হানা প্রাইনহালতোরোভা
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
হানা প্রাইনহালতেরোভা (১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮-২৪ জুন, ২০১৮)
হানা প্রাইনহালতেরোভা৷ ড. দুশান জবাভিতেল-এর বাংলার ছাত্রী, শান্তিনিকেতনের এককালের বাংলার বিদ্যার্থিনী, প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাক্তন অধ্যাপিকা, অনেকগুলি বইয়ের জননী, বাংলা ভাষা শিক্ষার জন্য কয়েক খণ্ডে লেখা বইয়ের লেখক, আশাপূর্ণা দেবীর অনুবাদক, আরও কত কি৷ হানাদি গত রবিবার - পরশুদিন, ২৪ জুন ২০১৮ সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন৷
আমি চেক রিপাবলিক-এর প্রাগ শহরে চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতবিদ্যা(ইন্দেলগিস্কি)বিভাগে পড়াতে গিয়েছি বার ছয়েক৷ প্রতিবারই হানাদির সান্নিধ্যলাভ করেছি, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাঁর বাড়িতে ভাল মন্দ রান্নার টুকিটাকির সঙ্গেও আমরা পরিচিত৷ প্রচুর আড্ডা, প্রচুর জিজ্ঞাস্য, প্রচুর কৌতুক, বাংলা ও বাঙালির জন্য এই মানুষটির অফুরান ভালবাসা আমাদের সবসময় স্পর্শ করেছে৷ ২০১১-য় বাঙালী মেয়েদের ব্রতকথা লিখছিলেন চেক ভাষায়৷ আমার স্ত্রীর সঙ্গেই লেগে রইলেন সারাক্ষণ, ব্রতকথার নানান খুঁটিনাটি জানবার জন্য৷
শুধু ২০১৩-তেই তাঁর সঙ্গে আর দেখা হয়নি৷ অসুস্থ ছিলেন৷
শেষের দিকে অসুখেই ভুগছিলেন, বিবাহবিচ্ছিন্ন হয়ে একা থাকতেন আলাদা, পায়ে একটা অসুবিধা হচ্ছিল, চলতে কষ্ট হত, আমাদের একটি ছাত্রী ক্রিস্টিনা হিমার তাঁর সঙ্গে কাজ করছিলেন যৌথভাবে জানতাম৷ ক্রিস্টিনা বা আরও ছাত্র ছাত্রী তাঁকে কিছু সহায়তাও করত তখন শুনেছিলাম৷
আমরা বাঙালী হয়েও মাতৃভাষাকে প্রতি পদেই অশ্রদ্ধা করছি৷ কিন্তু তিনি বাংলা বলবার সময় শুধু বাংলাই বলতেন, কোনও ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করতেন না৷ স্রোতের মত বাংলা বলতেন৷
খুব কম মানুষ এরকম আসেন৷ নীরবে, নিভৃতে কাজ করে যান৷ আমাদের কাছে যখন থাকেন তখন আমরা তাঁর মূল্য বুঝি না৷ কিন্তু চলে যখন যান, তখন আমাদের একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে যান৷ তাঁর মৃত্যুতে ক্ষতি হল আমাদের সকলের, পশ্চিমবঙ্গের, বাংলাদেশের৷ এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন