বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮

রূপক রায়ের কলাম


রূপক রায়ের কলাম


ফেসবুক থেকে    শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু



Rupok Roy


হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় ? এবং ইসলাম নাকি সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম !

উপরের এই দুটো প্রসঙ্গসহ মুসলমানদের করা আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে জানতে চেয়েছিলো Pritam Das নামের আমার এক ফেসবুক বন্ধু। শুরুতেই দেখে নিন সেই প্রসঙ্গগুলো-

মুসলমানরা বলে যে, একটা হাতির মুখ মানুষের শরীরে কি করে বসানো যায় ? কী যুক্তি আছে এটার পেছনে ? আর সেইটাকে তোমরা হিন্দুরা আবার পূজাও করো! আবার সেই গনেশের একটা কলা গাছ বউও আছে। তারপর হুনুমান কী করে উড়তে পারে ? কী করে একাই একটা লংকা জ্বালিয়ে দিতে পারে ? এছাড়াও বলে যে ইসলাম নাকি পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম, হিন্দু ধর্ম অনেক পরে এসেছে। পৃথিবী কবে শেষ হবে তা নাকি ওদের কোরানে লেখা আছে। আর মাঝে মধ্যে প্রায় জিজ্ঞেস করে হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় ? কোনো না কোনো তো একটা বড় দেবতা হয়েই যায়। সবাই তো এক দেবতা পূজা করে না। কেউ কেউ তো আলাদা পূজা করে, তাহলে হিন্দুদের মধ্যে দেবতা নিয়ে একতার অভাব। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি...

এবার দেখুন আমার জবাব:

মুসলমানরা হিন্দুদেরকে ধর্ম বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে বিব্রত করে, ঠিকঠাক সেই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে না পারলে হিন্দুরা হেয় হয়, এরপর ধর্ম নিয়ে সে হীনম্মন্যতায় ভুগে, যথা সময়ে এর ট্রিটমেন্ট করা না হলে, দিনের পর দিন এভাবে হেয় হতে হতে এক সময় সে হিন্দুধর্ম ত্যাগও করতে পারে। মুসলমানদের করা ঠিক এই ধরণের কিছু প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি আজকে।

প্রথম প্রসঙ্গ হলো, একটা হাতির মুখ মানুষের শরীরে কি বসানো যায় ? কী যুক্তি আছে এটার পেছনে ?

পৌরাণিক কাহিনী মতে, শিব যখন দুর্গার মানসপুত্রের মাথা কেটে ফেলে দেয়, এটা জানার পর দুর্গা ভয়াবহ অন্দোলন শুরু করে এবং বলে তার ছেলেকে জীবিত করে না দিলে সে বিশ্বকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে।
এর ফলে শিব তাকে জীবিত করার উদ্যোগ নেয়, কিন্তু কাটা মাথা আর কোথাও খুঁজে পায় না, অন্যদিকে দুর্গারও আর তর সইছিলো না, শেষ পর্যন্ত শিব তার অনুচরদেরক বলে, যাও, কোনো প্রাণীর অনুসন্ধান কর এবং সে যদি স্বেচ্ছায় তার শির দিতে রাজী হয়, তাহলে তার শির কেটে এনো, সাথে সাথে দেবরাজ ইন্দ্রসহ অন্যান্য দেবগন কোনো প্রাণীর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে এবং তারা গিয়ে একটি হাতির দেখা পায়. সেই হাতিকে দেবতারা হাতিকে গনেশের জীবিত হয়ে উঠার কারণ ব্যাখ্যা করতেই সাথে সাথে হাতি তার শির, গনেশকে দিতে রাজী হয়, কারণ, সেই হাতি ছিলো মহাদেব শিবের একজন ভক্ত, সে একবার শিবের কাছে প্রার্থনা করেছিলো যে, সে শিবের কাছাকাছি থাকতে চায়, সেই সময় শিব, সেই হাতিকে এই বর দিয়েছিলো যে, কোনো এক সময় তার এই প্রার্থনা পূরণ হবে, গনেশের দেহের সাথে তার মাথা জুড়ে শিবের কাছাকাছি থাকার, হাতির সেই প্রার্থনা পূরণ হবে ভেবে, হাতি তার শির দিতে রাজী হয় এবং বিষ্ণুর সুদর্শন দ্বারা হাতির মাথাকে বিচ্ছিন্ন করা হলে, সেই মাথা গনেশের দেহের সাথে লাগিয়ে জোড়া লাগিয়েই শিব, দুর্গার পুত্রকে বাঁচায়; এরপর দুর্গা, তার নাম দেয় গণেশ এবং তাকে এই বর দেয় যে, তোমার পূজা করলেই লোকে সিদ্ধি লাভ করবে। এই ঘটনা পুরানের মাধ্যমে প্রচারের ফলেই পৃথিবিীতে গনেশ এর পূজা প্রচলিত হয়।

যা হোক, গনেশের মাথা জোড়া লাগানোর ঘটনাকে মুসলমানরা বলে বা বলবে অজগুবি গল্প, কিন্তু তাহলে ইসলামের ইতিহাসের চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে জোড়া লাগানোর ঘটনাটা কী ? কোরানের সূরা কমর এর ১ নং আয়াতে স্পষ্ট করে লিখা আছে, "চাঁদ দ্বি-খণ্ডিত হয়েছে", এর মানে হচ্ছে মুহম্মদের আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে এবং তার আঙ্গুলের ইশারাতেই চাঁদ আবার জোড়া লেগেছে। এতবড় একটা ঘটনার প্রমান শুধু কোরান ! যে কোরানের পাতায় পাতায় ভুল আর মিথ্যা। ইসলামের বর্ণনা মতে, এটা মাত্র ১৪০০ বছর আগের ঘটনা, অথচ পৃথিবীর আর কেউ সেই ঘটনা দেখলো না ! কোনো দেশ থেকে সেই ঘটনা আর দেখাই গেলো না! এ্রই রকম অলৌকিক ঘটনা যদি মুহম্মদের থাকতো তাহলে তাকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আর তরবারি নিয়ে ঘুরতে হতো না, এই ক্ষমতা দেখেই মুহম্মদের জীবদ্দশাতেই শুধু আরব নয়, সারা পৃথিবীর লোক ইসলাম গ্রহন করে ফেলতো।

এরপর মানুষের দেহ আর হাতির মাথাওয়ালা গনেশকে নিয়ে যদি মুসলমানদের এলার্জি থাকে, তাহলে বোরাক এর ঘটনাটা কী ? যে বোরাকে চড়ে মুহম্মদ সাত আসমান ডিঙ্গিয়ে আল্লার সাথে দেখা করে এসেছিলো ? এই বোরাকের দেহ ছিলো ঘোড়ার মতো আর মাথা ছিলো নারীর। যেই ঘটনাকে স্মরণ করে মুসলমানরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে শব-ই-মেরাজ নামে পালন করে থাকে।

মানুষের দেহে হাতির মাথা জোড়া লাগানোর ঘটনাটা সার্জারির একটা প্রতীকী ঘটনা। এখন এক মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অন্য মানুষের দেহে লাগিয়ে তাকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে, এমন কি কোনো কোনো প্রানীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমেও মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, এই বৈজ্ঞানিক সাফল্য হয়তো একদিন এমন স্তরে পৌঁছবে যখন মানুষের কাটা মাথাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জোড়া লাগিয়ে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে মানুষের কাটা মাথা জোড়া লাগানোর পরিবর্তে উদাহরণ হিসেবে হাতির মাথা কেনো ? হাতির মাথা বলেই গল্পটা এখনো বেঁচে আছে এবং মানুষ তার চর্চা করে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, না হলে গল্পটা এতদিনে হারিয়ে যেতো এবং ভবিষ্যতের সার্জারি বিদ্যা যে কোথায় পৌঁছতে পারে, এ ব্যাপারে মানুষ ধারণা হারিয়ে ফেলতো। মানবদেহে যে প্রাণীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ লাগানোর চেষ্টা চলছে, সেটা জানার জন্য ক্লিক করতে পারেন নিচের এই লিঙ্কে-

http://www.ntvbd.com/tech/17692/

এই ঘটনার অন্য দিকটা হলো, হিন্দুধর্ম প্রকৃতির ধর্ম, তাই প্রকৃতির সকল কিছুকে শ্রদ্ধা করা হিন্দুধর্মের অংশ। গনেশের মাধ্যমে আমরা হাতিকে সেই ধরণের শ্রদ্ধাই করি। এই শ্রদ্ধা থেকেই গনেশের পূজার উৎপত্তি এবং এই পূজার স্বীকৃতি আছে গীতায়। কেননা, পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে যে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন তার মধ্যে গনেশ ছিলো।

গনেশ প্রসঙ্গে অন্য কটূক্তি হলো, সেইটাকে তোমরা হিন্দুরা আবার পূজা করো। আবার সেই গনেশের একটা কলা গাছ বউও আছে।

মেরাজের ঘটনাকে কোনো মুসলমান কি অস্বীকার করার ক্ষমতা রাখে ? রাখে না। কারণ, তাহলে তারা আর মুসলমান থাকবে না। মেরাজের ঘটনাকে স্বীকার করা মানেই হলো নারীর মস্তকযুক্ত ঘোড়ার দেহ- বোরাককে স্বীকার করা আর তাকে শ্রদ্ধা বা পূজা করা। মুসলমানরা যখন এই রকম একটা অদ্ভূত জন্তুকে রেসপেক্ট করছে, যা পৃথিবীতে কখনো ছিলো না; তখন হিন্দুদের গনেশ পূজাকে নিয়ে তাদের এত চুলকানি কেনো ?

আবার গনেশের কলা বৌ এর ব্যাপারটা হলো, দুর্গা পূজায় প্রকৃতির সমস্ত গাছের প্রতিনিধি হিসেবে থাকে নবপত্রিকা। এই নব পত্রিকা হলো নয়টি গাছ, এগুলোর মধ্যে কলা গাছ সবচেয়ে বড় হওয়ায়, অন্য গাছ গুলো কলাগাছের সাথে বেঁধে হলুদ শাড়ি পরিয়ে গনেশের পাশে রাখা হয়, যাকে সাধারণ মানুষ কলাগাছের বউ বলে ভুল করে। অনেক হিন্দুই এই সঠিক তথ্য জানে না, সেক্ষেত্রে কোনো মুসলমানের যদি এটা নিয়ে এরকম ভুল ধারণা থাকে এবং তা নিয়ে কটূক্তি করে, তাকে আর দোষ দিয়ে লাভ কী ?

এরপরের প্রসঙ্গ হলো, হুনুমান কী করে উড়তে পারে, কী করে সে একাই লংকা জ্বালিয়ে দিতে পারে ?

নারীর মাথাওয়ালা ঘোড়ার দেহ যুক্ত বোরাক যদি আকাশে উড়তে পারে, তাহলে হুনুমানের আর দোষ কী ? তারপরও হুনুমান তো উড়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে, যেখানে বাতাস আছে। কিন্তু বোরাক পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বে উঠে কিভাবে উড়তে পারলো, যেখানে বোরাকের উড়ার ক্ষমতাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তার সাথে পাখা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ? আসলে হুনুমান উড়তে পারে বলে যে কথা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়; কারণ, উড়ার জন্য পাখা দরকার, হুনুমানের সেই পাখা নেই। হুনুমান নিজেই একজন দেবতা, আর সব দেবতার- যেখানে সেখানে যাওয়ার জন্য- সুপার ন্যাচারাল ক্ষমতা আছে । হুনুমান সেই ক্ষমতা বলেই মূহুর্তের মধ্যে এখানে সেখানে গমন করে, যে বিষয়টিকে বুঝতে না পেরে, মুসলমানরা বলে হুনুমানের উড়া!

হুনুমানের ক্ষমতাকে কটাক্ষ করে আবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে, হুনুমান কী করে একাই একটা লংকা জ্বালিয়ে দিতে পারে ?

যে হুনুমান একটা পর্বতকে তার হাতের তালুর উপর করে তুলে আনতে পারে, সে যদি গোটা লংকাকে জ্বালিয়ে দেয়, তাহলে প্রব্লেম কী ? নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষার মধ্যে কি খুব পার্থক্য ? বরং এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে, হুনুমান কিভাবে পর্বতকে তুলে আনতে পারে ? ৬০/৭০ কেজি ওজনের একটা মানুষের পক্ষে ১০ কেজি ওজন তোলা এবং তাকে বহন করা কি খুব কঠিন ? দেবতা হিসেবে হুনুমানের এই ক্ষমতা ছিলো যে যে, ইচ্ছামতো সে তার দেহকে ছোট ও বড় করতে পারতো, আর বড় দেহে বেশি শক্তি অবশ্যই থাকে। যখন সে পর্বতকে তুলতে গিয়েছিলো, তখন সে নিজের দেহকে পর্বতের চেয়ে অনেক বেশি গুন বড় করেছিলো, তাই সে অনায়াসে পর্বতকে নিজের হাতের তালুর উপরে তুলে নিয়ে যেতে পেরেছিলো।

এরপর মুসলমানদের নাকি দাবী, ইসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম, হিন্দু ধর্ম নাকি অনেক পরে এসেছে !

মুসলমানরা বেশ অনেক আগে থেকেই বলে আসছে যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই কথা পৃথিবীর ক’জন অমুসলিম বিশ্বাস করে ? গাঁজাখোরেরা তো গাঁজার প্রশংসা করবেই, এতে কী গাঁজা উপকারী হয়ে যাবে? আমি ভালো, একথা বললে, কেউ সে কথা বিশ্বাস তো করেই না, বরং উপহাস করে। আর যে ভালো, তাকে তো সে কথা বলারই দরকার নেই, ভালো হলে তার আচার আচরণে লোকে এমনি বুঝে যে সে ভালো। অর্থাৎ তার ভালোত্বকে, তার কথা ও কাজে প্রমান করতে হয়, তাহলেই অন্যেরা তাকে ভালো বলে মনে করে এবং লোকের কাছে তার সম্পর্কে ভালো বলে। সেই রকম ইসলাম শান্তির ধর্ম হলে, মুসলমানদেরকেই তা আচার আচরণে প্রমান করতে হবে, গাল ফাটিয়ে চিৎকার করে বলার প্রয়োজন নেই। অনেক দশক ধরে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করেও যেমন মুসলমানরা প্রমান করতে পারে নি যে ইসলাম শান্তির ধর্ম; তেমনি, বেশ কয়েক বছর হলো তারা নতুন করে প্রচার শুরু করেছে যে ইসলাম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম; কিন্তু ১৪ বছর বয়সী বালক যদি হঠাৎ দাবী করে যে, তার বয়স ১০০ বছর, তাহলেই তো সে আর ১০০ বছর বয়সী হয়ে যাবে না, তা্কে প্রমান করতে হবে যে তার ১০০ বছর বয়স, কিন্তু ১৪ বছর বয়সী একটা বালকের কি সেই ক্ষমতা আছে নিজেকে ১০০ বছর বয়সের প্রমাণ করার ?

এই প্রসঙ্গে মুসলমানদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইসলামের প্রবর্তক কে ? বলবে, হযরত মুহম্মদ। উনার জন্ম কত সালে ? ৫৭০ সালে। তাহলে ইসলামের বয়স কত ? ১৪০০ বছর। খ্রিষ্ট ধর্মের বয়স কত ? জানা থাকা সাপেক্ষে সে বলবে, ২ হাজার বছর। বৌদ্ধধর্মের বয়স ? প্রায় আড়াই হাজার বছর। ইহুদি ধর্মের ? প্রায় ৩ হাজার। হিন্দুধর্মের বয়স ? এ কথার জবাব কোনো মুসলমান জানলেও দেবে না, তাই আপনিই বলবেন, গীতারই বয়স প্রায় ৫ হাজার ২ শ বছর; বেদ আরো পুরোনো, এর বয়স প্রায় ৮/১০ হাজার বছর। তাহলে ইসলাম পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম হলো কিভাবে ?

মুসলমানরা যখন এই ফাঁদে পড়বে, তখন তারা বলতে পারে যে- কোরান হলো আসমানী কিতাবের সর্বশেষ ভার্সন এবং হযরত মুহম্মদ হলো শেষ নবী ? মুহম্মদ শেষ নবী এবং কোরান আসমানী কিতাবের সর্বশেষ ভার্সন হতে পারে, কিন্তু এতে তো এটা প্রমান হয় না যে, ইসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম ? কারণ, মুহম্মদই এনেছে ইসলাম এবং তার আগে ইসলাম বলে পৃথিবীতে কোনো শব্দই ছিলো না। তাহলে ইসলাম পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম হয় কিভাবে ?

এরপর তারা উল্লেখ করতে পারে আদম হাওয়ার কাহিনী এবং বলতে পারে যে, এই
আদম হাওয়ার সন্তানের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টি এবং এই কাহিনীর উল্লেখ আছে কোরানে, সেই সূত্রেই ইসলাম পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম।

আদম হাওয়ার কাহিনীর উৎপত্তি- প্রথমে ইহুদি ধর্মে এবং ইহুদি ধর্মের কিছুটা পরিবর্তিত রূপ যেহেতু খ্রিষ্টান ধর্ম, সেহেতু খ্রিষ্টিান ধর্মেও আদম হাওয়ার কাহিনী আছে, যেখানে আদম এর নাম এ্যাডাম এবং হাওয়ার নাম ইভ, সেই কাহিনী দখল করে মুহম্মদ তার কোরানে ঢুকিয়েছে। শেখ মুজিব বা গান্ধীর নামের সুনাম ও প্রভাব দেখে কেউ যদি এখন হঠাৎ করেই নিজেকে তাদের উত্তরসূরী বা বংশধর বলে দাবী করে, সেটাকে অন্যদের মেনে নিতে হবে ? বরং এধরণের দাবী যে করবে তাকে লোকজন পাগল বলেই মনে করবে এবং মুহম্মদকে এখনও পৃথিবীর ৮০% লোক মনে করেও তাই।

এরপর মুসলমানদের নাকি দাবী, পৃথিবী কবে শেষ হবে তা নাকি কোরানে লেখা আছে! কেয়ামত সম্পর্কে কোরানে কী লেখা আছে, তা দেখা যাক-

“লোকেরা তোমার নিকট জিজ্ঞেস করে যে, কেয়ামতের নির্দিষ্ট সময় কখন আসবে ?বল, তার জ্ঞান তো আল্লাহর নিকটই আছে, তুমি কি করে জানবে ? সম্ভবত তা খুব নিকটেই উপস্থিত হয়ে গেছে ?- (কোরান, ৩৩/৬৩)। কেয়ামত যে নিকটবর্তী সে কথা আবার বলা আছে কোরানের সূরা কমরের ১ নং আয়াতে। অর্থাৎ কেয়ামত যে নিকটবর্তী সে কথা মুহম্মদ বিশ্বাস করতো, কিন্তু কখন কেয়ামত হবে, সেই নির্দিষ্ট সময় মুহম্মদের জানা ছিলো না ব'লে তা চালাকি করে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে আল্লার উপর, কিন্তু আল্লাও যে তা জানে না, তার প্রমান আছে ইসলামের ইতিহাসে।

ইসলামের গল্প অনুসারে আপনারা অনেকেই জানেন যে, আল্লার নির্দেশে ইসরাফিল ফেরেশতা একটি শিঙ্গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেয়ামতের সিগন্যাল হিসেবে শিঙ্গা বাজানোর জন্য। অলরেডি ইসরাফিল ফেরেশতা ১৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আরো কতকাল দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তা কেউ জানে না এবং এটা আল্লাও জানে না বলেই তাকে এত বছর ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে, যদি জানতো তাহলে তাকে অযথা এত সময় ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিলো না, যখন কেয়ামত হবে তার পূর্বে তাকে বললেই তো ইসরাফিল ফেরেশতা শিঙ্গা বাজিয়ে দিতো। আল্লার এই অজ্ঞানতার ফলেই বেচারাকে সব কাজ ফেলে শিঙ্গা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
ইসরাফিলের শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া এবং তার পরবর্তী কিছু ঘটনার বর্ণনা আছে কোরানের ৬৯/১৩-১৮ আয়াতে, এখানে বলা হচ্ছে,

“পরে যখন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। তখন ভূতল ও পর্বতরাশিকে উপরে তুলে একই আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।...সেই দিন আকাশ দীর্ণ বিদীর্ণ হবে এবং তার বাঁধন শিথিল হয়ে পড়বে। ফেরেশতাগণ তার আশ পাশে উপস্থিত থাকবে। আর আটজন ফেরেশতা সেই দিন তোমার রবের আরশ নিজেদের উপর বহন করতে থাকবে।”

এখানে দেখুন মজা, বলা হচ্ছে- “তখন ভূতল ও পর্বতরাশিকে উপরে তুলে একই আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।”

ভূতল ও পর্বত রাশি কি আলাদা আলাদা কোনো জিনিস যে, এদের মধ্যে ‘ও’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়েছে ? পর্বত, ভূতলেরই একটা অংশ, যা সমভূমি থেকে কিছুটা উঁচু। পর্বতকে পৃথিবী থেকে হুনুমানের মতো তুলে যদি ভূতলে আছাড় মারা হয়, তাহলে পর্বত চূর্ণ বিচূর্ণ হতে পারে; কিন্তু পৃথিবী কিভাবে চূর্ণ বিচূর্ণ হতে পারে ? পৃথিবীকে তুলে আল্লা কার উপর আছাড় মারবে ?

এরপর এই আয়াতে বলা হচ্ছে, “সেই দিন আকাশ দীর্ণ বিদীর্ণ হবে এবং তার বাঁধন শিথিল হয়ে পড়বে।”

আকাশ নাকি দীর্ণ বিদীর্ণ হবে! আকাশ কি কোনো কঠিন পদার্থ যে দীর্ণ-বিদীর্ণ হবে ? অবশ্য মহাজ্ঞানের সাগর ইসলাম এই বিশ্বাস করে যে, আকাশ শক্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং তা বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডিং এর মতো একটার উপর একটা অবস্থিত; সেক্ষেত্রে ইসলামের শক্ত আকাশ দীর্ণ-বিদীর্ণ হতেই পারে, কিন্তু বাস্তবে আকাশ মানে মহাশূন্য, তার মধ্যে কোটি কোটি মাইল দূরত্বে ভেসে বেড়াচ্ছে গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র-ধূমকেতু-উল্কা ইত্যাদি।

আরও বলা হচ্ছে, আকাশের বাঁধন নাকি শিথিল হয়ে পড়বে !
এর মানে ইসলামের আকাশ বহুতল বিশিষ্ট ইট সিমেন্টের বিল্ডিং নয়, এটা বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্মিত বহুতল বিল্ডিং, তাই ঝাঁকা নাকা খেয়ে এটার বাঁধন শিথিল হয়ে পড়বে।

নিশ্চয় "ইসলামের মহাকাশ বিজ্ঞান" এর মধ্যে রয়েছে, পরম আশ্চর্য মহা বিজ্ঞান ! সত্যিই নাসার অনেক কিছু শেখার আছে কোরান থেকে।

এই আয়াতের আরো বক্তব্য হলো শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার পর, আকাশ যখন দীর্ণ বিদীর্ণ হবে তখন আটজন ফেরেশতা আরশসহ আল্লাকে বহন করতে থাকবে। এর মানে হলো, ইসলামের আল্লা যেহেতু সপ্তম আসমানে থাকে, সেহেতু আকাশ দীর্ণ বিদীর্ন হওয়ার পর আল্লারও থাকার জায়গা আর থাকবে না। তখন সর্বশক্তিমান আল্লা ফেরেশতাদের কাঁধে ভর করে ভেসে বেড়াতে থাকবে, কিন্তু কোথায় ভেসে বেড়াবে ? আকাশ মানে যে মহাশূন্য সেটা কি ইসলাম স্বীকার করে ? এখানে আরও যে প্রশ্ন আসছে, তা হলো, কেয়ামতের পর আল্লার যদি বসারই জায়গা না থাকে তাহলে আখেরাতের নামে শেষ বিচারটা বসবে কোথায় ?

সুতরাং কেয়ামত সম্পর্কে ইসলামের যে গালগল্প, আশা করি তা সবাই বুঝতে পেরেছেন।

এরপর মুসলমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় এবং সবাই এক দেবতার পূজা কেনো করে না ?

হিন্দু শাস্ত্র মতে, পরমব্রহ্ম বা পরমেশ্বর হলো এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রক এবং তিনি এক। এই কথাই বলা আছে ঋগ্বেদে এভাবে-

“একমেবাদ্বিতীয়ম”

অর্থাৎ, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।

এবং তাঁর কোনো রূপ বা আকার নেই,

এ কথা বলা আছে যজুর্বেদের ৩২ নম্বর অধ্যায়ের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে-

“ন তস্য প্রতিমা আস্তি”

অর্থাৎ- “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই”

এই শ্লোকের উপর ভিত্তি করেই মুসলমানরা বলে থাকে হিন্দু ধর্মে মূর্তি পূজা নিষেধ বা মূর্তি পূজার কোনো স্বীকৃতি নেই।

সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোনো মূর্তি নেই, এটা তো ঠিকই আছে; আমরা হিন্দুরা, বহু দেব-দেবীর মূর্তি বানালেও কখনো ঈশ্বর বা ব্রহ্মের মূর্তি বানাই না। কারণ বেদেই বলা আছে যে, ব্রহ্মের কোনো মূর্তি নেই। তাহলে আমরা যাদের মূর্তি আমরা বানাই, তারা কে ?

আমরা যাদের মূর্তি বানাই, তারা হলো ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ। এ কথাই বলা আছে
ঋগ্বেদে (১/১৬৪/৪৬), এভাবে-

"একং সদ্বিপ্র বহুদাবদন্তি।"

এর অর্থ হলো, পরমেশ্বর এক ও একের মধ্যে বহুশক্তি।এই বহুশক্তিই যে দেব দেবী, সেটা বলা আছে ঋগ্বেদের নিচের এই শ্লোকে,

"একং সত্যং বহুদা কল্পয়ন্তি।" ঋগ্বেদ - ১/১১৪/৫

এর অর্থ- দেব-দেবী, পরমেশ্বরের বিভূতি ও অনন্ত শক্তির প্রকাশ।

আমরা হিন্দুরা পরমেশ্বরের এই বিভূতি ও অনন্ত শক্তির প্রকাশেরই মূর্তি তৈরি করি যাদেরকে বলা হয় দেব-দেবী।

দেব-দেবী প্রসঙ্গে মুমিনের প্রশ্ন হচ্ছে- হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় ?
আমরা দেবাদিদেব মহাদেব বলে আদি দেব হিসেবে শুধু মাত্র শিবকে বুঝলেও, আসলে আদি দেব তিন জন, তারা হলেন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর বা শিব। সাধারণভাবে এই তিন দেবতাকে বড় বলে মনে করা হলেও আসলে দেবতাদের মধ্যে কোনো ছোট বড় নেই, সকল দেবতাই গুরুত্বের দিক থেকে সমান। যেমন- যেকোনো অফিসের একজন বড়কর্তা থাকে, যাকে আমরা পরিচালক বা নির্বাহী পরিচালক বলি, কিন্তু অফিসের একজন পিয়নও তার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অফিসার ছাড়া যেমন অফিস চলবে না, তেমনি পিয়ন ছাড়াও অফিস চলে না।
ভূমিকার দিক থেকে কাউকে কাউকে আমরা ছোট বড় বলে ভাবতে পারি, কিন্তু কোনো দেবতাই যে ছোট বা বড় নয়, এটা আমরা বুঝতে পারবো যদি গীতার বাণীর অর্থ সঠিকভাবে বুঝতে পারি।

যেমন- দেবতা হিসেবে কার্তিকের খুব বেশি ভূমিকা নেই, সে বিখ্যাত দেবতাও নয়, সমগ্র বাংলায় আলাদা হিসেবে কার্তিক পূজা হয় শুধু পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায়; দুর্গা পূজার বিশালত্বে কার্তিক খুবই ছোট একটি দেবতা, কিন্তু এই কার্তিক সম্পর্কে গীতার ১০ম অধ্যায়ের ২৪ নং শ্লোকে বলা আছে,

"সেনানীনামহং স্কন্দঃ"

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে, কার্তিকের অন্য নাম স্কন্দঃ এবং স্কন্দপুরাণেই কার্তিকের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। "সেনানীনামহং স্কন্দঃ" এই কথার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, আমিই কার্তিক। তার মানে কার্তিক মানেই শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীকৃষ্ণ মানেই শ্রীবিষ্ণু, শ্রীবিষ্ণু মানেই পরম ব্রহ্ম, অর্থাৎ কার্তিকই হলেন পরমব্রহ্মবা সৃষ্টিকর্তা। এখন চিন্তা করুন, আপাতদৃষ্টিতে কার্তিককে আমরা ছোট দেবতা বলে বিবেচনা করলেও, আসলে তিনি কে ?

আবার শ্রীকৃষ্ণ, বিষ্ণুর অবতার হলেও তাকে আমরা অবতার বলে গণ্য করি না; যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার, তাই কৃষ্ণকে আমরা ভগবান এবং পরমেশ্বর মনে করি। এখানে একটা বিষয় বলা প্রয়োজন যে, ভগবান এবং ঈশ্বর কিন্তু একই অর্থ বহন করে না। ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য-এই ছয়টি গুণ যার মধ্যে থাকে তাকে বলে ভগবান এবং সকল গুন যার মধ্যে থাকে তাকে বলে ঈশ্বর। এই ঈশ্বরের কোনো ধ্বংস নাই, ধ্বংস নাই বলেই তার নাম ঈশ্বর, আর যার ধ্বংস আছে তাকে বলে নশ্বর।

যা হোক, যার মধ্যে উপরের ছয়টি গুন আছে, তাকে বলা হয় ভগবান। কিন্তু এই ছয়টি গুন অর্জন করা মানব রূপে জন্ম নেওয়া কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, এই ছয়টি গুন শুধু মাত্র অবতার রূপে জন্ম নেওয়া মানুষ এবং দেবতাদের মধ্যেই থাকা সম্ভব। একারণেই বিষ্ণুর আংশিক অবতার হিসেবে মানবরূপে জন্ম নেওয়া- রাম, বলরাম ও পরশুরামকে বলা হয়- ভগবান রাম, ভগবান বলরাম এবং ভগবান পরশুরাম; আবার শ্রীকৃ্ষ্ণকেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলা হয়; কারণ পূর্ণ অবতার বা ঈশ্বর হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে শুধু ৬টি নয়, সকল গুণই আছে; একারণেই শ্রীকৃষ্ণ একই সাথে ভগবান এবং ঈশ্বর। ব্যাপারটা এমন- কিছু সরকারি ক্ষমতা থাকলে কেউ কেউ মন্ত্রী, কিন্তু যার সকল ক্ষমতা আছে সে প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও একজন মন্ত্রী। অর্থাৎ সকল মন্ত্রীই প্রধানমন্ত্রী নয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মানেই যেকোনো মন্ত্রী। সেইরকম ঈশ্বর মানেই ভগবান, কিন্তু সকল ভগবান ঈশ্বর নয়।

উপরের এই আলোচনায় আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণ বড় এবং রাম ছোট; যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ, বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার এবং রাম আংশিক অবতার। কিন্তু গীতার ১০/৪১ শ্লোকে বলা আছে,

"রামঃ শস্ত্রভৃতামহম্"

অর্থাৎ, শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, শস্ত্রধারীদের মধ্যে আমিই রাম। তার মানে হলো- রাম ও যা, শ্রীকৃষ্ণও তাই। অর্থাৎ দুজনেই সমান।

আবার আপাত দৃষ্টিতে একজন ছোট দেবী হলো লক্ষ্মী; কারণ লক্ষ্মী পূজার আয়োজন ও ফোকাস সরস্বতী পূজার চেয়েও কম। কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারবেন লক্ষ্মী আসলে কে এবং আগে জানা না থাকলে এটা জানার পর একটু অবাকই হতে পারেন।

পরমব্রহ্ম বা পরমেশ্বর বা ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের তিনটি রূপ হলো- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। খুব ভালো করে খেয়াল করার ব্যাপার হলো- এই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর কিন্তু আলাদা আলাদা কোনো সত্ত্বা হয়, তারা একই ঈশ্বরের তিনটি আলাদা আলাদা রূপ। ঈশ্বর যখন কিছু সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর নাম ব্রহ্মা; যখন পালন করেন, তখন তাঁর নাম বিষ্ণু এবং যখন ধ্বংস করেন, তখন তার নাম শিব বা মহেশ্বর। ব্যাপারটি এমন, প্রধানমন্ত্রীর হাতে যদি তিনটি মন্ত্রণালয় থাকে, প্রধান মন্ত্রী যখন যে মন্ত্রণালয়ের ফাইলে সই করেন, তখন তিনি সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কিন্তু বাস্তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী। ব্রহ্ম বা ঈশ্বর এবং ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের ব্যাপারটা ঠিক সেরকম।

তাহলে আমরা বুঝলাম যে, ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের পালনকারী রূপের নাম বিষ্ণু এবং যেহেতু প্রকৃতির নিয়ম হলো নারী ও পুরুষের গুণাবলীর সমষ্টিতেই পায় কোনো কিছুর পূর্ণতা, তাই বিষ্ণুর নারী রূপ বা নারী শক্তির নাম হলো লক্ষ্মী, যাকে আমরা স্থূল বিবেচনায় বিষ্ণুর স্ত্রী বলে থাকি। কিন্তু শুধু বিষ্ণুরই নয়, কোনো দেবতারই প্রকৃত অর্থে স্ত্রী বলে কিছু নাই, সবাই তাদের নারী রূপ বা নারী শক্তি। তাহলে এখানে স্পষ্ট যে, যেহেতু বিষ্ণুর নারী রূপ বা নারী শক্তির নাম লক্ষ্মী, সেহেতু লক্ষ্মী মানেই বিষ্ণু, আর বিষ্ণু মানেই ব্রহ্ম বা ঈশ্বর, তার মানে লক্ষ্মী ই ঈশ্বর। এখন বলেন, লক্ষ্মী কি ছোট দেবী ? একই ভাবে সরস্বতী, ব্রহ্মার নারী শক্তি এবং দুর্গা বা কালী, শিবের নারী শক্তি। তার মানে লক্ষ্মী, সরস্বতী, দুর্গা, কালী, কার্তিক গনেশসহ যে দেব-দেবীরই পূজা করেন না কেনো, তা আল্টিমেটলি পরম ব্রহ্ম বা ঈশ্বরেরই পূজা, তাই কোনো দেব-দেবী ই ছোট নয় বা কেউই বড় নয়, সবাই সমান এবং চুড়ান্ত বিচারে সবাই এক, সবাই পরমেশ্বর ব্রহ্ম।

এরপর মুমিনের প্রশ্ন হচ্ছে, সবাই কেনো এক দেবতার পূজা করে না ?

গীতার ১০/২৪ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেছেন,

"সরসামস্মি সাগরঃ"

এর অর্থ হলো জলাশয়ের মধ্যে আমি সাগর।

তো হিন্দু শা্স্ত্রমতে, শ্রীকৃষ্ণ যদি সাগর হয়, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় দেব-দেবীগুলো হলো নদী। প্রকৃতির নিয়মে যেকোনো নদী যেমন গিয়ে সাগরে পড়ে, তেমনি যে কোনো দেব-দেবীর পূজাও শ্রীকৃষ্ণই পায়। তাই বহু দেবতার পূজা করলেও কোনো সমস্যা নেই, বহু দেবতার পূজার মাধ্যমেও মূলত আমরা এক ঈশ্বরের পূজাই করি।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে, বহু দেবতার পূজা করার কি খুব প্রয়োজন ?

জলজ প্রাণীর যেমন আলাদা করে জল পান করার প্রয়োজন পড়ে না, তেমনি ব্রহ্মজ্ঞানীদের ক্ষেত্রেও বহুদেবতার পূজা করার কোনো প্রয়োজন নেই, কিন্তু সমাজের সাধারণ লোকেদের ক্ষেত্রে বহু দেবতার পূজা করার প্রয়োজন আছে; কারণ এটা সামাজিক বাস্তবতা যে, কোনো এক লোককে তুষ্ট করে কেউ সমাজে চলতে পারে না; পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে একজন মানুষকে বহুলোককে তুষ্ট করে চলতে হয়, বহুদেবতার পূজা আসলে মানুষকে সেই শিক্ষাটাই দেয়।

আজকের চলমান প্রসঙ্গের শেষ কটূক্তি হলো- হিন্দুদের মধ্যে দেবতা নিয়ে একতার অভাব কেনো ?

এই একতার অভাব হলো, হিন্দুধর্মের দেব তত্ত্বকে ঠিকমতো উপলব্ধি না করার ফল। এর জন্য দায়ী মূলত পুরানের গল্পগুলো; কারণ, যে পুরানে যে দেবতার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, সেই পুরানে সেই দেবতাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ করে তোলা হয়েছে এবং অন্য দেবতাগুলোকে ছোট করা হয়েছে। কিন্তু কোনো পুরান রচয়িতারই মনে হয় খেয়াল ছিলো না যে, দেবতা রূপী সকল পুতুলই আসলে পুতুল নাচ দেখাচ্ছে একজনেরই সুতোর টানে, তিনি পরমব্রহ্ম বা পরমেশ্বর।

দেবতা নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে একতা নেই, এই কথা বলে আসলে মুসলমানরা বোঝাতে চায় যে হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ আছে। সঠিকভাবে দেবতত্ত্বকে বুঝতে না পারার কারণে হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ আছে সত্য, কিন্তু সেই বিভেদ মুসলমানদের- শিয়া, সুন্নী, আহমেদিয়া, কাদিয়ানীদের মতো এতটা মারাত্মক নয় যে, যার কারণে হিন্দুরা একে অপরকে খুন করে ! জাতিভেদ বা বিভেদের কারণে হিন্দুরা হয়তো খুব বেশি হলে একে অপরের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করে না, বর্তমানে এটাও এখন অনেক শিথিল হয়ে এসেছে, কিন্তু এক জাতি হওয়ার পরেও শুধু মাত্র ভিন্ন মতের কারণে মুসলমানরা একে অপরকে মসজিদের ভেতর ঢুকে খুন করে ফেলে। কোনটা বেশি ডেনজারাস বা ঘৃণার; হিন্দুদের জাতিভেদ, না মুসলমানদের ভিন্নমত ?

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ

From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜



Pranab Kumar Kundu

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন