বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

রূপক রায়-এর কলাম ( পনেরো )


রূপক রায়-এর কলাম ( পনেরো )
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু




হৃদয়,
আমি যা সত্য তাই মানি। সনাতনী শাস্ত্রমতে কৃষ্ণ সত্য, তাই কৃষ্ণকে মানি। যারা মূর্খ এবং যারা সনাতন ধর্মের প্রকৃত সত্যকে জানে না, তাদের মতো রাধাকে আমি স্বীকার করি না।
রাধা, কৃষ্ণের সেক্স পার্টনার; এ কথা আমি বলি নি, বলেছে তোর ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, এই পুরাণ কখনো পড়েছিস ? এতে রাধা ও কৃষ্ণের চরিত্র কিভাবে বর্ণনা করা আছে, সেটা কখনো দেখেছিস ? সেই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ অনুযায়ী রাধা ও কৃষ্ণ সম্পর্কে যে গল্প বাজরে প্রচলিত আছে, সেই কথা বলতে গিয়ে আমি বলেছি রাধা, কৃষ্ণের সেক্স পার্টনার। বুঝেছিস বলদ ?
কল্পিত রাধার নিজের কোনো মান সম্মান আছে যে তাকে অপমান করবো ? ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ মতে- যে নারীর নিজের স্বামী সন্তান থাকার পরেও অন্য পুরুষের সাথে মিলনের জন্য উতলা হয়, সে কিভাবে সম্মানের পাত্রী ? একে সম্মান করলে তো নষ্টা চরিত্রের মেয়েদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, আর সেই আদর্শ অনুসরণ করে সমাজের সব মেয়ে নষ্টা চরিত্রের হবে। তুই কি চাস, তোর মা-বোন-স্ত্রী, এই চরিত্রের হোক ?
আম কৃষ্ণকে অপমান করছি না, রাধার প্রসঙ্গ টেনে মুসলমানরা কৃষ্ণ সম্পর্কে যে খারাপ কথা বলে এবং রাধার অস্তিত্বকে স্বীকার করার কারণে হিন্দুরা যে কৃষ্ণকে নিয়ে গর্ব করতে পারে না, সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করছি; সুতরাং কৃষ্ণকে অপমান নয়, কৃষ্ণকে কলঙ্কমুক্ত করে তার সম্মান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি, এইটুকু বোঝার যদি ক্ষমতা তোর থাকতো, তাহলে যে লোকটা হিন্দু সমাজের মঙ্গলের জন্য রাত দিন পরিশ্রম করছে, তার সম্পর্কে এরকম উল্টা পাল্টা মন্তব্য করে তার সময় নষ্ট করতিস না।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, কাম হলো নরকের দ্বার। গীতা পড়ে তুই যদি এটা বুঝে থাকিস, তাহলে কাম ত্যাগ করে তুই হিজড়া হয়ে যা। কৃষ্ণ নিজে কাম ত্যাগ করেন নি, তিনি রুক্মিণীকে বিবাহ করেছেন, প্রদুম্ন্যের জন্ম দিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ আসলে এখানে বলেছেন অনিয়ন্ত্রিত কামের কথা, যার দ্বারা সমাজ সংসারের অস্থিরতা তৈরি হয়। এজন্য শ্রীকৃ্ষ্ণ বলেছেন কামকে নিয়ন্ত্রণের কথা, ত্যাগ করার কথা নয়, দেখ, গীতার এই শ্লোকগুলো-
"তস্মাত্ত্বমিন্দ্রিয়াণ্যাদৌ নিয়ম্য ভরতর্ষভ।
পাপমানং প্রজহি হ্যেনং জ্ঞানবিজ্ঞাননাশনম্।।" - (গীতা,৩/৪১)
অর্থ : হে ভরত শ্রেষ্ঠ, তুমি- জ্ঞান বিজ্ঞান নাশক, পাপের প্রতীক ইন্দ্রিয় গুলিকে প্রথমে নিয়ন্ত্রণ করো।
এই একই কথা বলা আছে নিচের এই শ্লোক দুটিতে-
"যে ত্বক্ষরমনির্দেশ্যমব্যক্তং পর্যুপাসতে।
সর্বত্রগমচিন্ত্যং চ কূটস্থমচলং ধ্রুবম।।
সংনিয়ম্যেন্দ্রিয়গ্রামং সর্বত্র সমবুদ্ধয়ঃ।
তে প্রাপ্নুবন্তি মামেব সর্বভূতহিতে রতাঃ।।"- (গীতা, ১২/৩-৪)
অর্থ : যারা সমস্ত ইন্দ্রিয় সংযত করে, সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন হয়ে এবং সর্বভূতের কল্যানে রত হয়ে আমার অক্ষর, অনির্দেশ্য, অব্যক্ত, সর্বত্রগ, অচিন্ত্য, কূটস্থ, অচল, ধ্রুবও নির্বিশেষ স্বরূপকে উপসনা করেন, তারা অবশেষে আমাকেই প্রাপ্ত হন।
শুধু তাই নয়, নিচের এই শ্লোকে বলা আছে, এই দেহ ত্যাগ করার পূর্বে যিনি কাম, ক্রোধ থেকে উদ্ভূত বেগ সহ্য করতে সক্ষম, তিনিই যোগী এবং এইজগতে তিনিই সুখী হন। দেখে নে সেই শ্লোক-
শক্নোতীহৈব যঃ সোঢ়ুং প্রাক শরীরবিমোক্ষনাৎ।
কামক্রোধোদ্ভবং বেগং স যুক্তঃ স সুখী নরঃ।।"- (গীতা, ৫/২৩)
গীতার এসব শ্লোক থেকে স্পষ্ট যে কামকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, ত্যাগ করতে বলা হয় নি, কৃষ্ণের জীবনেও রয়েছে এর আদর্শ, যা আগেই বলেছি। তাছাড়া কামকে ত্যাগ করা সমাজ সংসারের জন্য একটি অবাস্তব ব্যাপার, কাম ছাড়া কেউ কি তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে পারে ? কাম ছাড়া কি সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব ? কাম ত্যাগ করে যদি সৃষ্টিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে এই পৃথিবীতে মানব সভ্যতা কয়দিন টিকে থাকবে ? বংশধর যাতে বিলুপ্ত না হয়, সেজন্য শ্রীকৃষ্ণ, অশ্বত্থামার নিক্ষেপ করা ব্রহ্মাস্ত্রে মাতৃগর্ভেই নিহত হওয়া পরীক্ষিতকে মাতৃগর্ভেই জীবিত করে দিয়েছিলেন। কাম ত্যাগ করা এবং ঘুমন্ত স্ত্রীকে বিছানায় ফেলে সংসার থেকে পালিয়ে যাওয়া চৈতন্যদেবের ভক্তদেরকে বলছি, সব বৈষ্ণব যদি চৈতন্যকে ফলো করে, তাহলে বৈষ্ণব সমাজ কয়দিন টিকে থাকবে; বা সব হিন্দুই যদি চৈতন্যকে ফলো করে তাহলে হিন্দু সমাজই বা কয়দিন টিকে থাকবে ? আর ভক্ত অনুসারীরা যদি না থাকে, কে গাইবে "হা গৌরাঙ্গ" বা কে করবে কৃষ্ণ নাম ? সুতরাং কামকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা যে একটি অবাস্তব ব্যাপার, আশা করছি সেটা আমার পাঠক বন্ধুরা বুঝাতে পেরেছি; যদিও আমি জানি যে হৃদয় চৌধুরী নামের এই বলদ এটা বুঝবে না; কারণ, তার জন্ম তো তার পিতা মাতার কামের ফলে হয় নি, সে আকাশ থেকে পড়েছে !
কৃষ্ণ মানুষ রূপেই ঈশ্বরের ক্রিয়াগুলো করেছে, তারপরও কৃষ্ণের জীবদ্দশায় বেশির ভাগ মানুষ তাকে ভগবান হিসেবে মনে করতো না, যার ফলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মোট ১৮ অক্ষৌহিণী সেনার মধ্যে ১১ অক্ষৌহিণী সেনা পাণ্ডব তথা কৃষ্ণের বিপক্ষে ছিলো; সুতরাং প্রথমত তাকে মানুষ হিসেবে ভাবতে অসুবিধা কোথায় ? মানুষ হিসেবেই কৃষ্ণ রুক্মিণীর সাথে প্রেম এবং তাকে বিবাহ করেছিলেন, মানুষ হিসেবেই তিনি রুক্মিণীর গর্ভে প্রদুম্ন্যের জন্ম দিয়েছিলেন। কৃষ্ণ যদি ইন্দ্রিয় উপভোগ না করে তাহলে তিনি রুক্মিণীকে বিয়ে করেছিলেন কেনো এবং ইন্দ্রিয় উপভোগ ছাড়া কিভাবে তিনি রুক্মিণীর গর্ভে প্রদুম্ন্যের জন্ম দিয়েছিলেন ? শ্রদ্ধা ভালো, কিন্তু অতি শ্রদ্ধা ভালো নয়, কারণ, অতি শ্রদ্ধায় মানুষের মূর্খতা প্রকাশ পায়।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের কাহিনীকে সত্য মনে করে যারা কৃষ্ণকে কাম গন্ধহীন মনে করে তাদের মতো মূর্খ আসলে জগতে নেই; কারণ, হয় তারা ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ পড়ে নি বা পড়ে কিছুই বোঝে নি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে রাধা ও কৃষ্ণের দেখা সাক্ষাত মানেই যৌনলীলা, এ পুরাণ মতে রাধা একটি নষ্টা মেয়ের চরিত্র এবং কৃষ্ণ একজন লম্পট। কিন্তু হিন্দুধর্মের প্রামাণ্য গ্রন্থ অনুযায়ী, আমি জানি কৃষ্ণের চরিত্র এমন লাম্পট্যভরা নয়, তাই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণকে আমি বেদব্যাস রচিত মনে করি না এবং এই পুরাণের কাহিনীকে সত্য বলে মনে করি না।
রাধার অস্তিত্ব নিয়ে আমার মনে কোনো সঙ্কা নয়, শঙ্কা নেই। কারণ, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি যে শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধা বলে কোনো নারী নেই।
রাধাকে নিয়ে মুসলমানদের মতো তুই বারবার ডিবেট এর কথা বলিস কেনো ? রাধা প্রসঙ্গে আমি যেসব পোস্ট ছাড়ি, তুই সেগুলোর যুক্তি খণ্ডণ করে পাল্টা পোস্ট ছাড়তে পারিস না কেনো ?
বোকাচোদা কে, সেটা আমার পোস্টে এসে অন্যান্যদের কমেন্ট দেখে বুঝে নিস।
আর আমি তোর মতো মাদারচোদ নই যে, তোর মা কার সাথে শুয়ে তোর জন্ম দিয়েছে সেই বিষয়ে কথা বলবো।
একটা কথা শুনে রাখ, তুই তো কোন ছাড়, বাংলার এমন কোনো হিন্দুধর্ম গুরু বা পণ্ডিত নেই যে আমার সামনে বসে আমার বিরুদ্ধে দুই মিনিট কথা বলার ক্ষমতা রাখে, আর তুই করতে চাস আমার সাথে ডিবেট! ইঁদুর, হিমালয়ের উচ্চতা মাপতে পারে না বা সে সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না। ইঁদুরের কাজ হলো ভালো জিনিস কেটে কুটে নষ্ট করা এবং সেই জিনিসের মালিকের বিরক্তি উৎপাদন করা, তুই আসলে এমনই একটা ইঁদুর, গর্তের মধ্যে বসে থেকে শুধু বলিস আয় ডিবেট করি, আয় ডিবেট করি। ডিবেট করার জন্য তোর সামনে যেতে হবে কেনো ? এখন যে অনলাইনের যুগ, হাজার মাইল দূরে বসেও একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে পারে, সেই ধারণা কি তোর আছে ? আমি যে পোস্ট লিখি, সেটা পছন্দ না হলে তার বিরুদ্ধে তুই আরেকটা পোস্ট লিখলেই তো সেটা ডিবেট হয়ে যায়, এর জন্য সামনাসামনি বসার দরকার আছে ? বলদা ?
শোন, যে পারে সে সব জায়গায় পারে। আর যে পারে না, তার কাছেই উঠোন বাঁকা মনে হয়। আমি যদি তোকে অনলাইনে বাঁশ দিতে পারি, সামনাসামনি আরো ভালো দিতে পারবো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই অযথা ঘেউ ঘেউ না করে, আমি যা বলবো, ঠিক ঠিক সেই পয়েন্ট ধরে কথা বলবি, যার কথায় সত্যতা এবং যুক্তি থাকবে, লোকজন সেটাই গ্রহন করবে, এর জন্য গালাগালির প্রয়োজন নেই। গালিই যে মূর্খদের প্রধান পরিচয়, এটা তুই জানিস ? না জানলে আরো কিছু পড়াশোনা কর; কারণ, কুয়ার জ্ঞান নিয়ে সরোবর বা সাগরের কাছে গিয়ে বড়াই করা যায় না। পড়াশুনা কর, প্রকৃত সত্যকে জানার চেষ্টা কর, যুক্তি দিয়ে সবকিছুকে বোঝার চেষ্টা কর, আমার সাথে তোর কোনো বিরোধ থাকবে না। কারণ, প্রকৃত সত্য আমার কাছে, সেই সত্যের কাছে আজ হোক বা কাল হোক তোকে এবং তোর মতোদের সেখানে আসতেই হবে।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
মন্তব্যগুলি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন