শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

মহম্মদ


মহম্মদ           শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু



নবী মুহাম্মদ ও তার পুত্রবধু জয়নাবের প্রেম কাহিনী:  ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ট প্রেম কাহিনী।

লিখেছেন: কাঠমোল্লা —

নবী মুহাম্মদ ছিলেন সর্বশ্রেষ্ট আদর্শ মানুষ , বিজ্ঞানী , হেন তেন বহু কিছু। কিন্তু কেউ কখনও শোনে নি নবী মুহাম্মদ ছিলেন,  সর্বশ্রেষ্ট রোমান্টিক প্রেমিকও। তার প্রেমের কাছে রোমিও-জুলিয়েট , লাইলি -মজনু এসবও ফেল। কিন্তু ওয়াজ/ইসলামী জলসায় কোন আলেম মুহাম্মদকে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট প্রেমিক হিসাবে প্রচার করে না।কেন করে না ? লজ্জায় নাকি অন্য কারণে ? তাঁরা কি জানেন না, মুহাম্মদ তার পুত্রবধু জয়নাবের সাথে এমন কঠিন প্রেম করেছিলেন, যার জন্যে খোদ আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল,  আর আল্লাহক-ই  শেষ পর্যন্ত ঘটকালি করতে হয় মুহাম্মদ ও তার পুত্রবধু জয়নাবের বিয়ের জন্যে ?

মুহাম্মদ ও তার পুত্রবধু জয়নাবের প্রেমের সূত্রপাত যেভাবে হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ:

জায়েদ ছিল মুহাম্মদের পালিত পুত্র,  যাকে মুহাম্মদ ৫ বছর বয়স থেকেই নিজ পুত্র জ্ঞানে লালন পালন করেছিলেন এবং সমাজে ঘোষণা দিয়েছিলেন,  তাঁর নাম জায়েদ ইবনে মুহাম্মদ অর্থাৎ মুহাম্মদের পূত্র জায়েদ। যুবক বয়েসে মুহাম্মদ নিজেই জায়েদকে জয়নাবের সাথে বিয়ে দেন। একদিন মুহাম্মদ জায়েদের বাড়িতে যান , তখন জায়েদ বাড়িতে ছিলেন না। মুহাম্মদ দরজার ফাক দিয়ে ঘরে উকি মারেন , তখন জয়নাব যে কোন কারণে প্রায় নগ্ন অবস্থায় ছিলেন যা মুহাম্মদের ইমানদন্ডকে উত্থিত করে দেয়, সেই সাথে তার হৃদয়ে প্রবল ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। মুহাম্মদ চলে যাওয়ার সময় বলতে থাকেন- "কার মন কখন আল্লাহ পরিবর্তন করে দেয় সেটা বোঝা দায়"। বিষয়টা জয়নাব ঠিকই বুঝতে পারেন। জায়েদ ঘরে আসার সাথে সাথে জয়নাব বিষয়টা তাকে বলে , জায়েদ ঠিকই বুঝতে পারে যে মুহাম্মদ জয়নাবের প্রেমে পড়েছে। কাল বিলম্ব না করে , জায়েদ মুহাম্মদের কাছে ছুটে যায়, আর বলে , যদি মুহাম্মদ তাকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে সে তাকে তালাক দেবে। জায়েদ জানত , মুহাম্মদ তখন মদিনার সর্বেসর্বা , সেই মুহাম্মদ জয়নাবের প্রেমে পড়েছে , তখন জায়েদের জয়নাবকে তালাক দিয়ে, মুহাম্মদের সাথে বিয়ে দেয়া ছাড়া তার আর গত্যন্তর ছিল না।

(সুত্র: আল তাবারি, পৃষ্ঠা নং-৪ , ৮ম খন্ড- সাইট: http://kalamullah.com/tabari.html)

কিন্তু পালিত পুত্রবধুর স্ত্রীকে বিয়ে করাটা সেই তখনকার আরবেও একটা খুব অনৈতিক ও খারাপ কাজ বলে গণ্য করা হত। কারণ পালিত পুত্রকে,  আরবরা নিজের পুত্র হিসাবেই গণ্য করত। সুতরাং সেটাকে থামাতে, দয়াল আল্লাহ সাথে সাথেই আয়াত নাজিল করে পাঠান----

সুরা আহযাব- ৩৩: ০৪: ---------------****
আল্লাহ তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।

আহযাব-৩৩:০৫:
তোমরা তাঁদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।
যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে,  তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে,  ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
অর্থাৎ পালিত পুত্র কোন পুত্র নয়। তাই পালিত পুত্রের স্ত্রীকে শ্বশুর বিয়ে করতে পারবে। এর পর যথারীতি জায়েদ জয়নাবকে তালাক দিল , তালাক না দিয়ে তার উপায় ছিল না। কারণ,  দ্বীন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট মানুষ ও নবী মুহাম্মদ তার পূত্রবধুর প্রেমে পড়েছেন , তিনি,  বিরহ যন্ত্রনায় কাতর, তা দেখে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠছে, আল্লাহ পর্যন্ত ব্যাতিব্যস্ত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আয়াত নাজিল করছেন।কিন্তু বিয়ের পরেও লোকজনের কানাঘুষা বন্দ করা গেল না। লোকজন মুহাম্মদ সম্পর্কে আড়ালে আবডালে নানা কথা বলতে লাগল , বলতে লাগল - এই মুহাম্মদ তো দেখি লুইচ্চা ! যে নাকি তার পুত্রবধুকেও ছাড়ে না ! মুহাম্মদের এই মারাত্মক বিপদে আল্লাহর আরশ আবার কেঁপে উঠল, কাল বিলম্ব না করে সাথে সাথেই আল্লাহ তার গদি রক্ষার্থে আয়াত পাঠিয়ে দিয়ে,  মুহাম্মদকে ঠান্ডা করল ও বর্বর আরবদের মুখ ভোতা করে দিল ---
সুরা আহযাব- ৩৩: ৩৭: আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন; তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন,  আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন,  অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে।
মুহাম্মদ বলেছিলেন , জায়েদ , তুমি তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই রাখ। কিন্তু আল্লাহর ইচ্চা ভিন্ন। আল্লাহ তো জানে , মুহাম্মদ জয়নাবের প্রেমে পড়েছিল, জয়নাবের নগ্ন শরীর নিয়ে লীলা খেলা করার জন্যে মুহাম্মদ উন্মাদ হয়ে গেছিল। কিন্তু মুহাম্মদ সেটা কাউকে লজ্জা শরমের কারণে বলতে পারছিল না। কিভাবে বলবে- মুহাম্মদ কি কাউকে বলতে পারত - আমি আমার পুত্রবধু জয়নাবের প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। এর চাইতে লজ্জা শরমের কথা কি আর হতে পারে ? সুতরাং মুহাম্মদ যে লোক দেখান ভাবে জায়দকে তার স্ত্রী জয়নাবকে কাছে রাখতে বলেছিল , সেটা বুঝতে তো আর বিশাল বিজ্ঞানী হওয়া লাগে না , বিশেষ করে সবজান্তা আল্লাহর তো সেটা বুঝতে মোটেই সমস্যা নেই। আর সেজন্যেই মুহাম্মদ ও জয়নাবের প্রেম কাহিনীর সফল পরিণতির জন্যে আল্লাহ,  দিন নাই রাত নাই , একের পর এক আয়াত পাঠিয়ে গেছেন।
তার মানে দেখা যাচ্ছে নবী মুহাম্মদ ও তার পূত্রবধু জয়নাবের এই প্রেম কাহিনীর শুভ পরিণতির জন্যে খোদ আল্লাহকেও মহা পেরেশানিতে পড়তে হয়েছে,  এবং তাঁকেই এই ঘটকালী করতে হয়েছে। যে প্রেম কাহিনীর পরিণতি দিতে খোদ আল্লাহকেও ব্যাতিব্যস্ত হতে হয়ে , তাকে ঘটকালি করতে হয় , তার চাইতে শ্রেষ্ট প্রেম কাহিনী কি দুনিয়ার ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টা আছে ?

ফেসবুকে ইস্টিশন

প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, ইস্টিশন কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনভাবেই দায়ী নন। লেখকের এবং মন্তব্যকারীর লেখায় অথবা প্রোফাইলে পরিষ্কারভাবে লাইসেন্স প্রসঙ্গে কোন উল্লেখ না থাকলেও,  স্ব-স্ব লেখার এবং মন্তব্যের সর্বস্বত্ব সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারী কর্তৃক সংরক্ষিত থাকবে। লেখকের বা মন্তব্যকারীর অনুমতি বা সূত্রোল্লেখ বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার ব্যতিরেকে লেখার বা মন্তব্যের আংশিক বা পূর্ণ অংশ কোন ধরনের মিডিয়ায় পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন