গল্পের মতন
শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু।
সোলন নাকি একবার বলেছিলেন: “কোনও জীবিত মানুষকেই সুখি বলো না।”
কে সোলন?
সোলন ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন আইনপ্রণেতা। কবিতাও লিখতেন।
সোলনের সময়কাল: খ্রিস্টপূর্ব ৬৩৮ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫৫৮। ওই সময়কালকে বলা হয় গ্রিসের ইতিহাসের আর্কাইক যুগ। ওই আর্কাইক যুগের এথেন্সের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও নৈতিক অধপতনের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম করেছিলেন সোলন। এ কারণে,এথেন্সের গণতন্ত্রের জনক তাঁকেই বলা হয়।
ষষ্ট শতকের গ্রিস সম্বন্ধে ইউরোপীয় পন্ডিতদের জ্ঞান সীমিত বলেই, সোলন সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানও সীমিত। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে কবিতা লেখার পাশাপাশি যুবা বয়েসে যথেস্ট ভ্রমন করেছিলেন সোলন। অন্তত সোলন যে লিডিয়া রাজ্যে গিয়েছিলেন সেরকম প্রমাণ আছে।
কোথায় ছিল লিডিয়া?
বর্তমানে যে অঞ্চলটি তুরস্ক বা এশিয়া মাইনর-- প্রাচীন লিডিয় রাজ্যটি ছিল সেখানেই।
ক্রোসাস নামে এক অত্যন্ত ধনশালী সম্রাট শাসন করতেন রাজ্যটি। ক্রোসাস-এর ধনসম্পদের পরিমান এতই বেশি ছিল যে তা রীতিমতো প্রবাদে পরিণত হয়েছিল।
পারস্য রাজ্যটি ছিল লিডিয়ার দক্ষিণ-পুবে।
সেই পারস্যের সম্রাট সাইরাস আক্রমণ করে বসলেন লিডিয়া।
যুদ্ধে ক্রোসাস পরাজিত হলেন। হওয়ারই কথা। ধনসম্পদ নিয়ে সুখভোগে ডুবে ছিলেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কথা খেয়াল করেন নি,খেয়াল করেন নি পারস্যের উত্থানের কথা।
সাইরাসের সৈন্যরা তাকে বন্দি করল।
পরিবারসমেত ক্রোসাসকে পুড়িয়ে মারার জন্য শুকনো কাঠের স্তুপ জড়ো করল।
সে কালের নিষ্ঠুরতা তেমনই বিভৎস ছিল!
আগুন জ্বলে উঠেছে। ক্রোসাস আর্তনাদ করে উঠলেন, কোনও জীবিত ব্যাক্তিকেই সুখি বল না।
সাইরাস কাছেই ছিলেন। কথাটা সম্ভবত সাইরাসের কানে গিয়েছিল। তিনি হাত তুলে সৈন্যদের নিরস্ত করলেন। সৈন্যরা জ্বলে-ওঠা আগুন নিভিয়ে দিল।
ক্রোসাসকে কাছে আসার নির্দেশ দিলেন সাইরাস। ক্রোসাস কাছে এলেন। সাইরাস বললেন, আপনি তখন কি বলছিলেন?
ক্রোসাস কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, কি আর বলব। আমার এমনই পোড়া কপাল। ধনসম্পদ কত সুখিই না ছিলাম, এখন পুড়ে মরতে হবে।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি তখন কি বলছিলেন? সাইরাস বিরক্ত হয়ে বললেন।
ক্রোসান বলল, বলছিলাম কোনও জীবিত ব্যাক্তিকেই সুখি বলো না।
কেন? সাইরাস বিস্মিত।
ক্রোসাস তখন বলল, অনেক অনেক দিন আগের কথা। এথেন্স নগর থেকে সোলন নামে একজন যুবক এসেছিল এই লিডিয়া রাজ্যে। তার আগে নানা রাজ্য ঘুরেছিল সোলন। মিশরে গিয়েছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে আমার এত ধনসম্পদ দেখছ, এমনটা আর কোথাও দেখেছ? সোলন বলল, না। আমি তখন বললাম, আমার মতো সুখি ব্যাক্তি সে আর কোথাও দেখেছে কি না।তখন সোলন বলল, একমাত্র মৃতরাই সুখি। কোনও জীবিত মানুষকে সুখি বলা ঠিক হবে না। সোলনের কথাই ঠিক। ধনসম্পদ কত সুখিই না ছিলাম, এখন পুড়ে মরতে হবে। আমার এমনই পোড়া কপাল। ক্রোসাস আর্তনাদ করে উঠলেন।
সাইরাস কী যেন ভাবলেন। গভীর চিন্তামগ্ন দেখাল তাঁকে। ক্ষানিকক্ষন বাদে বললেন, না। আপনাকে পুড়ে মরতে হবে না। আপনি মুক্ত।
সাইরাসের কথায় লিডিয়রাজ হয়তো বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পারস্যরাজ সাইরাস-এর পক্ষে সে রকম মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই সম্ভব। কেননা, ইতিহাসে সাইরাসের পরিচয় সাইরাস দ্য গ্রেট হিসেবে। ইহুদিরা সাধারণত তাদের সম্প্রদায়ের বাইরে কারোর প্রশংসা করে না। একমাত্র সাইরাসের নামটি রয়েছে ওল্প টেস্টামেন্টে একজন দয়ালু শাসক হিসেবে! কাজেই, সাইরাসকে সাইরাস দ্য গ্রেট বলা হয়। যেমন, অশোক। যেমন, আকবর।
ভাবলে অবাক লাগে-সোলনের একটি উক্তি কী ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল পারস্যরাজের ওপর । সলোন কবি ছিলেন বলেই, হয়তো, অমন অমোঘ বাক্য বলতে বা লিখতে পারতেন।
অবশ্য, তাঁর রচনার ভগ্নাংশ মাত্র পাওয়া গিয়েছে।
সোলন অবশ্য কবিতা লিখতেন তাঁর রাজনৈতিক মত প্রচার করার জন্য। মানে প্রোপাগান্ডা চালাতে সাহিত্যকে ব্যবহার করতেন।
তা হলেও তিনি সুখী, সুন্দর, এথেন্স দেখতে চেয়েছিলেন।
কে সোলন?
সোলন ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন আইনপ্রণেতা। কবিতাও লিখতেন।
সোলনের সময়কাল: খ্রিস্টপূর্ব ৬৩৮ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫৫৮। ওই সময়কালকে বলা হয় গ্রিসের ইতিহাসের আর্কাইক যুগ। ওই আর্কাইক যুগের এথেন্সের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও নৈতিক অধপতনের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম করেছিলেন সোলন। এ কারণে,এথেন্সের গণতন্ত্রের জনক তাঁকেই বলা হয়।
ষষ্ট শতকের গ্রিস সম্বন্ধে ইউরোপীয় পন্ডিতদের জ্ঞান সীমিত বলেই, সোলন সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানও সীমিত। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে কবিতা লেখার পাশাপাশি যুবা বয়েসে যথেস্ট ভ্রমন করেছিলেন সোলন। অন্তত সোলন যে লিডিয়া রাজ্যে গিয়েছিলেন সেরকম প্রমাণ আছে।
কোথায় ছিল লিডিয়া?
বর্তমানে যে অঞ্চলটি তুরস্ক বা এশিয়া মাইনর-- প্রাচীন লিডিয় রাজ্যটি ছিল সেখানেই।
ক্রোসাস নামে এক অত্যন্ত ধনশালী সম্রাট শাসন করতেন রাজ্যটি। ক্রোসাস-এর ধনসম্পদের পরিমান এতই বেশি ছিল যে তা রীতিমতো প্রবাদে পরিণত হয়েছিল।
পারস্য রাজ্যটি ছিল লিডিয়ার দক্ষিণ-পুবে।
সেই পারস্যের সম্রাট সাইরাস আক্রমণ করে বসলেন লিডিয়া।
যুদ্ধে ক্রোসাস পরাজিত হলেন। হওয়ারই কথা। ধনসম্পদ নিয়ে সুখভোগে ডুবে ছিলেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কথা খেয়াল করেন নি,খেয়াল করেন নি পারস্যের উত্থানের কথা।
সাইরাসের সৈন্যরা তাকে বন্দি করল।
পরিবারসমেত ক্রোসাসকে পুড়িয়ে মারার জন্য শুকনো কাঠের স্তুপ জড়ো করল।
সে কালের নিষ্ঠুরতা তেমনই বিভৎস ছিল!
আগুন জ্বলে উঠেছে। ক্রোসাস আর্তনাদ করে উঠলেন, কোনও জীবিত ব্যাক্তিকেই সুখি বল না।
সাইরাস কাছেই ছিলেন। কথাটা সম্ভবত সাইরাসের কানে গিয়েছিল। তিনি হাত তুলে সৈন্যদের নিরস্ত করলেন। সৈন্যরা জ্বলে-ওঠা আগুন নিভিয়ে দিল।
ক্রোসাসকে কাছে আসার নির্দেশ দিলেন সাইরাস। ক্রোসাস কাছে এলেন। সাইরাস বললেন, আপনি তখন কি বলছিলেন?
ক্রোসাস কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, কি আর বলব। আমার এমনই পোড়া কপাল। ধনসম্পদ কত সুখিই না ছিলাম, এখন পুড়ে মরতে হবে।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি তখন কি বলছিলেন? সাইরাস বিরক্ত হয়ে বললেন।
ক্রোসান বলল, বলছিলাম কোনও জীবিত ব্যাক্তিকেই সুখি বলো না।
কেন? সাইরাস বিস্মিত।
ক্রোসাস তখন বলল, অনেক অনেক দিন আগের কথা। এথেন্স নগর থেকে সোলন নামে একজন যুবক এসেছিল এই লিডিয়া রাজ্যে। তার আগে নানা রাজ্য ঘুরেছিল সোলন। মিশরে গিয়েছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে আমার এত ধনসম্পদ দেখছ, এমনটা আর কোথাও দেখেছ? সোলন বলল, না। আমি তখন বললাম, আমার মতো সুখি ব্যাক্তি সে আর কোথাও দেখেছে কি না।তখন সোলন বলল, একমাত্র মৃতরাই সুখি। কোনও জীবিত মানুষকে সুখি বলা ঠিক হবে না। সোলনের কথাই ঠিক। ধনসম্পদ কত সুখিই না ছিলাম, এখন পুড়ে মরতে হবে। আমার এমনই পোড়া কপাল। ক্রোসাস আর্তনাদ করে উঠলেন।
সাইরাস কী যেন ভাবলেন। গভীর চিন্তামগ্ন দেখাল তাঁকে। ক্ষানিকক্ষন বাদে বললেন, না। আপনাকে পুড়ে মরতে হবে না। আপনি মুক্ত।
সাইরাসের কথায় লিডিয়রাজ হয়তো বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পারস্যরাজ সাইরাস-এর পক্ষে সে রকম মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই সম্ভব। কেননা, ইতিহাসে সাইরাসের পরিচয় সাইরাস দ্য গ্রেট হিসেবে। ইহুদিরা সাধারণত তাদের সম্প্রদায়ের বাইরে কারোর প্রশংসা করে না। একমাত্র সাইরাসের নামটি রয়েছে ওল্প টেস্টামেন্টে একজন দয়ালু শাসক হিসেবে! কাজেই, সাইরাসকে সাইরাস দ্য গ্রেট বলা হয়। যেমন, অশোক। যেমন, আকবর।
ভাবলে অবাক লাগে-সোলনের একটি উক্তি কী ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল পারস্যরাজের ওপর । সলোন কবি ছিলেন বলেই, হয়তো, অমন অমোঘ বাক্য বলতে বা লিখতে পারতেন।
অবশ্য, তাঁর রচনার ভগ্নাংশ মাত্র পাওয়া গিয়েছে।
সোলন অবশ্য কবিতা লিখতেন তাঁর রাজনৈতিক মত প্রচার করার জন্য। মানে প্রোপাগান্ডা চালাতে সাহিত্যকে ব্যবহার করতেন।
তা হলেও তিনি সুখী, সুন্দর, এথেন্স দেখতে চেয়েছিলেন।
-ইমন জুবায়ের, সামহোয়্যারইনব্লগ
তথ্যসূত্র:
উইকিপিডিয়া
তথ্যসূত্র:
উইকিপিডিয়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন