বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০

নোয়াখালীর ধর্ষিতা মেয়েদের বিয়ে এবং গান্ধিজি

 

নোয়াখালীর ধর্ষিতা মেয়েদের বিয়ে এবং গান্ধিজি



Rituparno Basu


আমার ভাই বীরেন একদিন বললে, নোয়াখালীর ধর্ষিতা মেয়েদের বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে প্রায় ছিয়াশিখানা চিঠি এসেছে ওর এক বন্ধুর কাছে, আমি এ ব্যাপারে কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারি কিনা!
আমার মনটা খুশি হয়ে ওঠে, বাংলার ছেলেরা এত উদার!
ভূপেনদাকে জিজ্ঞাসা করি, এ বিষয়ে কি করবো?
ভূপেনদা বললেন, চলে যাও চিঠি গুলো নিয়ে নোয়াখালীতে গান্ধীজীর কাছে। ছোট কথাটি ভূপেনদার। কিন্তু এমন দরদ মাখানো উত্তর আর বুঝি হতে পারত না।
কংগ্রেসের মহিলা বিভাগে কর্তব্য ছড়ানো রয়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র। তারই সম্পাদিকারূপে কংগ্রেস পাঠালো আমাকে নোয়াখালীতে।
15 ই ডিসেম্বর 1946 । রওনা হয়েছি নোয়াখালির দিকে। পরদিন চৌমুহনী পৌঁছেই ব্যবস্থা করে ফেললাম গান্ধীজীর কাছে যাত্রার। প্রথমে যেতে হবে কাজিরখিল। তারপর মধুপুর। সেখান থেকে তিন মাইল দূরে শ্রীরামপুরে আছেন গান্ধীজি।
গান্ধীজীর বাড়িতে আমাদের সর্বপ্রথম অভ্যর্থনা করল একটি পোড়া ঘর। তারপরে গিয়ে উঠলাম অধ্যাপক নির্মল বোসের ঘরে। তিনি ব্যস্ত ছিলেন। তারমধ্যে হাসিমুখে পাশের একটা বেঞ্চে আমাদের বসালেন। নিজে বসে আছেন একটা ছোট্ট তক্তপোশে, অবিরাম লিখে চলেছেন।
তাঁকে জানালাম, কয়েকজন ভদ্রলোক নোয়াখালী ধর্ষিতা মেয়েদের বিয়ে করতে চান। তারই দূত হয়ে এসেছি গান্ধীজীর কাছে। নির্মল বাবু সংবাদ নিয়ে চিঠি গুলি হাতে করে গেলেন গান্ধীজীর ঘরে। সঙ্গে সঙ্গেই ডাক পড়ল। যে কয়জন গিয়েছিলাম, সবাই মিলে চললাম তার ঘরের দিকে। ঘরে ঢুকবার আগেই দেখি গান্ধীজি আমাদের উদ্দেশ্যে দুহাত জোড় করে নমস্কার করছেন, স্নিগ্ধ হাসিমাখা মুখ। অপরিচিত আমরা। আমরা প্রণাম করার আগেই তিনি আমাদের নমস্কার করছেন, আমরা ঘরে ঢুকবার আগেই তিনি হাসিমুখে অভ্যর্থনা করছেন, এ যেন শুধু গান্ধীজিকে সম্ভব, আর কোথাও এমন তো দেখিনি।
সেদিন ছিল সোমবার, তাঁর মৌন দিবস। ইশারায় পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। নির্মল বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমার বক্তব্য তিনি আগেই বলে রেখেছিলেন।গান্ধীজি তাঁর জবাবটুকু পুরনো খামের ওপিঠে লিখে দিলেন:
‘Personally I do not think the extent of the evil is so great. Many such cases have not come under my observation. In any case you may keep in mind the young men who will take in such girl and see what can be doneঐ when you come across a bonafide case.’
অর্থাৎ এমন অশুভ ঘটনার সংখ্যা এত বেশি বলে আমি মনে করি না। এরকম ঘটনা খুব বেশি আমার নজরে আসেনি। যাইহোক, যেসব যুবক এমন মেয়েদের বিয়ে করতে চায় তাদের কথা মনে রেখো এবং যখন এরকম প্রকৃত ঘটনার সন্ধান পাবে তখন কী করতে পারো দেখো।
নির্মল বাবু বললেন, সন্ধ্যার সময় প্রার্থনার পর কথা হবে। ফিরে এলাম নির্মল বাবুর ঘরে। তাঁর কলম আবার চলতে লাগল। তক্তপোশের ওপরে ছোট একটি ডেস্ক, এই হল তাঁর লিখবার ব্যবস্থা। এক সময় তিনি কলম থামিয়ে দিলেন। গান্ধীজিকে মনে করে একান্ত । প্রিয়জন সম্পর্কে সস্নেহ ভাষায় বললেন, প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় বুড়োর এত দৃষ্টি, এমন সূক্ষ্ম বোধ যে, সাধারণ লোকে তাঁকে ধরতে বা বুঝতেই পারবে না। বললেন, রান্নাঘরটা ওঁর হাতে গেলে তবেই হয়েছে। বুঝলাম নির্মলবাবুকে কতটা হুঁশিয়ার থাকতে হয়। আবার বলেন, প্রত্যেকটি চিঠি সেদিনই উত্তর দিতে হবে, একটা করে নকলও রাখতে হবে। একটা চিঠির উত্তর দিতে একদিন দেরী হয়ে গিয়েছিল। গান্ধীজি বললেন, কিন্তু তারা কি মনে করবে?
নির্মলবাবুকে আমি আগেও দেখেছি। কিন্তু সেই দেখা মোটেই দেখাই নয়। সত্যিকারের মানুষটিকে আজ যেন প্রথম দেখছি। এমন পরম আনন্দ অমন কঠিন পরিশ্রম দিবারাত্রি করে চলেছেন এ যদি নিজের চোখে না দেখতাম তবে গান্ধীজিকে দেখার আর একটা দিক বাদ থেকে যেত। ঘুমন তিনি কম সময়, খাওয়া অদ্ভুত, শুধু এই বিরাট মানুষটিকে তিনি যেন অতি কাছাকাছি থেকে দেখছেন,তাঁর চিন্তা এবং কাজকে বুঝতে চেষ্টা করে চলেছেন, সেখানেই রয়েছে নির্মল বাবু নীরব সাধনা।
গান্ধীজীর সঙ্গে যে কজন মানুষ সেখানে ছিলেন তাঁদের প্রায় সকলকেই তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন আলাদা আলাদা গ্রামে কেন্দ্র করে বসে যাবার জন্য।
নিজে রয়েছেন পুড়ে যাওয়া এক নির্জন বিষাদাচ্ছন্ন বাড়িতে দু তিনটি মানুষ নিয়ে। সমস্ত ভারতবর্ষে প্রাণ এখানে স্পন্দিত হচ্ছে, প্রবল ব্রিটিশ শক্তি এদিকে দৃষ্টি মেলে রেখেছে। আমরা দেখি , সাতাত্তর বছরের ক্ষীণকায় বৃদ্ধ দুই-একটি একান্ত অনুগত লোক নিয়ে বাংলা তথা ভারতের কততম সমস্যা সমাধানের জন্য, ইংরেজের কূটতম নীতিকে ব্যর্থ করে দেবার জন্য সাধনা করছেন। একটি মুহূর্ত তিনি বৃথা নষ্ট হতে দেবেন না, একটি সুযোগ নয়।
সূক্ষাতিসূক্ষ অনুভূতিতে তাঁর প্রতিটি পরিস্থিতির প্রতিফলিত হচ্ছে। অথচ কোথাও প্রকাশ নেই। সব নীরব, অনাড়ম্বর, যেন অতিসাধারণ প্রতিদিনের ঘটনায় ওখানেও ঘটছে। কথা বলার সময় কোথায়? ছুটোছুটি হট্টগোল করার মানুষ কোথায় ? অন্তত এখানে তাদের স্থান নেই।
নির্মলবাবু ক্ষিপ্র নিপুণ হাতে কাজ করে চলেছেন।হালকা পায়ে গান্ধীজীর কাছে দ্রত আনাগোনা করছে এবং তার সুক্ষ মনের গতি বুঝে প্রতিটি কাজ ওজন করে সমাধা করছেন। পরম শ্রদ্ধা ও অনুরাগে নির্মলবাবু যেন গান্ধীজীর মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে তাকে অনুভব করতে চেষ্টা করছেন।
সন্ধ্যায় প্রার্থনা শুরু হলো। সোদপুরে দেখেছি, চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে ঠিক যেন তেমনি করে গান্ধীজির প্রার্থনা সভায় হাজার হাজার লোক ছুটে চলেছে।
কিন্তু এখানে কী দেখি? বোধহয় শ'খানেক লোক একটি টিনের চালার নিচে বসে গান্ধীজী প্রার্থনা শুনছে। তার মধ্যে আছে কয়েকজন মাত্র হিন্দু ও মুসলমান গ্রামবাসী বাকি পুলিশ, মিলিটারির লোক এবং প্রেস রিপোর্টারের দল।
প্রার্থনার পর মৌন ভঙ্গ করে তিনি বেরিয়ে পড়লেন বেড়াতে নোয়াখালীর খেতের খোলা মাঠে। আমরা সঙ্গী হলাম। একটি মহিলা কলাপাতায় একটি ফুলের মালা এনে গান্ধীজিকে দিলেন। মধুর হাসি হেসে মালাটি তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন নাও। অমন মিষ্টি হাসি যেন আর কোথাও দেখিনি।
জীবনে বড় বা বিশিষ্ট লোকদের কাছে যদি কখনো প্রয়োজনে যেতে বা কথা বলতে হয়েছে, প্রায় সকলের কাছে গিয়েই তিনি একটা দূরত্বের ব্যবধান বোধ করেছি ।অন্তত প্রথমটা সংকোচ বোধ করেছি, অনেক সময় একটু বিব্রত বোধ করেছি।কিন্তু গান্ধীজীর কাছে একেবারে বিপরীত। প্রথম যখন তার ঘরে ঢুকেছিলাম, তার জোড়হাতে হাসিমুখে অভ্যর্থনা আমাকে যেমন সহজভাবে ঘরে তুলে নিয়েছিল, তেমনি এখন ফুলের মালা নিয়ে তার ভুবনভোলানো হাসি যেন আমার চির পরিচিত করে তুলল। অতি সহজ ভাবে তার পাশাপাশি চলতে লাগলাম মনে হতে লাগল যেন মায়ের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছি গল্প করতে করতে চলেছি কোন বিরাট ব্যক্তির পাশে রয়েছি সে কথা মন ছুঁয়েও গেলনা। ছোটো বড়র বিন্দুমাত্র পার্থক্য না রেখে অজানিতে এমন বন্ধু যে তিনি এমন করে হয়ে গেলেন জানতে পারিনি। তখন শুধু জেনেছি, তিনি আমার পরম আপন এবং একেবারে পরিচিত। সোজা বলে চলেছি ভুল হিন্দিতে যা খুশি।
হাসিমুখে তিনি বললেন, তোমার প্রশ্ন সম্বন্ধে আমার যা বলার তা লিখে দিয়েছি। তুমি দেখতে থাকো যদি এরকম মেয়ে পাও।
আমি বললাম যদি আমি খুঁজি এবং এরকম মেয়ে পাওয়া যায় তবে তার ফাইনাল রেস্পন্সিবিলিটি শেষ দায়িত্ব আপনার থাকবে।
তিনি রাজি হয়ে বললেন, আচ্ছা এরকম বিয়ে করতে ইচ্ছুক ছেলে এবং মেয়েকে তুমি আমার কাছে পাঠিয়ে দিও।
তারপর খুব কৌতুকের সঙ্গে হাসতে হাসতে বলেছে তোমার ছেলে এবং মেয়ে তুমি খুশি মতন বিয়ে দেবে। ছেলে মেয়ের বিয়ে দিতে নাকি অন্যের উপর নির্ভর করে? তাঁর সঙ্গে সঙ্গে সবাই খুব হেসে উঠলেন, আমিও।
এই সময় একটি সুপারি গাছের ছোট সাঁকো তিনি পার হতে যাচ্ছিলেন। তাঁর ধরবার মতো কিছু ছিল না। ওঁর পা এবং লাঠি দুই একটু কাঁপে। আমি তাড়াতাড়ি ওঁকে ধরে ফেললাম, যদি পড়ে যান খুব হেসে বললেন ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও, পড়ে গেলে তারপর ধরো। উনি এগুলি নিজে পার হতে চেষ্টা করেন। সাহায্য ছাড়া চলবার এই যে প্রয়াস তার পিছনে আর কি ছিল জানি না। তবে শুনেছিলাম, আসন্ন ভবিষ্যতে উনি গ্রাম থেকে গ্রামে পায়ে হেঁটে যাবেন। সেই যাত্রার জন্য হয়তো নিজেকে তিনি এখন থেকে প্রস্তুত করেছিলেন। শুনেছিলাম প্রতি ঘরে তিনি গ্রামবাসীদের বলবেন তাঁর কথা। নোয়াখালীতে যে আগুন জ্বলছে তা আপন হাতে নিভিয়ে দেবার জন্য তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
গান্ধীজী সেই যাত্রার পশ্চাতে কি নীতি, কী কর্মধারা ছিল জানতাম না। তবে এমন কিছু ছিল যাতে দুঃখী গ্রামবাসী এবং ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট দুইয়ের দিকেই দৃষ্টি রেখে তিনি উপায় খুঁজছিলেন।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখানে হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস ফিরে আসা কি সম্ভব?’
জোরের সঙ্গে তিনি বললেন, ‘ নিশ্চয়ই ফিরে আসবে দক্ষিণ আফ্রিকায় এক শালা ভগিনীপতির মধ্যে চল্লিশ হাজার পাউন্ড নিয়ে খুব ঝগড়া ছিল।কিন্তু পরে তাদের মধ্যে পুনরায় সদ্ভাব ও সম্প্রীতি ফিরে এসেছিল । এখানেও ফিরে আসবে।’
আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কতদিন শান্তি ফিরে আসবে?’
বললেন, ‘তা বলতে পারি না।’
বলি, ‘বিশ্বাস ও শান্তি কেমন করে ফিরে আসবে?’
তিনি বললেন, ‘এক-একজন সাহসী ব্যক্তি মৃত্যুপণ করে গ্রামে গিয়ে বসবে। এইভাবে ক্রমে ক্রমে কাজ হবে। তাদের দেখে গ্রামের লোকেরা সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসবে প্রথমে। তারপর আস্তে আস্তে থেকে যাবে।’
আমাদের একজন প্রশ্ন করলেন, ‘যারা গ্রামে ফিরে আসছে মুসলমানেরা তাদের এই বলে শাসাচ্ছে যে, গান্ধী চলে গেলে কে তোমাদের রক্ষা করবে?’
এই কথা শোনামাত্র খুব জোরের সঙ্গে গান্ধীজী বলে উঠলেন, ‘ পূর্ণ শান্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি ছাড়বার পাত্র নন।’ (উয়ো তো ছোড়নেওয়ালা নহী হ্যায়)
প্রত্যেকটি কথা উনি এমন অনুপ্রাণিত হয়ে পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে গেলেন যে,কর্মীদের মনে আপনা থেকেই একটা আত্মপ্রত্যয় ও শক্তি সঞ্চার হয়ে যায়।
যত কর্মী ওঁর সঙ্গে নোয়াখালী গিয়েছিলেন তাদের প্রায় সকলকেই এক-একটি গ্রামে তিনি বসিয়ে দিয়েছিলেন। কোথাও একা, কোথাও দু’জন করে তাঁরা এক-একটি কেন্দ্র গঠন করেছিলেন। যেন তাঁদের দেখে গ্রামবাসীরা নির্ভয়ে গ্রামে ফিরে এসে বাস করতে পারে, এই ছিল উদ্দেশ্য। গ্রামবাসীরা কংগ্রেসের কর্মীদের নিজেদের গ্রামে বসতে দেখলে মনে অসীম শক্তি অনুভব করত, যেন বাঁচবার একটা উপায় পেয়ে তাঁদের আঁকড়ে ধরতে চাইত।তাদের সরল বিশ্বাস,আর্ত আবেদন গান্ধীজিকে কোন পথে নিয়ে চলেছিল কি জানি। গান্ধীজি নিজে মৃত্যুপণ করে বসে আছেন। তাই অন্যের কাছ থেকেও এই পণ দাবি করেছেন। সফল তাঁকে হতেই হবে। উয়ো তো ছোড়নেওয়ালা নহী হ্যায়।
গান্ধীজিকে তাঁর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এসে মনে হল যেন আকাশে বাতাসে এবং মনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উনি বলে চলেছেন, উয়ো তো ছোড়নেওয়ালা নহী হ্যায়।সমস্ত ভারতবর্ষ গান্ধীজীর অস্তিত্ব।সেই পরিপূর্ণ সত্তা নিয়ে উনি সকলকেই জাগিয়ে দিয়ে বলে চলেছেন, উয়ো তো ছোড়নেওয়ালা নহী হ্যায়। আমাদেরও উনি থাড়ছেন না। ওঁর কাছে এলে কাজ না করে থাকা অসম্ভব। কাজ আমাদের করতেই হবে,উয়ো তো ছোড়নেওয়ালা নহী হ্যায়।
ভাগ্যে গান্ধীজীর কাছে এসেছিলাম। এমন তীব্র অনুভূতি, এমন করে মজ্জায় মজ্জায় মিশিয়ে দেওয়া প্রেরণা, এমন সহজভাবে অমন কঠিন সমস্যার আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত আগে তো কখনো জানিনি।
ফিরে গেলাম মধুপুরে। সেখানেই আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। গান্ধীজী নিজের কাছে কাউকেই রাখছেন না। বহু লোক অজানা সেই গ্রামের সন্ধানে মাইল পথ হেঁটে আসছে। কাছাকাছি যানবাহনের ব্যবস্থাও নেই। দূর-দূরান্তর থেকে ওই দুর্গম পথে কত লোকই যে ছুটেছে বৃদ্ধের কাছে, তার ইয়ত্তা নেই। যে যার মতো ব্যবস্থা করে নিতে পারো নাও, নইলে চলে যাও। প্রেস-রিপোর্টাররাও ওখানে কাছাকাছি একটা বাড়িতে নিজেদের আড্ডা ঠিক করে নিয়েছেন। তাঁরা অন্তত গান্ধীজিকে ছাড়তে পারেন না। ছায়ার মত রয়েছেন তাঁর কাছাকাছি, কিন্তু একেবারে আলাদা হয়ে।
তার পরদিন একজন বললেন, ‘ চলুন একটা দাঙ্গা বিধ্বস্ত গ্রাম দেখে আসবেন।’ এই গ্রামের হিন্দু গৃহস্বামীরা অধিকাংশই ছিল বর্ধিষ্ণু। ধনী-দরিদ্রের প্রত্যেকটা বাড়িই পুড়িয়েছে। যখন এক-একটা পুড়ে যাওয়া বাড়ি দেখতে লাগলাম, মনটা কেন সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠল। প্রকাণ্ড এক-একটা বাড়ি বিশাল তার বাগান, সব পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এমন আগুন জ্বলছিল যে বাগান অবধি পুড়েছে।
সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি আমরা, যেন মৃত্যুর পরে শ্মশানে দাহ শেষ করে একবার ভেবে নিতে চেষ্টা করেছিলাম, যে কি হয়ে গেলো! এমন সময় যেন চিতা ভাস্ম থেকে উঠে এসে একজন লোক জিজ্ঞাসা করল, মাগো, ‘ এখন আমরা তবে কি করব?’
সেই জনশূন্য চিতাভস্মে-ঢাকা গ্রামের মধ্যে থেকে এ কী প্রশ্ন? এই এ যেন প্রেতাত্মা, এ তো জীবন্ত মানুষ নয়! কী জবাব দেব? গান্ধীজী বলেছেন, মৃত্যুপণ করে সাহসভরে এক-একজনকে থেকে যেতে। সেই কথাটা উচ্চারণ করা দূরে থাক, মরে-যাওয়া এই মানুষটির প্রশ্ন শুনে কান্না আসতে চায়। একে কেমন করে বলি, এর পরেও আগুনে পুড়তে থাকো? জবাবে কিছুই মুখে আসে না। শুধু বলি, ‘ তাই তো!’
এরা আমাদের কাছে আশ্বাস চায়, আমাদের দেখলে ভরসা পায়, কম্পিত পদেও সাহস করে দাঁড়াতে চায়, চিতার আগুন নিভিয়ে দিয়ে বেঁচে উঠতে চায়। গান্ধীজি তাই তো এসে দাঁড়িয়েছিলেন এদের পাশে, এদের হাত ধরে শক্ত মুঠিতে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলে যাবেন, এই তার পণ। একদিকে দেখলাম শ্মশানভস্ম, আর একদিকে দেখি,সেই শ্মশানস্তূপেরই উপর ধীরে ধীরে নতুন জীবনের অঙ্কুর ফুটিয়ে তুলবার ভার নিয়েছেন গান্ধীজি নিজের হাতে। ভয় কী?
ফিরে এলাম রামগঞ্জে। কাজ আরম্ভ করে দিতে হবে, আর তো দেরি করবার সময় নেই।
নোয়াখালীর অত্যাচারিত মেয়েদের বিয়ের ব্যাপার নিয়ে গান্ধীজির সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী মেয়ে খুঁজতে চলে যাই কুমিল্লায়। বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজতে আমি চেষ্টা করছি দেখে সবাই হাসে, আমিও। কিন্তু হাল ছাড়ি না। রিলিফ কেন্দ্রে গিয়ে মেয়েদের কাছে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করি। সাহস পায়না তারা অত্যাচারের ব্যাপারে বলতে। যদি বা বলে, অতি সংগোপনে, অতি সংকোচে। এই অবস্থায় গান্ধীজির কাছে নিয়ে গেলে এরা হয়তো তখন স্বীকারই করবে না। তাছাড়া, রিলিফ কেন্দ্রের ভার নিয়ে যেসব নেতারা ছিলেন তাঁদের কাছেও গেলাম। তাঁরা বলেন, অত্যাচারিত মেয়েদের কেসগুলি তাঁদের হাতে যা আছে তা তাঁরা প্রকাশ করতে রাজি নন, লিগাল অ্যাডভাইসরের নিষেধ।
অনেক চেষ্টার পর আমি যা বুঝলাম তা এই: মেয়েরা অত্যাচারিত হয়ে থাকলে সহজে স্বীকার করতে চায় না। ফলে সঠিক খবর পাওয়া কঠিন। যারা স্বীকার করে তাদের মধ্যে বিবাহিতের সংখ্যাই বেশি এবং তাদের স্বামীরা সবাই প্রায় ফিরিয়ে নিয়েছে।
অবিবাহিত ছোট মেয়ে যারা আছে তারা প্রায় সবাই চোদ্দ বছরের নিচে, কাজেই বিয়ে দেওয়া যায় না। আবার যে ছেলেরা বিয়ে করতে চান তাঁরা সামান্য হলেও একটু লেখাপড়া- জানা মেয়ে চান, অথচ এরা প্রায় নিরক্ষর। কাজেই এদের মধ্যে বিয়ে ঘটানো কঠিন ব্যাপার। জানা ছিল বাংলাদেশে বিয়ের জন্য ছেলে পাওয়া শক্ত। কিন্তু এটুকু জানা ছিল না যে, মেয়ে পাওয়া আরো শক্ত। মনের মধ্যে নৈরাশ্য ঘিরে আসছে, এমন সময় এসে গেলেন সুচেতা কৃপালিনী। তাঁর হাতে আমি বিয়ের ঘটকালি দায়িত্ব তুলে দিলাম। তিনি হাসিমুখে সেই দায়িত্বভার নিলেন। আমি তাঁর নোয়াখালীর অন্য কাজের ভার নিলাম। শেষ পর্যন্ত তিনিও কিন্তু ওই রকম বিয়ে ঘটিয়ে দিতে পারেননি।
এসেছি দত্তপাড়ায়। রোজই যাই কয়েকজনে মিলে বড়ালিয়া গ্রামে। সেখানে পুণর্বসতি করাতে হবে গ্রামবাসীদের। একটা পোড়া বাড়িকে বাসের যোগ্য করে একটি পরিবারকে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হবে। বাড়িটার আধপোড়া টিনগুলো ভিটের ছাইয়ের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কতশত ভাঙ্গা শিশি-বোতল পেট্রলের আগুনে গলে দলা পাকিয়ে পিণ্ড হয়ে আছে। বাড়ির মালিক সামনেই রয়েছেন। একে একে তাঁরই হাতে জিনিস গুলো তুলে দিই। তিনি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কোন কোনটা সযত্নে আলাদা করে সরিয়ে রাখছেন, যেন বহুমূল্য ধন ফিরে পেয়েছেন। একটা পুরনো খল-নুড়ি ছাইয়ের গাদা থেকে উদ্ধার করে তাঁর হাতে দেওয়া হল। বহু পরিচিত সেই খল-নুড়ি পেয়ে করুণ একটি হাসি তাঁর মুখে ফুটে উঠল।হাসি যে কত করুণ, কত বিষণ্ণ হতে পারে তা দেখেছি সেই নিভে যাওয়া গ্রামে পুণর্বসতি করতে গিয়ে।
দগ্ধাবশেষ পরিষ্কার করা হয়ে গেল। সুপারি গাছে নতুন খুঁটি বসিয়ে আবার সেই পোড়া টিনগুলো চাল বসানো হল।পোড়া ভিটের উপর পোড়া টিন সাজিয়ে যে নতুন ঘর বাঁধা হল তাতে পুরনো বাড়িটা যেন চিতা থেকে উঠে এসে দগ্ধদেহে হাসতে গিয়ে কাঁদতে লাগল। ওই নতুন ঘরে পা দিতে গিয়ে সকলেই সেদিন বাড়ির কর্তার হাসি-মাখা কান্নার সঙ্গে কেঁদেছে।
হিন্দু-মুসলমান সকলের বাড়িতেই যাচ্ছি। উদ্দেশ্য, বাস্তুত্যাগীদের পুনরায় ফিরে আসতে উৎসাহ দেওয়া,সাহস জোগানো, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা।
মুসলমানদের বুঝিয়ে বলি, সদ্ভাব-সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনবার কথা, পরস্পরকে ভালোবেসে বসবাস করার কথা। হিন্দুদের প্রতি তাদের অতীত অন্যায় বুঝিয়ে দিই। তারা সবই এমন ভাবে স্বীকার করে নেয়, অনুতপ্ত হয়, হিন্দুদের ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, অবাক হয়ে ভাবি, তবে ওই অমানুষিক অত্যাচার ঘটেছিল কেমন করে? অবশ্য পরে বুঝতে পারি, মূল কারণটা ছিল তাদের নিজেদের গ্রেফতার হওয়ার ভয়। তারা মনে করত হিন্দুরা ফিরে এলে এবং সদ্ভাব রেখে চললে হয়তো গ্রেপ্তার হবে না। তাই এত নরম।
মুসলমানদের বাড়িতে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি। অন্ন সংস্থানের জন্য তারা স্ত্রী-পুরুষ ঘরে-বাইরে খুব পরিশ্রম করে। বেশিরভাগ ই তারা দীন-দরিদ্র। হিন্দুদের জমিতেই অধিকাংশ তারা চাষ করে, ধান বোনে, ধান কাটে। পরে নিজের বাড়িতে ধান আছড়ে ছাড়িয়ে হিন্দুদের বাড়িতে বয়ে দিয়ে যায়। অন্যের জমিতে কঠিন পরিশ্রম করে সে পায় একটা সামান্য অংশ। নিজেদের জমি কম মুসলমানেরই আছে। কিন্তু তারা পরিশ্রমী, তাই সাহসী। হিন্দুরা অধিকাংশই আয়েশী ও পরমুখাপেক্ষি, তাই দুর্বল ও ভীতু।
চাষের সামান্য অংশ নিয়ে মুসলমানদের বছরের খাবার হয় না। তাদের বাড়িতে দেখেছি হাঁস, মুরগি, ছাগল গরু। মুরগি তারা খায়, ডিম বিক্রি করে, ছাগল গরুর দুধ বিক্রি করে। নারকেল-সুপারি যার যা আছে তাও বিক্রি করে। নিজেদের বছরের খাবার সংগ্রহের জন্য কি প্রাণপণ পরিশ্রম করে যায় এরা! এদের মেয়েরা বাড়িতে ধান আছড়ায়। নোয়াখালিতে গরিব হিন্দু মেয়েরা এসব কিছুই কিছুই করত না। এই পরনির্ভরশীল লোকেরা মরবে না কেন? এখানে মুসলমানেরা দিবারাত্রি পরিশ্রম করে উৎপন্ন ফসলের ছোট একটা অংশ পায় এবং সমস্ত বছর দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করে। তাদের শ্রমের প্রধান ফল ভোগ করে অন্যে।আবার ধানটা বাড়ি বয়ে দিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মেহনত করে যাবে তারা, কিন্তু ভাতটা রান্না করবার সময় হিন্দুরা তাদের দেবে সর্বাগ্রে দূর করে, তারা তখন অস্পূশ্য। কেন সহ্য হবে এত অপমান? এক সম্প্রদায়ের এই যে মানুষের প্রতি অন্যায় মনোভাব, এই যে হিংসা ও ক্রোধ-উদ্রেককারী আচরণ যা ওরা সয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে---- তারই স্বাভাবিক সুযোগ নিয়েছে আর একটা সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ইংরেজ।সমাজের গ্লানি জমে জমে যেখানে বিপ্লব এসে দেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারত, সেখানে বিদেশী বণিক ও সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান সমাজের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চক্রান্ত করে অন্যায়ভাবে নিয়ে এল প্রতিবিপ্লব। সবই ঘোরালো জটিল হয়ে উঠল।আমরা, কর্মীরা তো দেশের দরিদ্র জনগেণর মধ্যে, মুসলমানদের মধ্যে তেমন করে কাজ করিনি ---- তাই সময়ে বিপ্লব আসেনি। গান্ধীজি কিন্তু এদের মধ্যে কাজ করবার জন্যেই দিয়েছিলেন গঠনমূলক কর্মপন্থা। ক’জন কর্মী সেকাজ করেছেন? অনুভব করি, অপরাধের অন্ত নেই।
'রক্তের অক্ষরে ' বইয়ের একটি অংশ।
পৃষ্ঠা ; ১১৮ -১২৮
প্রকাশক ; সাহিত্য সংসদ
( সাহিত্য সংসদ পরিমার্জিত সংস্করণ,
১৯৯৫)
প্রথম প্রকাশ ; নাভানা , ১৯৫৪
প্রখ্যাত নেত্রী কমলা দাশগুপ্ত (১৯০৭ - ২০০০) প্রথম যুগে যুগান্তর দলের সদস্য ছিলেন।
কমলা দাশগুপ্ত ১৯৩০ সালে বাড়ি ছেড়ে দরিদ্র নারীদের জন্য একটি হোস্টেলের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। সেখানে তিনি বিপ্লবীদের জন্য বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংরক্ষণ করতেন এবং বহন করে আনতেন। তিনি ডালহৌসী বোমা মামলায় কমিশনার চার্লস টেগার্ট কে হত্যার প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্ৰেপ্তার হন। পরে প্রমানাভাবে রেহাই পান।
তাঁর আনা রিভলবার দিয়েই বান্ধবী বীণা দাশ ১৯৩২ সালে সেনেট হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকশনের সময় গভর্নর স্ট্যানলী জ্যাকসনকে গুলি করেন।
কমলা দাশগুপ্ত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন। তাই পুলিশের হেনস্থার শিকার হয়েছেন বার বার।
১৯৩২ সালে গ্ৰেপ্তার হয়ে তিনি হিজলি কারাগারে অন্তরীণ থাকেন। ১৯৩৮ সালে মুক্তি পেয়ে কংগ্ৰেসে যোগদান করেন। ১৯৪১ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মহিলা সমিতির সম্পাদিকা হিসাবে নির্বাচিত হন।
১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে আবার গ্ৰেপ্তার হন। ১৯৪৫ সালে মুক্তি পেয়েই দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘদিন মন্দিরা পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন।
১৯৪৬ সালে দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালীতে তিনি গান্ধীজীর সঙ্গী কংগ্ৰেসের হয়ে ত্রাণকার্য করেছেন। আরো অনেকের মতই লিখে গেছেন তাঁর বিবরণ।
তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন ' রক্তের অক্ষরে ' বইতে। গ্ৰন্থটি ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়।
কমলা দাশগুপ্তের আরেকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণামূলক গ্ৰন্থ হল ' স্বাধীনতা সংগ্ৰামে বাংলার নারী '। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে।
পেশাগত জীবনে তিনি বান্ধবী বীণা দাশের মতই ছিলেন একজন শিক্ষিকা।
পোস্ট ; ঋতুপর্ণ বসু



শেয়ার করেছেন : - প্রণব কুমার কুণ্ডূ


41
14টি কমেন্ট
লাইক করুন
কমেন্ট করুন
কমেন্ট
আরও 3টি কমেন্ট দেখুন
  • গান্ধীজি বহু চিঠি নষ্ট করে ফেলেছিলেন। নির্মল কুমার বসু কয়েকটি সরিয়ে রেখেছিলেন। মুসলিম দাঙ্গা বাজে রা নিজেদের ভূস্বামী দের গায়ে হাত দেয় নি। গোলাম সারওয়ার এর ছেলে স্বীকার করেছেন তাঁর বাবার এই কাজ উপমহাদেশে চিরস্হায়ী হিন্দু-মুসলিম শত্রু তার সৃষ্টি করেছে। দুঃখের কথা কিছু লোক এখনো এইসব কাজের justify করছে।
    3
    • লাইক করুন
    • জবাব দিন
    • 5 ঘণ্টা
    • আপডেট করা হয়েছে
আরও 3টি কমেন্ট দেখুন
আপনার জন্য প্রস্তাবিত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন