আকবরের বিয়ে প্রথম পর্ব
ইতিহাসের পাতা থেকে।
আকবরের বিয়ে প্রথম পর্ব
মুঘল সম্রাট আকবরের বিয়ে বাতিকের ইতিহাস সবাই নিশ্চয়ই জানেন। হ্যাঁ‚ এর আগেও কম বেশি সব রাজারাজরারই বউ‚ নিদেনপক্ষে অসংখ্য শয্যা সঙ্গিনীর শখ ছিলো! সবারই! তবে আকবর এই বিষয়টাকে আক্ষরিক অর্থেই শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যায়। ভারতের যে প্রান্তেই তার সেনাবাহিনী যেত না কেন‚ যেভাবেই হোক সেখান থেকে আকবরের জন্য একটা বউ যোগাড় করে আনতোই আনতো। এমনকি মিরিয়াম নামের এক পর্তুগিজ মেয়েকেও পর্যন্ত আকবর বিয়ে করে হেরেমে পুরেছিলো। নিজের প্যাশনের প্রতি কতটা ডেডিকেশন থাকলে তবে সেই যুগেও সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে খোদ ইউরোপে শ্বশুরবাড়ি বানানো যায় ভাবেন একবার!
যাইহোক‚ আসল কথায় আসি। বৈরাম খানের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? সেই যে সম্রাট হুমায়ুনের বন্ধু! শেরশাহের কাছে ধোলাই খেয়ে হুমায়ূন যখন পারস্যের দিকে লম্বা দিচ্ছে‚ সেই মহাবিপদের দিনে যখন সবাই এক এক করে তাকে ছেড়ে যাচ্ছিলো‚ তখন একমাত্র এই বৈরাম খানই ব্যতিক্রম হয়ে ছায়ার মতো তার পাশে ছিলো! শুধু তাইই না‚ হুমায়ূনের জীবনকালে তো অবশ্যই‚ হুমায়ূনের মৃত্যুর পরও পাণিপত সহ অসংখ্য যুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মুঘল বাহিনীর হয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন এই বৈরাম খান।
তার ভেতর সব থেকে উল্লেখযোগ্য যেটা‚ একবার মুঘল ভ্রাতৃবিরোধের সময় শিশু আকবরকে অপহরণ করে তার কাকা তাকে কাবুল দুর্গের চূড়ায় বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। যাতে ছেলের জীবন যাওয়ার ভয়ে হুমায়ূন দুর্গ আক্রমণ করতে না পারে। নিজের একমাত্র ছেলেকে ঐভাবে পাকা আমের মতো দোদূল ঝুলতে দেখে হুমায়ূন যখন আমার রাজ্য লাগবোনাকো‚ আমি মক্কা যামু বলে উল্টোদিকে ছুট দেওয়ার তাল করেছিলো‚ এই বৈরাম খানই তখন নিজে সামনে দাড়িয়ে থেকে দক্ষ তীরন্দাজ দের সাহায্যে আকবর কে দুর্গের চূড়ার বাঁধন কাটিয়ে নামিয়ে আনেন। অন্য সব বারের মতোই সেবারও বৈরান খান না থাকলে মুঘল বাহিনীর খবর তো ছিলোই‚ আকবরও হয়তো শিশুকালেই অক্কা পেয়ে যেত। তার আর ভারতের শ্রেষ্ঠ সম্রাট আখ্যা পাওয়া হতোনা।
.
তা পরবর্তীতে হুমায়ূন মারা গেল‚ বৈরাম খানের সাহায্যে পাণিপতের যুদ্ধে জিতে কিশোর সম্রাট হল। সবই ঠিক আছে‚ কিন্তু কিছুদিনের ভেতরেই বাধলো গ্যাঞ্জাম ! শুরু হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্র!
.
আকবরের বাচ্চা বেলায় মুঘল সাম্রাজ্যে দুটো লবি ছিলো‚ একটি ছিলো সুন্নি লবি‚ যার নেতৃত্বে ছিলো আকবরের ধাইমা মাহাম আগা, শিহাবুদ্দিন আতাগা, কাশিম খান, মাহাম আগার পুত্র আদম খান এবং খোদ আকবরের নিজের মা হামিদা বানু!
আর একটি ছিলো শিয়া লবি‚ যার নেতা খোদ বৈরাম খান।
এখন কিছুদিনের ভেতরেই এই দুই দলের ভেতর লাগলো ক্যাচাল আর মা - ধাইমার বুদ্ধি শুনে আকবর বৈরাম খানকে ডেকে হাতে ধরিয়ে দিলো রেজিগনেশন লেটার। কি হয়েছে? না তুমি বহুত দিন সাম্রাজ্যের সেবা করেছ‚ অনেক কষ্ট করেছ সারাজীবন এখন শেষ বয়সে মক্কায় গিয়ে ধর্মকর্মে মন দাও‚ আল্লাহর কাজে মন দাও। সোজা ভাষায়‚ তাড়াতাড়ি হিন্দুস্তান ছাড়‚ নাহলে বুড়ো তোর খবর আছে।
.
বৈরাম খান বুঝলো আকবরের ইঙ্গিত। চললো বৈরাম খান মক্কার দিকে। পথে পড়লো গুজরাট! আর এই গুজরাটেই এক পাঠানের হাতে বৈরাম খানের ইহজগতের ভিসা ক্যান্সেল হয়ে গেলো ১৫৬১ সালের জানুয়ারী মাসের ৩১ তারিখে ! আকবরের পোষা মুঘল ঐতিহাসিক দের মতে বৈরাম খান বহু আগে কোন এক আফগানের কল্লা নামিয়ে দিয়েছিলো! তারই ছেলে মোবারক খান নাকি বৈরাম খানকে মেরে পিতৃহত্যার শোধ তোলে। যদিও সেই হত্যাকারীকে কোনোদিনও ধরা যায়নি আর বৈরাম খানের মৃতদেহেরও হদিশ কোনোদিন আর পাওয়া যায়নি। তাই দুষ্টু লোকেরা বলে আকবরই নাকি লোক পাঠিয়ে বৈরাম খানকে স্বেচ্ছায় মুন্ডুদান শিবিরে বসিয়ে দেয় যাতে ভবিষ্যতে শিয়া লবির কেউ সুন্নীদের উপর খবরদারি করার আগে নিজের মুন্ডুর কথাটা অন্তত দুএকবার ভেবে নিতে পারে।
.
.
যাইহোক‚ আমাদের এই বৈরাম খানের এক স্ত্রী ছিলো সেলিমা সুলতানা! যে কিনা আবার সম্পর্কের দিক দিয়ে ছিলেন আকবরেরই পিসতুতো বোন। সেলিমা সুলতানা বেগমের মা গুলরুখ বেগম ছিলেন আকবরের বাবা হুমায়ুনের বোন !
তা বাবার বন্ধু বৈরাম খানের হত্যার পর আকবর সুলতানা বেগম কে গুজরাট থেকে দিল্লি আনার ব্যবস্থা করে আর আনা মাত্রই নিজের পিসতুতো বোন তথা পিতৃতুল্য বৈরাম খান‚ যাকে কিনা আকবর নিজেই ডাকত খান বাবা বলে‚ তার বিধবা স্ত্রী সুলতানা বেগমকে বিয়ে করে নিজের হেরেমে ঢুকিয়ে নেয়।
.
আগে এটা কিছুতেই ভেবে পেতাম না যে ভারতে এত রাজারাজরা থাকতেও আকবরকে কেন তাদের ভেতর শ্রেষ্ঠ বলা হয়। এখন মাঝেমধ্যে কেন জানিনা মনে হয় উত্তর টা আমি বুঝে গেছি।
ইতিহাস তার নিজের বাবা কে ও ক্ষমা করেনা।
আকবরের বিয়ে (প্রথম পর্ব)
+++++++++++++++++++++
মুঘল সম্রাট আকবরের বিয়ে বাতিকের ইতিহাস সবাই নিশ্চয়ই জানেন। হ্যাঁ‚ এর আগেও কম বেশি সব রাজারাজরারই বউ‚ নিদেনপক্ষে অসংখ্য শয্যা সঙ্গিনীর শখ ছিলো! সবারই! তবে আকবর এই বিষয়টাকে আক্ষরিক অর্থেই শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যায়। ভারতের যে প্রান্তেই তার সেনাবাহিনী যেত না কেন‚ যেভাবেই হোক সেখান থেকে আকবরের জন্য একটা বউ যোগাড় করে আনতোই আনতো। এমনকি মিরিয়াম নামের এক পর্তুগিজ মেয়েকেও পর্যন্ত আকবর বিয়ে করে হেরেমে পুরেছিলো। নিজের প্যাশনের প্রতি কতটা ডেডিকেশন থাকলে তবে সেই যুগেও সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে খোদ ইউরোপে শ্বশুরবাড়ি বানানো যায় ভাবেন একবার!
যাইহোক‚ আসল কথায় আসি। বৈরাম খানের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? সেই যে সম্রাট হুমায়ুনের বন্ধু! শেরশাহের কাছে ধোলাই খেয়ে হুমায়ূন যখন পারস্যের দিকে লম্বা দিচ্ছে‚ সেই মহাবিপদের দিনে যখন সবাই এক এক করে তাকে ছেড়ে যাচ্ছিলো‚ তখন একমাত্র এই বৈরাম খানই ব্যতিক্রম হয়ে ছায়ার মতো তার পাশে ছিলো! শুধু তাইই না‚ হুমায়ূনের জীবনকালে তো অবশ্যই‚ হুমায়ূনের মৃত্যুর পরও পাণিপত সহ অসংখ্য যুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মুঘল বাহিনীর হয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন এই বৈরাম খান।
তার ভেতর সব থেকে উল্লেখযোগ্য যেটা‚ একবার মুঘল ভ্রাতৃবিরোধের সময় শিশু আকবরকে অপহরণ করে তার কাকা তাকে কাবুল দুর্গের চূড়ায় বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। যাতে ছেলের জীবন যাওয়ার ভয়ে হুমায়ূন দুর্গ আক্রমণ করতে না পারে। নিজের একমাত্র ছেলেকে ঐভাবে পাকা আমের মতো দোদূল ঝুলতে দেখে হুমায়ূন যখন আমার রাজ্য লাগবোনাকো‚ আমি মক্কা যামু বলে উল্টোদিকে ছুট দেওয়ার তাল করেছিলো‚ এই বৈরাম খানই তখন নিজে সামনে দাড়িয়ে থেকে দক্ষ তীরন্দাজ দের সাহায্যে আকবর কে দুর্গের চূড়ার বাঁধন কাটিয়ে নামিয়ে আনেন। অন্য সব বারের মতোই সেবারও বৈরাম খান না থাকলে মুঘল বাহিনীর খবর তো ছিলোই‚ আকবরও হয়তো শিশুকালেই অক্কা পেয়ে যেত। তার আর ভারতের শ্রেষ্ঠ সম্রাট আখ্যা পাওয়া হতোনা।
.
তা পরবর্তীতে হুমায়ূন মারা গেল‚ বৈরাম খানের সাহায্যে পাণিপতের যুদ্ধে জিতে কিশোর আকবর সম্রাট হল। সবই ঠিক আছে‚ কিন্তু কিছুদিনের ভেতরেই বাধলো গ্যাঞ্জাম ! শুরু হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্র!
.
আকবরের বাচ্চাবেলায় মুঘল সাম্রাজ্যে দুটো লবি ছিলো‚ একটি ছিলো সুন্নি লবি‚ যার নেতৃত্বে ছিলো আকবরের ধাইমা মাহাম আগা, শিহাবুদ্দিন আতাগা, কাশিম খান, মাহাম আগার ছেলে আদম খান এবং খোদ আকবরের নিজের মা হামিদা বানু! আর একটা ছিলো শিয়া লবি‚ যার নেতা খোদ বৈরাম খান।
এখন কিছুদিনের ভেতরেই এই দুই দলের ভেতর লাগলো ক্যাচাল আর মা - ধাইমার বুদ্ধি শুনে আকবর বৈরাম খানকে ডেকে হাতে ধরিয়ে দিলো রেজিগনেশন লেটার। কি হয়েছে? না তুমি বহুত দিন সাম্রাজ্যের সেবা করেছ‚ অনেক কষ্ট করেছ সারাজীবন এখন শেষ বয়সে মক্কায় গিয়ে ধর্মকর্মে মন দাও‚ আল্লাহর কাজে মন দাও। সোজা ভাষায়‚ তাড়াতাড়ি হিন্দুস্তান ছাড়‚ নাহলে বুড়ো তোর খবর আছে।
.
বৈরাম খান বুঝলো আকবরের ইঙ্গিত। চললো বৈরাম খান মক্কার দিকে। পথে পড়লো গুজরাট! আর এই গুজরাটেই এক পাঠানের হাতে বৈরাম খানের ইহজগতের ভিসা ক্যান্সেল হয়ে গেলো ১৫৬১ সালের জানুয়ারী মাসের ৩১ তারিখে ! আকবরের পোষা মুঘল ঐতিহাসিক দের মতে বৈরাম খান বহু আগে কোন এক আফগানের কল্লা নামিয়ে দিয়েছিলো! তারই ছেলে মোবারক খান নাকি বৈরাম খানকে মেরে পিতৃহত্যার শোধ তোলে। যদিও সেই হত্যাকারীকে কোনোদিনও ধরা যায়নি আর বৈরাম খানের মৃতদেহেরও হদিশ কোনোদিন আর পাওয়া যায়নি। তাই দুষ্টু লোকেরা বলে আকবরই নাকি লোক পাঠিয়ে বৈরাম খানকে স্বেচ্ছায় মুন্ডুদান শিবিরে বসিয়ে দেয় যাতে ভবিষ্যতে শিয়া লবির কেউ সুন্নীদের উপর খবরদারি করার আগে নিজের মুন্ডুর কথাটা অন্তত দুএকবার ভেবে নিতে পারে।
.
.
যাইহোক‚ আমাদের এই বৈরাম খানের এক স্ত্রী ছিলো সেলিমা সুলতানা! যে কিনা আবার সম্পর্কের দিক দিয়ে ছিলেন আকবরেরই পিসতুতো বোন। সেলিমা সুলতানা বেগমের মা গুলরুখ বেগম ছিলেন আকবরের বাবা হুমায়ুনের বোন !
তা বাবার বন্ধু বৈরাম খানের হত্যার পর আকবর সুলতানা বেগম কে গুজরাট থেকে দিল্লি আনার ব্যবস্থা করে আর আনা মাত্রই নিজের পিসতুতো বোন তথা পিতৃতুল্য বৈরাম খান‚ যাকে কিনা আকবর নিজেই ডাকত খান বাবা বলে‚ তার বিধবা স্ত্রী সুলতানা বেগমকে বিয়ে করে নিজের হেরেমে ঢুকিয়ে নেয়।
.
আগে এটা কিছুতেই ভেবে পেতাম না যে ভারতে এত রাজারাজরা থাকতেও আকবরকে কেন তাদের ভেতর শ্রেষ্ঠ বলা হয়। এখন মাঝেমধ্যে কেন জানিনা মনে হয় উত্তর টা আমি বুঝে গেছি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন