শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭

আম্বেদকর ও বৌদ্ধধর্ম


আম্বেদকর ও বৌদ্ধধর্ম

প্রশান্ত কুমার মণ্ডল-এর পোস্ট শেয়ার করেছেন               প্রণব কুমার কুণ্ডু।

Prasanta Kumar Mondal-এর পোস্ট
Binode Saradar এবং অন্যান্য 93 জন এর সঙ্গে আছেন।

ডঃআম্বেদকর বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ করেছিলেন কেন?

ডঃবাবাসাহেব আম্বেদকর কেন বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ করেছিলেন,  এই প্রশ্ন প্রায় শোনা যায়।

জঘন্য জাতিভিত্তিক ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মকে যখন তিনি ছাড়তে বাধ্য হলেন,  তখন তাঁর কাছে ইসলাম, খ্রিস্টান,বৌদ্ধ,  জৈন প্রভৃতি ধর্মের ধর্মগুরুরা তাদের নিজ নিজ ধর্মের মহিমা কীর্তনের জন্য হাজির হলেন।

ঐসব ধর্মগুরুরা জানতেন না যে,  ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর ইতিমধ্যে সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পড়ে ফেলেছেন।তাই তিনি বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদের বুঝিয়ে দিলেন যে, কেন তিনি বৌদ্ধধম্মকে পছন্দ করেন এবং কেন বৌদ্ধধম্ম গ্রহন করবেন।

পৃথিবীর সব দেশ যদি সর্বসম্মতিক্রমে এমন আইন পাশ করতো,  যে শৈশব থেকে কোনো শিশুর উপর ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না,  এবং ২১ বছর বয়সের পর প্রতিটি যুবক,যুবতী যদি মনে করেন,  তার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রয়োজন,তাহলে সে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলি পাঠ করে,  তার পছন্দ মতো একটি ধর্ম সে গ্রহণ করতে পারবে।আর যদি সে মনে করে বাঁচার জন্য তার কোনো ধর্মের প্রয়োজন নেই,  তাহলে ধর্মছাড়া তাকে বাঁচতে দিতে হবে।

এমন সৎ সাহস পৃথিবীর দেশগুলি দেখাতে পারবে কী?

এখন দেখুন কি কারণে ডঃ আম্বেদকর বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ করেছিলেন।
ডঃআম্বেদকর ত্রিপিটক পাঠ করে ত্রিপিটকের সারমর্মগুলি লিপিবদ্ধ করেন।অহিংসা, সাম্য, মানবতা, ঈশ্বরবিহীনতা,
মানব কেন্দ্রীক ধর্ম, ধর্মীয় গোঁড়ামি মুক্ত ও যুক্তিনিষ্ঠ ধর্ম,  এমন সব বাস্তব উপদেশ তিনি কোনো ধর্মগ্রন্থে পাননি।

1. মুক্ত সমাজের জন্য ধর্মের প্রয়োজন রয়েছে।
2. সব ধর্মই গ্রহণযোগ্য নয়।
3. ঈশ্বর বা আত্মা, স্বর্গ বা পৃথিবী সম্পর্কীয় তত্ত্ব,  কল্পনার সঙ্গে নয়-- জীবনের বাস্তব ঘটনার সঙ্গে,  ধর্মের সম্পর্ক থাকা আবশ্যক।
4. ঈশ্বরকে ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু ধরা অনুচিত।
5. আত্মার মুক্তিকে ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু করা উচিত|
6. পশুবলিকে ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু করা অনুচিত|
7. শাস্ত্রের মধ্যে নয়,মানুষের হৃদয়ের মধ্যে থাকে প্রকৃত ধর্মের অস্তিত্ব|
8. মানুষ এবং নৈতিকতাকে অবশ্যই ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে;তা না হলে ধর্ম হয়ে দাঁড়ায় এক নিষ্ঠুর কুসংস্কার।
9. নৈতিকতার জীবনাদর্শই যথেষ্ট নয়।যেহেতু ঈশ্বর নেই,তাই নৈতিকতাকে অবশ্যই জীবনবিধান হতে হবে।
10. জগতের পুনর্গঠন ও জগতের সুখের বিধানই ধর্মের কর্তব্য;এর উৎপওি ও বিনাশের কারণ বিশ্লষণ  নয়।
11. স্বার্থের সংঘাতই জগতের দুঃখের কারণ এবং তা নিরসনের একমাএ উপায় অষ্টাঙ্গ মার্গের অনুসরণ।
12. সম্পওির ব্যক্তি-মালিকানা এক শ্রেণীর হাতে ক্ষমতা এনে দেয় এবং অন্য শ্রেণীর জন্য নিয়ে আসে দুঃখ।
13. জগতের কল্যাণের জন্য দুঃখের কারণ উদঘাটন করে তার অবসান করা প্রয়োজন।
14. সব মানুষই সমান।
15. জন্ম নয়,যোগ্যতাই মানুষের মূল্যায়নের মানদন্ড।
16. উচ্চ বংশে জন্মগ্রহণ নয়,উচ্চ আদর্শই গুরুত্বপূর্ণ ।
17. সকলের প্রতি মৈএীভাব কখনই পরিত্যাগ করা চলবে না।এমন কি শত্রুর প্রতিও তা প্রদর্শন করা মানুষের কতর্ব্য ।
18. প্রতিটি মনুষের শিক্ষার প্রয়োজন।
19. চরিত্র বিযুক্ত শিক্ষা বিপজ্জনক।
20. কিছুই অভ্রান্ত নয়।কিছুই চিরকালের জন্য বাধ্যতামূলক নয়,সব কিছুই অনুসন্ধান ও পরীক্ষা-- সাপেক্ষ।
21. কিছুই চুড়ান্ত নয়।
22. সব কিছুই কার্য-কারণ বিধানসাপেক্ষ।
23. কিছুই চিরস্থায়ী বা সনাতন নয়।সব কিছুই পরিবর্তণশীল।
24. ন্যায় ও সত্যের জন্যে না হলে,  যুদ্ধ অন্যায়।
25. পরাজিতের প্রতি বিজয়ীর কতর্ব্য রয়েছে।

মানুষের দুঃখের কারণ মোচনের জন্য বুদ্ধ পঞ্চশীল বা পঞ্চ আচরণের কথা বলেছিলেন।
১।প্রাণী হত্যা করা বা প্রাণী হত্যার কারণ হওয়া থেকে বিরত থাকা।
২।চৌর্যবৃত্তি অর্থাৎ প্রতারণা বা বলপূর্বক অন্যের সম্পত্তি অর্জন করা,  বা অধিকার করে রাখা থেকে,  বিরত থাকা।
৩।অসত্য ভাষণ থেকে বিরত থাকা।
৪।সম্ভোগ ইচ্ছা থেকে বিরত থাকা।
৫।মাদক পানীয় থেকে বিরত থাকা।

মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায় দূর করতে বুদ্ধ অষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা বলেন--
১।সম্যক-দর্শন অর্থাৎ কুসংস্কার থেকে মুক্তি।
২।সম্যক উদ্দেশ্য-- যা মহৎ,বুদ্ধিমান ও একাগ্রচিত্ত মানুষদের যোগ্য।
৩।সম্যক বাক্য অর্থাৎ সদয়,অকপট ও সত্য ভাষণ।
৪।সম্যক আচরণ অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ,সততাযুক্ত ও পবিত্র কর্ম।
৫।সম্যক জীবিকা,  অর্থাৎ জীবন্ত প্রাণীর ক্ষতিসাধন না করে।
৬।সম্যক নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা।
৭।সম্যক চেতনা অর্থাৎ সজাগ ও উদ্যোগী মন।
৮।সম্যক ধ্যান অর্থাৎ জীবনের গভীর রহস্য সম্পর্কে আন্তরিক চিন্তা।

এগুলিই বুদ্ধের মতবাদের মূলকথা।
কত প্রাচীন অথচ কত আধুনিক কত নতুন।
কত যুক্তিনির্ভর এবং কত মানবিক।বৌদ্ধধর্মে ঈশ্বর,  ও ধর্মীয় গোঁড়ামির,  কোনো চিহ্ন নেই।
অহিংস,ভেদাভেদহীন এমন মানবধর্ম পৃথিবীতে বিরল।
বৌদ্ধধম্মের মতো এমন অহিংস,সহজ-সরল জীবন দর্শন,  পৃথিবীর কোনো ধর্মে নেই।
বৌদ্ধধম্ম ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম মানবতাকে এত উচ্চ আসন দেয়নি।
যেকারণে পৃথিবীর বড় বড় সহিংস শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে বাদ দিয়ে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর অহিংস,মানবিক,ঈশ্বরবিহীন,মানবকেন্দ্রীক,সাম্যবাদী,যুক্তিবাদী ও বাস্তবধর্ম বৌদ্ধধম্মকে গ্রহণ করেন।

সূস্থ্যভাবে বাঁচার জন্য মানুষের তিনটি জিনিস আবশ্যক-- জল,বায়ু আর খাদ্য।
বাঁচার জন্য ধর্ম মোটেই আবশ্যক নয়।
তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস শৈশবে শিশুর উপর ধর্ম চাপিয়ে না দিয়ে  ২১ বছর বয়সের পর,  তাদের ধর্ম বাছায়ের সুযোগ দিলে, বুদ্ধের মানবিক,অহিংস ও যুক্তিবাদী ধর্ম সর্বোচ্চ ভোট পাবেই।

Prasanta kumar Mondal
Prasanta2032.blogspot.com

শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন