কবি প্রাবন্ধিক প্রণব কুমার কুণ্ডু'র ছবি
লিমেরিক-ছড়াকার প্রণব কুমার কুণ্ডু |
সহজকর্তাভজা সম্প্রদায় আউলচাঁদ ( গদ্যরচনা ) [ এক ]
চৈতন্য সম্প্রদায়ের মতো, ঐ রূপ, কিন্তু ভিন্ন শাখা সম্প্রদায় !
প্রবর্তক 'আউলচাঁদ'।
যিনি 'উদাসীন' হিসাবে সম্যক প্রসিদ্ধ ছিলেন।
সামগ্রিকভাবে, এদের 'কর্তাভজা' সম্প্রদায় বলে অভিহীত করা হত।
আউলচাঁদের সম্প্রদায়, আসলে বৈষ্ণব সম্প্রদায়, তবে তাঁরা আলাদাভাবে ভগবান বিষ্ণুর, কিংবা শ্রীকৃষ্ণের বা মহাপ্রভু গৌরাঙ্গের পূজা বা অর্চনা করত না !
তাঁদেরটা ছিল মূলত সামাজিক নীতি পরায়ণ সম্প্রদায় !
আউলচাঁদের গুরু, নামে 'মহাশয়', ওদের প্রথম ও প্রধান মন্ত্র, 'গুরুসত্য'।
আউলচাঁদ সম্প্রদায়ের কা্ছে, 'গুরু'ই পরমেশ্বর !
আউলচাঁদের শিষ্যেরা, আউলচাঁদকে মনে করত, 'ঈশ্বরের অবতার'।
আর ভাবত, 'কৃষ্ণচন্দ্র' 'গৌরচন্দ্র' আর 'আউলচন্দ্র', তিনে মিলেই 'এক'। আর এক-এক জন, একেই তিন জন !
অধুনা নদিয়া জেলার কল্যাণীর ঘোষপাড়াকে কেন্দ্র করে, আউলচাঁদের আখড়া গড়ে ওঠে।
ঐ ঘোষপাড়া নিবাসী সদগোপ রামশরণ পাল ছিল,কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রচারক।
ওদের মূল বক্তব্য
'কর্মকরো তবে বাক্যকর্ম নয়'।
'বাতেলা দিও না'।
'শুধু কর্তব্য কাজ করো'।
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের শিষ্যদের মধ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকত।
যেমন
পরস্ত্রীগমন
পরস্ত্রীগমনে ইচ্ছা
মনে বা মনে মনে বাজে কাজ করার ইচ্ছা
মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি।
ওদের সাধন ছিল, 'প্রেমানুষ্ঠান'। ওটাই ছিল প্রধান সাধন।
তাঁদের মতে, তাঁদের 'মন্ত্রজপ'-এ, প্রেমানুষ্ঠান সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
একমাত্র, 'বিশ্বকর্তা'র ভজনাই তাদের ধর্ম।
আউলচাঁদ কৌপীন পরতেন। সাদাসিধা থাকতেন। দরকার পড়লে গায়ে 'খেলকা' কাঁথা দিতেন।
আউলচাঁদ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন।
উনি বাংলাভাষী ছিলেন।
সরল সহজ বাংলা কথায় উনি উপদেশ দিতেন।
সকলের হাতের রান্না খেতেন।
জন্মসূত্রে তিনি হিন্দু ছিলেন, না মুসলমান ছিলেন, সেকথা সঠিকভাবে জানা যায় না।
তবে তিনি হিন্দুপন্থায় ধর্মকর্ম প্রচার করতেন ।
* সূত্র 'বঙ্গীয় শব্দকোষ', পৃষ্ঠা ৫৫৬।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন