শেষকৃত্য
রূপক রায় ফেসবুক শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
মানুষ মারা গেলে হিন্দুরা লাশ পোড়ায় কেনো ? এ কেমন নৃশংসতা ? হিন্দুধর্ম কেমন ধর্ম ?
(Necessary post for Sujit Kumar Das)
দাহ নিয়ে মুসলমানদের মুখে এমন টিটকারী শুনেন নি, এমন হিন্দু সম্ভবত একজনও নেই। কারণ, ধর্ম নিয়ে চুলকানো মুসলমানদের স্বভাব। এই চুলকাতে গিয়ে মুসলমানরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন করে আপনাকে ক্ষতবিক্ষত করবে, আপনি যদি ঠিকঠাক জবাব দিতে না পারেন, মুসলমানদের কাছে আপনি হেয় হবেন এবং এই সুযোগে বস্তাপচা ইসলামকে তারা শ্রেষ্ঠধর্ম হিসেবে তুলে ধরবে।
মুসলমানদের অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো- মারা যাওয়ার পর হিন্দুরা কেনো মৃতদেহ আগুনে পোড়ায় ? এ সম্পর্কে মুসলমানদের প্রশ্নবান থেকে আপনাদের রক্ষা করার জন্য, এই পোস্টে দিলাম, এই প্রশ্নের জবাব:
হিন্দুরা মৃতদেহ কেনো আগুনে পোড়ায়, এ নিয়ে মুসলমানদের ছিঃ, ছিক্কারের অভাব নেই। ওদের কথা শুনলে মনে হয়, পৃথিবীতে এর চেয়ে নৃশংস আর কোনো কাজই নেই; এটা করে হিন্দুরা মৃতদেহের সাথে এক মহা অপরাধ করে বা করে চলেছে। এর বিপরীতে, ওরা শোনাবে, আমরা মুসলমানরা, মৃতদেহকে আতর-সুগন্ধি মাখিয়ে, কত আদর যত্নে কবর দিই। এসবের জবাব একটাই হতে পারে, আর তা হলো, মৃতদেহকে যখন এতই আদর যত্ন করেন, তখন তা কবর না দিয়ে ঘরে রেখে দিলেই তো পারেন; তারপর দেখবেন, ২৪ ঘণ্টা পর, আপনার আতর-সুগন্ধি মাখানো, আদর যত্নের লাশের কী অবস্থা হয় ?
এসব তর্কের কথা, কিন্তু মৃতদেহ পোড়ানোর উপযোগিতা ও উপকারিতার ব্যাপার বুঝতে হলে আপনাকে এর গভীরে ঢুকতে হবে এবং সেজন্য পড়তে হবে আমার এই পুরো লেখাটি।
আপাতদৃষ্টিতে মৃতদেহকে পোড়ানো নৃশংস মনে হওয়ায় এবং মুসলমানদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকায় এবং সর্বোপরি এ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবের কারণে হিন্দুরা এর কোনো সদুত্তর দিতে পারে না এবং সেকারণে মুসলমানদের কাছে ছোট হতে বাধ্য হয়।
বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে বলে রাখি, বৃহৎ হিন্দু সমাজের মধ্যের একটি ক্ষুদ্র অংশ, চৈতন্যদেবের অনুসারী বৈষ্ণব সমাজ, মৃতদেহকে পোড়ায় না, তারা কবর দেয় বা সমাহিত করে, কিন্তু এটি মুসলমানদের মতো শায়িত অবস্থায় কবর নয়, বসে থেকে পূর্ব মুখী হয়ে ধ্যান করছে, এমন অবস্থায় সম্পূর্ণ সন্ন্যাসী বেশে তাদেরকে সমাহিত করা হয়।
হিন্দু ধর্ম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্ম। এর কোনো কিছু অন্য কোনো ধর্ম থেকে ধার করা নয়। বরং অন্য সকল ধর্মের অনেক কিছু হিন্দু ধর্ম থেকে ধার করা। মুসলমানরা যতই বলুক, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, কিন্তু বাস্তবে ইসলাম একটি কালেক্টিভ ধর্ম, এতে নতুন কিছুই নেই; এর সব কিছুই ইহুদি, খ্রিষ্টান ও হিন্দু ধর্ম থেকে ধার করা।
কিন্তু দীর্ঘদিন মুসলিম শাসনে থাকার ফলে দু একটি বিষয় ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্মে অনুপ্রবেশ করেছে, এর একটি হলো বৈষ্ণব সমাজের এই সমাধি ব্যবস্থা। বাংলার রাজা গণেশ, চতুর্দশ শতাব্দীতে, মুসলমানদের হাত থেকে বাংলার সিংহাসন উদ্ধার করে; কিন্তু চারেদিকে মুসলিম রাজশক্তির প্রভাবে গণেশের পক্ষে তার রাজ্য রক্ষা করা সম্ভব না হওয়ায়; গণেশ, নিজে তার পুত্র যদুকে মুসলমান হতে দিয়ে তাকে সিংহাসনে বসিয়ে যায়। এভাবে বাংলা আবার মুসলিম শাসনে চলে যায় এবং ছলে বলে নানা কৌশলে মুসলমান শাসকরা হিন্দুদেরকে মুসলমান বানাতে থাকে। এই সময় আবির্ভাব হয় চৈতন্যদেবের। তিনি হিন্দুদেরকে মুসলমান হওয়া থেকে ঠেকাতে ইসলামের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য রেখে হিন্দু ধর্মকে কিছুটা অদল-বদল করে বৈষ্ণব ধর্ম চালু করেন। এর ফলেই মুসলমানদের মতো, হিন্দু বৈষ্ণব সমাজে চালু হয় কবর ব্যবস্থা, কিন্তু তা কিছুটা পরিবর্তিত রূপে, যার উল্লেখ উপরেই করেছি।
মূলতঃ হিন্দু সমাজের যে প্রধান চারটি ভাগ- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র; বৈষ্ণবরা এর বাইরে আলাদা একটি সমাজ। আমি নিজেও বৈষ্ণব সমাজের একজন সদস্য। আমি দেখেছি, অনেক বৈষ্ণব, তাদেরকে মরার পর পোড়ানো হয় না বলে গর্ববোধ করে এবং শবদাহকে, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ব’লে, অন্য হিন্দুদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। এর প্রভাবে, বৈষ্ণবদের বাইরেও অনেক হিন্দু, মরার পর, তাদেরকে না পোড়ানোর জন্য বলে যান এবং কেউ কেউ জ্বালানী খড়ির অভাবে, মুখে জাস্ট আগুন ছুঁইয়ে বৈষ্ণবদের মতোই সমাহিত করে।
মধ্যযুগে মুসলমান হওয়ার স্রোত ঠেকাতে, চৈতন্য দেব- জৈন ও শিখ ধর্মের মতো বৈষ্ণব ধর্ম চালু করেন, এতে হিন্দু সমাজ যে অনেকটা রক্ষা পেয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং চৈতন্যদেব সেই সময় যা করেছেন, তা ঠিক ছিলো এবং তা প্রশংসার যোগ্য। দুর্যোগ বা বন্যার সময় প্রাণ বাঁচাতে শিয়াল-কুকুরও এক জায়গায় থাকতে বাধ্য হয়, কিন্তু সেটা সব সময়ের জন্য নয়, আপদকালীন ব্যবস্থা। বৈষ্ণব সমাজের এই কবর ব্যবস্থাও হওয়া উচিত ছিলো আপদকালীন। শুনেছি, অনেক সাধু-সন্ন্যাসীকেও নাকি মরার পর, দাহ করা হয় না। এর মাধ্যমে মূলত তারা সমাজকে এই বার্তা দিচ্ছে যে, দাহ ব্যবস্থার চেয়ে কবর ব্যবস্থা ভালো। কিন্তু দাহ ব্যবস্থা ই যে সর্বোত্তম অন্তিম সংস্কার ব্যবস্থা, আমার এই লেখা পড়া শেষ হওয়ার পর তা উপলব্ধি করতে পারবেন।
মুসলমানরা মৃতদেহকে যতই আদর যত্ন করুক, আর যতই আতর-সুগন্ধি লাগাক, বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, স্বাভাবিক ভাবে, ২৪ ঘণ্টার বেশি তারা সেই লাশ রাখতে পারবে না, এরপর কবরস্থ তাকে করতেই হবে। কিন্তু দাফন করার পরই মৃতদেহের কী অবস্থা হয়, আমার এই বর্ণনাটি পড়ুন আর সেই সাথে, সেই অদেখা দৃশ্যটি কল্পনা করুন।
স্বাভাবিক ভাবে ২৪ ঘন্টার পর থেকেই মৃতদেহ পচতে শুরু করে। আলু, বেগুন পচে গেলে, বিবর্তনের নিয়মে, তার মধ্যে যেমন পোকা তৈরি হয়; ঠিক তেমনি মানুষের দেহ পচে গেলেও দেহের ভেতর নানা রকম পোকার জন্ম হয়। এই পোকাগুলো জন্মের পর থেকেই দেহের মাংস রক্ত খেয়ে পুষ্ট হয় এবং প্রথমেই বের হয় আমাদের দেহের যেসব ছিদ্র আছে, যেমন- নাক, মুখ, কান, পায়ু এবং মেয়েদের যোনী, সেসব ছিদ্রের ভেতর দিয়ে। দেহের মধ্যেই এই পোকাগুলো খুব দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে এবং একসময় বুক, পেটের চামড়া ছিদ্র করে হাজারে হাজারে কিলবিল করে বের হয়ে আসতে থাকে। মানুষের মৃতদেহেই এই পোকাগুলোর জন্ম, দেহ খেয়েই এদের পুষ্টি ও বংশবৃদ্ধি, তারপর খাবার শেষ হয়ে গেলে এই পোকাগুলো এমনিতেই মরে যায়। পড়ে থাকে শুধু মানুষের হাড়-গোড় অর্থাৎ কংকাল। এছাড়াও মাটির ভেতর কিছু পোকা থাকে, তারাও শুরুতেই আক্রমন করে দেহকে এবং দেহের নাক, কান, মুখ, পায়ুপথের মতো ছিদ্রগুলো দিয়ে দেহের মধ্যে ঢুকতে থাকে। একবার কল্পনা করুন, আপনার প্রিয় মানুষের মৃতদেহের মধ্যে হাজারে হাজারে পোকা ঢুকছে আর বেরুচ্ছে, আর সেই মৃত মানুষটাকে খাচ্ছে। বহুযত্নে কবর দেওয়া মুসলমানদের লাশের ঠিক এই অবস্থা শুরু হয় কবর দেওয়ার পর থেকেই এবং চলতে থাকে কয়েক সপ্তাহ এবং এই একই অবস্থার মধ্যে পড়ে বৈষ্ণব হিন্দুদের মৃতদেহগুলোও। এক কথায় যারাই লাশ মাটিতে কবর দেবে, তাদের কারোরই প্রকৃতির এই পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা নেই। এছাড়াও এই পোকামাকড়গুলোর কিছু কিছু, মাটির বাইরে বেরিয়ে এসে যে প্রকৃতিকে দূষণ করে বা করতে পারে, এটা বোঝার জন্য কারো আইনস্টাইনের মতো বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার পড়ে না। কবর দেওয়ার ফলে বসবাসের বা চাষের জমির যে অপচয় হয়, সেটা তো ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চাও বোঝে।
কোথাও কোথাও মৃতদেহকে জলে ভাসানো হয় বা ভয়াবহ বন্যার সময় যখন দাহ করা বা কবর দেওয়া সম্ভব হয় না, তখনও আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এতে জলজ প্রাণীরা মৃতদেহকে খেয়ে ফেলে ঠিকই, কিন্তু কিছুটা হলেও তা জলদূষণ করে প্রকৃতির ক্ষতি করে।
কিছু কিছু মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যেমন- প্লেগ, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, সার্চ, অ্যানথ্রাক্স ইত্যাদির ফলে- মারা যাওয়া মানুষ ও পশুপাখিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়, এটা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্তু কেনো ? মাটিতে পুঁতে ফেলার পর, লাশ বা মৃত জীবজন্তু থেকে সৃষ্ট রোগ-ব্যাধির কবল থেকে যদি মুক্তিই পাওয়া যেতো, তাহলে তো আর পোড়ানোর দরকার পড়তো না।
আরবের মরুভুমিতে অনাবাদী জমির কোনো অভাব নেই এবং সেখানে তেমন বেশি কোনো গাছপালাও নেই, তাই আরবের মানুষের কাছে, মৃতদেহ কবর দেওয়াকে যুক্তিযুক্ত মনে হতে পারে। কবর দেওয়ার পর লাশের কী অবস্থা হচ্ছে, সেটা তো মানুষ আর দেখতে পাচ্ছে না বা দেখছে না, তাই ওটা নিয়ে তাদের খুব একটা মাথা ব্যথাও ছিলো না। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশ, গাছপালায় সমৃদ্ধ উর্বর ভূমির এলাকা। এখানে জমির যেমন প্রচুর মূল্য, তেমনি জ্বালানী কাঠও সহজলভ্য। তাই কবর দেওয়ার চেয়ে পোড়ানোই এখানে পরিবেশ সম্মত এবং বেশি উপকারী। ইদানিং পোড়ানোতে এসেছে বৈদ্যুতিক চুল্লী। ফলে গাছ তো কাটতে হচ্ছেই না, উল্টো খোলা অবস্থায় পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধের হাত থেকেও মিলেছে মুক্তি; যা দাহ ব্যবস্থাকে করে তুলেছে আরো গ্রহনযোগ্য।
গীতার ভাষ্য অনুযায়ী, মানুষের মৃতদেহের কোনো দাম নেই; তাই ওটা নিয়ে শোক করারও কিছু নেই। হিন্দু শাস্ত্র মতে, আগুন হলো দেবতা এবং আগুনের স্পর্শেই সবকিছু পুড়ে খাঁটি হয়। এজন্য রবি ঠাকুর বলেছেন, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে। বাস্তবেও সকল শুভ কাজের শুরু হয় আগুন দিয়ে; একারণেই ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেই আগুন দিয়ে ধূপকাঠি বা আগরবাতি জ্বালিয়ে দিন শুরু করে; এখানে হিন্দু মুসলমানের আচরণে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা যত খাবার খাই, তার প্রায় ৯৫% আগুনের সাহায্যে তৈরি। এজন্য খুব সহজেই এটা ধরে নেওয়া যায় যে, আগুনের সাহায্যেই আমরা বেঁচে আছি। ধর্মকে সরিয়ে রাখলেও, বিজ্ঞান মতে, সূর্য থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি আর সূর্যের আলোর জন্যই পৃথিবীর উপরে বসবাসরত সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের সৃষ্টি। এই সূর্য হিন্দুদের একটি দেবতা এবং তা একটি অগ্নিপিণ্ড। সুতরাং সৃষ্টির শুরু যেমন আগুন দিয়ে, তেমনি মানুষের নশ্বর দেহের সমাপ্তিও ঘটছে সেই চিতার আগুনে। আবার মাটির দেহ, পোড়ানোর ফলে তা ছাইয়ে পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই মিশে যাচ্ছে, যা শক্তির নিত্যতার সূত্রের মধ্যে পড়ে; ফলে মৃতদেহ পোড়ানোয়- মাঝখানে আপনাকে - পোকামাকড়ের খাদ্য হতে হচ্ছে না বা কিছু পোকা-মাকড় সৃষ্টির কারণ হয়ে প্রকৃতিরও ক্ষতি করতে হচ্ছে না।
এসব কারণে আমাদের মুনি-ঋষিরা, অন্তিম সংস্কারের সকল পদ্ধতির চুল-চেরা বিশ্লেষণ করে মৃতদেহ পোড়ানোকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেছেন এবং হিন্দু সমাজের জন্য বিধান হিসেবে তা দিয়ে গেছেন; কারণ, দাহ এক প্রকার যজ্ঞ এবং দাহের ফলে প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রায় সবকিছু শুদ্ধ হয়ে যায় । এই দাহের ফলেই ভারতে বেঁচে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ হেক্টর ভূমি, যা কৃষিজ উৎপাদন ও বসবাসের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে মুসলমানরা এবং মুসলিম দেশগুলো, কবরখানার জন্য লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যা এক কথায় চরম অপচয়।
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলা শহরে এক বা একাধিক সরকারী কবরখানা আছে, সেখান থেকে নির্ধারিত মূল্যে জমি কিনে কাউকে কবরস্থ করতে হয়। এছাড়াও অনেক পরিবারের ব্যক্তিগত কবরখানা আছে। জনসংখ্যার আধিক্যে যেখানে জীবিত মানুষেরই থাকার জায়গা হচ্ছে না, সেখানে মৃতদের জন্য জমি ফেলে রাখা, এক চুড়ান্ত মূর্খতার পরিচয়।
ব্যক্তিগত কবরখানায় হোক বা সরকারী কবরখানায়, মুসলমানদের একটি লাশ দাফন করা প্রচুর খরচের ব্যাপার, অনেকের পক্ষেই এই খরচ জোগাড় করা সম্ভব হয় না, তাই বাংলাদেশের পথে ঘাটে মাঝে মাঝেই দেখা যায়, লাশ দাফন করার জন্য লাশ নিয়েই ভিক্ষা করা হচ্ছে।
খরচাপাতি করে হয়তো লাশ দাফন করা হলো, কিন্তু তারপর সেই লাশগুলো নিয়ে করা হয়, এবার সেই ব্যাপারটা দেখা যাক। এই বিষয়ের উপর একটি ডকুমেন্টারি, বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেল তালাশ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করেছিলো, সেখানে যা দেখেছি, তা হচ্ছে: দাফন করার পর, মৃত ব্যক্তির সামাজিক প্রভাব অনুযায়ী, তার লাশ- কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস কবরে থাকে, তারপর সেই লাশ উধাও হয়ে যায়। যারা কবরখানার দেখা শুনা করে তারা কবর থেকে সেই আধাপচা মৃতদেহগুলো বা হাড়গোড়গুলো তুলে অন্য বড় একটি গর্তে ফেলে রাখে; এই দৃশ্য দেখলে আপনার মনে হবে, এটা যেন একটা বধ্যভূমি। অতঃপর ঐ একই কবর আরেক জনের কাছে বিক্রি করে। এভাবে একই কবর কতজনের কাছে, কতবার যে বিক্রি হয়, তার কোনো হিসেব নেই। মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদেরকে কংকাল সরবরাহ করার জন্য লাশ চুরি তো কবরখানার একটি সাধারণ ঘটনা। এছাড়াও পাকিস্তানের একটি কবরখানায় ২০১৫ সালেই এক অসাধারণ ঘটনা ঘটেছে, এক মুসলমান, সদ্যকবর দেওয়া মহিলাদের লাশ তুলে তাকে ধর্ষণ করতো, সে যখন ধরা পড়লো, তখন তার কাছ থেকে জানা গেলো অনেক আগে থেকেই সে এই কাজ করছে। মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেললে লাশ নিয়ে এসব ব্যবসা বা অরুচিকর ঘটনা ঘটার সুযোগ যে নেই, সেটা কিন্তু নিশ্চিত।
তাছাড়াও সরকারী কবরখানাগুলোর একটি নিয়ম আছে, যখন কবরখানায় আর কোনো জায়গা থাকে না, তখন মোটামুটি ২০/৩০ বছর পর পর সাধারণ লোকের সব কবর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে আবার কবরের জায়গা বের করা হয়। লাশ নিয়ে মুসলমানদের এত আবেগ, তখন কোথায় থাকে বা যায় কোথায় ?
এত আদর যত্নে দাফন করা লাশের এমন পরিণতির কথা মুসলমানরা কি জানে, না এসব খবর তারা রাখে ?
এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের একটি ঘটনা বলি। ৭১১ খিষ্টাব্দে, মুহম্মদ বিন কাশিমের কাছে সিন্ধুর হিন্দু রাজা দাহির পরাজিত হলে, রাজপরিবারের মেয়েরা সম্মান বাঁচাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সময় তাদের এক মন্ত্রী রাণীকে জানায়, মুসলিম সৈন্যরা খুবই নৃশংস এবং অমানবিক হয়, এমনকি তারা মৃত মেয়েদেরকেও ধর্ষণ করতে ছাড়ে না। এই কথা শুনে মৃত্যুর পর দেহের পবিত্রতা রক্ষার্থে রাণী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অন্তঃপুরের সব মেয়েরা ঐভাবেই আত্মাহুতি দেয়। সেই সিন্ধু এখন পাকিস্তানের অন্তর্গত, আর সেই পাকিস্তানের মুসলমানরা যে লাশকে ধর্ষণ করবে, এতে আর আশ্চর্য কি ? ডিএনএর মাধ্যমে ধর্ষণের জিন তো মুসলমানরা বয়ে নিয়ে আসছে সেই ১৪০০ বছর ধরে, মাঝে মাঝে তার প্রকাশ কি ঘটবে না ?
হিন্দু সমাজের যেসব হিন্দু শবদাহের সাথে জড়িত, তারা কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে, কিন্তু তারা এর পেছনের বিজ্ঞানটাকে জানে না বলে নানা ধরণের কুসংস্কারের শিকার। যেমন তারা মনে করে শবদাহের একপর্যায়ে মৃত জীবিত হয়ে উঠে বসে, তখন তারা আবার তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে চিতায় শুইয়ে দেয়। আবার কোথাও কোথাও এই ধারণা প্রচলিত আছে, যে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাথা যদি ফাটিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে ঐ মৃতের আত্মা তার শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যায় না, এতে তার আত্মা পৃথিবী থেকে মুক্তি পায় না। এর সবই আসলে শাস্ত্র বহির্ভূত এবং অবৈজ্ঞানিক। ডা্ক্তারি পরীক্ষায় যদি প্রমানিত হয় যে কেউ মারা গেছে, তাহলেই এটা নিশ্চিত যে তার আত্মা দেহ ছেড়ে চলে গেছে। সেই আত্মার আবার তার দেহে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এজন্য পৃথিবী থেকে সেই আত্মার মুক্তি না পাওয়ারও কোনো প্রশ্নই নেই, অবশ্য মোক্ষ বলতে যে মুক্তি বোঝায়, এখানে সেই মুক্তির কথা বলা হচ্ছে না, মোক্ষ নামের সেই মুক্তি কেউ পাবে কি পাবে না, তা শুধু পরম ঈশ্বর জানেন।
যা হোক, আর চিতায় মৃতের উঠে বসার বা নড়ে চড়ে উঠার কারণ হলো, মানুষের দেহে যেসব শিরা ও ধমনী আছ, যাদেরকে আমরা সাধারণভাবে বলি রগ, দেহ যখন আগুনে পুড়তে থাকে তখন সেই রগগুলো সংকুচিত হয়, এককথায় টান লাগে আর এই টানে দেহ নড়েচড়ে উঠে বা অনেক সময় টান সোজা হলে মৃতদেহ সটান চিতার উপর উঠে বসে, যেন কোনো জীবিত লোক শোয়া থেকে উঠে বসলো। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ ডা্ক্তারি পরীক্ষায় কেউ মৃত বলে প্রমানিত হলে কারো পক্ষেই আর জীবিত হয়ে উঠা সম্ভব নয়। সেজন্য মৃতদেহকে আবার চিতায় শোয়ানোর জন্য লাঠি দিয়ে আঘাত করার কোনো দরকার নেই এবং তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়ারও দরকার নেই। আপনারা যারা এই বিষয়টি জানলেন, আমার অনুরোধ নিজ নিজ এলাকায় এই বিষয়টি প্রচার করবেন, যাতে সবাই প্রকৃত সত্যটা জানতে পারে এবং শবদাহের সময় এইসব ঘটনা ঘটিয়ে মৃতদেহের উপর যাতে অনাচার না করে।
একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, মুসলমানদের আশে পাশে আমাদের বাস। আর মুসলমানরা সব সময় চেষ্টায় আছে, হিন্দু সমাজের খুঁত ও ভুল ত্রুটি বের করে হিন্দু সমাজকে ধ্বংস করার জন্য। এজন্য আপাতদৃষ্টিতে হিন্দু সমাজের যে বিষয়গুলোকে খারাপ বলে মনে হয়, মুসলমানরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সরলমনা হিন্দু ছেলে মেয়েদেরকে নানা প্রশ্ন করে এবং সেই বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরে তাদের ব্রেইনওয়াশ ক’রে তাদেরকে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করে। এজন্য এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদেরকে সাবধানে এগোতে হবে, প্রতিটি ছেলে মেয়েকে হিন্দুধর্মের মূল বিষয়গুলো যুক্তিগ্রাহ্য ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা মুসলমানদের প্রশ্নের মুখে পড়ে কোনভাবেই হেয় না হয়। যেমন আমি এই শব দাহ নিয়েই দুটো ঘটনা জানি, যেখানে মুসলমানরা দাবী করে যে, বাবার মৃতদেহ পোড়ানোর দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে মুসলমানন হয়েছে। সত্য মিথ্যা জানি না, কিন্তু এর সুযোগ যে মুসলমানরা নিচ্ছে এবং নেবে, এটা তো নিশ্চিত। সেই সুযোগ তাদেরকে আমরা দেবো কেনো ? তাই কারো মৃতদেহ দাহ করার আগে ছোট ছেলে মেয়েদেরকে চিতার কাছে নিয়ে গিয়ে দাহ করার দৃশ্য দেখতে দেবেন না বা সেই ধরণের পুরুষকেও চিতার আশে পাশে থাকতে দেবেন না, যারা এই বিষয়টির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা জানে না বা যাদেরকে জানানো হয় নি।
সুতরাং উপরের এই আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, মৃত্যুর পর মৃতদেহের কোনো দাম না থাকলেও, লাশের পবিত্রতা রক্ষার্থে, পোকামাকড়ের কবল থেকে লাশ রক্ষা করতে এবং লাশের অপব্যবহার রুখতে লাশ পুড়িয়ে ফেলা ই সর্বোত্তম পদ্ধতি। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, অগ্নি দেবতার কাছে নিজেকে সমর্পনের যেমন এতে সুযোগ আছে, তেমনি এই পদ্ধতি পরিবেশ সম্মত এবং যুগ-উপযোগী। বৈষ্ণব সমাজের সদস্য হিসেবে আমার শব দাহ করা হবে না। কিন্তু আমি চাই আমার শবকে দাহ করা হোক এবং সেই নির্দেশ আমি অন্যদেরকে দিয়ে যাবো। কারণ, হিন্দুধর্মের সকল প্রধান পুরুষের শবকে দাহ করা হয়েছে। তাই আমিও চাই, আমার শব, তাদের মতোই গতি লাভ করুক।
শেষ কথা বলছি, জাকির নায়েক মার্কা মুসলমানদের জোর দাবী যে অগ্নিতে আহুতি দেয়ার চেয়ে দাফন ই উত্তম ব্যবস্থা, কেননা এতে নাকি খরচ কম এবং পরিবেশ এর দূষণ কম!
এ বিষয়ে উপরে যা বলেছি, তা আমার কথা; কিন্তু এ বিষয়ে পৃথিবীর শীর্ষ জরিপকারী সংস্থা ও এই বিষয়ক গবেষনাগুলো কী বলছে দেখে নিন নিচে, যেগুলোর মধ্যে কিছু আলোচনা প্রসঙ্গক্রমে উপরেও করেছি :
১) দাফন এর ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহনসহ কফিন ও বিভিন্ন আনুসঙ্গিকতার কারনে এর সর্বোপরি খরচ অগ্নদাহ থেকে অনেক বেশী। (তথ্যসূত্র-Sublette&flag,funeral customs,pg no 53)
২) দাফন এর ক্ষেত্রে মৃতদেহটি সংক্রামন এর মারাত্মক উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ইনফেকশাস ডিসিসে মৃত্যুবরণকারীর ক্ষেত্রে দাফন খুব মারাত্মক মহামারী ডেকে আনতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি পানি,বাতাস ও মাটির দূষণকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে (তথ্যসূত্র-Spongoberg,Alison L Becks,inorganic water,air and soil contamination,pg no. 117)
৩) জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ওই সব দেশের সরকার দাফনকে বাদ দিয়ে অগ্নিদাহকে উৎসাহিত করছে; কেননা, দাফনে জমির প্রচুর অপচয় হয়। (তথ্যসূত্র-Furse Raymond,An invitation in japan,pg.73)
৪) জার্মানিতে বর্তমানে দাফন করলেও সেই জায়গার মাটিটুকু একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মৃত ব্যক্তির অভিভাবকদের জন্য লিজ দেয়া হয় এবং দেহ ডিকম্পোসড হয়ে যাওয়ার পর দেহাবশেষ তাদেরকে হস্তান্তর করে তা আবার নিয়ে নেয়া হয় কেননা এত জমি অপচয় করা সম্ভব নয়! (তথ্যসূত্র-Wikipedia)
৫) ফিউনেরাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা জানিয়েছে যে উপর্যুক্ত বিষয়সমূহের কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ এখন ঝুঁকছে অগ্নিদাহের দিকে!
৬) আরো আশ্চর্য বিষয় এই যে National Botanical Research institute of India জানিয়েছে যে মৃতদেহ অগ্নিতে আহুতি দেয়ার সময় যে হবন সামগ্রী ব্যবহৃত হয় তা দিয়ে মৃতদেহ পোড়ালে উৎপন্ন মারকারির পরিমান নূন্যতম হয় ফলে পরিবেশের প্রায় কোন ক্ষতিই হয়না বরং এতে অধিকাংশ ইনফেকশাস ব্যক্টেরিয়া মারা যায়!
৭) বর্তমানে অনেকক্ষেত্রেই মৃতদেহ দাহ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে Crematorium যার ফলে বায়ুতে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান শুন্য।
৮) আমেরিকান গবেষক Sarah Steafenson জানিয়েছেন যে আজকাল দাফনের আগে মৃতদেহ সবাইকে দেখানোর জন্য তাজা রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফরমালডিহাইড সহ আরো কয়েকটি রাসায়নিক দ্রব্য যে প্রক্রিয়াকে বলা হয় Enbalming.দাফন এর পর এই রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ নির্গত হয়ে মাটির মারাত্মক দূষণ করে এবং ফসল এর মাধ্যমে এই দূষন সাধারন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, বৈজ্ঞানিকভাবে কোনটা ভালো, বৈদিক অগ্নি আহুতি নাকি আব্রাহামিক দাফন ?
জয় হিন্দ।
জয় শ্রী রাম। জয় শ্রী কৃষ্ণ।
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
(Necessary post for Sujit Kumar Das)
দাহ নিয়ে মুসলমানদের মুখে এমন টিটকারী শুনেন নি, এমন হিন্দু সম্ভবত একজনও নেই। কারণ, ধর্ম নিয়ে চুলকানো মুসলমানদের স্বভাব। এই চুলকাতে গিয়ে মুসলমানরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন করে আপনাকে ক্ষতবিক্ষত করবে, আপনি যদি ঠিকঠাক জবাব দিতে না পারেন, মুসলমানদের কাছে আপনি হেয় হবেন এবং এই সুযোগে বস্তাপচা ইসলামকে তারা শ্রেষ্ঠধর্ম হিসেবে তুলে ধরবে।
মুসলমানদের অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো- মারা যাওয়ার পর হিন্দুরা কেনো মৃতদেহ আগুনে পোড়ায় ? এ সম্পর্কে মুসলমানদের প্রশ্নবান থেকে আপনাদের রক্ষা করার জন্য, এই পোস্টে দিলাম, এই প্রশ্নের জবাব:
হিন্দুরা মৃতদেহ কেনো আগুনে পোড়ায়, এ নিয়ে মুসলমানদের ছিঃ, ছিক্কারের অভাব নেই। ওদের কথা শুনলে মনে হয়, পৃথিবীতে এর চেয়ে নৃশংস আর কোনো কাজই নেই; এটা করে হিন্দুরা মৃতদেহের সাথে এক মহা অপরাধ করে বা করে চলেছে। এর বিপরীতে, ওরা শোনাবে, আমরা মুসলমানরা, মৃতদেহকে আতর-সুগন্ধি মাখিয়ে, কত আদর যত্নে কবর দিই। এসবের জবাব একটাই হতে পারে, আর তা হলো, মৃতদেহকে যখন এতই আদর যত্ন করেন, তখন তা কবর না দিয়ে ঘরে রেখে দিলেই তো পারেন; তারপর দেখবেন, ২৪ ঘণ্টা পর, আপনার আতর-সুগন্ধি মাখানো, আদর যত্নের লাশের কী অবস্থা হয় ?
এসব তর্কের কথা, কিন্তু মৃতদেহ পোড়ানোর উপযোগিতা ও উপকারিতার ব্যাপার বুঝতে হলে আপনাকে এর গভীরে ঢুকতে হবে এবং সেজন্য পড়তে হবে আমার এই পুরো লেখাটি।
আপাতদৃষ্টিতে মৃতদেহকে পোড়ানো নৃশংস মনে হওয়ায় এবং মুসলমানদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকায় এবং সর্বোপরি এ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবের কারণে হিন্দুরা এর কোনো সদুত্তর দিতে পারে না এবং সেকারণে মুসলমানদের কাছে ছোট হতে বাধ্য হয়।
বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে বলে রাখি, বৃহৎ হিন্দু সমাজের মধ্যের একটি ক্ষুদ্র অংশ, চৈতন্যদেবের অনুসারী বৈষ্ণব সমাজ, মৃতদেহকে পোড়ায় না, তারা কবর দেয় বা সমাহিত করে, কিন্তু এটি মুসলমানদের মতো শায়িত অবস্থায় কবর নয়, বসে থেকে পূর্ব মুখী হয়ে ধ্যান করছে, এমন অবস্থায় সম্পূর্ণ সন্ন্যাসী বেশে তাদেরকে সমাহিত করা হয়।
হিন্দু ধর্ম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্ম। এর কোনো কিছু অন্য কোনো ধর্ম থেকে ধার করা নয়। বরং অন্য সকল ধর্মের অনেক কিছু হিন্দু ধর্ম থেকে ধার করা। মুসলমানরা যতই বলুক, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, কিন্তু বাস্তবে ইসলাম একটি কালেক্টিভ ধর্ম, এতে নতুন কিছুই নেই; এর সব কিছুই ইহুদি, খ্রিষ্টান ও হিন্দু ধর্ম থেকে ধার করা।
কিন্তু দীর্ঘদিন মুসলিম শাসনে থাকার ফলে দু একটি বিষয় ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্মে অনুপ্রবেশ করেছে, এর একটি হলো বৈষ্ণব সমাজের এই সমাধি ব্যবস্থা। বাংলার রাজা গণেশ, চতুর্দশ শতাব্দীতে, মুসলমানদের হাত থেকে বাংলার সিংহাসন উদ্ধার করে; কিন্তু চারেদিকে মুসলিম রাজশক্তির প্রভাবে গণেশের পক্ষে তার রাজ্য রক্ষা করা সম্ভব না হওয়ায়; গণেশ, নিজে তার পুত্র যদুকে মুসলমান হতে দিয়ে তাকে সিংহাসনে বসিয়ে যায়। এভাবে বাংলা আবার মুসলিম শাসনে চলে যায় এবং ছলে বলে নানা কৌশলে মুসলমান শাসকরা হিন্দুদেরকে মুসলমান বানাতে থাকে। এই সময় আবির্ভাব হয় চৈতন্যদেবের। তিনি হিন্দুদেরকে মুসলমান হওয়া থেকে ঠেকাতে ইসলামের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য রেখে হিন্দু ধর্মকে কিছুটা অদল-বদল করে বৈষ্ণব ধর্ম চালু করেন। এর ফলেই মুসলমানদের মতো, হিন্দু বৈষ্ণব সমাজে চালু হয় কবর ব্যবস্থা, কিন্তু তা কিছুটা পরিবর্তিত রূপে, যার উল্লেখ উপরেই করেছি।
মূলতঃ হিন্দু সমাজের যে প্রধান চারটি ভাগ- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র; বৈষ্ণবরা এর বাইরে আলাদা একটি সমাজ। আমি নিজেও বৈষ্ণব সমাজের একজন সদস্য। আমি দেখেছি, অনেক বৈষ্ণব, তাদেরকে মরার পর পোড়ানো হয় না বলে গর্ববোধ করে এবং শবদাহকে, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ব’লে, অন্য হিন্দুদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। এর প্রভাবে, বৈষ্ণবদের বাইরেও অনেক হিন্দু, মরার পর, তাদেরকে না পোড়ানোর জন্য বলে যান এবং কেউ কেউ জ্বালানী খড়ির অভাবে, মুখে জাস্ট আগুন ছুঁইয়ে বৈষ্ণবদের মতোই সমাহিত করে।
মধ্যযুগে মুসলমান হওয়ার স্রোত ঠেকাতে, চৈতন্য দেব- জৈন ও শিখ ধর্মের মতো বৈষ্ণব ধর্ম চালু করেন, এতে হিন্দু সমাজ যে অনেকটা রক্ষা পেয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং চৈতন্যদেব সেই সময় যা করেছেন, তা ঠিক ছিলো এবং তা প্রশংসার যোগ্য। দুর্যোগ বা বন্যার সময় প্রাণ বাঁচাতে শিয়াল-কুকুরও এক জায়গায় থাকতে বাধ্য হয়, কিন্তু সেটা সব সময়ের জন্য নয়, আপদকালীন ব্যবস্থা। বৈষ্ণব সমাজের এই কবর ব্যবস্থাও হওয়া উচিত ছিলো আপদকালীন। শুনেছি, অনেক সাধু-সন্ন্যাসীকেও নাকি মরার পর, দাহ করা হয় না। এর মাধ্যমে মূলত তারা সমাজকে এই বার্তা দিচ্ছে যে, দাহ ব্যবস্থার চেয়ে কবর ব্যবস্থা ভালো। কিন্তু দাহ ব্যবস্থা ই যে সর্বোত্তম অন্তিম সংস্কার ব্যবস্থা, আমার এই লেখা পড়া শেষ হওয়ার পর তা উপলব্ধি করতে পারবেন।
মুসলমানরা মৃতদেহকে যতই আদর যত্ন করুক, আর যতই আতর-সুগন্ধি লাগাক, বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, স্বাভাবিক ভাবে, ২৪ ঘণ্টার বেশি তারা সেই লাশ রাখতে পারবে না, এরপর কবরস্থ তাকে করতেই হবে। কিন্তু দাফন করার পরই মৃতদেহের কী অবস্থা হয়, আমার এই বর্ণনাটি পড়ুন আর সেই সাথে, সেই অদেখা দৃশ্যটি কল্পনা করুন।
স্বাভাবিক ভাবে ২৪ ঘন্টার পর থেকেই মৃতদেহ পচতে শুরু করে। আলু, বেগুন পচে গেলে, বিবর্তনের নিয়মে, তার মধ্যে যেমন পোকা তৈরি হয়; ঠিক তেমনি মানুষের দেহ পচে গেলেও দেহের ভেতর নানা রকম পোকার জন্ম হয়। এই পোকাগুলো জন্মের পর থেকেই দেহের মাংস রক্ত খেয়ে পুষ্ট হয় এবং প্রথমেই বের হয় আমাদের দেহের যেসব ছিদ্র আছে, যেমন- নাক, মুখ, কান, পায়ু এবং মেয়েদের যোনী, সেসব ছিদ্রের ভেতর দিয়ে। দেহের মধ্যেই এই পোকাগুলো খুব দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে এবং একসময় বুক, পেটের চামড়া ছিদ্র করে হাজারে হাজারে কিলবিল করে বের হয়ে আসতে থাকে। মানুষের মৃতদেহেই এই পোকাগুলোর জন্ম, দেহ খেয়েই এদের পুষ্টি ও বংশবৃদ্ধি, তারপর খাবার শেষ হয়ে গেলে এই পোকাগুলো এমনিতেই মরে যায়। পড়ে থাকে শুধু মানুষের হাড়-গোড় অর্থাৎ কংকাল। এছাড়াও মাটির ভেতর কিছু পোকা থাকে, তারাও শুরুতেই আক্রমন করে দেহকে এবং দেহের নাক, কান, মুখ, পায়ুপথের মতো ছিদ্রগুলো দিয়ে দেহের মধ্যে ঢুকতে থাকে। একবার কল্পনা করুন, আপনার প্রিয় মানুষের মৃতদেহের মধ্যে হাজারে হাজারে পোকা ঢুকছে আর বেরুচ্ছে, আর সেই মৃত মানুষটাকে খাচ্ছে। বহুযত্নে কবর দেওয়া মুসলমানদের লাশের ঠিক এই অবস্থা শুরু হয় কবর দেওয়ার পর থেকেই এবং চলতে থাকে কয়েক সপ্তাহ এবং এই একই অবস্থার মধ্যে পড়ে বৈষ্ণব হিন্দুদের মৃতদেহগুলোও। এক কথায় যারাই লাশ মাটিতে কবর দেবে, তাদের কারোরই প্রকৃতির এই পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা নেই। এছাড়াও এই পোকামাকড়গুলোর কিছু কিছু, মাটির বাইরে বেরিয়ে এসে যে প্রকৃতিকে দূষণ করে বা করতে পারে, এটা বোঝার জন্য কারো আইনস্টাইনের মতো বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার পড়ে না। কবর দেওয়ার ফলে বসবাসের বা চাষের জমির যে অপচয় হয়, সেটা তো ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চাও বোঝে।
কোথাও কোথাও মৃতদেহকে জলে ভাসানো হয় বা ভয়াবহ বন্যার সময় যখন দাহ করা বা কবর দেওয়া সম্ভব হয় না, তখনও আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এতে জলজ প্রাণীরা মৃতদেহকে খেয়ে ফেলে ঠিকই, কিন্তু কিছুটা হলেও তা জলদূষণ করে প্রকৃতির ক্ষতি করে।
কিছু কিছু মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যেমন- প্লেগ, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, সার্চ, অ্যানথ্রাক্স ইত্যাদির ফলে- মারা যাওয়া মানুষ ও পশুপাখিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়, এটা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্তু কেনো ? মাটিতে পুঁতে ফেলার পর, লাশ বা মৃত জীবজন্তু থেকে সৃষ্ট রোগ-ব্যাধির কবল থেকে যদি মুক্তিই পাওয়া যেতো, তাহলে তো আর পোড়ানোর দরকার পড়তো না।
আরবের মরুভুমিতে অনাবাদী জমির কোনো অভাব নেই এবং সেখানে তেমন বেশি কোনো গাছপালাও নেই, তাই আরবের মানুষের কাছে, মৃতদেহ কবর দেওয়াকে যুক্তিযুক্ত মনে হতে পারে। কবর দেওয়ার পর লাশের কী অবস্থা হচ্ছে, সেটা তো মানুষ আর দেখতে পাচ্ছে না বা দেখছে না, তাই ওটা নিয়ে তাদের খুব একটা মাথা ব্যথাও ছিলো না। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশ, গাছপালায় সমৃদ্ধ উর্বর ভূমির এলাকা। এখানে জমির যেমন প্রচুর মূল্য, তেমনি জ্বালানী কাঠও সহজলভ্য। তাই কবর দেওয়ার চেয়ে পোড়ানোই এখানে পরিবেশ সম্মত এবং বেশি উপকারী। ইদানিং পোড়ানোতে এসেছে বৈদ্যুতিক চুল্লী। ফলে গাছ তো কাটতে হচ্ছেই না, উল্টো খোলা অবস্থায় পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধের হাত থেকেও মিলেছে মুক্তি; যা দাহ ব্যবস্থাকে করে তুলেছে আরো গ্রহনযোগ্য।
গীতার ভাষ্য অনুযায়ী, মানুষের মৃতদেহের কোনো দাম নেই; তাই ওটা নিয়ে শোক করারও কিছু নেই। হিন্দু শাস্ত্র মতে, আগুন হলো দেবতা এবং আগুনের স্পর্শেই সবকিছু পুড়ে খাঁটি হয়। এজন্য রবি ঠাকুর বলেছেন, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে। বাস্তবেও সকল শুভ কাজের শুরু হয় আগুন দিয়ে; একারণেই ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেই আগুন দিয়ে ধূপকাঠি বা আগরবাতি জ্বালিয়ে দিন শুরু করে; এখানে হিন্দু মুসলমানের আচরণে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা যত খাবার খাই, তার প্রায় ৯৫% আগুনের সাহায্যে তৈরি। এজন্য খুব সহজেই এটা ধরে নেওয়া যায় যে, আগুনের সাহায্যেই আমরা বেঁচে আছি। ধর্মকে সরিয়ে রাখলেও, বিজ্ঞান মতে, সূর্য থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি আর সূর্যের আলোর জন্যই পৃথিবীর উপরে বসবাসরত সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের সৃষ্টি। এই সূর্য হিন্দুদের একটি দেবতা এবং তা একটি অগ্নিপিণ্ড। সুতরাং সৃষ্টির শুরু যেমন আগুন দিয়ে, তেমনি মানুষের নশ্বর দেহের সমাপ্তিও ঘটছে সেই চিতার আগুনে। আবার মাটির দেহ, পোড়ানোর ফলে তা ছাইয়ে পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই মিশে যাচ্ছে, যা শক্তির নিত্যতার সূত্রের মধ্যে পড়ে; ফলে মৃতদেহ পোড়ানোয়- মাঝখানে আপনাকে - পোকামাকড়ের খাদ্য হতে হচ্ছে না বা কিছু পোকা-মাকড় সৃষ্টির কারণ হয়ে প্রকৃতিরও ক্ষতি করতে হচ্ছে না।
এসব কারণে আমাদের মুনি-ঋষিরা, অন্তিম সংস্কারের সকল পদ্ধতির চুল-চেরা বিশ্লেষণ করে মৃতদেহ পোড়ানোকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেছেন এবং হিন্দু সমাজের জন্য বিধান হিসেবে তা দিয়ে গেছেন; কারণ, দাহ এক প্রকার যজ্ঞ এবং দাহের ফলে প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রায় সবকিছু শুদ্ধ হয়ে যায় । এই দাহের ফলেই ভারতে বেঁচে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ হেক্টর ভূমি, যা কৃষিজ উৎপাদন ও বসবাসের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে মুসলমানরা এবং মুসলিম দেশগুলো, কবরখানার জন্য লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যা এক কথায় চরম অপচয়।
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলা শহরে এক বা একাধিক সরকারী কবরখানা আছে, সেখান থেকে নির্ধারিত মূল্যে জমি কিনে কাউকে কবরস্থ করতে হয়। এছাড়াও অনেক পরিবারের ব্যক্তিগত কবরখানা আছে। জনসংখ্যার আধিক্যে যেখানে জীবিত মানুষেরই থাকার জায়গা হচ্ছে না, সেখানে মৃতদের জন্য জমি ফেলে রাখা, এক চুড়ান্ত মূর্খতার পরিচয়।
ব্যক্তিগত কবরখানায় হোক বা সরকারী কবরখানায়, মুসলমানদের একটি লাশ দাফন করা প্রচুর খরচের ব্যাপার, অনেকের পক্ষেই এই খরচ জোগাড় করা সম্ভব হয় না, তাই বাংলাদেশের পথে ঘাটে মাঝে মাঝেই দেখা যায়, লাশ দাফন করার জন্য লাশ নিয়েই ভিক্ষা করা হচ্ছে।
খরচাপাতি করে হয়তো লাশ দাফন করা হলো, কিন্তু তারপর সেই লাশগুলো নিয়ে করা হয়, এবার সেই ব্যাপারটা দেখা যাক। এই বিষয়ের উপর একটি ডকুমেন্টারি, বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেল তালাশ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করেছিলো, সেখানে যা দেখেছি, তা হচ্ছে: দাফন করার পর, মৃত ব্যক্তির সামাজিক প্রভাব অনুযায়ী, তার লাশ- কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস কবরে থাকে, তারপর সেই লাশ উধাও হয়ে যায়। যারা কবরখানার দেখা শুনা করে তারা কবর থেকে সেই আধাপচা মৃতদেহগুলো বা হাড়গোড়গুলো তুলে অন্য বড় একটি গর্তে ফেলে রাখে; এই দৃশ্য দেখলে আপনার মনে হবে, এটা যেন একটা বধ্যভূমি। অতঃপর ঐ একই কবর আরেক জনের কাছে বিক্রি করে। এভাবে একই কবর কতজনের কাছে, কতবার যে বিক্রি হয়, তার কোনো হিসেব নেই। মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদেরকে কংকাল সরবরাহ করার জন্য লাশ চুরি তো কবরখানার একটি সাধারণ ঘটনা। এছাড়াও পাকিস্তানের একটি কবরখানায় ২০১৫ সালেই এক অসাধারণ ঘটনা ঘটেছে, এক মুসলমান, সদ্যকবর দেওয়া মহিলাদের লাশ তুলে তাকে ধর্ষণ করতো, সে যখন ধরা পড়লো, তখন তার কাছ থেকে জানা গেলো অনেক আগে থেকেই সে এই কাজ করছে। মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেললে লাশ নিয়ে এসব ব্যবসা বা অরুচিকর ঘটনা ঘটার সুযোগ যে নেই, সেটা কিন্তু নিশ্চিত।
তাছাড়াও সরকারী কবরখানাগুলোর একটি নিয়ম আছে, যখন কবরখানায় আর কোনো জায়গা থাকে না, তখন মোটামুটি ২০/৩০ বছর পর পর সাধারণ লোকের সব কবর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে আবার কবরের জায়গা বের করা হয়। লাশ নিয়ে মুসলমানদের এত আবেগ, তখন কোথায় থাকে বা যায় কোথায় ?
এত আদর যত্নে দাফন করা লাশের এমন পরিণতির কথা মুসলমানরা কি জানে, না এসব খবর তারা রাখে ?
এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের একটি ঘটনা বলি। ৭১১ খিষ্টাব্দে, মুহম্মদ বিন কাশিমের কাছে সিন্ধুর হিন্দু রাজা দাহির পরাজিত হলে, রাজপরিবারের মেয়েরা সম্মান বাঁচাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সময় তাদের এক মন্ত্রী রাণীকে জানায়, মুসলিম সৈন্যরা খুবই নৃশংস এবং অমানবিক হয়, এমনকি তারা মৃত মেয়েদেরকেও ধর্ষণ করতে ছাড়ে না। এই কথা শুনে মৃত্যুর পর দেহের পবিত্রতা রক্ষার্থে রাণী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অন্তঃপুরের সব মেয়েরা ঐভাবেই আত্মাহুতি দেয়। সেই সিন্ধু এখন পাকিস্তানের অন্তর্গত, আর সেই পাকিস্তানের মুসলমানরা যে লাশকে ধর্ষণ করবে, এতে আর আশ্চর্য কি ? ডিএনএর মাধ্যমে ধর্ষণের জিন তো মুসলমানরা বয়ে নিয়ে আসছে সেই ১৪০০ বছর ধরে, মাঝে মাঝে তার প্রকাশ কি ঘটবে না ?
হিন্দু সমাজের যেসব হিন্দু শবদাহের সাথে জড়িত, তারা কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে, কিন্তু তারা এর পেছনের বিজ্ঞানটাকে জানে না বলে নানা ধরণের কুসংস্কারের শিকার। যেমন তারা মনে করে শবদাহের একপর্যায়ে মৃত জীবিত হয়ে উঠে বসে, তখন তারা আবার তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে চিতায় শুইয়ে দেয়। আবার কোথাও কোথাও এই ধারণা প্রচলিত আছে, যে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাথা যদি ফাটিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে ঐ মৃতের আত্মা তার শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যায় না, এতে তার আত্মা পৃথিবী থেকে মুক্তি পায় না। এর সবই আসলে শাস্ত্র বহির্ভূত এবং অবৈজ্ঞানিক। ডা্ক্তারি পরীক্ষায় যদি প্রমানিত হয় যে কেউ মারা গেছে, তাহলেই এটা নিশ্চিত যে তার আত্মা দেহ ছেড়ে চলে গেছে। সেই আত্মার আবার তার দেহে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এজন্য পৃথিবী থেকে সেই আত্মার মুক্তি না পাওয়ারও কোনো প্রশ্নই নেই, অবশ্য মোক্ষ বলতে যে মুক্তি বোঝায়, এখানে সেই মুক্তির কথা বলা হচ্ছে না, মোক্ষ নামের সেই মুক্তি কেউ পাবে কি পাবে না, তা শুধু পরম ঈশ্বর জানেন।
যা হোক, আর চিতায় মৃতের উঠে বসার বা নড়ে চড়ে উঠার কারণ হলো, মানুষের দেহে যেসব শিরা ও ধমনী আছ, যাদেরকে আমরা সাধারণভাবে বলি রগ, দেহ যখন আগুনে পুড়তে থাকে তখন সেই রগগুলো সংকুচিত হয়, এককথায় টান লাগে আর এই টানে দেহ নড়েচড়ে উঠে বা অনেক সময় টান সোজা হলে মৃতদেহ সটান চিতার উপর উঠে বসে, যেন কোনো জীবিত লোক শোয়া থেকে উঠে বসলো। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ ডা্ক্তারি পরীক্ষায় কেউ মৃত বলে প্রমানিত হলে কারো পক্ষেই আর জীবিত হয়ে উঠা সম্ভব নয়। সেজন্য মৃতদেহকে আবার চিতায় শোয়ানোর জন্য লাঠি দিয়ে আঘাত করার কোনো দরকার নেই এবং তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়ারও দরকার নেই। আপনারা যারা এই বিষয়টি জানলেন, আমার অনুরোধ নিজ নিজ এলাকায় এই বিষয়টি প্রচার করবেন, যাতে সবাই প্রকৃত সত্যটা জানতে পারে এবং শবদাহের সময় এইসব ঘটনা ঘটিয়ে মৃতদেহের উপর যাতে অনাচার না করে।
একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, মুসলমানদের আশে পাশে আমাদের বাস। আর মুসলমানরা সব সময় চেষ্টায় আছে, হিন্দু সমাজের খুঁত ও ভুল ত্রুটি বের করে হিন্দু সমাজকে ধ্বংস করার জন্য। এজন্য আপাতদৃষ্টিতে হিন্দু সমাজের যে বিষয়গুলোকে খারাপ বলে মনে হয়, মুসলমানরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সরলমনা হিন্দু ছেলে মেয়েদেরকে নানা প্রশ্ন করে এবং সেই বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরে তাদের ব্রেইনওয়াশ ক’রে তাদেরকে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করে। এজন্য এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদেরকে সাবধানে এগোতে হবে, প্রতিটি ছেলে মেয়েকে হিন্দুধর্মের মূল বিষয়গুলো যুক্তিগ্রাহ্য ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা মুসলমানদের প্রশ্নের মুখে পড়ে কোনভাবেই হেয় না হয়। যেমন আমি এই শব দাহ নিয়েই দুটো ঘটনা জানি, যেখানে মুসলমানরা দাবী করে যে, বাবার মৃতদেহ পোড়ানোর দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে মুসলমানন হয়েছে। সত্য মিথ্যা জানি না, কিন্তু এর সুযোগ যে মুসলমানরা নিচ্ছে এবং নেবে, এটা তো নিশ্চিত। সেই সুযোগ তাদেরকে আমরা দেবো কেনো ? তাই কারো মৃতদেহ দাহ করার আগে ছোট ছেলে মেয়েদেরকে চিতার কাছে নিয়ে গিয়ে দাহ করার দৃশ্য দেখতে দেবেন না বা সেই ধরণের পুরুষকেও চিতার আশে পাশে থাকতে দেবেন না, যারা এই বিষয়টির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা জানে না বা যাদেরকে জানানো হয় নি।
সুতরাং উপরের এই আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, মৃত্যুর পর মৃতদেহের কোনো দাম না থাকলেও, লাশের পবিত্রতা রক্ষার্থে, পোকামাকড়ের কবল থেকে লাশ রক্ষা করতে এবং লাশের অপব্যবহার রুখতে লাশ পুড়িয়ে ফেলা ই সর্বোত্তম পদ্ধতি। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, অগ্নি দেবতার কাছে নিজেকে সমর্পনের যেমন এতে সুযোগ আছে, তেমনি এই পদ্ধতি পরিবেশ সম্মত এবং যুগ-উপযোগী। বৈষ্ণব সমাজের সদস্য হিসেবে আমার শব দাহ করা হবে না। কিন্তু আমি চাই আমার শবকে দাহ করা হোক এবং সেই নির্দেশ আমি অন্যদেরকে দিয়ে যাবো। কারণ, হিন্দুধর্মের সকল প্রধান পুরুষের শবকে দাহ করা হয়েছে। তাই আমিও চাই, আমার শব, তাদের মতোই গতি লাভ করুক।
শেষ কথা বলছি, জাকির নায়েক মার্কা মুসলমানদের জোর দাবী যে অগ্নিতে আহুতি দেয়ার চেয়ে দাফন ই উত্তম ব্যবস্থা, কেননা এতে নাকি খরচ কম এবং পরিবেশ এর দূষণ কম!
এ বিষয়ে উপরে যা বলেছি, তা আমার কথা; কিন্তু এ বিষয়ে পৃথিবীর শীর্ষ জরিপকারী সংস্থা ও এই বিষয়ক গবেষনাগুলো কী বলছে দেখে নিন নিচে, যেগুলোর মধ্যে কিছু আলোচনা প্রসঙ্গক্রমে উপরেও করেছি :
১) দাফন এর ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহনসহ কফিন ও বিভিন্ন আনুসঙ্গিকতার কারনে এর সর্বোপরি খরচ অগ্নদাহ থেকে অনেক বেশী। (তথ্যসূত্র-Sublette&flag,funeral customs,pg no 53)
২) দাফন এর ক্ষেত্রে মৃতদেহটি সংক্রামন এর মারাত্মক উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ইনফেকশাস ডিসিসে মৃত্যুবরণকারীর ক্ষেত্রে দাফন খুব মারাত্মক মহামারী ডেকে আনতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি পানি,বাতাস ও মাটির দূষণকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে (তথ্যসূত্র-Spongoberg,Alison L Becks,inorganic water,air and soil contamination,pg no. 117)
৩) জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ওই সব দেশের সরকার দাফনকে বাদ দিয়ে অগ্নিদাহকে উৎসাহিত করছে; কেননা, দাফনে জমির প্রচুর অপচয় হয়। (তথ্যসূত্র-Furse Raymond,An invitation in japan,pg.73)
৪) জার্মানিতে বর্তমানে দাফন করলেও সেই জায়গার মাটিটুকু একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মৃত ব্যক্তির অভিভাবকদের জন্য লিজ দেয়া হয় এবং দেহ ডিকম্পোসড হয়ে যাওয়ার পর দেহাবশেষ তাদেরকে হস্তান্তর করে তা আবার নিয়ে নেয়া হয় কেননা এত জমি অপচয় করা সম্ভব নয়! (তথ্যসূত্র-Wikipedia)
৫) ফিউনেরাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা জানিয়েছে যে উপর্যুক্ত বিষয়সমূহের কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ এখন ঝুঁকছে অগ্নিদাহের দিকে!
৬) আরো আশ্চর্য বিষয় এই যে National Botanical Research institute of India জানিয়েছে যে মৃতদেহ অগ্নিতে আহুতি দেয়ার সময় যে হবন সামগ্রী ব্যবহৃত হয় তা দিয়ে মৃতদেহ পোড়ালে উৎপন্ন মারকারির পরিমান নূন্যতম হয় ফলে পরিবেশের প্রায় কোন ক্ষতিই হয়না বরং এতে অধিকাংশ ইনফেকশাস ব্যক্টেরিয়া মারা যায়!
৭) বর্তমানে অনেকক্ষেত্রেই মৃতদেহ দাহ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে Crematorium যার ফলে বায়ুতে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান শুন্য।
৮) আমেরিকান গবেষক Sarah Steafenson জানিয়েছেন যে আজকাল দাফনের আগে মৃতদেহ সবাইকে দেখানোর জন্য তাজা রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফরমালডিহাইড সহ আরো কয়েকটি রাসায়নিক দ্রব্য যে প্রক্রিয়াকে বলা হয় Enbalming.দাফন এর পর এই রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ নির্গত হয়ে মাটির মারাত্মক দূষণ করে এবং ফসল এর মাধ্যমে এই দূষন সাধারন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, বৈজ্ঞানিকভাবে কোনটা ভালো, বৈদিক অগ্নি আহুতি নাকি আব্রাহামিক দাফন ?
জয় হিন্দ।
জয় শ্রী রাম। জয় শ্রী কৃষ্ণ।
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন