সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮

মুসলমানদের খতনা ও কুরবানি


   মুসলমানদের খতনা ও কুরবানি


   ফেসবুক থেকে     শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু



খতনা ও কুরবানির প্রকৃত ইতিহাস:

নবী ইব্রাহিম ও তারস্ত্রী সারা মিশর ভ্রমণকালে, মিশরের রাজা তাদেরকে হাজেরা নামের এক দাসীউপহার দেয়। উপহার হিসেবে দাসী ! চিন্তা করুন। নবী মুহম্মদ যে দাসীদের ভোগকরতে বলেছে এবং সে নিজে তার উপহারপ্রাপ্ত দাসী মারিয়ার পেটে ইব্রাহিম নামেরএক পুত্রের জন্ম দিয়েছিলো- সেটা কিন্তু এমনি এমনি না; এটা এক সুদীর্ঘউত্তরাধিকার। যা হোক দাসী হাজেরার প্রতি ইব্রাহিমের অতিরিক্ত আগ্রহ দেখে, সারা, হাজেরার সাথে ইব্রাহিমের বিয়েই দিয়ে দেয়। কিন্তু স্বামীকে ভাগ করারকিছুদিনের মধ্যেই সারার মধ্যে হাজেরার প্রতি ঈর্ষা জেগে উঠে, হাজেরারসন্তান হওয়ার পর এই ঈর্ষা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠে এবং সারা, ইব্রাহিমকে বাধ্যকরে, হাজেরা ও তার পুত্র ইসমাইলকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে। শেষ পর্যন্তইব্রাহিম, ইসমাইল ও হাজেরাকে অল্প কিছু খাদ্য-পানীয় দিয়ে মরুভূমির মধ্যেরেখে আসে এবং সারাকে কথা দেয় সে কোনোদিন ইসমাইল ও হাজেরাকে দেখতে পর্যন্তযাবে না।
কাহিনী দেখে বোঝা যাচ্ছে, ইব্রাহিমের উপর সারার যথেষ্ট প্রভাবছিলো এবং ইব্রাহিম ছিলো সারার বশীভূত। না হলে কী কারণে সদ্যজাতশিশুপুত্রসহ যুবতী স্ত্রীকে কেউ মরুভূমির মধ্যে রেখে আসবে ? কিন্তু যুবতীস্ত্রী ও শিশু পুত্রের চিন্তায় ইব্রাহিমের আর ঘুম হয় না। গোপনে সে তাদেরদেখতে যায়, এই খবর সারার কাছে পৌঁছলে সারা ইব্রাহিমের উপর চাপ সৃষ্টি করে।তখন ইব্রাহিম বলে, 'আমি যদি হাজেরা ও ইসমাইলকে দেখতে গিয়ে থাকি এবং সেটাযদি তুমি প্রমাণ করতে পারো - বর্তমানে আমরা যেমন এই রকম অবস্থায় বলি, কানকেটে ফেলবো; ঠিক তেমনি ইব্রাহিম বলেছিলো -আমার লিঙ্গ কেটে ফেলবো'। সারাওদমবার পাত্রী নয়, অনুচরের মাধ্যমে সে ঠিকই প্রমাণ করে যে, ইব্রাহিম, হাজেরাও ইসমাইলকে দেখতে মরুভূমিতে গিয়েছিলো। এরকম চাক্ষুষ প্রমাণে অপমানিত হয়েইব্রাহিম নিজের হাতে থাকা কুড়াল দিয়ে নিজের লিঙ্গ কেটে ফেলতে উদ্যত হয়, তখনসারা কিছুটা কনসিডার করে বলে, ঠিক আছে, পুরোটা কাটতে হবে না, কিন্তু তুমিযে আমার সাথে মিথ্যা বলে প্রতারণা করেছো, তার সাক্ষ্য স্বরূপ তোমাকে ওটারকিছু অংশ কাটতে হবে। তার পর ইব্রাহিম নিজের লিঙ্গের অগ্রচর্ম কেটে ফেলে ওপরে যখন ইসমাইলকে বাড়িতে আনতে সমর্থ হয় তখন ইসমাইলেরও লিঙ্গঅগ্রজর্ম কেটেপরবর্তী বংশধরদের সবার এরূপ করার নির্দেশ দেয়। এক লেজকাটা শেয়ালের অন্যসবার লেজাকাটার চেষ্টা আর কি।এই কারণেই ইব্রাহিম পরবর্তী মুসা ও ঈসারঅনুসারীরা খতনা করে যাচ্ছে। আসলে এটা এক স্ত্রীর সাথে তার স্বামীরবিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন।
যা হোক, লিঙ্গ কাটতে বাধ্য হওয়ার পর স্ত্রী ওপুত্রের চিন্তায় ইব্রাহিম আরো ছঠফট করতে থাকে এবং ঘুমের মাঝে উল্টা পাল্টাস্বপ্ন দেখতে থাকে, যেটা খুবই স্বাভাবিক। আগে থেকেই নবী হিসেবে ইব্রাহিমেরকিছু পরিচিতি ছিলো এবং সে যে আল্লার নাম ভাঙিয়ে কিছু বললে, লোকে সেটাবিশ্বাস করবে, তাও সে বুঝতে পেরেছিলো। তাই এই স্বপ্নকে হাতিয়ার করেইইব্রাহিম, সারাকে বোকা বানিয়ে ইসমাইল ও হাজেরাকে বাড়িতে নিয়ে আসার ফন্দিআঁটে। ঘুম থেকে জেগে হঠাৎ হঠাৎ বলতে থাকে, আল্লা আমাকে আমার প্রিয় জিনিসকুরবানি করতে বলেছে। এরপর একের পর এক উট, দুম্বাসহ নানা কিছু কুরবানি করাহলো, কিন্তু ইব্রাহিমের স্বপ্ন দেখা আর থামে না। আল্লাও বলে না ইব্রাহিমেরপ্রিয় জিনিসের নাম আর ইব্রাহিমও তা বুঝতে পারে না। আসলে এসবের মাধ্যমেফাইনাল কথা প্রকাশ করার আগে ইব্রাহিম একটু পরিবেশ তৈরি করছিলো আর কি। শেষেইব্রাহিম সারাকে বলে আমার পুত্র ইসমাইল ই আমার সবচেয়ে প্রিয়, তাকেই কুরবানিকরবো। সারা চিন্তা করে দেখলো, এতে তো ভালোই হবে; ইসমাইল মরলে তার তো কোনোক্ষতি হবে না, উল্টো তার সতীন হাজেরা কষ্ট পাবে। তাই সারা তাতে সম্মতি দেয়এবং ইব্রাহিম গিয়ে ইসমাইল ও হাজেরাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনে। বাড়িতে আনার আগেইহাজেরা ও ইসমাইলকে ইব্রাহিম সব প্ল্যান খুলে বলে। এর ফলে কুরবানির প্রসঙ্গউঠতেই ইসমাইল এক বাক্যে রাজি হয়ে যায় এবং তাকে তাড়াতাড়ি কুরবানি করতে বলে, আর হাজেরাও চুপ থাকে।
এখানে একটি বিষয় চিন্তা করুন; সদ্যজাত শিশুসন্তানসহ যে হাজেরাকে তার স্বামী মরুভুমির মধ্যে নির্বাসন দিয়েছিলো, সেইস্বামী এখন তার সন্তানকে খুন করতে নিয়ে যাচ্ছে, আর হাজেরা কিছু বলছে না, আগে থেকে সব পরিকল্পনার কথা জানা না থাকলে কোন মেয়ে বা মায়ের পক্ষে এই সময়চুপ থাকা সম্ভব ? এরপর ইব্রাহিম, ইসমাইলকে কুরবানি করতে নিয়ে যায়, চোখবেঁধে তার গলায় তলোয়ার চালায়, কিন্তু গলা কাটে না, রাগে সেই তলোয়ার ছুঁড়েফেলে দিলে পাথর টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এমন গাঁজাখুরি ঘটনা বাস্তবে কেউকোনোদিন শুনেছেন ? এমন কাহিনী শুধু মিথ্যার ভাণ্ডার ইসলামেই সম্ভব। শেষপর্যন্ত আল্লা ইব্রাহিমের কুরবানি কবুল করে এবং ইসমাইলের জায়গায় ইব্রাহিমেরই একটা দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। ঐ সময় ঐ দুম্বা কোথা থেকে আসবে ? আসলে আগেথেকেই এক চাকরের মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা করে রেখে পরিকল্পনা মতো বাড়ি থেকেদূরে একটা মাঠের মধ্যে এই নাটক মঞ্চস্থ করার ব্যবস্থা করেছিলো ইব্রাহিম।এমনও তথ্য পাওয়া যায়, কিছু লোক ইব্রাহিমের চালাকির ঘটনাটাটা বুঝে যায়, তাদের মুখ বন্ধ করার জন্যই ঐ দুম্বার তিন ভাগের দুই ভাগ মাংস তাদের ঘুষদেওয়া হয় এবং এক ভাগ ইব্রাহিম নিজের ভাগে রাখে।এজন্যই কুরবানির মাংস এখনওতিনভাগে ভাগ হয় এবং দুই ভাগ বিলিয়ে দেওয়া হয়।
শেষে মুসার একটা গল্প।মুসা আল্লার প্রিয় নবী নয়, তারপরও ¬মুসার সাথে কথা বলার জন্য আল্লাপৃথিবীতে কোনো এক পাহাড়ের উপর নাকি নেমে আসতো। আর মুহম্মদ আল্লার প্রিয় নবীহওয়া সত্ত্বেও মুহম্মদকে আল্লার দেখা পাওয়ার জন্য বোরাক নামক এক কাল্পনিকপ্রাণীতে চড়ে সাত আসমান ডিঙিয়ে আল্লার কাছে যেতে হয়েছিলো। যা হোক,এই মুসারকাছে আল্লা নাকি একবার দুটো চোখ চেয়েছিলো। মুসা কারো কাছ থেকে সেই চোখসংগ্রহ করতে না পেরে আল্লার কাছে ফিরে গিয়ে বলেছিলো, কোথাও তো চোখ পেলামনা। উত্তরে আল্লা বলেছিলো, তোমার নিজের কাছেই তো দুটো চোখ আছে, তুমি অন্যকোথাও খুঁজতে গেলে কেনো ?
এই গল্প এজন্যই বললাম যে, প্রিয় জিনিস বলতেইব্রাহিমের কাছে তার পুত্রের প্রাণের কথাই কেনো মনে হলো ? মানুষের কাছেকোনটা বেশি প্রিয় ? নিজের প্রাণ না পুত্রের প্রাণ ?
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ
From: Krishna kumar das


💜 জয় হোক সনাতনের 💜

অতুলপ্রসাদ সেন


     অতুলপ্রসাদ সেন


      ফেসবুক থেকে       শেয়ার করেছেন      প্রণব কুমার কুণ্ডু



অতুলপ্রসাদ সেন-- দুঃখের ফল্গুধারায় বহমান এক জীবন
---------------------------------------------------------------------------------
" মনোদুখ চাপি মনে হেসে নে সবার সনে,
যখন ব্যথার ব্যথীর পাবি দেখা
জানাস প্রাণের বেদন।"

হাসিখুশি, আড্ডাবাজ,মজলিশী মানুষদের অন্তরেই থাকে বোধহয় এক রাশ কান্না। এঁদের হাসি খুশি চেহারা দেখে বোঝার উপায় থাকে না মনের গভীরে এদের কতখানি ব্যথা। লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যরিষ্টার, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী অতুলপ্রসাদকে যে জীবনের ভার বইতে হয়েছিল তা যেমন অকল্পনীয় -তেমনি অভাবিত। নাটকের মতই হৃদয়গ্রাহী, মর্মস্পর্শী।
দুটি ঘটনা অতুলপ্রসাদের জীবনকে তোলপাড় করে দিয়েছিল। একটি হল তাঁর মায়ের বিয়ে। আরেকটি তাঁর নিজের বিয়ে।
অতুলপ্রসাদ তখন কিশোর। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে তাঁর মা হেমন্তশশী সহ বোনেদের নিয়ে মামাবাড়ীর ছত্রছায়ায় বাস করছেন। হঠাৎ একদিন দেখলেন মামাবড়ী যেন থমথম করছে। মাসীরা কাঁদছে, বোনেরা কাঁদছে, কাঁদছেন দিদিমা। অতুলপ্রসাদ কথাবার্তায় বুঝলেন, তাঁর মা হেমন্তশশী দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন এবং যাঁকে বিয়ে করেছেন তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জ্যাঠামশাই দুর্গামোহন দাশ।
সন্তান সবকিছু সইতে পারে কিন্তু মায়ের বিয়ে? অসম্ভব। এভাবে মায়ের পর হয়ে যাওয়া সইবে কেমন করে? তীব্র অভিমানে অব্যক্ত যন্ত্রনায় বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল, চোখের জলে ঝাপসা হয়ে গেল বুঝি তার ভবিষ্যৎ! বাবাকে হারিয়ে এতদিন মা ছিল তাঁর সবকিছু, সেই মা কিনা..।
অশান্ত মন নিয়ে অভিমানী ছেলে পদ্মা নদীর দেশ ছাড়লেন। বোন হিরণ -কিরণ-প্রভাকে কলকাতায় দুর্গামোহন দাসের বাড়ীতে মায়ের কাছে পৌঁছে দিলেন। মায়ের সাথে দেখা করলেন না। চলে গেলেন পানি মামার বাড়ী। সেখান থেকে বড় মামার কাছেে। ভর্তিহলেন প্রসিডেন্সী কলেজে।
মামারাও বোনের এই ঘটনায় বিব্রত। অতুলের প্রতি সমবেদনায়, তাঁর ক্ষতবিক্ষত মনকে শান্ত করতে দুর দেশে পাঠিয়ে দিলেন।অতুলপ্রসাদ ব্যারিষ্টার হওয়ার লক্ষ্যে লন্ডনে এলেন। ভর্তি হলেন মিডল টেম্পলে। প্রবাসী বাঙ্গালীদের মত দীর্ঘদিন ঘরছাড়া অতুলপ্রসাদও অনুভব করেন সুজলা সুফলা বাংলা মায়ের টান। মা হেমন্তশীর জন্য মন কেঁদে উঠল। বিয়ের পর আত্মীয় স্বজনেরাও তাঁর মাকে পরিত্যাগ করেছিল । মনের এই রকম অবস্থায় বড়মামা সপরিবারে কোন কাজে বিলতে আসেন।
বন্ধ জানালা খুলে এক ঝলক খুশির বাতাস বয়ে আনল অতুলপ্রসাদের জন্য। বিদেশ বিভুঁইয়ে, কাছে পেলেন বড়মামাকে, মামীকে। আর পেলেন মামাতো বোন হেমকুসুমকে। সুন্দরী, ব্যক্তিত্বপূর্ণা, সপ্রতিভা সাহসিকতার ছটায় উজ্জ্বল হেমকুসুমকে নিয়ে আনন্দের জোয়ারে ভেসে গেলেন অতুলপ্রসাদ। হেমকুসুমের অন্তরঙ্গ ঘনিষ্ঠতা অতুলপ্রসাদের হৃদয়ে এক অজানা শিহরণ, অচেনা আকর্ষণ। পরস্পর মুগ্ধ দুটি হৃদয়।
মুগ্ধতার রেশ জারি ছিল কলকাতাতেও। অতুলপ্রসাদ ব্যারিষ্টারি পাশ করে কলকাতা ফিরে সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা বিয়ে করবেন। অশান্তির আগুন জ্বলে উঠল দুটি পরিবারে। ঝড় উঠল আত্মীয় সমাজেও। কিন্তু অতুলকে দমানো গেল না। ওদিকে প্রচন্ড জেদী হেমকুসুম তাঁর মাকে জানিয়ে দেয় অতুলকে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে।
সামাজিক বিধি ব্যবস্থায় ভাইবোনের বিয়ে কোনমতে গ্রহণযোগ্য নয়, আইনসিদ্ধও নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিং এর পরামর্শে বিলেত গিয়ে কোন এক গির্জায় দুজনে বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হলেন। আত্মীয়-স্বজন সবাই ওদের পরিত্যাগ করায় ওরা বিলেতেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। অতুলপ্রসাদ ওখানেই প্র্যাকটিশ শুরু করলেন।
হেমকুসুমের কোলজুড়ে এল ফুটফুটে যমজ সন্তান। দিলীপ কুমার ও নিলীপ কুমার । কিন্তু অতুল প্রসাদের মনে সুখ নেই। পসার জমছে না। এদিকে টাকা পয়সাও প্রায় শেষ। হেমকুসুম তাঁর গয়নাগাটি একটি একটি করে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। অতুলপ্রসাদ আত্মীয় বন্ধুদের চিঠি লিখেছিলেন। কোন উত্তর আসেনি। মা বোনেদেরও সাড়া মেলেনি।
একে তীব্র অর্থাভাব তার উপর আত্মীয় -স্বজন তথা স্বদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অতুল প্রসাদ মানসিক যন্ত্রনায় অস্থির। হেম সাহস দেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না। শেষ রক্ষা হল না। তীব্র ঠান্ডায় শীতবস্ত্রের অভাব ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পথ্য যোগাড় করতে না পারায় নিলীপ কুমারের মৃত্যু হল। হতাশায় ভেঙ্গে পড়লেন দুজনেই।
নিরুপায়, নিঃসঙ্গ একান্তভাবে অবসন্ন উভয়েই। কোথাও এতটুকু হাত ধরার কেউ নেই। নেই আশ্বাস। শেষ পর্যন্ত একজন ভারতীয় বন্ধু মমতাজ হোসেনের পরামর্শে দেশে ফিরে এলেন। লক্ষ্ণৌতে এসে প্র্যাকটিশ শুরু করলেন। ধীরে ধীরে পসার জমে উঠল। হেমকুসুম স্নিগ্ধ আন্তরিকতা দিয়ে সযতনে গড়ে তুললেন তাঁর সংসার। কিন্তু অশান্তি শুরু হল তখনই যখন তাঁর শ্বাশুড়ি বিধবা হেমন্তশশী বাড়িতে থাকতে এলেন।
মা হেমন্তশশী আজ একা। অতুলপ্রসাদ আজ অর্থ, যশ আর জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ চুড়ায়। তাঁর মায়ের জন্য মন কাঁদে। কিন্তু হেমকুসুমের মন তাতে বিদ্রোহ করে। হেমকুসুম ভুলতে পারেন না তাদের যাঁরা তাঁদের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি-তাদের সাথে কোন সম্পর্ক নয়, নয় কোন আত্মীয়তা। তাছাড়া বড় বড় ছেলে মেয়ে থাকা সত্বেও শ্বাশুড়ির দ্বিতীয়বার বিয়ে হেমেকুসুমের কাছে বিকৃত মানসিকতার পরিচয়। এমন শ্বাশুড়িকে সে মেনে নিতে পারে না।
শুরু হল শ্বাশুড়ি-বৌমার সেই অনিবার্য সংঘাত। আমাদের দেশে চিরাচরিত প্রথামত প্রণয় ঘটিত অঘটনে মেয়েদেরই দায়ী করা হয়। হেমন্তশশীও এই বিয়ের ব্যাপারে হেমকুসুমকে দায়ী করে বার বার অসন্তোষে ঝলসে উঠেছেন। অপরদিকে হেমকুসুম বিদেশে নিঃস্ব অবস্থায় স্বামী সন্তানদের নিয়ে সেই দুঃখের দিনগুলি ভুলতে পরেন নি, ভুলতে পারেন নি অভাবের মধ্যে অসহায় অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু ও তার নিদারুণ শোক। ভুলতে পারেননি শ্বাশুড়ী -ননদদের উদাসীন, ক্ষমাহীন ব্যবহার।
যে সংসারে শ্বাশুড়ী বৌমা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ-সেই সংসারে অশান্তির আবহে পড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বোধহয় শিশুরা। একদিকে মা -বাবর মধ্যে অশান্তি অন্যদিকে ঠাকুমার সাথে মন কষাকষি -এর মধ্যে পড়ে দিলীপকুমারও পড়াশোনায় মন বসাতে পারেনি।বার বার নিষেধ করা সত্বেও মাকে নিয়ে এসেছেন স্বামী। তাই হেমকুসুমের যত রাগ গিয়ে পড়ত স্বামীর উপর। একদিকে মা এবং অন্যদিকে স্ত্রী -এই দুয়ের মাঝখানে পড়ে অতুল প্রসাদ হলেন ক্ষুব্ধ, নিরাশ। তাঁর হৃদয় হল ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত।
হেমন্তশশী বুঝলেন তাঁকে নিয়েই সংসারে অশান্তি। ছেলের নির্বাক,শুকনো মুখ তিনি সহ্য করতে পারলেন না। চলে গেলেন বাড়ী ছেড়ে। হেমের কারণেই মাকে চলে যেতে হল। এই ভাবনায় ধনী, মানী, যশস্বী অতুলপ্রসাদ দুঃখের আগুনে পুড়তে থাকলেন। অশান্তি তার ঘরের বাতাসকে দুষিত, উত্ত্প্ত করে তুলেছে। মা চলে যাবার পরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ক্রমেই নিরানন্দ,তিক্ত, অসহ হয়ে উঠল। দুজনের সম্পর্কের মাঝে একটা দেয়াল খাড়া হয়ে উঠল।
অশান্তি যখন চরমে তখন একদিন হেমকুসুম রাগের বশে অতুলপ্রসাদের ব্যরিষ্টারীর সমস্ত পোষাক ঘরের বাইরে কেরোসিন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। হেমকুসুমের হৃদয়হীন আচরণ ও নিষ্ঠুর ব্যবহারে ক্ষুব্ধ অতুল প্রসাদ পরের দিন হেমকে না জানিয়ে লক্ষ্ণৌ ছেড়ে কলকাতায় চলে গেলেন। যাবার আগে পারিবারিক বন্ধু মহেশ চট্টোপাধ্যায়ের উপর স্ত্রী পুত্রের ভার দিয়ে গেলেন। কলকাতা হাই কোর্টে যোগ দিয়ে প্র্যাকটিশ শুরু করলেন।
কলকাতা থেকে অতুলপ্রসাদ গেলেন শান্তিনিকেতনে শান্তির খোজে গুরুদেবের কাছে।ফিরে এসে গেলেন দার্জিলিং। মনোরম পরিবেশে মানসিক সুস্থতার আশায়। তারপর গেলেন ঢাকায় প্রিয় জন্মভূমিতে। ফিরে এসে গেলেন সারদা মায়ের কাছে। সমস্ত বেদনা, যন্ত্রণা কান্না হয়ে ঝরে পড়ল মায়ের পায়ে। মনের দুঃখ ভুলতে আবার পাড়ি দিলেন সুন্দর বনের উদার প্রকৃতির মধ্যে।
ওদিকে লক্ষ্ণৌর বাড়ীতে একা হেমকুসুম। কিছুতেই ভুলতে পারছেন না প্রিয় অতুলের নিষ্ঠুর ব্যবহার। মনে জাগে নানা প্রশ্ন। সর্বস্ব পণ করে যাঁরা পরস্পরকে ভালোবেসে ছিল বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাসে কেন সেই মধুর সম্পর্ক পুড়ে ছাই হল? কেন অতুল বুঝতে চাইছে না তাঁর হেমকে? অসহনীয়-অভাবনীয়-অবর্ণনীয়-অসহায়তা কেন হেমকুসুমের হৃদয় জুড়ে? সবটা কি তারই দোষে?
অতুলপ্রসাদের গতিবিধির খবর রাখতেন হেমকুসুম। দার্জিলিং এ আছেন খবর পেয়ে অনুতাপে জর্জরিত হেমকুসুম পুত্র দিলীকুমারকে সঙ্গে নিয়ে দার্জিলিঙে গেলেন। কিন্তু পাহাড়প্রমান অভিমান দুজনকে মিলতে দিল না। পাশাপাশি দুটি হোটেলে থাকলেন। ফিরে এলেন কলকাতায়। বাড়ী ভাড়া করে থাকতে লাগলেন। সঙ্গে পুত্রের শিক্ষক হিসেবে মহেশ চট্টোপাধ্যায়।
সারাদিনের কাজের শেষে অতুলপ্রসাদ ক্লান্ত। বিধ্বস্ত। একটা বিষাদ ছেয়ে থাকত মন জুড়ে। কেন এমন বদলে গেল হেম? আগে নিষ্ঠুরতা দেখালেও আবার দরদী মন নিয়ে প্রয়োজনে অতুলপ্রসাদের পাশেে এসে দাঁড়াত। আর এখন? একই জায়গায থেকেও দুজনের মুখ দেখাদেখি নেই। ছেলেকেও বাবার কাছে আসতে দেয় না। যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় দৃষ্টিকটু।
এখান থেকে চলে যাওয়াই স্থির করলেন। হেমের থেকে দুরে। আবার এলেন লক্ষ্ণৌ। হেমকুসুমের দুর্ব্যবহার, অশোভন আচরণ এখানে আর রইল না। অতুলপ্রসাদ নিজকে ছড়িয়েে দিলেন গানে,মজলিশে সাহিত্যে, সেবার কাজে। তিনি হলেন সারা লক্ষ্ণৌবাসীর প্রিয় 'সেন সাহেব'।
অতুলপ্রসাদের নীরব উপেক্ষায় হেমকুসুম শরীরে মনে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দিশেহারা অসহায় পুত্র দিলীপকুমার বাবাকে সেই বার্তা দেওয়ার পর বাবারই নির্দেশেই মাকে নিয়ে লক্ষ্ণৌতে এলেন। অন্তবিহীন পথ পেরিয়ে আবার মিলন ঘটল দুটি প্রাণের। দুজনেই উৎফুল্ল, অনুরাগ-রঞ্জিত। আবার হারানো সবকিছু ফিরে পেলেন হেমকুসুম।
কিন্তু সে আনন্দ স্থায়ী হল না। কিছুদিনের মধ্যেই হাজির হলেন মা হেন্তশশী,বোন হিরণ -কিরণ ও প্রভা। অতুলভবনে নেমে এল অশান্তির কালো ছায়া। একদিকে শ্বাশুড়ী ননদ অন্যদিকে হেমকুসুম। মাঝে অসহায় বিব্রত অতুলপ্রসাদ। তেতে উঠলেন হেমকুসুম। পুত্র দিলীপকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে গেলেন। চলে গেলেন দেরাদুন।
প্রচন্ড জেদ, অভিমান এবং রাগ মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে -তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রইলেন হেমকুসুম। অথচ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার অভাব ছিল না। শুধুমাত্র শ্বাশুড়ী -ননদদের মানতে না পেরে, স্বাধিকার প্রতিষ্টার একক সংগ্রাম করে ক্ষোভের আগুনে দগ্ধ হয়ে কক্ষচ্যুত তারকার মত নিজেকে শেষ করতে লাগলেন। অতুলপ্রসাদেরর নূতন বাড়ী 'হেমন্ত নিবাস' এর উদ্বোধন হল।হেমকুসুম আসেন নি। শ্বাশুড়ীর মৃত্যুর শ্রাদ্ধের সময়ও আসেন নি।
চলৎশক্তি হীন, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত অবসন্ন হেমকুসুম অবশ্য দেরাদুন থেকে শেষবারের মত অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন অতুলপ্রসাদের কাছে থাকব বলে। মাস তিনেক ছিলেন। তারপর আবার সেই আত্মীযদের সঙ্গে পুরানো অসন্তোষ ধুমায়িত হয়ে ওঠে। আবার বাড়ী ছেড়ে লক্ষ্ণৌতেই ভাড়ার বাড়ীতে গিয়ে ওঠেন। অতুলপ্রসাদের জীবিত অবস্থায় আর তিনি আসেন নি। একজন ধনী, মানী, যশস্বী মানুষের জীবনের এমন পরিনতি অকল্পনীয়!
তবে সংসার সমুদ্র -মন্থনে শুধু হলাহলই নয়, উঠেছিল অবাক পারিজাত বৃক্ষটি যার কুসুম- সুবাসে আমোদিত হয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। মাত্র ২০৮ টি গান তিনি রচনা করে তিনি গানের জগতে অমরতা লাভ করেছেন -যা এক বিস্ময়! কিন্তু তার চেয়ে বড় বিস্ময় যে কি কারণে অতুলপসাদী গান রবীন্দ্রসঙ্গীতের সর্বব্যাপী প্রভাবও ও জনপ্রিয়তার পাশে জনমনে এমন প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হল!
অনেক গানে তাঁর জীবনকে দেখা যায়। তাঁর বিখ্যাত গানগুলি হল, "ওগো নিঠুর দরদী"; "বঁধু নিদ নাহি আঁখি পাতে" ; "আজ আমার শূন্য ঘরে আসিলে সুন্দর"; "কে আবার বাজায় বাঁশী"; "বঁধু ধর, ধর মালা পর গলে ; "তুমি মধুর অঙ্গে"; "একা মোর গানের তরী "; "পাগলা মনটারে তুই বাঁধ"; "যাব না যাব না ঘরে" ;এত হাসি আছে জগতে তোমার, বঞ্চিলে শুধু মোরে"- ইত্যাদি গান মানুষকে উদ্বেল করে, আবেগাপ্লুত করে।
এ ছাড়াও "ডাকে কোয়েলা বারে বারে"; "আর কতকাল থাকব বসে " ; "মেঘেরা দল বঁধে যায় কোন দেশে"-তাঁর বিখ্যাত গান। স্বদেশ সঙ্গীতগুলির মধ্যে হল, "ওঠ গো ভারতলক্ষ্মী"; "হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর"; "শতবীণা বেনু রবে"; "খাঁচার গান গাইব না আর"; " মোদের গরব মোদের আশা" -প্রত্যেকটি কল্পনায়, প্রেরণায়, ভাবে, গুনে অনবদ্য। তাঁর একটি মাত্র গ্রন্থ "গীতিগুঞ্জ" গানের জগতে তাঁকে অমরত্ব দিয়েছে।
অতুলপ্রসাদের বিশ্রামের অবকাশ নেই। লক্ষ্ণৌ শহরের পাঁচ জনের একজন তিনি। সেন সাহেবকে ছাড়া কোন কাজই যে সম্ভব নয়। অতিথি অভ্যাগতের বিরাম নেই। দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা অতুলপ্রসাদের অতিথি হয়ে তাঁকে সনম্মানিত করেছেন । একে একে এসেছেন মহাত্মা গান্ধী, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ সরোজিনী নাইডু চিত্তরঞ্জন দাস। এসেছেন রবীন্দ্রনাথ এবং আরও অনেকে।
সব ছেলেই স্বপ্ন দেখে যে স্ত্রী একদিন তার পরিবারকে মেনে নেবে তারপর দুজনে মিলে এক স্বপ্নের নীড় রচনা করবে। অতুলপ্রসাদও সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন।কিন্তু তা সফল হয়নি।
অতুলপ্রসাদ সবাইকে আপন করেছেন কিন্তু আপন হলনা সবার চেয়ে যিনি আপন। সবই আছে তবুও সব শূন্য। ধন-সম্পদ-ঘর ঐশ্বর্য, কিন্তু নেই মাধূর্য, নেই পার্বতী। অতুলপ্রসাদ ভেবেছিলেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে একদিন না একদিন হেম তার কাছে ফিরে আসবেই। কিন্তু তা হয়নি।
অতুল প্রসাদ অসুস্থ। খবর ছড়িয়ে গেল সর্বত্র। তাদের প্রিয় 'সেন সাহেব' কে দেখার জন্য লক্ষ্ণৌ শহর ভেঙ্গে পড়ল। ডাক্তার এল, নার্স এল। সব সম্প্রদায়ের জনস্রোত ছুটল হেমন্তনিবাসের দিকে -সকলেই একটিবার দেখতে চান। তাঁর সহকর্মীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা, লক্ষ্ণৌয়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত- অনুপস্থিত কেবল হেমকুসুম।
সকলকে উৎকন্ঠায় রেখে রাত একটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে এই মহৎপ্রাণ মরজগৎ ছেড়ে সুর লোকে চলে গেলেন।খবর পেয়ে রাত দুটোয় এলেন হেমকুসুম। তাঁকে বলা হল 'আপনি অসুস্থ মানুষ গাড়ী থেকে নেমে আর কি করবেন, সবইতো শেষ। ফিরে যান।' মর্মর মূর্তির মত নিষ্পন্দ, নিথর হেমকুসুম রাতের অন্ধকারে ফিরে চললেন। কোথাও আলো নেই, হাওয়া নেই, প্রাণ নেই। কোথা থেকে যেন ভেসে এল অতুলপ্রসাদের গান--

"কেন এলে মোর ঘরে আগে নাহি বলিয়া।
এসেছ কি হেথা তুমি পথ তব ভুলিয়া?....
* * * * * * * * * * * * * * * *

বই:--অতুলন অতুলপ্রসাদ - শ্রী সুনীলময় ঘোষ।
অতুলপ্রসাদ-- মানসী মুখোপাধ্যায়।
অতুলপ্রসাদ সেন-- সুরেশ চক্রবর্তী।
কাকলি --অতুলপ্রসাদ সেন।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮

বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮

আচার্য দেবপ্রসাদ ঘোষ ড. শহীদুল্লা ও শ্রী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়...


   আচার্য দেবপ্রসাদ ঘোষ  ড. শহীদুল্লা  ও শ্রী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়...


    শেয়ার করেছেন       প্রণব কুমার কুণ্ডু



ভাষাবিদ, গণিতবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং আইনজীবী

আচার্য দেবপ্রসাদ ঘোষ (জন্মঃ- ১৫ মার্চ, ১৮৯৪ - মৃত্যুঃ- ১৪ জুলাই, ১৯৮৫)

বানান কমিটিতে কয়েক ঘণ্টা - দেবপ্রসাদ ঘোষ ; বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান-কমিটি তিনজন ভদ্রলোককে কমিটিতে যোগদান করিতে আমন্ত্রণ করিয়াছেন - ডাঃ শহীদুল্লা, অধ্যাপক শ্রীযুক্ত মন্মথনাথ বসু এবং আমি। অধিবেশনের দিন উপস্থিত হইয়া দেখি শ্রীযুক্ত রাজশেখর বসু মহশয় আসিয়াছেন; ইনি রসায়নের এম.এ., খ্যাতনামা রস-সাহিত্যিক "পরশুরাম" এবং বর্তমানে পরিভাষা-কমিটি তথা বানান-কমিটির সভাপতি। আর উপস্থিতের মধ্যে ছিলেন শ্রীযুক্ত চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য্য, ইনি পদার্থ-বিজ্ঞানের এম.এ. ও গোলদীঘী বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান-কমিটির সেক্রেটারী, এবং এই উভয় বিশ্বের ভার যুগপত্ তাঁর স্কন্ধে আপতিত হওয়ায় স্বভাবতই চাল কিছু গুরুগম্ভীর; আর ছিলেন ডাঃ শ্রীযুক্ত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ডাঃ শহীদুল্লা, উভয়েই পেশাদার ভাষাতাত্বিক, একজন কলকাতায় এবং অপরজন ঢাকায় অধ্যাপনা করেন। এই চারিজনকেই বিশেষ কথাবার্তায় ব্যাপৃত দেখিলাম, যেন সভায় মুরুব্বি মতন। আরও অনেকে ছিলেন; সকলের নাম মনে নাই. কিন্তু তাঁহাদিগকে মুখব্যাদান-পূর্বক বিশেষ উচ্চবাচ্য করিতে দেখিলাম না; বোধ করি সভাবর্ধন করাই উঁহারা যথেষ্ট বিবেচনা করিয়া থাকিবেন।

আমি যখন পৌঁছিয়া আসন গ্রহণ করিলাম, তখন শুনি আলোচনা চলিতেছে "বৌ" সম্বন্ধে; অর্থাৎ ডাঃ শাহীদুল্লা প্রস্তাব করিয়াছেন যে, বাঙ্গাল শব্দে ঐ-কার ঔ-কার আর থাকিবে না, তত্স্থলে অই, অউ, এই প্রকার লিখিতে হইবে; যেমন, "বৌ"-এর স্থলে "বউ", "দৈ"-এর স্থলে "দই", ইত্যাদি। আমি চুপ করিয়া আলোচনা শুনিতে লাগিলাম; ভাবিলাম যে, ইদানীং বড় বেশি বক বক করিয়া বক্তিয়ার খিলিজী দুর্নামটি অর্জন করিয়াছি, তাই কিয়ত্কাল বাক্‌ সংযমপূর্বক পণ্ডিতগণের গবেষণাই শোনা যাক। কিঞ্চিৎ আলোচনার পর শুনিলাম শহীদুল্লা সাহেব বলিলেন, "কি বলেন সুনীতিবাবু, তাহলে এ বিষয়ে general agreement হল ত?"

সুনীতিবাবু বলিলেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ।"

সভাশোভনকারী যাঁহারা বসিয়াছিলেন তাঁহারাও "মৌনং সম্মতিলক্ষণং" জ্ঞাপন করলেন। আমি তো মনে মনে প্রমাদ গণিলাম, "বৌ' যে যায় যায়। তাই অতি বিনিতভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম, " কি বিষয়ে আপনাদের general agreement হল?"

সুনীতিবাবু আমাকে বুঝাইয়া বলিলেন। আমি বলিলাম, "সর্বনাশ! এমন কাজও করবেন না। শেষকালে আপনারা বৌ-বর্জন আরম্ভ করলেন? এ অতি dangerous! কেন, 'বৌ' চলবে না কেন শুনতে পাই কি?"

সুনীতিবাবু বলিলেন, দেখুন বৌ-এর চাইতে বউ-ই দেখতে ভালো।"

আমি নাছোড়বান্দা হইয়া বলিলাম, "মশাই, দেখতে ভাল হলেইত চলবে না, তালাক দেবার আগে বৌ-য়ের দোষটা কি তা ত বুঝিয়ে বলতে হবে। হ্যাঁ, স্বীকার করি বাংলাতে বৌ-বউ দুপ্রকারই চলছে। কিন্তু আপনারা না phonetics -বাদী? Phonetics -ই যদি দেখতে যান, তাহলে কিন্তু বৌ-ই ঠিক, কারণ ওর উচ্চারণ diphthongal - ওটা monosyllabic - এক নিঃশ্বাসে 'বৌ' বলে আমরা উচ্চারণ করি, ব-উ' বলে bi-syllabic ভাবে আলাদা আলাদা উচ্চারণ করিনে।"

সুনীতিবাবু বলিলেন, দেববাবু, ও কথা বললে চলবে কেন ? ওরকম diphthong বাংলা ভাষায় ঢের আছে, খাই, যাই, নেই, যেই, শুই, ধুই, কেউ, কেউ, ঘেউ ঘেউ, হাঁউ মাঁউ খাঁউ, ইত্যাদি। আমি গুণে দেখেছি যে ওরকম ছাব্বিশটা diphthong বাংলায় পাওয়া যায়।"

আমি বলিলাম, "দেখুন , আপনারা পণ্ডিত লোক, philologist; আপনারা পারেন তো সেই ছাব্বিশটা diphthong -এর ছাব্বিশটা phonetic symbol বার করুন না। তা বলে যে দুটো আমাদের রয়েছে সে দুটো মাঠে মারা যাবে, এর মানে কি ? "

সুনীতিবাবু তখন বলিলেন, আচ্ছা, আচ্ছা, তাহলে বিকল্প হোক।"

আমি বলিলাম, "তা বেশ, আপনাদের যা ইচ্ছে - বিকল্পই করুন। সঙ্কল্পতো কোন বিষয়েই বিশেষ দেখতে পাচ্ছিনে আপনাদের। কিন্তু একটা কথা বলি। দুটো একটা উদাহরণের ওপরই যেন কোন বিষয়ে generalize করে বসবেন না। হ্যাঁ, 'বৌ' 'দৈ' এই দুটি শব্দের 'বউ' 'দই' রূপও চলতি আছে বটে; কিন্তু আপনারা general agreement করে যে ফতোয়া দিতে যাচ্ছিলেন যে, অসংস্কৃত সব বাংলা শব্দেই ঐ-কার ঔ-কার বর্জন করতে হবে, তার শ্রাদ্ধ কতদূর গড়ায় তা একবার ভেবে দেখেছেন? এই ফতোয়া মানতে গেলে যে, অতঃপর ফুলের ওপর শুধু 'মউমাছিরা' গুঞ্জন করবে, কুকুরগুলো শুধু 'ভউ ভউ' করে ডাকবে, ছেলেরা শুধু 'দউড়া দউড়ি' করবে, আর রাস্তার 'চউমাথায়' 'হই হই রই রই' শুনে পুলিশ 'ফউজ' তাড়া করে আসবে। দেখুন, ভাষাগত কোন rule জারী করতে গেলে একটু ভেবেচিন্তে করা দরকার - implication গুলো একটু বিবেচনা করা দরকার - দুটো একটা instance -এর ওপর induction চলে না।"
এই সজোর ওকালতীর ফলে যাহোক "বৌ" ত কোনমতে টিঁকিয়া গেল।

তখন শহীদুল্লা সাহেব আরেক দফা প্রস্তাব ঝাড়িলেন। তিনি বলিলেন যে, যে সব অসংস্কৃত বাঙ্গালা শব্দের আদ্যক্ষরে "ক্ষ" আছে, তত্স্থলে "খ" হউক; এবং নিজে দৃষ্টান্ত দিলেন, যেমন ক্ষ্যাপা, ক্ষেত, ক্ষুর, ইত্যাদিকে অতঃপর লেখা হউক খ্যাপা, খেত, খুর ইত্যাদি। সুনীতিবাবু আবার ইহার উপর amendment আনিলেন যে, 'লক্ষ্ণৌ´-কেও ‘লখনৌ’ ভাবে লেখা হউক। কেহ কেহ আপত্তি করিলেন, কারণ ঐ নগরের নামটি রামায়ণের লক্ষ্মণের সঙ্গে জড়িত। ভাষাতাত্বিকগণ সে কথা মোটে আমলের মধ্যেই আনিলেন না। রামায়ণ। সে আবার একটা ঐতিহাসিক authority নাকি! কৈ, মহেঞ্জোদড়োর কোন ভাঙ্গা বাসনের গায়ে কি লক্ষ্মণের কোন ফটো পাওয়া গিয়াছে? অতএব লক্ষ্মণ বাতিল; সুতরাং "লখনৌ"।

আমি আবার সভয়ে বলিলাম, "আচ্ছা শহীদুল্লা সাহেব, 'ক্ষ;- কে তাড়িয়ে আপনি 'খ' আমদানী করতে চান কেন বলুন ত? প্রথমতঃ ত ক্ষ-এর ধবনি ঠিক খ-এর ধবনি নয়, ওর উচ্চারণ অনেকটা ক্খ-এর মত। দ্বিতীয়তঃ, যে শব্দগুলো আপনি উল্লেখ করলেন, তাতে যদি ক্ষ থাকে তাহলে শব্দগুলোর ব্যুত্পত্তি সহজেই বোঝা যায়; যেমন 'ক্ষ্যাপা' - 'ক্ষিপ্' ধাতুর থেকে এসেছে; 'ক্ষেত' - ' ক্ষেত্র'-এর থেকে এসেছে। বেশ সহজ এবং সুন্দর। 'ক্ষেত'-এর বদলে 'খেত' লিখলে, কথাটা কোত্থেকে এসেছে তাই মালুম করা শক্ত হবে। আর দেখুন শহীদুল্লা সাহেব, আপনি বল্লেন 'ক্ষুর'। হ্যাঁ, 'খ' দিয়ে এক রকম 'খুর' আছে বটে কিন্তু তা গরুর পায়ে থাকে, তা দিয়ে দাড়ি কামানো চলে না।

এই কথায় শহীদুল্লা সাহেব যেন একটু impressed হইলেন মনে হল; কারণ তিনি তাঁহার নিবিড় শ্মশ্রুদামের মধ্যে ঘন ঘন করসঞ্চালন করিতে লাগিলেন। আমি উৎসাহিত হইয়া বলিলাম, "আর দেখুন, আপনি বল্লেন না, অসংস্কৃত শব্দে এই রকম সংস্কার করতে হবে? এবং বল্লেন 'ক্ষুর'। 'ক্ষুর' কিন্তু একেবারেই সংস্কৃত শব্দ - উপনিষদে এর প্রয়োগ আছে - 'ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া দুর্গং পথস্তত্ কবয়ো বদন্তি'।"

তখন ডাক্তার সাহেব, "তাই ত, তাই তো, ওটা সংস্কৃত?" বলিয়া আমতা আমতা করিতে লাগিলেন।

আমি বলিলাম, "দেখুন ডাক্তার সাহেব, আর যাই করুন, ক্ষুর নিয়ে আর নাড়াচাড়া করবেন না।"

এবার সুনীতিবাবু এক প্রস্তাব তুলিলেন - বোধ করি শহীদুল্লা সাহেবকে একটু অপ্রতিভ দেখিয়া। তাঁহার প্রস্তাব এই যে, "যদ্" শব্দজ যাবতীয় শব্দ বাঙ্গালাতে "জ" দিয়া লেখা উচিত; অর্থাৎ যে, যাহা, যিনি, যেমন, ইত্যাদিকে লিখিতে হইবে জে, জাহা, জিনি, জেমন, ইত্যাদি।

প্রস্তাব শুনিয়া ত আমার চক্ষু চড়ক-গাছ! সুনীতিবাবু বলেন কি? প্রথমটাতো প্রত্যয় হইল না। শেষে মনে পড়িল এপ্রকার মৌলিক প্রস্তাব আনয়ন অসম্ভব নহে; কারণ ব্রাহ্মণ-সন্তান এবং হিন্দু-সভার বিশিষ্ট সভ্য হইলেও উনি কেমালিস্ট অর্থাৎ Roman script-এর পাণ্ডা, সুতরাং অবশ্যই এবংবিধ রোমাঞ্চকর প্রস্তাব উঁহার নিকট হইতে প্রত্যাশা করিতে পারি। আমি তবুও সাহস করিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, যে, 'জ' দিয়ে লেখা হবে?

উত্তর হইল, "প্রাকৃতে তাই হয়।"

এবার আমি উত্তেজিত হইয়া গেলাম; বলিলাম, "প্রাকৃতে কি হয় তা নিয়ে ত কথা হচ্ছে না - এটাতো philology ক্লাস নয়। কথা হচ্ছে বাংলা নিয়ে। বাংলা ভাষাও তো দুশ পাঁচশ বছর ধরে চলে আসছে - বাংলায় শিষ্টপ্রয়োগে কি ব্যবহার হচ্ছে সেইটেই ত দেখতে হবে। আর তাছাড়া ও শব্দগুলো যে সংস্কৃত 'যদ্' শব্দ থেকে এসেছে তার ত সন্দেহ নেই। যদি প্রাকৃতে সংস্কৃত form-টাকে vulgarize করেই থাকে, এবং বাংলাতেও যদি মূলের শুদ্ধ form-টাই অবলম্বিত হয়ে থাকে, তবে কি জন্যে আমরা সেই মূলানুগত শুদ্ধ ফরম ত্যাগ করে vulgarized form -টাই লুফে নেব?"

সুনীতিবাবু বলিলেন, "তা বাংলার কথা বলছেন? বাংলার পুরণো পুঁথিতেও আপনি এন্তার জ-ওয়ালা যে, যাহা, ইত্যাদি পাবেন।"

আমি উত্তর দিলাম, "বটে! এই কথা? আপনিও বহু অশিক্ষিত স্ত্রীলোকের চিঠিতে দেখতে পাবেন যে, 'অশেষপ্রণামপূর্বক নিবেদন' লিখিতে 'অশেষ' কথাটি 'অসেস' ভাবে লেখা হয়েছে। আর আদালতের নথীপত্র দেখেছেন কোন দিন? তাতে দেখবেন 'পিতা' কথাটি ভ্রমক্রমেও তাতে ওভাবে লেখা হয় না; বরাবর 'পীতা' লেখা থাকে। দেখুন, ভাষা ত fool-proof করা সহজ নয়। কতগুলো fool যদি না জেনেশুনে কতগুলো blunder করে, তাদ্বারা ভাষার বানান regulated হয় না। হ্যাঁ, আরেকটা কথা। প্রাকৃতের কথা বলছিলেন। তা প্রাকৃত ত আর একরকম নয় - বিভিন্ন প্রাকৃতে বিভিন্ন রকম প্রয়োগ। সত্যি বটে মাহারাষ্ট্রী, শৌরসেনী, পৈশাচী প্রাকৃতে 'য'- স্থানে 'জ' হয়; কিন্তু মাগধী প্রাকৃতে - যে প্রাকৃতের সঙ্গেই বাংলার নিকটতম সম্বন্ধ - তাতে 'জ'-র স্থানে 'য' হয়। সুতরাং পুরণো পুঁথিতে যে এসব স্থলে কোথাও কোথাও 'জ’ দেখা যায়, তা প্রাকৃত প্রয়োগের অনুসরণে হয় নি, নেহাৎ অজ্ঞতা বা অসাবধানতার জন্যেই হয়েছে, এবং সেগুলি ভুলই। তারপর, প্রাকৃত ত খুব বলছেন। তখন 'ণ' বাতিল করে 'রাণী' 'কাণ' সোণা'তে 'ন' বসাতে যান, তখন ত কৈ প্রকৃতের কথা আপনাদের স্মরণ থাকে না? শুধু এক পৈশাচী প্রাকৃতে ছাড়া, আর কোন প্রাকৃতেই যে 'ন' একদম নেই, একেবারেই 'ণ'-এর রাজত্ব।

এই কথায় রাজশেখরবাবু ছোট্ট একটু প্রশ্ন করলেন, "দেব বাবু, প্রাকৃত কি অনেক রকম আছে নাকি ?"
বানান-কমিটির সভাপতির মুখে এই প্রশ্ন শুনিয়া আমি অবাক।
আমিও সংক্ষেপে বলিলাম, "হ্যাঁ, সাহিত্যে ব্যবহৃতই ত চার রকম প্রাকৃত পাওয়া যায়, তাছাড়া মৌখিক ব্যবহার ত কতই আছে।"

জন্ম
তাঁর জন্ম বরিশালে। তাঁর পিতা ক্ষেত্রনাথ ঘোষ ব্রজমোহন কলেজের দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন।
১৯০৮ সালে বরিশালের ব্রজমোহন স্কুল থেকে প্রবেশিকা ও ব্রজমোহন কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন দেবপ্রসাদ ঘোষ। ১৯১২ ও ১৯১৪ সালে যথাক্রমে গণিতে বিএ ও এমএ সম্পন্ন করেন কোলকাতার সিটি কলেজ থেকে। গণিতশাস্ত্রে অনার্স পরীক্ষায় তিনি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পাওয়া নম্বরের যে রেকর্ড ছিল, সেটিকে ভাঙ্গেন। তিনি আইন পরীক্ষাতেও প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি কোনো পরীক্ষাতেই প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। তাঁকে ‘আধুনিক গণিতের রামানুজন’ বলা হয়।

দেবপ্রসাদ ঘোষ মাত্র ২১ বছর বয়সে রিপন কলেজে পণিতের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে অনেক বছর কাজ শুরু করেছিলেন এবং বীজগণিত, পাটিগণিত, জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির উপর জনপ্রিয় পাঠ্যবই রচনা করেছিলেন। ১৯৪১ সালে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ হন এবং সেখান থেকে ১৯৫০ সলে অবসর গ্রহণ করেন।

অনেকগুলি ভারতীয় ও ইউরোপীয় ভাষায় তাঁর বিশেষ দখল ছিল। বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদ হিসাবে সমাদৃত ছিলেন। বাংলা ভাষা ও বানান নিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পত্র-বির্তক এক সময় বিদগ্ধ মহলে যথেষ্ট আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। এ বিষয়ে তাঁর রচিত ‘বাঙ্গালা ভাষা বানান’ গ্রন্থটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কলকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক সমিতির সদস্য ছিলেন। ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই সুবক্তা হিসাবে খ্যাতি ছিল। রচিত গ্রন্থ: ‘হিন্দু কোন পথে’, ‘সতের বছর পরে’, ‘তরুণিমা’(সাহিত্রিক ও সামাজিক আলোচনা), ‘ত্রৈরাশিক’(ব্যঙ্গ কবিতা), ‘Shifting Scenes’ প্রভৃতি।
১৯৫১ সালে তিনি শ্যামাপ্রসাদ প্রতিষ্ঠিত জনসংঘে যোগ দেন এবং ১৯৫২ সালে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। বেশ কয়েক বছর তিনি জনসংঘের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন।
................


চিনকে চিনে রাখুন



 চিনকে চিনে রাখুন


 শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু