সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

সতীদাহ


সতীদাহ

শেয়ার করেছেন                                                 প্রণব কুমার কুণ্ডু ।

#সতীদাহ_প্রথা_ও_মুর্শিদাবাদ

সংস্কৃত ‘সতী‘ শব্দটি আক্ষরিক অর্থে এমন সতীসাধ্বী রমণীকে বোঝায় যিনি তার স্বামীর প্রতি চূড়ান্ত সততা প্রদর্শন করেন এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিও থাকেন সত্যনিষ্ঠ। কিন্তু একটি আচার হিসেবে সতীদাহের অর্থ হলো মৃত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহমরণের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা এবং ওই অনুষ্ঠানে তূরীবাদক জনতার মাঝে স্বামীর শেষকৃত্যের চিতায় আরোহণ করা। কবে এবং কিভাবে এ ধরনের আচার ধর্মীয় প্রথারূপে গড়ে উঠেছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। গ্রিক লেখক ডিওডোরাস (আনু. ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এক সতীদাহের ঘটনার বর্ণনা দেন। এই বর্ণনার সঙ্গে আঠারো শতকের প্রচলিত সতীদাহ ব্যবস্থার প্রায় অবিকল মিল রয়েছে। অতীতে বিশ্বের বহু সমাজে মানুষের আত্মাহুতি প্রথার অস্তিত্ব ছিল বলে নৃবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকরা মোটামুটি একমত। রাজপুতরা খুব ঘটা করে এই অনুষ্ঠানটি পালন করত। কিন্তু বাংলাসহ ভারতবর্ষের সকল প্রদেশে হিন্দুদের কোন কোন বর্ণের লোকেরা এই অনুষ্ঠান পালন করত ভিন্নতরভাবে। তুর্কি ও মুগল যুগে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয় নি।
#মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিষ্ক্রিয়তায় ১৭৫৭ সালের পর থেকে বাংলায় সতীদাহ হতো বেশি।
১৮২৩ সালে এদেশে ৫৭৫ টী সতীদাহের কথা জানা যায়।
যে স্ত্রী সতী হবে তাকে স্বামীর মৃত্যুর পরেই কিছু মাদক দ্রব্য খাইয়ে দেওয়া হতো বোধ শক্তি হারানোর জন্য।
তারপর স্বামীর শবের সঙ্গে বেশ শক্ত করে বেঁধে রাখা হতো চিতার উপর। তাদের উপর গড়ে উঠতো জ্বালানি কাঠের স্তূপ চারিদিকে লোক দাঁড়িয়ে থাকতো লম্বা লম্বা বাঁশ নিয়ে।
যদি আগুনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কোনো রকমে বেরিয়ে আসে তাহলে এই সব লাঠিয়াল গুলো তাকে পিটিয়ে আবার চিতার আগুনে ফেলে দিত।
চারিদিকে ঢাক-ঢোল , বাঁশির শব্দ ও কৌতুহলী জনতার কলরবে জীবন্ত দগ্ধ নারীর আর্তনাদ কেউ শুনতে পেত না।
এই নৃশংস অনুষ্ঠান হত প্রকাশ্যে স্থানে সকলের চোখের সামনে।
#বহরমপুর - কাশিমবাজার এ এই ধরনের অমানবিক দৃশ্য দেখেছিলেন রাজা রামমোহন রায় ১৮০৩ সালে যখন তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরি নিয়ে মুর্শিদাবাদ আসেন। এখনকার সতীদাহের রূপ দেখে ও তার দুই বৌদিকে সতী হতে দেখে, এরপর থেকে তিনি সতীদাহ নিবারণের জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
বাংলার এই সতীদাহ ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে ব্রাহ্মণ দের মধ্যে মোট ২০৭১ টি সতীদাহ হয়।
তার মধ্যে মোট সংখ্যার শতকরা ১.২৩ ভাগ মুর্শিদাবাদে ঘটে। কায়স্থদের মধ্যে ৮০০ জনে শতকরা ২ ভাগ , তেলিদের মধ্যে ১১৩ টি ঘটনার শতকরা ০.৪৩ ভাগ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে মোট ৮২৬ টি সতীদাহ ঘটনার শতকরা ২.৫১ ভাগ ঘটে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য ১৮১৮-১৮২৮ সালের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১০০ জন সহমৃতা হন।
#১৮০২ সালে লর্ড ওয়েলেসলি প্রথম গঙ্গা সাগরে শিশু বিসর্জন নিষিদ্ধ করেন এটাই ছিল ইংরেজ শাসনে প্রথম প্রয়াস।
এর পরেই লর্ড বেন্টিক ১৮২৯ সালের ৪ই ডিসেম্বর সতীদাহ নিষিদ্ধ আইন পাশ করেন।
এই আইন পাশ হবার পর বহুদিন ধরে প্রচলিত এই প্রথা বন্ধ করবার জন্য সরকারকে কোনো কঠোর পুলিশি ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হইনি। এটা আপনা আপনি বন্ধ হয় এ যায়।
দেশীয় লোকদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় , হরিহরানন্দ তির্থস্বামী, ইনাদের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তথ্য সূত্র:
সতীদাহের ঘটনা ও সংখ্যা
আশীষ কুমার মন্ডল,
ইংরেজ শাসন ও মুর্শিদাবাদ জেলাঞ্চল
রমা প্রসাদ ভাস্কর,
বঙ্গ প্রসঙ্গে
চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন