শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১৮

পুরীর জগন্নাথ মন্দির


     পুরীর জগন্নাথ মন্দির


     ফেসবুক থেকে অংশভাগ করেছেন               প্রণব কুমার কুণ্ডু





#আমরা সকলে জগন্নাথ পুরী সম্পর্কে কিছু না কিছু জানি আজ আপনাদের সামনে পুরীর এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করছি তা হয়তো অনেকেই জানেন না এক নজনে জেনে নিই কি সেই রহস্য.....🤔🤔🤔
১) আমরা জানি পুরীতে জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা দেবীর জন্য ৩টি রথ । কিন্তু শুনে অবাক হবেন যে, একসময় পুরীতে রথযাত্রার সময় ৬টি রথ ব্যবহৃত হত । প্রথম দিকে পুরীর মন্দির এবং মাসীমা মন্দিরের (গুন্ডিচা মন্দির) মধ্যবর্তী স্থানে একটি নদী প্রবাহিত হত । তাই নদীর এই পারে ৩টি রথ এবং ঐ পারে ৩টি রথ ব্যবহৃত হত, এই পারের মন্দির থেকে নদী পর্যন্ত এবং ঐ পারের নদী থেকে মাসীমা মন্দির পর্যন্ত রথগুলো ব্যবহৃত হত । মাঝখানে নদী পারাপারের জন্য একটি বিশাল নৌকা ব্যবহৃত হত যাতে ভগবান জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ থাকত ।
২) জগন্নাথ মন্দিরের একসময়কার বিখ্যাত ভজন গায়কের নাম ছিল মোহাম্মদ আজিজ । তিনি ভগবান জগন্নাথদেবকে সুমধুর ভজন শোনানোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন ।
৩) যীশুখ্রীষ্ট ভগবান জগন্নাথদেবকে অলক্ষ্যে দর্শন করার জন্য পুরী ভ্রমণ করেছিলেন । এর প্রমাণ পাওয়া যায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে মূল মন্দিরের পেছন দিকে একটি বিশাল আকৃতির ক্রুস অভিষিক্ত রয়েছে ।
৪) ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, ভগবান জগন্নাথদেব ও ভগবান বুদ্ধদেবের মধ্যেও এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল । এমনকি পুরীতে ভগবান বুদ্ধদেবের অনেক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় । অপরদিকে শিখদের ধর্মীয় গুরু নানকের কাছেও জগন্নাথদেব প্রিয় ছলেন ।
৫) মন্দিরে ভগবানকে সর্বোচ্চ ৫৬ প্রকার ভোগ নিবেদন করা হয় তা অনেকেরেই জানা । কিন্তু এটি হয়ত অজানা যে জগন্নাথকে কোন বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে সময় প্রতিদিন ৮৮ প্রকার ভোগ নিবেদন করা হয় এবং বিশেষ বড় বড় উৎসবের সময় এর চেয়েও বেশি ভোগ ভগবানকে নিবেদন করা হয় ।
৬) শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে যে ভোগমণ্ডপটি রয়েছে এটি প্রকৃতপক্ষে কর্ণাটক মন্দিরের অংশ, যেটি ১৮ শতাব্দীতে মারাঠা কর্তৃক মন্দিরটির কিছু অংশ ধ্বংস হয়েছিল পরবর্তীতে তার কিছু অংশ পুরী মন্দিরের ভোগমণ্ডপ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
৭) ‘অবধা’ অর্থাৎ ভগবান জগন্নাথদেবের অদ্ভুদ প্রসাদের নাম যে কেউ তৈরি করে না । নিজে নিজেই এই সুস্বাদু-কৃষ্ণ প্রসাদ তৈরি হয় । সবচেয়ে অবিশ্বাস্য যে, বিশাল আকৃতির চুল্লীতে একটির পর একটি বসানো মাটির তৈরি পাত্রে সব উপাদান দিয়ে বসিয়ে দিলে সবচেয়ে উপরের পাত্রটি প্রথমে তৈরি হয়ে যায় । অথচ প্রথা অনুযায়ী বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে নিচের পাত্রটিই আগুনের তাপে প্রথম তৈরি হওয়ার কথা । যা পুরী মন্দিরের অবিশ্বাস্য এক প্রাত্যাহিক ঘটনা । বলা হয় যে, এ প্রসাদ্গুলো স্বয়ং মহালক্ষ্মী রান্না করেন ।
৮) অনেকেই হয়ত জানেন জগন্নাথ পুরীর মন্দিরটি পুরাটাই মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন তৈরি করেছেন । কিন্তু সেই জানার মধ্যে ভুল আছে । প্রকৃতপক্ষে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন শুধু মূল মন্দিরটিই তৈরি করেছিলেন । পুরীর বাকি যেসব অবকাঠামো রয়েছে যেমন মেঘানন্দ পাচেরী, মুখ্য শালা, নাটমন্ডপ এবং অন্যান্য অবকাঠামো বা মন্দিরগুলো তৈরি করেছিল সময়ের আবর্তনে আগত বিভিন্ন রাজা এবং শাসকরা ।
৯) গর্ভ মুর, হল পুরী মন্দিরের সবচেয়ে অদ্ভুদ অংশ যেখানে ভগবানের সবরকমের মূল্যবান অলংকারসমূহ সংরক্ষণ রাখা হয় । এগুলো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যারা নিয়োজিত তারা হল কতগুলো বিষধর অদ্ভূত সাপ এবং স্বর্গীয় আত্মা ।
১০) অপরদিকে রত্ন মুর নামে মন্দিরে উপরের অংশটিতে একটি অদ্ভূত বৃহৎ চুম্বক শক্তি রয়েছে । যেটি মন্দিরকে ঝড়ো বা প্রবল দমকা হাওয়ার স্থির রাখতে বা কোন ধ্বংস হওয়া থেকে অদ্ভূতভাবে সুরক্ষা করে । বলা হয়ে থাকে যে, মাঝে মাঝে ঐ অংশে তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির বিশেষ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় । যা সত্যিই অদ্ভূত ।
১১) আপনি কি জানেন, রথযাত্রার সময় জগন্নাথ, বলদেব এবং সুভদ্রা দেবী যখন রথে আরোহন করে তখন সুদর্শন কোথায় অবস্থান করেন? অনেকেই বলবে জগন্নাথদেবের পাশে কিন্তু অদ্ভূত হলেও সত্য সুদর্শন জগন্নাথের পাশে না বরঞ্চ সুভদ্রা দেবীর পাশে অবস্থান করেন । তখন জগন্নাথের পাশে ‘মদনমোহন’ বিগ্রহ এবং বলদেবের দু’পাশে ‘রামচন্দ্র’ এবং ‘কৃষ্ণ’ এ দুটি পিতলের বিগ্রহ অবস্থান করেন ।
১২) জগন্নাথের সম্মুখে নৃত্য প্রদর্শনের জন্য একদল সেবিকা রয়েছে যাদেরকে দেবদাসী নামে অভিহিত করা হয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এসব সেবিকারদের ৯ বছর বয়সেই বিয়ে হয় স্বয়ং জগন্নাথের বিগ্রহের সঙ্গে । এরা নিজেদেরকে ভগবানের কাছে উৎসর্গ করে শুধুমাত্র এ নির্দিষ্ট সেবা নৃত্য প্রদর্শন করে । এ প্রথা স্বয়ং জগন্নাথদেবেরই নির্দেশে প্রচলিত । এক্ষেত্রে এর পিছনে একটি প্রাচীন সুন্দর কাহিনী রয়েছে । প্রতিদিন এসব দেবদাসী কিছু বিশেষ বিশেষ সময়ে ভগবানের সামনে তাদের নৃত্য প্রদর্শন করে থাকে । নৃত্য প্রদর্শনের সময় তারা দর্শকদের দিকে তাকাবে না । তাদের সকল মনোযোগ ভগবানকে কেন্দ্র করে । তাদের জন্য পুরুষ সঙ্গ নিষিদ্ধ ।
এভাবে যুগে যুগে জগন্নাথ পুরী সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময়ের এবং অদ্ভূত স্থান হিসেবে এই পৃথিবীতে অবস্থান করছে । এখনো মানুষ অবাক বিস্ময় জগন্নাথ এবং জগন্নাথ পুরীর অদ্ভূত সব কার্যকলাপের কথা শ্রবণ করে এবং স্বচক্ষে দর্শনের অভিলাষ করে ।

#ভুল হলে হ্মমা করবেন।🙏

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন