

বুদ্ধি দিয়ে
জ্ঞান সঞ্চয় করবে।
তাই পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়ের সঙ্গে
বুদ্ধি
বিজ্ঞানময়কোষ।

( চার )

মন দিয়ে
কর্ম করবে।
তাই পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়ের সঙ্গে
মন
মনোময়কোষ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন