শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭

ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং অবতার


ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং অবতার

প্রশান্ত কুমার মণ্ডল-এর পোস্ট শেয়ার করেছেন              প্রণব কুমার কুণ্ডু।

Pranab Kumar Kundu


Prasanta Kumar Mondal    Binod Saradar  এবং অন্যান্য 79 জন এর সঙ্গে আছেন।

অবতারবাদের ব্রাহ্মণ্যবাদী ছেলেমানুষী--- কল্পকাহিনীঃ  P.K.Mondal.

ব্রাহ্মণদের বিনাপুঁজির ব্যবসার লোকঠকানো উপকরণগুলি হল--- আত্মা-প্রেতাত্মা-স্বর্গ-নরক-পাপ-পূন্য-আশীর্বাদ-অভিশাপ-জন্মান্তরবাদ-অবতারবাদ।

অনার্য বা শূদ্রবিরোধী আর্য ব্রাহ্মণদের অবতারবাদের কাহিনী ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন পুরাণে।
ভারতের আদিবাসিন্দা অনার্য অসুর বা দানব ধ্বংস করতে বিষ্ণুর দশাবতারের কাহিনী ফাঁদা হয়েছে।

বেদ সহ অন্যান্য বাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃত সাহিত্য যাঁরা পড়েছেন তাঁরা অবশ্যই স্বীকার করবেন যে অসুর,দৈত্য,দানব,
রাক্ষস বলতে ভারতের মূলনিবাসী বা অনার্যদের বোঝানো হয়েছে।

বিষ্ণুর অবতাররা হল মৎস্য,কুর্ম,বরাহ,নৃসিংহ,বামন,পরশুরাম,রাম,কৃষ্ণ,বুদ্ধ আর Coming কল্কি অবতার।

ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাজার ছেলেমানুষির মধ্যে,  পৃথিবী বিখ্যাত ছেলেমানুষি হল,  নিরীশ্বরবাদী বুদ্ধদেবকে বিষ্ণুর নবম অবতার বলে নির্লজ্জ প্রচার।

যে গৌতমবুদ্ধ অমানবিক জাতিভেদ সর্বস্ব জঘন্য ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, পৃথিবী বিখ্যাত অহিংসবাদী এবং নিরীশ্বরবাদী হলেন,  সেই বুদ্ধদেবকে এরা বিষ্ণুর নবম অবতার বানিয়ে দিলেন।

অবতারবাদের কল্পকাহিনীঃ—
১।বিষ্ণুর মৎস্য অবতারঃ-বিষ্ণুকে দিয়ে মহাপ্রলয় বা জলপ্লাবন আটকানোর চেষ্টা না করে,  ব্রাহ্মণ্যবাদী লেখককূল বিষ্ণুকে মৎস্য বানিয়ে দিলেন।মৎস্য হয়ে পৃথিবীর জীবকূলকে বাঁচানোর গল্প খুবই শিশুসুলভ।মনে হয় ব্রাহ্মণ্যবাদী লেখক,  স্বপ্নে জলে ডুবে গিয়েছিলেন,  তাই মৎস্য হয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন।
২।বিষ্ণুর কূর্ম অবতারঃ- এখানেও সেই একই পরিকল্পনা।আমি যদি স্বপ্নে দেখি যে পৃথিবী জলে ডুবে যাচ্ছে,  তখন আমাকে হয় মৎস্য না হয় কূর্ম বা কচ্ছপ হতে চাওয়া, স্বাভাবিক।এই অবতারে নাকি সমূদ্রগর্ভে ডুবে যাওয়া দেবলোকের সব জিনিসপত্র উদ্ধার হয় সমুদ্র মন্থনের দ্বারা।
৩।বিষ্ণুর বরাহ অবতারঃ- হিরণাক্ষ্য দানব নাকি পৃথিবীকে পাতালে, অর্থাৎ,  সমুদ্রের নীচে নিয়ে চলে যায়।তার জন্য বরাহ অবতার।এক্ষেত্রে বোধ হয় ব্রাহ্মণ লেখকের আর সাঁতার কাটতে ভালো লাগেনি।তাই বরাহ অবতার।মাটির নিচে তো আর বাঘ বা সিংহকে পাঠানো যায় না।তাই মাটি খোঁড়ার জন্য বিষ্ণুকে নোংরা শূকর বা বরাহ করতেই হল।অবাক জ্ঞান ব্রাহ্মণ লেখকের।পৃথিবীর মধ্যে সমূদ্র আবার সমূদ্রের মধ্যে পৃথিবী।গল্পে গরু গাছে ওঠে।তাই নয় কি?

৪।বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারঃ- ব্রাহ্মণ্যবাদী লেখকের কল্পকাহিনীর চুড়ান্ত রুপ হল অর্ধেক মানুষ ও অর্ধেক সিংহ মূর্তির নৃসিংহ অবতার।পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে অবশ্য এমন উদ্ভট চিন্তা প্রাচীন মানুষ করতো।হিরণ্যকশিপুর অত্যাচার থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে নাকি নৃসিংহ অবতার।এই ব্রাহ্মণ লেখকেরা আবার পৃথিবী বলতে ভারত ছাড়া কিছুই বুঝতো না।

৫।বিষ্ণুর বামন অবতারঃ- দৈত্যরাজ বলি নাকি স্বর্গ,মর্ত্য,পাতাল এই তিনটি পৃথিবী দখল করে নেন।তার মানে অজ্ঞ লেখকের মতে পৃথিবী একটি নয়-পৃথিবী তিনটি।বাকী দুটো পৃথিবী কোথায়?নিশ্চয় ব্রাহ্মণ বলতে পারবে।দেবরাজ্য উদ্ধারের জন্য নাকি বামন অবতার।বামন অবতারে বিষ্ণু নাকি স্বর্গে এক পা্‌, মর্তে বা পৃথিবীতে এক পা,  এবং এক পা বলির মাথায় রেখে,  তাকে পাতালে ঢুকিয়ে দেয়।হাস্যকর অবাস্তব কল্পকাহিনী।

৬।বিষ্ণুর পরশুরাম অবতারঃ-ব্রাহ্মণ্যবাদের সবকিছু ব্রাহ্মণের স্বার্থে।পরশুরাম অবতারটি সম্পূর্ণ ব্রাহ্মণের জন্য।পিতা জমদগ্নির গরুচুরি করার অপরাধে পরশুরাম কার্তবীর্যার্জুনকে হত্যা করে।কার্তবীর্যার্জুনের ছেলেরা পরে জমদগ্নিকে হত্যা করে।পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে পরশুরাম ২১ বার নাকি পৃথবী নিঃক্ষত্রিয় করে।পরে আবার ক্ষত্রিয় এল কোথা থেকে কে জানে?

৭।বিষ্ণুর রাম অবতারঃ- এই অবতার কার প্রয়োজনে?এই অবতারে রামের মহান কীর্তি কী?শূদ্র নিধন?শম্বুক হত্যা।নারী নির্যাতন।

৮।বিষ্ণুর কৃষ্ণ অবতারঃ কংস বধের জন্য নাকি কৃষ্ণ অবতার।একজন কংসের জন্য একটা গোটা অবতার নামাতে হল?

৯।বিষ্ণুর বুদ্ধ অবতারঃ- জঘন্য মানবতাবিরোধি জাতপাত-ভেদাভেদ সম্পন্ন যে ব্রাহ্মণ্যধর্মের মুখে লাথি মেরে গৌতমবুদ্ধ জগৎবিখ্যাত অহিংস নিরীশ্বরবাদী হলেন,সেই বুদ্ধদেবকে ব্রাহ্মণরা বিষ্ণুর অবতার বানিয়ে দিলেন,  কেবল ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকে মজবুত করার জন্য।ব্রাহ্মণ্যবাদীদের চরম বোকামির পরিচয় নয় কি?

১০।বিষ্ণুর কল্কি অবতারঃ- ব্রাহ্মণরা যখন ভাবলো যে আর কোন শাস্ত্রগ্রন্থ গোপন রাখা যাচ্ছে না,  তখন তারা শেষ অবতার কল্কির ভবিষ্যৎবাণী করেন।তাদের মতে কল্কি সম্ভলগ্রামে বিষ্ণুযশা নামক ব্রাহ্মণের স্ত্রী সুমতীর গর্ভে জন্মাবে আর ব্রাহ্মণ্যধর্ম তথা জাতিভেদ বা বর্ণব্যবস্থার বিরোধিদের ধরে ধরে কোতল করবে।ব্রাহ্মণ লেখকের মনোবাঞ্ছা যেমন,  তার অবতার সন্তানের কাজ তো তেমনই হবে।তাই নয় কী?

ব্রাহ্মণ্যবাদী সমস্ত ধর্মশাস্ত্র ব্রাহ্মণের মঙ্গলের জন্য বানানো।জাতপাত বা জঘন্য বর্ণপ্রথা বিলোপ হলে দেশের মঙ্গল।কিন্তু জাতপাত বা বর্ণপ্রথা না থাকলে তো ব্রাহ্মণই থাকবে না।অর্থাৎ ব্রাহ্মণ সমাজের মঙ্গল একমাত্র জাতিভেদের উপর নির্ভরশীল।ব্রাহ্মণ লেখকরা তাই জঘন্য জাতিভেদ বা বর্ণ প্রথাকে ধর্ম বানিয়ে,  তাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।এদের অবতারবাদের কল্পকাহিনীও অজ্ঞ এবং ধর্মভীরু মানুষকে অবতারের ভয় দেখিয়ে.  কেবল ব্রাহ্মণ তথা জাতিভেদকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা।মানবতার স্বার্থে তথা দেশ ও দশের স্বার্থে মানবতাবিরোধি জঘন্য ব্রাহ্মণ্যবাদকে আমাদের সজোরে পদাঘাত করতেই হবে।

Prasanta2032.blogspot.com


শেয়ার করেছেন           প্রণব কুমার কুণ্ডু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন