সোমবার, ২ জুলাই, ২০১৮

‎Abhijit Das‎ এতে ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য · ১৩ মাসের নবাব আর তাঁর ফৌতি মসজিদ


 
১৩ মাসের নবাব আর তাঁর ফৌতি মসজিদ         ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু



১৩ মাসের নবাব আর তাঁর ফৌতি মসজিদ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
১৭৩৯ সাল। নবাব সুজা খান মৃত্যুর আগে ছেলে সরফরাজ খানের হাতে মসনদের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। যদিও এর অনেক আগে থেকেই সরফরাজ খান তার বাবার দেওয়ান হিসেবে কাজ করছিলেন। তাই রাজ্যপাট সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা তার ছিল। কিন্তু মসনদের দায়িত্ব সামলানো অন্য ব্যাপার। এইখানে ছোট্ট বলে রাখি, মুর্শিদ কুলি খানের মেয়ে আজিমুন্নেসার সাথে বিয়ে হয় সুজা খানের। তাদের ছেলে সরফরাজ খান। মুর্শিদ কুলি খান মৃত্যুর আগে নাতি সরফরাজ খানের হাতেই বাংলা, বিহার আর উড়িষ্যার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য জামাই সুজা খান এতে খুব একটা তুষ্ট হলেন না। মুর্শিদাবাদ আক্রমণের জন্য পাড়ি দিলেন। বিবাদে না গিয়ে বাবাকে সিংহাসন ছেড়ে দিলেন সরফরাজ। এই হলো গিয়ে ফ্ল্যাশব্যাক। এবার আগে যেখানে ছেড়েছিলাম সেখান থেকেই ধরি। বাবার মৃত্যুর পরে মসনদে বসেই দেওয়ান হাজি আহমেদের সঙ্গে সরফরাজের বিবাদ বাঁধে। হাজি আহমেদ তলায় তলায় তার দাদা আলিবর্দী খানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র শুরু করলেন সরফরাজ কে সিংহাসন থেকে হঠানোর। সঙ্গে নিলেন জগৎ শেঠ ফতেহ চন্দ আর আলম চন্দ কে। সরফরাজ যখন খবর পেলেন ততক্ষনে অলিবর্দী মুর্শিদাবাদ আক্রমণে বেরিয়ে পড়েছেন। তিনিও সৈন্য নিয়ে রওনা দিলেন। নবাবের কিছু লোককে আগেই জগৎ শেঠ টাকা দিয়ে হাত করে নিয়েছিল। মাঝপথে সরফরাজ দেখলেন কামানের গোলার বদলে রয়েছে পাথর আর মাটির ঢেলা। তবুও তাই নিয়ে হাতির পিঠে এগিয়ে চললেন নবাব। গিরিয়া-য় আক্রমণ শুরু হল। কিন্তু কিছু করে ওঠার আগেই মাথায় গুলি লেগে নিহত হলেন সরফরাজ।কিন্তু তার পরেও কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলো তার সেনা যদিও আলিবর্দীর সেনার সামনে তা বেশিক্ষণ টিকে থাকলো না। অন্যদিকে নবাবের মাহুত সবার অলক্ষ্যে নবাবের মৃতদেহ হাতির পিঠে নিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে ফিরে চললো। শেষ রাতে প্রাসাদের ভিতরেই অনাড়ম্বর ভাবে নবাবকে সমাহিত করা হল যাতে এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্য তৈরী না হয়। পরিস্থিতি আন্দাজ করে পরদিন ভোরে সরফরাজ খানের দুই জামাই মুর্শিদাবাদ ফিরে রাজ্য বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করলেন। কিন্তু ততক্ষনে আলিবর্দী আর হাজি আহমেদও মুর্শিদাবাদ পৌঁছে গেছেন। তাই সেই চেষ্টা কাজে এলো না। আলিবর্দী রাজকোষ আর মসনদ অধিকার করলেন। এর সাথেই ১৭৪০সালে সরফরাজ খানের ১৩ মাসের নবাবী অধ্যায়ের অবসান হল।
সরফরাজ খান তাঁর জীবদ্দশায় পাঁচ গম্বুজওয়ালা এক সুবিশাল মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন কিন্তু মসজিদ সম্পূর্ণ তৈরি হওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। যেহেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই নবাবের ফৌত বা মৃত্যু হয় তাই এই মসজিদের নাম হয়েছে ফৌতি মসজিদ। মসজিদের আজ জীর্ণ দশা। সব গুলো গম্বুজও আজ আর নেই। সরফরাজ খানের পরে আরো কত নবাব বাংলার মসনদে বসেছেন, কত সৌধ তৈরি হয়েছে, গোটা একটা হাজারদুয়ারী প্রাসাদ তৈরি হয়েছে কিন্তু কেউ মসজিদ সম্পূর্ণ করেননি। ধ্বংসপ্রাপ্ত এই মসজিদের ভিতরে আজও দাঁড়ালে সেই দিনগুলোর একটা ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে যখন রোজ একদল মিস্ত্রি সকাল থেকে সন্ধ্যা নৈপুণ্যের সাথে কাজ করে মসজিদ তৈরি করত। নবাবের মসজিদ বলে কথা। কত ব্যস্ততা, কত হিসাব নিকাশ যাতে কোথাও কোনো ভুল না হয়। আর একদিন হঠাৎ সব থেমে গেলো। আর একটা ইঁটও গাঁথা হল না। আর কয়েকটা দিন পেলেও হয়তো কাজ শেষ করে ফেলা যেত। তার পরে ২৭৮ বছর পেরিয়ে গেছে। সরফরাজ খানের দুর্ভাগ্যের প্রতীক হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে তাঁর ফৌতি মসজিদ বরং বলা ভালো ভেঙে পড়ার দিন গুনছে।



(সরফরাজ খানের ছবি Wikipedia থেকে নেওয়া)



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন